তোকেই ভালোবাসি পর্ব-০৩

0
3313

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক- তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব_০৩

_ একজনকে দেখে পুরো অবাক হয়ে গেলাম। গতকাল রাতে রাস্তায় যে আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে ছিলো সেই ছিনতাইকারী লোকটা। আমাদেরকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে গোলো। আমাদের কাছে গিয়ে জিগ্গেস করলো, তোরা এইখানে কী করছিস?

তানভীর – কেন মেরে ফেলবে নাকী?

_ হঠাৎ রবিন ভাই এসে বললো, কি ব্যাপার কাকে মারার কথা বলছো?

রাকিব – ভাইয়া এই লোকটা গতকাল রাতে আপনার এখানে আ…..

_আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই লোকটা রাকিবের মুখ চেপে ধরে বললো, ভাই গতকাল রাতে ওদের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। আমি ওদের এখানে আসতে সাহায্য করেছি।

রবিন – খুব ভালো করেছিস। ওরা দুজন আজ থেকে এখানেই থাকবে। ওদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়।সেই দায়িত্ব তোর উপরে দিলাম।(মোবাইলের দিকে তাকিয়ে)

_ ঠিক আছে ভাই। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।(রাকিবের মুখ ছেড়ে দিয়ে)

রবিন – শোন আমি একটু বাসায় যাচ্ছি। ওদের দুজনকে নিয়ে হোটেল থেকে খাবার খেয়ে আয়।

_ ঠিক আছে ভাই।

_ রবিন ভাই চলে যাওয়ার পর। লোকটা আমাদেরকে একটা রুমে নিয়ে গেলেন। রুমের ভিতরে গিয়ে রুমের দড়জা কিছুটা বন্ধ করে দিলেন।কিছু বলার আগেই দুজনের পা জড়িয়ে ধরে বললো, ভাই আমাকে ক্ষমা করে দাও। গতকাল রাতের কথা রবিন ভাই কে বলো না। ভাই জানতে পারলে আমাকে আর এখানে কাজ করতে দিবে না।

তানভীর – ঠিক আছে। আগে পা ছাড়েন।

_ আগে বলো রবিন ভাইকে গতরাতে কথা বলবে না।(পা জড়িয়ে ধরে)

রাকিব – ঠিক আছে। এবার পা ছাড়েন।

_ সত্যি বলছো ভাই।(পা ছেড়ে দিয়ে)

রাকিব – আমাদের ব‍্যাগ গুলো কোথায়?

_ একটা দোকানে রেখে দিয়েছি।তোমরা কোনো চিন্তা করো না। আমি তোমাদের ব‍্যাগ এনে দিয়ে দিবো।

রাকিব – আচ্ছা।আপনার নাম টা তো জানা হলো না।

_ আমার নাম মামুন।আর তোমাদের?

রাকিব – আমি রাকিব।ও হচ্ছে আমার ভাই তানভীর।

মামুন – ও এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন?

তানভীর – না ভাবছি আপনাকে কী করা যায়?

মামুন – কেন আমাকে ক্ষমা করতে পারেনি?

তানভীর – না পারিনি।

মামুন – আমি তো তোমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আচ্ছা কী করলে ক্ষমা করবে বলো? আমি তাই করতে রাজি।

তানভীর – যা বলি তাই করবেন?

মামুন – হে করবো। তবুও রবিন ভাইকে কিছু বলো না।

তানভীর – ঠিক আছে। চলেন তাহলে সময় এলে বলবো কী করতে হবে।

মামুন – চলো হোটেল থেকে খাবার খেয়ে আসি।তোমাদের ব্যাগগুলো ও নিয়ে আসবো।

রাকিব – হ‍্যাঁ চলেন।

_ তারপর মামুন ভাইয়ের সাথে একটা হোটেলে গিয়ে। সকালের খাবার খেয়ে আসলাম। আসার সময় দোকান থেকে মামুন ভাই আমাদের ব‍্যাগ গুলো নিয়ে আসলেন।সাথে টাকাগুলো ও দিয়ে দিলেন।

_ খাবার খেয়ে এসে রুমে গিয়ে দুজনে শুয়ে পড়লাম। দুই ঘন্টা পর মামুনের ডাকে দুজনে নিচে গেলাম।নিচে যেতেই মেহেদী ভাই বললো, কি তানভীর হোটেলে খাবার খেতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?

তানভীর – কোনো সমস্যা হয়নি ভাইয়া।

মেহেদী – সমস্যা না হলে ভালো। তোমাদের তো এইভাবে বসে থাকলে হবে না। নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র চালানো শিখতে হবে। তারপর তোমার মামার খুনিকে বের করে। কঠিন শাস্তি দিতে হবে।

রাকিব – জ্বী ভাইয়া।কিন্তু…..

মেহেদী – কোনো কিন্তু নয়।এইসব কিছুর দায়িত্ব আমাদের উপর ছেড়ে দাও।তোমরা শুধু আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ করবে।

তানভীর – ঠিক আছে ভাইয়া।

মেহেদী – মামুনের সাথে উপরে একটা রুমে যাও।ওখানে আমাদের লোক জন আছে।তারাই তোমাদের সব শিখিয়ে দিবে।

রাকিব – ধন্যবাদ ভাইয়া। আমাদেরকে এতোটা সাহায্য করার জন্য।

মেহেদী – ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই।তোমরা আমার ছোট্ট ভাইয়ের মতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো।আমার বন্ধু তোমাদের এখানে আমাদের কাছে পাঠিয়ে।

তানভীর – তারপর ও আমরা আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।

মেহেদী – এইসব কোনো বিষয় না। মামুন ওদের উপরে রুমটাতে নি যা।

মামুন – ঠিক আছে ভাই।তোমার আমার সাথে এসো।

_ তারপর মামুন ভাই আমাদের উপরে একটা রুমে নিয়ে গেলেন।গিয়ে দেখি রুমের ভিতরে দশ থেকে পনেরো জন লোক অস্ত্র চালানো শিখছে। মামুন ভাই আমাদেরকে নিয়ে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

_ সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর। দুজন লোক আমাদের দুইজনকে হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন। কিভাবে কী করতে হয় তারা আমাদের শিখাতে লাগলেন।

_ একসপ্তাহ পর…….

_আমরা দুজনে এখন মোটামুটি সবকিছু শিখে নিয়েছি। সবার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে। বিশেষ করে মেহেদী ভাই, রবিন ভাই,মামুন ভাই এই তিন জনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেকটা গভীর হয়েছে।

_ একদিন রাতে মামুন ভাই আমাদের রুমে আসলো। রাকিব মামুন ভাইকে জিগ্গেস করলো, আচ্ছা ভাই আপনার সাথে তো এই কদিনে থেকে বুঝলাম বেশ ভালো মনের মানুষ আপনি। কিন্তু ওইদিন রাতে রাস্তায় আমাদের সাথে এইরকম আচারন করলেন কেন?

মামুন – সত্যি বললে বিশ্বাস করবে কি না জানিনা। তারপর ও বলছি,ওই দিন রাতে রাস্তায় একজন ক্ষুধার্ত শিশু কে খুব খারাপ লাগে।তাকে জিজ্ঞেস করার পর বললো, ওর ও এই দুনিয়ায়তে আমার মতো আপন বলতে কেউ নেই।টাকার অভাবে দুদিন হলো পেট ভরে কিছু খেতে পারেনি।

_ আমার কাছে সামান্য কিছু টাকা ছিলো। সেই টাকাগুলো দিয়ে তাকে হোটেল থেকে খাবার খাইয়ে আনি। তাকে কিছু খাবার কিনে দেওয়ার জন্য। বেশ কয়েক জনের কাছে আমি টাকা চেয়েছি। টাকা তো দিবে দূরের কথা কেউ আমাকে বিশ্বাসই করেনি। নানা রকম কথাবার্তা বলেছেন।তাই শেষ পর্যন্ত আমি ছিনতাইয়ের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।

_ তোমাদের কাছ থেকে ছিনতাই করে টাকাগুলো নিয়ে ওই শিশুটাকে কিছু খাবার কিনে দেয়। আমি জানতাম না তোমাদের অবস্থা।তাই তোমাদের কাছ থেকে ছিনতাই করে টাকাগুলো নিয়ে যায়। এতে আমার ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিও।

_ মামুন ভাইয়ের কথা শুনে দুজনের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।দুজনেই চুপচাপ বসে রইলাম। হঠাৎ মামুন ভাই বললেন, তানভীর তোমাদের একটা কথা বলার জন্য এখানে এসেছি।

তানভীর – কি কথা ভাই?

মামুন – ঢাকায় যে মন্ত্রীর বাড়ির সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছি সেটা।

তানভীর – তো কিছু জানতে পেরেছেন?

মামুন – বেশি কিছু জানতে পারেনি।তবে গতকাল মন্ত্রীর ছোট্ট ভাই বর্তমান যে মন্ত্রী।তার মেয়ে রিয়ার বিয়ে কালকে।

রাকিব – রিয়ার বিয়ে মানে কী?(অবাক হয়ে)

মামুন – মানে বিয়ে হবে কাল।

রাকিব – কিন্তু…..

তানভীর – ধন্যবাদ ভাই। গুরুত্বপূর্ণ একটা খবর দেওয়ার জন্য। কালই আমরা ঢাকা যাবো। সবাইকে জানিয়ে দিয়েন।

মামুন – ঠিক আছে। আমি এখন যাই।

_ বলেই মামুন ভাই চলে গেলেন। মামুন ভাই চলে যাওয়ার পর রাকিব মন খারাপ করে চুপচাপ বসে রইল।

তানভীর – কিরে তোর আবার কি হলো? এতো ভালো একটা খবর পেয়েও মন খারাপ করে বসে আছিস?

রাকিব – তো কী করবো নাচবো?(ধমক দিয়ে)

তানভীর – অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমা। কালকের টা কাল দেখা যাবে।

রাকিব – হে করাচ্ছি কাল বিয়ে।

_বলেই কিছুটা রাগ দেখিয়ে শুয়ে পড়লো।পরের দিন সকালে……..।

চলবে,,,

[ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]