তোকেই ভালোবাসি পর্ব-১+২

0
3785

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক_ তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব_ ০১

_ দীর্ঘ দশ বছর পর দুই ভাই জেল থেকে বের হয়ে সিলেট থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকে রওনা দিলাম।বাসে উঠে ভাবতে লাগলাম সেই দিনের কথা।যেই দিনটা ছিল দুই ভাইয়ের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়।

_ সবেমাত্র অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষার শেষ হয়েছে। যেহেতু পরিক্ষা শেষ তাই হাতে কিছু দিনের জন্য ছুটি পেলাম। ছুটি পেয়ে বড় মামার সাথে আমি আর খালাতো ভাই রাকিব কক্সবাজারে ঘুরতে বের হলাম। মামারা ছিলেন তিন ভাই দুই বোন।বড় মামা ছিলেন ঢাকার একজন মন্ত্রী।আমাদের দুই ভাইকে অনেক ভালোবাসতেন।

— আমারা দুজনেই যেহেতু সমবয়সী ছিলাম। বেশিরভাগ সময় একসাথে কাটিয়েছি। ওইদিন একসাথে মামার সাথে ঘুরতে বের হয়।সাথে ছিলো মেজো মামার মেয়ে নুসরাত। আমাদেরই সমবয়সী। কক্সবাজারে চার দিন থাকার কথা ছিলো। কিন্তু দুই দিন থাকার পর। হঠাৎ করে রাতে মামা এসে বললো, কোনো একটা কাজে নাকি ঢাকাতে চলে আসতে হবে। মামার কথা শুনে তিন জনেরই মন খারাপ হয়ে গেল।

_ পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে। দুই ভাই বড় মামার রুমের দরজার কাছে যেতেই দেখি মামা রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। মামার এমন অবস্থা দেখে দুজনেই অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। রুমের ভেতরে দেখি নুসরাত ও নেই।

_ তাড়াতাড়ি করে মামার কাছে গিয়ে দেখি একটা রিভার বার পড়ে আছে। রাকিব ওটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো। আমি গিয়ে মামার মাথায় কাছে যেতেই।মামা আমার হাত ধরে ফেললো। কিছুটা ভয়ে ভয়ে মামাকে জিগ্গেস করলাম,মামা তোমার এই অবস্থা কে করলো?

— তোর ছোট্ট মা…..আর কিছু বলতে পারলো না।তার আগেই মামার চোখ দুটি বন্ধ হয়ে গোলো। দুইজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। হঠাৎ পেছন থেকে কারো পায়ের শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখি ছোট্ট মামা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাতজন পুলিশ।

_ পুলিশ দেখে রাকিব হাত থেকে রিভাল বার ফ্লোরে ফেলে দিলো। আমি উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবো।তারা আগেই ছোট্ট মামা এসে দুজনের গালে ঠাসসস ঠাসসসস করে থাপ্পর মারলো।

ছোট্ট মামা – ভাইজান কে মেরেছিল বল?

কিছু না বলে অবাক দৃষ্টিতে ছোট্ট মামার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি তাকিয়ে আছি দেখে আবার থাপ্পর মেরে বললো, কী হলো এইভাবে তাকিয়ে কী দেখছিস? ভাইজান কে কেন মেরেছিল বল?(জোড়ে ধমক দিয়ে)

রাকিব – মামাকে আমরা কিছু করেনি। মামার রুমে এসে দেখি মামা…

ছোট্ট মামা – চুপ আর একটাও মিথ্যা কথা বলবি না।

তানভীর – রাকিব সত্যি কথা বলছে। বিশ্বাস করো আমরা কিছু করেনি।

— বলার সাথে সাথে ঠাসসস ঠাসসসস করে থাপ্পর মেরে বললো, কিছু করিস নি । তাহলে ভাইজানকে কে মেরেছে আমি?(রেগে গিয়ে)

পুলিশ অফিসার – তোমারা কিছু করো নি। তাহলে একজনে গায়ে রক্ত।আরেক জনের হাতে রিভাল বার ছিলো কেন?

— অফিসারের কথা শুনে শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখি রক্ত লেগে আছে। এতোক্ষণ খেয়ালই করেনি।আমার গায়ে যে রক্ত লেগে আছে।

ছোট্ট মামা – কী হলো চুপ করে আছিস কেন? অফিসারের কথায় জবাব দে।(ধমক দিয়ে)

রাকিব – সত্যি বলছি মামা। আমি বা তানভীর দুজনের কেউই মামাকে কিছু করেনি।

— হঠাৎ করে কোথায় থেকে মামার সিকিউরিটি গার্ডদের মধ্যে একজন এসে বললো, অফিসার ওরা মিথ্যা কথা বলছে।স‍্যারকে ওরা দুজনে মিলে খুন করেছে।

সিকিউরিটি গার্ডদের দিকে তাকিয়ে দেখি নুসরাত ও তাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। নুসরাত আমার কাছে এসে গালে থাপ্পড় মেরে বললো, আমি দেখেছি ওরা দুজনে বড় মামাকে মেরেছে। এখন বাঁচার জন্য মিথ্যা কথা বলছে।(কেঁদে কেঁদে)

তানভীর – নুসরাত তুই এইসব কী বলছিস?আমরা কেন মামাকে মারতে যাবো?

ছোট্ট মামা – অফিসার এদেরকে নিয়ে যান এখান থেকে। আর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুন।

— ছোট্ট মামার কথা শুনে। দুই জন পুলিশ এসে আমাদের দুজনের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়।দুজনকে নিয়ে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। মামার মৃত্যু খবর শুনে,রাতে পরিবারের সবাই থানায় আসে। আমাদের সাথে দেখে করার জন্য।

_ একজন পুলিশ এসে দুইজনকে লকআপ থেকে বের করে নিয়ে আসলো। আম্মু এসেই আমাকে থাপ্পর মেরে বললো,কী পাপ করছিলাম। তোর মতো সন্তান জন্ম দিয়ে। কেন এমন করলি বল?(মারতে মারতে)

— আম্মু আমাকে মারছে দেখে একজন মহিলা পুলিশ এসে আম্মুকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এমন সময় তামিম ভাইয়া এসে বললো, কেন এইসব করলি?

তানভীর – বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি কিছু করেনি।সবাই মিথ্যা কথা বলছে।

আব্বু – আর কোনো কথা বলবি না। আজ থেকে ভুলে যাবো তানভীর নামে আমাদের কোনো সন্তান ছিলো। আজ থেকে আমাদের কাছে তুই মৃত‌।(বলেই চলে যেতে লাগলো)

তানভীর – একবার আমার কথা বিশ্বাস করো আব্বু । আমি এইসব কিছু করনি।

আম্মু – কী বললো শুনতে পাসনি?তোর ওই পাপী মুখে আমাদের কারো নাম উচ্চারণ করবি না।আজ থেকে তুই আমাদের কাছে মৃত। তোর মতো এমন সন্তান আমার দরকার নেই।(বলেই কাঁদতে কাঁদতে চলো গোলো)

তানিশা আপু – তোর মতো খুনি কখনো আমার ভাই হতে পারে না।চল ভাইয়া এখান থেকে।(ভাইকে টেনে নিয়ে চলে গেলো)

_ রাকিবের সাথেও এই একই ব‍্যবহার করেছে সবাই। সেই দিন কেউই আমাদের কথা বিশ্বাস করেনি। পরের দিন আদালতে হাজির করা হলো।বয়স কিছুটা কম হওয়াতে শান্তি কমে যায়। কিন্তু দশ বছর জেল হয়। অপরাধ না করেও দীর্ঘ দশটি বছর চার দেয়ালের মধ্যে থাকতে হয়েছে।

_ হঠাৎ করে রাকিব হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,কিরে এইভাবে কী ভাবছিস? বাস থেকে নামবি নাকি বাসেই থেকে যাবি?

তানভীর – হুম।চল যাওয়া যাক।

_ বাস থেকে নেমে একজনের দেওয়া ঠিকানা খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ করে একজন ছিনতাইকারী এসে……..

চলবে।

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব_০২

__ হঠাৎ একজন ছিনতাইকারী এসে চাকু দেখিয়ে বললো, কোনো রকম চালাকি করার চেষ্টা করবি না।সাথে যা কিছু আছে দিয়ে দে।

রাকিব – দেখুন আমাদের কাছে তেমন কিছু নেই।এই ব্যাগে সামান্য কিছু কাপড় আর কিছু টাকা আছে। এমনিতেই আমরা অনেক বিপদের মধ্যে আছি। প্লিজ আমাদেরকে যেতে দিন।(কিছুটা ভয় পেয়ে)

ছিনতাইকারী – আমাকে এইসব বলে কোনো লাভ নেই।যা বলছি তাই কর।বেশি চালাকি করলে জানে মেরে ফেলবো।(ধমক দিয়ে)

তানভীর – নে ভাই নিয়ে যা। এতো কষ্ট করার দরকার নেই।(দুজনের ব‍্যাগ এগিয়ে দিয়ে)

_ ছিনতাইকারী ব‍্যাগ দুটি নিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। এমন সময় রাকিব বললো,এটা তুই কী করলি?(রেগে গিয়ে)

তানভীর – কেন দেখতে পাসছি?

রাকিব – ছিনতাইকারী এসে চাকু দেখিয়ে বললো,আর তুই ব‍্যাগ সহ দিয়ে দিলি? এখন আমরা যাবো কোথায়? সাথে তো কোনো টাকা ও নেই।

তানভীর – এতো বেশি কথা না বলে চুপচাপ চল।(জোড়ে ধমক দিয়ে)

রাকিব – হুম। ছিনতাইকারী কে সবকিছু দিয়ে এখন আমার সাথে রাগ দেখা।(মনে মনে)

তানভীর – কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

রাকিব – কিছুনা চল।

_ একটু সামনে যেতেই এক রিক্সাওয়ালা এসে বললো,স‍্যার কোথাও যাবেন আপনারা?

তানভীর – আমরা আপনাকে কোন স্কুলে পড়িয়েছিলাম হ‍্যাঁ?(ধমক দিয়ে)

রিক্সাওয়ালা – স্কুলে পড়িয়েছেন মানে?

তানভীর – মানে বুঝেন না। তাহলে স‍্যার বলছিলেন কেন?(রেগে গিয়ে)

রাকিব -ভাই তুই চুপ থাক না। আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।দেখেন তো এই ঠিকানাটা চিনেন কি না?(একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে)

রিক্সাওয়ালা – হ‍্যাঁ চিনি । চলুন আমার সাথে পৌঁছে দিয়ে আসি।

রাকিব – ঠিক আছে। চলুন তাহলে..।

_ রিক্সায় উঠার পর। কিছুক্ষণ পর রিক্সাওয়ালা আমাদের একটা ফ‍্যাক্টরির সামনে এনে দাঁড় করালেন।

তানভীর – কি হলো রিক্সাওয়ালা থামালেন কেন?

রিক্সাওয়ালা – এটাই সেই জায়গায়। যার ঠিকানা আপনারা আমাকে দিয়েছিলেন।

রাকিব – কিন্তু এটা তো একটা ফ‍্যাক্টরি। আশেপাশে কোনো বাড়ি নেই কেন?

রিক্সাওয়ালা – আমি কী করবো? আপনাদের দেওয়া ঠিকানায় তো নিয়ে আসলাম।

রাকিব – ঠিক আছে। আপনি যেতে পারেন।(রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা দিয়ে)

তানভীর – তোর টাকা তো ব‍্যাগে ছিলো। এখন টাকা পেলি কোথায়?

রাকিব – পকেটে বিশ টাকা ছিলো। চল ভিতরে গিয়ে দেখি রবিন নামে কাউকে
পাই কি না?

তানভীর – চল….।

_ ফ‍্যাক্টরির গেইট খুলা ছিলো। যার জন্য ভিতরে যেতে তেমন একটা সমস্যা হয়নি। ভেতরে যেতেই একজন লোক জিগ্গেস করলেন,কে তোমরা? এখানে এসেছো কেন?

তানভীর – আসলে আমরা রবিন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি।

_ ঠিক আছে।চলো আমার সাথে।

_ লোকটা আমাদেরকে নিয়ে দ্বিতীয় তলায় একটা রুমে নিয়ে গেলেন।রুমে গিয়ে বললেন,ভাই আপনার সাথে দুজন লোক দেখা করতে এসেছে। লোকটির কথা শুনে বোঝলাম এটাই রবিন।

তানভীর – আসসালামু আলাইকুম ভাই।

রবিন – ওয়ালাইকুম সালাম।কে তোমরা কীসের জন্য এসেছো এখানে?

রাকিব – আমরা সিলেট থেকে এসেছি। ইকরাম ভাই আমাদের কে আপনার এখানে পাঠিয়েছে।

রবিন – ইকরাম তো পাঁচ বছর ধরে জেলে।

রাকিব – জ্বী ভাই।

রবিন – তার মানে তোমরাও…..

তানভীর – হ‍্যাঁ। আপনার সাথে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। যদি আপনার লোকদের একটু বাহিরে যেতে বলেন। তাহলে খুব ভালো হতো।

রবিন – ঠিক আছে।তোরা কিছু সময়ের জন্য বাহিরে যাও।(লোকদের উদ্দেশ্য করে)

_বলার সাথে সাথে সবাই বাহিরে চলে গেলেন। শুধু একজন রুমে বসে আছেন।

রবিন – হে এবার বলো।কী বলতে চাও?

রাকিব – কিন্তু ওনি…..।

রবিন – ও আমার বন্ধু মেহেদী।

মেহেদী – কোনো সমস্যা নেই।যা বলার বলতে পারো।আমরা যতটুকু পারি তোমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

_তারপর ওইদিন আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া। সবখুলে বললো রাকিব।সবটা শুনে রবিন একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বললেন, এইটুকু বয়সে তোমাদের উপরে… কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না।

মেহেদী – যা হওয়ার তা তো হয়েগেছে। এখন তোমাদের কাজ একটাই, তোমাদের মামার খুনিকে বের করে। উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া।

রাকিব – জ্বী ভাইয়া।

রবিন – আমাদের একটা কাজে বাহিরে যেতে হবে।যাও তোমার উপরে গিয়ে রেস্ট নাও। আমার লোক জন তোমাদের থাকার রুম দেখিয়ে দিবে।

মেহেদী – কোনো কিছু দরকার পড়লে আমাদের জানিও। কাল থেকে তোমাদের কাজ শুরু।এখন গিয়ে রেস্ট নাও।

তানভীর – ঠিক আছে।

_ একজন লোক আমাদেরকে নিয়ে উপরে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে আসলেন।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে দুজনে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে।নিচে যেতেই একজন কে দেখেই পুরো অবাক হয়ে গেলাম………..।

চলবে

_[ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন..!!