#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব – ১৩
– পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে গেলাম। নিচে গিয়ে দেখি সবাই সোফায় বসে গল্প করছে।আমাকে দেখে নিশি ভাবি বললো,কী ব্যাপার কোথাও যাবে নাকী?
তানভীর – একটু ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে। কিছু কাজ আছে। ফিরতে একটু দেরী হবে।
নিশি – আজকে কোনো কাজ করতে হবে না। আমি তোমার ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলে দিবো নে।
তানভীর – খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।আমাকে যেতেই হবে।
রাকিব – কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ?
তানভীর – হাতে বেশি সময় নেই।ফিরে এসে তোকে সব বলবো।
নিশি – চলো নাস্ত করে। তারপর যেখানে খুশি যাও। আমার কথা তো শুনবেই না। বাসা থেকে বের হলে তো আর বাসায় ফিরার খেয়াল থাকে না তোমার।
তানভীর – বাহিরে থেকে নাস্তা করে নিবো।
– ভাবি কিছু বলার আগেই বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।বাসা থেকে বের হয়ে। গাড়ি নিয়ে সোজা ফ্যাক্টরিতে চলে গেলাম। ফ্যাক্টরিতে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যেতেই মামুন ভাই বললো,কী ব্যাপার তুমি এই সময় ফ্যাক্টরিতে।কোনো কাজ আছে নাকি?
তানভীর – তেমন কোনো কাজ নেই। ইকরাম ভাই আজকে জেল থেকে বের হবে।ভাইকে আনতে সিলেট যেতে হবে?
মেহেদী – ইকরাম তো আজকে আসার কথা ছিলো না।
তানভীর – হুম জানি। কিন্তু একজনের মাধ্যমে ইকরাম ভাই ফোন দিয়ে বলেছে।আজকেই নারায়ণগঞ্জে চলে আসবে। সিলেটে কিছু কাজ ছিলো। সেগুলো পড়ে করবে।
মেহেদী – সেটা তুমি জানলে কীভাবে? আমাদের তো ফোন দিয়ে জানাই নি।
তানভীর – সিলেটে একজনের সাথে আমার পরিচয় ছিলো।তার কাছে ফোন দিয়ে ছিলাম। ইকরাম ভাইয়ের খোঁজ নেওয়ার জন্যে।
মেহেদী – ইকরাম তোমার সাথে কথা বলেছে?
– আমি কিছু বলার আগেই রবিন ভাই এসে বললো, ওকে এতো প্রশ্ন করছিস কেন? আমাদের লোকজন ও তাই জানিয়েছে।ও মিথ্যা বলছে না।
মেহেদী – তাহলে আমাকে বলিস নি কেন?
রবিন – সরি।তোকে জানাতে ভুলে গেছি। কিন্তু এখন জানানোর জন্য এসেছিলাম।তার আগে তো তানভীর বলে দিয়েছে।
মেহেদী – ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।আমরা এখুনি সিলেট উদ্দেশ্য রওনা দিবো। লোকজনের জানিয়ে দে।
– বলেই মেহেদী ভাই তার রুমে চলে গেলেন। মামুন ভাই চলে গেলেন লোকদেরকে জানানোর জন্য।
রবিন – ঠিক আছে। তুমি এখন বাসায় চলে যাও। এইদিকটা আমাদের লোকজন সামলে নিবে।
তানভীর – কিন্তু ভাইয়া এখন তো ইকরাম ভাইকে আনার জন্য সিলেট যেতে বলেছে।
রবিন – এতো চিন্তা কিসের?আমি আর মেহেদী যাচ্ছি তো।
তানভীর – তারপরও…..
রবিন – আর কোনো কথা শুনতে চাই না। নতুন বিয়ে করেছো। বাসায় গিয়ে নুসরাতকে সময় দাও।
তানভীর – ঠিক আছে।
– জানি এখন কিছু বলেও কোনো কাজ হবে না।তাই আর কিছু না বলে ওপরে চলে গেলাম।ওপরে যেতেই মামুন ভাই বললো, তুমি কি সিলেটে যাবে না নাকি?
তানভীর – যাওয়া আর হলো কোথায়?
মামুন – কেন?
তানভীর – রবিন ভাই বাসায় যেতে বলেছে।বাসায় গিয়ে নুসরাতকে সময় দেওয়া জন্য।
মামুন – ঠিকই তো বলেছে। নতুন বিয়ে করেছো তোমার এখন বাসায় থাকা উচিত।
তানভীর – হুম।চলেন আমার সাথে।
মামুন – কোথায় যাবো?(অবাক হয়ে)
তানভীর – বাহিরে থেকে নাস্তা করে। তারপর শুভদের বাসায় যাবো।
মামুন – বাসা থেকে নাস্তা করে আসো নি?
তানভীর – আপনার কি মনে হয়? এতো কথা না বলে চলেন তো।
– মামুন ভাই কিছু বলার আগেই টেনে নিয়ে গাড়িতে তুললাম। তারপর একটা হোটেলে গিয়ে। দুজনে হালকা কিছু খাবার খেয়ে নিলাম।
– খাওয়া দাওয়া শেষ হোটেলের বিল দিয়ে। বাহিরে এসে দোকান থেকে কিছু ফল কিনে।মামুন ভাইকে সাথে নিয়ে শুভদের বাসায় চলে গেলাম। বাসার সামনে গিয়ে। গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে গেলাম।
– ভিতরে গিয়ে আন্টির হাতে ফলগুলো দিতেই আন্টি বললো, এগুলো আনার কী দরকার ছিলো? তুই আমাদের বাসায় এসেছিস। এতেই আমি খুশি।
মামুন – নতুন বিয়ে করেছে তো তাই।
আন্টি – বিয়ে করেছে মানে?(অবাক হয়ে)
তানভীর – ওনার কথা বাদ দিন তো। শুভ কোথায়?ওকে ডেকে দিল।
আন্টি – ঠিক আছে।তোরা সোফায় গিয়ে বস।আমি শুভকে ডেকে দিচ্ছি।
– বলেই আন্টি চলে গেলেন। হঠাৎ মীম আপু এসে বললো, এতো দিন পর আমাদের কথা মনে পড়লো?
তানভীর – একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই আর কি। আচ্ছা মুক্তা কোথায়?
মীম – মুক্তা তো গতকাল মামার সাথে ঢাকায় চলে গেছে। কালকে আসলে হয়তো দেখা করতে পারতি।
তানভীর – কতদিন থাকবে ঢাকায়?
– মীম আপু কিছু বলার আগেই শুভ এসে বললো, আমারা ও দুই দিন পর ঢাকায় চলে যাবো।এই বাসা বিক্রি করে দিয়েছি।
তানভীর – হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত কেন?
শুভ – কী করবো? এখানে থাকতে মন চাইছে না। আব্বুর মৃত্যুর পর আম্মু কেমন জানি হয়ে গেছে।তাই ভাবছি ঢাকায় চলে যাবো।
মামুন – খুব ভালো বুদ্ধি। এখানে থাকলে তোমরা কেউ সহজে আংকেলের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভুলতে পারবে না।তার চেয়ে ভালো ঢাকায় চলে যাওয়া।
মীম – হুম। সেই জন্যই তো জায়গা চেঞ্জ করতে চাইছি।(মন খারাপ করে)
তানভীর – এইসব কথা এখন বাদ দাও।যা হওয়ার তা তো হয়েগেছে। এখন এইসব ভেবে মন খারাপ করে কোনো লাভ নেই। আন্টির সামনে কখনো মন খারাপ করে থাকবে না। সবসময় হাসিখুশি থাকবা। তোমাদের দেখে আন্টি কিছুটা হলেও খুশি থাকবে।
মীম – হুম।(একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে)
– হঠাৎ আন্টি এসে মামুন ভাইকে জিগ্গেস করলো, তুমি যেন কার বিয়ের কথা বললে?
মামুন – তানভীর বিয়ে করেছে। সেটাই বললাম আর কি।
শুভ – বিয়ে করেছে মানে?(অবাক হয়ে)
মীম – কাকে বিয়ে করেছে?
মামুন – নুসরাতকে।
আন্টি – কি হয়েছে সব খুলে বলো তো?
– আন্টির কথায় মামুন ভাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সব কিছু খুলে বললো।সবটা শুনে আন্টি খুশী হয়ে বললো, খুব ভালো হয়েছে।
মীম – নুসরাত কী বিয়েতে রাজী ছিলো?
তানভীর – হুম।
শুভ – ক্ষমতা আর টাকার লোভে একটা মানুষ এতোটা খারাপ হতে পারে?
তানভীর – হতে থাকুক। আর মাএ কটা দিন। তারপর ওর ভালো মানুষের মুখোশ সবার খুলে দিবো।
শুভ – তার মানে গতকাল তুই ঢাকায় গিয়ে ছামিকেও মেরেছিস?
তানভীর – হুম।
মীম – কিন্তু রনিকে কিছু করিস নি কেন? নাকি সে তোর মামাতো ভাই বলে?
মামুন – তুমি ভুল ভাবছো। রনিকেও ধরে আনার জন্য লোক পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু দুপুরের পর থেকে রনিকে খুঁজে পাওয়া যায় নি।
– তারপর আরো বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম। অবশেষে আন্টির জোড়াজোড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে। তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। মামুন ভাইকে ফ্যাক্টরিতে নামিয়ে দিয়ে। আমি বাসায় চলে আসলাম।
– গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ভিতরে গিয়ে। তিন্নির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।
চলবে।
#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব -১৪
তিন্নি – বাসার ভিতরে আসবে না চাচ্চু। বাহিরে গিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো।
তানভীর – কেন?(অবাক হয়ে)
তিন্নি – কি কথা ছিলো মনে নেই?
তানভীর – তাই বলে বাসার বাহিরে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো?
তিন্নি – হুম। ভুল যেহেতু করেছে। শাস্তি তো পেতেই হবে।(হাসতে হাসতে)
তানভীর – এটা কিন্তু ঠিক করেছো না। সামান্য একটু ভুলের জন্য এতো বড় শাস্তি।
তিন্নি – তাহলে তুমিই বলো তোমাকে কি শাস্তি দেওয়া যায়?
তানভীর – আজকের মতো ক্ষমা করে দাও। দ্বিতীয়বার আর ভুল হবে না।
তিন্নি – ক্ষমা করতে পারি একটা শর্তে।
তানভীর – কি শর্ত বলো?
তিন্নি – বিকালে আমাদের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে। রাজী থাকলে বলো।
তানভীর – ঠিক আছে। বিকালে ঘুরতে নিয়ে যাবো। এবার খুশি তো।
তিন্নি – হুম। অনেক খুশি।
তানভীর – তাহলে বিকালে রেডি হয়ে থেকো।
তিন্নি – ঠিক আছে।
নিশি – দুপুরের খাবার খাবে না। নাকী বাহিরে থেকে খেয়ে এসেছে?
তানভীর – শুভদের বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।
নিশি – হঠাৎ শুভদের বাসায় গিয়েছিলে কেন? তোমার তো সিলেটে যাওয়ার কথা ছিলো। তা সিলেট যাওনি কেন?(মুচকি হেসে)
তানভীর – যেতে আর দিলেন কোথায়? আপনার জন্যেই তো যাওয়া হয়নি।ভাইকে ফোন দিয়ে কী বলেছিলেন?
নিশি – তোমার ভাইয়া তোমাকে কিছু বলেনি?
তানভীর – হুম।বলেছে বাসায় যাও। বাসায় গিয়ে নুসরাতকে সময় দাও।
নিশি – তাহলে এখুনো এখানে বসে আছো কেন? তাড়াতাড়ি উপরে যাও।মেয়েটা কখন থেকে রুমে একা বসে আছে?
তানভীর – রুমে একা বসে আছে কেন? আপনাদের সাথে বসে আড্ডা দিলেই তো পারতো।
রাকিব – বলেছিলাম কিন্তু আমাদের কথা শুনে নি। বলেছে এখন এইসব ভালো লাগছে না। বলেই উপরে রুমে চলে গেলো।
নিশি – এতো কথা না বলে উপরে যাও তো।
– কিছু না বলে সোজা আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি নুসরাত জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।
তানভীর – কি হয়েছে এইভাবে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?
নুসরাত – কিছু না।
তানভীর – তোর কী শরীর খারাপ?
নুসরাত – না। আসলে আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়ছিলো তো তাই আর কি।
তানভীর – ওহ্ আচ্ছা।
নুসরাত – তুই সারাদিন কোথায় ছিলি?
তানভীর – বাহিরে কিছু কাজ ছিলো।
নুসরাত – খাবার খেয়ে ছিলি?
তানভীর – তুই এতো কিছু জেনে কী করবি?
নুসরাত – সকালে তো খেয়ে যাসনি।তাই জিগ্যেস করলাম?
তানভীর – আমাকে নিয়ে তোর এতো চিন্তা না করলেও চলবে।
নুসরাত – তুই আমার সাথে এইভাবে কথা বলছিস কেন?
তানভীর – এর চেয়েও আর ভালো ভাবে কথা বলতে পারি না আমি।(কিছুটা রাগ করে)
নুসরাত – কী হয়েছে তোর? আমার সাথে এইরকম ব্যবহার করছিস কেন?(গায়ে হাত দিয়ে)
তানভীর – ঠাসস ঠাসসসস। কোন সাহসে তুই আমার গায়ে হাত দিচ্ছিস।বিয়ে করেছি বলে ভাববি না। আমি তোকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি। যদি ভেবে থাকিস তাহলে ভুল। আর আমার কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার আশা করবি না।(গালে থাপ্পড় দিয়ে)
নুসরাত – তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করেছিস? অনিকের সাথেই আমার বিয়ে যেতো।(গাল হাত দিয়ে কেঁদে কেঁদে)
তানভীর – ঠাসস ঠাসসসস। অনিক কে বিয়ে করার খুব শখ তাই না। (রেগে গিয়ে)
– নুসরাত কিছু না বলে।গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। কোনো কথা বলছে না।
তানভীর – কি হলো কথা বলছিস না কেন?(ধমক দিয়ে)
নুসরাত – আমি তোকে ভালবাসি। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিস না।(কেঁদে কেঁদে)
তানভীর – তুই ভালোবাসিস আমাকে। ওই দিন কোথায় ছিলো তোর ভালোবাসা।সবার সামনে যখন বললি আমি আর রাকিব বড় মামাকে খুন করেছি।(ধমক দিয়ে)
নুসরাত – ওই দিন আমি মিথ্যা কথা বলতে চাইনি। কিন্তু…….
তানভীর – কিন্তু কী হ্যাঁ? তুই নিজের চোখে দেখেছিলি আমরা দুজনে মামাকে খুন করেছি?(জোরে ধমক দিয়ে)
নুসরাত – বিশ্বাস কর। ওইদিন তোদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।(কেঁদে কেঁদে)
তানভীর – হয়েছে আর নাটক করতে হবে না।ন্যাকা কান্না বন্ধ করে রেডি হয়ে নে। বিকালে সবাই বাহিরে যাবে ঘুরতে।
– বলেই রুম থেকে বের হয়ে পড়লাম। রুম থেকে বের হয়ে সাদে চলে গেলাম। সাদে গিয়ে রাকিবের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।
– তারপর বিকালে সবাইকে একসাথে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। ঘুরা ঘুরি শেষ করে। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।
– খাওয়া দাওয়া শেষ করে। ভাবি বলে একটা শপিং মলে গেলাম নুসরাতের জন্য কিছু জামাকাপড় কেনার জন্য। সবশেষে সবাই বাসায় ফিরে আসলাম।
– বাসায় এসে রাতে নুসরাত কে আমার রুমে ঘুমাতে বলে দিয়ে। আমি অন্য একটা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ করে রাত দুইটায় মামুন ভাইয়ের ফোনে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
– ফোন রিসিভ করতেই মামুন ভাইয়ের কথা শুনে। আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। হঠাৎ করে এমনটা হয়ে যাবে। আমি কখনো ভাবি নি।
চলবে।