তোকেই ভালোবাসি পর্ব-১১+১২

0
1774

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক- তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব – ১১

– আমি কিছু বলার আগেই আম্মু বললো,সরি বাবা। কিছু মনে করো না। তাড়াহুড়া করার জন্য খেয়াল করে নি।

তানভীর – কিছু মনে করে নি। আপনি যেতে পারেন।

আম্মু – কিন্তু কে তুমি ?আগে তো কখনও দেখি নি? আর তোমার পরিচয় কী?

তানভীর – পরিচয় দেওয়ার মতো কিছুই নেই।

আম্মু – কেন?

তানভীর – পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও মা বাবার আর পরিবারের কাছে মৃত।

আম্মু – আমার একটা কাজে। পরে তোমার সাথে কথা বলবো নে।

– বলেই আম্মু চলে গেলেন। দশ বছর নিজের সন্তান কে দেখেও চিনতে পারলো না।আর চিনবেই বা কীভাবে?আমি তো তাদের কাছে মৃত। আমি তো তাদের সন্তান না।

মামুন – কি হলো ছোট্ট ভাই? এখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

তানভীর – কিছু হয় নি।

মামুন – চলো ভিতরে যাই। মনে হয় কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ের কাজ শুরু করবে।

তানভীর – হুম চলেন।

– আমি মামুন ভাই আর আমাদের লোকজন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। রাকিবকে ফোন দেওয়া দুই মিনিট পর রাকিব আসলো।

রাকিব – যাক তাহলে তুই এসেছিস?

তানভীর – কেন? তুই কি ভেবেছিলি আমি আসবো না?

রাকিব – এইসব এখন বাদ দে। চল সাদে গিয়ে বসে কথা বলে বলি।

মামুন – এটাই ভালো হবে।চলো সবাই।

– তারপর সবাইকে নিয়ে সাথে গেলাম। গিয়ে দেখি জান্নাত আর কিছু মেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আমাকে দেখেই জান্নাত বললো, ভাইয়া আপনি আজকে এখানে আসবেন। আমি কখনো ভাবিনি।(অবাক হয়ে)

তানভীর – কেন?

জান্নাত – আপনি তো সারাদিন বাসায় থাকেন না। নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন।

তানভীর – ওহ্ আচ্ছা।

জান্নাত – ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনাকে এখানে দেখে আমি অনেক খুশি হয়েছি।

তানভীর – এতো খুশি হওয়ার কারণ কী?

জান্নাত – সেটা আমি নিজেও জানি না।

তানভীর – ঠিক আছে। তোমার সাথে পরে কথা হবে। তোমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে একটু নিচু যাও। আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

জান্নাত – ঠিক আছে ভাইয়া।

– বলেই জান্নাতের ফ্রেন্ডদেরকে নিয়ে চলে গেলে। জান্নাতের চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ রাকিব বললো, এইভাবে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। আম্মু,আব্বু ভাইয়া,বড় আপু সবার সাথে দেখা হয়েছে। কিন্তু মন খুলে কারো সাথে কথা বলতে পারেনি।

তানভীর – এইসব ছাড়া অন্য কথা থাকলে বল। এগুলো শুনতে ভালো লাগে না।

মামুন – রাকিব আজকে রনি কোথায়? বাড়িতে ও তো নেই।

রাকিব – জানি না। দুপুরে ওর বন্ধুদের নিয়ে কোথায় গেছে।

তানভীর – ওর ভাগ‍্য ভালো যে আজকে বেঁচে গেছে।

মামুন – এতো চিন্তা কিসের? সামি কে তো শেষ করে দিয়েছো।

রাকিব – মামুন ভাই যা বলছে সত্যি।

মামুন – তোমার কি মনে হয়? আমি মিথ্যা কথা বলছি।

রাকিব – কেউ যদি জেনে যাই। তখন কী হবে?

তানভীর – সেইসব নিয়ে তোকে এতো চিন্তা করতে হবে না। নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নে।

রাকিব – ঠিক আছে। আমি একটু নিচে যাচ্ছি রিয়ার সাথে দেখা করার জন্য।

তানভীর – যা করার ভেবে চিন্তে করিস।

রাকিব – হুম।

– বলেই রাকিব চলে গেলো। আরো কিছুক্ষণ গল্প করার পর। হঠাৎ রাকিব ফোন দিয়ে বললো, কোথায় তুই?তাড়াতাড়ি স্টেজের কাছে আয়।এইদিকে বিয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে।

তানভীর – ঠিক আছে। তুই ওখানে দাঁড়া আমি আসছি।

– ফোন কেটে দিয়ে সবাইকে নিয়ে নিচে চলে গেলাম। স্টেজের সামনে গিয়ে দেখি নুসরাত বসে আছে।ওর চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে অনেক কান্নাকাটি করছে। আর পাশে স্টেজে অনিক বসে আছে।

তানভীর – মন্ত্রী সাহেব এক মেয়েকে কতোবার বিয়ে দিবেন?

ছোট্ট মামা – মানে কী?

মামুন – মানে নুসরাত তানভীরের বিবাহিতা স্ত্রী। ওদের দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে।

ছোট্ট মামা – তানভীর কে?আর ওদের বিয়ে হয়েছে কখন?

মামুন – আপনার বড় ভাইকে খুনের দায়ে যাকে দশ বছর জেলে থাকতে হয়েছে।

তানভীর – আরে মামা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? আমরাই সেই দুজন যাদের মিথ্যা অভিযোগে জেলে পাঠিয়ে ছিলেন। এই যে রাকিব আপনার মেয়ের জামাই।মানে আপনার বড় বোনের ছেলে।

ছোট্ট মামা – তার মানে তুই তানভীর আর ও রাকিব?

তানভীর – কেন কোনো সন্দেহ আছে?

ছোট্ট মামা – আমার সাথে এতো বড় মিথ্যা কথা। কেন করেছিস এইসব? কি চাস তোরা?(জোরে ধমক দিয়ে)

রাকিব – বড় মামার খুনির শান্তি।

ছোট্ট মামা – তোরাই তো ভাইজানকে মেরেছিস? আবার এখানে এসে বড় গলায় কথা বলছিস?

তানভীর – মন্ত্রী সাহেব আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। একটু ভেবে দেখুন সেই দিন ঠিক কি কি হয়েছিলো?

ছোট্ট মামা – এতো কিছু ভেবে দেখতে পারবো না। তুই কেন মিথ্যা কথা বলে। আমার মেয়েকে রাকিবের সাথে বিয়ে করালি?

তানভীর – কিছু মানুষকে ভয় দেখিয়ে। ইজ্জত নষ্ট করার হুমকি দিয়ে। স্ত্রীর চিকিৎসা না করার হুমকি দিয়ে। মিথ্যা নাটক সাজিয়ে। আমাদের দশ বছর জেলে রাখতে পারেন। আপনার টাকা আর ক্ষমতার জোরে।আর আমরা সামান্য মিথ্যা কথা বলতে পারি না।

ছোট্ট মামা – কী বলতে চাইছিস? আর এতো কিছু তুই …

তানভীর – হুম এতোকিছু কীভাবে জানলাম। সেটাই বলবেন তো?

ছোট্ট মামা – তোরা ভাইজানকে মেরেছিস।সেটা সবাই জানে। মিথ্যা কথা বলে কোনো লাভ নেই। অফিসার দুজনকে ধরে থানায় নিয়ে যান।(পুলিশ অফিসারকে উদ্দেশ করে)

চলবে।

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব – ১২

রাকিব – কোন অপরাধে আমাদেরকে থানায় নিয়ে যাবেন?

বড় আন্টি – তোদের সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।ভাইজানকে মেয়ে দশ বছর জেলে ছিলি। তারপর ও তোদের শিক্ষা হয় নি?

তানভীর – আরে ম্যাম সাহসের কি দেখেন? এখনও অনেক কিছু দেখার বাকী।

আম্মু – কোনো সাহসে তুই এই বাড়িতে এসেছিস?(ধমক দিয়ে)

তানভীর – সরি ম্যাম। আমরা এখানে থাকার জন্য আসে নি। নুসরাত কে নিয়েই চলে যাবো।

– আমার মুখে ম্যাম ডাক শুনে আম্মু আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ভাইয়া, আব্বু,বড় আপু, জান্নাত সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। হঠাৎ মেজো মামা বললো,কোন সাহসে তুই আমার মেয়েকে বিয়ে করেছিস?

তানভীর – বিয়ে করতে সাহস লাগে নাকি?

মেজো মামা – চুপ বেয়াদব।আর একটা কথা ও বলবিনা। তোর মতো খুনির কাছে আমার মেয়ে কখনো বিয়ে দেবো না।

রাকিব – আপনি কি বিয়ে দিবেন? ওদের বিয়ে তো হয়েগেছে।

মামুন – এই নিন ওদের বিয়ের কাবিন নামা। বিশ্বাস না হলে দেখে নিতে পারেন।

– মামুন ভাই কাবিনের কাগজটা মামার হাতে দেওয়ার সাথে সাথে ছিঁড়ে ফেললো।রেগে গিয়ে বললেন,এই বিয়ে আমি মানি না।

তানভীর – কাবিনের কাগজ ছিঁড়ে কোনো লাভ নেই। এটা ফটো কপি ছিলো। আপনি বিয়েটা মানেন আর না মানেন তাতে আমার কিছু আসে যায় না।

মেজো মামা – তুই কীভাবে ভাবলি? আমি আমার মেয়েকে বড় ভাইয়ের খুনির হাতে তুলে দিবো।

তানভীর – আপনাকে বলছি আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিতেন ।আর আপনার বড় ভাইকে আমারা মারে নি।বার বার এক কথা বলবেন না।

ছোট্ট মামা – তাহলে ভাইজানকে কে মেরেছে আমি?(ধমক দিয়ে)

রাকিব – আমাদের তো তাই মনে হয়?

ছোট্ট মামা – কি বলতে চাস তুই?(রেগে গিয়ে)

তানভীর – যারা বলার সেটা তো আপনি বলেই দিয়েছেন। আমরা আর কি বলবো?

রাকিব – বড় মামাকে কে মেরেছে। জিগ্গেস করার কি বলেছিলো জানেন? তোদের ছোট্ট মা.. বাকিটা বলার আগেই মৃত্যু হয়।এতে কি বোঝা যায়?

তানভীর – আর আমাদের তো ছোট্ট মা বলে কেউ নেই।আছে ছোট্ট মামা। আর সেটা হলেন আপনি।

ছোট্ট মামা – তার মানে তুই বলতে চাইছিস। আমি ভাইজানকে খুন করেছি?

তানভীর – কিছু ভুল বললাম নাকি?

ছোট্ট মামা – অফিসার এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী দেখছেন? ওদেরকে ধরে থানায় নিয়ে যান।(জোরে ধমক দিয়ে)

পুলিশ অফিসার- বেশি হিরোগিরি দেখি ও না। স‍্যার যেটা বলছে সেটা মেনে নিয়ে।এখান থেকে ভালোই ভালোই চলে যাও।তা না হলে থানায় নিয়ে…

তানভীর – থানায় নিয়ে গিয়ে কী হ‍্যাঁ ? আইন কী আপনার নিজস্ব সম্পত্তি মনে করেন ? যখন যা খুশি জায়গায়া মতো ব্যবহার করবেন?(রেগে গিয়ে)

– কিছু কথা বলি কানে খুলে শোনে রাখেন।আজ থেকে দশ দিন আগে এখানকার কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে ধর্ষণ হয়েছিলো।কারা প্রিন্সিপালের মেয়েকে ধর্ষন করেছে।সেটা আপনি কিংবা আপনার পুরো ডিপার্টমেন্ট ভালো করে জানে।

– এই যে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মন্ত্রী আসাদ চৌধুরী তার বন্ধু এমপি আনিস রায়হান। আমার দুর্ভাগ্য যে ওনি আমার মামা হয়। ওদের দুজনের ছেলে কিন্তু ধর্ষনের সাথে জড়িত।ওই কলেজের সভাপতির ছেলে আশরাফুল সেও জড়িত ছিলো।

– আপনার স্যারের ছেলে রনি।ওর বোনের বিয়ে দুই দিন আগে। নারায়ণগঞ্জে সাথে তিন বন্ধু নিয়ে একজনকে ধর্ষন করে।

– কি শাস্তি দিয়েছেন ওদের? ক্ষমতা আর টাকার জোরে এইভাবে আর কতোদিন অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। আদালতে প্রমাণ করে দিয়েছেন।টাকা আর ক্ষমতার জোরে সব কিছু করা যায়।

– যে মেয়েটা সবসময় পর্দা করতো। বাড়ি থেকে বাহিরে বের হলে কখনো পর্দা করা ছাড়া বের হতো না। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতো। সবচেয়ে বড় কথা সে একজন কোরআনের হাফেজা ছিলো।

– আদালতে গিয়েছিলো অপরাধীদের বিচার চাইতে।কিন্তু আপনারা কি করেছে? তাকে পতিতা হিসাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন।এটাও বলেছেন যে সে পর্দার আড়ালে দেহ ব্যবসা করে। কেন কী অপরাধ ছিলো তার? বিচার চাওটা কী তার অন‍্যায় হয়েছে ?(প্রচন্ড ভাবে রেগে গিয়ে)

– আর বেশি কিছু বলবো না। আগামী দুই দিনের মধ্যে ওদেরকে সহ। যারা প্রিন্সিপালের মেয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দিয়েছে। সবাইকে আইনের আওতায় দেখতে চাই।

– ওদের সবাইকে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। আশাকরি একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে। আপনি আপনার দায়িত্বটুকু পালন করবেন।

– আর যদি ওদেরকে গ্রেফতার করতে না পারেন। বা কোনো সমস্যা হয় আমাকে জানাবেন। আমি আমার লোকজন দিয়ে ওদেরকে ধরে। আপনার কাছে নিয়ে আসবো। তবুও ওদের অপরাধের শাস্তি ব্যবস্থা করবেন।

– আর যদি সেটা করতে না পারেন। গাঁয়ে থেকে পুলিশের পোষাকটা খুলে ফেলবেন। আপনাদের মতো পুলিশ অফিসারের কোনো দরকার নেই।

– একজন ভাই হিসাবে। বোনদের ধর্ষণের প্রতিশোধ নিবো। তখন আমার কাছে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কিন্তু ঠেকাতে পারবে না। কথাগুলো মাথায় রাখবেন।

– কথাগুলো শুনে সবাই নিশ্চুপ হয়ে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।সবাই অবাক দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

তানভীর – নুসরাত চলে আয়। আমাদের চলে যেতে হবে।

– বলার সাথে সাথে নুসরাত স্টেজ থেকে নেমে। সোজা আমার কাছে চলে আসলো। কেউ কোনো বাধা দিলো না।

মামুন – ছোট্ট ভাই চলো এখান থেকে। আর এক মুহূর্ত এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।

রাকিব – হে ভাই চল।

– কারো সাথে কোনো কথা না বলে। সবাইকে নিয়ে বাহিরে এসে গাড়িতে উঠলাম। গাড়িতে উঠে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলাম। তারপর ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকে রওনা দিলাম।

– নারায়ণগঞ্জে আসার পর। মামুন ভাইকে ফ্যাক্টরিতে নামিয়ে দিয়ে।লোকদেরকে বলে বাসায় চলে গেলাম। তারপর রুমে গিয়ে নুসরাত কে খাটে শুতে দিয়ে। আমি গিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে………..

চলবে।