তোকেই ভালোবাসি পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
4003

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
#পর্ব – ৩০

– তিন দিন পর নুসরাতকে হাসপাতাল থেকে মামার বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো।এখন নুসরাত পুরোপুরিভাবে সুস্থ। দুইদিন আগে রবিন ভাই এসে নিশি ভাবি আর তিন্নি কে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে গেছে।সাথে মামুন ভাই আর লোকজন ও চলে যায়।

– নুসরাতকে বাসায় নিয়ে যাওয়া খবর শুনে।আম্মু, আব্বু, তানিশা আপু, তামিম ভাইয়া, জান্নাত,তানিয়া ভাবি, রোহান ভাইয়া, আংকেল, আন্টি সবাই আজকে মামার বাসায় এসেছে। পরিবারের সবাই আজ অনেক খুশি।

– বিকালে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।খাবার দেওয়ার পর হাত ধোয়ার সময় হঠাৎ আব্বু জিগ্গেস করলো, তানভীর তোর হাতে ওটা কিসের দাগ?

তানভীর – ও কিছু না। সামান্য কেঁটে গিয়েছিলো।

তানিশা – মিথ্যা কথা বলছিস কেন?

তানিয়া – সামান্য কেঁটে গিয়েছিলো?আমি তো তখন দেখে ছিলাম।দেখে তো মনে হয়েছিলো কেউ তোমার হাতে আঘাত করেছিলো।

তানভীর – ভাবি এখন এইসব বাদ দেন তো।

আন্টি – কি হয়েছিলো?বল সবাইকে তাহলে তো আর কেউ জিগ্গেস করবে না।

রাকিব – আমি বলছি, হিয়াকে ছোট্ট মামার লোকজন তানভীরের সামনে থেকে তুলে এনে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। সেই সময় শুভ পেছন থেকে হিয়ার হাত ধরে রেখেছিলো।যাতে হিয়াকে ছোট্ট মামার লোকজন না নিয়ে আসতে পারে।এটা দেখে একজন শুভর পেটে চাকু দিয়ে আঘাত করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার আগে তানভীর ওই চাকুটা ধরে ফেলে। যার কারণে ওর হাত কেঁটে গিয়েছিলো।

তানিয়া – দেখলেন বাবা আমার ধারণাই ঠিক হয়েছে। আমি দেখেছি ওইদিন ওর হাত থেকে অনেক রক্ত পড়ছিলো।আর ও কিনা বলছে সামান্য একটু কেটে গিয়েছিলো।

তামিম – এই এবার বাদ দাও তো। খাওয়া দাওয়া সেরে তারপর গল্প করো।

আম্মু – দাঁড়া আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।

তানভীর – আম্মু তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি খেতে পারবো।কোনো সমস্যা হবে না।

আম্মু – আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। এতোদিন হাতে ব্যান্ডেজ করা ছিলো। তাই কিছু দেখতে পাইনি। হাতের কাঁটা অংশ এখনও পুরোপুরিভাবে ভালো হয়নি। আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নে।

– তারপর আম্মু অামাকে খাইয়ে দিলো।আমি আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেতে নিলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই একসাথে গল্প করতে বসলো।

– আমি উপরে রুমে গেলাম মোবাইল আনার জন্য। অনেক খুঁজাখুঁজি পর ও রুমে কোথাও মোবাইল খুঁজে পেলাম না। অবশেষে হতাশ হয়ে নিচে চলে আসলাম।

– নিচে এসে নুসরাতকে কিন্তু জিগ্গেস করার আগেই জান্নাত বললো,ভাইয়া তুই কী কিছু খুঁজছিস?

তানভীর – আমার মোবাইল খুঁজে পাচ্ছি না।

জান্নাত – তোর মোবাইল ভাবির কাছে।

তানভীর – ওহ্ আচ্ছা।

আন্টি – সবাই বসে এখানে গল্প করছে।আর তোরা দুজনে চলে গেলি কেন?

রাকিব – কি করবো কেউ কী আমাদের সাথে গল্প করবে নাকি?

তানভীর – হুম ঠিক বলেছিস। কেউ তো আমাদের সাথে কথা বলে না।তো আমরা এখানে থেকে কী করবো?

রিয়া – এই কথাগুলো কাকে বলছিস? ঠিক বুঝতে পারলাম না।

তানভীর – যাদের বলেছি তারা ঠিকই বুঝেছে। এখন আরো কারো না বুঝলেও চলবে।

রাকিব – একদম ঠিক বলেছিস।(মুচকি হেসে)

জান্নাত – ভাইয়া কাকে এই কথাগুলো বলছে।আর কেউ না বুঝলেও। আমি কিন্তু ঠিকই বুঝেছি।(হাসতে হাসতে)

আংকেল – তো আপনিই বলেন কাকে কথাগুলো বলেছে?

জান্নাত – রোহান ভাইয়া, তামিম ভাইয়া আর তানিশা আপুকে।কি ঠিক বললাম তো?

আব্বু – এখন ভুল হলেও তোর কথাই ঠিক।

তানভীর – কেন?(অবাক হয়ে)

আব্বু – কেন আবার ও যা বলে সব কথাই আমাদের মেনে চলতে হয়।

রাকিব – আর যদি না মানেন?

আব্বু – তাহলে বাসায় কেউ শান্তি মতো থাকতে পারবে না। সারাদিন বাসায় চেঁচামেচি করবে। কাউকে শান্তি মতো থাকতে দিবে না।(হাসতে হাসতে)

তানভীর – কেন ও কী ছোট্ট বাচ্চা নাকী?

তানিয়া – ধরে নাও সেটাই। তোমার বোন ছোট্ট বাচ্চার চেয়ে কোন দিক থেকে কম না।বড় হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনোও ছোট্ট বাচ্চাদের মতো বায়না ধরে।আর সেগুলো আমাদের প্রত্যেকের মেনে চলতে হয়।

জান্নাত – এবার কিন্তু আমাকে অপমান করা হচ্ছে।(কান্নাভেজা কন্ঠে)

– জান্নাতের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠলো। সবাইকে একসাথে হাসতে দেখে। জান্নাত কিছুটা রেগে বললো, এইভাবে হাসলে কিন্তু আমি একা একা বাসায় চলে যাবো।

আংকেল – ঠিক আছে। আমরা কেউ হাসবো না। এবার খুশি?

জান্নাত – হুঁ।(অভিমানী কন্ঠে)

– আরো ঘন্টাখানেক সবাই একসাথে আড্ডা দিয়ে রুমে চলে গেলাম। তারপর রাতে দুজনে একসাথে সাদে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ নুসরাত বললো, আচ্ছা খাবার টেবিলে সবাকে মিথ্যা কথা বললি কেন? আর ছোট্ট চাচ্চুর কথা বললি না কেন?

তানভীর – তখন ছোট্ট মামার কথা বললে কী হতো? কয়েক দিনের মধ্যেই ছোট্ট মামার ফাঁসি হয়ে যাবে। তাছাড়া এমনিতেও রিয়া আর ছোট্ট মামীর মনের অবস্থা বেশি ভালো না। সেই জন্যই তখন ছোট্ট মামার বিষয়টা এড়ানোর চেষ্টা করেছি।

নুসরাত – হুম।(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)

তানভীর – কী হয়েছে তোর মন খারাপ?

নুসরাত – আমার মন খারাপ থাকলে কার কী?

তানভীর – সেটা অবশ্যই ঠিকই বলেছিস।

নুসরাত – আমাকে তুই দেখতে পারিস না। বিয়ে করেছিস কিন্তু স্ত্রীর অধিকার দেসনি। তাহলে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিস কেন?

তানভীর – কারণটা খুব সহজ তুই আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলি।তাই আমি রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছি। আমি তো খুব খারাপ। তাহলে ওইদিন আমাকে বাঁচিয়েছিলি কেন?

নুসরাত – তার কারণ ও খুব সহজ আমি তোকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই তোকে বাঁচিয়েছি।(কান্নাভেজা কন্ঠে)

নুসরাত – আমার কাছ থেকে নিজেকে এইভাবে আর কতোদিন দূরে সরিয়ে রাখবি?আর কত কষ্ট দিবি আমাকে? আচ্ছা ঠিক আছে।আমাকে তোর ভালোবাসতে হবে না।আমি একাই তোকেই ভালোবেসে যাবো। তবুও আমাকে তোর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিস না প্লীজ।(কেঁদে কেঁদে)

তানভীর – এতোদিন তোর সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করছি। সত্যিটা না জেনে অনেক কথা শুনিয়েছি।সব কিছুর জন্য দুঃখিত। আমাকে ক্ষমা করে দে।কথা দিচ্ছি তোকে আর কখনো কষ্ট দিবো না।(হাত ধরে)

– বলার সাথে সাথে নুসরাত আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। কোনো কথা না বলে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে ।

তানভীর – কি হলো কথা বলছিস না কেন? আমাকে ক্ষমা করবি না?

– নুসরাত কোনো কথা না বলে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।

তানভীর – কী হলো বল?

নুসরাত – আজ আমার তোর প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তুই যখন আমার হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছিস। বিশ্বাস কর মুহূর্তের মধ্যে আমি সবকিছু ভুলে গিছি।আজ আমি অনেক অনেক খুশি। আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পেয়েছি আজ।(জড়িয়ে ধরে)

তানভীর – সত্যি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস?(অনেক খুশি হয়ে)

নুসরাত – হুম সত্যি।(কপালে চুমু দিয়ে)

– কপালে চুমু দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে বললো, একবার বলনা প্লীজ।

তানভীর – কী বলবো?

নুসরাত – আমাকে ভালোবাসিস।

তানভীর – হুম।

নুসরাত – কী হুম?

তানভীর – তোকেই ভালোবাসি।

– সাথে সাথে বুকে মুখ লুকিয়ে,নুসরাত আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ভালোবাসার পাগলামি চলতেই থাকবে।এই নিয়ে আর দূরে না যায়। এখানেই বিদায় নিলাম।দেখা হচ্ছে আগামী গল্পে।

– সবাই সুস্থ থাকুন – নিরাপদে থাকুন এটাই প্রত্যাশা রইল। আল্লাহ হাফেজ।।

।।______________।সমাপ্ত।____________।।