মুখোশের_আড়ালে পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
2137

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ16/অন্তিম পর্ব

ভেতরে প্রবেশ করা লোকটির দিকে আরিয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,লোকটি আর কেউ না সিয়াম…সিয়াম আরিয়ানের সামনে এসে ওর মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো,

সিয়ামঃবেশি হিরোগিরি দেখাতে এসেছিস তাই না,আজ তোর এই হিরোগিরি শেষ করে দেবো…রাইয়ের সাথে তোর অনেক ভাব তাই না…আজ রাইয়ের সামনে তোর হিরোগিরির ১২ টা বাজাবো…রাজ রাইয়ের চোখের বাধন খুলো,সাথে রিমিরও
.
রাজঃওকে

রাজ রাইয়ের চোখের বাধন খুলে দেয়,সিয়ামের কিছু লোক রিমির হাত পায়ের বাধন খুলে একটা চেয়ারে বসায়…রাই আস্তে আস্তে ওর চোখ খুলার চেষ্টা করে,রাইয়ের চোখজোড়া জ্বলছে,মাথাটা ভার ভার লাগছে,চোখজোড়া খুলে সামনে থাকা লোকগুলোকে দেখে ভয়ে চুপসে যায়..সিয়াম আর রাজকে দেখে রাই জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,

রাইঃকি চান আপনারা??কেনো এসব করছেন?(কাঁদতে কাঁদতে)রিমি…রিমি কোথায়??

সিয়াম রাইয়ের কাছে এসে ওর মুখ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

সিয়ামঃচুপ একদম চুপ…এত রিমি রিমি করার কি আছে??আগে তো মিমি মিমি করতি দিলাম তো ওকে শেষ করে,এখন রিমি রিমি করছিস,ওকেও শেষ করে ফেলবো তোর চোখের সামনে…
.
রাইঃকিহ আপনি মিমিকে মেরেছেন??
.
সিয়ামঃহ্যাঁ আমি মেরেছি,আমি ওকে শেষ করেছি যেমনটা আমি চেয়েছিলাম…(রাইকে ছেড়ে দিয়ে)
.
রাইঃতোকে আমি ছাড়বো না…তুই আমার কলিজাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিস,তোকে আমি খুন করবো,আমায় একবার ছাড়
.
সিয়ামঃগলার অনেক জোড় বেড়েছে(রাইয়ের গালে জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে)
.
রাজঃসিয়াম এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে,তুমি বলেছিলে রাইকে কিছু করবে না…ওর গর্ভে আমার সন্তান বড় হচ্ছে,দয়া করে ওর ক্ষতি করো না,তুমি যা বলছো আমি তাই করছি শুধু মাত্র রাইকে আমার করে পাওয়ার জন্য…এবার ওকে ছেড়ে দাও
.
রাইঃতোর মতো জানোয়ারের সাথে যাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো,তোকে নিজের ভাইয়ের মতো ভাবছি আর তুই ছিঃ ঘেন্না আসে তোর প্রতি,আর তোর বাচ্চা বলবি না ও আমার বাঁচা তোর মতো জানোয়ারের পরিচয় দিয়ে আমি ওকে বড় করবো না
.
রাজঃরাই প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্য করেছি…সিয়াম প্লিজ তোমার লোকদের বলো ওকে ছেড়ে দিতে
.
রাইঃআমি তোদের কাওকে ছাড়বো না…আরিয়ান ভাইয়া প্লিজ কিছু করো,তুমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেনো??ওদের মেরে ফেলো প্লিজ…
.
সিয়ামঃচুপ একদম চুপ(জোরে ধমক দিয়ে)আসিফ রাজকে দড়ি দিয়ে বান,ব্যাটা বেশি উরতাছে…
.
রাজঃবাঁধবে মানে…সিয়াম এটা কিন্তু কথার মধ্যে ছিল না…
.
সিয়ামঃEverything is fair in love and war my dost…তুমি আমার জন্য এত কিছু করেছো আর আমি করবো না তা কি হয় নাকি…তাই তো তোমায় বাঁধতে বলেছি,আসিফ কথা কি কান দিয়ে যায় নি

সিয়ামের কথামতো আসিফ রাজকে ধরে দড়ি দিয়ে একটা চেয়ারের সাথে বাধে…রাজ চেঁচামেচি করলেও সিয়াম তার কিছুই শুনে নি,সে তো নিজের স্বার্থে ব্যস্ত,রাইয়ের কাছে গিয়ে রাইয়ের গাল ধরে বলে উঠলো সে,

সিয়ামঃএটা কোন জায়গা চিন্তে পারছো রাই
.
রাইঃনা এটা কোন জায়গা??
.
সিয়ামঃএটা তোমার বাবার ফ্ল্যাট…তোমরা নাকি মধ্যবিত্ত পরিবার
.
রাইঃমানে…
.
সিয়ামঃহা হা হা হা মানে…এই প্রোপার্টির জন্য আমি কত কি না করেছি,আমাকে খুন পর্যন্ত করতে হয়েছে??এত সহজে আমি এসব ছাড়বো না,তোমাকেও না রাই…তোমাকে আমার চাই-ই চাই…এই টসটসা যৌবন সবই আমার চাই…
.
রাজঃমুখ সামলে কথা বল,ও আমার বিয়ে করা বউ,বাজারের কোনো পণ্য নয় যা ইচ্ছে বলবি…
.
সিয়ামঃবাহ দরদ দেখি উতলে পরছে
.
রাইঃআরিয়ান ভাইয়া আপনি চুপ করে আছেন কেনো??কিছু তো করুন…
.
সিয়ামঃও এখন কিছুই করতে পারবে না,ও যে এখন আমার কথাই শুনবে…
.
রাইঃমানে…
.
সিয়ামঃএত কিছু তোমায় জানতে হবে না ডার্লিং…চলো আমরা চোর পুলিশের গেইম খেলি…এই পিস্তলে একটা গুলি ভরবো,এক এক করে সবার মাথায় ধরবো যার ভাগ্য ভালো সে বেচে যাবে আর যার ভাগ্য খারাপ সে চান্দের দেশে চলে যাবে…

কথাগুলো বলেই পৈচাশিক হাসিতে মেতে উঠে সিয়াম…আড়াল থেকে সব কিছুই খেয়াল করছিল ইকবাল,সে আর এসব সহ্য করতে পারছে না,সে আরিয়ানের ইশারার অপেক্ষায় আছে কিন্তু আরিয়ান এরকম বিহেভ কেনো করছে তাই সে বুঝতে পারছে না…সিয়াম পিস্তলে একটা গুলি ভরে,তা ঘুরিয়ে রাজের মাথার দিকে ধরে চাপ দিলো কিন্তু রাজের কিছুই হলো না…এবার রিমির দিকে তাক করলো রিমিরও কিছু হলো না…রাইয়ের দিকে পিস্তলটা ধরতেই আরিয়ান ইকবালকে ইশারা করলো,ইকবাল আরিয়ানকে পিস্তল দিতেই সিয়ামের হাতে গুলি করলো সে…ইকবালসহ আর বাকি অফিসাররা সিয়াম আর সিয়ামের লোকদের উপর অ্যাটাক করলো,আরিয়ান সিয়ামের সামনে এসে বসে বললো,

আরিয়ানঃচোর পুলিশ খেলার খুব শখ তোর তাই না,আজ তোকে দিয়ে আমি চোর পুলিশ খেলা খেলবো…
.
সিয়ামঃতুই…তুই তো
.
আরিয়ানঃকি ভাবছিস আমি তো তোর কথা শুনার কথা তাই না…আরিয়ান তোর মতো এত কাঁচা খেলোয়াড় না…আরিয়ান সেদিনই বুঝতে পেরেছিল ডাল মে কুছ কালা হে…আমায় নেশা করিয়ে ভেবেছিস যা ইচ্ছে করবি,সেদিন মাথা ধরা বমি,হঠাৎ আমার রাইয়ের রুমে থাকা বেশ গোলমাল লেগেছিল,কিন্তু আরিয়ানের মাথা ঠিক কাজ করেছিল তাই তো এত অভিনয় করেছি…
.
সিয়ামঃঅভিনয় করেছিস মানে…
.
আরিয়ানঃমানে খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবি…(শয়তানি হাসি দিয়ে)

আরিয়ান ফোন করে নীরবকে আসতে বলে…কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরব ওর মা বাবা,মিমির মা বাবা আর ইরাকে নিয়ে সেখানে পৌঁছে যায়…সবাইকে এক সাথে দেখে রাজ ঘাবড়ে যায়…রাইয়ের মা বাবা রাইকে আর রিমিকে উঠিয়ে পানি দেয়…আরিয়ান সিয়ামের কাছে গিয়ে জোরে জোরে কয়টা থাপ্পড় আর ঘুষি দিয়ে বলে উঠলো,

আরিয়ানঃঅপরাধ কি সব তুই স্বীকার করবি নাকি আমি সব বলবো
.
নিরবঃআরিয়ান আমি ওকে সব বলছি,নিজেকে বেশি সেয়ানা ভাবে…
.
রাইঃভাইয়া তুই কি জানিস…
.
নিরবঃআমি অনেক কিছুই জানি কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল আর আমিও হসপিটাল ছিলাম যার জন্য সিয়াম আর রাজ মিলে এসব করতে পেরেছে…
রাইয়ের সাথে ঘটা ঘটনাগুলো আমি শুরু থেকেই জানতাম,মিমি আমায় শুরু থেকে সবটা জানিয়েছিল…আমি আর মিমি মিলে ছেলেটাকে ধরতেই ক্যামেরা লাগিয়ে ছিলাম,শুধু তোর রুমে নয় বলতে পারিস সবার রুমে শুধু আব্বু আম্মুর রুম বাদে…রাই নিজেও মিমির সাথে মিলে ক্যামেরা লাগিয়েছিল তাও আমি আর মিমি নিজের থেকে সবটা হ্যান্ডেল করার জন্য ক্যামেরা লাগিয়েছিলাম,রাইয়ের ক্যামেরার কথা সবাই জানলেও আমার আর মিমির লাগানো ক্যামেরার কথা আমি আর মিমি ছাড়া কেউ জানবে না…(কিছুটা থামলো)

নীরবঃঅবশ্য ক্যামেরা থাকা ভিডিও গুলো আমাদের দেখা হয় নি,আমি নানান কাজে বিজি থাকতাম মিমিকে জিজ্ঞাসা করার মতো সময়টুকুও পেতাম না।।
রাই যে ক্যামেরা লাগিয়েছিল তার থেকেই সবটা জেনে মিমি আমাকে বলেছিল কাজগুলো রাজ করছে,বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও করতে হয়েছে…নিজের রাগকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল রেখেছিলাম শুধু মাত্র মিমির কথায় আর রাজের সামনে অভিনয় করেছিলাম যে আমি কিছু জানি না..মিমি আমায় বারণ করেছিল রাই বা রাজকে কিছু না বলতে তাই আমি সবটা চুপ করে সহ্য করেছিলাম।।মিমি আর আমি ভাবি নি ব্যপারটা রাইয়ের প্রেগন্যান্ট অব্দি চলে যাবে,সেদিন মিমি সবাইকে রাজের আসল রূপের কথা বলে দিয়েছিল…রাজের উপর আমার আগে থেকেই রাগ ছিলো,ও যখন রাইকে বাজে ইঙ্গিত করেছিল পরে আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারি নি,রাজকে মেরেছিলাম..রাজকে সেদিন মারার পরেও ব্যপারটা অন্য দিকে ঘুরে যায়,জানতে পারি রিতুর সাথে আর রাইয়ের সাথে নাকি সিয়াম আগে এসব করেছে…আমার কথাটা মোটেও বিশ্বাস হয় নি বাট ভিডিও দেখার পর প্রচণ্ড রাগ উঠেছিলো
.
আরিয়ানঃভিডিও টা নকল ছিল,তোদের ভিডিওটা দেখিয়ে বিশ্বাস করানোর জন্যই ভিডিওটা কেবল বানানো হয়েছে
.
নীরবঃকিহ??এসব কি বলঝিস তুই??(বেশ অবাক হয়ে)
.
আরিয়ানঃযা বলছি সত্যি বলছি…পুরোটা ছিল সিয়ামের প্লান,রাজের বাবা মায়ের মৃত্যু রিতুর মৃত্যু এসবই সিয়ামের প্লান..তোদের লাগানো সেই ক্যামেরা থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পারি,ক্যামেরায় আমি সিয়ামকেও দেখতে পাই…ও রাইকে পছন্দ করতো কিন্তু রাই ওকে সাফ সাফ না করে দেয়,রাই আর রাজের বাবার বড় একটা বিজনেস ছিল যা শুধু মামা মানে রাজের বাবা আর রাইয়ের বাবা জানতো…তারা পরিবারের কাওকেই ব্যপারটা জানায় নি তার সঠিক কারণ আমি বলতে পারবো না…নিরব তোরা ভাবিস তোরা মধ্যবিত্ত পরিবাবের সন্তান কিন্তু আসলে তা না তোরা ধনি পরিবারের সন্তান,মামা কেনো এসব লুকিয়েছে আমি জানি না,তবে হয়তো ভালোর জন্য
.
রাইয়ের বাবাঃআমি চেয়েছিলাম ওরা গরিব মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কষ্ট বুঝুক,ধনিদের মতো টাকা না উড়িয়ে মানুষের মতো মানুষ হতে আর তাই এসব লুকানো হয়েছে তাছাড়া হঠাৎ করেই রাজের মা বাবার মৃত্যু,এসব মিলিয়ে আর বলা হয় নি…
.
আরিয়ানঃযাই হোক সেটা কোনো ব্যপার না…এবার আসল কথায় আসি…সিয়ামের বাবা চেয়েছিল রাইকে তার ছেলের বউ করে প্রোপার্টি সব সিয়ামের নামে করতে কিন্তু সেখানে রাই সিয়ামের প্রস্তাবে রাজি হয় নি,এই সম্পত্তির জন্য রিতুকে ব্যবহার করে তারা…
.
রাজঃরিতুকে সিয়াম নয় নিরব ব্যবহার করেছে,আমার মা বাবাকে চাচ্চুই মেরেছে…
.
আরিয়ানঃসবটা ভুল রাজ…তোকে যা বুঝানো হয়েছে তুই তাই বুঝেছিস…সেদিনের এক্সসিডেন্টটা সিয়ামের বাবা করিয়েছে…মামার সব থেকে বড় দুর্বলতা ছিল ছোট মামা মানে রাজের বাবা…ছোট মামা আর মামানির এক্সসিডেন্টে বড় মামা ভেঙ্গে পরে,মামার অসহায়ের সুযোগ নিয়ে সব কিছু নিজের নামে করতে চেয়ছিল কিন্তু তা হয়ে উঠে নি…রিতুকে ধর্ষণ করে সিয়াম,নিরব নয় রাজ…সিয়াম photo editor আর video editor নিয়ে পড়ালেখা করেছে,এটা ওর কাছে খুবই সহজ একটা বিষয়…video edit করেই তোকে দেখানো হয়েছে…

কথাগুলো বলে থামতেই রাজ ছুটে গিয়ে সিয়ামকে মারতে থাকে,ইকবাল আর আরিয়ান অনেক কষ্টে ওকে থামায়…আরিয়ান সিয়ামের কাছে গিয়ে ওকে আরো কয়টা ঘুষি দিয়ে বলে উঠলো,

আরিয়ানঃবাকি সব এবার তুই বল…তোর সাথে এটাই আমার চোর পুলিশের খেলা…

কথাটা বলে আরো মারতে থাকে সিয়ামকে…এবার সিয়াম মুখ খুললো,

সিয়ামঃবলছি বলছি সব বলছি…রিতুকে ধর্ষণ করেছিলাম শুধু মাত্র ওর দেহটা ভোগ করতে আর ওকে আমার হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাতে…কিন্তু ও রাইকে সবটা বলতে চেয়েছিল,রিতুকে আমি ভয় দেখাই কাওকে এসব বললে ভিডিও ফাঁস করে দেবো তখন আর ও মুখ দেখাতে পারবে না,কিন্তু ও সুইসাইড করে,সেটাকে কাজে লাগাই আমি রিতুর হাতের লেখা নকল করে রাজের জন্য একটা চিঠি রাখি যেটাতে ভিডিওর কথা আছে,সব কিছু আমার প্লান মাফিক হচ্ছিলো…কয়দিনের মধ্যে রাজকেও আমি আমার হাতের মুঠোয় করে ফেলি…রাজকে দিয়ে রাইয়ের প্রতি থাকা আমার রাগটা মেটায়,এই মেয়েটা আমায় অনেক জ্বালিয়েছে,রাজকে উলটা পাল্টা বুঝিয়ে রাইসহ সবার দুধের গ্লাসে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ওকে ধর্ষণ করতে বলি…এখানে রহিম চাচার কোনো দোষ নেই,সন্দেহ যেন উনার উপর যায় তাই রাজ এসব বলে…যদি পরে ব্যপারটা জানাজানি হয় তবে বিয়ের কাগজগুলো দেখাতে…এগুলো সব নকল ছিল
.
রাজঃকিহ বিয়ের কাগজ নকল ছিল…জানোয়ার তোকে আমি ছাড়বো না
.
সিয়ামঃসবকিছুই ঠিকঠাক ছিল,কিন্তু মাঝে মিমি এসে সব নষ্ট করে দিলো,দিলাম ওকে শেষ করে…মিমির রিপোর্টে এসেছিল নিরব ওকে ধর্ষণ করে,সেদিন রাতে রাজ নীরবকে পানিতে মিসিয়ে একটা ঔষধ খাইয়েছিল…যে ঔষধটা খেলে মানুষের মাথা ঠিক মতো কাজ করে না,কিছুটা ড্রাগসের মতো নিরবের মাথাও ঠিক ছিল না তাই ও মিমিকে ধর্ষণ করে…রাজ মিমির লাশ ফেনের সাথে ঝুলিয়ে দেয়,সেখানে আমিও ছিলাম বাট কেউ জানতো না,রাজ আর আমি মিলে নীরবকে ইচ্ছে মতো মেরে রক্তাত্ত করি,রাজকে হাল্কাপাতলা মেরে আমি সেখান থেকে চলে যাই…

রাইঃছিঃ মানুষ এতটা নিচে নামতে পারে আমার জানা ছিল না…কেনো করেছেন আপনি এসব আর আপনি নাকি লন্ডন ছিলেন…
.
আরিয়ানঃও লন্ডন ছিল না সব ওর আর ওর বাবার সাজানো নাটক…আমি ওর সাথে কথা বলেই বুঝেছি ও লন্ডনে নেই,ইকবাল আমায় সব খবর জানিয়েছে…আর ইকবালকে ও ওর মেয়ের প্রানের হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছিল,সেদিন ইরা আমায় সবটা জানিয়েছে…যখন দেখেছে তাদের প্লান মতো কাজ হচ্ছে না তখন ইকবালের আর ওর মেয়ের উপর অ্যাটাক করে…সব এই সম্পত্তির জন্য করেছে,আমাকেও ব্যবহার করেছে এই কাজটাতে,ড্রাগস মিসিয়ে আমাকে দিয়ে রাজ আর ও মিলে রাই রিমিকে বাড়ি থেকে বের করে এখানে এনেছে,কিন্তু আমি সেদিন না বুঝলেও পরে ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম,তাই তো আজ অভিনয় করলাম…
.
মিমির মাঃকেনো করলে এসব??আমার মেয়েটাকে আমাদের থেকে কেড়ে নিলে আর রাজ তুমি…তুমি না রাইয়ের চাচাতো ভাই মেয়েটার সাথে এমন করলে কি করে ছিঃ

রাজ কথাগুলো শুনে রাগে ঘেন্নায় মাথা নিচু করে রাখে,সে বুঝতে পারছে সে অনেক বড় অন্যায় করেছে…আচমকা রাজ আরিয়ানের হাত থেকে পিস্তল নিয়ে রাইয়ের দিকে তাক করে বলে উঠলো,

রাজঃকেউ সামনে আসবে না তাহলে সবাইকে শেষ করে দেবো
.
আরিয়ানঃরাজ ভালোই ভালোই বলছি পিস্তলটা এদিকে দে
.
রাজঃনা আরিয়ান সব সময় তোরা জিতে যাবি তা আমি হতে দেবো না…কি অপরাধ ছিল আমার বলতো মা বাবা বোনকে হারিয়েছি হারামি এই সিয়ামের জন্য…রাইকে অনেক ভালবাসতাম কিন্তু ও বুঝে নি,ও এখন আমার থেকে সরে যাবে কি নিয়ে বাঁচবো আমি,আমার বেচে থাকার অধিকার নেই

কথাগুলো বলেই নিজের মাথার দিকে পিস্তলটা রেখেই গুলি করলো রাজ,আচমকা এমনটা হওয়ায় সবাই থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আরিয়ান দৌড়ে গিয়ে রাজকে ধরে,কিন্তু ততক্ষণ রাজের দেহ থেকে প্রাণটা চলে যায়…
……

মিমির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়ান,রাই,নিরব,রিমি,রাই আর মিমির মা বাবা…মিমির কবর জিয়ারত করতে এসেছে তারা…রাই মিমির কবরের মাটিতে হাত দিয়ে বলে উঠলো,

রাইঃকেমন আছিস মিমি…আমাকে স্বার্থপর ভাবছিস,প্লিজ স্বার্থপর ভাবিস না,তোর কথা আমার মনে আছে কিন্তু এত ঝামেলার মাঝে তোকে সময় দিতে পারি নি রে সরি(কান্না করতে করতে)ভাইয়ার বিয়ে আর আমারও তো এই দুষ্টুটাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে হতো,আল্লাহর রহমতে সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে…
দেখ তোর ভালোবাসার সবগুলো মানুষকে আমি আজ তোর কাছে নিয়ে এসেছি…ভাইয়া আর রিমি ভাবি…রিমি ভাবি তোর মতোই আমাদের সবাইকে ভালোবাসে…এই দেখ আমাদের পুচকি নুসাইবা,যাকে আমি তোর মতো করেই ভালোবাসি আর ভালবাসবো
.
নিরবঃরাই প্লিজ কান্না করিস না…মিমির সাথে যারা এসব করেছে তাদের পাপের শাস্তি তো তারা পাচ্ছে,সিয়ামকে আর ওর বাবাকে ফাঁসির রায় দিয়েছে,অতীতের এসব ভুলে নতুন করে জীবন শুরু কর বোন,আরিয়ান তো আছেই…ও ওর বউ আর মেয়েটাকে ঠিক দেখে রাখবে,কি বলিস আরিয়ান??
.
আরিয়ানঃহুম ঠিক তাই…আমি আমার মিষ্টি বউটাকে আর আমার কিউট প্রিন্সেসটাকে ভালবেসে আগলে রাখবে(ওদের মেয়ে নুসাইবাকে কোলে নিয়ে)…চলো এবার নতুন পথের উদ্দেশ্যে

মিমির কবর জিয়ারত করেই তারা হাঁটা দিলো নতুন পথের দিকে…যেখান থেকে আবার নতুন করে তারা তাদের জীবন সাজাবে…যেখানে থাকবে ভালোবাসার শক্তি,অন্ধকার আসলেও ভালোবাসার শক্তিতে তা হার মানবে,এই তো জীবন আর এই তো নিয়ম…যেখানে আধার সেখানেই আলো,যেখানে আলো সেখানেই আধার,সব মিলিয়ে নিয়মমাফিক চলে আমাদের এই জীবন…

সমাপ্ত…