#সম্পর্কের_মায়াজাল
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৭
এইটুকু বলেই সাধনা ফোন কেটে দিলো। শুভ্রতা বার বার ফোন দেওয়ার পর আবারো বন্ধ ফোন। শুভ্রতা বুঝতে পারছে না কি করা উচিত এখন ওর। সাধনা শুভ্রতাকে খুব ভালোবাসে সে জানে। বোন ছাড়া কিছুই বুঝতো না সে। তাহলে সে মিথ্যা কথা বলেনি। কিন্তু স্পন্দনকে ও যেভাবে চিনে তাতে স্পন্দনের খারাপ কিছু এখনও দেখিনি। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল বুঝতে পারছে না শুভ্রতা। দুইজনেই তার কাছের মানুষ। সম্পর্কের এই মায়াজাল থেকে কিছুতেই বের হতে পারছে না শুভ্রতা…….
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সে। কত কাজ তার কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। এইভাবে বসে থাকতে দেখে স্পন্দন ফোন দিলো……
—” কি হলো কাজ করছেন না কেনো?”
—-” শরীর ভালো লাগছে না।”
—-” বসের বউ হতে না হতেই এত বাহানা!”
—” সত্যি বলছি স্যার শরীর ভালো লাগছে না। আমি বাসায় চলে যাবো।”
শুভ্রতা স্পন্দনকে এখন সাধনার কথাগুলো বলতে ইচ্ছুক না। ও প্রুভ খুঁজবে তারপর বিশ্বাস করবে।
—-” আপনি জানেন মানুষের হাত কয়টি?”
—” কেনো? দুটি আপনি জানেন না?”
—” উহু মানুষের হাত তিনটি।”
—” তৃতীয়টা কবে উদয় হলো জানি না তো?”
—-” মানুষের হাত তিনটি। ডান হাত,বাম হাত আর অজুহাত। অজুহাত বন্ধ করে ভালো মতো কাজ করতে শুরু করুন।”
শুভ্রতা ফাইল গুলো দেখতে লাগলো। হটাৎ শুভ্রতা তার চারপাশ অন্ধকার দেখতে লাগলো। টেবিলে থাকা পানিটা মুখের কাছে আনতেই গ্লাস হাত থেকে পরে গেলো। মাথা ঝিমঝিম করছে তার। টেবিলের উপরেই মাথা রেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো শুভ্রতা।
স্পন্দন রাগ দেখিয়ে সিসি ক্যামেরায় শুভ্রতার দিকে আর নজর রাখেনি। প্রায় আধা ঘন্টা পর মিটিং এর জন্য শুভ্রতাকে ডাকতে গেলো স্পন্দন। শুভ্রতাকে এইভাবে শুয়ে থাকতে দেখে স্পন্দন বললো…..
—-” এখন আপনি কাজ রেখে ঘুমাচ্ছেন। আপনার কি কাজ করার কোনো ইচ্ছা নাই তাহলে রিজাইন লেটার দিয়ে চলে যান। শুনছেন আমার কথা?”
বেশ কয়েকবার ডাক দেওয়ার পরও শুভ্রতার কোনো রেসপন্স না পেয়ে মুখ তুলে দেখলো শুভ্রতার পুরো শরীর ঠাণ্ডায় জমে আছে। মুখে পানি ছিটানোর পরেও কোনো হুস নেই। দ্রুত গতিতে কোলে তুলে নিলো শুভ্রতাকে। ম্যানেজারকে বলে দিলো আজ আবারো মিটিং ক্যান্সেল।
হসপিটালে……
তিন ঘণ্টা পর শুভ্রতার জ্ঞান ফিরে আসলো। নিজেকে হসপিটালে দেখে কিছুটা অবাক হলো। স্পন্দনকে দেখে বুঝলো, স্পন্দন তাকে নিয়ে এসেছে।
—” এখন কেমন লাগছে?”
অভিমানী সুরে বললো শুভ্রতা……
—-” আমি তো নাটক করছি। ওহহ সরি বাহানা করছি। মানুষের তিনটা হাত সেই তিনটা হাতের একটা হাত অজুহাত আমি সেই অজুহাত করছি।”
—” আচ্ছা বাবা আমি ভুল বলছি সরি।”
—” সরি আপনার পকেটে রাখেন। আজব লোক আপনি।”
—-” সুস্থ্য না হতেই ঝগড়া শুরু করে দিলেন।”
—” স্যার, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।”
—-” শুনেছি অসুস্থ্য থাকলে পেটে ক্ষুধা লাগে না কিন্তু আপনার তো দেখছি ভিন্ন। আচ্ছা আপনি মানুষ তো?”
শুভ্রতা আবারো গাল ফুলিয়ে অন্য পাশে তাকিয়ে রইলো।
—” মজা করছি। ওয়েট, আপনার জন্য চিকেন স্যুপ আনার ব্যবস্থা করছি।”
ফোন দেওয়ার পনেরো মিনিট পর খাবার হাজির। শুভ্রতা হাত দিয়ে খেতে না পারায় স্পন্দন নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে……
***চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে কদম তলায় কে……..
সমুদ্র ফোন দিয়েছে। স্পন্দন খাবার রেখে ফোন শুভ্রতার কানে ধরলো…..
—-” ওই নাদু বেবি প্রেমে পড়েছে। ”
—” এইটা আর নতুন কি। ও কিছুদিন পর পরেই তো প্রেমে পড়ে।”
—” আরেহ না ওর কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে এই প্রেম নিয়ে সিরিয়াস ও।”
—-” এই নিয়ে দুইশত পাঁচটা প্রেম করেছে সবগুলোতেই তো সিরিয়াস ছিলো ও।”
দুইশত পাঁচটা প্রেমের নাম শুনে স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। জীবনে হয়তো এত প্রেম কাওকে করতে দেখে নি সে।
—” কি জানি? ওর সব প্রেমেই সিরিয়াস হয়। কিন্তু তিনদিনের বেশি টিকে না। আল্লাহ জানে বিয়ে কয়দিন টিকে ওর।”
সমুদ্রের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো শুভ্রতা। হাসতে হাসতে বললো…..
—-” ও যেটাকে প্রেম বলে ওইটা জাস্ট মোহ । যদি সত্যিকারের প্রেমেই হতো তাহলে তিনদিন পর আর মন চেঞ্জ হতো না। প্রেম ভালোবাসা হলো হৃদয়ের বন্ধন। যেখানে যাকে একবার বসানো যায় তার জন্য হাজারো সমস্যা সৃষ্টি হলেও তাকে ওই জায়গা থেকে সরানো যায় না। মানুষ হলো প্রজাপতির মতো। প্রজাপতির গায়ে যেমন বিভিন্ন রঙ আছে ঠিক তেমনি মানুষের মন বিভিন্নভাবে আসক্ত। এক সময় যেই জিনিস ভালো লাগে অন্য সময় তা ভালো লাগে না। কিন্তু প্রেম ভালো লাগা খারাপ লাগা থেকে আসে না। প্রেম হয় মন থেকে।আরেকটা কথা কি জানিস? প্রেম আর ভালোবাসা এক না। কারণ, কিছু মানুষ উপন্যাস পড়তে খুব ভালোবাসে মানে তার প্রেম হলো উপন্যাস কিন্তু ভালোবাসা তা কিন্তু ভিন্ন।ভালোবাসা হয় বাবা, মা,ভাই, বোন সবার সাথে এই ভালোবাসার নাম হলো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কিন্তু যাকে দেখে সারা জীবনের সঙ্গী মনে হয় সেই ভালোবাসার নাম প্রকৃত ভালোবাসা।ভালোবাসা হলো দুজন মানুষ দু’দেশে থাকা সত্বেও একে অন্যকে মনের ভিতর থেকে প্রকৃত ভাবে ভালবাসে তা বুঝায়। ”
—” মা আমার তুই তো দেখছি দুলাভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। শুন তোকে যে জন্য ফোন দিয়েছি নাদু নাকি কি বলবে তোকে।”
—” তোর সাথেই না-কি ও? দে ফোন।”
—-” বাবু বাসর রাত কেমন কাটলো তোর?”
—” শালী , বড় ভাই সাথে বসা তবুও লজ্জা নাই তোর।”
—-” ধ্যাত। ও তো আমার ভাই কম বন্ধু বেশি। শুন যার জন্য তোকে ফোন দিয়েছি।”
সমুদ্র আর নাদিয়া দুই ভাইবোন। সবাই ভালোবেসে নাদিয়াকে নাদু বলেই ডাকে।
—” বলে ফেল।”
—-” আমার ওনি না সিগারেট খায়। তুই তো জানিস সিগারেট খাওয়া আমি পছন্দ করি না। এখন কি করবো? হেল্প কর!”
—” তুইও সিগারেট খাওয়া শুরু করে দে। দুইজন একসাথে খাবি। ”
—” তুই কি আমার ওনার সিগারেট খাওয়া ছাড়তে সাহায্য করছিস না-কি আমাকে উপরে তোলার চেষ্টা করছিস?”
—” চুল। তোকে যদি তোর ওনি ভালোবাসে তাহলে তোর সিগারেট খাওয়া দেখে ছেড়ে দিবে।”
—-” সত্যি তো?”
—” হুম। ”
—-“উম্মাহ বাবু। রাখছি তুই প্রেম কর তোকে পরে ফলাফল জানিয়ে দিবো।”
—” ওকে।”
ফোন কেটে দেওয়ার পর স্পন্দন কিছুক্ষণ ভুত দেখার মত তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো….
—-” কি হয়েছে?”
—” আমি কি আপনার চাকর? এতক্ষণ ধরে দাঁড় করিয়ে ফোন ধরালেন।”
—” আপনাকে কে বলেছে ফোন ধরতে হূহহহহ। আমি তো বলিনি।”
—” আপনাদের কথা শুনে বুঝলাম সিগারেট নিয়ে সমস্যা আপনার ফ্রেন্ডের। আপনি যা বলেছেন ঠিক বলেন নি। যে ছেলে একটা মেয়ের জন্য এত দিনের সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিতে পারে সেই ছেলে তো অন্য কাওকে পেয়ে আপনার ফ্রেন্ডকেও ছেড়ে দিতে পারে।”
—-” এইভাবে বলছেন কেনো? তাহলে কি আমি ভুল বলেছি?”
—” উহু। ছেলেটা যদি আপনার ফ্রেন্ডকে ভালোবাসে তাহলে অবশ্যই তার ভালোবাসার মানুষের কথা শুনবে। কিন্তু সে সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারবে না সহজে। ধরেন সে প্রতিদিন খেতো পাঁচটা তখন খাবে চারটা এরপর খাবে তিনটা এমন করে ধীরে ধীরে কমাতে হবে। একবারে কোনোদিন কমানো যাবে না।”
—” আচ্ছা তাহলে দেখি নাদুর ওনি নাদুকে ভালোবাসে কি-না ।”
—” হুম দেখতে থাকুন।”
দুইজন কিছুক্ষণ আবারো চুপ করে রইলো। স্পন্দন তখন বললো….
—-” ভালোবাসা নিয়ে অনেক কিছু জানেন দেখছি। ভালোবেসেছেন কোনোদিন?”
—” জানি না। আচ্ছা সাধনার সাথে আপনার কিভাবে পরিচয় হলো বললেন না তো?”
—” দুর্ঘটনা ভাবে দেখা সেদিনের কথা মনে করতে চাই না আমি। নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না আমি। দূর স্বপ্ন সব আমার কাছে।”
শুভ্রতা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। সাধনার কাছে শুনেছে তাদের পরিচয় একদম নাকি সিনেমার মতো হয়েছে। সাধনা দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির জন্য বের হতে পারছে না ঠিক তখন স্পন্দন কাক ভেজা হয়ে ওই ছাউনির ভিতরে চলে যায়। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আশে পাশে অনেক মানুষজন থাকায় অস্বস্তি বোধ করছে। সাধনা তখন নিজ থেকেই প্রশ্ন করে…..
—” আপনি ঠিক আছেন?”
স্পন্দন সাধনার দিকে তাকালো। হাতে ছাতা দেখে বললো…..
—” ছাতা থাকা সত্বেও দাঁড়িয়ে আছেন?”
—” বৃষ্টি বেশি তাই যাবো না। তাছাড়া আমার বাসা সামনেই।”
—” বৃষ্টি কমলে যাবেন আপনি?”
—” হ্যাঁ। কেনো?”
—” ক্যান ইউ হেল্প মি?”
—” ইয়াহ। ইউ ক্যান টেল মি।”
—-” প্লিজ লেন্ড মি ইউর আমব্রেলা ?”
সাধনা প্রথম তার ছাতাটা দিতে চায়নি কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে মন থেকে না চাওয়া সত্বেও স্পন্দনকে ছাতা দিলো। ধন্যবাদটুকু না দিয়ে ছাতা নিয়ে চলে স্পন্দন। রাগে দুঃখে সাধনা স্পন্দনকে গালি দেয়। এরপর থেকেই না-কি স্পন্দন সাধনাকে খুঁজতে থাকে। প্রতিদিন দোকানের ছাউনির নিচে বসে থাকে। এই রকম করতে করতেই তাদের প্রেম শুরু হয়।
কিন্তু আজ স্পন্দনের কথা শুনে মনে হলো তাদের পরিচয় খুব ভালো সময়ে হয় নি। ওই সময় বা দিনের কথা মনে পড়লে স্পন্দনের রাগ উঠে নিজেকে অপরাধী ভাবে । শুভ্রতা স্পন্দনকে জিজ্ঞাসা করলো……
—” আপনাদের পরিচয় কোথায় হয়েছে? আমার জানামতে বৃষ্টির দিনে একটি দোকানের ছাউনির নিচে না?”
—” উহু। আমাদের দেখা হয়েছে আমার বন্ধুর ভাইয়ের বিয়ের এক পার্টিতে। এইসব কথা বলতে আমি চাচ্ছি না। যা শুনলে আপনি আমি দুইজনেই কষ্ট পাবো।”
—” হুম।”
কিছুক্ষণপর ডক্টর আসলো……
—” মিস্টার স্পন্দন আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন? যান মিষ্টি কিনে আনুন। আপনার স্ত্রী প্রেগনেন্ট। কনগ্রাচুলেশন ।”
ডক্টরের কথা শুনে দুইজনেই মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললো । একে অন্যের মুখ দেখে বললো…..
—-” ইম্পসিবল ।”
চলবে…..
#সম্পর্কের_মায়াজাল
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৮
ডক্টরের কথা শুনে দু’জনেই মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললো । একে অন্যের মুখ দেখে বললো…..
—-” ইম্পসিবল ।”
—” বিয়ে করেছেন সম্ভব না কেনো?”
ডক্টরের কথা শুনে শুভ্রতা কান্না মাখা কন্ঠে বললো…..
—” ওনি আরেকটা বিয়ে করেছেন? আমার সতিনকেও এখন হসপিটালে ভর্তি করিয়ে বাবা হতে যাচ্ছেন। ও বাবা গো এখন আমার কি হবে? এই জন্যই আপনি আমার সাথে……মম!”
স্পন্দন শুভ্রতার মুখ চেপে ধরে। ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বললো…..
—” আমার নতুন সংসার ভাঙতে কেনো এসেছেন? জানামতে একটি বউ নিয়ে এসেছি আমি।”
স্পন্দনের কথা শুনে শুভ্রতা আরো জোড়ে জোড়ে কাঁদতে থাকে। ডক্টর তখন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
—” স্যার আমি মিসেস শুভ্রতার কথা বলছি। আমরা ওনার চেকআপ করে বিভিন্ন টেস্ট করে জানতে পারলাম ওনি গর্ভবতী।”
স্পন্দন এখন বড় বড় চোখে তাকালো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা পেটে হাত দিয়ে বোকার মতো চুপ করে রইলো। ডক্টরের কথাটা হজম হলো না তার কাছে। স্পন্দন এতক্ষণ তাকে দেওয়া অভিযোগ শুভ্রতার ঘাড়ে চাপালো…..
—-” এই এই বাচ্চা আমার না। কার ইন্টারনেট কানেকশন পেটে নিয়ে ঘুরছো? পাসওয়ার্ড বলো সেই ওয়েফাইয়ের?”
শুভ্রতা স্পন্দনের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিসের ইন্টারনেট কানেকশন কিসের কি সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
—” এই হ্যালো, শুনছো আমার কথা? বলো বাচ্চার বাপ কে? তিন চার দিন হলো বিয়ে করেছি এখনও ফুলসজ্জার ফুল তুলেনি এখনই নাকি আমি বাচ্চার বাপ হয়ে গেছি। ডক্টর আমার পেসার বেড়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত গতিতে।”
ডক্টর তখন শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বললো…..
—” মেম বাচ্চার বাবার নাম বলে ফেলুন। স্যার খুব অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে।”
শুভ্রতা রেগে গিয়ে বললো…..
—-” আপনি বাচ্চার বাবা। আপনি কোন জায়গা থেকে ডক্টরি পাশ করেছেন ঠিকানা দিন তো? ওইখানে গিয়ে বলে আসবো পাগল লোকদের ডক্টর বানানোর অধিকার কে দিছে? আমি প্রেগনেন্ট হলে আমি বুঝবো না আপনি বুঝবেন আজব তো! দিন ঠিকানা দিন আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।”
ডক্টর কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন নার্স এসে বললো…..
—” স্যার আপনি ভুল করে ৫৬৪ নম্বরের রিপোর্ট এইখানে নিয়ে এসেছেন। এই যে ওনাদের রিপোর্ট।”
ডক্টর রিপোর্ট দেখে শুভ্রতা আর স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। রিপোর্টে এসেছে বেশি চিন্তা আর নিয়মিত খাবার না খাওয়ার জন্য শরীর দুর্বল।
—-” সরি স্যার অ্যান্ড ম্যাম আমি ভুল করে তখন অন্য রিপোর্ট নিয়ে এসেছি। ম্যাম একদম ঠিক আছে। সময় মতো খাওয়া দাওয়া করলেই হবে।”
—-” শুভ্রতা ঠিক কথায় বলেছে যে, আপনার ডক্টর হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই। একটুর জন্য আমাদের নতুন সংসার ভেঙ্গে দিচ্ছিলেন। কোন জায়গা থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন?”
—” স্যার ক্ষমা করবেন। মানুষ মাত্রই ভুল ।”
স্পন্দন তখন আরো কিছু বলতে যাবে শুভ্রতা থামিয়ে দিয়ে বললো…..
—” ওকে । এখন আপনি চলে যান আর খবরদার এমন ভুল আর করবেন না।”
ডক্টর চলে যাওয়ার পর পরই আরেকটি ইয়াং ডক্টর আসলো…..
—-” স্পন্দন?”
—” আরেহ সাগর তুই এইখানে?”
স্পন্দন ও সাগর একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরলো…..
—-” নার্সের মুখে শুনলাম তোর কথা। ভাবির কি হয়েছে? বিয়ের পর পরই অসুস্থ্য ব্যাপার কি?”
সাগর মজা করে বললো শুভ্রতা তখন গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো…..
—” এখন তুইও শুরু করছিস? একটু আগে তোদের এক ডক্টর ভুল রিপোর্ট এনে আমার সংসার ভাঙতে চাচ্ছিল। সপ্তাহ গেলো না এখনও বিয়ের আর কি সব ফাজলামি কথা।”
সাগর হো হো করে হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে স্পন্দনের উপরে পরে যাচ্ছে।
—” ভাই তোর রাগ এখনও গেলো না। চল ভাবির সাথে পরিচয় করা বিয়েতে তো আর আসতে পারি নি।”
—” চল। শুভ্রতা ও হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সাগর। পেশাগত ভাবে ডক্টর। কিন্তু সবাই ওকে ইয়াং, হ্যান্ডসাম, হট লোকিং ডক্টর বলেই জানে। ”
—” হাই ভাবী।”
—-” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”
—” ওহহ সরি। ওলাইকুম আসসালাম। আপনাদের বিয়েতে প্রবলেম ছিলো তাই আসতে পারিনি কিন্তু পরে শুনেছি ছোট বোনের জায়গায় বড় বোন এসেছে। জানেন ভাবী লজিক আছে এই বিষয়ে আজ যদি আপনারা দুই বোন না হতেন তাহলে আপনার বাবা মার মান সম্মান বলে কিছুই থাকতো না। একদিক দিয়ে বেশি ভাই-বোন থাকা ভালো। সরি ভুল কিছু বললে, আমি খুব বেশি কথা বলি এখন বাই। আল্লাহ হাফেজ গাইস।”
একদমে কথাগুলো বলে ফোনে কথা বলতে বলতে চলে গেলো। শুভ্রতা কিছুক্ষণ সাগরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো…..
—-” ও এমনি আগে থেকে। কোনো দরকার হলে খাবার ছেড়ে উঠে যাবে পাগল একটা।”
—-” হুম।”
সেদিন রাতে তারা হসপিটাল থেকে চলে আসে। শীতের সময় খুব ঠাণ্ডা। গাড়িতে বসে আছে দুইজন। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তখনি ছোট একটি চা-য়ের দোকান দেখে শুভ্রতা গাড়ি থামাতে বললো…..
—-” কি হলো হটাৎ? গাড়ি থামালে কেনো?”
—” স্যার আপনি বলেছিলেন আমাকে ফুচকা খাওয়াবেন কিন্তু খাওয়ান নি।”
—-” এত রাতে ফুচকা খাবে এখন? চলো সামনে বড় রেস্টুরেন্ট আছে।”
—” নাহ এখন আমি চা খাবো। মালাই চা ইসসসসসস দুধের মালাই দিয়ে বানানো হয়। অনেক ভালো লাগে খাবেন স্যার?”
—” যেভাবে বলছো মুখে পানি চলে আসছে চলো তাহলে খাওয়া যাক।”
গাড়ি থেকে নেমে বাঁশের তৈরি বসার জায়গা বসলো দুইজন। চা মামাকে বলে বিস্কুট আর মালাই চা নিয়ে প্রাণ,মন ভরে খেতে লাগলো।
—” সত্যিই তো অসাধারণ খেতে। ”
—” দেখেছেন আমি জানতাম আপনি এই কথাই বলবেন।”
—” ভবিষ্যত গুণী হয়ে গেছেন।”
চা শেষ করে গাড়ির গাছে আসলো দুইজন। শুভ্রতা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ পানে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে…..
—” এইখানে কি থাকার প্ল্যান আছে না-কি ?”
—-” স্যার চলুন আমরা কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করি প্লিজ!”
—-” এই শীতে হাঁটাহাঁটি পাগলা কুকুরে কামর দিয়েছে না-কি তোমাকে?”
—-” স্যার প্লিজ প্লিজ চলেন না আমার সাথে….!”
—” স্যার টাকা পয়সা সাথে এনেছেন তো?”
—” হুম সাথেই আছে। কিন্তু কেনো?”
—” আমি এখন এই গাছ থেকে রস খাবো পরে আপনি টাকা দিয়ে দিবেন সেই জন্যই বলছি।”
—” খবরদার এইসব করলে গাছে বেঁধে রেখে দিবো।”
—” স্যার আজ আমাকে বাঁধতে পারবেন না আজ আমি মুক্ত পাখির মত উড়ে বেড়াবো। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন নিজের বরের সাথে অনেক হাঁটবো গাছ থেকে এইটা ওইটা পারবো। গাছের মালিককে তার পাওনা টাকা দিয়ে দিবো। প্লিজ স্যার যে কয়টা দিন আছি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে সাহায্য করবেন! প্লিজ।”
স্পন্দন কিছু বললো না। শুভ্রতা অনেকগুলো পাথর নিয়ে ছুড়তে লাগল কিন্তু কিছুতেই কলসি ফুটো করতে পারছে না। স্পন্দন তখন শুভ্রতার হাত ধরলো। হাত থেকে পাথর নিয়ে ছুড়ে মারলো। কলস ভেঙ্গে গেলো। শুভ্রতা ওইখানে দাঁড়িয়ে দুই হাত কলসির দিকে রেখে মুখ হাতের কাছে নিয়ে রস খেতে লাগলো……
শুভ্রতার শরীর খেজুরের রসে ছড়াছড়ি। অনেক্ষণ খাওয়ার পর শুভ্রতা যেনো অন্য রকম কথা বলছে।
—” হটাৎ এত গরম কেনো পড়লো স্যার? আবহাওয়া কি মুহূর্তের মধ্যে চেঞ্জ হয়ে গেছে?”
স্পন্দন বুঝলো অতিরিক্ত রস খাওয়ার ফলে শুভ্রতার নেশা হয়ে গেছে…..
—-” আবহাওয়া চেঞ্জ হয়নি । তুমি মাতাল হয়ে গেছো।”
—-” মাতাল হাওয়ায় একটা গান আছে যার বলবেন আমায়?”
—” মাতাল হাওয়া না পাগল হাওয়ার বাদল দিনে গানটা।”
—” স্যার আপনি কি মদ খেয়েছেন? পাগলের মত উল্টো গান গাচ্ছেন কেনো?”
স্পন্দন শুভ্রতার হাত ধরতেই তার হাত খেজুরের রসে ভিজে গেলো। একরাশ বিরক্তি ও রাগ নিয়ে তাকালো শুভ্রতার মুখের দিকে। শুভ্রতা বাচ্চাদের মতো তাকালো স্পন্দনের দিকে……
—” এইসব কি করেছেন এখন? শান্তি লাগছে খুব?”
—” বহুত।”
বকতে গিয়েও থেমে গেলো স্পন্দন। এ কাকে বকবে? মাতাল অবস্থায় কিছু বলা আর না বলা সমান। নদীর ধারে শুভ্রতাকে নিয়ে গিয়ে মুখ আর হাত পরিষ্কার করলো। গরম হলে নদীতে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখতো শুভ্রতাকে। শীত বলে পারছে না কিছু স্পন্দন। আশে পাশে তাকিয়ে বাড়ি খুঁজতে লাগলো। এত রাতে ওই সেতু দিয়ে কিছুতেই শুভ্রতাকে নিয়ে যেতে পারবে না স্পন্দন। দূর থেকে আগুনের ফুলকি দেখে শুভ্রতার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো……..
—-” আন্নেরা কেডা কইত্তে আইছুন?”
—” চাচী বড্ড বিপদে পড়েছি। আজকের রাতটা থাকতে দিবেন প্লিজ। আমি আর আমার স্ত্রী চিন্তা করবেন না আমরা আপনাদের কোনো বিপদে ফেলবো না যদি টাকা চান দিবো আমরা।”
—” বাজান আমরা গরীব হইতে পারি কিন্তু লোভী না। তোমরা আমার ঘরের মেমান তোমাগো কেমনে ঘর থেইক্কা বাইর করমু কও আহ ঘরে আহ্।”
মহিলাটি শুভ্রতাকে এক ধরনের পোশাক দিলো। তাতের বুনা শাড়ি আর অদ্ভুদ ধরনের ব্লাউজ। হাতাগুলো গলার কাছ থেকে লাভের মত উপরে কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়া। শুভ্রতা মাতাল অবস্থায় এই রকম ব্লাউজ দেখে হাসতে থাকে। স্পন্দন মুখ চেপে ধরে রাখে কিন্তু শুভ্রতার হাসি থামছে না এক পর্যায় এসে কামর দিয়ে দেয় স্পন্দনের হাতে……
—” আহ্……!”
চলবে……..