# সেই তুমি
#সানজিদা সন্ধি
#পর্ব ২৫/শেষ
জাফনা বলতে লাগলো, ” বাবা আমি ভীষণ জেদী একটা মেয়ে। নতুন বছরের প্রথম দিনে আহনাফ স্যারের সাথে আমার দেখা হয়। প্রথম দেখাটা শুভ ছিলনা৷ তার সাথে নানান কারণে আমার ঝামেলা হয়। আমি প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে পড়ি৷ তাকে শাস্তি দিতে চাই। কিন্তু একপর্যায়ে তার প্রেমে পড়ে যাই আমি। ”
কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে ফেলে জাফনা। অন্তত যাইহোক বড়দের সামনে এভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা সহজ কোনো বিষয় নয়। আর কেউ সেটাকে ভালো ভাবে দেখবেও না। জাফনার মন চাচ্ছিলো মাটি যেন ফাঁক হয়ে যায়। আর সে সেথায় ঢুকে পড়ুক। কথাগুলো বলা সহজ ছিলোনা। তবে না বলে উপায়ও ছিলোনা। পাছে যদি তার ভুলের জন্য আহনাফ অন্য কারো হয়ে যায়।
জাফনার কথা শুনে আহনাফ, আবির চৌধুরী এবং আতিয়া চৌধুরী তিনজনেই থমকে গেছে। কোনো মেয়ে যে এইভাবে গুরুজনদের সামনে নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে ধারণা ছিলোনা তাদের। তাও আবার এতটা নিঃসংকোচে।
জাফনার এরূপ সাহসিকতায় আতিয়া চৌধুরী ভীষণ খুশি হয়েছেন। তার এখন একটাই চিন্তা। যেভাবেই হোক আহনাফের সাথে জাফনার বিয়েটা দিয়ে দেওয়া। বিয়ে হলে হয়তো আহনাফ ভালো থাকবেন।
আবির চৌধুরী চমকে গিয়েছেন। ছেলের বিয়ের প্রস্তাব তো অনেক পান। কিন্তু এভাবে কখনো কেউ প্রস্তাব দিবে বিষয়টা কল্পনাতীত ছিলো তার। আর সে আর কেউ নয় স্বয়ং সাজ্জাদ খানের মেয়ে সুহাইলা মুবাররাক জাফনা। তার আপত্তির প্রশ্নই আসে না। তবে সব চিন্তা এখন আহনাফকে নিয়ে। তিনি আহনাফের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভয়ে, আতঙ্কে পারছেন না সেটা। সবার দৃষ্টি এখন মেঝের দিকে৷
এরইমধ্যে আহনাফ ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো, ” মামনি জাফনাকে কিছু খেতে দাও৷ তারপর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছি তাকে৷ ”
জাফনা জোর গলায় বললো, ” আমি আর কোথাও যাবোনা৷ আপনাকে বিয়ে করে পারমানেন্টলি এই বাড়িতেই থাকবো।”
জাফনার কথা শুনে আহনাফের কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। কারণ এতক্ষণে সে বুঝে গিয়েছে। জাফনার ভয়ডর কমই আছে। কোনো কিছুই তার পক্ষে অসম্ভব নয়।
আহনাফ ভালোভাবেই জাফনাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলো, বললো, ” জাফনা তুমি তো সবই জানো। অদিতির বিষয়টাও জানো। যেহেতু আমরা কোনো না কোনো ভাবে একে অপরের সাথে রিলেটেড হয়ে গিয়েছি। আমি অদিতিকে ভালোবাসতাম, ভালোবাসি, এবং আজীবন ভালোইবাসবো। তার স্থানে অন্য কেউ আসবে না। কখনোই না। আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি তাহলে তোমাকে ভালোবাসতে পারবোনা। বঞ্চিত হবে তুমি ভালোবাসা থেকে। যেটা আমি একদমই চাইনা৷ তাছাড়া তুমি এখনো বাচ্চা মেয়ে। যা বলছো আবেগপ্রবন হয়ে বলছো। কিছুদিন পরে তোমার আবেগ কেটে যাবে। আমাকে আর ভালো লাগবে না। এটা তোমার লেখাপড়া করার বয়স। লেখাপড়াতে মনযোগ দাও। ভালো মানুষ হয়ে ওঠো।”
আহনাফের কথা বিষের ন্যায় ঠেকতে লাগলো জাফনার কাছে৷ জাফনা জানে। খুব ভালোভাবেই অনুভব করতে পারে আহনাফের প্রতি তার যেই অনুভূতিটা আছে সেটা ভালোবাসা, শুধুমাত্র ভালোবাসা। এই অনুভূতিকে অস্বীকার করার কোনো মানেই নেই জাফনার৷ আর সে জানে এখন যদি আহনাফকে নিজের করে না পায় তাহলে আর কখনোই পাবে না। জীবন তো একটাই। অপ্রাপ্তি চায় না সে।”
জাফনা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার মাথায় কী চলছে এখন কেউই বুঝতে পারছে না। সে তার হাতে থাকা ফোনটা নিয়ে তার বাসায়, জারিফদের বাসায় ফোন করে সবাইকে আসতে বললো। আতিয়া, আবির, আহনাফ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে৷ আহনাফ কোনো রকম রিয়াকশন দিচ্ছে না। সেও যেন চাইছে যা হচ্ছে হোক। মনের অজান্তেই কোনোভাবে সে কী জাফনার মুগ্ধতায় ডুবেছে? অদিতির পরে জাফনাই একমাত্র মেয়ে যাকে অনেক বেশি টলারেট করেছে আহনাফ। যার কথায় মন থেকে হেসেছে। যাকে পাত্তা দিয়েছে। জাফনা ছাড়া আহনাফেরও কেন জানি ফাঁকাফাঁকা লাগে। এই একমাসে সে ভালো করেই টের পেয়েছে সেটা।
ঘন্টাখানেকের মধ্যে জাফনার পরিবারের সবাই এলো। জাফনা সবটা তাদেরকে খুলে বলতেই সবার চক্ষু চড়কগাছ। হুট করে কোথা থেকে কী হলো কেউ জানে না। তবে আহনাফ আর জাফনার বিয়েটা হয়ে গেলো। সঞ্জয়, মালিহাও উপস্থিত ছিলো। মালিহা ঝামেলা করেছে অনেক। অনেক কেঁদেছে। তবে সে উপেক্ষিত হয়েই থেকেছে।
চাঁদনি রাত। চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে চারিপাশ। আহনাফ ছাঁদের মধ্যে দাঁড়িয়ে। পেছন থেকে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ফিরে তাকালো সে। জাফনা এসেছে। আতিয়া চৌধুরীর শাড়ি পরনে তার। পিচ্চি জাফনাকে আজ অনেক বড় লাগছে আহনাফের কাছে। আহনাফ হেঁচকা টানে জাফনাকে বুকে টেনে নিলো। তারপর কপালে উড়ে আসা অবাধ্য কয়েকটা চুলকে কানের পাশে গুঁজে দিলো। আহনাফের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠলো জাফনা। আহনাফ হাটুগেড়ে বসে বলতে লাগলো, ” অদিতির পরে সেই তুমিই একমাত্র মেয়ে জাফনা, যে আমার প্রাণখোলা হাসির কারণ হয়েছ। সেই তুমি আমার অযৌক্তিক রাগের কারণ হয়েছ। সেই তুমি আমার এক চিলতে ভালো থাকা হয়েছো৷ ভালোবাসি না এখনো তোমাকে। তবে হয়তো একদিন বাসবো। পাশে থেকো আমার । জাফনাও আহনাফের বুকে চুপটি করে শান্তির প্রশ্বাস ছাড়লো।
সমাপ্ত
সকলের মতামত আশা করছি।