#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_২৮
অর্ণা আজ নিজেকে সুন্দর মতো গুছিয়ে নিয়েছে।বেশকিছু দিন সে অসুস্থ থাকার জন্য রুমের বাহিরে আসে নাই।তবে আজ সে একদম সুস্থ তাই নিজের সব সম্পর্ক গুলো গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। কথায় আছে না আল্লাহ যদি সাহায্য করে সেখানে শয়তানের স্থান নেই।
রোহানের বাড়ি থেকে প্রস্তাব এসেছে।অরিন কে তারা তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে তবে এর মাঝ একটু ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ননদের বিয়ের আয়োজন তো বাড়ির বউকে করতে হয়।
সব কিছু হঠাৎ করে হয়েছে জন্য বাড়ির মানুষেরা পিপারেশন নিতেও সময় পাচ্ছে না।সব আত্মীয় স্বজন এবাড়িতে চলে এসেছে।
আয়াশ আর অর্ণা দু জন দুইটা আলাদা রুমে থাকতো।এদিকে সুমু এখন এবাড়িতে থাকে।দাদীর আলাদা রুম।মেহমান দের জন্য এখন অর্ণা কে নিজের রুম ছাড়তে হচ্ছে।
অর্ণা মেহমান দের কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে চুপচাপ সব জিনিশ পএ নিয়ে আয়াশের রুমে এসে হাজির হয়।
হঠাৎ করে এমন সব জিনিশ পএ নিয়ে নিজের ঘরে অর্ণাকে প্রবেশ করতে দেখে একটু অবাক হয় আয়াশ।
আয়াশ অর্ণা দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,”বেপার কি?আমার রুমে কি মতলবে এসেছো? ”
আয়াশের কথা শুনে অর্ণা একগাল হেসে উওর দেয়,আসলে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলেছে যে বরের থেকে বেশি দূরে থাকতে নাই।তাহলে বর অন্যের হয়ে যেতে পারে।”
আয়াশ বলে,”এমন কথা কোনো মানুষকে বলতে শুনেছি বলে তো মন হয় না।”
অর্ণা বলে,”ধুর আমিও না!ছাগলের কাছে আসছি ঘাস বরগা দিতে।”
আয়াশ বলে,”আজারে পেচাল বাদ দিয়ে আসল কথায় আসো ফাজিল মেয়ে।”
অর্ণা সব কিছু এক সাইডে রেখে আয়াশের সামনে এসে বলে,”আমরা বিবাহিত বর বউ!আমরা যদি দু জন আলাদা রুমে থাকি তাহলে মানুষেরা কি বলবে?
মান-সম্মান ত্যানাত্যানা হয়ে যাবে।!তাই নিজেদের বাড়ির সম্মান রক্ষা করতে আমি আপনার ঘাড়ে এসে পড়েছি!উপস্ সরি ঘরে এসেছি।”
আয়াশ বলে,”তোমার সাথে এক রুমে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়!”
অর্ণা আয়াশ একদম কাছে গিয়ে বলে,”গ্রামের বাড়িতে এক রুমে এক বিছানাতে যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন তো সমস্যা হয় নি?তাহলে আজ হঠাৎ এতো সমস্যা কেনো হচ্ছে আপনার ? ”
আয়াশ বলে,”সেদিন তো জানতাম না ঐ নামের মেয়েটা এতো বড় ধোঁকাবাজ। ”
অর্ণা বলে,”কোথায় কখন আমি আপনাকে ধোঁকা দিয়েছি? ”
আয়াশ বলে,”তুমি সুইসাইড কেনো করেছিলে?আর সুইসাইড যখন করলে ভালো কথা আমাকে কেনো দোষারোপ করলে?আমি কি তোমার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেছি?”
অর্ণা বলে,”আমি তো একবার ও বলি নাই আমার মৃত্যুর রহস্যের পিছনে আপনার হাত আছে।আর অযথা আমি আপনাকে দোষের ভাগীদার কেনো করতে যাবো?”
আয়াশ এবার অতীতের সেই বিয়ের দিনের কথা মনে করে,,,,,,,,
হুট করে তো রাগের মাথায় বিয়েটা করে ফেলেছি!
এখন বাড়ির মানুষের সামনে বউ নিয়ে কি করে যাবো।অরিন তো এভাবে হুট করে তার ভাইয়ের বউকে মেনে নিতে পারবে না।তার থেকে বড় কথা হলো আমার পরিবার এভাবে জোড় করে বিয়েটা মেনে নিবে না।কিন্তু কি করবো আমি।মেয়েটা কে তো আর এভাবে মাঝ রাস্তায় ফেলে রেখে চোরের মতো পালাতে পারি না।আমার মেয়েটার সাথে কথা বলা দরকার।আমার সব কিছু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন।
এমন সময় অর্ণা গাড়ি থেকে নেমে আয়াশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে খুব টেনশনে আছেন?সমস্যা থাকলে বলতে পারেন।আমার হৃদয় অনেক শক্ত মাটির তৈরি কোনো কিছুতে কষ্ট পাবো না।”
আয়াশ বলে,”আমি তোমাকে বিয়ে করেছি!এ বিয়েটা আমি অস্বীকার করবো না!তবে তোমাকে আমার পরিবারের কাছে এভাবে হুট করে নিয়ে যেতে পারবো না।আমি চাই না আমার বউ আমার পরিবারের কাছে অপমানিত হোক।আমি তোমাকে সম্মানের সাথে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইছি।”
অর্ণা আয়াশের কথায় মুগ্ধ হয়ে যায়!হুট করে বিয়ে করলেও কি হবে!সে তার বিয়ে করা বউ কে এতোটা সম্মান করে ভাবতেই মনে তৃপ্তিদায়ক লাগে।তাহলে তাকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য।
অর্ণা আয়াশ কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি আমার স্বামী! আমার উচিৎ আপনার আপদে বিপদে পাশে থাকা।”.
আয়াশ বলে,” আসলে তোমাকে কিছুদিন এই শহরে থাকতে হবে!আমি সময় সুযোগ করে পরিবারের সবার সাথে কথা বলে তোমাকে নিতে আসবো।ততোদিন তুমি আমার অপেক্ষায় থাকতে পারবে?”
অর্ণা হাসি মুখে উওর দেয় আমার সমস্যা নেই,আমার জন্য ভালো হবে!আমার অনার্সের ফাইনাল পরিক্ষা কমপ্লিট হয়ে যাবে।তা ছাড়া আমি আমার নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো জব করি!
তা দিয়ে নিজের খরচ করতে পারবো।
আপনার আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না।
আপনি চিন্তা মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে যান!
আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।
আয়াশ অর্ণার হাত ধরে বলে,”আমাকে এতোটা বোঝার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
অর্ণা বলে,”এভাবে ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে লজ্জিত করবেন না প্লিজ। ”
আয়াশ বলে,”তাহলে চলো তোমাকে তোমার মামার বাড়িতে রেখে আসি।”
অর্ণা বলে,”নাহ আমি আর ঐ বাড়িতে ফিরে যাবো না।এখন নিজের যোগ্যতাতে থাকতে চাইছি।এতে আপনার সম্মানের উপর আঁচ আসবে না!”
আয়াশের এইটুকু সময়ে অর্ণার প্রতি কেমন যেনো একটা ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করে দেয়।
আয়াশ এখনো অর্ণার চেহারা দেখে নাই!তবে অর্ণা চেহারা দেখাতে চাইলে আয়াশ বলে,”থাক না তোমার সৌন্দর্য আড়ালে যেদিন তোমাকে আপন করে নিতে পারবো সেদিন তোমার সৌন্দর্যের মাঝে ডুব দিবো।”
অর্ণা আয়াশের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
এরপর আয়াশের সাথে অর্ণা তার কলেজে যায়।
আয়াশ অর্ণার কলেজে এসে কলেজ হোস্টেলে থাকার সব ব্যবসা করে দেয়। এরপর সে অর্ণা কাছে থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
আয়াশ বাড়িতে ফিরে এসে সবাইকে সব কথা আর বলার সাহস করতে পারে না।এভাবে কয়েকদিন কেটে যায়।এরপর আয়াশ ভাবে বিয়ে যখন করছি তখন সবাইকে বলতে হবে। কিন্তু সে সময় হঠাৎ করে আয়াশের বিজনেস এর কাজে দেশের বাহিরে যেতে হয়।আয়াশ আর অর্ণার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।
এভাবে বেশ কয়েক মাস কেটে যায়।আয়াশ দেশে ফিরে সোজা অর্ণার খোঁজ করতে চলে যায়।সেখানে যাবার পর জানতে পারে অর্ণা সুইসাইড করে মারা গেছে। কেনো মারা গেছে তার কারণ স্বরুপ সবাই বলে,”ওর স্বামীর ধোঁকা দিছে তাই মরে গেছে।এটাই কারণ বেডা বিয়ে করে বউটাকে এভাবে হেলায় ফেলায় রেখে দিছে মরার জন্য!”
ওখানে এমন কথা শুনে আয়াশের চোখ দিয়ে এমনি এমনি পানি ঝরে পড়ে।এতোদিনে মেয়েটার সাথে যোগাযোগ না থাকলেও সে খুব বেশি মেয়েটা কে ভালোবেসে ফেলছে।কেনো বিনা দোষে অর্ণা তাকে দোষের ভাগীদার করে অপারে চরে গেছে।
সেদিন একবুক কষ্ট নিয়ে ফিরে আসে বাড়িতে।
অতীত থেকে বাহিরে এসে বলে,”তুমি তো বেঁচে আছো তাহলে আমাকে দোষী কেনো বানালে বলতে পারবে?”
অর্ণা খুশিতে চোখ দুটো পানিতে ভিজে গেছে এটা ভেবে যে আয়াশ তাকে ভালোবাসে।কিন্তু ছোট কিছু ভুলের জন্য আজ আয়াশ এতো কষ্ট পেয়েছে ভাবতেই খারাপ লাগছে তার।তবে অর্ণা মনে মনে বলে,”এতো সমস্যা যার জন্য এবার শাস্তি তাকে পেতে হবে।আমার জীবনের গল্পটা আমি নতুন করে সাজাবো এবার।”
আয়াশ আর কিছু না বলে সোজা রুমের বাহিরে চলে যায়।তার বুকের মাঝে ঝড় ওঠে!সে যে অর্ণার সামনে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।বুকের বাম পাশে চিনচিন করে ওঠে।
অর্ণা আয়াশের মনে আবারো নিজের স্থান করার জন্য চেষ্টা শুরু করে দেয়।
‘
‘
চলবে……
#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_২৯
অর্ণা সুমাইয়ার রুমে চলে আসে হঠাৎ করে বিনা কারণে। অর্ণাকে হঠাৎ নিজের রুমে এভাবে আসতে দেখে একটু চমকে ওঠে।
অর্ণা তা দেখে সুমু কে বলে,”আরে এভাবে চমকে উঠছিস কেনো?এভাবে কারা চমকে ওঠে জানিস?”
সুমু তোলাতে তোতলে বলে,”কারা?”
অর্ণা একগাল হেসে বলে,”যাদের মনে চোর থাকে তারা!”
সুমু ভ্রু কুঁচকে অর্ণাকে বলে,”তুই এখানে কি বোঝাতে চাইছিস? ”
অর্ণা বলে,”তোকে সময় বোঝাবে আমি বোঝানোর কেউ না?”.
সুমু বলে,”তাহলে এভাবে অযথা তর্ক করছিস কেনো?”
অর্ণা বলে,”আচ্ছা আমি মরে গেছি আর আমার মৃত্যু্র জন্য আমার স্বামী দায়ী এটা কে প্রচার করেছে বলতে পারিশ? ”
সুমু অন্যদিকে ফিরে বলে,”আমি এসব কিছুই জানি না।অযথা আমাকে কোনো কিছু বলতে আসবি না।”
তখন অর্ণা অরিনের নাম ধরে ডাক দিতেই অরিন সুমুর রুমে প্রবেশ করে।
অর্ণা অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,”অরিন তোমার ছোট ভাবী কিন্তু আমার মৃত্যুর বেপারের কিছুই জানে না।তাহলে তোমাকে কথার তাল কে খাওয়াই ছিলো গো?”
অরিন বলে,”এই যে ছোট ভাবী আপনার সমস্যা কী?সেদিন তো আমার ভাইয়ের নামে কতো কথা বলছিলেন।আমার ভাই অর্ণার সাথে এইটা করছে ঐ টা করছে,এখন চুপ কেনো আপনি?তার মানে আপনি আসল শয়তান তাই না?সেদিন দুই ভাই বোনের সম্পর্কের মাঝে উইপোকা লাগিয়ে দিতে পেরেছিলেন তাহলে আজ তো সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে এক সেকেন্ড সময় নিবেন না।আপনার মতো মহিলার জন্য আজ আমাদের সমাজের এই অবস্থা আমরা সহজে কাউকে বিশ্বাস করতেই পারি না।”
সুমু আমতা আমতা করে বলে,”সব কথা তোমার ভাবী বলেছিল আমি কিছুই বলি নাই।সে না বললে আমি জানবো কি করে বলো?”
অরিন বলে,”ভাবী যে আপনার কাছে তার স্বামীর নিন্দা করছিল তার কোনো স্বাক্ষী আছে না কোনে প্রমাণ! অযথা মিথ্যা বলা বন্ধ করো।”
সুমু এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না।আসলে কি কথা বলে সে এই কথার জাল থেকে মুক্ত হবে সে পথ খুঁজে পাচ্ছে না।
অর্ণা বলে,”এবার তাহলে বুঝতে পারলে তো অরিন তোমার ভাইয়ের কোনো দোষ নেই!তাহলে এখন এটা বুঝে নাও সুমাইয়ার মিথ্যা কথার জন্য এতো সমস্যার সৃষ্টি। ”
এরপর অর্ণা অরিন কে সাথে করে বাহির বাহিরে বাগানে নিয়ে আসে।সেখানে রোহান অপেক্ষা করছিল। রোহান অরিন কে দেখার পর বলে,”তাহলে প্রমাণ পেয়েছ তোমার ভাবী মিথ্যা অপবাদ রচনা করে সবার মাঝে সরবরাহ করে নাই।”
অরিন বলে,”হ্যা,বুঝলাম! আমার ভাইয়ের নামে সুমু ভাবী মিথ্যা বলেছে।কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথার মধ্য ভনভন করছে তা হলো অর্ণা মারা গেছে এটা কেনো প্রচার করা হলো।আর অর্ণা তারিফা হয়ে কেনো আমাদের জীবনে ফিরে এসেছে।আর অর্ণা ভাবী যদি এতোই সাধু হবে তাহলে সে কেনো তখন প্রতিবাদ করে নাই যে সে জীবিত আমার ভাইয়ের দোষ নেই?”
রোহান বলে,”এটা অর্ণা কেনো চুপচাপ মেনে নিয়েছে তা সে ভালো বলতে পারবে হয়তো কোনো কারণ ছিলো।তারমানে এটা নয় সে তোমাকে আগ বাড়িয়ে ভাইয়ের সাথে মনোমালিন্য করতে এগিয়ে দিয়েছে।”
অরিন রোহান কে বলে,”হ্যা অর্ণা সব সময় আমাকে ঝগড়া, রাগারাগি করতে নিষেধ করেছে।তার মানে এটা নয় যে সমস্যা হবে না।”
রোহান বলে,”আমি জানতাম তুমি সব সময় এমন রিয়াক্ট করবে তাই মাঝে মাঝে কিছু পরিস্থিতি তে তোমার সাথে তর্ক করি না।কারণ মানুষ যখন রেগে থাকে তখন তার সাথে তর্কে জড়ানো বোকামি ছাড়া কিছুই না।”
অরিন রোহানের কথা বাদ দিয়ে অর্ণার সামনে গিয়ে বলে,”আপনি তো জীবিত!তাহলে এতো মরার নাটকের কি ছিলো?আপনার প্রতি আয়াশ ভাই অন্যায় করেছে বলে আমি তার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চেয়েছি।তখন তো একবার বলতে পারতে তুমিই অর্ণা? ”
অর্ণা এবার অরিনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলে,'”আমি যে আসলে অর্ণা সে কথা সবাই হজম করতে পারতে?উঁহু তখন এই অর্ণাকে অর্ণা হবার হাজারো প্রমাণ দিতে হতো।কিন্তু যেই না সুমু বলছে আমি অর্ণা, তখন তার কথা বিশ্বাস করতে দুই মিনিট ও কেউ সময় নাও নি চিন্তা ভাবনা করার।”
অরিন বলে,”হ্যা তা ঠিক।”
অর্ণা বলে,”জানো সমাজের মানুষের সমস্যা কী?তারা পরের কথায় বিশ্বাস বেশি করে।সে নির্দোষ তাকে হাজারো প্রমাণ দিতে হয়।চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে যেমন সবাই চিলের পিছনে ছুটে ঠিক তেমন করে সবাই আসল বিষয়ের বাজ বিচার না করে আমার বেপারটা কে ও জলঘোলাটে করেছিল। এখন এখানে দোষ কোনদিক দিয়ে আমার জানতে পারি?”
এবার রোহান বলে,”অরিন যার জন্য ন্যায়বিচার খুঁজছো তাকে সামনে পেয়ে এমন ব্যবহার করছো।এটা কেমন নিয়ম?”
অরিন মাথা নিচু করে থাকে সত্যি তো সে রাগের বসে অনেক বড় ভুল কাজ করেছে।তার সবটা জানা উচিৎ ছিলো। সঠিক তথ্যের বাচ বিচার না করে কেনো আমরা আরেকজনের দিকে আঙ্গুল তুলবো?রাগের সময় নেওয়া সিদ্ধান্ত কখনো সঠিক হয় না।তাই রাগের সময় নিজেকে যথা সম্ভব সংযোত রাখতে চেষ্টা করা উচিৎ। রাগের সময়টা তো শয়তান ঘাড়েচেপে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।রাগ মানুষের মূল্যবোধ নষ্ট করে দেয়!”
অরিন রোহান আর অর্ণার সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে দুঃখিত বলে মাথা নিচু করে থাকে।রোহান অরিন কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,”আরে আমার রাগের খনি বউটা!একটুতেই রাগে যায়,আবার একটু বোঝায় দিলে ভুল ঠিক বুঝতে সময় লাগে না।”
অর্ণা বলে,”তোমারা রোমান্স করো আমি বরং বাড়ির ভেতরে যাচ্ছি। ”
রোহান বলে,”একদম না!আমি এখুনি চলে যাবো।
শুধু ননদ ভাবীর মাঝের সমস্যা দূর করতে এখানে এসেছিলাম।আমি অর্ণা কে বলি যাও ছোট ভাবীর কে প্রশ্ন করো সাথে অরিন কে নিয়ে যেতে ভুলবে না।এরপরে অর্ণা অরিন কে জোর করে সুমুর কাছে নিয়ে যায়।”
অর্ণা বলে,”আসলে আমরা সমস্যার কাছে হেঁটে হেঁটে যায় না।সমস্যা আমাদের কাছে হেঁটে হেঁটে চলে আসে।কিন্তু সমাধান আমাদের খুঁজতে হয় অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। ”
এরপর অরিন অর্ণার কাছে এগিয়ে এসো ক্ষমা চেয়ে নেয়।আর রোহান কে বিদায় দিয়ে চুপচাপ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতেই দেখে আয়াশ পানি পান করছিল। তখন অরিন আয়াশের সামনে গিয়ে বলে,”ভাইয়া আমি চলে যাবার পর বাড়িটা বড্ড বেশি ফাঁকাফাঁকা লাগবে তাই তুমি তাড়াতাড়ি বাচ্চা নেওয়ার ব্যবস্থা করো।”
আয়াশ এমন কথা শুনে ওর মুখের সব পানি সামনে বাহিরে করে ফেলে দেয়।আয়াশের মুখের সব পানি সুমাইয়ার মুখের উপরে গিয়ে পড়ে।
সুমাইয়া এ্যাখ বলে ফ্রেশ হতে নিজের রুমে চলে যায়।
আয়াশ বাচ্চার কথা শুনে অবাক হলো না অরিনের ভালো ব্যবহার দেখে এটা নিয়ে বেচারা আয়াশ নিজেই কনফিউজড হয়ে যায়।
দুই ভাইবোনের এমন কাহিনী দেখে দূরে দাঁড়িয়ে অর্ণা হাসতে থাকে।
আয়াশ মনে মনে বলে,”সব সময় আমার যেমনটা ভাবি তেমন হয় না।পরিস্থিতি কখনো নদীর বিপরীত স্রোতের মতো প্রবাহিত হতে থাকে।”
‘
‘
চলবে….
#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_৩০
অরিনের বিদায়ের অনুষ্ঠানে আয়াশের মামা,মামী,মামাত ভাই আর বোন ও আসে।
এবার তাদের সাথে নতুন সদস্য আসে তার নানিমা।
নানিমা আয়াশদের বাড়িতে আসতেই অর্ণা কে দেখে ওর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলে,”এই মেয়ে তোমাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেনো দেখেছি মনে হচ্ছে?”
অর্ণা বলে,”আজ প্রথম আপনার সাথে আমার দেখা হলো।এর আগে কখনো দেখা হয়েছে বলে তো আমার মনে হচ্ছে না।”
তখন মরিয়ম খান এসে বলে,”রাস্তার মেয়ে এটা!হয়তো কখনো কোনো রাস্তার পাশে তাকে দেখেছে আপনি।”
আয়াশেন নানি বলে,”মাশাআল্লাহ এতো সুন্দর মিষ্টিকে রাস্তার পাশে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না বেয়াইন সাহেবা।”
তখন আয়াশের মামাত ভাই এসে বলে,”আরে দাদীমা তুমি ভাবীর ছবি আমাদের মোবাইলে দেখেছ তাই তোমার এতো চেনা চেনা মনে হচ্ছিল।”
নানি মা বলে,”আরে হ্যা তাই তো!আমি তো ভুলেই গেছি।এই মেয়েটা তো আমার আয়াশ ভাইয়ের বউ।”
অর্ণা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে দাদীমা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আচ্ছা দাদীমা হঠাৎ করে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা গুলো গরলে পরিণত হবার কারণ কি জানতে পারি?”
দাদী মা বলে,”যে মেয়ের বাবা মা নেই!এতিম তাদের জন্য এই খান বাড়ি নয়।রাস্তার মানুষদের জন্য রাজপথ। ”
অর্ণা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,”আচ্ছা এতিমেরা কি মানুষ নয়?তারা কী জীবজন্তু? পৃথীবিতে তারাও তো আল্লাহ সৃষ্টি শুধু বাবা মা ছাড়া হলেই এতিমর খেতাব অর্জন করে তারা।”
সুমু এসে বলে,”দাদী মা অযথা এই এতিম-মেয়ের সাথে কথা বলে তর্কে জড়িও না।এতিমের প্রতি দয়া দেখানো যায় তাদের ভালো বাসা যায় না।”
আয়াজ পেছন থেকে বলে ওঠে,”সুমু তুমি একদম ঠিক কথা বলেছো। তোমার কথার সাথে আজকে সহমত প্রকাশ করছি।”
সুমু এটা ভেবে খুশিতে গদগদ হয়ে যায় যে আয়াজ তার সার্পোটে কথা বলছে।
আয়াজ সুমুর খুশিতে গদগদ চেহারা উপর কথার অপমান লেপে দিয়ে বলে, “আমিও তো এতিম! আমারো বাবা মা কেউ নেই!তাহলে দাদীমা আমিও তো এতিম রাস্তার ছেলে।আর সুমু তুমি বোধহয় আমাকে দয়া দেখাতে বিয়ে করেছো?”
সুমু আয়াজের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরে বলে,”তোমাকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি।তুমি এতিম নও তোমার পরিবার আছে।তোমার চাচা চাচি, কাজিনেরা সবাই তো আছে।”
আয়াজ বলে,”শুনেছি ভাবীর ও এমন পরিবার আছে।সে তার মামার বাড়িতে বড় হয়েছে। তাহলে সে কেনো রাস্তার মেয়ের খেতাব পাবে?সে কেনো এতিমের সিলমোহর পাবে?আমার আর তার মাঝে তো পার্থক্য নেই।”
দাদীমা বলে,”আয়াজ দাদুভাই তুমি ঐ মেয়ের জন্য সুমুর সাথে এভাবে তর্ক করছো কেনো?”
আয়াজ দাদীকে কিছু না বলে সোজা সুমুকে উদ্দেশ্য করে বলে,”অর্ণার মৃত্যুর কাহিনীর পিছনে যদি তোমার কোনো অবদান থেকে থাকে তাহলে এখনো সময় আছে সবার সামনে সত্যি বলে মাফ চেয়ে নাও।নয়তো সত্যি যেদিন একাই বাহিরে আসবে সেদিন তোমার আমার সম্পর্কের সমাপ্তি হবে।”
সুমু দাদীর কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”দেখো না দাদী মা তোমার নাতী আমার সাথে এই মেয়ের জন্য অশান্তি সৃষ্টি করছে।”
তখন আয়াশের নানি মা বলে,”এতো সময় তোমাদের কথা শুনে কিছু না বুঝলেও এটা ঠিকি বুঝতে পেরেছি তোমার কপালে দুঃখ আছে মেয়ে।যে মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে অপমান করতে পিছপা হয় না। সে ও একদিন কলার খোঁসায় পাঁ পিছলে গবরের মধ্যে পড়ে।আর তুমি সংসার গড়া বাদ দিয়ে দেখছি সংসার ভাঙ্গার খেলায় মেতে উঠেছো।”
অরিন এসে বলে,”বাহ নানি তুমি তো একদম ফাটিয়ে দিয়েছো। এমন করে সুমু ভাবীর মুখে গবর লেপে দিলে এখন দাদী মা কি করে বেয়াইনের কথার হাত থেকে আদুরে নাতিবৌ কে বাঁচাবে?”
মরিয়ম খান বলে,”আমার অযথা কারো সাথে তর্ক করার ইচ্ছা নেই।তারা দাওয়াত খেতে এসেছে।দুদিন পর ঠিকি চলে যাবে মেহমানের মতো।আমারা আমরাই তো থাকবো!অযথা ঐ মেয়ের জন্য ঝগড়াঝাঁটি করার কোনো মানে হয় না।”
অর্ণা চলে যায় নিজের কাজ করতে অযথা এনাদের সাথে তর্ক করার কোনো মানে হয় না।
অর্ণা অরিন কে সাথে করে রান্নাঘরে নিয়ে আসে সংসারের খুঁটিনাটি কাজ শেখাতে।প্রথমে তো অর্ণা অরিন কে সবজি পেয়াজ মরিচ এসব কাটা শেখাতে থাকে। তারপর রান্নাতে কতোটা মশলা দেওয়ার দরকার তার পরিমাণ শেখাতে থাকে।অরিন খুব মনোযোগ সহকারে কাজ শিখতে থাকে।তখন অরিনের মা মমতা শাঁকচুন্নি এসে হাজির হয়।”
মমতা খান এসে বলে,”এই আয়াশের বউ!আমার মেয়ে তোমার মতো গরীব ঘরের না বুঝলে।যে তাকে সংসারে এতো কাজ কর্ম শিখতে হবে।”
অরিন বলে,”মা এখানে ভাবীর দিকে আঙ্গুল তোলার আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো।তুমিও কিন্তু রান্না করো আমাদের সবার জন্য এর মানে কী তুমিও…
মমতা খান জোড়ে চিৎকার করে অরিন কে ধমক দিয়ে ওঠে।
অর্ণা পরিবেশ ঠাণ্ডা করতে বলে,”কাজ সবাইকে করতে হয় এখানে গরীব বড়লোক বলে কথা নেই।প্রতিটা মেয়ে তার সংসার কে ভালোবাসে বলে কাজ করে।উচ্চ শিক্ষিত মেয়েটা কেও নিজের স্বামী সন্তানের জন্য রান্না করতে হয়।তাই অযথা এই বিষয়ে বেশি কথা না বলাই উওম।”
এদিকে সব কিছু সুন্দর ভাবে চলছিল তবে অর্ণা আয়াশের মনে নিজের স্থান আগের মতো তৈরি করে নিতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছিল।
একদিকে অর্ণা আয়াশের সম্পর্ক অন্য দিকে সুমু আয়াজের সম্পর্ক। সব সত্যি সামনে আসলে যদি সম্পর্ক গুলো নষ্ট হয়ে যায় সেই ভয়ে অর্ণা চুপচাপ ছিলো।অর্ণা ভেবেছিল এভাবে চেষ্টা করতে থাকলে একসময় সে আয়াশের সাথে সম্পর্কটা সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে পারবে।
কিন্তু কথায় আছে না!অভাগী যেদিকে যায় সাগরের জল সেদিকে শুকিয়ে যায়।
অর্ণা অনেক চিন্তা ভাবনার পর সিদ্ধান্ত নেয় সে সবটা ক্লিয়ার করবে সবার কাছে।এরপর যা হবার তাই হবে।কেনো সে দোষ না করে ঝরা পাতার মতো ঝরে অবহেলা সহ্য করবে?
অরিনের বিদায়ের দু দিন আগে হঠাৎ করে অর্ণা বাড়ির সবাইকে একত্রিত করে।সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনাদের সবাইকে আজ আমি আমার জীবনে গল্প শোনাবো। ইচ্ছা না থাকলেও শুনতে হবে আপনাদের। আপনার আমাকে ভুল বুঝবেন তা হতে পারে না।আর আমি অপমান সহ্য করতে পারি তবে অবহেলা নাহ।এই অবহেলা সহ্য করার আর ক্ষমতা নেই আমার।আমি আজ বলবো সবাই চুপচাপ শুনবেন। ”
অর্ণা কথা গুলো শুনে সুমু খুব ভয় পেতে শুরু করে।ভয়ে সুমুর মাথা থেকে ঘাম ঝরেত শুরু করে দেয়।
আয়াজ সুমুর দিকে তাকিয়ে বলে,”অর্ণা এখনো কিছুই বলে নাই তাতে তোমার এই অবস্থা! যখন সবটা বলবে তখন তোমার সাথে কী হবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না সুমাইয়া!বান্ধবী হয়ে আরেকজনের জীবনের গল্পটা বদলে তুমি দিয়েছ তাই না?এবার রেড়ি থেকে পাপের শাস্তি ভোগের জন্য।”
সুমু আয়াজের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে ভাবতে থাকে যার জন্য করলাম চুরি আজ সেই চোর অপবাদ দিচ্ছে আমাকে।হায়রে দুনিয়া।
এদিকে অর্ণা বলতে শুরু করে….
‘
‘
‘
চলবে…..