Divorce Part-22

0
4976

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 22

হৃদয়ঃ একটু বেলকনিতে আসো,,,

অন্তরাঃ আপনি কোথায় এখন,,,??

হৃদয়ঃ তোমার বাসার সামনে,,,,,

অন্তরাঃ কীহ্ ,,,,,,, আপনি এখনই চলে জান,,,, লোকে কী বলবে,,,??

হৃদয়ঃ তুমি বেলকনিতে আসো,,,, তোমাকে একবার দেখেই চলে যাবো,,,,

অন্তরাঃ আপনি কী পুরোপুরি পাগল হয়ে গেলেন,,,,??

হৃদয়ঃ তুমি শুধু শুধু কথা বাড়াচ্ছো,,,, একবার এলেই তো হয়ে যায়,,,,

অন্তরাঃ প্রতিবেশী কেউ দেখলে আমার নামে আবার কোন কাহিনী বানাবে তার ঠিক নেই,,, আপনি প্লিজ চলে যান,,,,

হৃদয়ঃ তোমাকে একবার না দেখে যাবো না আমি,,, সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকবো দরকার হলে,,,,

অন্তরাঃ ওফ এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম,,,??

হৃদয়ঃ হুম,,, আমি পাগলই,,,,

অন্তরাঃ(একটা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম ভালো করে,,,ফোনটা কাটিনি,,, ফোন হাতে নিয়ে তারপর বেলকনিতে গেলাম,,,। আমাদের বাসাটা দুতলা,,, সব রুমের বেলকনি বাড়ির পেছন দিকে,,, সব বেলকনি থেকেই রাস্তা দেখা যায়,,,, রাস্তাটা বাড়ির পেছন দিক দিয়ে গেছে,,, হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে এক হাত ভর দিয়ে,,, সব বেলকনিতে দেখছে,,, আমার রুম কোনটা জানে না তাই হয়তো,,,,) আপনি কেন এসেছেন এখানে,,,??

হৃদয়ঃ বাড়িতেও মুখ ঢেকে রাখো নাকি,,,??

অন্তরাঃ এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়,,,,

হৃদয়ঃ জ্বর বাধালে কীভাবে,,,??

অন্তরাঃ(অবাকে হয়ে,,)আমার জ্বর আপনি জানলেন কীভাবে,,,??

হৃদয়ঃ ভালোবাসলে,,,, ভালোবাসার মানুষের সব এমনই জানা যায়,,,,

অন্তরাঃ হেয়ালি না করে বলুন কীভাবে জানলেন??

হৃদয়ঃ ভার্সিটি গিয়েছিলাম,,, এক ঘন্টা অপেক্ষা করলাম কিন্তু তোমার দেখা নেই,,, তাই জ্যোতিকে কল দিয়েছিলাম,,,

অন্তরাঃ কিন্তু এখানে কেন এসেছেন,,,??

হৃদয়ঃ তোমার জ্বর শুনে আর না দেখে মন মানছিলো না,,, কেমন আছো এখন,,,??

অন্তরাঃ যার জ্বর তাকে দেখতেই তার বাসায় যান নাকি,,,

হৃদয়ঃ তা কেন যাবো,,,,,,??

অন্তরাঃ তাহলে আমাকে কেন দেখতে এসেছেন,,,??

হৃদয়ঃ সেটা তুমি ভালো করেই জানো,,

অন্তরাঃ কেন পাগলামি করছেন আপনি,,,,?? আমার থেকে হাজার গুন সুন্দরী আপনার জন্য বসে আছে,,,, তাদের ফেলে আমার মতো ডিভোর্সি একটা মেয়ের জন্য কেন এমন করছেন,,,?? যে কিনা কোনদিন আপনাকে বাবা ডাক শুনাতে পারবে না,,,,, যে কিনা সমাজের চোখে বন্ধ্যা,, ডিভোর্সি

হৃদয়ঃ অন্তরা,,,,,,,,,,(জোড়ে ধমক দিয়ে,,,)

অন্তরাঃ কেন সত্য কথা শুনতে তেতো লাগলো,,,, এই কথাগুলো আমার রোজ শুনতে হয়,,, রোজ,,, কখনো বাইরের মানুষের কাছে আবার কখনো আপন মানুষের কাছে,,,

হৃদয়ঃ অ,,অন্তরা আমি শুধু তোমাকে একবার দেখতে এসেছি,,,, শুধু নিজের মনের শান্তির জন্য,,,।

(দূরে দাঁড়িয়ে দুই মহিলা অন্তরা আর হৃদয়কে পর্যবেক্ষণ করছে)

,,,,,, আরে এই ছেলেটা কে গো,,,,??

,,,,,,জানি না তো,,,, অনেকসময় হলো এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি,,।

,,,,,, ও মা দেখো,,, অন্তরা দাঁড়িয়ে আছে না,,?? এই ছেলেটার দিকেই তো তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে,,,

,,,,,,হ্যাঁ গো,,, তাই তো মনে হচ্ছে,,, ফোনে কথা বলছে এভাবে,,,,

,,,,,,,, হায় কপাল,,, কালেকালে আর কতো কী যে দেখতে হবে,,??

,,,,,,,দেখো গিয়ে এই ছেলের জন্যই স্বামীর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ডিভোর্স দিয়েছে কিনা,,,।

,,,,,,, সে যাই বলো,,, ছেলেটা দেখতে কিন্তু ওর আগের স্বামীর থেকেও অনেক বেশি সুন্দর,,,,

,,,,,,,,তাই হয়তো এই ঘাটে নৌকা ভিড়িয়েছে,,,,, ছেলের বয়সও তো কম,,, ওর সাথে মিলবে ভালো,,

,,,,,,, কী যে বলো না,,, এমন সুন্দর ছেলের পাশে শুধু আমার মেয়ের মতো সুন্দরী কুমারী মেয়েই মানায়,,, এই অন্তরা তো ডিভোর্সি,,, সাথে বন্ধ্যাও

,,,,,,,,তা অবশ্য ঠিকই বলেছো,,, ছেলেটা মনে হয় অন্তরার সম্পর্কে সব জানে না,,, জেনে শুনে এমন মেয়ের সাথে কেউ কথা বলে,,,??

হৃদয়ঃ কী হলো বলো,,, ঔষধ খেয়েছো,,??

অন্তরাঃ আপনি,,,,

হৃদয়ঃ ওকে,,, রেডি হয়ে নিচে আসো,,, আমি তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো,,,

অন্তরাঃ(হায় আল্লাহ,,, ওই আন্টিরা হৃদয় আর আমার দিকেই তাকিয়ে আছে,,, কী মনে করছে আল্লাহ জানে,,) আমি ঔষধ খেয়ে নিয়েছি,,, এখন ঠিক আছি আমি,,, দয়া করে আপনি এবার যান এখন থেকে,,,, আমি আপনার পায়ে পরছি,,,

হৃদয়ঃ তুমি,,,,

অন্তরাঃ প্লিজ,,,,, আমি হাত জোর করছি,,,

হৃদয়ঃ ওকে,,,, আমি আসছি,,,, নিজের খেয়াল রেখো,,,, আল্লাহ হাফেজ,,

অন্তরাঃ আল্লাহ হাফেজ,,,

(হৃদয় গাড়িতে ওঠে আবার অন্তরার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো,,,, অন্তরা হাফ ছেড়ে বাঁচলো,, রুমে যাওয়ার জন্য ঘুরতে গিয়েও ঘুরলো না,,,)

অন্তরাঃ না না এখনই রুমে যাওয়া যাবে না,,, আমি এখনই রুমে চলে গেলে আন্টিরা সিউর হয়ে যাবে হৃদয় আমার সাথে দেখা করতেই এসেছিলো,,,
,,,,,

জ্যোতিঃ( কী হলো ব্যাপারটা,,,?? স্যার নাকি প্রতিদিন সকাল নয়টায় চলে আসে,,, আজ ১০ টার বেশি বাজে এখনো এলো না,, অফিসে এসে তিশা নামের আপুর কাছ থেকে কাজ বুঝে নিয়েছি,,, কাজ খুব একটা কঠিন না,,,)

(জ্যোতি এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়াদ অফিসে ঢুকলো গম্ভীর মুখে,,,, কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের কেবিনে চলে গেলো,,,,)

তিশাঃ জ্যোতি,, যাও স্যারের কতগুলো মিটিং আছে,,, কোথায় আর কার সাথে তা জানিয়ে এসো,,

জ্যোতিঃ ঠিক আছে ম্যাম,,,

তিশাঃ আমাকে আপু বললেই হবে,,,, এটাই আমাদের দুজনের জন্যই কমফোর্টেবল,,,

জ্যোতিঃ ওকে,,, আপু,,,,,

তিশাঃ এখন যাও,,,,

জ্যোতিঃ(যেভাবে মুখ ফুলিয়ে আছে যেতেই ভয় করছে,,,, তাও ধীরে ধীরে গেলাম) May i come in,, sir,,??

রিয়াদঃ come,,,,,

জ্যোতিঃ Good morning sir

রিয়াদঃ Good morning,,,, কিছু বলবে,,??

জ্যোতিঃ স্যার আজকে আপনার ৪টা মিটিং আছে,,, একটা মিটিং খুবই ইম্পর্ট্যান্ট,,,

রিয়াদঃ ক্যান্সেল করে দাও,,, আমি আজ কোনো মিটিং করতে পারবো না,,,

জ্যোতিঃ স্যার একটা মিটিং জাপানের ক্লাইন্টদের সাথে,,,, তারা চলে এসেছে মিটিংয়ের জন্য,,, আর তিশা আপু বললো মিটিংটা কোম্পানির জন্য অনেক ইম্পর্ট্যান্ট,,,

রিয়াদঃ আমার থেকে বেশী বুঝো তুমি,,, একদিনও হয়নি এখনই তোমার থেকে আমাকে জানতে হবে কোনটা ইম্পর্ট্যান্ট আর কোনটা না,,,

জ্যোতিঃ সরি স্যার,,, কিন্তু আমিতো বলিনি তিশা আপু,,,,

রিয়াদঃ হোয়াট,,,,, কী তিশা আপু,,,?? সিনিয়রদের সম্মান করতে জানো না,,, তিশাকে ম্যাম বলবে বুঝতে পারছো,,,??

জ্যোতিঃ জী স্যার,,,, সরি,,,,

রিয়াদঃ এখন এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন,,,?? যাও চোখের সামনে থেকে,,,

জ্যোতিঃ জী স্যার,,,( যেতে গিয়েও থেমে গেলাম,,) স্যার আপনার কী মন খারাপ,,,?? আপনার চোখমুখ ফুলে আছে কেন,,??

রিয়াদঃ That’s none of your business,,, it’s not part of your job,,,,go to your work,,,,,(জোরে চিৎকার করে,,,)

জ্যোতিঃ(এই কথায় এতটা রেগে যাবেন আমি বুঝতেই পারিনি,,, ভয়ে থরথর করে কাঁপছি আমি,,, দৌঁড়ে বের হয়ে আসলাম,,, তিশা আপু সামনে গিয়ে ঢকঢক করে গ্লাসের সব পানি খেয়ে নিলাম,,,)

তিশাঃ কী হয়েছে জ্যোতি,,,?? স্যার কিছু বলেছে,,??

জ্যোতিঃ স,,সব মিটিং ক্যান্সেল করে দিতে বলেছে,,

তিশাঃ কীহ্,,,,, এত ইমর্ন্ট্যান্ট মিটিং ক্যান্সেল করতে বলেছে,,,

জ্যোতিঃ হুম,,,(আর কিছু না বলে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে পড়লাম,,,,, চোখ ভরে আসছে পানিতে,,,, জীবনে প্রথম কেউ আমার সাথে এমন বিহেভ করলো,,,, তাও নিজের ভালোবাসার মানুষ,,, একতরফা ভালোবাসা খুব কষ্ট দেয়,,,, কখনো মুখ ফোটে বলাও যায় না আবার চেপে রাখাও কষ্টকর,,,, অপরজনের থেকে কিছু প্রত্যাশা করা নেহাত বোকামি ছাড়া কিছু নয়,,, কিন্তু মন সেটা মানতে নারাজ,,,,। সারাজীবন কী এই কষ্টই সয্য করতে হবে,,,??)

,,,,,,Hello

জ্যোতিঃ(তাড়াতাড়ি চোখ মুছে সামনে তাকালাম,,,) H,,,hello,,,,,

আমি তনয় হাসান,,,, এই কোম্পানির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার,,,তোমার নামটা,,,??

জ্যোতিঃ জ্যোতি,,,, জ্যোতি ইসলাম,,

তনয়ঃ জ্যোতি,,, তোমার কী মন খারাপ,,,??

জ্যোতিঃ No sir,,,, i am ok,,,(জোর করে হাঁসার চেষ্টা করে,,)

তনয়ঃ ফর্মালিটির দরকার নেই,,,, এখানে সবাই আমার ফ্রেন্ডের মতোই,,, এখন বলো মন কেন খারাপ,,,??

জ্যোতিঃ মন খারাপ না তো,,,,

তনয়ঃ হুমম(ভাবুন ভঙ্গিতে) তুমি রিয়াদের নতুন পি.এ,,,,, ও হয়তো তোমার সাথে রাগ দেখিয়েছে,,, ওর কথায় কিছু মনে করো না,,, ওর সবসময় মেজাজ চড়া থাকে,,, বুঝে শুনে কথা বলবে ওর সাথে,,, ও যখন নিজের ভুল বুঝতে পারবে,,, তখন নিজে থেকেই সরি বলবে,,, তাই মন খারাপ করো না,,,

জ্যোতিঃ জী স্যার,,,,

তনয়ঃ আমি রিয়াদের বন্ধু,,,,, তাই ওর সম্পর্কে আমার থেকে কেউ হয়তো বেশি জানে না,, এখনো মন খারাপ,,??

জ্যোতিঃ নাহ্

তনয়ঃ ওকে দাঁড়াও তোমাকে একটা জোক্স শোনাই,,,,

(জ্যোতির উত্তরের অপেক্ষা না করে তনয় জোক্স বলতে লাগলো,,, আর জ্যোতি তা শুনে খিলখিল করে হাসছে,,,,)
,,,,,

রিয়াদঃ (আজ সিয়ার স্মৃতি বড্ড তারা করে বেড়াচ্ছে,,,, কিছুতেই সিয়াকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না,,, সেই পার্কে সিয়াও রোজ বিকেলে আসতো,,, তারপর কীভাবে ওর সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না,,,, একসাথে পার্কে বসে বাদাম খাওয়া,,, একসাথে পাশাপাশি হাঁটা,,, মাঝে মাঝে পার্কের ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে দুজনেই খেলতাম,,,, দিনগুলো চাওয়ার থেকেও ভালো যাচ্ছিলো,,,, কিন্তু একদিন,,,,,)

চলবে,,,