Divorce Part-21

0
5068

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 21

হৃদয়ঃ চোখ মুছতে মুছতে ছাদ থেকে নেমে এলাম,,,,
,,,,

রিয়াদঃ সিয়া তোমার মনে আছে,,,, আজ আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো,,, রোজ বিকেলে পার্কে হাটতে যাওয়ার অভ্যাস ছিলো আমার,,, সেদিনও গিয়েছিলাম,,,, দেখাটা কেমন অদ্ভুত ভাবে হয়েছিলো তাই না,,,, আমি কেবল পার্কে ঢুকছিলাম,,,,, তুমি বলেছিলে,,,
,,,

সিয়াঃ Excuse me,,,,

রিয়াদঃ (একটা মিষ্টি গলার আওয়াজ শুনে পিছনে ফিরলাম,,, জান্নাতের কোন হুর মনে হয় মাটিতে নেমে এসেছে,,,,, অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে,,,, কাজল কালো চোখ,,,, মায়াবী মুখ,,, গোলাপি চোখে মিষ্টি হাসি,,,, আগে কখনো কোন মেয়েকে এভাবে খেয়াল করিনি আমি,,,, মানতে হবে কণ্ঠের সাথে দেখতেও মিষ্টি। নিজেকে তাড়াতাড়ি সামলে নিলাম ) yes,,,,

সিয়াঃ Can you help me,,,,,

রিয়াদঃ yeah sure,,,, i will try,,, But how can i help you,,,

সিয়াঃ আসলে এই বাচ্চাটার আজ একটাও ফুল বিক্রি হয়নি,,, কিন্তু ওর মা নাকি অসুস্থ আর ওর খুব টাকার দরকার,,,, আসলে আমার কাছে টাকা নেই,,, পার্সটা কোথাও হারিয়ে ফেলেছি,,,, খোঁজে পাচ্ছি না,,,

রিয়াদঃ ওহ্ ,,,, বুঝলাম,,,, কিন্তু আমি কী করতে পারি এখন,,,??

সিয়াঃ আপনি যদি ওর ফুল গুলি কিনে নিতেন তাহলে খুব ভালো হতো,,,

রিয়াদঃ ওহ্ এই ব্যাপার,,, ওকে আমি দেখছি,,,,(বাচ্চাটার সামনে হাটু গেঁড়ে বসলাম) তোমার কাছে কয়টা ফুল আছে কিউটি,,,(একটা বাচ্চা মেয়ে)

বাচ্চাটাঃ ২০ টা,,,,

রিয়াদঃ কয় টাকা করে বিক্রি করো একটা,,,,??

বাচ্চাটাঃ ১০ টাকা,,,,

রিয়াদঃ আচ্ছা,,, তাহলে সবগুলো ফুল নিলে কত টাকা দিতে হবে তোমাকে,,,

বাচ্চাটাঃ ২০০ টাকা দিলেই হবে,,,,,

রিয়াদঃ ওকে,,,, এই নাও টাকা,,,

বাচ্চাটাঃ এটাতো ১০০০ টাকার নোট,,,, আমার ফুলের দামতো এতো না,,,,

রিয়াদঃ ফুলের কোন মূল্য ঠিক করা যায় না কিউটি,,,, এর মূল্য আমাদের সাধ্যের বাইরে,,,, ফুল মানে হচ্ছে ভালোবাসা যা কখনো টাকা দিয়ে কেনা যায় না,,,, তোমার মা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে,,, তাড়াতাড়ি যাও,,,

বাচ্চাটাঃ ঠিক আছে,,,

রিয়াদঃ(বাচ্চাটা ফুলগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো,,,। উঠে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি যে আমাকে ডেকেছিলো সেই মেয়েটা অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে,,,) Excuse me,,,,

সিয়াঃ হ্যা,,,,, জী বলুন,,,

রিয়াদঃ আপনার নামটা কী,,,??

সিয়াঃ সিয়া,,,, সিয়া আফরোজ,,,,

রিয়াদঃ নাইচ নেম,,,, তো মিস সিয়া এই ফুলগুলো আপনি রাখুন,,,,

সিয়াঃ আপনার ফুল আমি কেন নেবো,,,??(সরু চোখে তাকিয়ে)

রিয়াদঃ ফুলগুলো আপনার বলাতেই কিনেছি আমি,,, আর ফুল দেওয়ার মতো মানুষ আমার নেই,,,

সিয়াঃ মা নেই আপনার,,,, এমনতো নয় ফুল শুধু গার্লফ্রেন্ডকেই দিতে হবে,,,

রিয়াদঃ গোলাপে আমার মায়ের এলার্জি,,,,

সিয়াঃ ওহ্ ,,,,,,,

রিয়াদঃ ফুলগুলো আপনি নিয়ে যান নাহলে আমি ফেলে দিচ্ছি,,,,

সিয়াঃ আরে না না,,, এতো সুন্দর ফুল ফেলে দিবেন কেন,,,?? আমি নিয়ে নিচ্ছি,,,

রিয়াদঃ ওকে,,,(ফুলগুলো মেয়েটার হাতে দিলায়)

সিয়াঃ ধন্যবাদ,,,

রিয়াদঃ(মুচকি হেঁসে চলে আসতে গিয়ে থেমে গেলাম,,,) মিস সিয়া,,,

সিয়াঃ জী,,,,

রিয়াদঃ আপনি এখন বাড়ি যাবেন,,,

সিয়াঃ হ্যাঁ যাবো,,, কেন বলুন তো,,,??

রিয়াদঃ আপনিতো পার্স হারিয়ে ফেলেছেন,,,, যাবেন কী করে,,,??

সিয়াঃ আমার বাসা এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়,,, হেঁটে চলে যাবো,,,।

রিয়াদঃ এক মিনিট,,,, এই রিকশা,,,

সিয়াঃ আরে লাগবে না,,,,

রিয়াদঃ ওঠে পড়ুন,,,, মামা উনাকে ঠিকমতো নামিয়ে দিয়েন,,,

রিকশাওয়ালাঃ আচ্ছা মামা,,,

রিয়াদঃ এই নিন ভাড়া,,,,

সিয়াঃ আরে এটা দিতে হবে না,,,,, আমি বাসায় গিয়ে দিয়ে দেবো,,,

রিয়াদঃ আবার দেখা হলে নাহয় ফেরত দিয়ে দিয়েন,,,,আল্লাহ হাফেজ,,,

সিয়াঃ ঠিক আছে,,,, আল্লাহ হাফেজ,,, (মিষ্টি হেঁসে,,,)

রিয়াদঃ(বিনিময়ে শুধু মুচকি একটা হাঁসি দিলাম,,)

সিয়াঃ(রিকশা চলতে শুরু করলে আমি সমানে তাকালাম,,,, চেহারা সুন্দর হওয়ার সাথে মনটাও খুব কম মানুষের সুন্দর হয়,,,, ছেলেটা দেখতে যেমন রিয়াল হিরো,,,, মনটাও রিয়াল হিরোর মতো,,, এই যা নামটাই তো জানা হলো না,,, অনেকটা পথ চলে এসেছি,,, এখন ফিরে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলে পাগল মনে করবে,,,, ধূর,,, হাতে থাকা ফুলগুলোর দিকে তাকালাম,,,, মুখে মুচকি হাসির রেখা ফোটে ওঠলো,,,)
,,,,,,,

রিয়াদঃ এভাবেই প্রথম দেখা হয়েছিলো আমাদের,,, তাই না সিয়া,,,, আজও মনে হয় এই তো সেদিনের কথা,,,,, কিন্তু দেখো আজ তুমি আমার পাশে নেই,,,,, আবার পাঁচদিন পর সেই পার্কেই দেখা হয়েছিলো তোমার সাথে,,, তুমি বাচ্চাদের সাথে কী যেন খেলছিলে,,,,, আমি তোমাকে দেখে কাছে গিয়ে তোমার নাম ধরে ডাকলাম,,,, তুমি আমাকে দেখে কী অবাক আর খুশি হয়েছিলে তোমার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো,,, রিকশা ভাড়ার বিশ টাকা ফেরত দিলে আমায়,,,, চকচকে বিশ টাকার একটা নোট,,,, তুমি জানো,,, আজও সেটা আমার মানিব্যাগে আছে,,,, দেখাচ্ছি দাড়াও,,,, মানিব্যাগ থেকে নোটটা বের করে বুকের সাথে চেপে ধরলাম,,,, মনে হচ্ছে সিয়াকেই বুকে জড়িয়ে আছি,,,, চোখের পানি মুছে ছাদের দোলনায় শুয়ে পড়লাম,,, আজ সিয়ার কাছেই ঘুমাবো,,, আকাশের ঐ তারাগুলোর মাঝে আমার সিয়াও যে আছে,,,,

★সকালে★

অন্তরাঃ ঘুম ভাঙলো চোখে রোদের তীব্র আলো পড়ায়,,,, অনেক বেলা হয়ে গেছে মনে হয়,,, জানলা দিয়ে রোদ এসে পড়ছে চোখে,,, ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৯ঃ৩০,,,,,। এত বেলা হয়ে গেছে কেউ ডাকলো না কেন,,,?? শরীরটা বড্ড দূর্বল লাগছে,,,, কিন্তু কেন,,,?? আজ ভার্সিটি যাওয়া হলো না,,,,,

মাঃ তুই ওঠেছিস,,,, ফ্রেস হয়ে আয়,,,, খেয়ে ঔষধ খেয়ে নে,,,,

অন্তরাঃ কীসের ঔষধ খাবো,,,??

মাঃ সে কী তুই জানিস না,,,?? রাতে তোর ধুম জ্বর হয়েছিলো,,,, জ্যোতি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলো,,,, পরে আমাকে ডেকে আনে,,,, মেয়েটাও সারারাত জেগে ছিলো তোর পাশে,,,, সকালে অফিস গেছে,,,

অন্তরাঃ ওহ্ ,,, ঠিক আছে আমি ফ্রেস হয়ে আসছি,,,

(ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে ঔষধ খেয়ে নিলাম,,,,, শরীর খুব দূর্বল লাগছে,,,,, ভাবি আমাকে দেখে ওঠে চলে গেলো,,, কিছুদিন ধরেই ভাবি আমাকে এড়িয়ে চলছে,,, ভাইয়ার জন্য সামনাসামনি কিছু বলতে পারে না কিন্তু সে আমাকে সয্য করতে পারছে না,,, সেটা তার ব্যবহার দেখেই বুঝতে পারছি,,,, মাও বুঝতে পারছে কিন্তু সে কী বা বলবে,,,, একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রুমে এসে আবার শুয়ে পড়লাম,,,)
,,,,

হৃদয়ঃ সকাল ৯ টা থেকে ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে আছি,,,, এখন বাজে সকাল ১০ টা,,,, ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে কিন্তু অন্তরার দেখা নেই,,,, ও কী তাহলে আজ আসবে না। কিন্তু কী হয়েছে ওর,,,?? ও তো এমনি এমনি ভার্সিটি মিস করে না,,, তাহলে,,??? জ্যোতিকে একটা কল দিয়ে দেখি,,,

ক্রিংক্রিংক্রিং

জ্যোতিঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,,, কেমন আছেন,,,,??

হৃদয়ঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,, আলহামদুলিল্লাহ,,,, তুমি কেমন আছো,,,??

জ্যোতিঃ আলহামদুলিল্লাহ,,,,

হৃদয়ঃ তুমি এখন কোথায়,,,??

জ্যোতিঃ আমিতো অফিসে চলে এসেছি,,,, কেন ভাইয়া,,,??

হৃদয়ঃ না মানে,,,, অন্তরা কী আজ ভার্সিটি আসবে না,,,??

জ্যোতিঃ ভাইয়া ওর তো রাতে অনেক জ্বর হয়েছিলো,,,, ভার্সিটি কীভাবে আসবে,,,??

হৃদয়ঃ কী বলো,,,?? আবার জ্বর কীভাবে বাঁধালো,,,??

জ্যোতিঃ রাত বিরাতে ঠান্ডা পানি দিয়ে শাওয়ার নিলে আর কী হবে,,,(বিরবির করে)

হৃদয়ঃ কী বললে বুঝতে পারছি না,,,??

জ্যোতিঃ সে অনেক কথা ভাইয়া,,,, ও আজ আসবে না,,,,

হৃদয়ঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,,, রাখছি,,,।

জ্যোতিঃ ঠিক আছে,,,

হৃদয়ঃ এক মিনিট,,,,

জ্যোতিঃ জী ভাইয়া,,,???

হৃদয়ঃ অন্তরার ফোন নাম্বারটা দাও তো,,,

জ্যোতিঃ ওকে,,,, 016★★★★★★★★

হৃদয়ঃ ওকে,,, ধন্যবাদ,,,

জ্যোতিঃ আল্লাহ হাফেজ,,,

হৃদয়ঃ আল্লাহ হাফেজ,,,,
,,,,,

আরিয়ানঃ নিলা,,,, তোমার সাহস হয় কী করে,,, আমার মায়ের সাথে খারাপ বিহেভ করার,,,,

নিলাঃ আমার সাথে একদম উচু গলায় কথা বলতে আসবে না,,, তোমার মা জানে আমি ছোট মাছ খাই না,,, তবু উনি শুধু সেই মাছ ছাড়া আর কিছুই রান্না করেনি,,,,

আরিয়ানঃ তোমার লজ্জা করে না একজন অসুস্থ মানুষকে দিয়ে রান্না করিয়ে খেতে,,, নিজের কাজ নিজে করে নিতে পারো না,,,

নিলাঃ আমাকে কী তোমার কাজের লোক মনে হয়,,,(চটে গিয়ে)

আরিয়ানঃ আমার মাকে কী তোমার কাজের লোক মনে হয়,,,??

নিলাঃ নিজের বাড়ির কাজ করলে কেউ কাজের লোক হয় না,,,

আরিয়ানঃ বাহ্ খুব ভালো,,, তুমি বাড়ির কাজ করলে কাজের লোক হয়ে যাবে আর মা বাড়ির কাজ করলে সে কাজের লোক হবে না,,??

নিলাঃ দেখো আরিয়ান আমি তোমার সাথে একদমই লাগতে চাইছি না,,,,

আরিয়ানঃ তোমায় লাগতে বলছে কে,,,?? আগামীকাল থেকে নিজের কাজ নিজে করবে,,,, তোমার জন্য আমার দুবোন আসা বন্ধ করে দিয়েছে,,,, তুমি এখন আমার মাকেও তাড়াতে চাইছো,,,??

নিলাঃ একদম বাজে কথা বলবে না আরিয়ান,,,, আমি তোমার বোনদের আসতে মানা করেছি নাকি,,, তারা নিজেরাই আসে না,,,

আরিয়ানঃ উঠতে বসতে তাদের অপমান করলে আসবে কী করে,,,,??

নিলাঃ যে যার যোগ্য আমি তার সাথে সেই ব্যবহারই করি,,,, আর তোমার মায়ের এতো অসুবিধা হলে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দাও,,,,

আরিয়ানঃ নিলা,,,,,,,(থাপ্পড় দেওয়ার জন্য জন্য হাত তোলে,,,)

নিলাঃ(আরিয়ানের হাতটা ধরে ফেললাম,,,) একদম না,,,, বারবার ভুলে কেন যাও,,,?? আমি অন্তরা নই,,,, আমি নিলা,,, আমার গায়ে হাত তোলার সাহস হয় কী করে তোমার,,,?? ভালো আছি ভালো থাকতে দাও,,, নাহলে মা ছেলে দুজনকেই বাড়ি থেকে বের করে দিবো,,,। ভুলে গেছো এই বাড়িটা এখন আমার নামে,,,, আর আমার একটা কলে তোমার চাকরি চলে যাবে সেটাও মনে রেখো,,,

আরিয়ানঃ কেন এসব করছো নিলা,,,??

নিলাঃ তোমাদের মতো মানুষদের কন্ট্রোলে রাখার,, এর থেকে ভালো উপায় আমার জানা নেই,,,,। এসব না করলে আমাকেও অন্তরার মতো অত্যাচার সয্য করতে হতো হয়তো,,,,

(আরিয়ান নিলার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো রুম থেকে,,,)
,,,

অন্তরাঃ আজকে বাসায় বসে আছি,,, তাই অনলাইন আর পত্রিকায় কিছু বাসার খোঁজ নিচ্ছি,,,,

ক্রিংক্রিংক্রিং

অন্তরাঃ আসসালামু আলাইকুম,,,,, কে বলছেন,,??

হৃদয়ঃ,,,,,,,

অন্তরাঃ হ্যালো,,,, কথা বলছেন না কেন,,??

হৃদয়ঃ কেমন আছো,,,??

অন্তরাঃ কে,,,??

হৃদয়ঃ চিনতে পারছো না,,,??

অন্তরাঃ হৃদয় ভাইয়া,,,,??

হৃদয়ঃ হুম,,,

অন্তরাঃ আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন,,,??

হৃদয়ঃ একটু বেলকনিতে আসবে,,,??

অন্তরাঃ কী,,,,,(অবাক হয়ে,,,)

হৃদয়ঃ একটু বেলকনিতে আসো,,,

চলবে,,,