💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 27
রিয়াদঃ জ্যোতি,,,, (চরম পর্যায়ের অবাক হয়ে) তুমি,,,,,????
জ্যোতিঃ হুম আমি,,,
রিয়াদঃ তুমি এইসব ফালতু কাজ করেছো,,??
জ্যোতিঃ কাউকে ভালোবাসি বলা ফালতু কাজ নয়,, হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন আপনি,,, ভালোবাসি আপনাকে,,, এই কথাটা আপনার সামনে দাঁড়িয়ে বলার জন্য নিজের সাথে কতটা যুদ্ধ করতে হয়েছে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না,,,,। যে মেয়ে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস পায় না,,, সে ভালোবাসি বলার সাহস কতটা কষ্টে করেছে বুঝতে পারবেন না,,,। শুধুমাত্র আপনার জন্য আমি বিয়ের আগের দিন বিয়ে ভেঙে দিয়েছি,,, জব কেন প্রয়োজন হয়েছিলো আমার জানেন,,?? বিয়ে ভেঙে দেওয়ায় বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো,,,, এসব কিছু শুধুমাত্র আপনার জন্য করেছি,,,। ভালোবাসি আপনাকে আরো দেড়বছর আগে থেকে,,, আর লুকোচুরি খেলছে পারছি না আমি,,,,
ঠাসসসসসসসস
রিয়াদঃ তোমার সাহস হলো কীভাবে আমার সামনে দাঁড়িয়ে এসব বলার,,,?? সিয়ার জায়গা কোনদিন কেউ পাবে না আমার কাছে,,,, তোমার জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো মাফ করে দিতাম,,, কারণ সিয়ার কথা না জেনে এসব বললে ভুল বলে ক্ষমা করে দিতাম,,,,। কিন্তু সিয়ার ব্যাপারে সব জানার পর তোমার এই অন্যায় কোনদিন মাফ করবো না আমি,,,,,
জ্যোতিঃ কাউকে ভালোবাসা অন্যায় নয়,,, আমি কোন অন্যায় করিনি,,, আর না সিয়া আপুর জায়গা চেয়েছি,,,, আপনি আমাকে ভালো না বাসেন,,,, আপনাকে ভালোবাসার সুযোগ দিন,,, মানুষ কী দ্বিতীয়বার ভালোবাসতে পারে না,,,,
রিয়াদঃ মানুষ কী পারে আর না পারে তাতে আমার কোন আগ্রহ নেই,,,, আমার জীবনে সিয়া ছাড়া আর কেউ কোনদিন ছিলো না আর না কোনদিন আসবে,,,, আর আমাকে ভালোবাসার অধিকার আমি শুধু আমার সিয়াকে দিয়েছি,,,, সিয়া সম্পর্কে সব জানার পরও তুমি এই অন্যায় করার সাহস করেছো,,,,, তার জন্য কোনদিন মাফ পাবে না আমার কাছে,,,, আমি কোনদিন যেন তোমার মুখ আর না দেখি,,,,
জ্যোতিঃ কিন্তু স্যার,,,,
রিয়াদঃ কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও,,,, তোমার এই মুখটা যেন কোনদিন আমার সামনে না আসে,,,,
(রিয়াদ হনহনিয়ে চলে এলো জ্যোতির সামনে থেকে,,,, গাড়িটা জ্যোতির চোখের আড়াল হয়ে গেলো মুহুর্তেই,,,, জ্যোতি কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়েছে মাটিতে,,,)
জ্যোতিঃ ভালোবাসার কাছে প্রত্যাখ্যান হওয়া এতটা কষ্টের আগে জানলে আপনাকে প্রত্যাখ্যান করতাম না তনয়,,,, ভেতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে,,,, এর থেকে মৃত্যু যন্ত্রণা কম হবে বলে মনে হচ্ছে,,,, কেন এমন হলো তনয় বলতে পারেন,,,,?? আমি যাকে চাইলাম সে আমার হলো না,,, আপনি আমাকে চাইলেন আমি আপনার হতে পারলাম না,,, এ কেমন নিয়তি,,,,,
তনয়ঃ (তোমার এই কান্না যে আমার বুকটা ভেঙে চৌচির করে দিচ্ছে জ্যোতি,,,, ভাগ্যবান ব্যক্তিটাকে দেখার খুব ইচ্ছে করছিলো তাই তোমাকে ফলো করেছিলাম,,,৷ কিন্তু তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখতে হবে জানলে কখনো আসতাম না,,,, ইচ্ছে করছে তোমাকে বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখি সব কষ্ট থেকে,,, কিন্তু সেই অধিকার যে তুমি আমাকে দাওনি,,,, যদি পারতাম তাহলে তোমার ভালোবাসা তোমার কাছে এনে দেওয়ার চেষ্টা করতাম কিন্তু তুমি এমন একজনকে ভালোবেসেছো যার কাছে সিয়া ছাড়া আর কারো কোনো মূল্য নেই,,, যার কাছে নিজের ছেলের মূল্য নেই সে তোমার কী মূল্য দিবে,,?? ওর যে মেন্টাল কন্ডিশন ভালো নয়,,,। সিয়া চলে যাওয়ার আঘাতে ও মানুষের কষ্ট বুঝার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছে,,,। ডাক্তার বলেছে ওকে নিজের মতো থাকতে দিতে নাহলে নিজের ক্ষতি করতে পারে,,, তাই আন্টিও ওকে কিছুতে জোর করে না,,, আমি যে তোমার জন্য কিছুই করতে পারবো না,,,)
(জ্যোতি আর তনয় দুজনেই কাঁদছে,,, কিন্তু জ্যোতি তনয়কে দেখতে পারছে না,,,)
রিয়াদঃ প্লিজ সিয়া মাফ করে দাও আমাকে,,, দেখো আমি বুঝতে পারিনি এই মেয়েটা এসব করবে,,, বুঝতে পারলে কখনো সামনেই আসতে দিতাম না,,, প্লিজ সোনা বউ আমার মাফ করে দাও,,, আমি তোমার কথা রাখবো,,,, সেটা কেউ ভাঙতে পারবে না,,,
★অতীত★
সিয়াঃ রিয়াদ,,,,
রিয়াদঃ হুম বলো,,,,
সিয়াঃ তুমি জানো আমি খুব স্বার্থপর,,, খুব বলতে খুব বেশি স্বার্থপর,,,
রিয়াদঃ (ভ্রু কুচকে তাকালাম সিয়ার দিকে,,, সাতমাসের প্রেগনেন্ট সিয়া,,,অনেক কষ্টের পর আজ আমাদের সন্তান আসতে চলেছে,,, এই সন্তানের জন্য আল্লাহর দরবারে অনেক কেঁদেছে সিয়া আর আমিও,,,, শেষ পর্যন্ত আমাদের দিকে মুখ তুলেছে ওপরওয়ালা,,,,,সিয়া আমার কোলে বসে চকলেট খাচ্ছে আর আমি ল্যাপটপে কাজ করছি,,, ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম,,,) এসব আবার কী নতুন পাগলামি,,,??
সিয়াঃ তারমানে আমি সবসময়েই পাগলামি করি,,?? হ্যাঁ এখন তো আমাকে পাগল মনে হবেই,, এখন তো আর দেখতে সুন্দর নেই আগের মতো,,, পেটটা বলিউড হিরোইনের মতো নেই,,, ফুলে বল হয়ে গেছে,,, মোটো হয়ে গেছি,,, দেখতে ফুটবলের মতো লাগে,,,,
রিয়াদঃ সিয়া,,,, আবার তোমার বাজে বকা শুরু হয়ে গেছে,,,??
সিয়াঃ হ্যাঁ জানি তো,,, আমার কথাও এখন বাজে কথা মনে হবে তোমার কাছে,,, কোল থেকে এখনই নামাও আমাকে,,, বাবার বাড়ি চলে যাবো আমি,,, যখন আমি না থাকবো তখন বুঝবে আমার কদর,,,
রিয়াদঃ সিয়া,,,,(জোরে ধমক দিয়ে,,) সব কথা শুনে নিবো কিন্তু এসব বাজে কথা একদম বলবে না তুমি,,, কোথায় যাবে আমাকে ছেড়ে,,, ???
সিয়াঃ আমি তো বাবার কাছে যাওয়ার কথা বলছিলাম,,,, তুমি আমাকে ধমক দিলে,,,এ্যাঁ,,, মা,,, শুনে জান আপনার ছেলে আমাকে মেরেছে,,,
রিয়াদঃ এ্যা,,,,,, আমি কখন তোমাকে মারলাম,,,,??
সিয়াঃ এ্যাঁ,,,(আরো চিৎকার করে কান্না করে,,)
রিয়াদঃ (আর কোন উপায় না পেয়ে ঠোঁটে কিস করে দিলাম আর ও চুপ হয়ে গেলো,,,)
সিয়াঃ পঁচা ছেলে,,, তুমি আমাকে কেন কিস করলা,,,??
রিয়াদঃ তাহলে অন্যকাউকে করে আসবো,,??
সিয়াঃ তাহলে আমি মরেই যাবো,,,,
রিয়াদঃ সিয়া,,,,,(চোখমুখ লাল করে ধমক দিয়ে,,) তোমাকে বলেছি এসব বাজে কথা না বলতে,,,
সিয়াঃ আমি কিন্তু আবার কান্না করবো,,(ঠোঁট উল্টে কান্নার মতো করে,,)
রিয়াদঃ ওকে তুমি বাজে কথা বলো না তাহলে আর আমি তোমাকে বকবো না,,,।
সিয়াঃ আমি যা ইচ্ছে বলবো কিন্তু তুমি আমাকে বকবে না,,,, তাহলে আমি বাবার বাড়ি চলে যাবো তুমি ঘুমালে,,, আর আসবো না,,,,
রিয়াদঃ এই বেবিটা আসার পর তুমি একদম বাচ্চা হয়ে গেছো সিয়া,,,, তাড়াতাড়ি আয় বাপ (পেটের দিকে তাকিয়ে) আর আমাকে এই বিপদ থেকে মুক্ত কর,,,
সিয়াঃ আমি বিপদ,,, (রাগ দেখিয়ে,,)
রিয়াদঃ ক,,,কই আমি কী তোমাকে বলেছি,,?? আমি তো আমার কথা বলেছি,,, আমি একটা বিপদ,,??
সিয়াঃ তা খারাপ বলোনি,,,,
রিয়াদঃ(অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছি সিয়ার দিকে,,,, কবে যে বাকি তিন মাস শেষ হবে,,, আর এই বাচ্চাটা আবার আমার বউ হয়ে ওঠবে,,,??)
সিয়াঃ কী হলো,,,??
রিয়াদঃ কিছু না,,(অসহায়ের মতো একটা হাসি দিয়ে,,) তুমি কী যেন বলছিলে,,??
সিয়াঃ তাইতো,,, তুমি ঝগড়া শুরু করেছো বলেইতো ভুলে গিয়েছিলাম,,,
রিয়াদঃ আমি,,,,,
সিয়াঃ তা নয়তো আমি নাকি,,,??
রিয়াদঃ না আমিই ঝগড়াটে,,,, এবার বলো,,,
সিয়াঃ আমি খুব বেশি স্বার্থপর,,,
রিয়াদঃ সেটা কীভাবে,,,??
সিয়াঃ তোমার ভাগ আমি কাউকে দিবো না কখনো,,,
রিয়াদঃ তোমার জায়গা আমি কাউকে দিলে তো ভাগ দিতে হবে,,, আমার মনে সবসময় তোমার অধিকার থাকবে,,,
সিয়াঃ আমি যদি না থাকি তাহলেও,,,?? যদি আমি না ফেরার দেশে চলে যাই তাহলেও,,,,??
রিয়াদঃ সিয়া,,,, আবার তুমি,,,,,,
সিয়াঃ প্লিজ বলো না,,,,(করুন মুখ করে,,,)
রিয়াদঃ(সিয়াকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলাম,,,) তুমি যেখানেই থাকো কিন্তু এই মনে শুধু তোমার রাজত্ব থাকবে,,,
সিয়াঃ আমি না থাকলে তো কতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে আমার এই সুন্দর জামাইয়ের সাথে প্রেম করতে চাইবে তখন,,,?? যদি তুমি তাদের সুন্দর সুন্দর মুখ দেখে আমাকে ভুলে যাও,,, আমি তো আর থাকবো না পাহারা দেওয়ার জন্য,,,,
রিয়াদঃ এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে সিয়া,,,,(রাগ করে)
সিয়াঃ প্লিজ বলো,,, (অসহায় মুখ করে,,)
রিয়াদঃ তুমি কেন বুঝো না তোমার এসব কথা শুনলে আমার কষ্ট হয়,,,,। আমি এসব ভাবতেও পারি না,,,,
সিয়াঃ ঠিক আছে আর বলবো না,,,, কিন্তু তোমার ভাগ আমি কাউকে দিবো না,,,, মরে গেলেও না,,,, আমি চাই না জান্নাতে গিয়ে তোমার আর আমার সাথে অন্যকেউ থাকুক,,, জান্নাতেও আমি আর তুমি থাকবো শুধু,,, এতে যে ইচ্ছে সে আমাকে স্বার্থপর বলুক আমার কিছু আসে যায় না,,,
রিয়াদঃ হুম,,,, শুধু আমি আর তুমিই থাকবো,,,,
★বর্তমানে★
রিয়াদঃ পাগলীটা আর বলবো না বলেও প্রতিটা রাতে এই কথগুলো বলতো,,,?? তার জায়গা আমি কীভাবে অন্যকাউকে দিবো,,, আমিও তো চাই না ওর আর আমার মাঝে আর কেউ আসুক,, কখনো আসবে না,,,, আমি আসতে দিবো না,,,,(রাগে চোখমুখ লাল করে,,,)
(সিয়ার কবরের পাশে বসে আছে রিয়াদ আর বারবার সিয়ার কাছে মাফ চাইছে,,,)
,,,,,
অন্তরাঃ কেন এসব পাগলামি করছেন আপনি বলবেন একটু,,,??
হৃদয়ঃ তুমি কেন এসব করছো সেটা বলতে পারো,,?? যে কোনো মানুষ আমার ভালোবাসার কাছে হার মানতে বাধ্য হতো এতদিনে,,, যদি সে রক্ত মাংসে তৈরি হয়ে থাকে,,,,। তুমি কী পাথরের তৈরি অন্তরা,,,??
অন্তরাঃ জানি না,,,, আপনি জান এখান থেকে,,,
হৃদয়ঃ তুমি আমার মাকে উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে আসছো কেন,,?? বিয়ে করতে বলেছো আমাকে তাই না,,, ঠিক আছে,, বিয়ে করে নিবো তবে কনে হবে তুমি,,,,, আর তুমি আমার কথা না মানলে আজ এখান থেকে এক বিন্দু সরবো না আমি,,,
অন্তরাঃ ঠিক আছে,,, দাঁড়িয়ে থাকুক আপনি এই রাস্তায়,,,, কতক্ষণ থাকতে পারেন আমিও দেখি,,,
(দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো হৃদয় এখনো অন্তরার বাড়ির পেছনে দাড়িয়ে আছে,,, চোখ অন্তরার বেলকনির দিকে,,, আশেপাশের মানুষ হৃদয়কে লক্ষ্য করছে আর কানাঘুষা করছে,,)
আরাভঃ স্যার আপনি এখানে,,,??
হৃদয়ঃ সরি,,,,,,, আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না,,,
আরাভঃ আমি আপনাদের অফিসে চাকরি করি,,,
হৃদয়ঃ কিন্তু আমি তো অফিসে যাই না,,, আপনি আমাকে কীভাবে চিনলেন,,??
আরাভঃ অফিসের পার্টিতে দেখেছি,,, সেখানেই জানতে পারি আপনি রিয়াদ স্যারের ছোট ভাই,,,
হৃদয়ঃ রিয়াদ ভাইয়া আপনার স্যার,,,, আমি নই,,, আর আমি আপনার থেকে বয়সেও ছোট হবো,,, তাই অফিসে জয়েন করলেই নাহয় স্যার বলবেন,,,
(আরাভের সাথে কথা বলতে বিরক্ত লাগছে হৃদয়ের,,, সারাদিন পেটে কিছু পরেনি,,, অন্তরাও আর বাইরে আসেনি,,, সে ভেবেছে হৃদয় বিরক্ত হয়ে এমনই চলে গেছে,,,)
আরাভঃ কিন্তু স্যার,,,, সরি হৃদয় সাহেব আপনি এখানে কী করছেন,,,??
হৃদয়ঃ একটা কাজে এসেছি,,, (বিরক্তি নিয়ে বললাম,)
আরাভঃ ওহ্ ,,,, ঠিক আছে তাহলে আমার বাসায় একটু চা খেয়ে যান,,,
হৃদয়ঃ না,,, আমার সময় নেই,,,,
আরাভঃ এই সামনের বাড়িটাই তো আমার,,, যেতে সময় লাগবে না,,,
হৃদয়ঃ এটা আপনার বাড়ি,,,(অবাক হয়ে,,)
আরাভঃ জী,,,,,
হৃদয়ঃ অন্তরা,,,,??
আরাভঃ অন্তরা আমার ছোটবোন,, কিন্তু আপনি ওকে কীভাবে চেনেন,,,?? (অবাক হয়ে)
হৃদয়ঃ জ্যোতি আমার বোনের মতো,,, জ্যোতির মাধ্যমেই চিনি,,,,
আরাভঃ ওহ্ ,,,, তাহলে চলুন অন্তরার সাথেও দেখা হয়ে যাবে,,,,,।
চলবে,,,