Divorce Part-32

0
5136

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part:32

অন্তরাঃ(গোসল শেষে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুমের দরজা খোলে রুম দেখে ভয় পেয়ে গেলাম,,,,, রুমের সব লাইট অফ,,, একদম অন্ধকার রুম,,,, আস্তে করে বাইরে পা রাখতেই নরম অনুভব হলো,,, নিচে তাকিয়ে দেখি গোলাপের পাপড়ি,,,, সারা রুমে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা,,, মোমবাতিগুলো ধীরে ধীরে আলো দিচ্ছে,,,, চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নিলাম,,, ফুলের সুভাসে ম-ম করছে,,,, ওয়াশরুমের আলো থেকে বের হওয়াতে প্রথমে একদম অন্ধকার দেখেছিলাম রুম,,,, আস্তে আস্তে চোখ খুললাম,,, সারারুম ফুল বেলুন আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো,,, বেডটা অনেক সুন্দর করে সাজানো,,,,অবাক হয়ে দেখছি সব,,,, এতো সুন্দর করে কে সাজালো,,,, গোসলে যাওয়ার আগে তো রুম একদম স্বাভাবিক ছিলো,,, ঘুরে ঘুরে সব দেখতে লাগলাম,,,, মনে হচ্ছে কোন স্বপ্নের রাজ্যে চলে এসেছি,,,,, দরজা খোলার শব্দে ঘোর কাটলো,,,,,)

হৃদয়ঃ (কোন এক রমণী দাঁড়িয়ে আছে বেডের কাছে,,,, ভেজা চুল কোমরের নিচে নেমে গেছে,,, চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে,,, রমণীটি আর কেউ নয় আমার সদ্য বিয়ে করা বউ,,, তা বুঝতে বাকি রইলো না,,,, আজ আমার প্রতিক্ষার সমাপ্তি হতে চলেছে,,, পাগল করা চোখের অধিকারীনী আজ আমার সমনে,,,, আজ সে শুধুই আমার,,,,, আমার দেওয়া নীল শাড়ীতে কেমন লাগছে তাকে,,,?? ধীরে ধীরে তার দিকে আগাতে থাকলাম,,,)

অন্তরাঃ( কে এসেছে,,,হৃদয়,,,,???? না দেখলেও বুঝতে পারছি সে আমার দিকেই আসছে,,,, ভয় কেন করছে এতো,,,,?? ভয় আর লজ্জায় সারা শরীর কাঁপছে,,,,,। সরে যাওয়ারও শক্তি পাচ্ছি না,,,)

হৃদয়ঃ(একদম কাছে দাড়ালাম অন্তরার,,,, চুলের পাগল করা সুগন্ধ যেন মনে গিয়ে লাগছে,,,, চুলের কাছে একদম ছুঁই ছুঁই করছে আমার নাক,,, একটা লম্বা শ্বাস নিলাম,,,,, কোন স্পর্শ না করে এক পা পিছনে চলে এলাম,,,, তার সামনে যাওয়ার জন্য পাশে আসতেই তার মুখের একপাশ দেখতে পেলাম,,,,, এই এক ঝলক বুকে গিয়ে বিধলো,,,, তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে নিলাম,,,, কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম,,, চোখ বন্ধ করেই তার সামনে দাঁড়ালাম,,,, একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুললাম,,,,)

অন্তরাঃ(উনার গরম নিশ্বাস আমার মুখে পড়লে,,,, সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে,,,, কী বলবো,,,, কী করবো,,, বুঝতে পারছি না,,,,?? চোখ আরো খিঁচে বন্ধ করে নিলাম,,,,)

হৃদয়ঃ(চোখদুটো পিটপিট করছে অন্তরার,,,, দুধে আলতা গায়ের রং,,,, গোল মুখ,,,, কাঁপা কাঁপা চিকন গোলাপি ঠোঁট,,,, নাকের ডগা লালটে হয়ে গেছে,,,,সারা মুখে বিন্দু বিন্দু পানি,,,, ছোট ছোট ভেজা চুলগুলো কপালে,, গালে লেপ্টে আছে,,, জান্নাতের হুর বুঝি একেই বলে,,,,,?? একপা পিছিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম আবার,,, কয়েকটা বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলাম,,,, তারপর আবার তাকালাম,,,, এখনও চোখ বন্ধ করে আছে অন্তরা,,,,)

হাজার বছর ধ’রে
আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে
নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি;
বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি;
আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক,
চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো
নাটোরের বনলতা সেন।

অন্তরাঃ(উনার কবিতা শুনে আস্তে আস্তে চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম।)

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য;
অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন
সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে;
বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে
নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে
শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে;
ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে
পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে—
সব নদী— ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার,
মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

অন্তরাঃ(অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে,,, এতো সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করে আগে জানতাম না,,,,)

হৃদয়ঃ তুমি কী সেই বনলতা সেন,,,?? যাকে দেখে এই কবিতাটা লিখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ,,,

অন্তরাঃ(উনার কথা শুনে চোখ নামিয়ে নিলাম,,,)

হৃদয়ঃ নাকি আমাদের জন্যই এটা লিখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ,,, তোমার রুপের বর্ননা দেওয়ার আর কোন শব্দ আমার মাথায় এলো না,,,,। এখন সত্যি আফসোস হচ্ছে,,,

অন্তরাঃ(উনার দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালাম,,,,)

হৃদয়ঃ দেখতে যে অনেক দেরি করে ফেলেছি,,,, যার চোখ এতো মায়াবী সে নিজেতো মায়াদেবী হবেই তা বুঝতে দেরি হয়ে গেছে,,,,

অন্তরাঃ আ,,,,আ,,আপনি কী শুরু করেছেন,,,???

হৃদয়ঃ আজ প্রথমবার হৃদয় চৌধুরী নিজের করা কাজে আফসোস করছে,,,,,, কেন আরো আগে তুমি আমার জীবনে এলে না,,,,, এতো দেরি কেন করলে অন্তরা,, ?? এখন জীবনানন্দ দাশ থাকলে হয়তো আবার কোনো কবিতা লিখে ফেলতো,,,,

অন্তরাঃ(লজ্জায় মাথা তুলতে পারছি না,,,, উনার সামনে থেকে চলে আসার জন্য ঘুরতেই হাত টেনে ধরলেন,,,,)

হৃদয়ঃ কোথায় যাচ্ছো রমণী,,,, এ বুকে আগুন জ্বালায়ে,,,,???

অন্তরাঃ কবি বিয়ে করেছি জানা ছিলো না,,,,

হৃদয়ঃ এমন রমণী সামনে থাকলে যে কেউ কবি হয়ে যাবে,,,,,(টান দিয়ে বুকে এনে ফেললাম,,,)

অন্তরাঃ(এই প্রথম উনার এতো কাছে এলাম,,,, শরীরে কেমন শিহরণ বয়ে গেলো,,,, আমার পিঠ উনার বুকে লেগে আছে,,,,)

হৃদয়ঃ (চুলে মুখ গুঁজে দিলাম,,,, পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুগন্ধ হয়তো ওর চুলে আছে,,,, কিছুক্ষণ মুখ গুঁজে থেকে তারপর ওর কাঁধে থুতনি রাখলাম,,,, একটা মিষ্টি স্মেইল আসছে ওর গা থেকে,,,,) অনেক জ্বালিয়েছো কিন্তু আমার নিজের ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস ছিলো,,,, আর আমি একটু জ্বালালাম আর আমার ওপর থেকে বিশ্বাস ওঠে গেলো,,,??

অন্তরাঃ ম,,,মানে,,,,,??

হৃদয়ঃ বিয়ের পর থেকে বাড়ি আসা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘন্টা তোমার সাথে একটু অন্যরকম ব্যবহার করেছি আর মনে করেছো আমি যা করেছি সব জেদের বসে,,,,, আচ্ছা এতো কিছুর পরও আমার ভালোবাসা তোমার কাছে জেদ মনে হয়,,,,??

অন্তরাঃ ক,,,ক,,কী বলছেন এসব,,?? আমি কখন এগুলো বলেছি,,,,??

হৃদয়ঃ তুমি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলে,,,, যখন মহিলারা এটা ওটা বলছিলো,,,, মনে করেছিলে আমি কিছু বলবো,,,, কিন্তু বলিনি,,,,। গাড়িতে কান্না করার সময় আমার দিকে তাকাচ্ছিলে,,,, ভেবেছিলে আমি হয়তো সান্ত্বনা দিবো,,,,, দেয়নি,,,,, বাসায় পৌঁছে আমি তোমাকে রেখেই চলে আসি,,,, আবার বাসরঘরে ফুলের নামগন্ধ নেই,,,,

অন্তরাঃ আপনি সব খেয়াল করেছেন,,,??

হৃদয়ঃ হুম করেছি,,,, এটাও বুঝতে পেরেছি তুমি মনে করেছো আমি যা করেছি জেদের বসে করেছি,,,,। আর বিয়ে হয়ে গেছে মানে জিতে গেছি আর তোমার খেয়াল রাখবো না,,,, এসবই ভেবেছো,,,??

অন্তরাঃ ন,,,,না,,,,মা,,,মানে,,,,, হ্যাঁ,,,,,,(নিচের দিকে তাকিয়ে)

হৃদয়ঃ প্রথমত আজ থেকে অন্যকেউ না নিজের প্রতিবাদ নিজে করবে,,,,, আর আজই ছিলো তোমার শেষ কান্না তাই প্রাণ খোলে কাঁদতে দিয়েছি,,,, আজকের পর আর তোমার চোখে পানি আসবে না ইনশাআল্লাহ,,,,, তোমাকে এই সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই আমি আগে চলে এসেছি,,,, নিজের হাতে বাসর সাজাবো বলে কাউকে সাজাতে দেয়নি,,,,, তুমি গোসল করতে গেলেই সব করেছি,,,

অন্তরাঃ(অবাক হয়ে উনার দিকে ঘুরে তাকালাম,,,) এইসব আপনি একা করেছেন,,,??

হৃদয়ঃ হুম,,,, আমার এতো সাধনার বউ,,, এটুকু না করলে হয়ে,,,,(একটু মজা করার ছলে)

অন্তরাঃ(ভ্রু কুঁচকে তাকালাম উনার দিকে,,,,)

হৃদয়ঃ (ওর ভ্রু কুঁচকে তাকানো দেখে মুচকি হাসলাম,,,,,)

অন্তরাঃ(মুগ্ধ হয়ে উনার হাসিটা দেখলাম,,,, কখনো উনার দিকে সেভাবে খেয়াল করিনি,,, আজ করলাম,,,,মাথা ভর্তি কালো কুচকুচে ঘন চুল,,,,, কয়েকটা চুল কপালে পরে আছে,,,,,, ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা চাপদাড়ি,,,,চোখদুটো কেমন বড় বড়,,,, চোখের পাপড়ি ঘন আর চোখের মনিটা কালো নয়,,,, কেমন হালকা সাদা মনে হয়,,,, বিড়াল চোখ,,,, কিন্তু অসম্ভব সুন্দর,,,,লম্বা ৬ ফুট হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই,,,, আমি ৫ ফুট ৫”,,, কিন্তু উনার বুক পর্যন্ত আমি,,,,, আর উনার সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাল ঠোঁট,,,, মনে হয় বাচ্চাদের ঠোঁট,,,, ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি,,,,,)

হৃদয়ঃ (এক দৃষ্টিতে ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি,,,, অনেক মেয়ে দেখেছি লাইফে,,,, তবে অন্তরার মতো মেয়ে দেখেছি কিনা আমার মনে পরছে না,,,,। আমার দেখা সেরা সুন্দরী অন্তরা,,,,মায়ায় ভরা মুখটা,,,, যাকে দেখে অনন্ত জীবন পার করা যাবে,,,,,)

অন্তরাঃ(এবার উনার চোখের দিকে তাকালাম,,,)

হৃদয়ঃ ( ওর তাকানো দেখে আমিও ওর দিকে তাকালাম,,,,)

(এরে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,, যেন চোখে চোখে নিজেদের না বলা হাজার কথা বলে নিচ্ছে,,)

হৃদয়ঃ(ওর দুগালে হাতে রেখে কপালে একটা কিস করে জড়িয়ে ধরলাম)

অন্তরাঃ(এই বুকের অপেক্ষায় হয়তো এতোদিন ছিলাম,,,, সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় আছি মনে হচ্ছে,,, নিজের দুহাত কখন উনার পিঠে চলে গেছে নিজেও জানি না,,, উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো)

(কারো সময়ের খেয়াল নেই,,, কতটা সময় এভাবে পার হবে কেউ জানে না,,,,)
,,,,,,

আরিয়ানঃ(বেলকনিতে বসে আছি,,,, অন্তরা এই বেলকনিতে কতো রাত পার করেছে তার হিসেব আমার কাছে নেই,,,, আজ সেই অন্তরা অন্যকারো বুকে,,,,,??? যে কপালে কোনদিন ছুয়ে দেখিনি আজ সেই কপালে কেউ ভালোবাসার পরশ দিচ্ছে,,,, এসব আমি ভাবতে পারছি না,,,,, কেন করলাম,,,?? আজ আমার সন্তান আর অন্তরা আমার পাশে থাকতো,,,,। আমার করা পাপে আজ সে অন্যকারো রাজ্যের রানী,,,,,।)

নিলাঃ আরিয়ান,,,,,,,,,,

আরিয়ানঃ,,,,,,,,,

নিলাঃ তোমাকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না,,,?? চলো ঘুমাবে,,,,

আরিয়ানঃ আমাকে একটু একা থাকতে দাও,,,,

নিলাঃ কেন,,,,,,, প্রাক্তন বউয়ের জন্য মন পুড়ছে,,,? তাহলে তার কাছে চলে যাও,,,,,(শয়তানি হাসি দিয়ে,,,)

আরিয়ানঃ সে উপায় রাখিনি,,,, থাকলে ফিরিয়ে আনতাম আমার জীবন,,,,,

নিলাঃ যার জীবন নিতেও পিছুপা হওনি আজ সে তোমার জীবন হয়ে গেলো,,,,, যতসব ঢং,,,,,,

(নিলা মুখ ভেংচি দিয়ে রুমে চলে গেলো,,,, আরিয়ান অন্ধকারে চোখের জল ফেলছে নিজের পাপের কথা চিন্তা করে,,,)
,,,,,,

ক্রিংক্রিংক্রিং

জ্যোতিঃ এতোরাতে কে কল দিলো,,,,,?? আননোন নাম্বার,,,,

চলবে,,,