Game 2 Part-2+3

0
699

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২

ক্যাট পিছনে ঘুরে দেখে নিহা তার দিকে গান তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অবাক নিহা কে দেখে। নিহা আবার ও বলে উঠে..

– কি হলো গান নামাও বলছি!

ক্যাট কিছু বলবে তার আগে ডেভিল এসে ক্যাট এর হাত থেকে গান টা নিয়ে নেয় আর পেছন থেকে তার হাত বেঁধে নেয়। নিহা হেসে বলে..

– কি ভাবলে ক্যাট , আমি নেই মানে আমার বোন কে এতো সহজে মেরে ফেলবে তুমি!

ক্যাট তাকিয়ে আছে নিহা’র দিকে। আহিয়ান বলে উঠে..

– নিহা তুমি! তুমি তো ব্যাংকক ছিলে এখানে আসলে কি করে!

– কি করবো বলুন আমার বোনের লাইফ রিস্ক ছিল। তাকে বাঁচাতে আমাকে আসতেই হলো।

অভ্র বলে উঠে..
– তার মানে তুই সব জানতি!

– হ্যাঁ আমি জানতাম কিন্তু তোমাদের বলি নি এই কারনে যে ক্যাট সবার উপর নজর রাখতো তাই তোমাদের বলে লাভ হতো না। তাই আমি ব্যাংকক চলে আসি অতঃপর ডেভিল আমাকে সব খবর দিতে থাকে। তবে আজ যে এমন কিছু হবে সেটা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম তাই আমি এসে পরি।

রোদ্দুর বলে উঠে…
– তাহলে জান কে তুমি বাঁচিয়েছো!

– হ্যাঁ আমিই!

মেহেরিন বলে উঠে…
– আমি গাড়ি তে বসার পর’ই চিরকুট টা পাই। অতঃপর জলদি করে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে সরে যাই, কিন্তু আমি গাড়ির ওপাশ দিয়ে বের হই যার কারনে কেউ দেখতে পায় না আমাকে। তবে যাই হোক বলতে হবে ক্যাট এর প্ল্যান টা দারুন ছিল। অনেক কষ্ট করে বেচারি প্ল্যান করেছিলো।

কাব্য গান টা হাতে নিয়ে বলে..
– ও যা করেছে এজন্য ওকে শাস্তি পেতে হবে, আর ওর শাস্তি হবে মৃত্যু!

বলেই ক্যাট এর কপাল বরাবর গান টা তাক করে। ক্যাট তাকিয়ে আছে কাব্য চোখের দিকে। কাব্য’র চোখ জোড়া রাগে লাল হয়ে আছে। একসময় এই চোখ জোড়ায় অনেক ভালোবাসা দেখেছে সে তবে আজ যা দেখছে সব ঘৃণা। কিন্তু এই ঘৃণার জন্য তো সেই দায়ী! তবুও এতো কষ্ট কেন হচ্ছে তার।

মেহেরিন এসে কাব্য’র হাত ধরে বলে..
– পাগলামি করিস না আমাদের ওর বসের নাম জানতে হবে ছেড়ে দে ওকে।

– তুই কেন মিথ্যে বলছিস জান তুই নিজেও জানিস ক্যাট কিছু বলবে না।

– বলবে, আমি বললাম তো তুই ‌থাম! ডেভিল নিয়ে যাও ওকে।

অতঃপর ডেভিল ক্যাট কে নিয়ে গাড়িতে বসে। ক্যাট যাবার আগে করুন ভাবে তাকায় কাব্য’র দিকে কিন্তু কাব্য তার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। এদিকে আহিয়ান আর আনহা যায় নিহা’র‌ কাছে।

আনহা বলে উঠে..
– ঠিক আছো তুমি

– আমার আবার কি হবে?

আহিয়ান বলে উঠে..
– হাতে না ব্যাথা ছিল।

– তা কবেই সেড়ে গেছে ছাড়ুন তো এইসব। আদুরী!
বলেই তার কাছে যায়..

– ঠিক আছ…
বলার আগেই খুব জোরে একটা আওয়াজ‌। সবাই ভয় পেয়ে যায় সেই আওয়াজে। তাকিয়ে দেখে ক্যাট যে গাড়িতে উঠেছিল সেই গাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে গেছে। ডেভিল দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলল…

– ম্যাম গাড়ি ব্লাস্ট হয়ে গেছে ক্যাট কে আর বাঁচানো যায় নি। ও এই গাড়িতেই ছিল।

ক্যাট এর মৃত্যু সংবাদ শুনে কাব্য’র মুখটা মলিন হয়ে যায়। কিন্তু সবাই তার দিকে তাকাতেই কাব্য মুখ টা নিচু করে বলে..

– ঠিক হয়েছে যে যেমন তার সাথে তেমন’ই হয়েছে। যাদের জন্য কাজ করত তারাই মেরে ফেলেছে তাকে। জান তুই তখন আমাকে মারতে দিলেই ভালো হতো।

কাব্য’র‌ প্রত্যেকটা কথায় যে তার প্রতি ভালোবাসার ক্ষিপ্ততা ছিল সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই। কিন্তু এখানে কারো কিছুই বলার নেই। মেহেরিন এসে কাব্য’র হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসে। একে একে সবাই গাড়িতে এসে বসে।
.
এদিকে সেই লোকটা ছুটতে ছুটতে অপর লোকের কাছে গেল। লোকটা বলে উঠে..

– কি হয়েছে, পাগলের মতো ছুটছো কেন?

– ক্যাট, ক্যাট ধরা পড়েছে। আমাদের প্ল্যান এবার ও ফেল হলো।

– ক্যাট এর চাপ্টার ক্লোজ করেছো!

– হ্যাঁ তবে এটার কোন দরকার ছিল না। ক্যাট তো আমাদের সম্পর্কে কিছু জানতো না আর না আমাদের দেখেছিল সে।

– জানো তো আমরা আমাদের কাজের কোনো প্রমাণ রাখি না তাহলে ওকে কিভাবে ছেড়ে দিতাম।

– কিন্তু এখন কি করবে ভেবেছো।

– আমাদের আর কিছু করা লাগবে না। যা করার এখন আরেকজন করবে।

– কে?

– এই গল্পের নতুন চরিত্র, নির্ঝর চৌধুরী মেঘ!

– কিহহ? কি করবে সে!

– আদুরীর জীবন নষ্ট করবে, তার জীবন নিয়ে খেলবে তুমি শুধু দেখো কি হয়!
বলেই বাঁকা হাসল সে!
.
মেহেরিন, কাব্য, রোদ্দুর, ইহান, নিশি, নিহা, নীল আর অভ্র এসেছে তাদের আড্ডায়। যেখান থেকে তারা তাদের পুরো কাজের প্ল্যান করে। এখানে সবার আশা নিষেধ বিধায় ওরা ছাড়া কেউ আসে নি। ডেভিল এসে তার সাটার খুললে সবাই সামনে তাকিয়ে যা দেখে সবার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সবাই অবাক হয়ে দেখছে। ক্যাট কে একটা টুল এর ওপর রেখে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার হাত বাঁধা, তবে টুল’টার ওপর কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে সে, টুল টা খুব নড়ছে। কাব্য তাকে দেখে রেগে গিয়ে সজোরে টুল টায় লাথি মারল। ক্যাট রশিতে ঝুলতে থাকা অবস্থায় ছটফট করতে লাগলো। কোনোসময় তার প্রাণ চলে যেতে পারে। কাব্য’র এমন কাজে সবাই খানিকটা অবাক হলো। ডেভিল মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন ইশারা করলে ডেভিল আবার এসে টুল টা সেখানে রাখল। ক্যাট আবারও টুল টার ওপর পা রেখে কাশতে লাগল। কাব্য অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। সে কিছু বলার আগেই মেহেরিন শুট করল। এতে ক্যাট এর গলার রশি ছুটে গেল। মেহেরিন তাকে বসতে বলল। ক্যাট ক্লান্ত অবস্থায় সেখানে বসল। ডেভিল তাকে একটা পানির বোতল দিলো। ক্যাট বাঁধা হাত গুলো দিয়ে খুব কষ্টে পানি খেলো।

অতঃপর মেহেরিন ক্যাট কে বলল..
– ছেড়ে দেবো তোমায় তুমি শুধু তোমার বস’র নাম বলো।

– আমি সত্যি’ই জানি না। আমাদের কাজের নিয়ম শুধু টাকার জন্য কাজ করা। সে টাকা দেয় তার সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকে না আমাদের কাছে।

কাব্য রেগে আবারও গান তাক করে তার দিকে। বলে উঠে..
– জান শুধু একবার বল ওর গেম এখানেই অভার করবো। ও কিছু বলবে না।

– কাব্য শান্ত হ। কথা বলছি তো।

– এই বিশ্বাসঘাতক কে কিছু জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। কিছু বলবে না ও।

ক্যাট বলে উঠে..
– কাব্য আমি সত্যি’ই জানি না!

– চুপ একদম চুপ! কোনো কথা বলবে না। তোমার মুখে আমার নাম যেনো না শুনি আমি!

– কাব্য …

– কি বললাম আমি!

ক্যাট মাথা নিচু করে নেয়। মেহেরিন ডেভিল কে ইশারায় ক্যাট কে আবার ও নিয়ে যেতে বলে। এখানে ক্যাট যাবার পর’ই রোদ্দুর বলে উঠে..

– এটা কি হলো। ক্যাট যে গাড়িতে ছিল সেটা না ব্লাস্ট হলো।

– আমি জানতাম এমন কিছুই হবে তাই গাড়ি আগে থেকে পাল্টিয়ে ফেলেছি। আর যাই হোক ওকে আমার দরকার।

কাব্য বলে উঠে..
– কেন দরকার ওকে, ওর মতো বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক কে কেন দরকার তোর।

– কাব্য, বুঝতে পারছি তুই অনেক রেগে আছিস কিন্তু নিজের রাগ কে কন্ট্রোল কর।

– পারছি না আমি কিছু করতে। যতক্ষন না ওকে নিজের হাতে মারতে পারছি ততক্ষণ শান্তি হবে না আমার।

নিহা এসে কাব্য’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– কাব্য! জানি তোকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিয়ে লাভ নেই তবে বলছি আবার ও নতুন করে সব কিছু শুরু কর। যা হয়েছে ভুলে যা। জীবনকে আবার সুযোগ দে।

অভ্র বলে উঠে..
– ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যাওয়া সহজ না তবে এটা অসম্ভব না। তুই চাইলেই চেষ্টা করতে পারিস নতুন ভাবে শুরু করতে। সবসময় প্রথম ভালোবাসাই শেষ ভালোবাসা হয় না।

কাব্য সবার কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল। কিন্তু কিছুই বললো না। অতঃপর মেহেরিন সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে এলো। কাব্য বাসায় এসে সোজা ঘরে ঢুকে গেল। ইহান যেতে চাইলে মেহেরিন বলে উঠে..
– ওকে এটা থাকতে দে।

অতঃপর কেউই আর যায় না। কিন্তু খানিকক্ষণ বাদেই কাব্য নিজে বের হয় ঘর থেকে।‌ তখন খুব স্বাভাবিক লাগছে তাকে। সবাই ভাবে হয়তো কাব্য নিজেকে বোঝাতে পেরেছে কিন্তু মেহেরিন’র কাছে কোথাও না কোথাও মনে হয় এটা শুধুই লোক দেখানো। কিন্তু মেহেরিন ও কিছু বলে না ভাবে এতে তার কষ্ট বাড়বে আর কিছু না।

এভাবে কেটে যায় কয়েকদিন। সবকিছু এখন স্বাভাবিক! আজ সকালে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসে খাচ্ছিল শুধু মেহেরিন বাদে তখন হুট করেই অরনি নাচতে নাচতে এসে বলে..

“কথা হবে দেখা হবে,
‌ প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি আর হবে না”

অরনির মুখে এই কথা শুনে অভ্র চমকে উঠে জিজ্ঞেস করে…

– মামানি তুমি কি বলছো এইসব!

– মামা মামা জানো জানো !

অভ্র অরনি কে কোলে নিয়ে বলে..
– কিহ মামনি!

– আমি খালামনির ঘর থেকে এই গান শিখেছি!

– তাই!
বলেই অভ্র আনহা’র দিকে তাকায়। আনহা হেসে বলে উঠে..
– আপনার বোনের ঘরে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে এই গান বাজছে তাই অরনি ….

– কিহহ ৩ ঘন্টা! এক গান ৩ ঘন্টা!

নিশি বলে উঠে..
– আরে দা এটা তোমার বোন ওকে। যখন ওর কোনো গান ভালো লাগে সেটা ও সারাদিন’ই শুনে এখানেও ঠিক তাই হয়েছে।

– আনহা ওকে ঘুম থেকে উঠাও ভার্সিটি যেতে হবে। ওকে খাইয়ে না দিলে না খেয়ে চলে যাবে।

– ভাই বোন দুটো মিলে আমাকে জ্বালিয়ে মারল।

নিহা বলে উঠে..
– আমার ফুফুজান টা অনেক ভালো কিছু করে না।

নিহা’র কথা শুনে শান্ত’র মুখ লাল হয়ে যায়। এদিকে অরনি বলে উঠে..
– তুমি শুধু খালামনি কে খাইয়ে দাও আমায় দেও না!

অভ্র হেসে বলে..
– তুমি তো নিজের হাতে খাও কিন্তু তোমার খালামনি তো নিজের হাতে খেতে পারে না মামনি তাই। আচ্ছা তুমি খেয়েছো!

আহিয়ান বলে উঠে..
– জ্বি দা আমি খাইয়ে দিয়েছি!

নীল বলে উঠে..
– আচ্ছা দি তুমি যার কথা বলেছিলে সে কবে আসবে!

নিশি বলে উঠে..
– হ্যাঁ কাল তো মেহেরিন’র‌ বার্থডে আর তুমি বলেছিলে সে এইদিন আসবে।

আহিয়ান বলে উঠে..
– নিহা তুমি ঠিক তো ছেলেটা মেহেরিন’র জন্য পারফেক্ট!

– একদম! আদুরীর জন্য সে বেস্ট হবে। জানো প্রথম যেদিন তার ঘরে গেছিলাম সেদিন পুরো ঘর জুড়ে আদুরীর ছবি দেখেছি। সত্যি আদুরী কে সে অনেক ভালোবাসে!

অভ্র বলে উঠে..
– আমি তাকে না দেখা অবদি কিছু বলতে পারছি না। কারন আদুরীর জন্য যে ছেলে দরকার সে ছেলে খোঁজা কষ্টসাধ্য। আমার বোন যেরকম তাকে সামলানোর জন্য তারা মতোই কাউকে দরকার।

– বিশ্বাস রাখো দা, ও একদম’ই আদুরীর মতো। তাকে সামলানোর সব ক্ষমতা আছে তার।

– দেখা যাক তাহলে!

এভাবেই সবাই তাকে নিয়ে কথা বলতে থাকে যাকে নিহা পছন্দ করেছে আদুরীর জন্য।
এদিকে আনহা মেহেরিন’র ঘরে গিয়ে শুনে সাউন্ড বক্স এ ওই একই গান এখনো বাজছে। আনহা সেটা বন্ধ করলেই মেহেরিন ঘুম থেকে উঠে। অতঃপর আনহা তাকে ধরে বেঁধে তৈরি করিয়ে নিয়ে আসে অভ্র’র কাছে। অভ্র খাইয়ে দেবার পর মেহেরিন বের হয় ভার্সিটিতে যাবার জন্য!
.
মাঝ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্ঝর! মেহেরিন ড্রাইভ করে এই রাস্তায় এসে মাঝপথে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হর্ন বাজাতে থাকে‌। কিন্তু সে ফিরে তাকায় না। মেহেরিন রেগে গাড়ি থেকে বের হয়ে বলে..

– আজব তো গাড়ি নিয়ে মাঝপথে এভাবে দাঁড়িয়ে কেন!

মেহেরিন’র গলার স্বর পেয়ে নির্ঝর পিছনে ফিরে। অতঃপর মেহেরিন কে দেখে চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে চোখ ভরে দেখতে থাকে তাকে। একটা হোয়াইট রঙের টপস, আর হোয়াইট জিন্স পরা। টপস এর ওপর একটা জিন্স রঙের কটি! কোনো সাজ নেই মুখে, এলোমেলো চুল গুলো বাতাসে উড়ছে তার। নির্ঝর তাকে দেখেই মনে সেই বিশ্ব বিখ্যাত শাহরুখ খান’র মুভির গান বাজতে থাকে…


“তুঝে দেখা তো ইয়ে জানা সানাম
‌ পেয়ার হোতা হে দিওয়ানা সানাম”
‌ ‌‌
‌‌এদিকে অপরিচিত কেউ মেহেরিন কে এভাবে ঢ্যাব ঢ্যাব করে দেখায় সে রেগে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর বলে..

– এই যে মিস্টার, ওয়াটস রং উইথ ইউ!

নির্ঝর হুশ ফিরে আসার পরও সে মেহেরিন’র দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। শান্ত গলায় বলে উঠে..

– আই লাভ ইউ!

মেহেরিন এমন কথা শুনে অনেকটা অবাক হয়। তবুও বলে উঠে..
– আই লাভ ইউ টু!

নির্ঝর একথা শুনে চমকে উঠে..
– 😱

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩

– আই লাভ ইউ!

মেহেরিন এমন কথা শুনে অনেকটা অবাক হয়। তবুও বলে উঠে..
– আই লাভ ইউ টু!

নির্ঝর একথা শুনে চমকে উঠে..
– কিহহহহ কি বললে তুমি!

– কি বললাম!

নির্ঝর মেহেরিন’র সামনে দাঁড়ায়। মেহেরিন ফোন টা বের করে টিপতে থাকে। নির্ঝর বলে উঠে..
– তুমি বললে তুমি আমাকে ভালোবাসো!

– কখন বললাম?

– এই যে আমি তোমাকে মাত্র আই লাভ ইউ বললাম তখন!

মেহেরিন হেসে বলে..
– আমার কাজ হয়ে গেছে।

– মানে!

– মানে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা অচেনা মেয়েকে আই লাভ বলে ইভটিজিং করার শাস্তি জানেন, আপনি আমাকে এই যে কথাটা বললেন আমি এটা রেকর্ড করেছি এখন এটা নিয়ে পুলিশে দেবো তিনি আপনার ব্যবস্থা করবে।

– তার মানে তখন তুমি আমার সাথে চালাকি করে উওর দিয়েছিলে!

– খুব স্মার্ট আপনি সহজেই বুঝে গেলেন।
বলেই মেহেরিন গাড়ির কাছে যেতে নিলো। তখন নির্ঝর পেছন থেকে বলে উঠলো..

– হেই মিস!.

– ওয়াট!

– তুমি এটা কিভাবে ভেবে নিলেন যে আমি তোমাকে ভালোবাসি এইটা বলেছি!

– মানে!

নির্ঝর কান থেকে ব্লুটুথ বের করে মেহেরিন কে দেখিয়ে বলে..
– চেক ইট আমি আমার মা কে এই কথা বলছিলাম!

– সিরিয়াসলি গফ বললে হয়তো মিথ্যে টা একটা মিথ্যে হতো।

– সরি আমার কোনো গফ নেই আমি আসলেই আমার মা কে বলেছি। কল করবো কথা বলবে তুমি। চাইলে বলে নিতো পারো।

– Whatever! রাস্তার সামনে থেকে গাড়ি সরান আমার লেট হচ্ছে।

– আমি কি ইচ্ছে করে রেখেছি নাকি গাড়ি চলছে না আমি কি করবো!

– পুরো রাস্তার এক পাশে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন তো আরেক পাশে আপনার গাড়ি, মানুষ যাবে কোথা দিয়ে!

– আমি তো গাড়ির’র জন্য’ই মাঝপথে দাঁড়িয়ে আছি। আমার গাড়ি আসার কথা হয়তো এখনো জ্যামে আটকে আছে তাই আসতে পারে নি।

– ….

– আচ্ছা একটা হেল্প করো না আমার একটু লিভ দাও।

– কিহ?

– আজব তো আমি তোমার দেশে নতুন, বিদেশ থেকে এলাম আর আমাকে সাহায্য করতে পারছো না এই বুঝি তোমাদের দেশের মানুষের কাজ।

– কোথায় যাবেন আপনি!

– বেশি দূর না কাছেই একটা ভার্সিটিতে যাবো আসলে আমি একজন সিঙ্গার, বাংলাদেশের গান নিয়ে রির্সাচ করতে চাই তাই এখানে এসেছি..

– হয়েছে হয়েছে এতো কথা না বলে গাড়িতে বসুন আমার লেট হচ্ছে।

– থ্যাংকু!

বলেই নির্ঝর গাড়িতে বসল। মেহেরিন তার পাশে বসে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করল। নির্ঝর বলতে শুরু করল..
– হাই আমার নাম নির্ঝর চৌধুরী মেঘ! ব্যাংকক থেকে এসেছি। ব্যাংকক আমার একটা গানের ব্যান্ড আছে।
black soul শুনেছ নিশ্চয়ই!

– না শুনি নি।

– তো কি এখন তো শুনলে! আচ্ছা তোমার নাম কি?

মেহেরিন কিছু না বলে গান বাজাতে লাগলো। অতঃপর নির্ঝর কিছু জিজ্ঞেস না করে গান শুনতে লাগলো আর বার বার আড়চোখে মেহেরিন’কে দেখতে লাগল। কিন্তু গান শেষ হবার পরও সেই গান আবার বাজতে লাগলো। তাও একবার না বার বার। নির্ঝর গান চেঞ্জ করতে গেলে মেহেরিন নির্ঝর’র হাত ধরে ফেলল।

– কি হয়েছে?

– এক গান কতোবার শুনবে চেঞ্জ করে দেই।

– না এটা আমার প্রিয় গান, আমি বারবার শুনবো এইটা।

– ওহ্ আচ্ছা। প্রিয় জিনিস দেখতে কখনো ক্লান্ত লাগে না বলো!

নির্ঝর’র কথা শুনে মেহেরিন তার দিকে তাকায়। কিন্তু কিছু বলে না। মেহেরিন গাড়ি এনে থামায় ভার্সিটির সামনে। নির্ঝর তাকে ধন্যবাদ দিয়ে নামতেই দেখে মেহেরিন ও নামে। নির্ঝর খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে..
– তুমি নামলে যে!

– আমিও এই ভার্সিটির স্টুডেন তাই!

– সত্যি তাহলে তো তোমার সাথে আমার রোজ দেখা হবে।

– এক্সকিউজ মি রোজ কেন দেখা হবে?

– যখন দেখা হবে তখন বুঝবে।‌ বাই দ্যা ওয়ে..

এরমধ্যে একজন বলে উঠে..
– হেই মেহেরিন!

দুজনেই পিছনের দিকে তাকায়, দেখে একটা ছেলে তাদের দিকে আসছে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটার দিকে। ছেলেটা একগাল হেসে মেহেরিন’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে..

– কখন আসলে তুমি!

মেহেরিন শান্ত ভাবেই বলল..
– দেখতেই পাচ্ছ এখন এসেছি!

– মেহেরিন তুমি রেগে আছো।

– রেগে থাকার কারন!

– না তোমাকে দেখে মনে হলো তাই!

– নিরব আমার ক্লাসের লেট হচ্ছে বাই!
বলেই মেহেরিন চলে গেল। নির্ঝর বেশ বুঝতে পারল মেহেরিন ছেলেটার সাথে একদম কথা বলতে চায় না এদিকে সেই ছেলেটা মানে নিরব মেহেরিন’র পিছন পিছন যেতে লাগলো।

নির্ঝর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মেহেরিন’কে যতদূর অবদি দেখা যায় দেখতে লাগল। হঠাৎ করেই তখন গাড়িতে শব্দ আসলো। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল তার দল চলে এসেছে। নির্ঝর তাদের নিয়ে স্যারের সাথে কথা বলতে চলে গেলো।
.
মেহেরিন ক্লাসে বসে স্যার’র কথা শুনছে এদিকে তার ‌পাশের বেঞ্চেই বসে আছে নিরব। নিরব তাকে দেখেই যাচ্ছে। মেহেরিন’র খুব বিরক্ত বোধ হচ্ছে সে ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই বের হয়ে আসে ক্লাস থেকে। তার পিছন পিছন বেরিয়ে আসে নিরব।

– এই মেহেরিন শুনো না।

মেহেরিন বিরক্ত হয়ে বলে..
– কি?

– কথা বলছো না কেন আমার সাথে।

– কি কথা বলবো। শুনো নিরব আমি আগেই বলেছি তুমি শুধু আমার একটা ভালো বন্ধু ছিলে কোনো ইন্টারেস্ট নেই তোমার প্রতি।

– বন্ধু ছিলাম!

– নিজের বন্ধুত্ব তুমি নিজেই হারিয়েছো।

– আমি তার জন্য সরি তো ইয়ার বলছি তো ভুল হয়ে গেছে।

– তুমি সুইসাইড অ্যাটেন্ড করার চেষ্টা করেছিলে।

– সেটা তো তোমার জন্য’ই

– এজন্য’ই বন্ধুত্ব হারিয়েছো তুমি!

– আচ্ছা মেহেরিন সব কিছু আবার শুরু করি একটা সুযোগ..

কিছু না বলেই মেহেরিন চলে আসতে নিলো। তখন হঠাৎ একটা গানের সুর মাইকে বেজে উঠল। গানের ক্লাস থেকেই গানের সুর টা আসছে। মেহেরিন দৌড়ে সেখানে গেল। অনেক ভিড় সেখানে! এরমধ্যেই গান বেজে উঠলো!

কথা হবে দেখা হবে,
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে,
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না
শত রাত জাগা হবে,
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না
হুট করে ফিরে এসে,
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা

মেহেরিন ভিড়ের পিছন থেকেই তাকে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই দেখতে পেলো না। অতঃপর মেহেরিন একটা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে তাকে দেখল। তাকে দেখা মাত্রই মেহেরিন’র চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল। কারন এটা নির্ঝর ছিল। এদিকে নির্ঝর গিটার বাজাতে বাজাতে আবার গান গাওয়া শুরু করল…

ভুলভাল ভালবাসি,
কান্নায় কাছে আসি
ঘৃণা হয়ে চলে যাই থাকি না
কথা বলি একাএকা,
সেধে এসে খেয়ে ছ্যাঁকা
কেনো গাল দাও আবার বুঝি না
খুব কালো কোনো কোণে,
গান শোনাবো গোপনে
দেখো যেনো আর কেউ শোনে না
গান গেয়ে চলে যাবো,
বদনাম হয়ে যাবো
সুনাম তোমার হবে হোক না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা

মেহেরিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে নির্ঝর’র দিকে। হঠাৎ করেই নির্ঝরের চোখ পড়ে মেহেরিন’র ওপর। দুইজনের চোখাচোখি হয়। নির্ঝর গিটার বাজিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মেহেরিন’র কাছে আসে। অতঃপর তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। মেহেরিন তার হাত ধরে টুল থেকে নামে। নির্ঝর মেহেরিন’র চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে বলে…

যদি তুমি ভালোবাসো,
ভালো করে ভেবে এসো
খেলে ধরা কোনো খানে রবে না
আমি ছুঁয়ে দিলে পরে,
অকালেই যাবে ঝরে
গলে যাবে যে বরফ গলে না
আমি গলা বেচে খাবো,
কানের আশেপাশে রবো
ঠোঁটে ঠোঁটে রেখে কথা হবে না
কারো একদিন হবো,
কারো একরাত হব
এর বেশি কারো রুচি হবে না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
কথা হবে দেখা হবে,
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা-আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে,
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না
শত রাত জাগা হবে,
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না
হুট করে ফিরে এসে,
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা

গান শেষ হতেই মেহেরিন সেখান থেকে চলে আসে। সবাই হাত তালি দিতে থাকে। নির্ঝর গিটার টা রেখেই মেহেরিন’র পিছু পিছু দৌড়াতে থাকে।

#চলবে….