#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৩
নির্ঝর আর নিশি দাঁড়িয়ে আছে কাব্য’র সামনে আর মেহেরিন অভ্র’র পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন’র ভয় একটাই যেভাবে ক্যাট কে চড় মারল এভাবে না আবার ওকে বকা দেয়। চড় টা আসলেই খুব জোরে মেরেছিলো। চড় মারার পর’ই মেহেরিন উধাও হয়েছিল। সে এখনো অভ্র’র পিছনে দাঁড়িয়ে। উঁকি দিয়ে বার বার কাব্য কে দেখছে। কিন্তু কাব্য রেগে আছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। হঠাৎ কাব্য বলে উঠে..
– দা সামনে থেকে সরো তো!
অভ্র একবার পিছনে তাকায়। মেহেরিন কাঁদো কাঁদো ফেস করে মাথা নাড়িয়ে না বলে। অভ্র ও সামনে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বলে। অতঃপর কাব্য হুট করে পিছনে গিয়ে মেহেরিন কে ধরে ফেলে। মেহেরিন গালে হাত রেখে বলে..
– প্লিজ প্লিজ প্লিজ আমাকে চড় মারিস না।
– তোকেই তো মারা উচিত!
– দা… কিছু বলো না ওকে।
– কেউ কিছু বলবে না তুই আমার সাথে আয়!
বলেই টানতে টানতে মেহেরিন কে নিয়ে গেল। মেহেরিন অনেক চিৎকার করে কিন্তু কাব্য তবুও ছাড়ে না। অভ্র আর নিহা পিছু পিছু যায়। কাব্য মেহেরিন কে নিয়ে তার রুমে যায়। অতঃপর বলে..
– এমনটা কেন করলি।
– কি করেছি আমি! তোকে বলেছি বিয়ে করতে। বিয়ে তো তুই নিজে করেছিস। এখন আমাকে দোষ দিচ্ছিস কেন।
– তুই ওকে এখানে কেন আনলি বল।
– এনেছি এনেছি আমার মন চাইছে তাই।
কাব্য একটা নিঃশ্বাস ফেলে মেহেরিন’র বাহু ধরে বলে..
– তুই এটা ঠিক করিস নি জান। যদি আবার কিছু হয়।
– কিন্তু তুই যেটা করেছিস ঠিক করেছিস। বিয়ে করেছিস মিয়াও ভাবী কে।
– …
– আচ্ছা আমার কথা শোন ও যাই করুক না কেন কিন্তু ও কখনো তোকে ঠকায় নি। ও সত্যি তোকে ভালোবাসতো। না হলে তুই’ই বল যদি ওর উদ্দেশ্য শুধু আমাকে মারা’র হতো তাহলে তো আমাকে কবেই মেরে ফেলতো তাই না। কারন আমাকে মেরে পালিয়ে গেলে তোরা কেউই খুঁজে পেতি না ওকে। কিন্তু ও কি সেটা করেছে।
– জান আমাকে বোঝাস না।
– বুঝিস না। কিছু বোঝার দরকার নেই। শুধু তোর মন যেটা চাই সেটাই কর। ভুল কে না করে কাব্য। সবাই করে। কিন্তু এখানে ও তো তোকে ঠকায় নি। ভালোবাসে ও তোকে। আমি যতবার ওর সাথে দেখা করেছি ততোবার ও আমাকে শুধু এটাই বলেছে ও সত্যি ভালোবাসে তোকে। ওর চোখে তোর জন্য আমি ভালোবাসা দেখেছি। ভালোবাসে ও তোকে। এখন হয়তো ওর উদ্দেশ্য অন্যকিছু ছিল কিন্তু তাই বলে ও কখনো তোকে ধোঁকা দেওয়ার কথা ভাবেনি। বোঝার চেষ্টা কর।
– আমার লাইফে তুই না থাকলে এগুলোর কোনো মূল্য নেই আমার কাছে।
– আমি জানি সেটা। কিন্তু একটা কথা বল তো ভালোবাসিস না ওকে।
– নাহ বাসি না।
– আমার দিকে তাকিয়ে বল। আমিও একটু দেখি।
– জান..
মেহেরিন কাব্য’র গালে হাত রেখে বলে..
– আমি জানি তুই ক্যাট কে অনেক ভালোবাসিস। যখন ও জেলে ছিল তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস। আমি জানি সেটা। তোর কষ্ট আমি বুঝি। আর যাই হোক নিজের ফ্রেন্ড কে কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না আমি। আমার জান তোরা। তুই, রোদ্দুর,ইহান ওদের ছাড়া আমি কিছু না। তোদের কাউকে ছাড়া এই আদুরীর কোনো অস্তিত্ব নেই। আর ক্যাট আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। আর যা করেছে এজন্য যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছে।
– কিন্তু জান ওকে বিশ্বাস করাটা কি ঠিক হবে।
– বিশ্বাস করতে কে বলেছে।
– মানে!
– ভালোবাসবি। বিশ্বাস পরে করলেও চলবে। আর এটা ভুলে যাবি না আদুরী যা করে অনেক ভেবে চিন্তে করে। আর এটাও আমি ভেবেই করেছি। সো চিল কর। আজ রাতে তোর বাসর ওকে। বাংলা সিনেমার মতো গিয়ে ডায়লগ ছাড়িস না “তোমাকে আমি মানি না, বিয়ে করেছি তোমাকে কষ্ট দেবো বলে। শান্তিতে থাকতে দেবো না তোমায়” ইত্যাদি ইত্যাদি! এসব কিছুই বলবি না বুঝলি।
কাব্য মনে মনে বলে..
– এসব তো কখনোই বলে দিয়েছি!
– কিরে কি ভাবছিস!
– কিছু না!
– কি বললাম শুনলি তো। এসব তোকে মানায় না। তুই তো খুব সুইট, মিষ্টি শান্ত একটা ছেলে বুঝলি তাই এসব কিছু বলবি না বুঝলি।
– কাব্য মাথা নাড়তে থাকে।
– আর হ্যাঁ একটা চড় কিন্তু আগেই মেরেছিস আর একটাও মারবি না। মিয়াও ভাবী এখনো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জানিস!
– 😒
– এভাবে তাকাচ্ছিস কেন!
– দা এখানে না থাকলে আমি সত্যি ই তোকে উঠিয়ে একটা আছাড় মারতাম।
– হ্যাঁ তারপর তোকেই কোলে নিয়ে ঘুরতে হতো।
কাব্য মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– না এখন মনে হচ্ছে অন্য কেউ তোকে নিয়ে ঘুরবে!
– মানে!
– মানে আর কি! খুব ভাব হয়েছে দেখছি তো।
– ভাব আর ভালোবাসা এক নাকি।
– না এক না জানি কিন্তু তবুও হজম হচ্ছে না।
– তাহলে একটা ইনো খেয়ে নে। হজম হয়ে যাবে।
– আজব!
– আজব না তোর বাসর সাজানো হচ্ছে বুঝলি যা বললাম সেগুলো করবি।
– আইছে।
পেছন থেকে নির্ঝর আর নিশি এসে বলে..
– কি বুঝালি তুই ওকে।
– মনে হচ্ছে অনেক কিছু বুঝিয়ে মেহু পাখি!
– আপনি জেনে কি করবেন! এখানে এসেছেন কেন সেটা বলুন!
– বাসর ঘর সাজানো শেষ!
– ক্যাট কেও রেখে আসেছি। কাব্য কে নিতে এসেছি এখন!
কাব্য দুছনের দিকে তাকিয়ে বলে..
– আসেন আপনারা। আপনারও তো ছিলেন না ওর সাথে!
– হুম আমি ক্যাট কে এখানে নিয়ে এসেছি!
– আর আমি তো বর সেজেছি।
কাব্য হেসে বলে..
– তখন একবার তোর বরের মুখটা দেখতি, বেচারা সেই লেভেলের ব্যাথা পেয়েছিল জানিস!
নিশি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে..
– অনেক হয়েছে চল এখন!
মেহেরিন এসে কাব্য’র হাত বলে..
– এনাকে ধরে নিয়ে যেতে হবে বুঝলি!
বলেই মেহেরিন তাকে ধরে নিয়ে গেল। সবাই তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকেই। সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি
ঠিক হয়ে গেল নাকি। আর মেহেরিন হলে এটা সম্ভব!
মেহেরিন কাব্য কে ঘরের ভেতর ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দিল অতঃপর ঘরের দরছা বন্ধ করে দিল। কাব্য কতোক্ষণ ডাকাডাকি করেও কোন লাভ হয় নি।
অতঃপর নিরুপায় হয়ে ঘরের দিকে তাকাল সে। দেখে খুব চমৎকার ভাবেই রুম সাজানো হয়েছে। মোমবাতি আর গোলাপ ফুল দিয়ে পুরো রুম সাজানো। বিছানায় পুরো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো। বলতে গেলে একটা রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। তবে কথা হলো একটা এখানে ক্যাট নেই। তবে ওরা যে বললো ক্যাট এখানে তাহলে সে গেলো কোথাও। কাব্য ঘরে তাকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু তাকে খুঁজে পেলো না। সে খানিকটা অবাক হয়ে গেল। হঠাৎ কাব্য’র মনে হলো খাটের পিছনে কেউ আছে। কাব্য সেখানে গিয়ে দেখে ক্যাট বসে আছে সেখানে। কাব্য তার দিকে তাকাতেই ক্যাট উঠে দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।
কাব্য ক্যাট কে ডাক দিলে ক্যাট দাঁড়িয়ে গেলো। অতঃপর কাব্য ক্যাটের সামনে দাঁড়াতেই ক্যাট এক পা পিছনে চলে গেল। কাব্য ভ্রু কুঁচকে সামনে আগাতেই সে আবার ও পিছনে গেল। কাব্য আবারো এক পা এগিয়ে বলল…
– কি হলো এমন ভাবে পিছিয়ে যাচ্ছো কেন?
ক্যাট এক পা পিছনে গিয়ে..
– তুমি এগিয়ে আসছো কেন?
কাব্য এক পা এগিয়ে..
– লুকিয়ে ছিলে কেন?
ক্যাট এক পা পিছনে গিয়ে বলল..
– আমাকে আবারো চড় মারবে তুমি তাই!
কাব্য এক পা এগিয়ে বলল..
– তোমাকে এই কথা কে বললো!
ক্যাট এক পা পিছনে গিয়ে বলল…
– তুমি’ই তো তখন বললে..
কাব্য এক পা এগিয়ে বলল..
– আর পিছনে যেয়ো না!
ক্যাট পিছনে যেতে যেতে বলল..
– কেন…
কিন্তু বলার আগেই সে কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিল তখন সে কাব্য’র হাত ধরে ফেলল। কাব্য তাকে টেনে নিজের দিকে আনলো। ক্যাট আর কাব্য দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ! অতঃপর হুট করেই ক্যাট কাব্য কে জরিয়ে ধরল। তবে কাব্য ধরে নি। ক্যাট কাব্য কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। কাব্য তবুও তাকে ধরে নি। ক্যাট অনেকক্ষণ যাবত কাঁদল। কাঁদতে কাঁদতে তার হেঁচকি উঠে গেল। তখন কাব্য তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল..
– থামো আর কাঁদতে হবে না।
ক্যাট তবুও কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে বলল…
– কাব্য প্লিজ এরকম করো না। আমি সত্যি খুব ভালোবাসি তোমায়। জানি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। আমি এটাই করতে এসেছিলাম কিন্তু কখন যে তোমায় ভালোবেসে ফেললাম বুঝতে পারি না। তোমার ভালোবাসা, তোমার কথা, তোমার সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহুর্ত খুব মনে পড়তো আমায়। তোমাকে অনেক মিস করেছি আমি। আমি সত্যি বুঝতে পেরেছি আমি কি করেছি। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না আমি। তোমাকে ছেড়ে থাকা অসম্ভব আমার পক্ষে। আমি সব কাজ ছেড়ে দিয়েছি। এই কাজ আমি এখন আর করব না।
কাব্য’র খুব খারাপ লাগছিল ক্যাট কে এভাবে কাঁদতে দেখে। সে ক্যাট কে কোনোমতে সামলে তাকে বসালো। ক্যাট’র কান্না থেমে গেছে তবুও সে কাঁপছে। সে বসে কাব্য’র হাত ধরে বললো..
– কাব্য প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিও না। খুব ছোটবেলায় আমি আমার বাবা মাকে হারিয়েছি। তারপর যোগ দিয়েছিলাম এই কাজে। জানো কখনো কেউ আমাকে এভাবে ভালোবাসি নি। এতো কেয়ার কখনো কেউ করে নি আমার। তুমি যেভাবে আমাকে আগলে রেখেছিলে আমার কাছে এমন কেউ ছিল না যে আগলে রাখবে। দিনের পর দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছিলাম আমি। কেউ আমাকে সামলায় নি তখন।
কাব্য এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ক্যাটের দিকে। ক্যাট কথা বলতে বলতে আবারো কেঁদে দিচ্ছে। কাব্য ক্যাটের গালে হাত রেখে বলল..
– শান্ত হও!
ক্যাট কাব্য’র গালে হাত রেখে বলে..
– খুব ভালোবাসি তোমায়, খুব ভালোবাসি! পারবো না তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে। প্লিজ কাব্য এমন করো না!
কাব্য ক্যাটের কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল..
– বুঝতে পেরেছি আমি! এখন শান্ত হও। আর কেঁদো না। জানো তোমাকে এখন পেত্নি পেত্নি লাগছে দেখতে!
ক্যাটে ভ্রু কুঁচকে বলল..
– তুমি আমাকে পেত্নি বললে!
– পেত্নি কে তো পেত্নি’ই বলবো না।
– কাব্য ঠিক হচ্ছে না কিন্তু!
– এটাই ঠিক!
– কাব্য!
– হ্যাঁ সামনেই বসে আছি তোমার। জানো কখনো কোনো মেয়েকে আমি এতো কাঁদতে দেখেনি।
ক্যাট কাব্য’র দিকে তাকিয়ে ঠোট উল্টে এবার ভ্যা ভ্যা করে দিলো। কাব্য এবার তাকে সামলাতে লাগলো। ক্যাট এবার জোরে জোরে করে কাঁদতে লাগলো। ক্যাট অনেক কষ্ট করে ক্যাট কে থামাল। বলল..
– আরে আরে থামো কি করছো। সবাই ভাববে আমি মারছি তোমাকে। ক্যাট থামো!
– ( জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। )
– ক্যাট থামো না। আর কেঁদো না। বাইরে যখন থাপ্পর মারলাম তখন ও তো এতো কাদো নি তুমি!
ক্যাট এবার চুপ হয়ে গালে হাত দিয়ে বলল..
– জানো অনেক ব্যাথা পেয়েছি আমি। খুব জোরে মেরেছো তুমি, খুব লেগেছে আমার!
কাব্য মুখ টিপে হেসে ক্যাট’র গালে হাত রেখে বলল..
– ইশ খুব জোরে লেগেছে নাহ!
– আবার জিজ্ঞেস করছো। দেখো গালে দাগ বসিয়ে দিয়েছো!
কাব্য হেসে ক্যাট গালে আলতো করে চুমু দিলো। ক্যাটের কান্না মুখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। সে কাব্য কে জরিয়ে ধরল। কাব্য এবার তাকে জড়িয়ে ধরল। ক্যাট কাব্য’র ঘাড়ে দু হাত রাখল। কাব্য তার কোমরে হাত রাখল। ক্যাট বলে উঠে..
– কাব্য! আমি ভালোবাসি তোমায়!
– হুম!
– কি হুম হুম করছো।
– তাহলে কি বলবো।
– ভালোবাসো না আমায়।
– না বেসে কি উপায় আছে এখন আমার বউ তুমি!
– আচ্ছা কাব্য আমি যদি সত্যি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলতাম তখন তুমি কি করতে।
– কিছুই না।
– তোমার খারাপ লাগতো না।
– নাহ!
– কি বললে?
– খারাপ লাগবে কেন আমি কি তখন জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো বাসো।
ক্যাট হেসে কাব্য’র নাকে নাক ঘসে বলল..
– আমি শুধুই তোমার। তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না আমার!
কাব্য মুচকি হেসে দিলো ক্যাট’র কথা শুনে। ক্যাট হুট করেই কাব্য’র ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলো। অতঃপর তাকে ছেড়ে তাকিয়ে রইল কাব্য’র দিকে। কাব্য ক্যাটের বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে আবারো তার ঠোঁট আঁকড়ে ধরল। বেশ কিছুক্ষণ পর কাব্য তাকে ছেড়ে দিলে ক্যাট লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। তখন কাব্য হেসে তাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল..
❤️
❤️
.
এদিকে মেহেরিন আর ইহান দুজনে কফি হাতে নিয়ে ছাদে গেল। কারন তাদের গ্রুপে সিঙ্গেল বলতে এখন তারা দুজনে। তবে এটাতে তারা দুজনেই বেশ খুশি। তবে ছাদে এসে দু’জনেই অবাক। ছাদের এক কোনে রোদ্দুর আরিশা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর আরেক পাশে নিশি আর নিশান। নিশান নিশি’র হাত দুটো যেনো কি বলছে। এসব দেখে ইহান কফি’র মগে চুমুক দিয়ে মেহেরিন কে বলল..
– বুঝলি কিছু!
মেহেরিন কফি মগে চুমুক দিতে দিতে..
– এদের বিয়ে দিতে হবে খুব জলদি।
– হুম দেশে ফিরেই!
– এদিকে জিজু’র ফ্যামিলি আর এদিকে আরিশা’র ফ্যামিলি’র সাথে কথা বলতে হবে। আচ্ছা ইহান এক কাজ করলে কেমন হয় দুই জুটির বিয়ে একসাথে দিয়ে দিই। তাহলে একজন খান বাড়িতে আসবে আর একজন যাবে। কারো মন খারাপ হবে না।
– বেস্ট আইডিয়া!
অতঃপর দুজনেই ফিক করে হেসে দিল!
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৪
কাব্য আর ক্যাটের বিয়ের পর ১৫ দিন তারা সেখানেই থাকে। অতঃপর সবাই মিলে দেশে ফিরে আসে। নিরবের সাথে এখন পর্যন্ত মেহেরিন’র দেখা হয় নি। মেহেরিন ও যোগাযোগ করতে চায় নি। তবে নিরব চেয়েছিল। এদিকে নির্ঝর আর মেহেরিন’র সম্পর্ক এখনও বন্ধুত্ব অবদি টিকে আছে। নিহা আর অভ্র তাদের এই বন্ধুত্ব দেখেই বেশ খুশি।
দেশে আসার পর পর’ই নিশান আর আরিশা’র পরিবারের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলা হয়। অতঃপর ১৫ দিন পর তাদের বিয়ের তারিখ ধার্য করা হয়। আবারো লেগে যায় বিয়ের তোরজোর আর শপিং! এবার তাও ২ জুটির বিয়ে তাই এবারকার আয়োজন আরো জমজমাট ভাবেই হয়। ক্যাট এর সাথে এবার সবার সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায়। এখানে নির্ঝর নিজের জন্য একটা বাড়ি কিনে। বাড়িটা বেশি বড় না আবার ছোটও না। তবে একটা ফ্যামিলি থাকার জন্য সম্পূর্ন ঠিক আছে। বাড়িটার কিছু কাজ করাতে হবে তাই নির্ঝর এই কয়েকদিন খান বাড়িতেই থাকবে বলে ঠিক করে। এতে অবশ্য নিহা বেশি জোর করে।
দেখতে দেখতে বিয়ের তারিখও ঘনিয়ে আসে। আজ ছিল মেহেদি। সারালিন থেকে শুরু করে রাত অবদি সবাই নাচ গান মেহেদি দিয়ে কাটাল। কাল সঙ্গীত হবে। তাই সবাই আজকের মতো তাদের নিজ নিজ ঘরে চলে গেল। এদিকে যত তাড়াতাড়ি বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে তত’ই যেন অভ্র আর নীলের চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। নিশি তাদের ছোট বোন ছেড়ে চলে যাবে তাদের ছেড়ে। দু’ভাইয়ের এজন্য মন খারাপ হয়ে যায়। দু’ভাই বসে ছবির এ্যালবাম বের করে তাদের আগের দিনের ছবি গুলো দেখতে থাকে। দিন কতো তাড়াতাড়ি চলে যায় তা বোঝা যায় না। কতো বছর কেটে গেল। কত কিছু হয়ে গেল। কিছু হারালো আবার কিছু পেলো। কিন্তু সময় থমকে রইলো না। সে আপন গতিতে শুধুই চলেই গেল।
ছোটবেলার কিছু ছবি দেখে দু’ভাই মিলে হাসতে লাগলো। মেহেরিন তখন চকলেট খেতে খেতে এসে বসল তাদের মাঝে। সেও তাদের ছবি গুলো দেখতে লাগলো। এখানকার বেশিরভাগ ভাগ ছবিতেই মেহেরিন নেই। তার ১০ বছর বয়স অবদি তার কোনো ছবি নেই। শুধু দুটো ছবি আছে একটা তার জন্মের পর সবার সাথে। আরেকটা ছবি যেখানে সে ৩ বছরের তার মা আর বাবা। তবে এগুলো সব’ই আজ অতীত। মেহেরিন মন খারাপ হয়ে যাবে দেখে তখন অভ্র এ্যালবাম টা বন্ধ করে দিলো। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলল..
– কি হলো!
– কিছু না। চলো অনেক কাজ আছে করতে হবে। কাল সঙ্গীত আছে।
নীল বলে উঠে..
– হুম তাই তো চলো আদুরী।
অতঃপর অভ্র আর নীল মিলে তাকে নিয়ে ঘুমাতে পাঠাল। আর মেহেরিনও আরামসে ঘুমিয়ে পরল।
পরদিন সঙ্গীত এর অনুষ্ঠানে সবাই উপস্থিত। সব মেয়েরা আজ সবুজ রঙের লেহেঙ্গা আর ছেলেরা সবাই কালো রঙের কুর্তা পড়েছে। সঙ্গীত এর আয়োজন খান বাড়িতেই করানো হয়েছিল। সব মেহমানরা উপস্থিত। ছেলেদের আর মেয়েদের আলাদা ভাবে বসানো হয়েছে গানের কলি খেলার জন্য। কিন্তু সবাই খুঁজছে মেহেরিন কে। সে এখনো আসে নি। অভ্র কয়েকবার ফোন ও দিয়েছে কিন্তু তার কোনো খোঁজ নেই। সবাই বেশ এবার চিন্তায় পড়ে গেল। নিহা ডেভিল কে ডেকে মেহেরিন’র কথা জিজ্ঞেস করতেই যাবে তখন সব লাইট অফ হয়ে গেল। অতঃপর হঠাৎ একটা লাইট জ্বলে উঠলো তবে সেটা একটা পর্দার উপর। সেই পর্দাই একে একে কিছু ছবি ভেসে উঠলো। অভ্র, নিহা, নীল আর নিশি সহ সবাই অবাক হয়ে তাকালো সেখানে। এগুলো সব তাদের’ই ছোটকালের ছবি যা তারা কাল দেখছিল। এখানে মেহেরিন’র আওয়াজ ভেসে আসলো।
মেহেরিন বলতে লাগল..
– হেলো গাইস! আমি অধরা আর শুভ্র খানের ছোট মেয়ে মেহেরিন বর্ষা খান ওরফে আদুরী। আশ্চর্য লাগছে না নিজের পরিচয় কেন দিচ্ছি। অনেকেই আবার এসব জানেন কারন আমি এই কথাটা সবসময় বলি। কারন এটা আমার পরিচয় তবে যাই হোক কথা সেটা না। কথা হলো এছাড়াও খান পরিবারের আরো বেশ কিছু সদস্য আছে। শাহরিয়ার অভ্র খান, নিহারিকা নিহা খান, আদ্রিয়ান খান নীল আর নিশিতা নিশি খান। আর তারা যাদের হীনা আমার অস্তিত্ব নেই। আমার আর আমার পরিবারের বেস্ট ফ্রেন্ড রোদ্দুর, ইহান আর কাব্য!
[ মেহেরিন বলতে থাকে আর একে একে সবার ছবি গুলো ভেসে ওঠে। মেহেরিন বলতে শুরু করে..
]
আমাকে আদুরী নাম দেওয়ার একটা বিশেষত্ব ছিল। আর সেটা হলো আমি খুব আদুরের ছিলাম। আর এটা প্রথম থেকেই। সবার ছোট ছিলাম বলে আরো বেশি আদরের যার কারনে আমার নামটা হয় আদুরী আর এই নামটা আমার দা আমাকে দেয়। সেই থেকেই আমার নাম আদুরী। এখন সবার কাছেই মনে হয় আমি ছোট বলে একটু বেশিই আদর পাই বা আমার সাত খুন মাফ এরকম কিছু। তবে এটা কিন্তু সত্যি। আসলেই আমার সাত খুন মাফ তবে এই মাফ টা সবার করে। তবে এর মানে এটা না যে আমার দা শুধু আমাকেই ভালোবাসে। আমার মা মারা গেছেন আজ ১০ বছর। এর পর থেকে আমার ভাই আমাকে দেখেছেন। শুধু কি আমাকেই দেখেছে। আমাকে সহ আমার আরো ৪ ভাইবোন আর বেস্ট ফ্রেন্ড দেরও দেখেছে। সেটা কারো অজানা নয়। আর আজ আমার আপু’র সঙ্গীত! দুদিন পর বিয়ে। ( একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) আমার আপু চলে যাবে আমাদের ছেড়ে আমার দা’র একটা চোখের মনি চলে যাবে তাকে ছেড়ে। খান রা কখনো ইমোশনাল হয় না এটা কিন্তু সত্যি। আজও তারা ইমোশনাল হয় নি আজকে শুধু কিছু অতীত নিয়ে আসলাম। কারন অতীত এমন একটা জিনিস যা তোমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে।যার একটা অতীত আছে তার ভবিষ্যৎ ও আছে। আর আজ এই অতীতের কিছু ঘটনা দেখানো হবে। সো লেটস ইনজয় গাইস!
অতঃপর মেহেরিন’র আওয়াজ আর আসল না। একটা ভিডিও শুরু হলো যেখানে দেখা যাচ্ছিল নিশি’র জন্মের পর কিছু ঘটনা। সবাই তাকিয়ে দেখতে লাগলো। সেই ছোট অভ্র যে কিনা নিশি কে কোলে নিয়ে খুব খুশি হয়েছিল। আগলে রেখেছিল তার ছোট ছোট হাতে তার ছোট বোন কে। নিহা আর নীল দুজনে কাড়াকাড়ি করছিল কে কোলে নিবে। তখন শুভ্র এসে কোলে নিল নিশি কে। নিহা আর নীল তখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে সেই ছোট শিশু টিকে আদর করতে লাগল। এরপর আরো কিছু ঘটনা’র ভিডিও দেখাল। মেহেরিন’র জন্মের ভিডিও, রোদ্দুর, ইহান আর কাব্য দের সাথে বেশ কিছু ভিডিও চলতে লাগলো। ভিডিও চলাকালীন নিশি আর নিহা এসে অভ্র কে জরিয়ে ধরল। রোদ্দুর, ইহান, কাব্য আর নীল সেখানে দাঁড়াল। অভ্র তাকিয়ে আছে সেই ভিডিও’র দিকে। এদিকে অরনি আহিয়ান কে জিজ্ঞেস করে..
– এটা কে বাপি!
– তোমার আম্মু প্রিন্সেস!
– তার মানে আম্মু ও আমার মতো ছোট ছিল!
– হ্যাঁ ছিল একসময়!
এদিকে শান্ত আনহা কে জিজ্ঞেস করে..
– আম্মু ডেডি দেখতে একদম আমার মতো লাগছে তাই নাহ!
– হুম বাবা!
বলেই আনহা হেসে তাকিয়ে রইলা।
এদিকে দূরে রাইয়ান কে কোলে নিয়ে এসব দেখছিল নির্ঝর! খুব মনোযোগ দেখছিল এসব সে। খুব ভালো লাগছিল এসব দেখতে তার।
অতঃপর ভিডিও শেষ হলো। সব লাইট জ্বলে উঠলো। মেহেরিন কে এবার দেখা গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামছে একটা কালো রঙের হুডি আর কালো রঙের জিন্স পড়া। সে নিচে নামতেই অভ্র তার কাছে আসল। তার গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেল। মেহেরিন হেসে অভ্র কে জরিয়ে ধরল। একে একে সবাই এসে মেহেরিন কে জরিয়ে ধরল। অতঃপর খুব সুন্দর ভাবেই সঙ্গীতের অনুষ্ঠান শেষ হলো।
আজ বিয়ে..
নিশান কে আর রোদ্দুর কে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে টাকার জন্য। রোদ্দুর বলে উঠে..
– কিন্তু আমি কেন টাকা দেবো!
মেহেরিন বলে উঠে..
– কারন আমি মেয়ের পক্ষে! আরিশা আমার বান্ধবী আর আপু তাই তাদের দু’জনের পক্ষ থেকে টাকা না দিলে ঢুকতে দেওয়া হবে না ব্যস!
অবশেষে দু’জনেই টাকা দিল। তাদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হলো। গান বাজনা দিয়ে শুরু হলো বিয়ে। কিন্তু এখানে এসে দুই বর আবারো ঝামেলায় পরলো। দুই কনে একরকমের লেহেঙ্গা আর তাদের দু’জনের’ই মুখে বড় ঘোমটা। মেহেরিন বলে উঠে “যে বর যে কনের হাত ধরবে তাকেই বিয়ে করতে হবে”
এই কথা শুনে দুজনের মাথায় বাজ পড়ল। পরল বিপদে কারনে ভুল কনের হাত ধরলে জীবন শেষ। দুজনে এসে সামনে দুই কনের সামনে তাকাল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অতঃপর হেসে কনের দিকে হাত বাড়াল। দুজনের টাই ঠিক হলো অতঃপর বিয়ে সম্পন্ন হলো! নিশি আর নিশান কে বিদায় দিয়ে রোদ্দুর আর আরিশা কে খান বাড়িতে নেওয়া হলো। এখানে রোদ্দুর’র পকেট আবার খালি করল মেহেরিন, নির্ঝর আর ইহান। টাকা ছাড়া বাসর ঘরে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে দিল। রোদ্দুর’র অবস্থা দেখে অভ্র, আর আনহা হেসে দিলো। অতঃপর রোদ্দুর টাকা দিয়েই ঢুকল। ডিতরে এসে দেখল আরিশা
খাটে বসে আছে। পুরো রুম মোমবাতি আর ফুল দিয়ে সাজানো। ফুলের গন্ধে চারদিকে ভরে উঠলো। রোদ্দুর দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। আরিশা হেসে রোদ্দুর’র সামনে এসে দাঁড়াল। রোদ্দুর হেসে আরিশা’র কপালে আলতো করে একটা চুমু খেল। অতঃপর তার সামনে একটা নেকলেস বের করল। একটা ডায়মন্ড’র নেকলেস। আরিশা এটা দেখে খুব খুশি হলো। রোদ্দুর নিজের হাতে আরিশা কে সেটা পরিয়ে দিল। অতঃপর রোদ্দুর পেছন থেকে আরিশা কে জরিয়ে ধরল। দুজনেই নিরব। রোদ্দুর ফিসফিসিয়ে বলে উঠে..
– খুব সুন্দর লাগছে আজ তোমাকে আরু!
আরিশা এটা শুনে মুচকি হাসল। অতঃপর রোদ্দুর আবার বলে উঠে..
– তো আজ ছুঁতে পারি তোমায় আমি আরু!
আরিশা এই কথা শুনে লজ্জায় মুখ নিচু করে ফেলল। রোদ্দুর তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার থিতুনিতে হাত রেখে তার মুখখানা উঠালো। অতঃপর আরিশা’র ঠোঁট নিজের আয়ত্তে করে নিল। আরিশা রোদ্দুর’র শেরোয়ানি টাকে আঁকড়ে ধরল। খানিকক্ষণ পর রোদ্দুর আরিশা কে ছেড়ে দিলে সে লজ্জায় রোদ্দুর’র বুকে মাথা লুকাল।
এদিকে নিশি সেই কখন থেকে বসে আছে। প্রায় ১.৩০ ঘন্টা আগে এসেছিল এই বাড়িতে। সবাই খুশি হয়ে তাদের বরন করে নিল। বেশ কিছুক্ষণ নিচে সবার সাথে গল্প করার পর নিশি কে উপরে পাঠানো হলো। কিন্তু নিশানের কোন খবর নেই এখনো।
বসে থাকতে থাকতে নিশি’র পা ধরে আসল। তাই সে এবার উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে বেলকনিতে চলে গেলো। এখান থেকে দাঁড়িয়ে আকাশ টা ভালো’ই দেখা যাচ্ছিল।পুরো শহর এখন নিস্তব্ধ! কোনো কোলাহল নেই এখানে। বেশ লাগছিলো এই নিরব পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকতে। হঠাৎ কেউ তার কোমরে হাত দিলে নিশি শিউরে উঠল। এটা যে নিশান সেটা বুঝতে বাকি। নিশান ধীরে ধীরে নিশির কানের কাছে এসে বলল..
– জান পাখি!
কথাটা খুব নেশা ভরা ছিল। নিশি’র গা কেমন ঝম ঝম করতে লাগলো। অতঃপর নিশান সেখানে দাঁড়িয়ে তার ঘাড়ে মুখ ডুবালো। নিশি কেমন অস্থির হয়ে গেল। বলে উঠে..
– কোথায় ছিলে তুমি এতোক্ষণ!
নিশানের এবার বোধ হয়। সে নিশি কে ছেড়ে দিয়ে তার দুহাতের ওপর হাত রেখে বলে..
– খাবার এনেছি! খেয়ে নেবে এসো।
– আমার এখন ক্ষিদে নেই নিশান।
– তোমাকে জিজ্ঞেস করছি না আমি বলছি। মানে আদেশ করছি আর স্বামীর আদেশ মানতে হয় বুঝলে!
বলেই সে নিশি কে টেনে ভিতরে নিয়ে গেল। অতঃপর তাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসল। তার মুখের দিকে খাবার দিতেই হুট করে নিশি নিশানের কোলের উপর এসে পরল। নিশান সেভাবেই তাকে খাবার খাওয়াতে লাগল!
কয়েকমাস পর..
খান কোম্পানির সাথে চৌধুরীদের মানে নির্ঝরের কোম্পানির সাথে ডিল আজ সাইন হলো। এই খুশিতে তারা বাসায় একটা পার্টির এ্যারেঞ্জ করল। সন্ধ্যার সময় পার্টি শুরু হলো! গান বাজনা হচ্ছে এছাড়া হইহুল্লোড়। শান্ত আর অরনি’র কিছূ বন্ধুদেরও ইনভাইট দেওয়া হয়েছিল। সব চেয়ে বেশি আনন্দ তারাই করছে। সবাই তাঁদের নিয়েই ব্যস্ত। মেহেরিন দাঁড়িয়ে সেই বাচ্চাদের চকলেট দিচ্ছিল। হঠাৎ তার মনে হলো ওপাশে কেউ আছে। সে সেখানে হাঁটতে লাগল। বাড়ির ওই দিকটায় সুইমিং পুল ছিল। মেহেরিন এখানে বেশি একটা আসে না। সে হাঁটতে হাঁটতে সুইমিং পুলের কাছে অবদি এলো কিন্তু তখনও কাউকে দেখতে পেলো না। হঠাৎ দেখল তার বিড়াল বাচ্চা তার পায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন ভাবল হয়তো বিড়াল বাচ্চা কে সে দেখেছে।তাই সে বিড়াল কে তুলতে নিল হুট করেই তখন সুইমিং পুল থেকে কেউ ওর পা ধরে টান দিল। মেহেরিন সামলাতে না পেরে পানিতে পড়ে নিল। সে পানিতে মেহেরিন চেপে ধরল কারন মেহেরিন সাঁতার জানে না। মেহেরিন অনেকক্ষণ যাবত পানিতে হাবুডুবু খেতে লাগলা কিন্তু তার সাথে পেরে ঊঠলো না। একসময় মেহেরিন হার মেনে ছেড়ে দিল!
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৫
নির্ঝর তার মেহু পাখির পিছু করতে করতে সুইমিংপুলে এলো। কিন্তু মেহেরিন কে সেখানে পেলো না সে। দেখল তার বিড়াল বাচ্চা সুইমিংপুলের পাশে। নির্ঝর বিড়াল বাচ্চা টাকে কোলে তুলতে যাবে তখন দেখল মেহেরিন পানিতে ভাসছে। নির্ঝর দ্রুত পানিতে নেমে মেহেরিন কে ধরে উপরে তুলে আনল। মেহেরিন’র জ্ঞান নেই। নির্ঝর পাগলের মতো মেহেরিন কে ডাকতে লাগলো। নির্ঝর মেহেরিন’কে উল্টো করে শুইয়ে দিয়ে পিঠে চাপ দিতে লাগল যাতে তার পেট থেকে পানি বের হয়ে যায়। কিছুক্ষন এরকম করার পর পানি বের হলো কিন্তু মেহেরিন’র জ্ঞান ফিরল না। নির্ঝর তার কোলের মাঝে মেহেরিন কে নিয়ে তার হাত ঘসতে লাগল আর দা দা বলে চিৎকার করতে লাগল। নিহা কেও ডেকেছে কিন্তু ভেতরে গানের আওয়াজের কারনে কেউই তার ডাক শুনতে পারি নি। নির্ঝর মেহেরিন’র গাল ধরে বলতে লাগলো..
– মেহু পাখি এই মেহু পাখি কথা বলো না। মেহু পাখি তুমি মজা করছো নাকি। দেখো চিন্তা হচ্ছে হচ্ছে এবার। কথা বলো না এই মেহু পাখি!
কিন্তু মেহেরিন’র কোনো জবাব এলো না।সে মেহেরিন কে এখানে একা রেখেও যেতে পারছে না। সে এবার মেহেরিন’র পালস চলছে তবে খুব ধীরে ভাবে। নির্ঝরের চিন্তা এবার বাড়তে লাগলো। মেহেরিন’র হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। নির্ঝর আর কিছু না ভেবে মেহেরিন’র মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে লাগল। আবার হাত পাও ঘসতে লাগলো। আবারো শ্বাস দিতে লাগল আর বার বার হাত পা ঘষতে লাগলো। এক পর্যায়ে মেহেরিন’র জ্ঞান ফিরে এলো। জ্ঞান ফিরার পর নির্ঝর কে সে তার অনেক কাছে দেখতে পেলো। নির্ঝর তাকে শ্বাস দিচ্ছিল। মেহেরিন চট করে উঠে বসে কাশতে লাগল। নির্ঝর বুঝতে পারছে না মেহেরিন কি ভাবল। এদিকে ইহান মেহেরিন কে ডাকতে ডাকতে সুইমিংপুলের কাছে এসে পড়ে। দেখে মেহেরিন ভেজা অবস্থায় নির্ঝরের কোলে। ইহান এটা দেখা মাত্রই দৌড়ে ভিতরে গিয়ে সবাই কে ডেকে আবারো আসলো। অতঃপর দা এসে মেহেরিন কে কোলে তুলে ভিতরে নিয়ে গেল। ডাক্তার কে ডাকা হলো। সে এসে মেহেরিন কে চেক আপ করলো।
মেহেরিন এখন তার ঘরে রেস্ট নিচ্ছে। অভ্র, আহিয়ান, নীল আর নিশি সবাই ওখানে। নির্ঝর মাত্র চেঞ্জ করে বের হয়ে দেখে নিহা তার রুমে নক করছে। সে তোয়ালে নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে নিহা কে ভেতরে আসতে বলল। নিহা এসে মুচকি হেসে তাকে বলল..
– ধন্যবাদ নির্ঝর! আর তোর জন্য’ই আমার জান টা বেঁচে গেল।
– দি ও আমারও মেহু পাখি ভুলে যেও না। এখন কেমন আছে।
– ঠিক আছে ঘুমাচ্ছে। সবাই ওখানে!
– কিছু বলেছে কিভাবে এসব হলো।
– হুম কেউ ওকে টেনে সুইমিংপুলে পানিতে নিয়ে গেল। অতঃপর তার ডুবিয়ে মারতে চেয়েছিল। তুই কাউকে দেখেছিলে।
– না আমি কাউকে দেখেনি। আমি তোর ওর পিছু পিছু গিয়েছিলাম তখন ওকে পানিতে দেখি। কিন্তু দি এটা কিভাবে সম্ভব! কেউ একজন এখানে এই বাড়িতে এসেই মেহু পাখি কে মারার চেষ্টা করলো আর মেহেরিন কিছু করতে পারল না। আমি যতটুকু জানি ও তো এমন না। সবকিছুতেই পারদর্শী ও। তাহলে এটা..
– কারন একটাই অধরা খান!
– অধরা খান!
– নির্ঝর এটা তো তুই জানিস যে মেহেরিন’র সব অভ্যাস’ই আমার মায়ের মতো। মার সবকিছু নকল করতো ও। আমার মা যখন খুব ছোট ছিল তখন আমার নানা আর নানু মা কে নিয়ে সমুদ্রে ঘুরতে যায়। সেখানে আমার মায়ের সামনেই আমার নানু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর কারন আমার নানু সাঁতার জানতো না আর মা তখন এতোটাই ছোট ছিল যে সেও কিছু করতে পারি নি কিন্তু ওই পানিতে ডুবে মরাটা আমার মায়ের মনে ভয় সৃষ্টি করে দিয়েছিল যার কারনে আমার মা কখনো সাঁতার শিখতে পারে নি। আর মেহেরিন যেহেতু সবসময় মায়ের নকল করতো তাই সেও পানিকে খুব ভয় পেতে লাগলো। আর এই ভয়ের কারনে সেও কখনো সাঁতার শিখতে পারে নি। আর আমরাও কখনো জোর করেনি। সত্যি বলতে ওকে আমরা কখনোই জোর করতাম না। ও যা শিখেছে নিজের ইচ্ছায় কখনো কিছুতে জোর করা লাগে নি। কিন্তু কথা হলো ওর এই দুর্বলতা’র কথা ওর শত্রু রা জানল কিভাবে?
নির্ঝর ভাবতে লাগল সেদিন মেহেরিনকে খুব জোর করেই বিচে নিয়ে গিয়েছিল সে। মেহেরিন যেতে চায় নি তাহলে এটার কারন কি ওর এই ভয়। নিহা বলে উঠে..
– কি ভাবছিস!
– ভাবছি এখন কি করবে। সবাই জানে মেহেরিন বর্ষা খান’র কোনো দুর্বলতা নেই। কিন্তু এখন তারা যখন জেনেছে পানিতে ওর ভয় এই সুযোগ কি তারা ছেড়ে দিবে ভেবেছো।
– জানি কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু..
তখন ডেভিল এসে উপস্থিত হলো। নিহা তাকে জিজ্ঞেস করল..
– কোন খবর পেলে কে এসেছিল।
– না ম্যাম এরকম কিছু পায়নি।
– পাও নি মানে! এটা কিভাবে হতে পারে। কেউ না কেউ তো এসেছিল তাই না। নাহলে মেহেরিনকে কে মারার চেষ্টা করবে। সিসি টিভি ফুটেজ এ কাউকে দেখতে পাও নি।
– ম্যাম আসলে..
– কি?
– সিসি টিভি ফুটেজ তখনকার জন্য বন্ধ ছিল।
নির্ঝর উঠে দাঁড়িয়ে বলল..
– কি বললে এটা কিভাবে সম্ভব। তোমরা কোথায় ছিলে?
– ম্যাম এটা হ্যাক করে বন্ধ করা হয়েছিল।
নিহা রেগে পাশে থাকা টি টেবিলে জোরে লাথি মেরে বলল..
– কি হচ্ছে কি এসব। একজন এই বাড়িতে ঢুকে আমার বোনের উপর আক্রমণ করল কিন্তু তার কোনো প্রমান নেই এটা কিভাবে সম্ভব!
– দি শান্ত হও।
– কি করে শান্ত হবো তুই বল। কি করে..
– আচ্ছা দি হতেও তো পারে এটা বাড়ির কারোর কাজ!
নিহা ভ্রু কুঁচকে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে..
– তুই ক্যাট’র কথা বলছিস!
– না মানে দি ও তো এরকম আগেও করতে চেয়েছিল!
– নির্ঝর সেটা আগে এখন না। আর আমি ওকে দেখেছি পার্টির পুরোটা সময় রাইয়ান কে কোলে নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছে ও। এছাড়াও আগের ক্যাট আর এখনকার ক্যাট এর মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। ক্যাট এমনটা করবে না।
– তাহলে ভুলে যাও এইকথা।
– মানে!
– মানে দেখো কে এমনটা করেছে এটা জানো না আর না পেলে কোন প্রমান তাহলে এটার কথা ভেবে লাভ কি যেটার কোনো খোঁজ’ই তুমি পাবে না।
– তাহলে কি বসে থাকবো।
– আমি কখন বললাম এই কথা। অন্য কিছু ভাবো। মেহু পাখি’র এই ভয় দূর করো। ওকে সাঁতার শেখাও যাতে ওর শত্রুরা ওর এই দুর্বলতা কে কাজে লাগাতে না পারে।
– এটার চেষ্টা যে করি নি তা না কিন্তু..
– দি তাহলে এটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।
– তুই! তুই পারবি এটা করতে..
– কেন পারবো না আমি জানি মেহু পাখি কে কিভাবে সাঁতার শেখাতে হবে। এতো দিনে এতটুকু হলেও ওকে চিনেছি আমি।
– ঠিক আছে তাহলে দেখ যদি পারিস!
জবাবে নির্ঝর বাঁকা হাসি দেয়।
.
দুদিন পর..
মেহেরিন ঘুমিয়ে ছিল, হঠাৎ করেই তার মনে হলো সে পানিতে ভাসছে। সাথে সাথে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে সে সুইমিংপুলে! তার চারপাশে শুধু পানি আর পানি। মেহেরিন এবার চিৎকার করে অভ্র’কে ডাকতে লাগলো। অভ্র তার ডাক শুনে দৌড়ে আসতে নিল তখন নির্ঝর তাকে আটকে দিল। মেহেরিন হাবুডুবু খেতে খেতে অভ্র কে ডাকতে লাগলো। তখন নির্ঝর কফি হাতে নিয়ে তার কাছে এসে তার দিকে একটা সুইমিং রিং ফেলে বলে…
– এই ধরো ডুববে না তুমি!
মেহেরিন কোনোমতে সেটা ধরে ভেসে থাকে। কিন্তু তবুও ডাকতে থাকে অভ্র কে। নির্ঝর বলে উঠে..
– চিৎকার করা বন্ধ করো, ডুববে না তুমি!
– আপনি..( তখন অভ্র এসে পড়ে ) দা আমাকে বের করো এখান থেকে। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি থাকতে পারছি না এখানে!
– কেন তুমি নিজে বের হয়ে এসো।
– আমি সাঁতার কাটতে পারি না জানেন না আপনি।
– তো কি হয়েছে। তোমার কাছে তো সুইমিং রিং আছে। সেটা ধরে বেরিয়ে আসো।
– পারবো না। দা এখনো তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবে।
নির্ঝর বলে উঠে..
– এতো ভিতু কেন তুমি। ডুবে যাবে নাকি। সব ধরনের সার্পোট দিচ্ছি তাও বেরিয়ে আসতে পারছো না।
মেহেরিন এবার চুপ হয়ে গেল। নির্ঝর এবার হেসে বলতে লাগল..
– আমি জানতাম মেহেরিন বর্ষা খান কোন কিছু তেই ভয় পায় না কিন্তু তুমি তো দেখছি অনেক বেশি ভিতু হয়ে গেছো। সাঁতার একটা সহজ জিনিস আর এটা শিখতে পারো না।
– না জেনে কিছু বলতে নেই জানেন না।
কফির মগে চুমুক দিয়ে..
– জানি আমি সব!
– তারপরও এই কথা কেন বলছেন! অপমান করছেন আমাকে!
– অবশ্যই! মেহেরিন বর্ষা খান এই সহজ একটা জিনিস পারে না ব্যাপারটা একটু হাস্যকর নয় নাকি!
– আপনি পারেন!
– অবশ্যই এই সহজ একটা জিনিস আমি পারবো না কেন। তোমার মতো আর ভিতু নই আমি।
– বার বার ভিতু বলবেন না আমায়।
– আচ্ছা বলবো না তাহলে প্রমাণ করো আমায়!
– কি প্রমাণ!
– আমার সাথে Swimming race Competition করো। আর যদি তুমি হেরে যাও তাহলে মেনে নিবে যে তুমি ভিতু
– আর যদি জিতে যাই তখন..
– যা চাইবে তাই হবে!
মেহেরিন বাঁকা হাসি দিয়ে বলল..
– তাহলে তৈরি হন। ঠিক এক সপ্তাহ পর আপনার আর আমার সুইমিং রেস হবে। আর আপনাকে আমি দেখিয়ে দেবো মেহেরিন বর্ষা খান আসলে কি!
– আমিও অপেক্ষায় থাকবো!
বলেই কফি মগে চুমুক দিয়ে নির্ঝর চলে যায়। তখন অভ্র এসে মেহেরিন কে পুল থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
#চলবে….