#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪
নির্ঝর মেহেরিন কে পেছন থেকে ডাক দেয়। কিন্তু মেহেরিন সাড়া দেয়। নির্ঝর দৌড়ে মেহেরিন’র সামনে এসে দাঁড়ায়। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলে..
– এটা কোন ধরনের বেয়াদবি।
– আসলে এটা কোন ধরনের বেয়াদবি, কখন থেকে ডাকছি সাড়া দেও নি কেন।
– আমার ইচ্ছা তাই!
– আমার ও ইচ্ছা হলো তোমার সামনে এসে দাঁড়াবো তাই আমিও দাঁড়ালাম।
মেহেরিন কিছু না ইগনোর করে পাশ দিয়ে চলে যায়। নির্ঝর আবারও দৌড়ে মেহেরিন’র পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলে..
– কথায় কথায় এতো রাগ করো কেন বুঝি না।
– আপনার এতো বুঝে কোনো কাজ নেই।
– আচ্ছা এটা তো বলো গান টা কেমন লাগলো।
– কার গান?
– কার গান মানে আমার গান!
– আপনার গান আমি আবার কখন শুনলাম?
– ইশ একটু আগেই দেখলাম টুল’র ওপর দাঁড়িয়ে আবার গান শুনলে তুমি।
– এক্সকিউজ মি! আমি আপনার গান শুনতে যায় নি, এটা আমার প্রিয় শুধু এটা জানতে গিয়েছিলাম গান টা কে গাইছে ।
– ওই তো একই!
– না এক না আপনি একটা কপিবাজ। আমার প্রিয় গান টা কপি করে নিজে গেয়েছেন, আবার কথা বলছেন।
– ইশ কি বলো যে তুমি।
– আসলেই আপনার সাথে কথা বলে লাভ নেই।
– আরে আছে আছে অনেক লাভ আছে কিন্তু তুমি বুঝতেই চাইছো না।
– বোঝার ইচ্ছে নেই।
বলেই মেহেরিন গাড়িতে উঠে বসল। নির্ঝর গাড়ির দরজা ধরে ফেলল।মেহেরিন বলে উঠে…
– কি চাই আপনার!
– চাই তো অনেক কিছু কিন্তু কথা হলো তুমি ঠিক কতোটা দেবে আমায়।
– বাজে কথা বাদ দিন।
– না বাজে কথা না একটা সিরিয়াস কথা বলতে এসেছি।
– আপনি আবার সিরিয়াস কথা।
– শোন তো জানো আমাদের আবার দেখা হবে।
– কোনো ইন্টারেস্ট নেই আপনার সাথে দেখা হবার।
– এখন নেই তো একদিন তো হবে।
– আশা করবো তা যেনো না হয়!.
বলেই মেহেরিন গাড়ির দরজা আটকে চলে যায়। নির্ঝর সেখানে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে…
– তুমি না চাইলেও আমাদের আবারও দেখা হবে মেহু পাখি!
বলেই বাঁকা হাসি দেয় নির্ঝর!
.
মেহেরিন গাড়ি থেকে নেমেই রেগে বাসায় ঢোকে। তাকে দেখে সবাই অনেকটা অবাক হয়। মেহেরিন এসেই ধপাস করে সোফায় বসে জোরে জোরে বলে..
– পানি দাও আমি পানি খাবো।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– কি হলো রেগে আছিস কেন?
– এমনেই মন চাইলো তাই।
ইহান বলে উঠে..
– আরে মেজাজ তো দেখি আজ তিরিক্ষি। কি হয়েছে?
– কি হয়েছে শুনবি কি হয়েছে….. ( সব ঘটনা বললো )
কাব্য সব শুনে বলে উঠে..
– নিরবের এতো সাহস ও আবার তোকে ঝালাচ্ছে।
– নিরবের টা বাদ দে ওই ছেলেটা কি জানি নাম.. ধুর মনেও পড়ছে না যাই হোক জানিস তার স্বভাব কেমন লেজ কাঁটা ব্যাঙ এর মতো।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– জান ব্যাঙ’র কি লেজ থাকে।
– থাকে না বলেই তো সে লেজ কাঁটা ব্যাঙ। আর এই নামটা ওই ছেলেটার সাথেই মানায়। জ্বালিয়ে মারল আজ আমাকে।
ইহান বলে উঠে..
– তাহলে আজ মেহেরিনও কারো কাছে জব্দ হলো কি বলো।
– হুহ
বলেই মেহেরিন রেগে ঘরে চলে গেল। ঘরে এসেই তার বিড়াল কে খেলতে বসে পড়ল। অতঃপর সে তার বিড়াল কে আজকের সব ঘটনা খুলে বলল। মেহেরিন বলে উঠে..
– তুই বল তো বিড়াল বাচ্চা এখানে সবাই আমাকে নিয়ে কেন হাসছে? দোষ কি আমার! দোষ তো ওই লেজ কাটা ব্যাঙ টার। আজ সারাটা দিন শুধু আমার পিছনেই লেগে ছিল। হুহ!
এদিকে বিড়াল মশাই কিছু না বুঝতে পেরে মিয়াও মিয়াও করতে লাগলো। মেহেরিন আবারো তাকে লোকে নিয়ে একগাদা গল্প করতে শুরু করল।
.
রাতে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে জেলখানার গারদের বাইরে। কারো সাথে দেখা করতে এসেছে সে। গারেদের দরজা খুলার পর মেহেরিন ভেতরে ঢুকল। ক্যাট জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় বসে আছে মেঝেতে। চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে, ফর্সা মুখের হাল আজ বেহাল। মেহেরিন কে দেখে ক্যাট উঠে দাঁড়াল। অবাক হয়ে বলে উঠল..
– তুমি এখানে!
– দেখতে এলাম তোমায়!
ক্যাট তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে..
– ভালোই আছি। কিছু বলবে!
– হুম তুমি চাইলে পালাতে পারতে এখান থেকে পালাও নি কেন?
ক্যাট আবার ও হেসে বলল..
– বাইরে গেলে বাঁচতে পারবো না, তারা কেউ আমাকে বাঁচতে দিবে না এখানে আছি ভালো আছি।
মেহেরিন মুচকি হেসে বলে..
– বেঁচে থাকার অনেক ইচ্ছা দেখছি তোমার।
জবাবে ক্যাট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেহেরিন আবারো বলে উঠে..
– এখনো বাঁচতে চাও কেন?
– জানি না তবে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে। হয়তো কিছু আছে আমার জন্য!
– ভালোবাসতে কাব্য কে?
ক্যাট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে..
– এখনো বাসি! জীবনে প্রথমবার কাউকে ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু হয়তো আমার পাপের কারনে আল্লাহ তাকে আমার ভাগ্য থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
মেহেরিন মৃদু হেসে বলে..
– আল্লাহ চাইলে সবকিছুই পাওয়া যায় আবার কিছুই পাওয়া যায় না। যদি তোমার ভাগ্যে কিছু থাকে তাহলে তুমি পাবে।
বলেই চলে যায় মেহেরিন। ক্যাট দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে রাখে, দু ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে তার চোখ থেকে।
.
বাসায় আসার পর মেহেরিন কয়েকবার বাসার কলিং বেল বাজাতে লাগলো। কিন্তু কেউ এসে দরজা খুলল না। মেহেরিন ফোন ও করল কিন্তু ফোন কেউ ধরল না। মেহেরিন’র কেমন একটা সন্দেহ হলো। সে গান টা বের করে দরজা হাত দিতেই তা খুলে গেল। মেহেরিন মিটি মিটি পায়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল। বসার ঘরে প্রবেশ করতেই হুট করে সব লাইট জ্বলে উঠলো। অনেক বেলুন ফুটল তার সাথে আরো আওয়াজ মেহেরিন লাফিয়ে উঠল। অতঃপর মেহেরিন সামনে তাকিয়ে দেখে শান্ত আর অরনি হাতে বেলুন নিয়ে তাকে দেখে লাফিয়ে লাফিয়ে বলছে..
– হ্যাপি বার্থডে খালামনি, হ্যাপি বার্থডে ফুফুজান!
মেহেরিন একটু চমকে উঠলো। অতঃপর সবাই এসে তাকে উইস করল। ডেভির ও এসে তাকে উইস করল। শুভ্র খান ভিডিও কল করে তাদের সাথে যোগ দিলেন। অতঃপর মেহেরিন কেক কাটল সবাই হাততালি দিলো। দা অ্যানাউসমেন্ট করলেন কালকে বার্থডে উপলক্ষে বাসায় অনুষ্ঠান থাকবে। একথা শুনে মেহেরিন খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। সে রাতে আর কারো ঘুম হলো না। হৈ চৈ করে সবাই রাত পার করে দিলো।
.
পরেরদিন কেউই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে পারে নি। সবার ঘুম ভাঙতে ভাঙতে দুপুর হতে চলল তবে মেহেরিন’র ঘুম ভাঙতেও তার মতো আলসেমি করল। সে অনুষ্ঠানের ঠিক দু’ঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠলো।
উঠে দেখে পুরো বাড়িতে মানুষ কাজ করছে। সবাই কাজে ব্যস্ত। শান্ত আর অরনি কয়েকটা জামা এনে মেহেরিন কে বলছে কোনটা পড়বে। মেহেরিন তাদের জামা পছন্দ করে দেওয়ার পর তারা নাচতে নাচতে চলে যায় তৈরি হবার জন্য। মেহেরিন এসে সোফায় বসে সবার কাজ দেখতে থাকে। তখন দা আসে মেহেরিন’র জন্য খাবার নিয়ে। মেহেরিন কে খাওয়াতে থাকে সে।
যথারীতি সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়, একে একে সব মেহমান আসতে থাকে। নিহা আর নিশি মেহেরিন কে নিয়ে আসে। একটা মেরুন রঙের গাউন পরা সে। ভারী মিষ্টি লাগছে দেখতে তবে মুখে কোনো সাজ নেই। মাথার চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে। পার্টির থিম হিসাবে সবাইকে পার্টি মাস্ক পড়তে হয়। মেহেরিন ও একটা পার্টি মাস্ক পরে নেয়। প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই অনুষ্ঠান চলতে থাকে। হঠাৎ করেই লাইট সব অফ হয়ে যায়। একটা লাইট জ্বলে উঠে, কতো গুলো মেয়ে আর তাঁদের সাথে তাদের পার্টনার প্রবেশ পরে মনে হচ্ছে তারা নাচতে এসেছে। গানের সুর বাজতে থাকে। একটা ছেলে প্রবেশ করে। মেহেরিন তাকিয়ে আছে তার দিকে। একটা ব্লাক রঙের কুর্তা পড়া। তার মুখেও মাস্ক। সে মাইক নিয়ে গান গাইতে শুরু করে..
Bulave tujhe yaar aaj meri galiyan
Basaun tere sang main alag duniya
Bulave tujhe yaar aaj meri galiyan
Basaun tere sang main alag duniyaa
Na aayein kabhi dono mein zara bhi faasle
Bas ek tu ho, ek main hoon aur koyi na
Hai mera sab kuch tera tu samajh le
Tu chaahe mere hakk ki zameen rakh le
Tu saanson pe bhi naam tera likh de
Main jiyu jab jab tera dil dhadke
সবাই নাচতে শুরু করে। ইহান এসে নিশি কে নিয়ে নাচতে যায় তো কাব্য এসে মেহেরিন কে টেনে নিয়ে নাচতে যায়। সবাই একসাথে নাচতে থাকে তবে এখানে মেহেরিন’র তাকিয়ে থাকে সেই ছেলেটার দিকে। কেন জানি তাকে চেনা চেনা লাগছে তার কাছে। হুট করেই সবাই তার পার্টনার কে ঘুরিয়ে দেয়। মেহেরিন এসে পড়ে সেই ছেলেটার কাছে। ছেলেটা গান গেতে গেতে মেহেরিন হাত ধরে তাকে নিয়ে নাচতে থাকে। মেহেরিন তার ঘাড়ে হাত দিয়ে নাচছে আর তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। কোথাও যেন দেখেছে এই চোখ সে। দুজনেই এভাবে নাচতে থাকে। দূর থেকে আহিয়ান আর নিহা দেখতে থাকে তাদের। আহিয়ান বলে উঠে..
– এই তাহলে সে!
– হুম!
– তুমি ইচ্ছে করেই নিশি ওদের পাঠালে নাহ যেন তারা একসাথে নাচতে পারে।
নিহা হেসে বলে..
– যখন ব্যাংকক এ ছিলাম তখন ওর বার্থডে ছিল। গিফট হিসাবে সে মেহেরিন’র সাথে নাচতে চেয়েছিল। তাই আর কি!
– যেমন বোন তারও তেমন’ই বোন। তবে যদি মেহেরিন জানতে পারে কি হবে!
– কি হবে?
– দেখোই না তোমার বোন কি করে!.
– আমার বোন তো যা করবে ধামাকাই করবে।
– আসলেই করবে!
.
নাচ শেষ হয়, ছেলেটা মেহেরিন’র কোমরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন’র হাত তার ঘাড়ে। মেহেরিন ইচ্ছে করেই তার ঘাড়ে হাত রেখেছে কারন সে তার মাস্কের ফিতা খুলছে। এদিকে সে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এর মধ্যেই মাস্ক টা খুলে যায়। মেহেরিন তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে! অতঃপর…
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫
মেহেরিন তাকে দেখে চমকে উঠে। অতঃপর তাড়াতাড়ি করে দূরে সরে গিয়ে বলে…
– আপনি! আপনি এখানে কি করছেন!
এমন একটা পরিস্থিতি দেখে সবাই দৌড়ে আসে মেহেরিন’র কাছে। দা বলে উঠে..
– কি হয়েছে আদুরী!
– দা তুমি জানো এই ছেলেটা…
বাকি কথা বলার আগেই দা বলে উঠে..
– তোমার দি প্রাণ বাঁচিয়েছে, যখন ব্যাংকক এ তোমার দি এর ওপর হামলা হয়েছিল তখন নির্ঝর তাকে বাঁচিয়েছে!
মেহেরিন এই কথা শোনার পর কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। সে হা হয়ে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। এদিকে নির্ঝর তার দিকে হেসে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে..
– ধন্যবাদ আমার দি’র প্রাণ বাঁচানোর জন্য!
– ওয়েলকাম তবে এটা আমার কর্তব্য ছিল।
মেহেরিন আর কিছু না বলে হেসে এক পাশে চলে আসে। তার পিছু পিছু রোদ্দুর,ইহান আর কাব্য ও চলে আসে। এদিকে বাকি সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মেহেরিন এসব দেখে বেশ রাগ হচ্ছে। এতো ইম্পর্ট্যান্টেস কেন দিচ্ছে সবাই তাকে এটা তার সহ্য হচ্ছে না। এদিকে রোদ্দুর কানের কাছে এসে বলে…
– আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই ছেলেটাকে তোর সহ্য হচ্ছে না।
ইহান বলে উঠে..
– কে ওই নির্ঝরকে।
কাব্য বলে উঠে..
– নির্ঝর না বল লেজ কাঁটা ব্যাঙ
– কি সত্যি জান এটাই তবে সেই লেজ কাঁটা ব্যাঙ! চল এখন’ই ছেলেটাকে ধরি।
মেহেরিন বলে উঠে..
– না বাদ দে।
– কেন বাদ দেবো কেন?
– কারন ও দি এর প্রাণ বাঁচিয়েছে তাই।
– হ্যাঁ সেটাও তো ঠিক কথা কিন্তু তাই বলে এখন তুই সহ্য করবি ওকে।
– না চাইলেও করতে হবে।
বলেই মেহেরিন সেখান থেকে চলে এসে একটা সফট ড্রিংক নেয়। সেটা মুখে দিতে যাবে তখন কেউ তার কানের কাছে গুন গুন করতে থাকে…
“কথা হবে দেখা হবে,
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে,
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না”
মেহেরিন জানে এটা নির্ঝর, তাই সে বিরক্ত মুখে তাকিয়ে বলে…
– আমার কানের কাছে মাছির মতো ভন ভন কেন করছেন!
নির্ঝর ভাব নিয়ে বলে উঠে…
– তুমি মিষ্টি নাকি যে আমি মাছি হয়ে তোমার ওপর ভন ভন করবো।
– তাহলে!
– গানের লাইন গুলো শোনাচ্ছিলাম তোমায়!
– ওহ আচ্ছা অনেক ধন্যবাদ!
– ওয়েলকাম এখন বলো জানতে চাইবে না কেন শোনাচ্ছি।
– এসেছেন যখন এটাও বাকি রাখবেন কেন বলে ফেলুন।
– আসলে কি বলোতো এই গানের লাইন অনুযায়ী তোমার আর আমার অনুভূতি আজ ঠিক এমন ছিল।
– যেমন!
– এই ধরো আমাদের সকালেই দেখা হলো আবার এখনো দেখা হলো, প্রেম ও হলো! নাচের সময় আমরা এতো কাছাকাছি ছিলাম। দুজন দুজনেল চোখের দিকে তাকিয়েছিল কি রোমান্টিক ছিল কিন্তু…
– রোমান্স হলো না এই তো!
– হ্যাঁ গানের লাইন অনুযায়ী তেমন’ই তো।
– আপনি জানেন আমার লাইফে সবচেয়ে বাজে একটা যুক্তি আমি আজ শুনলাম।
বলেই মেহেরিন চলে যেতে নিলে আবারও ব্যাক করে বললো….
– বাই দ্যা ওয়ে আমার আর আপনার প্রেম কখন হলো!
– হায় হায় এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে সকালেই তো ভালোবাসি বললে!
মেহেরিন নির্ঝরের কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে বলল…
– খুব স্মার্ট সাজছেন নাহ, শুধু দি’র জান বাঁচিয়েছেন বলে নাহলে এতোক্ষণে আপনার জান নিয়ে নিতাম।
– সেটা তো অনেক আগেই নিয়েছো মেহু পাখি!
– মেহু পাখি!
– হুম তুমি আমার মেহু পাখি!
মেহেরিন বিড় বিড় করে বলে…
– আমার নামের বারো টা বাজিয়ে দিয়েছে!
– কিছু বললে?
– নাহ কি আর বললো, যা ইচ্ছা বলে ডাকেন কতোদিন আর ডাকবেন।
– আজীবন ডাকবো,আমার শেষ নিঃশ্বাস অবদি।
মেহেরিন বাঁকা হেসে বলে..
– সেই শেষ দিন কবে চলে আসে বলুন!
নির্ঝর মুচকি হেসে বলে..
– তোমার মুখে ধমকানি শুনলেও আমি তার প্রেমে পড়ে যাই।
– ভালোই ফ্লার্ট করতে পারেন দেখছি।
– তোমার কাছে যা মনে হয় তাই!
– বাট ইউ নো মিঃ ওয়াটএভার ইয়াপ মিঃ লেজ কাঁটা ব্যাঙ আপনার কথায় আমি পটছি না।
নির্ঝর কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলে..
– তো আর কি আমিও চেষ্টা করি।
– করতে থাকুন।
বলেই মেহেরিন চলে যায়। পার্টি এখনো চলতে থাকে। এরমধ্যে ডেভিল একটা গিফট নিয়ে এসে বলে..
– ম্যাম নিরব স্যারা পাঠিয়েছে!
মেহেরিন গিফট’র দিকে তাকিয়ে বলে…
– ফেলে দাও!
অতঃপর চলে যায় কিন্তু নির্ঝর এসব দূর থেকেই দেখে। তখন ভার্সিটিতে ওর নিরবের কথা মনে। এই নিরব কে দেখতে পারে না মেহেরিন। এসব ভাবনার ছেদ ঘটে যখন নিহা এসে ওর ঘাড়ে হাত রাখে। নির্ঝর তাকিয়ে দেখে নিহা, নীল, রোদ্দুর, কাব্য এসেছে।
নিহা বলে..
– কি ভাবছিস এতো মনোযোগ দিয়ে!
নির্ঝর একটু ভাব নিয়ে বলে..
– তোমার বোন মানে নিজের বউ এর কথা!
নীল বলে..
– হবু বউ আর বউ হবে কি না সেটাও নিশ্চিত না।
নির্ঝর খানিকটা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে..
– ভাইয়া অভিশাপ দিয়ো না।
– অভিশাপ না অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। বোন তো আমার আমি জানি।
নিহা বলে..
– দেখা করেছিস
– হুম করেছি ইনফেক্ট কথাও বলেছি।
নীলের নির্ঝরের গাল এদিক ওদিক করে বলে..
– চড় খেলি কয়টা?
নির্ঝর করুণ চোখে নিহা’র দিকে তাকায়। নিহা হেসে বলে..
– চড় খেলে এতোক্ষণে এখান থেকে বের হয়ে যেত।
কাব্য বলে উঠে..
– শুধু তোমায় বাঁচিয়েছে বিধায় এখনো এই বাড়িতে আছে নাহলে গতকাল যা করলো!
– গতকাল! কি করেছে গতকালকে!
রোদ্দুর গতকালের সব কাহিনী বলে। নিহা অবাক হয়ে নির্ঝরের দিকে তাকায়। নির্ঝর নাটক করে লজ্জা মাখা মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। নীল বলে..
– দি তুমি ঠিক ছিলে এটাকে দিয়ে হতে পারে।
নির্ঝর ভাব নিয়ে বলে..
– হতে পারে না হবে, দেখে নিও তোমার বোন কে বিয়ে করে তোমার সামনে দিয়ে নিয়ে যাবো।
নিহা বলে..
– আগে করো তখন দেখে নিবো ঠিক আছে।
জবাবে নির্ঝর বাঁকা হাঁসি দিলো। দেখতে দেখতে অনুষ্ঠান এখন শেষ। একে একে সবাই বিদায় নিলো শুধু নির্ঝর বাদে। সবাই বসে নির্ঝর’র সাথে কথা বলছে। নির্ঝর কোলে অরনি কে নিয়ে সবার কথার উত্তর দিচ্ছে। কারো জেনো কথা শেষ’ই হচ্ছে না। শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন একে একে সবাই নির্ঝর’র চোদ্দ গুষ্টির খবর নিচ্ছে তো এখানে মেহেরিন বসে তার চোদ্দ গুষ্টিকে উদ্ধার করছে। মেহেরিন শুধু আড়চোখে বার বার দেখছে তাকে। একবার তাকে দেখছে তো একবার ঘড়ি কে দেখছে। কাব্য, রোদ্দুর আর ইহান মিলে মেহেরিন’র কান্ড দেখছে। মুখে বিড় বিড় করছেই তো করছে। এই প্রথম এমন হলো যে মেহেরিন’র যা পছন্দ না সবার সেটাই পছন্দ। তাই রাগে মেহেরিন কিছু বলতেও পারছে না।
রাত ১২ টা বাজতেই ঘড়িতে শব্দ হবার আগেই মেহেরিন দাঁড়িয়ে গেলো। বলতে লাগল…
– ১২ টা বেজে গেছে আপনি বাসায় যাবেন না অনেক রাত হয়েছে তো!
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। আহিয়ান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বলে..
– হ্যাঁ তাই তো নির্ঝর অনেক রাত হয়ে গেছে। আচ্ছা ভালো কথা তোমার তো কেউ নেই এখানে তো কোথায় থাকো তুমি!
– জিজু একটা হোটেলে থাকি।
– ওহ যেতে পারবে এতো রাতে!
নিহা বলে উঠে..
– কি বলছেন এইসব এতো রাতে কোথায় যাবে ও। নির্ঝর তুমি বরং আজ রাতে আমাদের বাসায় থাকো। কি বলো দা!
অভ্র বলতে যাবে তার আগেই আনহা বলে উঠে..
– রাখো তোমার দা এর কথা নির্ঝর তুমি আজ এই বাড়িতেই থাকবে।
মেহেরিন হা হয়ে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। কি বলছে কি সবাই এইসব। এতো সহজে এই ছেলেটা সবার প্রিয় কিভাবে হতে পারে। মেহেরিন নির্ঝর দিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেল। নির্ঝর বেশ বুঝতে পারল মেহেরিন ক্ষেপে আছে। এদিকে মেহেরিন ঘরে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণের মধেই ঘুমিয়ে পড়ল সে। খানিকবাদে নিহা আর নিশি আসল মেহেরিন’র রুমে। তাকে এভাবে ঘুমাতে দেখে নিহা হেসে তার গায়ে ওপর চাদরটা দিয়ে দিলো। অতঃপর দুই বোন মিলে তার কপালে চুমু খেয়ে চলে এলো।
সকালে মেহেরিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে আসল। যদিও সে ফ্রেশ হয়েছে তবুও তার চোখে ঘুমের রেশ। মেহেলিন ঢুলতে ঢুলতে এসে বলল..
– কফি দাও আমার!
মেহেরিন কে কফি দেওয়া হলো, সে কফিটা নিতে যেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর তার দিকে হেসে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও মেহেরিন এটা নিজের চোখের ভুল ভাবল।সে বলে উঠে..
– কি একটা ছেলেরা বাবা, মাথায় যেন একদম গেধে আছে যেখানে তাকায় শুধু এই লোকটাকেই দেখতে পাই।
বলতে বলতে মেহেরিন কফি টা মুখে দিল। কথা শুনে নির্ঝর বলে..
– বাহ এতো ভালোবাসো আমাকে মেহু পাখি। যেখানে তাকাও সেখানেই দেখতে পাও আমাকে!
নির্ঝরের কথা শুনে মেহেরিন মুখ থেকে কফি টা পড়ে যায়। সে বড় বড় চোখ করে দাঁড়িয়ে আছে নির্ঝরের সামনে। নির্ঝর তার সামনে চুটকি বাজিয়ে বলে..
– এতো কি দেখছো আমার মাঝে!
মেহেরিন চেঁচিয়ে বলে..
– আপনি এখানে?
– তো আর কার আশা করেছিলে?
– কি করে এটা সম্ভব, আপনাকে তো রাতে থাকার কথা বলা হয়েছে আপনি সকালে কি করছেন?
নিহা বলে উঠে..
– সকালে থাকতে বলেছি তাই!
মেহেরিন নিহা’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– রেডি হয়ে আসছি ভার্সিটি যাবার সময় হয়ে গেছে।
অতঃপর মেহেরিন তৈরি হয়ে আসার পর সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসে। নির্ঝর তাকিয়ে দেখে অভ্র খাইয়ে দিচ্ছে মেহেরিন কে। সে এটা দেখে খানিকটা অবাক হয়। অতঃপর ভার্সিটিতে যাবার জন্য মেহেরিন বের হতে যাবে তখন হুট করে..
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৬
ভার্সিটিতে যাবার জন্য মেহেরিন বের হতে যাবে তখন হুট করেই নির্ঝর তার সামনে এসে দাঁড়ায়। মেহেরিন তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে…
– হুট হাট করে এভাবে সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি?
– একটু হেল্প লাগবে তোমার, প্লিজ না করো না খুব জরুরি!
– কি?
– আমার গাড়িটা চলছে না প্লিজ আজকেও আমাকে লিভ দাও।
– আজ আবার কি হলো?
– বুঝতে পারছি না চলছেই না আর এভাবে তুমি আর আমি তো এক জায়গায় যাবো তাহলে…
মেহেরিন কিছু না বলেই চলে যায়, নির্ঝর এর মানে হ্যাঁ বুঝে যায়। তাই সেও মেহেরিন’র পিছু পিছু যেতে নেয় তখন হঠাৎ তার সামনে রোদ্দুর আর নিশি এসে দাঁড়ায়। নির্ঝর খানিকটা অবাক হয়ে বলে..
– কি হয়েছে নিশি?
নিশি হেসে বলে..
– এটা তো তুমি বলবে!
[ যেহেতু নির্ঝর আর নিশি এক বয়সের তাই সে নিশি কে নাম ধরেই ডাকে ]
নির্ঝর ঠিক বুঝতে পারে না। তখন রোদ্দুর আর নিশি তার চারদিকে ঘুরতে থাকে। অতঃপর রোদ্দুর বলে উঠে..
– হাম হাম গাড়ির টায়ার পাংচার হয়ে গেছে !
নিশি বলে উঠে..
– কে করেছে করেছে?
রোদ্দুর বলে উঠে..
– কে আবার মেহেরিন’র মিঃ লেজ কাঁটা ব্যাঙ করেছে!
নিশি হেসে হেসে বলে উঠে..
– আমরা কিভাবে দেখেছি?
– কিভাবে আবার বাড়ির বাইরে যে সিসি টিভি ক্যামেরায় আছে সে সেটা ভুলেই গেছে!
নিশি হেসে উঠে! নির্ঝর যে ফেঁসে গেছে এটা বুঝতে তার বেশি সময় লাগে না। সে গম্ভীর হয়ে বলে..
– কি চাই!
নিশি আর রোদ্দুর একসাথে বলে..
– ট্রিট চাই!
নির্ঝর শান্ত ভাবেই বলে..
– ঠিক আছে পেয়ে যাবে কিন্তু..
নিশি বলে উঠে..
– নো টেনশন মেহেরিন জানবে না।
– ভিডিও ডিলেট করি নি তবে লুকিয়ে রেখেছি।
নির্ঝর করুণ ভাবে তাকিয়ে বলে…
– প্লিজ মেহেরিন কে কিছু বলিস না নাহলে আমায় আর আস্ত রাখবে না।
নিশি নির্ঝরের কপালে হাত রেখে বলে..
– ঠিক এখান বরাবর গুলি করবে।
নির্ঝর একটা শুকনো ঢোক গেলে। অতঃপর বাইরে থেকে গাড়ির হর্ন’র আওয়াজ আসে। নির্ঝর আর দেরি না করে দৌড়ে চলে যায়। দেখে মেহেরিন ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। নির্ঝর মেহেরিন’র পাশে বসে পড়ে। অতঃপর মেহেরিন গাড়ি স্টার্ট দেয়।
পুরো রাস্তায় নির্ঝরের বকবক শুনে মেহেরিন এখন ক্লান্ত। কিভাবে এতো কথা বলে এটা ভেবেই মেহেরিন’র অবাক লাগে। তবুও মেহেরিন কিছু বলে না। কারন নির্ঝরকে তার সহ্য করতে হবে। সে ঋণী তার কাছে। অতঃপর ভার্সিটিতে এসে পড়ে দুজনেই। মেহেরিন গাড়ি থেকে নামতেই নিরব দৌড়ে আসে মেহেরিন’র কাছে।নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে দেখে নিরব মেহেরিন’র হাত ধরে রেখেছে। এটা দেখেই নির্ঝরের খুব রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে নিরবের হাত টাই ভেঙে দিতে। সে রেগে তাকিয়ে আছে নিরবের দিকে। কিন্তু এখানে মেহেরিন তাকে কিছু বলছে না এটার কারন কি? মেহেরিন নিরবের থেকে হাত সরিয়ে নেয়।
নির্ঝর খেয়াল করল নিরবের হাতে ব্যান্ডেজ করা। কাহিনী টা কি হলো এখানে। এসব ভাবতে ভাবতে নিরব আর মেহেরিন চলে গেল।
.
এদিকে নিশান সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে নিশি’র জন্য কিন্তু তার আশার কোনো নাম গন্ধ কিছু নেই। এক পর্যায়ে নিশান রেগে নিশিকে কল করে। নিশি তার কলও কেটে দেয়। নিশান এতে আরো রেগে যায়। সে এখন কলের উপর কল দিতেই থাকে। কিন্তু নিশি কল তুলে না। অতঃপর খানিকপরেই নিশি’র গাড়ি এসে ভিড়ে নিশানের সামনে। নিশি গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখন নিশান ও গাড়িতে বসে পড়ে। নিশি খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে..
– তুমি আবার গাড়িতে বসে পড়লে কেন?
– তো করবো? কখন থেকে ওয়েট করছি কতোবার কল করেছি তুলেছো তুমি।
– আরে দা’র সাথে কথা বলছিলাম।
– বুঝলাম তো লেট হলো কেন?
– রাস্তায় খুব জ্যাম ছিল তাই
– সব প্রশ্নের উত্তর রেডি তোমার নাহ।
– যাহ উওর দিলেও দোষ না দিলেও দোষ
– হ্যাঁ কারন দোষ তোমার!
– সো ওয়াট ভুল কে না করে বল।
– মনে আছে সেদিন আমি লেট করেছিলাম তুমি কি করতে বলেছিলে আমায়।
নিশি শুকনো ঢোক গিলে বলে…
– কি করতে বলেছিলাম!
নিশান মুচকি হেসে নিশি’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে জানপাখি! এক প্লেট ঝাল ফুচকা খাইয়েছিলে আমায়।
– তো তুমি কি আমাকে সেটা করতে বলছো!
নিশান শয়তানি হাসি হেসে নিশির’র দিকে তাকায়। নিশি বুঝতেই পারছে নিশান আজ তাকে নিশ্চিত উল্টেপাল্টে কিছু করতে বলবে। কিন্তু তার পরিবর্তে নিশান বাঁকা হেসে নিশি কে বললো..
– বেশি কিছু না রাতে তৈরি থেকো!
বলেই নিশান বের হয়ে গেল। অতঃপর নিশি ও বের হলো তবে সে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল কেন কিন্তু নিশান তাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বলল..
– ক্লাস শুরু হয়ে গেছে চলো!
বলেই নিশান নিশি’র হাত ধরে চলে গেল।
.
এদিকে নির্ঝর কিছুতেই তার কাজে মন দিতে পারছে না। তার বন্ধুরা অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছে এইসব। অতঃপর একজন বলে উঠে..
– কি হয়েছে তোর কি ভাবছিস এতো?
– হ্যাঁ তাই তো নির্ঝর কি ভাবছিস এতো!
– যা ভাবছি সেটা আমি নিজেই বুঝতে পারছি না তোরা কি বুঝবি।
– তাহলে বোঝার চেষ্টা কর!
– ঠিক বলেছিস আমি আসছি!
বলেই নির্ঝর উঠে গেল। সে ক্যাম্পাসের দিকটাই খুঁজতে লাগলো। অতঃপর তার চোখে পড়ল নিরব দাঁড়িয়ে মেহেরিন কে কি জানি বলছে তবে মেহেরিন তার কোনো কথাই ভালো মতো শুনছে বলে মনে হচ্ছে না। নির্ঝর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখল। অতঃপর মেহেরিন নিরব কে কি জানি বলে চলে এলো। নিরব তাকিয়ে রইল তার দিকে। মেহেরিন সামনে ফিরতেই দেখে নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে তাকে দেখছে। মেহেরিন নির্ঝর কে দেখে কিছু না বলেই তার পাশ কাটিয়ে চলে আসে। নির্ঝর মেহেরিন’র পিছু পিছু হাঁটতে থাকে।
প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই নির্ঝর মেহেরিন’র পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। মেহেরিন সামনে ঘুরে নির্ঝর কে জিজ্ঞেস করে..
– সমস্যা টা কি আপনার?
– না কোনো সমস্যা নেই।
– তাহলে আমার পিছু পিছু এভাবে ঘুরেছেন কেন?
– এমনেই ভালো লাগছে!
মেহেরিন কিছু না বলে আবার হাটা ধরে। তখন নির্ঝর মেহেরিন’র পাশে পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলে..
– একটা কথা জিজ্ঞেস করি!
– জানি আপনি কি বলবেন?
– কিহ জানো
– এইতো নিরবের সাথে কি কথা বললাম ও কি হয় আমার।
– আমার মনের কথা খুব সহজে বুঝে যাও তুমি।
-…
– তোমার ওরকম চাহনিতে আমি হারিয়ে যাই বার বার।
– কবি হলেই পারতেন।
– ভাবছি এটাই করবো এখন তুমি বলো কি হয়েছে?
– তেমন কিছু না ও আবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।
– আবার মানে এর আগেও করেছে নাকি।
– হুম
– তো এবার কেন করলো?
– কারন একটাই আমি ওকে ভালবাসি না কেন?
– এটা কেমন কথা!
– আসলেই বলুন তো এটা কেমন কথা, ভালোবাসা দু’তরফা কেন হতে হবে। সবার কি সবাইকে ভালো লাগে।
– তাই তো এই দেখো আমার ভালো লাগে তোমাকে অথচ তুমি বুঝতেই চাও না।
– হায়রে!
– আচ্ছা তোমার মুড কি এখন অফ।
– কেন?
– তাহলে আমার সাথে এসো তোমার মুড ঠিক করে দিচ্ছি!
– মানে!
নির্ঝর মেহেরিন কে নিয়ে ভার্সিটির ছাদে চলে যায়। মেহেরিন বুঝতেই পারছে না নির্ঝর কি করব। সে তাকিয়ে থাকে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর তাকায় আকাশের দিকে। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে পুরো আকাশে মেঘ জমেছে। খানিকবাদেই বৃষ্টি নামবে। নির্ঝর বলে উঠে..
– তোমার আকাশে মেঘ জমেছে, খানিক বাদেই তা বৃষ্টি আকারে ঝরে পড়বে। সেই বৃষ্টির পানিতে ভিজবো আমরা দুজন। রাঙিয়ে তুলবো নিজেদের!
মেহেরিন তাকিয়ে থাকে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর হেসে বলে..
– বৃষ্টি নামলো বলে…
বলতে বলতেই খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয়।
দুজনেই দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। মেহেরিন দুহাত ছাড়িয়ে ভিজছে বৃষ্টিতে। নির্ঝর দু’চোখ ভরে দেখছে তাকে। মেহেরিন বলে উঠে..
– জানেন আমার বৃষ্টি খুব ভালো!
– জানি তো মেহু পাখি!
তবে কথাটা মেহেরিন’র কানে পৌঁছায় না। সে বৃষ্টিতে লাফাতে থাকে নির্ঝর তাকিয়ে দেখতে থাকে তাকে। কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকার পর নির্ঝর ফোন বাজতে থাকে। নির্ঝর ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে দা ফোন করেছে। সে একটা সাইডে এসে ফোনটা রিসিভ করে..
– হ্যালো নির্ঝর!
– হুম দা বলো!
– ভার্সিটিতে আছো তুমি!
– জ্বি দা!
– এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে আদুরী নিশ্চিত ভিজবে বৃষ্টিতে। তুমি ওকে দেখল একদম ভিজতে দেবে না বৃষ্টিতে, আমি অনেক ফোন করেছি ওকে কিন্তু আমার ফোন তুলছে না সে
– আচ্ছা দা!
– হুম ঠিক আছে!
অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন ডাকতে আসে, কিন্তু তাকিয়ে দেখে মেহেরিন বৃষ্টি তে এখনো লাফাচ্ছে। নির্ঝর মেহেরিন’কে বলে এবার চলে আসতে কিন্তু মেহেরিন তা শুনতে চায় না। সে আরো ভিজবে বৃষ্টিতে – বলেই দৌড়াতে থাকে সে। নির্ঝর দৌড়াচ্ছে মেহেরিন’র। দুজনে এভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে মেহেরিন একদম চলে আসে ছাদের কিনারে। নির্ঝর খেয়াল করে আর এক পা এগুলেই পড়ে যাবে সে। সে দ্রুত মেহেরিন’র হাত ধরে টেনে তার কাছে নিয়ে আসে তাকে। নির্ঝর দু’হাত দিয়ে মেহেরিন’র বাহু ধরে রেখেছে। মেহেরিন’র দু’হাত নির্ঝরের বুকের ওপর। দুজন তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। দুজনেই ভিজে একাকার, ভালো মতোই কিছু দেখতে পাচ্ছে না। মেহেরিন বার বার চোখের পলক ফেলে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝরও একই ভাবে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। বৃষ্টির গতি বাড়ছে তবুও কারো চোখ মানতে রাজি নাহ। কি আছে এমন দেখার মাঝে। মেঘের গর্জনে তাদের দু’জনের ধ্যান ভাঙে। হুশ ফিরতেই মেহেরিন সরে আসে নির্ঝর’র কাছ থেকে। নির্ঝর বলে উঠে..
– মেহু পাখি সাবধানে, আরেকটু পিছুলে পড়ে যাবে তুমি।
মেহেরিন ফিরে তাকায় নির্ঝরের দিকে। অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র হাত ধরে বলে..
– অনেক ভিজেছ আর না, দা জানলে আমাকে বকবে চলো!
বলেই মেহেরিন কে টেনে নিয়ে আসে কিন্তু মেহেরিন আসতেই চায় নি। নির্ঝর একপ্রকার জোর করেই মেহেরিনকে নিয়ে এসে গাড়িতে বসায়। অতঃপর নির্ঝর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। এদিকে নিরব দূর থেকে দেখছিল এসব।
#চলবে….