#Game
#পর্ব_০৩
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
এমন একটা খবর শোনার জন্যই আজ এতো বছর ধরে অপেক্ষা করছিল সে। খবর টা শোনার পর’ই বাঁকা হাসি দিয়ে কফি’র মগে চুমুক দিলো। অতঃপর জিজ্ঞেস করল..
– বলো কি কি জানতে পারলে..
– এটা অনেক বড় একটা কাহিনী তবে এটার সুযোগ আমাদের জন্য অনেক ভাল হবে।
– মানে…
– অধরা খান যে মাফিয়াদের সাথে যুক্ত সেটা সবার’ই জানা। আর তিনি তাদের লিডার! তিনি মারা যাবার পর তার দায়িত্ব কে পাবে এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। অনেকেই এই দায়িত্ব নিতে চেয়েছে। কিন্তু আদুরী চেয়েছে উনার মার জায়গাটা সেই পাক। পরে সেই পায় এই দায়িত্ব কিন্তু তাকে পরীক্ষা করার জন্য একটা কাজ দেওয়া হয়। যার জন্য এতো দিন ধরে সে নিখোঁজ!
– কি কাজ?
– আদুরীকে একটা চীপ দেওয়া হয়। মাফিয়া গ্যাং দের পুরো হদিস আছে তাতে। কয়েকবছর আগেই পুলিশ এটা সম্পর্কে জানতে পারে তাই তারা এটা খুঁজতে থাকে। আর এটা তাকে রাখতে দেওয়া হয়। তবে এটার জন্য খুব মোটা অংকের টাকা পাবে সে। প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ৫ বছরের চুক্তি করে এই চিপ রাখা হয় তার কাছে। আর এটা ঠিকভাবে রাখার জন্য’ই সে ছদ্মবেশ ধারণ করে মানে য্বোয়া হয়ে নকল ফ্যামিলি নিয়ে দেশেই লুকিয়ে আছে।
– ওহ্ আচ্ছা এতো কিছু!
– হ্যাঁ তবে এটা আমাদের জন্য খুব ভালো একটা সুযোগ!
– সেটা কিভাবে?
– এই যে আর ১৫ দিন পর এই চুক্তি শেষ হবে। তখন আদুরী কে চীপ টা ফেরত দিতে হবে। যদি সে তখন সেটা দিতে না পারে তবে তার মৃত্যু নিশ্চিত। আমাদের প্রতিশোধ পূরণ হবে।
সে হেসে বলে..
– ওয়াট অ্যা প্ল্যান ইয়ার!
– জানতাম! এখন কি করবে?
– যেটা ভাবছো সেটাই তবে এতো খবর পেলে কিভাবে?
– অনেক কষ্ট করে, গোপন সূত্রে জানতে পেয়েছিলাম তবে..
– তবে!
– যার মাধ্যমে জেনেছি সে আর বেঁচে নেই! কিন্তু সে মারা যাবার আগে আমাকে মেসেজ দিয়ে গিয়েছিল যার কারনে আমি সব জেনেছি!
– কিন্তু ওরা যদি তোমাকে খুঁজে বের করে..
– ডোন্ট ওয়ারি! সব কাজ শেষ করেই এসেছি। তবে আরেকটা নিউজ আছে!
– এটাও কি গুড!
– হুম…
– কিন্তু কি?
সে ওয়াইনের গ্লাস টা হাতে নিয়ে বলে…
– শত্রুর শত্রু বন্ধু হয় জানো!
– তা আমাদের বন্ধু টা কে?
– মিঃ রায়!
– বাংলাদেশের প্রভাবশালী বিজনেসম্যান! যার অনেক অবৈধ কার্যকালাপ আছে!
– হুম! জানো তার আদরের ছেলে কিছু দিন আগে মারা গেছে, আইমিন মারা হয়েছে..
– কে মেরেছে?
– খান পরিবারের বড় মেয়ে নিহা খান মেরেছে তাকে!
– কারন টা কি?
– কিছুদিন আগেই মিঃ রায় এর ছেলে আর তার বন্ধুরা মিলে গ্যাং রেপ করে একটা মেয়েকে নিমর্ম অবস্থায় গাছের দ্বারে ফেলে যায়, মেয়েটা সেখানেই মারা যায়। দুদিন পর সেই সব ছেলেদের লাশ সেই গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। যদিও এটা নিহা’র কাজ তবে প্রমান ছাড়া কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে রায় সাহেব কিন্তু সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে বলছে এটা নিহা’র কাজ। কারন সে নাকি শাসিয়ে দিয়ে গেছিল তাকে। এখন সে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে!
– ঘি ঢালতে বলছো আগুনে !
– রাইট ইউ আর। তোমার এই স্মার্টনেসের জন্য ভালো লাগে তোমাকে!
সে উঠে টেবিল থেকে একটা মোমবাতি নিয়ে সেটা কে দেখতে দেখতে বলে..
– খুব শখ না তোমার আদুরী মানুষের জীবন নিয়ে Game খেলার। এবার আমি খেলবো Game তোমার জীবন নিয়ে এর এই Game এ আমি’ই জিতবো।
অতঃপর ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দেয়।
.
কয়েকদিন পর..
অভ্র, নিহা,নীল, নিশি, ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর সবাই এসেছে অভ্র’র পিএ এর বিয়েতে। নিহা আর নিশি দুজনেই লেহেঙ্গা পড়ে এসেছে তবে কোনো সাজ নেই। কোনো ধরনের মেকাপ নেই মুখে শুধু কানে ছোট দুল আর কিছু না এর কারন হল অভ্র। সে সাজগোজ করতে দেয় না নিহা আর নিশি কে। তাই এভাবেই এসেছে ওরা। তবুও ভারী সুন্দর লাগছে তাঁদের। তারা সবাই দেখতে বেশ সুন্দর। যার কারনে সাজগোজ না করলেও বেশ সুন্দর লাগে দেখতে। তবে নিহা আর নিশি’র চুল বেশ লম্বা। কোমরের নিচে গিয়ে ঠিকেছে। এখানে অভ্র স্যুট পড়ে এসেছে বাকি সবাই পাঞ্জাবি পড়া। বিয়ে বাড়িতেই আসার পর পিএ নিজে এসেই তাদের রিসিভ করেছে। বিয়ে বাড়িতে দারুন তোরজোড়। অভ্র’র ফোন আসায় সে একপাশে চলে যায় কথা বলতে বলতে, বাকি সবাই একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে। অভ্র কথা বলে পিছনে ঘুরে আসতেই একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়। মেয়ের হাতে থাকা ফুলের থালা টা পড়ে যায়, মেয়েটিও পড়ে যেতে নেয়। তখন অভ্র মেয়েটির কোমর ধরে ফেলে। অভ্র তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে, এদিকে কাব্য এইসব দেখে নিশি কে খোঁচা মারে, নিশি খোঁচা মারে ইহান কে, ইহান রোদ্দুর কে, রোদ্দুর নিহা কে অবশেষে নিহা নীলের ঘাড়ে হাত রেখে চোখের ইশারায় ওদিকে তাকাতে বলে। অভ্র যেন ঘোরের মধ্যে চলে যায়। মেয়েটা বেশ সুন্দরী, কোনো সাজ নেই মুখে। অভ্র মেয়েটির চোখের মধ্যে যেন হারিয়ে যায়। মেয়েটি ধরে রাখে অভ্র কে। এদিকে সবাই মুখ টিপে হাসতে থাকে, অতঃপর হুট করেই সবাই একসাথে দা বলে উঠে।
অভ্র ওদের আওয়াজ পেয়ে সাথে সাথে ছেড়ে দেয় মেয়েটাকে! মেয়েটি ধপাস করে পড়ে গিয়ে বলে..
– মা গোওও আমার কোমর!
অভ্র মেয়েটিকে বলে..
– সরি মিস! আপনি ঠিক আছেন
– ফেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করছেন ঠিক আছি কি না। আজব তো।
– আমি ইচ্ছে করে ফেলেনি এটা নিতান্তই একটা এক্সিডেন্ট!
– ফেলে দিয়ে বলছেন এক্সিডেন্ট, বাহ্!
– আপনি আমায় ভুল বুঝছেন!
– না যা বুঝেছি ঠিক বুঝছি!
সবাই হেসে ওদের কাছে এসে মুখ টিপে হাসতে লাগলো। অভ্র ওদের দিকে তাকাতেই সবাই চুপ হয়ে গেল। কাব্য বলে উঠে..
– আচ্ছা মিস এখন উঠুন এভাবে বসে থাকবেন নাকি!
মেয়েটি রেগে অভ্র’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– না আপনি কেন উঠাবেন যে ফেলেছে সে উঠাবে!
অভ্র ভ্রু বলে উঠে..
– আমার দিকে তাকিয়ে কেন বলছেন। আমি ফেলেছি নাকি আপনাকে!
– তাহলে ধরলেন কেন আমাকে, শুরুতে পড়ে যেতে দিলেন না কেন? বুঝেছি সব মেয়ে ধরার ধান্দা!
– কি বললেন আপনি!
– যা বলেছি সত্যি বলেছি! এখন তুলুন আমায়।
– কেন তুলবো একটু আগে না বললেন আমি আপনাকে ধরার জন্য এইসব করেছি এখন আবার ধরতে বলছেন।
– যাহ বাবা ফেলে দিয়ে এখন আর উঠাবেন না।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– দা! বলছিলাম কি..
অভ্র রেগে তাকাতেই রোদ্দুর চুপ হয়ে যায়। অতঃপর অভ্র সেখান থেকে চলে যায়। মেয়েটি রেগে অভ্র’র চলে যাওয়া দেখতে থাকে। নীল মেয়েটি কে বলে..
– আপু দা আর আসবে না। আপনি এভাবে বসে থাকবেন না মানুষ দেখছে। উঠে পড়ুন!
– নাহ আমি যখন বলেছি উনি উঠাবেন মানে উনিই উঠাবেন। ব্যস!
নিহা বলে উঠে..
– আপু বলছিলাম কি..
কথা শেষ হবার আগেই অভ্র সবাইকে চমকে দিয়ে মেয়েটি কে কোলে তুলে নিল। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে! অভ্র তাকে কোলে তুলে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাচ্ছিল। বাড়ির সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তাঁদের দিকে। মেয়েটি সবার এমন চাহনি তে ভারী অবাক হয়। বিড় বিড় করে বলতে থাকে..
– সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! নাহ আমার দিকে না উনার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কেন? কে এনি যে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে। কোনো সেলিব্রিটি নাকি! দেখে তো মনে হয় হলেও হতে পারে!
হঠাৎ করেই পিএ চলে আসে অভ্র’র সামনে। সে অভ্র কে এমন ভাবে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর বলে উঠে..
– স্যার আপনি! এভাবে… আর আনহা তুই! তুই স্যারের কোলে কি করছিস?
– আরে উনি আমাকে ফেলে দিয়েছেন তাই কোলে তুলেছেন, আর তুই এভাবে বলছিস কেন আমায়!
সে চোখ রাঙিয়ে আনহা’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– এটা আমার অফিসের বস! কি করছিস তুই। নাম জলদি!
আনহা এবার শুকনো ঢোক গিলে অভ্র’র দিকে তাকায়। রাগে তার দু’চোখ লাল হয়ে আছে। অভ্র আনহা কে নামিয়ে দিলে পিএ তাকে অভ্র’র সামনে ধরে বলে..
– স্যার এই হলো আপনার নতুন পিএ আনহা আহমেদ!
কিরে আনহা সরি বল স্যার কে।
আনহা তোতলাতে তোতলাতে বলে..
– স..সরি স্যার! আসলে আমি বুঝতে পারি নি।
– ইট’স ওকে!
বলেই অভ্র চলে আসে সেখান থেকে। আনহা তাকিয়ে বলে..
– এই শাহরিয়ার অভ্র খান! দোস্ত আমার চাকরি টা থাকবে তো!
– আল্লাহ’র কাছে দোয়া কর যেন থাকে! তুই যা করলি স্যার এর সাথে..
আনহা অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে!
.
খান বাড়িতে..
সবাই বসার ঘরে বসে ছিল। নীল বলে উঠে..
– মেয়েটার দেখতে কিন্তু খুব সুন্দরী ছিল না দা!
অভ্র বলে উঠে..
– কোন মেয়ে?
নিশি বলে উঠে..
– আরে যাকে তুমি কোলে তুলে নিলে!
নিশি’র কথা শুনে অভ্র তাকিয়ে থাকে, নিশি আমতা আমতা করে বলে..
– না মানে! জোর করে তোমার কোলে উঠে গেল সেই মেয়ে আর কি।
নিহা বলে উঠে..
– মেয়েটা দা’র নতুন পিএ। আনহা আহমেদ!
কাব্য বলে উঠে..
– বাহ বাহ নতুন পিএ হয়েই এতো কিছু করলো আজ।
– আরে সে জানত না এটা দা। তাই এমন করেছে পরে অবশ্য অনেক বার সরি বলেছে।
নীল নিহার দিকে তাকিয়ে বলে..
– তখন আমরা কোথায় ছিলাম?
নিশি বলে উঠে..
– তোরা তখন মেয়েদের সাথে ছিলি। তাদের সাথে যখন সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিল ঠিক তখন।
নীল রেখে নিশি’র দিকে তাকাতেই সে মুখ ভেংচি দেয়। ইহান বলে উঠে..
– তবে তাকে আমাদের ভাবি করলে কিন্তু মন্দ হতো না। একদম দা এর মতোই, দুজনেই সমান ভাবে ঝগড়া করতে পারে।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– একদম মেড ফর ইচ আদার লাগে একসাথে।
নীল বলে উঠে..
– যখন কোলে নিয়েছিল তখন সেই দেখতে লাগছিল। ইশ একটা পিক তুললে ভালো হতো। স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতাম।
নিশি বলে উঠে..
– পড়ে যাবার সময় যখন দা তাকে ধরেছিল সেই সময়ের পিক আছে আমার কাছে দেখবি। তবে যায়’ই বলিস না কেন মেয়েটার সাথে দা কে কিন্তু খুব মানায়।
কাব্য বলে উঠে..
– তাহলে ভাবি ডাকা শুরু করে দে!
সবাই একসাথে হেসে উঠে কিন্তু নিহা তাকিয়ে আছে অভ্র দিকে। মারাত্মক রেগে আছে সে। অভ্র দাঁতে দাঁত চেপে নিহা কে বলে উঠে..
– নিহা হকি স্টিক টা দে আজ খুব খেলতে মন চাচ্ছে!
অভ্র’র কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়। একে সবাই শুকানো ঢোক গিলে একে অপরের দিকে তাকায়। অভ্র শার্টের হাতা ফোল্ট করতে করতে বলে..
– কে কে জানি ভাবি ভাবি করছিল?
কাব্য হুট করে দাঁড়িয়ে ফোন কানে দিয়ে বলে..
– এইতো আসছি আমি, এই যে রাস্তায় আছি আসতে আর ২ মিনিট লাগবে। আসছি আমি..!
নিশি অবাক হয়ে কাব্য কে বলে..
– তোর ফোন বাজল কখন?
কাব্য চোখ রাঙিয়ে নিশি’র দিকে তাকায়। নিশি বুঝতে পেরে বলে উঠে..
– আমার তো এক্সাম সামনে, আমি বরং ঘরে গিয়ে পড়তে বসি ।
ইহান নিশি’র সাথে দাঁড়িয়ে বলে..
– তোর সাথে তো আমার ও এক্সাম, চল আমিও যাই তোর সাথে।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– আরে আমাকে ভুলে গেলি নাকি আমিও আসছি।
নীল সবার এমন অবস্থা দেখে দাঁড়িয়ে বলে..
– আমি বরং একটু ঘুমাতে যায় মাথা ব্যাথা করছে।
এভাবে সবাই চলে যায়। নিহা অভ্র’র দিকে তাকিয়ে থাকে! অভ্র নিহা কে জিজ্ঞেস করে..
– তোর আবার কি হলো!
– কিছু না তবে ওদের কথাটা একবার ভেবে দেখলে ভালো হতো নাহ।
– তুই বস, এবার আমি’ই উঠে যাচ্ছি!
বলেই উঠে চলে গেলো অভ্র! নিহা আনহা’র কথাটা ভাবতে লাগলো!
#চলবে….