#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 15
🍁🍁🍁
পার্কে বসে গল্প করছে নীর আর শ্রাবনী ভার্সিটির বন্ধের আজ নয় দিন হলো টানা এতোদিনের বন্ধের কারণে দুজনই হাঁপিয়ে উঠেছে শ্রাবনী আর নীরের ফোনে কথা হলেও আজ চারদিন পর আবার দেখা হলো আগে নীরকে কল দিয়ে বললেই নীর শ্রাবনীর সাথে দেখা করতে যেতো কিন্তু সেদিন সায়নের করা অপমানের পর থেকে নীর স্বেচ্ছায় কখনো ওই বাড়ির ত্রিসীমানায় ও যায় নি। চারদিন আগে শ্রাবনীর কথায় নীর পার্কে এসেছিলো আজ নীরের কথায় শ্রাবণী এসেছে পার্কের মাঠেই ছোট ছোট বাচ্চারা খেলা করছে এক কিনারায় একটা ফুসকার দোকান বসেছে অন্য সাইডে এক জন বৃদ্ধ বড় থালায় করে বাদাম আর লবণ নিয়ে বসেছে আরেকসাইডে ঝালমুড়ির একটা দোকান সবেমাত্র এসেছে সূর্যের আো ধীরে ধীরে তার লালাভ আভা ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছে হালকা বাতাস বয়ছে তবুও গরমে দুজনই একটু পর পর কপালে গলায় ঘাম মুছছে। হঠাৎ শ্রাবনী কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে উঠে
শ্রাবনীঃ তুই আমাকে এখন একটুও ভালোবাসিস না তাই না বেস্টু
আচমকা শ্রাবনীর এমন কথায় নীর মাঠের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শ্রাবনীর দিকে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টি তাক করে শ্রাবণী ঠোঁট উল্টে নীরের দিকে তাকিয়ে আছে কপালে বিন্দু বিন্দু পানির কণা এসে জায়গা করে নিয়ে রোদের তাপ গরমে গাল দুটো হালকা লাল হয়ে গেছে ঝুঁটি করে রাখা চুলগুলো থেকে কিছু অবাধ্য চুল এসে কপালে নিজেদের খেলায় মত্ত নীর আলতো হেসে শ্রাবণীর গাল টেনে বলে
নীরঃ ওহে আমার পিচ্চি বালিকা বেস্টু আপনি কি জানেন আপনার বর্তমান লুক দেখে যেকোনো পুরুষের হৃদয়ে ভয়ানক ব্যাধি বাসা বাঁধবে
শ্রাবনীঃ মানে
নীরঃ কিছু না পিচ্চি বালিকা এবার বল তোর কেনো মনে হলো তোকে আমি ভালোবাসি না
শ্রাবনীঃ নয়তো পারতি আমাকে এই গরমে এখানে এভাবে বসিয়ে রাখতে দেখ আমি ঘেমে কি হয়েছি এখন যদি আমার শ্বশুরের ছেলে আমাকে দেখে তাহলে তো বিয়ের আগে আমাকে ক্যান্সেল করে দেবে
শ্রাবনীর কথায় নীর নিঃশব্দে হাসে এই মেয়ে টা এতো আজব কথা কিভাবে বলতে পারে এটাই নীর বুঝে না সিরিয়াস মুড নিয়ে কথা শুরু করবে আর লাস্ট টাইম যত আজব কথা তবে এই আজব কথার অধিকারী মেয়েটায় নীরের একমাত্র কাছের মানুষ যে কিনা বেস্টফ্রেন্ড হোক আর বোন হোক সবকিছু হিসেবে পারফেক্ট। নীরকে চুপ থাকতে দেখে শ্রাবণী আবার বলে উঠে
শ্রাবনীঃ বেস্টুন্নি
নীরঃ হুমমম বল ফুসকা খাবি
শ্রাবনীঃ নাহ এখন ভালো লাগছে না আচ্ছা ভার্সিটি খুলতে আর কতদিন লাগবে
নীরঃ কেনো ( ভ্রু কুঁচকে)
শ্রাবনীঃ আরে বন্দীদশা আর ভাল্লাগে না
নীরঃ নাইছ জোকস অব দ্যা ইয়ার বইন ভার্সিটি বন্ধ এটা তোর ভালো লাগছে না আমি মনে হয় কানে কম শুনলাম
শ্রাবনীঃ আশ্চর্য এখানে জোকসের কি আছে
নীরঃ নেই বলছিস
শ্রাবনীঃ নাহ নেই
নীরঃ তাহলে ডাল মে কুচ কালা হে আছে
শ্রাবনীঃ ধ্যাত
নীরঃ ও ললনা তুমি কেনো মুখে বলো না তোমার বাহানা আমি বুঝি না
আচমকা শ্রাবনীর সামনে কেউ বাদামের প্যাকেট ধরে বলে উঠে ” বাদাম খাবে ” পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে শ্রাবণী হাত অনুসরণ করে উপরে তাকিয়ে চিরচেনা শত্রুকে দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় সামনে মাহির দাঁড়িয়ে আছে একপাশে আদিত্য অন্যপাশ লেজ হয়ে শুভ এই দুইজনই দাঁত কেলিয়ে হাসছে শ্রাবণী মেকি হেসে বলে
শ্রাবনীঃ কি মিশিয়েছেন
মাহিরঃ কোথায়
শ্রাবনীঃ বাদামে
মাহিরঃ ছিহ কি মেশাবো তোমার মতো সবসময় মাথায় কূটনৈতিক বুদ্ধি ঘুরে শুধু
শ্রাবনীঃ কিহ আমি কূটনৈতিক বুদ্ধির অধিকারী
মাহিরঃ ইয়েস আমার তো মনে হয় তোমার বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের কেউ রাজাকারের বংশের কেউ ছিলো যার ফলস্বরূপ এমন কূটনীতি তোমার রক্তেও আছে
শ্রাবনীঃ ভালো হবে না বলছি আপনাদের মতো আমরা রাজাকার না বুঝলেন
মাহিরঃ আমাকে তোমার রাজাকার মনে হয় কেনো ( ভ্রু নাচিয়ে )
শ্রাবনীঃ কজ আপনি খান বংশের পোলা আম রাইট
মাহিরঃ ওহে বালিকা আমার ব্যাপারে এতো খোঁজ রাখো ব্যাপার কি প্রেমে টেমে পড়লে নাকি ( বাঁকা হেসে)
শ্রাবনীঃ ওহে যুবক নিজের চেহারা টা একবার আয়নায় দেখবেন তাহলেই বুঝবেন আপনি প্রেমে পড়ার পুরুষ নাকি যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা ( মুখ বাঁকিয়ে)
মাহিরঃ ওহ নো নীর তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে ভালো ডক্টর দেখিও নয়তো সারাজীবন চিরকুমারী থাকতে হবে
নীরঃ ম মানে ( আমতা আমতা করে)
মাহিরঃ দেখো না মুখ বাঁকা আর এমন বাঁকা মুখের মেয়ে কে নেবে বলো
শ্রাবনীঃ ওই ওই লেজ কাটা হনুমান
মাহিরঃ আমার কি হনুমানের কান ( শ্রাবনীর দিকে ঝুঁকে)
শ্রাবনীঃ নাহ ( হকচকিয়ে)
মাহিরঃ তাহলে আমাকে হনুমান বলো কেনো জানপাখি
নীরঃ এহেম এহেম এটা আপনাদের বেসরুম না ভাইয়া অর বেস্টু এটা রোড সাইড দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলুন
আদিত্যঃ আরে ভাবী আপনারা তো ভারী নিষ্ঠুর
হঠাৎ আদিত্যর মুখে ভাবী ডাক শুনে নীর শ্রাবনী দুজনই থতমত খেয়ে যায় নীর বুঝতে পারছে না একচুয়েলি কাকে ভাবী ডাকছে ওরা তো শ্রাবণী কে ও ভাবী ডাকে নীর থতমত খেয়ে বলে
নীরঃ মা মানে
আদিত্যঃ আমার মতো এই নিদান সিঙ্গেল পোলা কে রেখে আমার সামনে দুই কাপল এভাবে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বসে আছেন আপনারা তো সিঙ্গেল মানুষের বুকে আগুন জ্বালাতে পারেন কেনো ভাই একটু আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করতে পারেন না
নীরঃ ওহ এই ব্যাপার ( মেকি হেসে)
শ্রাবনীঃ আপনি সিঙ্গেল
আদিত্যঃ কেনো কি মনে হয়
শ্রাবনীঃ দেখে মনে হয় দশ-বারো বাচ্চার মা
আদিত্যঃ আপনার এটাই মনে হয় তাই না
শ্রাবনীঃ হুমমম
আদিত্যঃ দেখছিস মাহির ভাই আমার মা-বাবা বাদে সবাই বুঝে ভেতরে ভেতরে আমি মেরিড আচ্ছা শ্রাবনী তুমিই বলো এতো বড় হলাম এখন কি কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমাতে মন চাই কোথায় এখন বউ নিয়ে ঘুমাবো তা না কোলবালিশ নিয়ে ঘুমায়
শ্রাবনী বোকা বোকা চোখে প্রশ্ন করে
শ্রাবনীঃ কেনো বউ থাকলে কি কোলবালিশ আর বউ তো একই
শ্রাবনীর কথা শুনে মাহির শুভ আদিত্য কাশতে শুরু করে নীর ঠোঁট চেপে হাসি আঁটকে বলে
নীরঃ কি ভাই আমরা পিচ্চি মানুষ আমরা কোলবালিশ বউ বুঝি নাকি আশ্চর্য
আদিত্যঃ ভাই এরা পুরাই দুধের শিশু দুই টা ফিডার এনে দে বসে বসে দুধ পান করুক
শ্রাবনীঃ আপনাকে কিনে দেয় বাসায় নিয়ে আপনার আম্মুকে বলুন আম্মু পাশের বাড়ির মেয়ের মা আন্টি দিয়ে বললো বয়স তো কম হলো না বাবা এবার বিয়ে করে নাও আর এটা রাখো বাচ্চা হলে আমার তরফ থেকে ওকে দিয়ে বলো আমি দিয়েছি
এতোক্ষণ সবাই হাসি আটকাতে পারলেও এখন সবাই শব্দ করে হেসে দেয় মাহির হাসতে হাসতে শ্রাবনীর পাশে খালি জায়গায় বসে পড়ে সামনে ঘাসের উপর শুভ আর আদিত্য বসে।
শুভঃ ভাবী থামো ওর আম্মু ওকে ঝাটা দিয়ে পেটাবে
আদিত্যঃ মাইয়া মানুষের কাছে মান-ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিলো
নীরঃ লজ্জার কি আছে আমরাই তো
শুভঃ নাও বাদাম খাও তোমরা
শ্রাবনীঃ ধন্যবাদ কিন্তু দুঃখিত আমি বাদাম খায় না
নীরঃ সেইম
মাহিরঃ তোমাদের বরের কপালে দুঃখ আছে
শ্রাবনীঃ কেনো
মাহিরঃ এই যে এখন আর দশ টাকার বাদামের প্রেম নেই তার মধ্যে তোমরা নাকি বাদাম খাওই না তাই বললাম দশ টাকার বাদাম খেতে খেতে জামাইয়ের প্রশংসা কখনো করবে না আর বেচারারা তোমাদের প্রশংসা ও শুনবে না
নীরঃ বাদাম খেয়ে প্রশংসা নাই করলাম রাস্তার পাশে ফুসকা খেয়েই না হয় জমিয়ে প্রেম করবো সমস্যা কোথায়
নীরের কথায় শুভ নীরের দিকে তাকায় বাকিরা হেসে দেয়
শ্রাবনীঃ বাই দ্যা ওয়ে আপনারা এখানে কি করছেন
মাহিরঃ ফলো করছিলাম তোমাদের
শ্রাবনীঃ কি কিন্তু কেনো এই ওয়েট আমাদের কিডন্যাপ করতে চেয়েছিলেন তারপর কি বাংলার সিনেমার মতো আমাদের মা-বাবার কাছে ফোন দিয়ে বলতেন এতো ঘন্টার মধ্যে এতো টাকা না দিলে আপনার মেয়েদের লা*শ পাবেন
মাহিরঃ আমাদের কি কশাই মনে হয় তোমার
শ্রাবনীঃ তার থেকে কম কি
শুভঃ আরে না ওর কথা ধরো না তো আমরা তো ঘুরতে ঘুরতে এখানে এসেছিলাম দূর থেকে তোমাদের দেখপ আসলাম কতদিন দেখা হয় না কথা হয় না তোমার বিরহে তো আবার কারো কারো চোখের তলায় কালি জমে গেছে ( মাহিরের দিকে তাকিয়ে)
শ্রাবনীঃ কে সেই ভাগ্যবান পুরুষ
নীরঃ খুঁজে দেখ আশেপাশে কার চোখের তলায় কালি আছে এক কাজ কর রাস্তার ওইদিক থেকে শুরু কর
শ্রাবনীঃ বেস্টুন্নিইইই
নীরঃ সরি সরি
আর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার বাড়িতে চলে যায় এতোক্ষণে শ্রাবনীর মন টা ফুরফুর হলো এতোদিন কেমন কেমন লাগতো বাড়িতে থাকতে আগে শ্রাবনী অপেক্ষা করতো কবে ভার্সিটি কলেজ বন্ধ দেবে আর এখন শ্রাবনী ওয়েট করে কবে খুলবে কেনো এমন হয় এটা শ্রাবনীর ও অজানা।
সময় বড় অদ্ভুত জিনিস কখন কোনদিক দিয়ে চলে যায় কেউ বুঝতে পারে না দেখতে দেখতে শ্রাবনীদের ভার্সিটির বন্ধ পেরিয়ে আজ ভার্সিটি খুলেছে ভার্সিটি খোলার আনন্দে আজ শ্রাবনী সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে কারেক্ট টাইমে ভার্সিটি চলে আসে নীর শ্রাবনী একসাথেই এসে ভার্সিটির গেটের সামনে নেমে ভেতরে ক্লাসে যায়।
সিনথিয়াঃ কেমন আছিস তোরা
শ্রাবনীঃ এতোদিন ভালো ছিলাম না এখন দারুণ আছি
ইভাঃ এতোদিন খারাপ ছিলি কেনো
শ্রাবনীঃ ভার্সিটি বন্ধ থাকলে ভালো লাগে নাকি
শ্রাবনীর কথায় ইভা সিনথিয়ার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে ইভা নীরের হাত খামছে চেচিয়ে বলে
ইভাঃ আমাকে ধর কেউ প্লিজ আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নের দুনিয়ায় ভাসছি মানে আমাদের শ্রাবনী মেডাম ভার্সিটি অফ ছিলো সে জন্য খারাপ ছিলো এটা আদো সত্যি
নীরঃ ইহাকে বলে প্রেমে পড়ার প্রথমাবস্থা
ইভাঃ যায় বল শ্রাবনী তুই আগের থেকে মোটা হয়ে গেছিস
ইভার কথায় শ্রাবণী ইনোসেন্ট লুক করে বলে
শ্রাবনীঃ মোটা বলিস কেনো হুম মোটা বলিস কেনো আমি কি মোটা আমি না হয় একটু গুলুমুলু আর মোটা হলেও নিজের বাপের খাইছি তোর জামাইয়ের টা খায়নি তো আর
নীরঃ আরেহ ইয়ার তোরা শুধু ওর শরীরের দিকপ নজর দিস কেনো একবার ওর আখিঁদ্বয় ভালো করে প্ররখ কর আমাদের দুলাভাই না দেখতে পাওয়ার বিরহে চোখের তলায় কালি পড়ে চোখ শুকিয়ে গেছে
সিনথিয়াঃ দুলাভাই টা কে শ্রাবণী মাহির ভাইয়া নাকি ( হেসে)
নীরঃ উনি ছাড়া আর কেনো হবে তোরা বুঝিস না একজন অপর জনকে দেখলেই ঝগড়া আবার না দেখলে মন আনচান আনচান করা এগুলো কি শুধুই এমনি এমনি ইহাকে বলো লাভ এট ফাস্ট সাইড তাই না ভাবীইইইই
শ্রাবনীঃ তবে রে ভালোবাসায় PHD করেছিস তাই না আজ তোর একদিন কি আমার একদিন
শ্রাবনী কে তেড়ে আসতে দেখে নীর ও দৌড়ে ক্লাসে বাইরে চলে যায় কিন্তু ডান পাশে ব্রেক নিতে গিয়ে একটা শক্ত বুকের সাথে বারি খেয়ে দুজনই নিচে পড়ে যায় হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় নীর ঘাবড়ে সামনে থাকা ব্যক্তির শার্টের কিছুটা খামছে ধরে সামনে থাকা ব্যক্তি ও ব্যালেন্স ঠিক রাখতে নীরের কোমড় আঁকড়ে ধরে কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না উল্টো দুজনই ঠাসস করে নিচে পড়ে যায় ইভা সিনথিয়া শ্রাবণী হা করে নীরদের দিকে তাকিয়ে থাকে । শুভ ব্যথায় কুঁকড়ে হালকা আর্তনাদের সুরে বলে
শুভঃ এই মেয়ে সবসময় এতো ছুটাছুটি করো কেনো একটা জায়গায় চুপ করে বসতে পারো না
শুভর কন্ঠস্বর শুনে নীর হকচকিয়ে যুবকের বুক থেকে মাথা তুলে শুভকে দেখে ঘাবড়ে যায় নীর উঠতে নিলে কোমড়ে মৃদু চাপ পেয়ে আবার নিচু হয়ে যায় নীর মিনমিনে সুরে বলে
নীরঃ যখনই পড়ি আপনি সামনে চলে আসেন কেনো
শুভঃ এতো ওজন কেনো আমার কোমড় বুক পিঠ সব ভেঙে মনে হয় গুঁড়ো হয়ে গেছে
আদিত্যঃ এখন এভাবেই কি ফ্লোরে দুজন শুয়ে থাকবি উঠ কেউ দেখলে কি ভাববে ফ্লোর এখনো খালিই আছে
আদিত্যর কথায় শুভ নীরের কোমড় ছেড়ে দেয় নীর তৎক্ষনাৎ সেকেন্ড বিলম্ব না করে উঠে পড়ে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে এভাবে সবার সামনে নীর আড়চোখে একবার মাহিরদের দিকে তাকিয়ে দেখে সবার চোখ বড় বড় হয়ে আছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে আদিত্যই শুধু দাঁত কেলাচ্ছে এই ছেলে এমনই প্রচন্ড খোশমেজাজে সবসময় হাসিখুশি মজায় ওর জীবনের সব।
শুভঃ আরে ভাই এভাবে তাকিয়ে না থেকে একটু উঠা না
মাহিরঃ হ হ্যাঁ হ্যাঁ
মাহুর আদিত্য শুভকে টেনে তুলে শুভ শার্ট ঝেড়ে নীরের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো সুরে বলে
শুভঃ এতো ছুটাছুটি কিসের এটা কি হা ডু ডু খেলার মাঠ হুটহাট এভাবে পড়ে যাও হঠাৎ একদিন দেখবে হাত-পা ভেঙে পড়ে আছো আমার হাড্ডি গুড্ডি তো ভেঙ্গেই দিয়েছো
নীরঃ দোষ এখন আমার আপনি সামনে আসলেন কেনো
শুভঃ আমি কি জানতাম ছোট হাতি দৌড়াচ্ছে
নীরঃ কিহ আম আমি হাতি
শুভঃ ওজন কত বইন তোমার
নীরঃ ৫৩
শুভঃ ওএমজি তাও এতো ভার
নীরঃ এবার বুঝেন আপনি পিঁপড়া হয়ে আসলে পিষতে তো হবেই হুহহ
শুভঃ ওহ খোদা এই মেয়ে বলে কি আমি নাকি পিঁপড়া আমার গায়ের রঙ কি লাল কালো আজব
নীরঃ বর্তমানে লাল
শুভঃ মানে 😮
নীরঃ ওই যে লাল শার্ট পড়ে আছেন তাই এখন আপনি লাল পিঁপড়া
শুভঃ এই মেয়ের সাথে কোনো ছেলে ঘর করতে পারবে না ইম্পসিবল একদিনে ছেলেকে পাবনায় পাঠাবে
শ্রাবনীঃ টেনশন নেই আপনিই তো হবেন
শুভ প্রতিত্তোর না দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে
মাহিরঃ চল
শুভঃ হুমমম
শুভ আর আদিত্য চলে যায় মাহির শ্রাবনীর দিকে কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে উঠে
মাহিরঃ বাদামে এলার্জি থাকতেই পারে কিস মিসে না থাকলেই হলো আর থাকলেও ঔষধ খেয়ে সুস্থ হয়ে যাও নয়তো পস্তাতে তোমাকেই হবে শ্যামাপাখি
মাহির সিটি বাজাতে বাজাতে চলে যায় শ্রাবণী হত-বিহবল হয়ে মাহিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে শ্রাবনী এটাই বুঝতে পারছে না মাহির একচুয়েলি কিসের কথা বললো কিস নাকি মিস নাকি কিসমিস কোনটা বললো
(আর নাইক্কা)
চলবে,,,,,,
#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 16
🍁🍁🍁
প্রভাতের সূর্যের আলো চোখে পড়তেই নীরের ঘুম কর্পূরের মতো উবে যায় রাতে ঘুমাতে প্রায় আড়াই টা বেজে গিয়েছিলো নীর হাই তুলে উঠে পাশ ফিরে শ্রাবনীকে ঘুমে দেখে ওয়াশরুমে চলে যায় ওয়াশরুম থেকে একদম গোসল সেড়ে টাওয়াল নিয়ে বারান্দায় চলে যায় রেলিঙে টাওয়াল মেলে দিয়ে নিচে দিকে দৃষ্টি তাক করতেই চোখে ভেসে উঠে সবার হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী নিচে সবাই কাজে ব্যস্ত চারদিকে ডেকোরেশনের কাজ চলছে বাগানের অন্য পাশে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজাতে ব্যস্ত আবির অভি আয়াত আরো কয়েকজন অন্যপাশে হলুদের নানান কাজ করছে নীরের মা সাথে হেল্প করছে শ্রাবনীর মা রিহি আর এশা। আজ নীরের গায়ে হলুদ শুভ রাহার কথা বলতে চেয়েও বলতে পারেনি প্রতিবারই ব্যর্থ হতে হয়েছে শেষপর্যন্ত সব উপরওয়ালার হাতে ছেড়ে বাধ্য হয়ে বিয়ের আসরে আসতে হচ্ছে কাল ছোটখাটো একটা মেহেদীর অনুষ্ঠান হয়ে গেছে আজ গায়ে হলুদ নীরের বুক ছিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে কাঁধে কারো স্পর্শে নীর পেছন ফিরে শ্রাবনীকে দেখে মুচকি হাসে
নীরঃ গুড মর্নিং
শ্রাবনীঃ গুড মর্নিং ( ঘুমুঘুমু কন্ঠে)
নীরঃ যা ফ্রেশ হয়ে আয় ব্রেকফাস্ট করবি তো অনেক বেলা হয়েছে
শ্রাবনীঃ তুই খেয়েছিস
নীরঃ নাহ যা তুই আসলে খাবো
শ্রাবনী আলতো হেসে চলে যায় নীর আবার নিচের দিকে তাকায়
বারান্দায় আনমনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ কাল রাত থেকে রাহাকে কলে ট্রাই করছে কিন্তু ফোন সুইচ অফ বলছে শুভ সকালের দিকে একবার ওর বাবার রুমে গিয়েছিলো কিন্তু কিছুতেই কোনো লাভ হলো না শুভ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে সাজানো বাড়ি দেখে মেজাজ গরম হয়ে যায় মাহির আদিত্য শুভকে উঠাতে এসে রুম খালি পেয়ে বারান্দায় চলে যায় শুভকে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দু-জনেরই মন খারাপ হয়ে যায় ওরা সবাই জানে শুভ রাহা একে অপরকে কতটা ভালোবাসে মাহির আদিত্য একে অপরের দিকে তাকিয়ে শুভ’র কাছে যায়
মাহিরঃ শুভ
মাহিরের কন্ঠস্বর শুনে শুভ শুকনো হেসে মাহিরের দিকে তাকায় মাহির শুভর কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলে
মাহিরঃ উপরওয়ালা যা করে ভালো’র জন্য করে দেখ শেষ টা কি হয় তবু বলছি হাল ছাড়িস না আঙ্কেল কে বলার ট্রাই কর
শুভঃ আমি আর পারছি না রে একদিকে এই বিয়ের জ্বালা অন্যদিকে রাহা ও কাল থেকে ফোন অফ করে রেখেছে
আদিত্যঃ রাহার ছোট বোনের সাথে একটু আগেই কথা হলো মাহিরের
শুভঃ সত্যি কি বলেছে মাহা রাহা ঠিক আছে তো
মাহিরঃ হুমমম শারীরিক ভাবে ঠিক আছে মানসিক ভাবে নয়
শুভঃ মাহির কিছু একটা কর প্লিজ
মাহিরঃ আমার হাতে এখন কিছু নেই আজ বিয়ে কাল গায়ে হলুদ এখন যা করার তোকেই করতে হবে বাট একটা কথা মাথায় রেখে কাজ করিস তোর কোনো কাজে নীরের যেনো কোনো ক্ষতি না হয় এতে নীরের কোনো দোষ নেই মনে রাখিস
শুভঃ ওকে পালিয়ে যেতে বল না
আদিত্যঃ আমরা কথাটা যত সহজে বলে দিলাম ওর কাছে এই কাজ টা অনেক কঠিন আর ওর কি লাভ পালিয়ে না ওর বিএফ আছে আর না কোনো ভালোলাগার মানুষ আছে ও নিজের বাবার কথা রাখবে এটাই স্বাভাবিক
আদিত্যর কথায় শুভ দমে যায়
গায়ে হলুদের সাজে স্টেজে বসে আছে নীর মুখ টা গোমড়া হয়ে আছে চারপাশে মানুষে ভরা লাইটের আলো ক্যামেরার আলো এসে নীরের চোখেমুখে পড়ছে পাশে শ্রাবণী বসে বিভিন্ন পোজে পিক তুলছে নীর বিরক্তি নিয়ে শ্রাবনীর দিকে তাকিয়ে বলে
নীরঃ এতো পিক কিভাবে তুলিস
শ্রাবনীঃ চুপ যা আমার বেস্টুর বিয়ে আমি পিক না তুললে কে তুলবে হুহহ
নীরঃ হায় খোদা আমার খুব গরম লাগছে রে বেস্টু
শ্রাবনীঃ কোল্ড ড্রিংকস খাবি
নীরঃ নাহহ বাই দ্যা ওয়ে সায়ন ভাইয়া আসলো না কেনো রে
শ্রাবনীঃ আরে ছোড়দা’রা আজ ফ্রেন্ডস নিয়ে ট্যুরে যাচ্ছে হয়তো এতোক্ষণে প্লেনে উঠে পড়েছে
নীরঃ ওহ আচ্ছা ( নিচুস্বরে)
কিছুক্ষণের মধ্যেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয় একে একে সবাই হলুদ লাগিয়ে দিয়ে যায় লাস্ট পর্যায়ে রিহি এশা শ্রাবনী মিহি( আবিরের বউ) চারজন একসাথে নীরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুরো মুখ হলুদ দিয়ে পুরো একেকার অবস্থা করে চারজনই স্টেজ থেকে নেমে আসে নীর মুখ টা লটকিয়ে চারজনের দিকে ঠোঁট উল্টে তাকায় নীরের তাকানো দেখে সবাই হেসে দেয়।
নীর চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে আসতেই বেডে রাখা ফোন টা বেজে উঠে নীর শাড়ির আঁচল সামলে চুল মুছতে মুছতে ফোন হাতে নিয়ে শুভর নাম্বার দেখে কোনোকিছু না ভেবেই ফোন রিসিভ করে দুজনই চুপচাপ দুপাশ থেকে শুধু দু’জনের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে নীর বিরক্ত হয়ে বলে
নীরঃ কিছু বলবেন নাকি ফোন রাখবো
শুভ চট করে বলে উঠে
শুভঃ তুমি পালিয়ে যাও
শুভর এমন কথা শুনে নীর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় নিজেকে সামলে বলে,,
নীরঃ ওয়াট পালিয়ে যাবো আর ইউ ম্যাড
শুভঃ প্লিজ নীর আমাকে বিয়ে করলে তোমার পুরো লাইফ টা শেষ হয়ে যাবে আমি তোমাকে কখনো স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না আর যদি ভেবে থাকো গল্প সিনেমার মতো বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে তাহলে ভুল ভাবছো আমাদের লাইফ টা কখনো ফিল্মি হবে না
নীরঃ হয়েছে
শুভঃ কি
নীরঃ আপনার ফাটা ভাষণ শেষ
শুভঃ ওয়াট
নীরঃ দেখুন মাথা আমার প্রচুর পেইন ধরেছে এখন আর কথা বলতে পারবো না আর হুমমম বিয়ে টা করলে আপনার লস আমার না সো বিয়ে আপনি ভাঙতে পারেন আমি পারবো না আর রাহা আপির ভালোবাসা এতোটা সস্তা না বুঝলেন যদি আপনার আর রাহাপির ভালোবাসা সত্যি হয় তাহলে বিয়ে আপনি আটকাবেন দ্যাটস মাই প্রমিজ আজকের মতো বাই গুড নাইট
নীর ফোন কেটে দেয় চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে আটকে রাখা পানিগুলো শুভ ফোন টা বেডে ছুঁড়ে মাথার চুল খামছে নিচে বসে পড়ে শ্রাবনী সায়নের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে রুমে ডুকে নীর বেডে বসেছিলো নীরকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে শ্রাবণী ভ্রু কুঁচকে ফোন নিয়ে নীরের সামনে যায়
শ্রাবনীঃ বেস্টু এভাবে বসে আছিস কেনো
নীরঃ এমনি ঘুমাবি না অনেক রাত হয়েছে পরে তো তোর শরীর খারাপ করবে
শ্রাবনীঃ হুমম এই তো ছোড়দার সাথে কথা বলছি নে কথা বল
নীরঃ আরে আমি কি কথা বলবো তোর হিটলার ভাইয়ের সাথে আশ্চর্য
সায়নঃ কলে আমি আছি এখনো আমার সামনেই আমাকে হিটলার বলছে তোর বেস্টুর সাহস খুব বেড়েছে তাই না বনু ( ফোনের ওপাশ থেকে)
নীরঃ আমার সাহস টা অলওয়েজ বেশি এটা তুই জানিস তাই না বেস্টু আর সত্যি কথা বলতে নীর ভয় পায় না
সায়নঃ এতো সাহস থাকা ভালো না আজ বাদে কাল বিয়ে এভাবে ঝগড়া করলে বরের হাতে মার খেতে হবে
নীরঃ এমন কেউ এখনো জন্মায় নি আমাকে মারবে হুহহ বাই দ্যা ওয়ে শ্রাবনী আমি ঘুমাচ্ছি তুই কথা শেষ করে ঘুমাস
শ্রাবনীঃ আচ্ছা
ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েলি স্বরে কেউ সায়নকে ডাকতেই সায়ন কল কেটে চলে যায় শ্রাবণী ও ঘুমিয়ে পড়ে
দেখতে দেখতে রাত পেরিয়ে আরেকটা সোনালি দিন উদয় হলো পৃথিবীর বুকে গতকালের সবকিছু কে অতীত করে আজ আরেকটা বর্তমান দিন উদয় হলো চারদিকে সূর্যের আলোয় পাতা ঝলঝল করছে পুরো বিয়ে বাড়ি জুড়ে বিয়ে বিয়ে গন্ধ গতকালের থেকে আজ কলরব আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে বিয়ে হবে সন্ধ্যার দিকে এখন বাজে বেলা বারো টা সময় যেনো পানির গতিতে চলছে পানিকে যেমন আটকানো যায় না সময় টা কেও থামানো যায় না আর কয়েক ঘন্টা পরই নিজের বাড়ি টা পর হয়ে যাবে নিজের স্বাধীন জীবনের সাথে আরেকটা জীবন জড়িয়ে যাবে এটাই তো নিয়ম মেয়েদের যত স্বাধীনতা বিয়ের আগেই বিয়ের পর পরাধীনতা আষ্টেপৃষ্টে গ্রাস করে নেয় কিন্তু সব মেয়ে কি বিয়ের আগে নিজের লাইফ এনজয় করতে কিছু কিছু মেয়ের স্বপ্ন থাকে বিয়ের পর জামাইয়ের সাথে জমিয়ে প্রেম করার কিন্তু বিয়ের পর সংসারে বাঁধন শ্বশুর শ্বাশুড়ির সেবা-যত্ন, স্বামীর শাসন এসবের মাঝেই সময় পেরিয়ে যায় বছর যেতে বাচ্চা হলে ব্যস্ততা আরো গ্রাস করে নেয় মেয়েদের জীবনই শেষ হয় ব্যস্ততা দিয়ে এটাই সমাজ।
শুভ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বুকে সাহস নিয়ে ওর বাবার রুমে পা বাড়ায় শুভর বাবা চেয়ারে বসে কিছু একটা করছিলো হঠাৎ নিজপর রুমে শুভকে দেখে কিছুটা চমকালে ও পরমুহূর্তে হাসি মুখে উঠে শুভর দিকে অগ্রসর হয়
শুভর বাবাঃ কিছু বলবে
শুভঃ হ হুমম বববা বাবা
শুভর বাবাঃ এভাবে আমতা আমতা করছো কেনো যা বলার বলো
শুভঃ বাবা আমি রররররা
শুভর বাবাঃ হুমমম বল তোতলাচ্ছিস কেনো
শুভঃ ব ব বা বাবা
শুভর বাবাঃ আর একটু পর বরযাত্রী বের হতে হবে এখন কি বলতে আসছোস আবার এভাবে আমতা আমতা করছিস
শুভ একটা জোড়ে শ্বাস নিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলে উঠে
শুভঃ বাবা আম সরি আমি এই বিয়ে টা করতে পারবো না আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসি মেয়েটা ও আমাকে ভালোবাসে আমি চাই না নীরকে বিয়ে করে একসাথে তিনটা জীবন নষ্ট হোক নীরকে বিয়ে করলেও মন থেকে আমি সারাজীবন রাহাকেই ভালোবাসবো এখন সিদ্ধান্ত তোমার
শুভর কথা শুনে শুভর বাবা থমকে যায়।
_______________________
বর এসেছে বর এসেছে
কয়েকজনের মিলিতধ্বনি কানে আসতেই নীর বসা থেকে ধপ করে উঠে দাঁড়ায় নিজের কানকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছে না নীর ভেবেছিলো শুভ বিয়ে করতে আসবে না কিন্তু শুভ আসবে এটা শুনেই নীর মনে মনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে
নীরঃ হায় রে ভালোবাসা আহ ভালোবাসা প্রকাশে হাঁটু কাঁপে আর অন্যজনকে চিল্লিয়ে বলতে পারে ভালোবাসি
শ্রাবনীঃ টাকা না দিলে ওখান থেকে ফিতে দিয়ে রাস্তা মেপে বাড়ি চলে যান
মাহিরঃ কিসের টাকা কোনো টাকা দিচ্ছি না
মিহিঃ ও মা তাহলে আমরাও মেয়ে দিচ্ছি না
মাহিরঃ এই যে এদিকে আসো
শ্রাবনীঃ কি ( ভ্রু কুঁচকে)
মাহিরঃ আমরা এখন বেহায় বেহায়ন একটু দরদ দেখাও
শ্রাবনীঃ ওদিকে বাড়ির গেট যেতে পারেন
আদিত্যঃ মাহির শোন
মাহিরঃ কি বল
আদিত্যঃ শ্রাবনী এমনি এমনি যেতে দেবে না কত লাগবে জিজ্ঞেস কর
মাহিরঃ হুমমম, কত লাগবে
শ্রাবনীর সাথে সবাই চেচিয়ে বলে “দশ হাজার টাকা”
টাকার অঙ্ক শুনে সবার মাথায় হাত মাহির দুষ্টু হেসে শ্রাবণীর হাত ধরে গান শুরু করে
ছাড়ো ছাড়ো সিংহদ্বার দেবো টাকা দুই হাজার
শুনো শুনো ও আদরের বিয়াইন সাব
(শ্রাবনী হাত ছাড়িয়ে টেডি স্মাইল দেয়)
ছাড়তে পারি সিংহদ্বার দিলে টাকা দশ হাজার
শুনো শুনো ও সোহাগের বিয়াই সাব
বিয়াই আমার বড়ো কৃপণ পুটিমাছের কলিজা
বুঝে না সে কত টাকায় খুলবে দরজা
মাহির শ্রাবনী টান দিয়ে গেটে বাইরে নিয়ে এসে নাচতে নাচতে নেক্সট লাইন গায়
বিয়াইন আমার কুচি খুকি বুদ্ধির ও অভাব
বুঝে না সে মনের কথা বুঝে নগদ লাভ রে বুঝে নগদ লাভ
ছাড়ো ছাড়ো সিংহদ্বার দেবো টাকা চার হাজার
ছাড়তে পারি সিংহদ্বার দিলে আরো ছয় হাজার শুনো শুনো ও সোহাগের বিয়াইসাব ________
শেষ পর্যন্ত শ্রাবণীর কাছে হেরে দশ হাজার টাকা দিয়ে বরসমেত সবাই ভেতরে আসে শুভকে আসরে বসিয়ে নীরকে নিয়ে এসে শুভর সরাসরি বসায় মাঝখানে একটা বড় পর্দা ফেলে দেয় মাথার উপর খোলা আকাশ চারদিকে গোলাপ ফুলের গন্ধ আত্নীয় স্বজনে ভরা বাগানে বিয়ে হওয়ায় মাথার উপর খোলা আকাশ টা স্পষ্ট দেখা যায় পর্দার দুই পাশে বসে আছে দুই মেরুর দুজন মানুষ একজনের মনে অন্য নারীর ভালোবাসা অন্যজনের মনে ভালোবাসা শব্দটায় একরাশ ঘৃণা রাগ ক্ষোভ। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাজি বিয়ে পড়াতে শুরু করে মাহির আদিত্য হাতের নখ খুটছে শুভ মনপ্রাণে আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে কাজী নীরকে কবুল বলতে বললে নীর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আক্রোশপূর্ণ দৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকায় শুভ অসহায় দৃষ্টিতে নীরের দিকে তাকিয়ে আছে নীর মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই নিজের চুলের খোঁপায় বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ অনুভব করে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে ক্রমান্বয়ে একটা বলিষ্ঠ হাত এসে নীরের বাম বাহু চেপে শূন্যে ভাসিয়ে নেয় একহাতে চুলের মুঠি অন্যহাতে বাম হাতের বাহু ধরে নীর ধীরে ধীরে অনুভর কীতে পারলো ওর পায়ের তলার মাটি সরে ও শূন্যে ভাসছে।
চলবে,,,,,