LoVe Effect part-38 & last Part

0
956

#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 38 ( অন্তিম পাতা)

🍁🍁🍁

গোধূলির সময় আকাশে সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছে যাওয়ার পূর্বে তার লালাভ আভা পুরো প্রকৃতিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে বাইরে মৃদু বাতাস বইছে সাদা নীল বর্ণের আকাশ টা ধীরে ধীরে আঁধারে নিমজ্জিত হওয়া শুরু করেছে মাহিরের মা শ্রাবনীর মাথায় তৈল দিয়ে দিচ্ছে আর শ্রাবনী নিচে বসে বসে পপকন খাচ্ছে মাহিরের মাকে ও দিচ্ছে সামনেই মুভি চলছে মাহিরের আব্বু আম্মু ফিরেছে আজ একুশ দিন হলো। শ্রাবনী খাওয়ার একপর্যায় বলে

শ্রাবনীঃ আচ্ছা মা তুমি এতো ভালো তোমার ছেলে টা এমন কেনো

শ্রাবনীর কথার উল্টো পিঠে মাহিরের মা স্লান হেসে বলে

মাহিরের মাঃ কেমন আমার ছেলে টা

শ্রাবনীঃ একটু ও ভালো না খুউব পঁচা তুমি কি উনাকে কোথাও থেকে কুড়িয়ে এনেছো তোমার আর বাবা বৈশিষ্ট্য একটু ও পায় নি সারাক্ষণ কেমন খিটখিটে স্বভাবের থাকে আমার তো উনার সাথে কথা বলতেই ভয় করে হুহহ

মাহিরের মাঃ আমার ছেলে টা এমনই ঠিক করে নে ঠিক করার জন্যই তো তোর মতো মেয়ে আনলাম দেখিস না তুই কিছু বললে কেমন বোকা বোকা হয়ে যায়

শ্রাবনীঃ হুহহহ

শ্রাবনী আর কিছুক্ষণ গল্প করে নিজের রুমে চলে আসে ফোন হাতে নিয়ে সায়ন কে ফোন দেয়

সায়নঃ হুমম বনু বল

শ্রাবনীঃ বেস্টু ফিরেছে

সায়নঃ নাহ ( মুখভার করে)

শ্রাবনীঃ হঠাৎ কি হয়েছে বল তো তোদের মধ্যে যার জন্য বেস্টু বাপের বাড়ি চলো গেলো

সায়নঃ জানি না সকালেও ঠিক ছিলো সন্ধ্যায় আসার পর হঠাৎই চলে গেলো আর বললো ওর সাথে যেনো কোনোরকম যোগাযোগ না করি আমার ফ্যামিলির কেউ ওকে আটকায় নি পর্যন্ত বুঝি না ওর হঠাৎ হঠাৎ কি হয়

শ্রাবনীঃ এক কাজ কর না তুই গিয়ে নিয়ে আয়

সায়নঃ বলেছে ওর বাড়ির ত্রিসীমানায় পা রাখলে পা কেটে ফেলবে হুহ বয়েই গেছে যার যাওয়ার সে যাক কি ভাবে নিজেকে যাবো না আমি আমিও দেখি কতদিন থাকতে পারে

সায়নের কথাগুলোর মাঝে তীব্র অভিমানের চাপ শ্রাবনীর বুঝতে বেগ পেতে হয়নি শ্রাবণী ঠোঁট চেপে হেসে দেয় পুনরায় গাম্ভীর্য গলায় বলে

শ্রাবনীঃ ঠিক করেছে ও তোকে ছেড়ে চলে গেছে বেশ করেছে

শ্রাবনী ফোন কেটে দেয় সায়ন ফোন টা টেবিলে রেখে মাথা চেপে ধরে আজ সতেরো দিন হলো নীর ওর বাবার বাড়ি গিয়েছে আসার নাম নেই অবশ্য যাওয়ার আগে স্পষ্ট বলেছে যেদিন নীরের এন্সার দিতে পারবে সেদিনই ফিরে আসবে কারো উপর দায়িত্ব হয়ে থাকতে চাই না নীর।

নিষক কালো আধারে ডুবে আছে রজনী আকাশের চাঁদ মেতে উঠেছে মেঘের সাথে নতুন খেলায় আকাশের কালো বর্ণের মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে বাইরে ক্ষণে ক্ষণে বাতাসের বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে আকাশে অতি স্বল্প আওয়াজে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে রাস্তার সব ধুলো উড়ছে গাছের পাতা দিক-বেদিক উড়ে বেড়াচ্ছে প্রকৃতির আবহাওয়া জানান দিচ্ছে আজ প্রকৃতি নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে বৃষ্টি কন্যার কাছে উজাড় করে দেবে নিজের সর্বস্ব দিয়ে বৃষ্টি কে আলিঙ্গন করে মেতে উঠবে প্রেমের খেলায়।

নীর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টি বাইরে একটা বড় শিমুল গাছে নিবদ্ধ অবশ্য শিমুল গাছে নয় শিমুল গাছে বসে থাকা দুটো নাম না জানা অতিথি পাখির দিকে হলদেটে রঙের পাখিদুটো প্রকৃতির মনোরম বাতাসের দাপট থেকে নিজেদের রক্ষা করতেই বোধহয় শিমুল গাছের শক্তপোক্ত ডালটার আশ্রয় নিয়েছে একটা পাখি নিজের পালক দিয়ে অন্য পাখি টা কে জড়িয়ে রেখেছে দুজনই প্রকৃতির এই বৃষ্টিস্নাত রজনীর দিকে তাকিয়ে আছে অসহায় দৃষ্টিতে। নীর নিজের অজান্তেই হেসে দেয় চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ মেলে ওষ্ঠদ্বয় চেপে হাসে বিড়বিড়িয়ে বলে

নীরঃ এটা আপনার প্রাপ্য মিস্টার চৌধুরী ভালোবাসা মনে চেপে রাখার শাস্তি প্রতিনিয়ত আমি যেই দহনে দগ্ধ হচ্ছি আপনাকে আমি এর থেকে দ্বিগুণ দহনে দগ্ধ করতে চাই আপনাকে আমি পুড়াতে চাই অধিক হারে বুঝাতে চাই ভালোবাসা মনে চেপে রাখার শাস্তি একটা লাইন আছে না ” না পুড়লে কিসের ভালোবাসা ” আপনাকে আমি আমার প্রেমনোঙরে বাঁধতে চাই

নীর ফোনের দিকে একপলক তাকায় আজ তিনদিন হলো সায়নের কোনোরূপ মেসেজ কল কোনোটায় নেই তিনদিন আগেও যেই ছেলেটা মেসেজ কল দিয়ে পাগল বানিয়ে দিচ্ছিলো হঠাৎ এমন বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় নীর সংকিত নয় একটু ও বরং ক্ষুদ্ধ রাগে ক্রোধ নীরের মনে একটা বিশাল জায়গায় নিজেদের পাকাপোক্ত স্থান করে নিয়েছে সায়ন কে যেদিন সামনে পাবে সেদিন গুনে গুনে দশ টা থাপ্পড় দেবে এভাবে নীরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কথা টা মনে মনে ভেবে রেখেছে নীর।

হঠাৎই আকাশের বুক ছিঁড়ে নেমে আসে বৃষ্টি মুহুর্তে শুকনো প্রকৃতি বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতিতে রূপবদল করে ইট-পাথরের শহরে বৃষ্টি ভিজা মাটির ঘ্রাণ পাওয়া খুবই দুষ্কর তবুও শতকদিনের মধ্যে একদিন হয়তো পাওয়া যায় সেই দিন টায় অনেক শহুরে লোকের কাছে সুখের দিন যেমনটা আজ দদর থেকে হঠাৎ ই ভেসে আসছে ভিজা মাটির মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ প্রকৃতির হঠাৎ বিনাবার্তায় এই বৃষ্টির আগমন হাজারো প্রেমিক হৃদয়ে প্রেমের ঝড় তুলেছে প্রখর ভাবে। বৃষ্টিস্নাত এই শহরে চারদিকে চারজন ক্ষুদার্থ প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ে নতুন করে প্রেমের ঘন্টা বাজাচ্ছে প্রেমের ক্ষুধা কি আর বৃষ্টি তে কমে এটা তো সেই মিটাতে পারে যার কাছে এই শক্তি টা আছে।

শ্রাবনী মুখভার করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হাত ভেজাচ্ছে মাহিরকে আজ বড্ড বেশিই মিস করছে করবেই না কেনো মাহির তো এখন আর আগের মতো হুটহাট বকে না হুটহাট রেগে যায় না বরং কেয়ার করে প্রচন্ড রকমের কেয়ার যাবে বলে মাহিরের এই অধিক কেয়ার শ্রাবনীকে মাহিরের প্রতি আরো আকৃষ্ট করে তুলছে হঠাৎ ফোন বাজার শব্দে শ্রাবণীর ধ্যান ফিরে ফোনের দিকে তাকাতেই ঠোঁটের কার্নিশ এক ঝলক হাসিগুচ্ছ ধরা দেয় শ্রাবনী ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে মাহির অত্যন্ত শীতল কন্ঠে বলে

মাহিরঃ চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টের ডানপাশে একটা বিশাল মাঠ আছে একদিন নিয়ে গিয়েছিলাম মনে আছে তোমার

শ্রাবনীঃ হুমম

মাহিরঃ আধঘন্টায় ওখানে আসো আমি ওয়েট করছি

শ্রাবনীঃ কিন্তু কেনো

মাহিরঃ বিশ্বাস করো তো আমায়

শ্রাবনীঃ হুমম

মাহিরঃ তাহলে যা বলছি তাই করো কাবার্ডে একটা শপিংব্যাগ আছে দেখো ওখানে কিছু গিফটস আছে যা যা আছে সেগুলোই পড়ে আসবে এখন রাখছি আধঘন্টা পর দেখা হচ্ছে আই এম ওয়েটিং ফর ইউ

শ্রাবনী কে কিছু বলতে না দিয়েই মাহির ফোন কেটে দেয় শ্রাবনী আহাম্মকের মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে অতঃপর রুমে চলে যায় কাবার্ড খুলে শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে বেডে এসে বসে এক এক করে ভেতর থেকে সব বের করে একটা কালো শাড়ি, মাথার গাজরা পায়েল, কালো চুড়ি আর কিছু কসমেটিকস এতোকিছু দেখে শ্রাবণী তো অবাকের উপর অবাক খুশি হয়ে রেডি হতে চলে যায়।

সায়ন অফিস থেকে সোজা বাড়ি চলে যায় ড্রয়িংরুমে সবাই মনমরা হয়ে বসে ছিলো সায়ন কাউকে কিছু না বলেই হনহনিয়ে রুমে চলে যায় আয়াত অভির কাঁধে হাত দিয়ে বলে

আয়াতঃ মনে হচ্ছে এবার আমাদের প্ল্যান সাকসেস হবে এতোদিন নীরকে দূরে রাখার ফল পেয়ে যাবো

অভিঃ তাহলে তো হলোই আমাদের জন্যই তো মেয়েটা সেদিন চলে গেলো আর সায়নের সাথে এমন বিহেভ করছে

রিহিঃ একদম ঠিক করছে ভালোবাসবে কিন্তু প্রকাশ করবে না এবার বুঝুক কেমন লাগে

রিহির কথায় সবাই হেসে দেয়।

সায়ন রুমে গিয়ে সোজা সাওয়ারে চলে যায় সব কিছু কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে বুকের ভেতরটা হঠাৎ চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে সায়ন দ্রুত সাওয়ার নিয়ে নীরের নাম্বারে ডায়াল করে কিন্তু ওপাশ থেকে ফোন রিং হতে হতে কেটে যায় সায়ন পরপর কয়েকটা কল দেয় প্রতিবার সেম হওয়ায় রাগের বশে ফোন হাতে নিয়ে ছাদে চলে যায় ধুম বৃষ্টির মধ্যে গিয়ে ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে কিন্তু নীরের প্রতি নয় নিজের প্রতি ওর দোষেই আজ দুজন এমন আলাদা রাগে মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে।

শ্রাবনী রেডি হয়ে মাহিরের মাকে বলে বেরিয়ে যায় সামনেই ড্রাইভার ওয়েট করছে শ্রাবনী গিয়ে গাড়িতে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয় বাইরের আকাশে এখনো বৃষ্টি ছিঁড়ে ধরনীর বুকে আছড়ে পড়ছে এই আবহাওয়ায় হঠাৎ মাহিরের এমন জরুরি তলবের কারণ উদঘাটনে ব্যর্থ শ্রাবনী মাহির কি বলতে পারে এটা ভেবেই নার্ভাস ফিল হচ্ছে প্রচন্ড প্রায় বিশ মিনিটের রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি এসে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছায় শ্রাবনী একটা ছাতা নিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বেশ কিছুদূর হেঁটে যেতেই দূরে রঙবেরঙের আলো দেখে শ্রাবণী ওখানেই থেমে যায় চারদিকে কোথাও মাহির নেই শ্রাবনী একবার ভাবে মাহিরকে কল দেবে কিন্তু পরক্ষণেই মত বদলায় আর দু কদম এগোয় না মাহির কোথাও নেই শ্রাবনী এবার মাহিরকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোন হাতে নেয় তখনই মাহিরের একটা মেসেজ আসে শ্রাবনীর ফোনে শ্রাবনী মেসেজ টা অন করে

_ আর একটু সামনে এগোও

শ্রাবনী আর একটু সামনে যায় কিন্তু কোথাও তো মাহির নেই হঠাৎ ডানপাশে চোখ যায় একটা হলুদ বেলুনে তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা

_ এদিকে পাঁচ পা আসো

শ্রাবনী আরো পাঁচ পা যায় তারপর আরেকটা গোলাপি বেলুনে লেখা

_ সবুজ বেলুনের নিচে চিরকুট টা পড়ো

শ্রাবনী দ্রুত সবুজ বেলুন সরিয়ে চিরকুট টা নেয় চিরকুটে লেখা

_ সোজা আরো দুই মিনিট হাঁটো শ্যামাবতী

শ্রাবনী বিরক্তি নিয়ে আরো দু’মিনিট হাঁটে সামনের একটা সাইনবোর্ডে লেখা

_ কি বিরক্ত হচ্ছো ওকে আর বেশি না জাস্ট পাঁচ মিনিট হাঁটো আর হাতের ছাতা রেখে বৃষ্টির মধ্যে এসো তাহলেই আমাকে পেয়ে যাবে

এবারের চিরকুট পেয়ে শ্রাবনী হতবাক এই বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ছাড়া গেলে তো পুরো ভিজে যাবে পাগল নাকি এই ছেলে তবুও নিরুপায় হয়ে ছাতা ফেলেই আরো পাঁচ মিনিট হাটে দ্যান সামনে তাকাতেই হতবাক

মাঠের সাইডে একটা ছোট্ট রেস্তোরাঁর একটা অংশ জুড়ে রঙবেরঙে আলো জ্বলজ্বল করছে সেখানেই নিচে ঘাসের উপর মোমবাতি দিয়ে লেখা একটা হার্ট আকা চারদিকে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হার্ট শেপের ভেতর শ্যামাবতী লেখা শ্রাবনী মুখে হাত দিয়ে অবিশ্বাস্যের চোখে তাকিয়ে আছে তখনই ওর পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করতেই শ্রাবনী পাশ ফিরে তাকায় মাহির সম্মোহনী দৃষ্টিতে শ্রাবনীর দিকে তাকিয়ে আছে শ্রাবনী মাহির কে প্ররখ করতে শুরু করে কালো পাঞ্জাবি, কালো জিন্স চুলগুলো বৃষ্টির পানিতে ইতিমধ্যে ভিজে কপালে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে শরীরের সাথে পাঞ্জাবি পুরো লেগে আছে চিপকে ঠোঁটের কোণে মাতাল করা হাসি চোখে মাদকতা মাহিরের দৃষ্টি দেখে শ্রাবণী চোখ নামিয়ে নেয়। অন্যদিকে মাহির শ্রাবনীর দিকে সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কালো শাড়ি চুলগুলো খোঁপা করে বেলিফুলের গাজরা দেওয়া তাতে চোখে কাজল ঠোঁটে লিপস্টিক হাতে কালো কাঁচের চুড়ি দুহাত ভর্তি পায়ে পায়েল চুলগুলো থেকে পানি টপটপ করে পড়ছে শ্রাবনীর দিকে মাহির একধ্যানে তাকিয়ে আছে মাহিরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণীর গলা শুকিয়ে যায় নিজেকে ধাতস্থ করে মিনমিনিয়ে বলে

শ্রাবনীঃ এখানে ডাকলেন কেনো

মাহিরঃ চলো আমার সাথে

শ্রাবনীর উত্তরের অপেক্ষা না করে শ্রাবণীর হাত ধরে লাভ শেপের দিকে এগিয়ে যায়।

______________________

নীর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তখনই পুনরায় ওর ফোন বেজে উঠে নীর নিজেকে ধাতস্থ করে ফোন রিসিভ করে কিন্তু একদম নিশ্চুপ ফোনের অপর পাশে সায়ন ও নিশ্চুপ দুজনই এভাবে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দেয় দুজন দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ ব্যতিত কিছুই শুনছে না কিন্তু এদিকে দুজনেরই হার্টবিট খুব দ্রুত বাউন্স করছে। বেশ ক্ষাণিকক্ষণ মৌনতা পালন করে নীরবতা ভঙ্গ করে সায়নই বলে

সায়নঃ এতোক্ষণ ফোন রিসিভ করোনি কেনো

নীরঃ ইচ্ছে তাই

সায়নঃ ওহ আচ্ছা আমি তো ভেবেছি বলবে ফোনের কাছে ছিলে না

নীরঃ মিথ্যে বলে লাভ কি

সায়নঃ তাই তো

তারপর আবার নেমে আসে নীরবতা সায়নের নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে সব কথা কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে নীর অধৈর্য্য হয়ে বলে

নীরঃ আর কিছু বলবেন

সায়নঃ হুম না হুম না মানে কেনো ডিস্টার্ব হচ্ছো

নীরঃ হুম প্রচন্ড ডিস্টার্ব হচ্ছি আপনার এই নীরবতায় শুধু কেনো নিজের টাইম নষ্ট করছেন তার থেকে আপনি ফোন টা কেটে দেন কোনো কথায় তো নেই আপনার

সায়ন চট করে বলে

সায়নঃ আছে

নীরঃ আছে

সায়নঃ হুমমম

নীরঃ ওহ তাহলে বলুন

সায়ন জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে মোলায়েম গলায় বলে

সায়নঃ একটু তোমার বাড়ির ছাঁদে যাবে

নীরঃ কেনো

সায়নঃ আমি বলছি তাই প্লিজ যাও

নীরঃ কিন্তু বাইরে তো বৃষ্টি

সায়নঃ তো কি তুমি তো বৃষ্টি বিলাসী

নীরঃ হুমম ছিলাম এখন আর ভালো লাগে না

সায়নঃ আচ্ছা যাও তো আগে

অগত্যা নীর বাধ্য হয়ে ছাঁদে গিয়ে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ায় রেলিঙে ঠেস দিয়ে বলো

নীরঃ এবার বলুন

সায়নঃ বাড়ি ফিরবে না

নীরঃ বাড়িই তো আছি

সায়নঃ এটা তোমার বাড়ি না

নীরঃ হুমম হয়তো ছিলো কিন্তু এখন গিয়ে কি করবো বলুন তো আমি থাকা যে কথা না থাকা আপনার কাছে সেইম

সায়নঃ নাহ নীর কষ্ট হয় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রতিটা মুহুর্তে তোমাকে মিস করছি বড্ড বেশি প্লিজ কাম বেক

নীরঃ কোন অধিকারে

সায়নঃ তুমি এ বাড়ির বউ আমার বউ এটা কি যথেষ্ট নয়

নীরঃ না এটা যথেষ্ট নয় আর আমাকে মিস কেনো করেন আমাকে তো আপনার মিস করবার কথা না ভালোবাসেন আমায়

নীরের কথায় সায়ন নিশ্চুপ সায়নের নীরবতার অর্থ বুঝে নীর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে চোখের কার্নিশে পানি চলে আসে নিজেকে সামলে কিছু বলতে নিলে সায়ন বলে

সায়নঃ না ভালো টালো বাসি না তোমায়

সায়নের কথায় নীরের চোখ থেকে এবার টুপটাপ বর্ষণ শুরু হয় এতোদিনে ও সায়নের মনে জায়গা করতে পারলো না নিজের এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা বোধহয় দুনিয়ায় আর একটা ও নেয় ভালোবাসার মানুষের মনে যে প্রেমিক-প্রেমিকা জায়গা না করতে পারে সে সত্যিই পরাজিত।

সায়নঃ আমি তো তোমায় অস্তিত্বে ধারণ করেছি ভালো তো সবাই বাসতে পারে অস্তিত্বে ধারণ কয়জন করতে পারে ভালোবাসার অনেক রূপ হয় প্রথম ভালোবাসা হয় লাস্ট ভালোবাসা হয় কিন্তু অস্তিত্বের কোনো রূপ নেই এটা শুধু একটায় আর আমি আমার সেই দামী জায়গা টায় তোমাকে বসিয়েছি আজ থেকে আরো অনেক বছর আগে তুমি যখন ক্লাস টেনে পড়তে তখন থেকে তোমাকে আমি আমার অস্তিত্বে স্থান দিয়েছি তুমি খুউব বোকা প্রেয়সী একটা মেয়ে হাজার মাইল দূর থেকে বুঝতে পারে কোন ছেলে তাকে কোন নজরে দেখে তুমি যখন আমাকে ভাইয়া বলতে আমি তখন রাগ করতাম কেনো এটা একবারো ভাবোনি কেনো সব মেয়ে ছেড়ে শুধু তোমার পিছে লাগতাম এটা বুঝোনি ঝগড়া করার বাহানায় তোমার সাথে অনেক কথা বলতাম আর কেনোই বা বিয়ের আসর থেকে এভাবে নিয়ে আসলাম শুধুমাত্র শুভর কথার জন্য হুহ নিজের অস্তিত্ব কে কিভাবে অন্যের হাতে সমর্পণ করি সরি প্রেয়সী এতোটা উদার আমি নয় যেই মেয়ে টা সেই ছোট্ট বয়স থেকে আমার মনে জায়গা দিয়েছি তাকে অন্যের পাশে সহ্য করার মতো শক্তি আমার নয় যা আমার তা একান্ত আমার

সায়নের কথায় নীর অবাকের সপ্তম আকাশে ধাবিত হয় সায়ন নীর কে টেন থেকে লাভ করে আর নীর বুঝতেই পারেনি উল্টো এতোগুলো দিন সায়নকে এভাবে কষ্ট দিলো নীরের প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে শেষপর্যন্ত ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয় ফোনের ওপাশ থেকে সায়ন নিঃশব্দে হেসে দেয় পুনরায় বলে

সায়নঃ তুমিই আমার জীবনের সেই নারী যার সামান্য একটা স্পর্শ আমার মন উতালপাতাল করে তুলেছিলো যখন ক্লাস টেনে পড়তে তখন একবার বজ্রপাতের শব্দে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে মনে আছে তোমার

নীরঃ হুমম

সায়নঃ সেদিন থেকে শুরু হলো আমার জীবনে রঙিন বসন্ত তবে এখনো বলছি তোমার ছোঁয়া আজও আমায় উন্মাদ করে তুলে যার সামান্য স্পর্শে আমি তাকে আমার অস্তিত্ব বানিয়েছি তাকে কি ভালোবাসা যায় হুহ ভালোবাসার থেকে কঠিন এই শব্দ যার ওয়ার্ড আমার কাছে জানা নেই তবে তুমি আমার অস্তিত্ব আমার জীবনের প্রথম এন্ড লাস্ট নারী যার সাথে আমি জীবনের শেষ সেকেন্ড কাটাতে চাই থাকবে তুমি আমার পাশে

নীর এবার বেশ শব্দ করে কেঁদে দেয় যেই মানুষ টা ওকে এতোটা ভালোবাসে সেই মানুষ টা কে এভাবে কষ্ট কিভাবে দিতে পারলো নীর কাঁদতে দেখে সায়ন বলে

সায়নঃ ভালোবাসি বলি বা না বলি অস্তিত্বে বিচরণ তোর আমার প্রতিটা স্পর্শে তুই ছন্দে তুই তোর এক ছোঁয়ায় আমার বুকের বা পাশ টা পুরো কেঁপে উঠেছিলো তোর এই #LoVe_Effect এর কাছে ভালোবাসি কথা টা অতি নগন্য তাই তো তুই আমার ভালোবাসা নয় আমার অস্তিত্ব তুই প্রেয়সী

সায়নের প্রতিটা কথায় নীরের প্রতি আকাশসম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নীর রেলিং ঘেঁষে নিচে বসে চোখ বন্ধ করে নেয় দুজনের হার্টবিট দ্রুত বাউন্স করছে ফোনের ওপাশ থেকে সায়ন নীরের জোরে শ্বাস নেওয়ার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সেই সমানহারে নীরের হৃদ স্পন্দনের শব্দ সায়ন চোখ বুঁজে নেয় বুকের ভেতর একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়।

______________

শ্রাবনীকে নিয়ে হার্টশেপে প্রবেশ করে দুজনই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবনী কাপাকাপা গলায় বলে

শ্রাবনীঃ ক কিছু ব বলবেন না

মাহিরঃ অনেক কিছু বলবো

অতঃপর আবার নীরবতা মাহির একটা জোরে শ্বাস নিয়ে শ্রাবনী সম্মুখে দাঁড়ায় অতঃপর শ্রাবনীর গালে হাত রাখে মাহিরের শীতল হাতের স্পর্শে শ্রাবনী কেপে উঠে মাহির স্মিত হেসে বলে

মাহিরঃ আমি ফিল্মের নায়কদের মতো বা অন্য প্রেমিকদের মতো এতো নাটক আর আধিক্ষেতা করতে পারি না তাই আমি সরাসরি বলছি

তোমার সাথে আমার অনেক দিন বাঁচার স্বপ্ন

এই ধরো চুলে আসবে সাদা রঙ
চামড়ায় পড়বে ভাজ
কিংবা হাঁটার জন্য আরেকটা পায়ের প্রয়োজন হবে

যখন তোমার কথায় সবাই বিরক্ত হবে
তুমি হাসলে দেখা যাবে – বয়স্ক দাঁতের ফাটল

যখন তোমার কথা সবার অহেতুক মনে হবে

তোমার সাথে আমি আরো শত বছর বাঁচতে চাই যতদিন নিঃশ্বাস থাকবে, যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে ততদিন তোমায় বলতে চাই,,,

” তুমি কি আমার হাসিমুখের আবার কারণ হবে

তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বারণ হবে ”

তোমাকে আমি যতন করে বুকের পাঁজরে রাখবো দেবে আমায় সেই অধিকার তোমাকে আমি আমার স্পর্শে শিহরিত করতে চাই শ্যামাপাখি হাজার জনৃ চাই না তোকে একটা জনম শুধু চাবো বুকের ভেতর নিঃশ্বাস জুড়ে তোকেই শুধু পাবো। তোর মুখ থেকে আমি সবসময় এই ডাক গুলো শুনতে চাই টুকটুক টুকলুস টুকাই, সোয়ামী ব্লা ব্লা দিবি অধিকার

মাহির শ্রাবনীর দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে থাকে শ্রাবনীর চোখে পানি চিকচিক করছে আচমকা শ্রাবনী মাহিরকে জড়িয়ে ধরে মাহির তাল সামলাতে না পেরে নিচে শুয়ে পড়ে আর মাহিরের বুকের উপর শ্রাবনী মাহুরের পাঞ্জাবি আঁকড়ে বলে

শ্রাবনীঃ তোর পেটে পেটে এতো টুকলুস যা দিলাম অধিকার দশ টা না পাঁচ টা না একটাই বর আমার

প্রতিত্তোরে মাহির স্মিত হেসে শ্রাবণী মাথা উঁচু করে কপালে চুমু একে বলে

মাহিরঃ পাগলী একটা

শ্রাবনীঃ হুমম শুধুই তোর শিশু বউ

মাহিরঃ হুমম আমার শিশু বউ

মাহির শ্রাবনীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শ্রাবনী ও মাহিরকে জড়িয়ে ধরে

________The End ______