Marriage With Benefits 2 Part-10

0
3382

#Marriage_With_Benefits_2
#Part_10
Writer::Sanjida Nahar Shaanj
.
.
আম্মু তুমি কাদঁছো?(আরাভি আমার চোখের জল মুছে দিয়ে)

তুমি কি আমাদের দেখে খুশি না?(আরাভ)

না। বাবারা আমি তোমাদের দেখে খুব খুশি।বরং সরি।তোমাদের কাছে আমি আগে আসতে পারি নি।অনেক কষ্ট হয়েছে না তোমাদের।আম্মু রিয়েলি সরি।আর কখনো এমন হবে না।(আমি ওদের গালে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম)

সত্যিই আম্মু তুমি আমাদের ছেড়ে যাবে না তো?এখন থেকে আমরাও একসাথে থাকবো তাই না?আমাদেরও আম্মু আছে!(আরাভি)

হুম।তোমাদেরও আম্মু আছে।আর আমারও তোমাদের মত সন্তান আছে।(আমি চোখ মুখ মুছে)

আমাদের এই মিলন দেখে বাড়ির সবার চোখ ভিজে গেলো।সবাই কাদঁছে।কিন্তু আমি তাদের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম যে উনারা এই বাড়িরই লোক কিন্তু কে আমার কি হয় তা আমার অজানা!
ও আস্থা তুমি হয়তো চিনতে পারছো না কাউকে?আমি পরিচয় করে দিচ্ছি।
বলেই আভি আমাকে নিয়ে চললো ভিতরে।আমি আরাভকে কোলে নিয়েছি আর আরাভিকে আভি।

উনি হচ্ছে আমার দাদু আরমান চৌধূরী।(আভি একটা বুড়ো লোককে দেখিয়ে)

আসসালমুআলাইকুম।(আমি সালাম দিয়ে)

অলাইকুম আসসালাম।যাক ভালো হয়েছে এখন অন্তত শুরুটা সালাম দিয়ে হয়েছে।আগের বার তো যুদ্ধ দিয়ে হয়ে ছিলো। তা কি যুদ্ধ রে…বাপ রে বাপ।(দাদু মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো)

আমি উনার কান্ড দেখে হাসছি।মনে হচ্ছে উনার সাথে আমার অনেক ঝগড়া হতো।যদিও আমার মনে নেই তবুও উনার ব্যবহার দেখে বুঝা যাচ্ছে।পড়ে হয়তো আমাদের সম্পর্ক ভালো হয়েছিলো।কে জানে?তবে উনি দেখতে রাগী হলেও মানুষটা অনেক মজার।(আমি মনে মনে)

আর ও হচ্ছে আরিফ।আমাদের আরেকটা ভাইই বলতে পারো।অনেক বছর ধরে দাদুর সাথে আছে উনার সেক্রেটারি(আভি দাদুর পাশে দাড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে দেখিয়ে)

হ্যাল্লো।আস্থা ম্যাম।আসলে কি বলো তো।আমি,,নিহাল আর আরমান স্যার মিলেই আপনাদের বিয়েটা দিয়েছি।আর না হলে আপনার বর তো বিয়ে করা তো দূরে থাক কোনো চিন্তাও করতো না।কিন্তু এখন দেখো আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।কিন্তু আমাদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে না।(আরিফ একদমে কথা গুলো বলেই যাচ্ছে)

আরিফ চুপ করো।(আভি দাত চেপে চেপে)

ওই দেখো সত্যিই কথা বললেই দোষ।(আরিফ মুখ ফুলিয়ে)

আমি আরিফের কথা শুনেও হাসছি।কি সুন্দর উনি কোনো কিছুকে মজার মাধ্যমে তুলে ধরতে পারে।আসলেই অসাধারণ।(আমি মনে মনে)

উনি হচ্ছে আমার বাবা।(আভি একজন মধ্য বয়স্ক লোককে দেখিয়ে)

আসসালমুআলাইকুম।(আমি)

বাবা শুধু মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
বাড়ির জান আজ বাড়িতে ফিরে এসেছে।

আমিও শুধু মুচকি হাসি দিলাম।

উনি মিস সাবিনা।আমাদের সবারই খেয়াল রাখে।(আভি)

স্বাগতম আস্থা।(মিস সাবিনা)

থ্যাঙ্ক ইউ।(আমি)

আর উনি হচ্ছে আমার চাচা।রোহান।(আভি)

আসসালমুআলাইকুম।(আমি মুচকি হেসে)

ওয়েলকাম মা।তোমাকে খুব মিস করেছি।(রোহান)

হুম।(আমি)

আর বাকি সবার সাথে তো তোমার মিট করাই।(আভি)

অনেক হয়েছে এই মিলন মেলা।এখন খেতে চলো।আস্থার রেস্ট নিতে হবে।আর ওর ঔষুধের সময়ও হয়ে গেছে।বাকি মিলন মেলা কালই হবে।(সুমাইয়া)

হুম।ঠিক বলেছো বৌমা।(দাদু)

মিস সাবিনা।সবার খাবার দাবার গুলো টেবিলে নিয়ে আসতে আমাকে সাহায্য করেন প্লিজ।(সুমাইয়া)

হুম।চলুন
বলেই মিস সাবিনা আর সুমাইয়া মা কিচেনে গেলো।আমিও তাদের সাথে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু উনারা আমাকে যেতে দিলো না।বললো আরাভ আর আরাভীর সাথে সময় কাটাতে।আমিও ভাবলাম এখন সব চেয়ে বেশি আমার বাচ্চাদের কাছে থাকা প্রয়োজন।ওদের আমাকে দরকার।তাই আমি ওদের সাথে আর বাড়ির সবার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম।যতো উনাদের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবো তত আমার পক্ষে ভালো হবে।আমার তো সারাজীবন এখানেই থাকতে হবে।সেটা আমার স্মৃতি আসুক আর নাই আসুক।আভি আমাকে কখনো নিজের থেকে দূরে থাকতে দিবে না যতো টুকু আমি এতো দিনে বুঝতে পারছি।উনি আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে কিন্তু আমি এখনও উনাকে ভালোবাসতে পারি নি।যদিও উনি আমার স্বামী।কবে উনার জন্য আমার মনে ভালোবাসা তৈরি হবে আমি জানি না।(আমি বসে বসে ভাবছি)

আম্মু জানো আমাদের স্কুলে না একটা ছেলে আছে।খুব বেয়াদব।খালি আমাকে খেপায়।(আরাভি আমাকে ওর স্কুল সম্পর্কে বলছে)

ও তোমাকে খেপায় না।তুমি একটু থেকে একটু হলেই ক্ষেপে যাও।(আরাভ শান্ত গলায়)

আরাভ আমি না তোর বড়ো বোন?(আরাভি ক্ষেপে গিয়ে)

দেখো তোমাকে খেপানো কত সহজ।এই যে একটু কথায় ক্ষেপে গেছো।আর শুনো সত্যিই কথা ইজ সত্যিই কথা শুধু বড়ো বোন হলেই হয় না।(আরাভ)

পরেই আরাভ আর আরাভি ঝগড়া করতে শুরু করলো।আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি।ওরা আমার সন্তান।কিন্তু বলতে হবে বয়সের চেয়ে একটু বেশিই পাকনা। আরাভি একটু জেদী,,আর বস টাইপের।ওকে খেপানো খুব সোজা।আর আরাভ একটু শান্ত,,ঠান্ডা মাথার।কিন্তু ওকেও রাগানো খুব সহজ।এখন আমার শুধু এইটুকু চিন্তা যে আমি ভালো মা হতে পারবো তো ওদের?

অনেক হয়েছে।এবার থামো।ঝগড়া করবে নাকি আম্মুর সাথে কথা বলবে?(আভি দুটোকে থামিয়ে)

কিন্তু ওরা দুটো থামার বদলে তর্ক করেই যাচ্ছে।

আমি হাসছি।

আস্থা এখন তুমিই ওদের থামাও।(আভি ওদের সাথে না পেরে)

অনেক হয়েছে।অনেক হয়েছে।এখন আমাকে বলত আরাভ আর আরাভি তোমাদের হবি কি কি?(আমি দুটোকে শান্ত করে)

আমার হবি বই পড়া।(আরাভ)

আর আমার হবি হচ্ছে নাচ গান করা(আরাভি)

ও খুব ভালো হবি তো।আচ্ছা শুনো কালকে তো তোমাদের স্কুল আছে না?(আমি)

হুম(আরাভ আর আরাভি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

আমি আর তোমার পাপা কালকে তোমাদের স্কুলে দিয়ে আসতে যাবো।ওকে?(আমি)

ওকে।(আরাভি আর আরাভ আমাকে জড়িয়ে ধরে)

সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আস্থা তুমি ঠিক পারবে ওদের ভালো মা হয়ে উঠতে।তুমি একজন ভালো মেয়ে,,ভালো বৌমা,,আর একজন ভালো স্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছো এখন একজন ভালো মা হওয়ার পরীক্ষাতে তুমি নিজেকে ঠিক প্রমাণ করতে হবে।(আভি)


খাবারের টেবিলে
আম্মু আমাকে খাইয়ে দিবে কিন্তু!(আরাভি)

অবশ্যই মা।(আমি)

আর আমাকে?(আরাভ মুখ ফুলিয়ে)

ওরে বাবাটারে তোমাকেও খাইয়ে দিবো।কোনো চিন্তা করতে হবে না(আমি আরাভের গালে চুমু দিয়ে)

পরেই আমি আরাভ আর আরাভিকে খাইয়ে দিতে লাগলাম। আরাভ আর আরাভি চোখে চোখে কি যেনো ইশারা করলো আমি বুঝতে পারলাম না।
কিছুক্ষণ পর যখন আমি আরাভ আর আরাভিকে খাওয়াচ্ছি তখন আরাভ হটাৎ বলে উঠলো
আম্মু।তুমি শুধু আমাদেরই খাওয়াচ্ছ। পাপাকেও খাইয়ে দাও।(আরাভ)

এইটা শুনতেই আভি খাবার মুখে দিয়ে কাশতে শুরু করলো।আমি থতমত খেয়ে গেলাম।এইটা আমার কাছে একটা নতুন অনুভুতি।খুব লজ্জা লাগলো আমার।একদম সবার সামনে আমার ইজ্জত নিলাম করে দিলো আমারই বাচ্চাগুলো।(আমি মনে মনে)

এই তোদের এই সব কে বলেছে?(আভি ভ্রু কুঁচকে)

কে বলবে আবার?আরশি ফুপি যখন হিন্দি মুভি দেখে তখন আমরাও তার সাথে দেখি।ওই খানে তো হিরো হিরোইন এক আরেকজনকে খাইয়ে দেয়।আর,,,,
আরো কিছু বলার আগেই নিজের ইজ্জত রক্ষা করার জন্য আমি ভাতে লোকমা আরাভীর মুখে ভরে দিলাম।যাতে ওর কথা কম খাওয়া বেশি হয়।আভি রাগী চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে।

আরশি?তোর রুমের টিভি কি নর্দমায় ফেলতে হবে?(আভি দাত চেপে চেপে)

না ভাই।বিশ্বাস করো।তোমার পিচ্ছি গুলো আমাকে ইচ্ছে করে ফাসাচ্ছে।এই তোরা কি যা তা বলছিস?(আরশি আরাভ আর আরাভীর দিকে চোখ রাঙিয়ে)

বাকি সবাই মুচকি মুচকি হাসছে।আর আমাদের তামসা দেখছে।তবে সত্যিই এই অবস্থার একটা আলাদাই ফিলিংস আছে।যা সত্যিই অসাধারণ।(আমি মনে মনে)

আস্থা বাচ্চারা যখন চায় তাহলে খাইয়ে দাও।(আদি খেতে খেতে)

মি:: খান। সবার সামনে কি করে?(আমি অবাক হয়ে)

আস্থা বাবা যেহেতু বলেছে খাইয়ে দাও।আর হ্যা উনি তোমার বাবা মিস্টার খান না।(আভি)

কিন্তু?(আমি সংকোচ নিয়ে)

আরে আস্থা খাইয়ে দাও।নয়তো বাপ ছেলে,,ছেলের ছেলেমেয়ে কেউই তোমার পিছু ছাড়বে না।(দাদুও খেতে খেতে)

এখন আমার সেই গানটা খুব মনে পড়ছে যেটাতে বলে “”আমি পরে গেছি মাইনকা চিপায়।””সত্যিই এরা কতো অদ্ভুত।আমাকে ঠিক সব মিলে ফাঁসিয়ে দিলো।

আমি ভাতের লোকমা নিয়ে আভির মুখে তুলে দিলাম।আভি একটা দুষ্টু হাসি দিয়েই লোকমা মুখে নিতেই আমার হাতে কামড় দিয়ে বসলো।আমি অবাক হয়ে গেলাম।পরেই উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তারপর সবার অনুরোধে উনি আসলো আমাকে খাইয়ে দিতে।এখন আমিও পেয়ে গেছি বদলা নেওয়ার সুযোগ।যেই উনি আমার মুখে লোকমা দিলো ওমনি খুব জোড়ে আমিও কামড় দিলাম।কিন্তু উনি আহ্ ওহ্ কিছু করলো না বরং হাসলো।যা দেখে আমার প্রচন্ড লজ্জা লাগলো।আমি খুবই অবাক নিজের কান্ড নিজেই দেখে।
এইভাবে মজা মাস্তি করতে করতে আমরা খাবারের পালা শেষ করলাম।


অন্যদিকে ফোন
মামী তুমি এইসব কি বলছো?আভি আস্থাকে নিয়ে গেছে মানে?আস্থার কথা জানলো কি করে ও?(জয় রেগে)

দেখো জয়।যা হওয়ার হয়ে গেছে।আমরা খুব বড়ো ভুল করেছি আস্থা আর আভিকে আলাদা করে?ওদের আলাদা করা ঠিক হয়নি আমাদের।ওই দুধের শিশুদের থেকে আস্থাকে আলাদা করা ঠিক হয়নি আমাদের।এখন ওরা এক হয়ে গেছে।তোমারও মুভ অন করা উচিত।(কলি)

মুভ অন মানে?ছয় বছর আমি ওর খেয়াল রেখেছি।ছয় ছয়টা বছর আমি ওর সুখে দুঃখে সাথে থেকেছি।আর এখন সব ভুলে মুভ অন মানে?(জয়)

জয়।ছয় বছর আমারই কিন্তু আভি আর আস্থাকে আলাদা রেখেছি।না রাখলে আভিই আস্থার সম্পূর্ন খেয়াল রাখতো।আর কোনো দিন খোটাও দিতো না(কলি)

আন্টি আমি কিন্তু সেভাবে বলতে চাই নি।(জয়)

তুমি কোন ভাবে বলতে চেয়েছো আমি জানি না।কিন্তু আভি কিন্তু এখন আস্থাকে নিজের থেকে কিছুতেই দূরে থাকতে দিবে না।আর আস্থাও কিন্তু আভিকে মেনে নিয়েছে।তুমি বৃথা চেষ্টা করো না।
বলেই কলি ফোনটা রেখে দিলো।

আভি,,,আভি,,আবার সেই আভি।আমার আর আস্থার জীবন থেকে ও কি কখনও বের হবে না?আমি যাবো বাংলাদেশে গিয়ে আস্থাকে নিয়ে আসবো।যে করেই হোক।আস্থা শুধু আমার।(জয় রেগে)


রুমে আজ আরাভ.. আরাভি,,আভি আর আমি একসাথে এক রুমে ঘুমাবো।ভাবতেই খুব অবাক লাগছে আমার নিজেরই।একটা পুরুষ মানুষের সাথে এক ঘরে থাকবো।যদিও দুটো বাচ্চা আছে আমাদের তবুও আমি একটু অস্বস্তি বোধ করছি।


আরাভ আর আরাভি ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।তখনই পিছন থেকে আভি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আর ধরেই আমার ঘাড়ে মুখ গুজে দিল।আর ওমনি আমি উনার থেকে দূরে সরে গেলাম।
আভি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

দেখুন মি আভি।আমি আপনার স্ত্রী ঠিকই কিন্তু আমার এখন কিছুই মনে নেই।আর এই সব নতুন জিনিসে আমার খাপ খাওয়াতে একটু সময় লাগবে। প্লিজ ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি কি অপেক্ষা করতে পারবেন?(আমি নিচের দিকে তাকিয়ে)

উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।তাহলে কি উনি আমার অনুরোধটা শুনলো না।এখন। কি উনি আমার উপর ঝাপিয়ে পড়বে?(আমি মনে মনে ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে ফেললাম)

আভি আমার কাছে এসেই আমার কপালে একটা চুমু দিলো।পরেই মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো
ছয় বছর তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পেরেছি তখন তো তুমি আমার সাথেও ছিলে না।আর এখন তো আমার সাথে আছো একটু না যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি নিজে থেকে চাইছো আমি অপেক্ষা করে যাবো।
বলেই আভি বিছানার দিকে শুয়ার জন্য এগুতে লাগলো।

তখনই আমি হটাৎ উনার হাত ধরে বললাম
আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই।


চলবে,,,,,