Marriage With Benefits 2 Part-09

0
3203

#Marriage_With_Benefits_2
#Part_9
Writer::Sanjida Nahar Shaanj
.
.
আবার আমাকে উনি সেই উদাসীন চোখে দেখছে যা আমাকে আবারো নিজের নজর লুকাতে বাধ্য করছে।

ঠিক আছে তুমি দেখা করতে পারো!(আভি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)

থ্যাঙ্ক ইউ।(আমি মুচকি হেসে)

পরেই উনি আর উনার পরিবার বেরিয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পর মা বাবা ভিতরে ঢুকলো।ঢুকেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আমি বেডে বসে ছিলাম তখন।মা আমাকে জড়িয়ে ধরেই কান্না করতে লাগলো।
আস্থা।তুই ঠিক আছিস?(মা আমার চোখে মুখে চুমু দিয়ে)

আস্থা?তাহলে উনারা ঠিকই বলেছেন।আমি আবনী না।আমি আস্থা।আভি যে ওই লোকটার স্ত্রী তাই না মা?(আমি শান্ত চোখে)

মা চুপ করে আছে।

আসু মা।তোর মা ভুল বশত একটা কাজ করে ফেলেছে।আর এখন ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।(জিসান কলির কাধে হাত রেখে)

বাবা।আমি জানি না আমার অতীতে কি এমন হয়েছে যার জন্য তোমরা এতো বড় কথা গুলো আমার কাছ থেকে লুকিয়ে গেছো।আর আমি জানতেও চায় চাই না।কারণ এখন যা হবার হয়ে গেছে অযথা যা হয়ে গেছে তা টেনে আমি আর কষ্ট বাড়াতে চাই না।তবে একটা জিনিস মা বাবা,,তোমরা কাজটা ঠিক করোনি।তবুও আমি তোমাদের উপর রাগ করতে পারি না।কারণ তুমি আমার মা আর তুমি আমার বাবা।তোমরা যা করেছো আমার ভালোর জন্যই শুধু অজান্তেই খারাপ হয়ে গেছে।(আমি মা আর বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম)

তুই রাগ করে নেই তো মা?(কলি)

না মা।আমি একটুও রাগ করিনি।বিশ্বাস করো।যা হয়েছে তা আমার ভাগ্য ছিলো।জীবন তো একটাই না?এতো রাগ অভিমান করে কাটিয়ে দিলে উপভোগ করবো কি করে?(আমি মুচকি হেসে)

আই অ্যাম রিয়েলি সরি মা।(মা আমার হাত ধরে চুমু দিয়ে)

আর ওইসব কথা বলবে না।ওই সব আমাদের অতীত।ওকে?(আমি)

হুম।(বাবা আমাকে আর মাকে জড়িয়ে ধরে)

আস্থা।তুই তো আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস কিন্তু আভি,,,আভি আমাকে এখনও ক্ষমা করেনি।(কলি মাথা নিচু করে)

আচ্ছা।তোমরা বাহিরে গিয়ে উনাকে ভিতরে আসতে বলো।(আমি)

আচ্ছা।(জিসান)


একই সময় বাহিরে
আভি পায়চারি বন্ধ কর।(আদি বিরক্ত হয়ে)

কি করে বন্ধ করবো বাবা?না জানি উনারা আস্থা কি বলছে?(আভি পায়চারি করতে করতে)

আভি তুই কিন্তু এখন অতিরিক্ত চিন্তা করছিস?(সুমু বিরক্ত হয়ে)

এমনি এমনি তো আর চিন্তা করছি না।উনারা যদি আবার কোনো চাল চালে তাহলে কিন্তু খবর আছে।বলে দিলাম(আভি)

ভাই।উনারা কিছু করবে না।এখন তো আমরা আছিই।কিছু করলে উনারা ফেঁসে যাবে।(আয়ুশ)

তবুও আমি কোনো রিস্ক নিবো না।আস্থাকে আমি আর হারাতে পারবো না।
বলেই আভি আবার পায়চারি করতে লাগলো।

কি হয়েছে এই ছেলের?আস্থাকে নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করছে ও।(সুমাইয়া মনে মনে)


কলি আর জিসান বাহিরে বেরিয়ে
আভি তোমাকে আসু ডাকে!(কলি)

আপনি কি আবার কিছু করে এসেছেন?আমি কিন্তু বলছি এই বার কিছু করলে কিন্তু,,,
আভি আরো কিছু বলতে যাবে তখনই সুমাইয়া আভিকে থামিয়ে বললো
আভি আগে গিয়ে দেখ।

আভি কেবিনের ভিতরে চলে গেলো।

কেমন আছিস সুমু?
বলেই কলি সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরলো।

আলহাদুলিল্লাহ।তুই?(সুমাইয়া)

আলহাদুলিল্লাহ।এখনও কি রেগে আছিস?(কলি অনুতপ্ত হয়ে)

একদম না।আমি কারো উপর রেগে নেই।তোর উপরও না।(সুমাইয়া মুচকি হেসে)

পরেই দুই পরিবার নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করতে লাগলো।


অপরদিকে
আস্থা দেখো।কলি আন্টি মানে তোমার মা যা বলেছে তাতে কিন্তু আমি একদম রাজি না।আমি কিন্তু তোমাকে কিছুতেই আমার থেকে আলাদা হতে দিবো না।বলে দিলাম যে যাই করুক।(আভি একদমে কথা গুলো বললো)

আমি এই লোকের কথা শুনে খুব অবাক।উনি আমাকে হারানোর কথা নিয়ে কতো ভয় পায়।উনি কতো ভালোবাসেন আমাকে।হয়তো আমিও উনাকে এমনি ভালোবাসতাম।কিন্তু এখন তো আমি কিছু মনে করতে পারছি না।আর এই জন্যই আমার খুব আফসোস হচ্ছে।তবে উনাকে এখন পুরো একটা ছোটো বাচ্চার মত লাগছে যে তার খেলনা কাউকে দিবে না।এই ফিলিংস এর সাথে আমি অনেক পরিচিত।হয়তো উনার সাথে থাকলে ধীরে ধীরে আমার সব মনে পরে যাবে।আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভাবছি তখনই খেয়াল করলাম উনি বাচ্চা মানুষের মত ঠোঁট ফুলিয়ে আছে।আর তা দেখে আমি আর নিজের হাসি আটকাতে পারলাম না।ফিক করে হেসে দিলাম।

কি হলো?তুমি হাসছো কেনো?(আভি অবাক হয়ে)

তো কি করবো শুনি?আপনি এমন বাচ্চাদের মত ব্যবহার করছেন কেনো?(আমি হাসতে হাসতে)

আমি তো জাস্ট,,,
বলেই আভি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কতো বছর পর আবার তোমার সেই প্রানবন্ত হাসি দেখতে পেলাম আস্থা।আমি কতো মিস করছি এই হাসিটা!সেই প্রানবন্ত হাসি আবার দেখতে পারবো কোনো দিন ভাবি নি।
ভেবেই আভি একটা হাসি দিলো।

আমি হাসি থামিয়ে আবার বলতে শুরু করলাম
আপনি কি আমার মাকে মাফ করবেন না?(আমি)

কখনও না।উনি কি করেছে জানো না?উনাকে কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না।(আভি রেগে)

উনি আমার মা।উনি যা করেছেন আমার ভালোর জন্য করেছেন।এইজন্যে উনাকে দোষ দেয়া কি ঠিক?(আমি)

তোমার কি মনে হয় উনি যা করেছেন তা ছোটো খাটো বিষয়।উনি তোমার থেকে আমাকে আলাদা করেছে।(আভি রেগে)

আভি।এখন তো আপনি আমাকে পেয়ে গেছেন তাই না?তাহলে এখনও মার প্রতি রাগ পুষে রাখবেন?তাহলে উনার আর আপনার মধ্যে পার্থক্য কি রইলো।দেখুন আমি জানি না কি হয়েছিল অতীতে কিন্তু এইটা বলতে পারবো যে উনি একজন মা,,আমার মা।আমার জন্য হলেও উনাকে ক্ষমা করে দেয়া আপনার উচিত।আমি এখন আর কোনো ঘৃণা আমার জীবনে চাই না।প্লিজ?(আমি অনুরোধ করে)

আস্থা তুমি কি?আগেও তুমি মুহূর্তে সম্পর্ক গুলো ঠিক করে দিতে এখনও দিচ্ছো।তোমার স্মৃতি থাকাকালীন তুমি যেমন ছিলে এখনও তুমি তেমনি আছো।শুধু পার্থক্য এইটুকু যে তোমার কোনো স্মৃতি নেই।(আভি আবার সেই উদাসীন চোখে)

আমি উনার হাত ধরে রাখলাম।উনাকে শান্তনা দেয়ার কোনো ভাষাই আমার জানা নেই।তাই চুপ করে আছি।উনিও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।উনিও হয়তো ভাবছে কি বলবে?একদিন উনি হয়তো আমার কাছে অনেক পরিচিত ছিল আর এখন আমার কাছে উনি অপরিচিত।তবুও নিজেদের মধ্যকার সেই অনুভূতিটা এখনও যায় নি।সেই অনুভূতিটা খুব সুন্দর।বুঝা যায় না,,বলা যায় না শুধু অনুভব করা যায়।একটা অব্যাক্ত অনুভূতি।

আমাদের এই রোমান্টিক মুহূর্তের মধ্যে বারোটা বাজিয়ে প্রবেশ করলো আয়ুশ,,
ওপস।সরি।জানতাম না এখানে কোনো রোমান্টিক মুহূর্ত চলছিলো।(আয়ুশ চোখ ডেকে)

ওই নেকামি।এইদিকে আয়।কোনো রোমান্টিক মুহুর্ত চলছিলো না।ফাজলামি বন্ধ কর আর চোখ থেকে হাত সরা।(আভি নিজেকে সামলে)

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।কারণ সে ঢুকেছে আমি তাকে চিনি না।তাই তার পরিচয় জানতে আভির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।

ও হচ্ছে,,,এই(আয়ুশ) এসে নিজের পরিচয় দিয়ে যা।(আভি)

ও হেল্লো।ভাবী আমি তোমার একমাত্র দেবর আর তোমার ক্লাস মেটও বলতে পারো।(আয়ুশ আমার দিকে হাত বাড়িয়ে)

তোমার সাথে আমার কেমন সম্পর্ক ছিল জানি না।তবে তুমি ওইদিন ছায়ার সাথে যা করেছো ঠিক করো নি। ও আমার ছোট বোন হয়।ওকে আমি খুব আদর করি।আর তুমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছো।ওর উপর চিৎকার করেছো।যা করা একদম তোমার ঠিক হয় নি।(আমি খুব রাগী গলায়)

আভি আমার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো।

ভাবী তোমার কি সত্যিই স্মৃতি শক্তি চলে গেছে?তুমি তো সেই আগের মত আমাকে বকা দিচ্ছ।(আয়ুশ অবাক হয়ে)

আস্থা তোমার স্মৃতি শক্তি থাকুক আর নাই থাকুক।তুমি যেই আস্থা ছিলে সেই আস্থাই আছো।(আভি মনে মনে)

আমি আর আয়ুশ কথা বলছি তখনই আমাদের মাঝ পথে আভি থামিয়ে বললো
অনেক হয়েছে কথাবার্তা এখন যাওয়া যাক।চলো আস্থা।আর তুই(আয়ুশ)বাকি জিনিস পত্র গুলো নিয়ে আয়।
বলেই আভি আমাকে নিয়ে চলে আসলো।

পরে মা বাবাকে বিদায় দিয়ে আভি আমাকে নিয়ে ওদের বাসায় চলে আসলো।মাকে ক্ষমা করা ওর পক্ষে এত সহজে সম্ভব না তবে উনি আমার জন্য চেষ্টা করবে।আর উনি মাকে আমার সাথে দেখা করার পারমিশন দিয়েছে।ধীরে ধীরে ক্ষমাও করে দিবে।

আমি গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি।আমি আর আভি এক গাড়িতে।বাকি সবাই অন্য গাড়িতে।

আসুমনি কি ভাবছো?(আভি)

আমি ভাবছি। আরাভ আর আরাভী তো আমাদেরই সন্তান তাই না?আমি তো ওদের পাশে এতো বছর ছিলাম না।আমি কিছু জানিও না।আমি কি ওদের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবো?ওদের কাছে কি একজন ভালো মা হয়ে উঠতে পারবো?ওরা কি আমার সাথে সেই সম্পর্ক তৈরি করতে পারবে?(আমি চিন্তিত হয়ে)

আরাভি আর আরাভ খুব লক্ষী ছেলে মেয়ে।ওরা খুব মিশুক।আর তুমি তো ওদের মা।ওদের সাথে ঠিক সেই সম্পর্ক তোমার অলরেডী উপর থেকে তৈরি হওয়া। চিন্তা করো না।(আভি)

হুম(আমি)


বাড়িতে আমি গাড়ি থেকে নেমেই আগে বাড়িটার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম।ওইদিন কেনো বাড়িটা আমার পরিচিত লেগেছিলো তা আমি আজ বুঝতে পারলাম।

আস্থা চলো।এইটা আমাদের বাড়ি।(আভি হাত বাড়িয়ে)

হুম।(আমিও আভির হাত ধরে)

আভি আমাকে নিয়ে গেলো।বাকি সবাই আমার কাছেই আছে।

বাহিরে ঢুকতেই দেখলাম বড়ো করে লিখা ওয়েলকাম মাম্মাম।লিখাটা পড়তেই আমি আমার মুখে হাসি ফুটলো।সত্যিই মাম্মাম শব্দটা খুবই অদ্ভুত।

আরাভ আর আরাভি আমার কাছে দৌড়ে আসলো।আমিও ওদের জড়িয়ে ধরলাম।ওদের কাছে নিতেই চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়ে গেলো।আমার সন্তান ওরা আমার কোল থেকে ওদের জন্ম।আমি ওদের মাম্মাম।এতো বছর আমি ওদের ছাড়া দূরে ছিলাম।


চলবে,,,