Marriage_With_Benefits Part-7+8

0
5726

#Marriage_With_Benefits
#Part_7
Writer::Shaanj Nahar Sanjida
.
.
হুম।শুনেছি খান বাড়ির বউ নাকি প্রথমে মা হওয়া নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছিল।পরেই অনেক বছর পর উনি যখন মা হতে চলেছিলো তখন উনার বাচ্চা মৃত্যু হয়।এই জন্য উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।আর তার চিকিৎসার জন্য নাকি উনাকে বিদেশে নেওয়া হয়েছিলো।উনাকে নাকি কেউ বিশ্বাস করাতে পারেনি যে উনার মেয়ে বেঁচে নেই।এখন অবশ্য উনি সম্পূর্ণ সুস্থ।আর এখন দেশে ফিরে মেয়ের জন্ম দিনে এই অনাথ আশ্রমের সবাইকে খাওয়াতে চান। একটু আগে তুই তো ছিলি না তখন আসে তারা কেক কেটে গেছে।আবার সকালে আসবে অনুষ্ঠানে।(খালা)

ও এই জন্য এতো প্রস্তুতি চলছে।আর বাচ্চা গুলো সব না ঘুমিয়ে ছুটোছটি করছে।(আমি)

কি ওরা এখনও ঘুমায় নি?রাখ আজ ওদের এক দিন কি আমার এক দিন!
বলেই খালা আবার কাপড় গুজো দিয়ে ওদের খবর নিতে গেলো।

আমি উনার কান্ড কারখানা হাসতে হাসতে শেষ।পরেই আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।সারাদিন খা খা কড়া রোদের পর আকাশটা কতো সুন্দর লাগছে।যেনো তারার মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।কে কতো তারা নিবে তার প্রতিযোগিতা চলছে।মনে হচ্ছে আজ যতো তারা গুনতে পারবো তত তারাই আমার।এই হাজার তারার ভিতরে একটা ধান কাটার রুপোর কাচির এর মত চাঁদ উঠেছে। চাঁদটা মনে হয় নতুন উঠছে।এইজন্যই তো একটু দেখা যাচ্ছে।কিন্তু এই তারা ভরা আকাশে চাঁদটা খুব দারুন মানিয়েছে।আজ কেনো জানি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।এই সব তারাগুলোর অভিবাবক হিসাবে চাঁদ রয়েছে।এই বাচ্চা গুলোর অবিভাবক হিসেবে খালা রয়েছে।কিন্তু আজ আমি আবার অভিবাবকহীন হয়ে গেলাম।আগে পরিবার নামে মাত্র ছিলো আজ তাও নেই।কিন্তু আমার এতে কোনো আফসোস নেই।আমি সেই ঝরে পড়া তারার মতো।যে চাঁদ থেকে বিচ্ছিন্ন।কিন্তু আবার নিজেকে আলোকিত করার বেদম ইচ্ছা আমার মধ্যে আছে। নিজের আলোয় নিজে আলোকিত হবো।

নিজের কথা ভাবতে ভাবতে আবার সেই লোকদের কথা ভাবা শুধু করলাম।যারা আজ তাদের মেয়ের জন্ম দিন বলে কেক কেটে গেছে।আর কাল অনুষ্ঠান করবে।সত্যিই কেউ সন্তানের জন্য কাদে আর কোনো সন্তান মায়ের জন্য কাদে।উনাদের সাথে আমার কোনো দিন দেখা হয় নি কিন্তু হলে উনাদের অবশ্যই বলতাম।উনারা যা করছে খুব ভালো কাজ।একটা সন্তান না তারা হাজারটা সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছে।এইটাই কম কিসের!মানুষ গুলো হয়তো অনেক ভালো।

আমি এইসব ভাবতেই আবার খালা এসে আমার পাশেই বসল।

কিরে তুই তো বললি না?তুই এত রাতে কি করিস?(খালা)

আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে
খালাকে আজ যা যা হয়েছিলো সব বললাম।খালা আমার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।পরেই আমাকে উনার বুকে চেপে ধরে বললো,,
তোর থাকা নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না।তুই আমার সাথেই থাকবি।আজ থেকে তুই এখানেই থাকবি।তোর দুনিয়াতে কেউ না থাকলেও তোর এই খালা আছে।যে সব সময় তোকে আগলে রাখবে।কখনও আমি তোকে ফেলে দিবো না। দুনিয়া এক দিকে আর তোর এই খালা একদিকে।

আমি খালাকে জড়িয়ে ধরে বললাম
খালা।ধন্যবাদ।আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করার জন্য।আমার খুব ভালো লাগে যখন কেউ আমাকে নিয়ে টেনশন করে।কিন্তু খালা তুমি আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করো না।আমার থাকা খাওয়া দিয়ে কোনো সমস্যা নেই।আমি একটা পার্ট টাইম জব পেয়ে গেছি।এখন আর আমার খরচ নিয়ে চিন্তা নেই।আর হোস্টেলে সিট তো আমার আছেই।দুই বছর অনায়েসে কেটে যাবে।কোনো সমস্যা নেই।আর ভার্সিটিতে তো স্কলারশিপ এ পড়ছি তাহলে আর আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই এখন শুধু নিজের পায়ে ভালো করে দাঁড়াবো।আর বাবার অপারেশনের জন্য 20 লাখ টাকা জোগাড় করা।এইটা হলেই আমার লাইফে আর কিছু চাই না।তবে হ্যা একটা জিনিস আমি খুব খুব চাই।যদি কেউ বলে আমার একটা ইচ্ছা পূরণ করবে তাহলে আমার সেই ইচ্ছা হবে আমার বাবা মা।আমি চাই আমার আসল বাবা মাকে খুঁজতে।আর উনাদের প্রশ্ন করতে কেনো উনারা আমাকে ত্যাগ করলো।যদি বাবা মার আদর এই না দিতে পারে তাহলে কেনো সন্তান হিসেবে আমাকে এই পৃথিবীতে এনেছিলো।আর কেনই বা আমি এতো লাঞ্ছিত হচ্ছি?

খালা আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে বললো,,
হয়তো উনাদের কোনো সমস্যা ছিল।কোনো উপায় ছিল না তাই তোর মত একটা হীরের টুকরো মেয়েকে উনারা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।তা না হলে কোন মা নিজের দুধের শিশুকে ফেলে দেয় বল।

আমি খালাকে ছেড়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
কি এমন সমস্যা ছিলো তাদের যে তারা আমাকে ছাড়তে বাধ্য হলো?এই প্রশ্নের জবাবই তো আমার জানতে হবে।

পরে খালা অনেক ক্ষণ চুপ হয়ে রইল।আমিও উনার পাশে চুপ হয়ে বসে আছি।আমাদের কারো মুখে কোনো কথা নেই।আসলে আমাকে শান্তনা দেওয়ার কোনো ভাষাই উনার কাছে নেই।আর আমারও উনার শান্তনা দিয়ে আমার মনের আগুন শান্ত হাওয়ার না। কার হবে?

আসু!(খালা)

হুম।খালা।বলো।

এখন মনটা ভালো কর।ঠিক আছে?আর শুন কালকে তুই আমার সাথে থাকবি সারাক্ষণ এতো গুলো বাচ্চাকে একা সামলাতে পারবো না।আর শুন ডালিয়া কেও বলবি আসতে ঠিক আছে?

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম
আমি কিন্তু এমনি এমনি খাটবো না।আমার কিন্তু কিছু লাগবে?

কি লাগবে তোর?(খালা ভ্রু কুঁচকে)

তুমিই বলো তুমি কি দিবে?(আমি)

তুই হইছিস একটা।নিজের লাভ ছাড়া এক পাও এগুশ না(খালা আমার মাথায় থাপ্পড় মেরে)

এই দুনিয়াতে লাভ ছাড়া কেউ কিছু করে না। রিনা খান।(আমি হেরোইন ভাব নিয়ে)

এতো গুলো ভালোবাসা পাবি।বল এইবার কাজটা করবি?(খালা)

শুধু করবো না।আনন্দের সাথে করবো।
বলেই খালাকে জড়িয়ে ধরলাম।

হইছে হইছে। একটু আগে পেমেন্ট নিয়া কাজ করার কথা বলে এখন আবার আমাকে আদর দেখানো হচ্ছে না?দেখি ছাড় আমাকে!(খালা আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে)

না।ঘুমোতে দাও না।(আমি কিউট ফেস করে)

যা গিয়ে রুমে ঘুমা।(খালা)

না।এইখানে ঘুমাবো চেয়ারটা কতো বড়ো।(আমি জিদ করলাম)

একটা মারবো চড় যা গিয়ে ঘুমা।রুমে গিয়ে।

খালার বকা খেয়ে রুমে ঘুমাতে গেলাম।এখানে ছোটরা এক রুমে ঘুমায় আর বড়ো ছেলে আর মেয়ে আলাদা।এখানে তিনটা বড় বড় রুম আছে।একটাতে ছোটরা আর এখানে খালাও থাকে আর মাঝে মাঝে আমিও এসে থাকি।আরেকটাতে বড় মেয়েরা যাদের বয়স দশ থেকে আঠারোর মধ্যে।আরেকটার মধ্যে ছেলেরা যাদেরও বয়স এক। আরো কয়েকটা রুম আছে।যখন আশ্রমে বাচ্চার সংখ্যা বেশি হয় তখন ওই গুলো খুলে দেয়।এখন যারা আছে এই তিন রুমের মধ্যেই হয়ে যায়। এছাড়াও আরো অনেক মানুষ আছে এইখানে যেমন দারোয়ান কাকা।রাধুনী খালা।আরোও অনেকেই অনেক কাজে নিয়োজিত।আর সবার মেইন আমাদের রিনা খান।

আমি গিয়ে মিন্টুর পাশে শুয়ে পড়লাম।মিন্টু আমাকে ঘুমের গোরে জড়িয়ে ধরে।পরেই আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম।আমি চোখ বুজে আছি।তখন খালা এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে পাশেই শুয়ে পড়লো।


সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলাম।রাতেই ঘুমোতে যাওয়ার আগে ডালিয়াকে ম্যাসেজ করে দিয়েছিলাম আজ আসার জন্য।সকালে নামাজ শেষে করে আশ্রমের বাগান দিয়ে হাঁটা হাটি করছিলাম।তখন দেখলাম কয়েকটা বক্স করে কিছু লোক কি যেনো এনেছে।

আমি গিয়েই খালার কাছে জিজ্ঞেস করলাম
খালা।বক্স দিয়ে কি আনা হয়েছে?এতো কিছু কি বক্সে?দেখে ভারী মনে হচ্ছে!

ওই বক্সে করে বাচ্চাদের জন্য কাপড় আনা হয়েছে।

সবার জন্য(আমি অবাক হয়ে)

হুম সবার জন্য আনা হয়েছে।এমনকি তোর জন্যও।(খালা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)

আমার জন্য কেনো?আমি তো এইখানে থাকি না।(আমি)

কারণ উনারা আমাকে বলেছিল যে আমি সব অনাথ বাচ্চাদের একটা লিস্ট করে তাদের বয়স লিখে দেই।আর তুই এই আশ্রমে থাকিস না তো কি হয়েছে?তুইও তো অনাথ।তাই তোর নামও দিয়েছি।

খালা।শুধু শুধু তুমি এইটা করতে গেলে।

শুধু শুধু করি আর এমনি করি।করেই যেহেতু ফেলেছি।তখন তুই কাপড়টা পড়ে রেডি হয়ে নে।আর শুন সবাই কিছু না কিছু পারফর্ম করবে।তুইও করবি!

ইসস না।আমি কোনো কিছু পারি না অযথা।

মারবো এক চড়।তুই কি সুন্দর গান গাইতে পারিস তা কি আমরা জানি না!তাই তুই গান গাইবি আর পিচ্চিরা নাচবে।

আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে যথা ইচ্ছা মহারানী রিনা খান।

আবার তুই রিনা খান বললি আমায়।

হ্যা হ্যা।
হেসেই দৌড় দিলাম।কারণ জানি থাকলে আমার কপালে আজ মার আছে।

শুন আসু।সবাইকে তৈরি করে দিস(খালা চিৎকার করে)

আমিও দৌড়াতে দৌড়াতে বললাম,,
ওকে রিনা খান। তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি যা করার করছি।

আবার বললি।তোকে পাই খবর আছে।


অন্যদিকে
আজকের শিডিউল কি কি আরিফ?(আভি)

স্যার আপনার মিটিং আছে।(আভির ম্যানেজার আরিফ)

ক্যান্সেল করে দাও।(আভি শার্ট পড়তে পড়তে)

কিন্তু স্যার।ওরা বিদেশি ক্লাইয়েন্ট। মিটিং ক্যান্সেল করলে উনারা মাইন্ড করবে।(আরিফ)

তাই নাকি? মিটিং যদি এতো ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো তাহলে আজ কেনো রেখেছো?(আভি আরিফের দিকে তাকিয়ে)

স্যার।আমি রাখি নি। বড় স্যার রেখেছে।(আরিফ মাথা নিচু করে)

হুম।(আভি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)তাহলে যে এই মিটিং ফিক্সড করছে তাকেই বলো মিটিংএ যেতে।(আভি)

স্যার।আপনি কোম্পানির CEO আপনার যাওয়া খুব দরকার।(আরিফ)

উনি কোম্পানির চেয়ারম্যান।উনাকে বল যেতে।(আভি)

কিন্তু স্যার মিটিংটা আপনার সাথে উনারা করতে চায়।(আরিফ)

উনি খুব ভালোই ফাঁসিয়ে দিয়েছে।সত্যিই তোমাদের চেয়ারম্যানকে বেস্ট বিজনেস ম্যান আওয়ার্ড দেয়া উচিৎ।উনি আজ ইভেন্টে যাওয়া থেকে আমাকে আটকানোর জন্য।খুব ভালো ছিলো চাল ছিলো।(আভি দাঁত চেপে চেপে)

স্যার।ওখানে কেনো আপনি যাবেন?ওই ইভেন্ট এতো গুরুত্বপূর্ণ না।কিন্তু এই ডিল টা অনেক জরুরী।(আরিফ)

জিসান আঙ্কেল আর কলি আন্টির সব কিছুই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।আজকে উনারা যেই ইভেন্ট অনাথ আশ্রমে করছে সেইটা আমার এই হাজার কোটি টাকা ডিল এর চেয়ে বেশি দামী।আমি উনাদের সাথেই ওই অনাথ আশ্রমে যাবো।আর শুনো তোমাদের চেয়ারম্যানকে বলে দিও ভবিষ্যতে যদি কোনো ডিল আমাকে দিয়ে করানো হয় তাহলে যেনো আমার পারমিশন নিয়ে মিটিং ফিক্সড করে।আর এখন উনিই ভাবুক উনি কি করে বিদেশের client সামলাবে।
বলেই আভি ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

স্যার স্যার,,,(আরিফ পিছন থেকে ডেকেই গেলো।কিন্তু আভি ওর মনের কথা শুনে বাহিরে বের হয়ে গেলো)

আরিফ নিজের হতাশার কথা ভাবতে ভাবতেই ফোনে স্ক্রিনে একটা নাম ভেসে উঠলো,আর তা দেখেই আরিফের হাতপা কাপতে শুরু করলো।সে আর কেউ না আভির দাদা চৌধূরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক।আরমান চৌধূরী।আর তার আদরের নাতি হচ্ছে আভি। কিন্তু আভি আর ওর দাদুর সম্পর্ক ভালো না।

স,,স্যার(আরিফ কাপা কাপা গলায়)

আটকাতে পারো নি ওকে?(আরমান চৌধূরী)

না।স্যার আপনি তো জানেন উনি কেমন মানুষ?যা বলে তাই করে।(আরিফ)

হুম।আমার কথার অবাধ্য হওয়া তো ওর জন্মগত স্বভাব।(আরমান রাগে গজগজ করতে করতে)

স্যার আপনি রাগ করবেন না।ছোটো স্যার ছেলে মানুষ উনি আর কি বুঝেন এই সবের!(আরিফ আরমানকে শান্ত করার চেষ্টা করছে)

হুম। ও শুধু বুঝে আমাকে কিভাবে রাগাতে হয়।এইটা ছাড়া ও আর কি পারে?ওকে ওই বস্তির ছেলেমেয়েদের কাছে যাওয়া থেকে আটকানোর জন্য আমি এই মিটিং রেখেছিলাম।কিন্তু যে জানতো ও মিটিং ফেলে এইভাবে ওই বস্তিতে চলে যাবে।(আরমান)

স্যার।আপনি তো জানেন ছোটো স্যার জিসান খান আর উনার স্ত্রী কলি খানের কতো কাছের।উনাদের উনি কতো আপনভাবে আর উনাদের কতো মানে।(আরিফ)

ওই জন্যই তো আমার ভালো লাগে না ওদের।ওরা কতো আদিক্ষেতা করে।নিজের মেয়ের জন্ম দিন কোনো পার্টি অর্গানাইজ করতে পারতো কিন্তু না।ওই অনাথ আশ্রমে গেলো।আর সাথে করে আমার নাতি টাকেও নিয়ে গেলো।(আরমান)

স্যার,,, ফিটার খাওয়া বাচ্চা না।যে উনাকে কেউ চকোলেটের লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাবে,,(আরিফ ফিসফিস করে কথা গুলো বললো)

কিছু বললে আরিফ?(আরমান)

না।স্যার কিছু না তো কিছু না।(আরিফ)
আর একটু হলেই আমার চাকরিটা যেতো(আরিফ মনে মনে)

আচ্ছা।শুনো আভি যেহেতু আজ যাবে না।তাই তুমি ক্লাইয়েন্টকে বলে আজ মিটিং ক্যান্সেল করে দাও।

স্যার উনারা অনেক রাগ করবেন।যদি স্যার না করে তাহলে আপনি মিটিং করে ফেলেন।(আরিফ)

আরিফ এখন আমি বিদেশ থেকে কি এখান কার কাজ দেখবো নাকি দেশের কাজ দেখবো?।(আরমান)

কিন্তু স্যার আমি কি করে ওদের সামলাবো?(আরিফ কাদো কাদো হয়ে)

ওইটা তুমি জানো।ওইটা তোমার কাজ।ওই কাজের জন্যই তোমাকে পেমেন্ট দেওয়া হয়।করো কি করে করবে?কিন্তু মিটিং ক্যান্সেল করবে।ডিল ক্যান্সেল করলে তোমার খবর আছে আরিফ।
বলেই আরমান ফোন কেটে দিলো।

দূর এই দাদা নাতির ঝগড়া থেকে আমার কোনো দিন মুক্তি হবে না।সব সময় একে অপরের রাগ আমার উপর ঢালবে।যেমন আমি তাদের রাগ ঢালার মেশিন।এখন client কি করে সামলাই।যদি না সামলাই তাহলে আবার এই দাদানাতির কথা শুনতে হবে।দূর ভালো লাগে না।


চলবে….
আমি জানি যে মৃত্যুর খবর শুনলে ইন্নালিল্লাহ বলতে হয় আর কোনো কিছু খারাপ হলে নাউজুবিল্লাহ।আমি এই জন্যই নাউজুবিল্লাহ ব্যবহার করছি কারণ আস্থার কথা শুনে খারাপ লাগছে।আমি খারাপটাকে প্রাধান্য দিছিলাম…মৃত্যুটাকে না।হয়তো আমি ব্যাপারটাকে ঠিক মতো তুলে ধরতে পারি নি।এইজন্য আমি দুঃখিত।

#Marriage_With_Benefits
#Part_8
Writer::Shaanj Nahar Sanjida
.
.
গাড়িতে
কিরে?তোর দাদু তোকে অনাথ আশ্রমে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলো?(নিহাল)

তোর কি মনে হয়!আরমান চৌধূরী অনুমতি দেওয়ার মানুষ তাও আবার অনাথ আশ্রমে?(আভি)

তাও আবার উনার আদরের নাতি কে?যে কিনা তার চোখের মণি।(নিহাল টিটকারি মেরে)

নিহাল তুই ইদানিং একটু বেশিই মজা করছিস?মনে কি রঙ লাগছে নাকি তোর?(আভি)

আরে কি যে বলিস?এই মনে রংওয়ালি নাই।মজা লাগবে কি করে বল?(নিহাল নিরাশ হয়ে)

খুব শখ হয়েছে রংওয়ালির?(আভি ভ্রু কুঁচকে)

আর বলিস না।বিয়ের তো অনেক আগে থেকেই শখ ছিল।এখন মা বাবাও করাতে চায়!(নিহাল)

যেহেতু আঙ্কেল আর আন্টি করাতে চায়,,তাহলে করে ফেলিস না কেনো?(আভি)

শোন কি হয়েছে?সব মেয়েরা শুধু আমার টাকার পিছনে থাকে।আমার বাপের টাকা আর আমার চেহারা।আমি এমন মেয়ে চাই যে না আমার চেহারা দেখবে না আমার বাপের টাকা।(নিহাল)

ওই সব মেয়ে শুধু রীল লাইফে পাওয়া যায় রিয়েল লাইফে নাই(আভি)

এই তুই আস্থার ডাইলোগ দিচ্ছিস কেনো?(নিহাল অবাক হয়ে)

মানে?কি বলতে চাইছিস?(আভি)

মানে,,
পরেই আস্থার বলা কথা আভি কে সব বললো।

ওই মেয়ে আস্ত এক সুযোগ সন্ধানী।ওই মেয়ে স্বার্থ ছাড়া এক পাও দেয় না।এর থেকে আর কি আশা করা যায়? ও কি বুঝবে সত্যিকার ভালবাসা।(আভি)

একটু আগেই তো তুই ওর গীত গাইছিলি।এখন ওকেই দোষ দিচ্ছিস?(নিহাল ভ্রু কুঁচকে)

অনেক হয়েছে।এখন গাড়ি স্টার্ট দে।অনেক হয়েছে তোর ফালতু কথা।(আভি নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেছে)

নিজের ভুল স্বীকার করবে না।(নিহাল বিড়বিড় করে)

কিছু বলেছিস?(আভি সন্দেহর দৃষ্টিতে)

কই কিছু না তো?আজ তোর বডিগার্ড নিবি না?(নিহাল)

দূর।আরমান চৌধূরী দেশে না থাকাকালীন আমাকে একটু শান্তি মতো বাঁচতে দে।(আভি বিরক্ত হয়ে)

নিহাল হো হো করে এক গাল হেসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিলো।


আশ্রমে
আমি পরম যত্নে বাচ্চাদের তৈরি করে দিচ্ছি। রাবেয়া আমাকে সাহায্য করছে।বাকি যেই মেয়ে গুলো আছে তারা সবাই স্টেজ সাজাতে ব্যস্ত এইখানে একটা সংস্কৃতি অনুষ্ঠান হবে।যেখানে আমাদের অনাথ আশ্রমের বাচ্চারা পারফর্ম করবে।আর অতিথি হিসেবে আসবে মি: অ্যান্ড মিসেস:খান।আর তাদের সাথে অনেক গণ্য মান্য ব্যাক্তি।অনেক VIP ও আসবে তার সাথে এলাকার এমপি ও তার চেলাপেলারাও আসবে।তার মানে খুব বড়ো করেই হবে অনুষ্ঠানটা।দুপুরে তারা সবাই অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করবে।তারপর কিছু ক্ষন অনাথ আশ্রম পরিদর্শন করবে তারপর শুরু হবে সংস্কৃতির অংশ।আর সেখানে আমি গান গাইবো আর ডালিয়া আর বাচ্চাকাচ্চা নাচবে।পড়ে DJ ছেড়ে একসাথে নাচানাচি।এই হলো আজ সারাদিনের প্রোগ্রাম।

আমি বাচ্চাদের তৈরি করছি।তখন ডালিয়া আসলো।

আসু আমি তোকে কত্তো মিস করছি।
বলেই পিছন দিক থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।এই দিকে আমি ওদের তৈরি করতে করতে কাহিল।এখনও অনেক বাচ্চাদের তৈরি করতে হবে।তারমধ্যে এই মহারানী দেরি করে এসেছে।আবার এসেই আমাকে চেপে ধরছে।এতো জোরে চেপে ধরলো যে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

ডাইলা ছাড়।(চাপা চাপা কন্ঠে আমি)

ওহ।সরি সরি।বেশি এক্সসাইটেড হয়ে গেছি তোকে দেখে।পুরো 48 ঘণ্টা তোকে দেখি না ভাবা যায়?(ডালিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে)

মাত্র তো আআআ,,,
আমি কথা বলতে বলতে ওর দিকে তাকালাম তাকিয়েই আটচল্লিশ ঘণ্টার শুধুই আআআআআ আমার মুখ থেকে বের হচ্ছে।

কি হলো আপু? তুমি আ আ করছো কেনো?(রাবেয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে আবার ডালিয়ার দিকে তাকালো)

পরেই আমাদের দুই জনের মুখ দিয়ে বের হলো
আ হা হা হা। আ হা হা হা।
মানে ডালিয়ার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে আমাদের পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। রাবেয়া দেয়াল থাব্রতে থাব্রাতে হাসছে আর আমি হাসতে হাসতে টুল থেকে পড়ে গেলাম।টুল থেকে পড়ার কারণে কোমরে ব্যাথা পেয়েছি কিন্তু তাও আমার হাসি কমছে না।আমি ফ্লোরে শুয়ে পেট ধরে হাসতে শুরু করলাম।

কি হলো? রাবেয়া আর তুই এমন পাগলের মত হাসছিস কেনো?(ডালিয়া কিছু জানে না এমন অবুঝ শিশুর মতো করে)

তুই,,তুই আ,,আজ কি সেজে এসেছিস?(আমি হাসির ঠেলায় কথা বের হচ্ছে না)

ডালিয়া আপু।কি হয়েছে তোমার?তুমি,,,,
রাবেয়াও আর হাসির ঠেলার কিছু বলতে পারছে না

আমাদের হাসির কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না ডালিয়া ও কৌতূহল নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আমরাও অসহায় ওর চেহারা দেখে আমাদের হাসি থামানোই মুশকিল হয়ে উঠছে।

এরই মধ্যে আবার খালা আমাদের গলা ফাটিয়ে হাসির আওয়াজ শুনে আসলো।
কি হলো তোরা পাগলের মত হাসছিস কেনো?
বলেই খালা ভিতরে ঢুকবে এমন সময় খালার চোখ যায় ডালিয়ার উপর।
খালা ডালিয়াকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো,,
ওমা গো ভূত আল্লাহ বাঁচাও।
বলেই দৌড় দিবে কিন্তু দৌড় দিয়ে পিছনে ফিরতে যাবে তখনই আবার উনি দরজাতে বারি খায়।

ও মা গো আমার কপাল গেলো (বলে খালা মাটিতে বসে পড়লো)

এই দিকে আমার রাবেয়ার আর বাকি সবার হাসতে হাসতে শেষ খালাকে গিয়ে যে সাহায্য করবো তার শক্তিটুকুও নাই আমাদের।কারণ হাসতে হাসতে আমাদের অবস্থা নাজেহাল।

আমাদের অবস্থা খারাপ দেখে ডালিয়া গেলো খালাকে তুলতে,,
খালা কি হলো?তুমি এইভাবে দৌড় দিতে গেলে কেনো?দেখলে তো কি করে বারি খেলে আবার ব্যাথাও পেলে।(ডালিয়া খালাকে উঠাতে উঠাতে)

খালা কপাল ঘষতে ঘষতে আবার ডালিয়ার দিকে তাকালো,,তাকিয়ে আবার চিৎকার শুরু করলো,,

ওরে এই ভুত তো ডালিয়ার রূপ ধরে আমার কাছে আসলো।
বলেই ডালিয়াকে ধরে এক টানে ফ্লোরে বসিয়ে দিলো।

এই দিকে ডালিয়ার খালাকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেই ফ্লোরে পরে যাওয়া নিয়ে আমরা আরেক দফা হেসে নিলাম।


প্রায় অনেক ক্ষন পর এখন হাসাহাসির পাল্লা শেষ করে আমরা স্বাভাবিক হলাম।

রাবেয়া খালার কপালে বরফ দিচ্ছে।কপালে তেমন লাগে নি বরফ দিলেই চলে যাবে।

এখন বল তোরা হাসির বন্যা কে বয়ে দিলি?(ডালিয়া)

তুই সাদা শাড়ি কেনো পড়ছিস?(আমি)

খালা বলছে সাদা নাকি আজকের থিম।(ডালিয়া)

হুম।সাদা আজকের থিম ঠিক আছে।কিন্তু তোকে ভুত সেজে আসতে কে বলছে?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

কই আমি ভুত সেজেছি?(ডালিয়া অবাক হয়ে)

যা গিয়ে আয়নাতে নিজেকে দেখ।
বলেই আমি ওকে আয়নার সামনে নিয়ে যাই।

হায় আল্লাহ।এই অবস্থা আমার।(ডালিয়া অবাক)

আসলে ডালিয়ার ত্বক অনেক ফর্সা একদম ফরেনার দের মত।আর আজ ও চোখে কাজল ও পড়েছে।চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া ছিলো।আর পরনে সাদা শাড়ী।

এই বৈশাখ মাসের গরমে ঘামের কারণে ওর কাজল লেপ্টে গেছে।তারপর রিক্সা করে এসেছে বলে ওর সব চুল এলোমেলো হয়ে গেছে।এর উপর শাড়ি পরে নি পেঁচিয়ে এসেছে।একে যে কেউ দেখলে জোকার বলবে আর না হয় খালার মতো ভুত বলবে।আর যখন আমি আর রাবেয়া ওর এই অবস্থা দেখেছি।আমরা নিজেদের হাসি আটকাতে পারলাম না।

হয়েছে হয়েছে!এতে এতো হাসার কি হয়েছে হয়েছে আর এতো হাসতে হবে না।ওই একটু আমার কাজল লেপ্টে গেছিলো।আর চুল গুলো এলোমেলো ছিলো।টা আর এমন আর কি?আর বাসায় মা ছিলো না যে আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে।তাই নিজে যেমন পেরেছি তেমন পরে এসেছি।এতে এতো হাসার কি আছে?
বলেই ডালিয়া মুখ গোমড়া করে বসে আছে।

আমার খুব খারাপ লাগছে।এইভাবে না হাসলেও পারতাম।ডালিয়া আবার একটু অভিমানী।তাই ওর অনেক অভিমান হয়েছে দেখেই বুঝতে পারলাম।তাই আমিও ওর কাছে গিয়ে বসলাম,,
ডেইলি মিল্ক রাগ করছে?(আমি করুন সুরে)

ডালিয়া চুপ।

আচ্ছা।এই দেখ আসু কান ধরছি
বলেই ডালিয়ার কান ধরলাম

তুই আমার কান ধরিস কেনো?

কি করবো বল তুই মুখ ফুলিয়ে আছিস!আমার মনেই ছিলো না আমি কার কান ধরবো না।(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

আর হাসবি না বল!(ডালিয়া)

ওকে ওকে বাবা আর হাসবো না।এইবার খুশি?(আমি এই বার আমার কান ধরে)

সব শেষে এখন আমি,ডালিয়া আর রাবেয়া সবাইকে তৈরি করলাম।এখন আমাদের তৈরি হবার পালা।আমি ডালিয়াকে ভালো করে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলাম। রাবেয়া কামিজ পড়বে।তাই তো তাই পরলো।আজ সবার ড্রেস সাদা।ছোটো মেয়েদের ফ্রক।তার উপর পরীদের পাখা।আর ওরাই আমার আর ডালিয়ার সাথে পারফর্ম করবে।আর বাকি এই মেয়ে তাদের এক দল গোল জামা পড়ছে ওরা নাচবে আর বাকিরা কামিজ সেলোয়ার ওরা গান গাইবে। এছাড়াও কিছু কিছু ছেলে মেয়ে আলাদা কাপড় পড়ছে।ওরা অভিনয় করবে।আর ছেলেরা সব ব্লু কালারের পাঞ্জাবি।

রাবেয়া তৈরি হয়ে স্টেজে গেছে।এখন আমি আর ডালিয়া রুমে।সবার তৈরি হয়ে গেছে।শুধু আমিই বাকি।কেনো জানি আজ খুব আলসেমী লাগছে।সবাইকে সাজিয়ে দেওয়ার পর এখন নিজেই সাজতে মন চাচ্ছে না।

আমি টুলে বসে মোচরা মুচরি করছি তখন ডালিয়া আমার সামনে একটা বক্স রাখলো।
.
.
চলবে….