Secret Lover
Tafsirah Islam
Part – 15 & last
তিথি এসেই আগে রুহানের কেভিনে যায়..
রুহানকে না দেখে একটু ভিতরে যেতেই তিথির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো..
..
রুহান একটা মেয়ের চুল বেধে দিচ্ছে..
একটু খেয়াল করে দেখে মেয়টা আর কেউ না রুহি..
..
রুহান : রুহি এখন না আমি চুল বেধে দিচ্ছি.. বিয়ের পর কে করে দিবে শুনি..
রুহি : উহু তুমি আছো না.. তুমিই বেধে দিবে..
..
তিথির গায়ে যেন আগুন জলছে..
সাথে সাথেই গিয়ে রুহানের কলার চেপে ধরে..
তিথি : এই তোর সাহস তো কম না, কালও বললি আমাকে ভালোবাসিস আর আজ আরেক জনের সাথে….
লজ্জা করে না তোর ?
তোকে তো পরে দেখবো আগে এই টার ব্যবস্থা করে নেই..
..
তিথি রুহির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রুহির চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে
তিথি : ওই মেয়ে ওই সুন্দর পোলা দেখলেই তোদের ঢং বেড়ে যায় না..ইশশ কি ঢং বিয়ের পরে তুমি চুল বেধে দিবে..তোর ওই চুলে আমি আগুন ধরায় দিব..ওই পরের স্বামীর দিকে এতো নজর কেন হুম…
এই তোর কি লজ্জা নাই..হাসছ কেন..
আর কোনদিন যদি তোকে রুহানের আশেপাশেও দেখি তোর একদিন কি আর আমার একদিন কি… ?
নির্লজ্জ কোথাকার ?
রুহি কিছু বলতে যাবে ওমনি রুহান ইশারায় রুহিকে বেরিয়ে যেতে বলে..
আর এই বিষয়টা একদমই তিথির নজর এড়ায়নি..
তখনই তিথি রুহানের কলার চেপে ধরে..
তিথি : ইশ..এখন আবার চোখের ইশারায় কথা হচ্ছে ? তোর চোখ আজ আমি উপড়ে ফেলবো..
আর এই যে নির্লজ্জ বেহায়া তুই এখনো কোন সাহসে দাড়িয়ে আছিস.. এক্ষুনি বের হ নইলে এমন হাল করবো.. জীবনে রুহান তো দূর অন্য কোনো ছেলের দিকেও তাকাবিনা..
রুহি যেতেই..
তিথি : ওই তোর আর কয়টা গার্লফ্রেন্ড আছে বল ?
রুহান : কেন গো
তিথি : বেশি ঢং না করে বল তারাতাড়ি.. নইলে..
রুহান : নইলে কি করবে হুম…
তিথির কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিল
তিথি : ওই একদম লুচ্চামি করবিনা..ছাড় বলছি ?
আর যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে ?
রুহান : এখানে লুচ্চামির কি হলো.. আমি আমার বউ এর কোমর জড়িয়ে ধরছি.. এখানে লুচ্চামির কি আছে..
তিথি : কে বউ, কার বউ, আমি কারো বউ না ?
রুহান : ইশ..একটু আগে তুমিই তো বললে তুমি আমার বউ
তিথি : ওই আমি কখন বললাম আমি তোর বউ ?..
তুই তো আমার নাম ও নিবি না
রুহান : একশো বার বলবো হাজার বার বলবো বউ,বউ,বউ, বউ,বউ…
আর তখন তুমিই তো রুহিকে বললে আমি তোমার স্বামী ?
তিথি : হুম বলছি তো কি হইছে আরো বলবো..
তুই শুধু আমার, অন্য কোনো মেয়ের দিকে নজর দিবি তো তোর চোখ উপড়ে ফেলবো..
তখন ভালো করে নজর দিস..
রুহান : তাহলে তো আমি অন্ধ হয়ে যাবো, তখন কি এই অন্ধ টাকে ভালোবাসবে
তিথি : তোর চোখ কেন, দুই হাত, দুই পা ও যদি না থাকে তাও ভালোবাসবো
রুহান : মরে গেলে
তিথি : থাপড়ায় সব দাতঁ ফেলে দিব, আবার এই কথা বললে..
অনেক হয়েছে আর না..
হয় তোর সব গার্লফ্রেন্ডদের ছাড়বি নয়তো আমি..
রুহান : নয়তো কি
তিথি : চলে যাবো
রুহান : উমমমম…চিন্তার বিষয়…
শুধু একজনের জন্য এতো জনকে ছাড়াটা কি ঠিক হবে.. তার চেয়ে বরং..
তিথি : এই এই খবরদার, তোর ওইসব ঢঙ্গী গার্লফ্রেন্ড এর চিন্তা মাথায়ও আনবি না.. ?
রুহান : তুমিই তো বললে যেকোনো একজনকে চুজ করতে
তিথি : হুম আর সেই একজনটা আমি… তোর উপর অধিকার শুধু আমার… অন্য কেউ নজর দিলে তার খবর করে দিব..
রুহান : তুমি না আমায় ভালোবাস না, তাহলে সমস্যা কোথায়
তিথি : কে বলছে ভালোবাসি না.. অনেক বেশি ভালোবাসি অনেক অনেক বেশি… ( বলে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল ?)
রুহান : আমিও অনেক ভালোবাসি মিসেস. তিথি চৌধুরী ( কানের কাছে মুখ নিয়ে)
তিথি : ইশশশ…মোটেও ভালোবাসেন না আপনি..
রুহান : তাই…
বলেই একটা চেয়ার টেনে বসে তিথিকে কোলে বসিয়ে নিল…
তিথি উঠে যেতে নিলেই আরো শক্ত করে ধরে..
তিথি : স্যার প্লিজ ছাড়ুন..
রুহান : উহু স্যার না….জাস্ট রুহান…
বলে কপালে আলতো করে চুমু খেল..
তিথি : স্যার কি করছেন ছাড়ুন প্লিজ ?
রুহান : উহু ডিস্টার্ব কোরো না তো..
তিথির সামনে আসা চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে অপলক তাকিয়ে রইল তিথির দিকে..
তিথি : তিথি লজ্জা পেয়ে রুহানের বুকে মুখ লুকিয়ে..
স্যার একটা কথা রাখবেন প্লিজ..
রুহান : একটা কেন তুমি যা বলবে তাই রাখবো
তিথি : সত্যি
রুহান : হুমম
তিথি : তাহলে কথা দিন আপনি আর ওই রুহি, টিস্যু ওদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখবেন না
রুহান : টিস্যু?
তিথি : আরে ওই যে তিশা
রুহান : ওহ তাহলে এই ব্যাপার..
দেখো তিথি তিশা জাস্ট আমার ফ্রেন্ড ছিল আর ও তো এখন জেলে..আর রুহির ব্যাপারে যে বললে, আমি রুহিকে ছাড়তে পারবো না.. স্যরি
তিথি : এই আপনার ভালোবাসা, এই একটা কথা রাখতে পারবেন না…
কেন রুহিকে ছাড়তে পারবেন না
রুহি : কারণ আমি আপনার একমাত্র ননদিনী মাই ডিয়ার ভাবি ☺
( কেভিনে ঢুকতে ঢুকতে বলল)
রুহি কেভিনে ঢুকতেই তিথি আর রুহান দাড়িয়ে গেল..
রুহি : স্যরি ভাইয়া..নক না করে ঢুকার জন্য..
রুহান : হুম তোর তো কাবাবে হাড্ডি হওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই..
রুহি : আসলে এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় ভাবির কথা শুনে চলে এলাম..কারণ আমি জানি তুমি এতো সহজে ভাবিকে সত্যিটা বলবে না..
আর ডোন্ট ওয়ারি..আমি শুধু শেষের কথাটাই শুনেছি, আর কিছু না ?
তিথি একবার রুহানের দিকে তাকাচ্ছে আবার রুহির দিকে তাকাচ্ছে.. কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না..
রুহি : ভাবি আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি..?
রুহান : তোর আর বকবক করতে হবে না… আমিই বলছি…
আসলে তিথি রুহি আমার ছোট বোন..
আর…
রুহি : আর ভাই তোমাকে জালানোর জন্য এতো দিন কিছু বলেনি.. যেন তুমি নিজের মুখে স্বীকার করো তুমি ভাইয়াকে ভালোবাস..
তিথি : তাহলে এতদিন ওসব কি হচ্ছিল… ওই দিন রেস্টুরেন্টের বাইরে আর এই পর্যন্ত যা হলো…
রুহি : ভাবি আসলে আমি অনেক দিন পরে দেশে ফিরে এসেছি, তাই ভাইয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে গিয়েছিলাম.. সেখান থেকে বের হওয়ার সময় পায়ে ব্যাথা পাই তাই ভাই আমাকে কোলে তুলে নিয়েছিল… আর এতো দিন তোমাকে নিয়ে যা শপিং করেছে সব তোমার জন্যই আমাকে কিছুই দেয় নি…আমাকে তো ভুলেই গেছে..
আর ভাবি এই পর্যন্ত যা দেখেছ এতো টুকু খুনসুটি তো ভাইবোনের মাঝে হয়ই..
তুমিও বুঝতে পারনি আর ভাই ও এই সুযোগে কিছু বলেনি…
তিথি রুহানের দিকে রেগে তাকাতেই..
রুহান : রুহি হয়েছে তোর… এখন বাসায় যা..
রুহি : হুম যাচ্ছি যাচ্ছি…
ভাবি ভাইয়াকে আজ ইচ্ছে মতো ধোলাই দিবে..এতদিন তোমাকে জালানোর জন্য ( বলেই এক দৌড়)
রুহি যেতেই…
তিথি : ?
রুহান : তিথি তুমি জানো রাগলে তোমায় অনেক বেশি কিউট লাগে..তখন রোমান্স করতে ইচ্ছে করে ?
তিথি : আজ তোর খবর আছে..
বলে রুহানের পেছনে দৌড়াতে শুরু করে.. রুহানও দৌড়াচ্ছে..
দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎ করেই তিথির শাড়িতে পাড়া লেগে শাড়ির কুচি খুলে যায়..
তিথি তারাতাড়ি করে শাড়ি গুটিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলেই রুহান তিথির হাত ধরে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে…
রুহান হাটু ভেঙে বসে শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে দিয়ে পেটে আলতো করে চুমু খেয়ে উঠে তিথির কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়…
তিথির লজ্জা মাখা রূপ রুহানকে পাগল করে দিচ্ছে..
একহাত তিথির কোমরে আরেক হাত ঘাড়ে রেখে যেইনা কিস করতে যাবে ওমনি তিথি রুহানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কেভিন থেকে বেরিয়ে যায়…
রুহান : ?? এখনতো তুমি বেচে গেলে.. কিন্তু আর কিছু দিন তারপর তোমাকে সারাজীবনের জন্য ধরা দিতে হবে ☺
..
কিছুক্ষণ পর রুহান শিহাবকে নিজের কেভিনে ডেকে পাঠায়…
..
..
রুহানের সাথে কথা শেষ হতেই শিহাব মুখ কালো করে বেরিয়ে আসে..
সবাই অনেক প্রশ্ন করলেও কোনো উত্তর না দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়…
..
..
পরের দিন সকালে..
তিথি ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে রুহান তিথির মা বাবার সাথে কথা বলছে.. এমনকি রুহানের সাথে রুহিও আছে…
..
তিথিকে দেখেই রুহান চোখ টিপ দিল.. রুহি : ভাবি ফ্রেশ হয়ে এসো..তোমার জন্য বড়সড় একটা সারপ্রাইজ আছে (মিষ্টি করে হেসে বললো..)
তিথি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুহান তিথির রুমে বসে আছে..
রুহান তিথিকে দেখে মুচকি হেসে বললো..
তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিন ম্যাডাম..আমি নিচে অপেক্ষা করছি … তুমি রুহির সাথে চলে এসো
তিথি : কিন্তু স্যার..কো….
যাহ বাবা চলে গেলো..
..
তিথি কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এসব..
রুহান আর রুহি দুজনেই এখানে..সব কেমন যেন লাগছে …
আর তখন রুহি সবার সামনে তিথিকে ভাবি বললো কিন্তু কারো কোন রিয়াকশনই দেখে নি…
তিথি আবার ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে রুহি এখনো আছে কিন্তু রুহান নেই..
তিথিকে দেখেই তিথির মা বাবা দুজনেই রহস্যময় হাসি দিয়ে আবার যার যার কাজে মন দেয়..
তিথি : এসব হচ্ছে টা কি..
আমাকে কি কেউ কিছু বলবে..
রুহি : আমি বলছি… এখানে তোমাকে পার্মানেন্টলি আমার ভাবি বানানোর ব্যাপারে কথা হচ্ছে…
তিথি : ? মানে
তিথির বাবা : মানে হচ্ছে এক সপ্তাহ পর তোর আর রুহানের বিয়ে..
দেখ মা রুহান আমাদের সব বলেছে, আর ও ভালো ছেলেও বটে, আমাদের পছন্দও হয়েছে, তাই আমরা তোকে না জিজ্ঞেস করেই সামনের সপ্তাহে তোদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি… তোর কোনো আপত্তি নেই তো…
..
তিথিও মাথা নেড়ে না বলে এক দৌড়ে রুমে চলে আসে…
তিথির পেছন পেছন রুহিও আসে…
তিথিকে জড়িয়ে ধরে…
রুহি : উফ ভাবি দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষার ফাইনালি তোমাদের বিয়েটা ঠিক হয়ে গেল..
তিথি : একবছর! মানে, তুমি তো……
রুহি : ( তিথিকে বলতে না দিয়েই) ভাবি তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাওতো…
ভাই নিচে অপেক্ষা করছে…শপিংয়ে যাবো তো
তিথি : কিসের শপিং?
রুহি : তোমাদের বিয়ের… হাতে তো বেশি একটা সময় নেই…
তিথি : আচ্ছা রুহি এই পর্যন্ত আঙ্কেল আন্টিকে একবারও দেখিনি.. আই মিন তোমাদের আম্মু আব্বু ওনারা কি এই বিয়েতে…
রুহি : ভাবি আমার ছোট বেলায় আম্মু আব্বু কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন..?
তিথি : ওহ আ’ম সো স্যরি.. প্লিজ…
রুহি : ইটস ওকে ভাবি..তুমি তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাওত…
..
সারাদিন শপিং করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসে…
বাসায় এসেই তিথি ঘুম… রাত দশটায় ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়… ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে রুহান ফোন দিয়েছে…
তিথি : হ্যালো
রুহান : কি এখনো ডিনার কর নি কেন..
তিথি : এটা বলার জন্য আমার এতো সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করলেন..
রুহান : এই কতো ঘুমাও…উঠে এবার ডিনার করে নাও..এখন যদি না উঠ তাহলে কিন্তু আমি চলে আসবো…
তিথি : হুহ…আসুন পারলে..আজ আম্মু আব্বু বাসায়… আজ কোনো সুযোগ নেই ?
রুহান : সিরিয়াসলি চলে আসবো কিন্তু..
আর তুমি হয়তো ভুলে গেছ সুইটহার্ট যে এর আগে আমি আরো কয়েকবার এসেছি…. মাঝরাতে ?
তিথি : হুহ…পারলে এসে দেখান
রুহান : চ্যালেঞ্জ করছো
তিথি : মনে করুন তাই ?
রুহান : ওকে জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ
..
মাঝরাতে হঠাৎ তিথির ঘুম ভেঙে যায়… যেইনা তিথি চিৎকার দিতে যাবে ওমনি রুহান তিথির মুখ চেপে ধরে…
রুহান : কি বলেছিলাম না চলে আসবো…
বলেই আবার ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে…আর গলার তিলটাতে চুমু খেয়ে বলে..
রুহান : চ্যালেঞ্জ জিতে গেছি ম্যাডাম..
তিথি : কিভাবে সম্ভব আমি তো বারান্দার দরজা লক করেছি..
আর মেইন ডোর দিয়ে তো পসিবল না…
( মনে মনে)
রুহান : আমি কিভাবে আসলাম তাই ভাবছো তো..কাম অন সুইটি আমার জন্য এটা ব্যাপার না..
তিথি : কেন আপনি কি ভুত নাকি ?
বলেন না কিভাবে আসলেন..
রুহান : উহু বাদ দাওতো…খুব ক্ষিদে পেয়েছে… চলো ডিনার করে নেই
তিথি : আপনি ডিনার করেননি
রুহান : তুমি খাওনি আমি কিভাবে খাই…উফ এবার চলো…
..
ডিনার শেষে…
দুজন বারান্দায় দোলনায় বসে চাঁদ দেখছে… এমন সময়
তিথি : স্যার আপনি এখানে কিভাবে আসলেন বলেন না প্লিজ..
রুহান : উফ বাদ দাও না এসব…
দেখো কি রোমান্টিক একটা রাত…
আমার তো খুব রোমান্স করতে ইচ্ছে করছে..
তিথি : ইশ…কতো শখ..এসব বিয়ের পরে
রুহান : হুম তাইতো কন্ট্রোল করছি.. নাহলে তো এতক্ষণে…
তিথি : উহ আপনি খুব খারাপ…
বলে উঠে যেতে নিলেই রুহান তিথির হাত ধরে টেনে কোলে বসিয়ে নিল..
রুহান : কিছুই তো করিনি…বিয়ের পরে দেখবা
তিথিও লজ্জা পেয়ে রুহানের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে…
তিথি : আচ্ছা কাল অফিস থেকে শিহাব ওভাবে বেরিয়ে গেল কেন..
রুহান : ওকে চট্টগ্রাম ট্রান্সফার করে দিয়েছি… প্রথমে না করলেও পরে আচ্ছা করে বুঝিয়ে দিয়েছি… আমার তিথির দিকে নজর দেয়া হচ্ছিল.. এখন বুঝ ঠেলা
তিথি : পাগল আপনি
রুহান : হুম শুধু তোমার জন্য
তিথি : ?…আচ্ছা আপনার কেভিনে বেড রুম কেন… আর কোথাও তো আমি এরকম দেখিনি…
রুহান : বাহ ম্যাডাম দেখি বিয়ের আগেই বেডরুমে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে… বেড রুম করেছি তোমার সাথে রোমান্স করার জন্য… যেন অফিসেও তোমার সাথে রোমান্স করতে পারি..
কাল অফিসে এসো তারপর ভালো করে বুঝিয়ে দিব ?
তিথি : আপনি খুব খারাপ… লুচ্চা একটা..
রুহান : ??
শখের বশে করেছিলাম… কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভালোই হয়েছে.. সারাদিন তোমার সাথে রোমান্স করতে পারবো.. ?
তিথি : ধুর… আমি এখন ঘুমাব… আপনি যেদিক দিয়ে এসেছেন সেদিক দিয়ে যান
রুহান : ওকে… তুমি ঘুমিয়ে পরলেই আমি চলে যাবো…
তিথি : ? এখন গেলে সমস্যা কোথায়
রুহান : আমি জানি তুমি কেন বলছো…
বলে একটা চাবি তিথির সামনে ধরে…
তিথি ভালো করে খেয়াল করে দেখে এটা ওদের মেইন ডোর এর চাবি…
তিথি : আপনি এটা কোথায় পেলেন… এটা তো..
রুহান : এটা তোমাদের মেইন ডোরের চাবি..
এবার ঘুমাও তো নাহলে এখনই রোমান্স…
তিথি : গুড নাইট..
রুহান : ??
..
..
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে যায়..
..
রুহান আর তিথির বিয়ে ও ঠিকঠাক মতো হয়ে যায়…
..
তিথিকে বড় একটা ঘোমটা দিয়ে বাসর ঘরে বসে রুহানের অপেক্ষা করছে কিন্তু রুহানের কোনো খবর নেই…
ওকে রুমে বসিয়ে রেখে সবাই চলে গেছে…
..
কিছুক্ষণ পর তিথির ফোনে ম্যাসেজ আসলো…
** শেষমেশ বিয়েটা করেই ফেললে….একটা কথা মনে রেখো তুমি শুধুই আমার **
..
ম্যাসেজটা পড়ে তিথি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়..
এতদিন কোন ম্যাসেজ আসেনি বলে তিথি ভেবেছিল হয়তো সব ঠিক হয়ে গেছে কিন্তু
তখনই রুহানের ফোনে তিথির ধ্যান ভাঙলো…
রুহান : তিথি তুমি প্লিজ তারাতাড়ি ছাদে চলে এসো
..
তিথি কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল..
তিথি আর কিছু না ভেবে ছাদে চলে যায়…
গিয়ে দেখে পুরোটা ছাদ ফুল আর বেলুন দিয়ে সাজানো…
মাঝখানে রুহান মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে…
..
তিথি দৌড়ে গিয়ে রুহানকে জড়িয়ে ধরে…
তিথি : এভাবে বলা দরকার ছিল.. জানেন কতটা ভয় পেয়েছিলাম আমি..
রুহান : তাই… আ’ম স্যরি সুইটহার্ট..
তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে চলে..
বলে তিথিকে ছাদের আরেক সাইডে নিয়ে বড় একটা স্ক্রিনের সামনে তিথিকে দাড় করিয়ে দেয়..
..
কিছুক্ষণ পরেই তিথি দেখে স্ক্রিনে একের পর এক তিথির ছবি আসছে…
আর এই ছবি গুলো দু বছর আগের..
তিথি রুহানের দিকে তাকাতেই… রুহান মুচকি হেসে তিথির কাছে গিয়ে তিথিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে…
আর বলতে শুরু করে…
রুহান : আজ থেকে দুবছর আগে তোমার প্রেমে পরেছিলাম… আজ দেখো আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেল..
সারাজীবনের জন্য আমার একে অপরের হয়ে গেলাম..
প্রথমে তো ভেবেছিলাম সিক্রেট লাভার হবো…
কিন্তু দু বছরেও তুমি আমাকে কোনো পাত্তাই দিলে না..
তাই গেলাম তোমার ভার্সিটির টিচার হয়ে.. অ্যান্ড আমার উপর ক্রাশ ও খেলে…
তারপর দেখো ভাগ্যক্রমে তুমি আমার অফিসেই জবের জন্য আসলে…
এটা অবশ্য আমার প্ল্যানে ছিল না.. কিন্তু এতে তোমাকে পাওয়ার চান্সও বেড়ে যায়…
আর দেখো আজ তুমি আমার হয়ে গেলে…
তিথি : তারমানে এতদিন আপনি ওসব…
রুহান : হুম সব আমিই করেছি…
ওইসব ম্যাসেজেস…গিফট… সব
তিথি : আপনি খুব খারাপ খুব খুব খুব খারাপ… জানেন আজ আমি কতো ভয় পেয়েছিলাম…এতদিন বলেন নি কেন আমাকে ( রুহানের বুকে এলোপাথাড়ি কিল দিয়ে)
রুহান : তোমাকে আজ এই সারপ্রাইজ দিব বলে… গত দু বছরের তোমার প্রত্যেক টা বিশেষ মুহুর্তকে ক্যামেরা বন্দী করেছি আজকের এই বিশেষ রাতে তোমাকে সারপ্রাইজ হিসেবে দিব বলে…
তিথি : বুঝলাম… কিন্তু আমি কখন কি করছি না করছি তার খবর আপনি কিভাবে পেতেন..
রুহান : তোমার পুরো বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা আছে… আর যখন বাইরে বের হও তখন দুজন গার্ড সবসময় তোমার আশেপাশে থাকে
তিথি : ও…এজন্যই তিশা আমাকে কিডন্যাপ করার পর তারাতাড়িই আমাকে খুঁজে পান
রুহান : নাহ… গার্ড রা তো জানতই না তুমি কিডন্যাপ হয়েছ..আসলে তিশাকে তো ওরা আগে থেকেই চেনে তাই তখন ওদের সন্দেহ হয় নি..তাই ওরা জানতো না..
তিথি : তাহলে কিভাবে খুঁজে পেলেন
রুহান : তোমাকে একটা লকেট দিয়েছিলাম মনে আছে…
ওটাতে ট্রান্সমিটার সেট করা আছে..
আর তাই তোমাকে খুঁজে পেতে সমস্যা হয় নি…কিন্তু খুব ভয় পেয়েছিলাম সেদিন তোমাকে নিয়ে..
আমি চেয়েছিলাম তোমার সিক্রেট লাভার হয়ে তোমাকে নিজের করে নিতে.. কিন্তু তুমি তো পাত্তা দিলে না..তাই ভাবলাম এবার যা হবে সব সামনাসামনি… তোমার কাছে থেকে তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করবো..
( তিথির হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে)
আই লাভ ইউ তিথি.. আই লাভ ইউ সো মাচ…
সারাজীবন তোমাকে ভালবেসে যেতে চাই ( তিথির হাতে আলতো করে চুমু খেল)
তিথি : কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না…
একমুহূর্তের জন্য যেন রুহানের পুরো পৃথিবী থমকে গেল..
রুহান : এসব কি বলছো তুমি তিথি
তিথি : হ্যাঁ ঠিকই বলছি.. আপনি ভাবলেন কিভাবে সব জানার পর আমি আপনাকে মেনে নিব…
আমি আমার ওই সিক্রেট লাভারকে ভালোবাসি… আর সারাজীবন তাকেই ভালোবাসবো
রুহান : তিথি.. ( তিথির দিকে ছলছলে চোখে তাকিয়ে)
তিথি : হুম… আমি সারাজীবন তাকেই ভালোবাসবো… আমি সারাজীবন তার ওই দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা গুলো চাই…
রুহান : আই লাভ ইউ… ( তিথিকে জড়িয়ে ধরে)
ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি..
তিথি : হুহ শুধু আপনিই পারেন নাকি আমিও পারি ভয় দেখাতে ?
রুহান : তাহলে লাভ ইউ টু বলো
তিথি : লাভ ইউ টু রুহান ?
রুহান : ☺… তাহলে চলো যাই ?
তিথি : কোথায়
রুহান : বাসর ঘরে ?
বলেই তিথিকে কোলে তুলে নিল..
তিথি : এই নামান কি করছেন… কেউ দেখে ফেলবে
রুহান : দেখুক.. কার কি..আমি আমার বউকে কোলে নিয়েছি..
রুমে গিয়ে তিথিকে নামিয়ে দরজা লক করে দিল..
রুহান এগোচ্ছে আর তিথি পেছাচ্ছে…
তিথি দৌড় দিতে গেলেই রুহান একটানে তিথিকে কাছে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে..
রুহান তিথির দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…
তিথি : এভাবে তাকাবেন না..আমি লজ্জা মরেই যাবো
রুহান : আজ তাহলে মেরেই ফেলি..??
বলে গলার তিলটাতে গভীর চুমু খেয়ে তিথির ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিল..
..
..
..
তারপর…
তারপর….
..
..
তারপর আর কি..
আমার কথাটি ফুরোলো….
।।
।।