রঙিন বর্ষা ১ম পর্ব

0
985

#রঙিন_বর্ষা
লেখা : নীলাদ্রিকা নীলা
১ম পর্ব
.
সুন্দরী মেয়ে! তোরা যে কি বলিস না আমি তো এই ক্লাসে কোনো সুন্দরী মেয়েই দেখছি না! আমাদের ক্লাসে তেমন কোনো সুন্দরী মেয়ে নেই যাকে দেখে এই শ্রাবণের বুকের ভিতর প্রেমের হরিণ দৌড়াবে!
কথাটা বলেই বন্ধুদের সাথে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো ভার্সিটির হাজারো মেয়েদের ক্রাশ এবং মাত্রাতিরিক্ত সুদর্শন যুবক শ্রাবণ।
এদিকে ঝুমুর ক্লাসে ঢোকার সাথেই ওদের কথাবার্তা আর হাসাহাসি দেখে বুঝতে পারল ওরা ওকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছে। রাগে কটমট করতে করতে ঝুমুর একবার শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে সিটে গিয়ে বসলো।
রাব্বি শ্রাবণকে বলছে, কেন রে এই ক্লাসের একটা মেয়েকেও কি তোর পছন্দ হয় না? সবাই তো ঝুমুর ঝুমুর বলতে পাগল, এই ক্লাসেরই তো কত ছেলে ওকে প্রপোজ করেছে! এমনকি পুরো ভার্সিটির ছেলেরা ওর জন্য পাগল। রুপের আগুন বলতেই ঝুমুর!
শ্রাবণ বলে উঠল, এই থামতো!এই তোরাই ওর পার্ট এভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিস! আর এমন ভাবে বাড়িয়েছিস যে ওর পা এখন মাটিতেই পরে না। কাল দেখলি না প্রপোজ করার অপরাধে কিভাবে ছেলেটাকে সবার সামনে অপমান করলো, না ওর মন সুন্দর না ও রুপে! আসলে ও তো তেমন কোনো সুন্দরী মেয়েই নয়, যেমনটা তোরা ভাবিস,
,
পাশে বসে থাকা তুহিন বললো, তাহলে কি তুই ঝুমুরকে সুন্দরী মেয়ে বলবি না?
– না বলবো না,
– এতদিনে তুই একদম ঠিক বলেছিস শ্রাবণ। আমিও ঝুমুরকে প্রপোজ করেছিলাম, ও আমায় অপমান করে বলেছিলো নিজের চেহারা আয়নায় দেখতে! তুই বল আমি কি দেখতে খারাপ?
– না তো একদম না, আসলে এই কথা বলার আগে আয়না তাদের আগে দেখা উচিত, হা হা হা,
,
সিটে বসে প্রিয়া ঝুমুরকে বলছে, শুনেছিস তোকে নিয়ে ওরা কি বলছে,
– হ্যাঁ.. কান আছে সব শুনছি
– তাহলে এখন কি করবি
– এই ঝুমুর কাউকে ক্ষমা করে না, আমাকে অপমান করার সাহস ওই শ্রাবণের হলো কি করে! এই ভার্সাটিতে এমন কোনো মেয়ে নেই যে ঝুমুরকে টক্কর দেবে, আর ওই সামান্য একটা ছেলে কিনা ঝুমুরের সৌন্দর্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে?
,
রাব্বি হাসতে হাসতে বলছে, তাহলে লেডিস ক্রাশ শ্রাবণের গার্ল ফ্রেন্ড কে হবে! এই ক্লাসে যেহেতু কোনো সুন্দরী মেয়ে নেই আর তোর তো কাউকে পছন্দ নয়, শ্রাবণের মন পাবে তাহলে কোন ভাগ্যবতী!
শ্রাবণ শান্ত স্বরে বললো, মন সব সময় সৌন্দর্য দিয়ে পাওয়া যায় না, স্যার আসছে চল সিটে গিয়ে বসি।
,
ক্লাস শেষে শ্রাবণ, রাব্বি আর তুহিন এক সাথে রাস্তা দিয়ে হেটে বাড়ি ফিরছে,
তুহিন হাসতে হাসতে বলছে , আজ যা করেছিস, বেশ হয়েছে, বড় লোকের ওই মেয়ের খুব ভাব! খুব অহংকার করে নিজের রুপ নিয়ে,
রাব্বি ওর কথার মাঝে বলে ফেললো, কিন্তু ওর ফেমেলি যে ডেঞ্জারাস! আমরা এরকম করছি দেখে যদি আমাদের কোনো ক্ষতি করে দেয়!
,
শ্রাবণ রাব্বির পিঠে চাপড় দিয়ে বললো, আরে কিচ্ছু হবে না! কেউ কিছু বলে না দেখেই তো ও এমন ভাব দেখায়, ওকে এভাবে আস্তে আস্তে শায়েস্তা করতে হবে, সেই তিন মাস আগে ভার্সিটির ক্লাসের প্রথম দিন থেকেই আমি লক্ষ্য করছি বেশি সুন্দর হওয়ার কারণে মেয়েটা ক্লাসের অন্যদের হেয় করে, সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, মানুষকে মানুষ মনে করে না, আর ও বড় লোকের মেয়ে হয়েছে বলে তাতে কি আসে যায়, ক্লাসে আমরা সবাই সমান!
,
রাব্বি বললো, ঠিক বলেছিস তুই, ওর অহংকার এবার ভাঙতে হবে, আমরা তোর সাথে আছি,
,
বাসায় এসে ঝুমুর আয়নার সামনে দাঁড়ালো, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে নিজের চোখের নিচটা ধরে ধরে দেখছে আর মুখটা এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে দেখছে, সেই সময় ঝুমুরের চাচাতো বোন সাবিহা রুমে আসলে ঝুমুর ওকে দেখে বলে উঠল, আচ্ছা আপু আমি কি সুন্দরী নই ? আয়নায় আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
সাবিহা ঝুমুরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বললো, তুই বলছিস এই কথা! তুই যেমন আয়নায় তোকে দেখতে তেমনি লাগছে, এই শহরে তোর মত সুন্দরী আর কয়টা খুঁজে পাওয়া যাবে বল, তুই হচ্ছিস এই রাজ্যের রাজকন্যা!
ঝুমুর এপাশে ঘুরে বললো, সত্যি বলছিস আপু?
– হুম, কিন্তু হঠাৎ এই কথা?
– আজকে ক্লাসের একটা ছেলে আমায় বলেছে আমি নাকি তেমন কোনো সুন্দরীই নই!
– কিহ! কার এত বড় সাহস হলো এটা বলার!
– হ্যাঁ সেইজন্যই তো আয়নায় নিজেকে দেখছিলাম,
– তাহলে তুই ওকে দেখিয়ে দিস ঝুমুর কি জিনিস! ও চোখে দেখতে ভুল করেছে,
– একদম ঠিক বলেছিস আপু!
,
পরদিন ক্লাস চলাকালীন সময়ে ঝুমুর হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, স্যার আমার মোবাইল ফোনটা পাচ্ছি না, ক্লাসে এসে ব্যাগে রেখেছিলাম কিন্তু এখন ব্যাগে ওটা নেই, এই ক্লাসেরই কেউ নিয়ে নিয়েছে হয়তো স্যার,
স্যার বললো, ঠিকাছে তুমি বসো। এখনি সবার ব্যাগ সার্চ করা হবে,
সবার ব্যাগ সার্চ করার পর শ্রাবণের ব্যাগে ওটা পাওয়া গেল,
স্যার শ্রাবণকে সামনে নিয়ে এলো, শ্রাবণ চিন্তিত মুখে মিনতি করে বলছে, স্যার বিলিভ মি, আমি ওর ফোন নেই নি, কেউ হয়তো মজা করে এটা করেছে স্যার! প্লিজ স্যার বিলিভ মি!
– হুম,আমিও এটা মনে করি না তোমার মত ভদ্রঘরের ছেলে এটা করতে পরে, আমি তোমাকে ভালো করে চিনি! ডোন্ট ওরি মাই বয়! তুমি তোমায় জায়গায় গিয়ে বসো,
– ওকে থ্যাক উ স্যার।
– আর ঝুমুর তোমার ফোন পাওয়া গেছে এটাই বড় কথা! মজাটা যেই করে থাকো নেক্সট টাইম কেউ এমন করলে তার কড়া পানিশমেন্ট হবে!
,
ক্লাস শেষে শ্রাবণ, রাব্বি আর তুহিন ক্যান্টিনে বসে আছে, শ্রাবণ বলে উঠল, এটা আমার সাথে আর কেউ নয় ঝুমুর নিজেই করেছে আমার মনে হচ্ছে, সবার সামনে আমাকে অপমান করার জন্য, এসব কেরামতি আমার বহুত জানা আছে!
রাব্বি বললো, আমারও তাই মনে হয়, ওই যে সিরিয়ালের ভিতর দেখায় না কিভাবে ডাইনি গুলোর মাথায় কুবুদ্ধি থাকে, ওরকম বুদ্ধিই কাজে লাগিয়েছে।
শ্রাবণ চোখ মুখ শক্ত করে সানগ্লাসটা চোখে লাগিয়ে বললো, তাই না? সে খুব চালাক? সে জানে না সে কার সাথে টক্কর দিতে চাচ্ছে! আমিও শ্রাবণ, আর এই শ্রাবণ কোনো কিছুতে হারে না, ওর অপমান আমি ওকেই ফেরত দেব!
– কিন্তু কিভাবে?
– সেটা নিজের চোখেই দেখে নিস, একবার ভাব বাড়িতে যদি জানতো ক্লাসে এসে আমি মোবাইল ফোন চুরি করেছি, বাবা-মা কতো কষ্ট পেতো, কত আশা করে আমাকে এই ভার্সিটিতে পড়তে পাঠিয়েছে, তাদের আশাভরসা এখন আমি! ভ্যাগিস স্যার এটা বুঝতে পেরেছিলেন কাজটা কেউ ইচ্ছে করে করেছে আমাকে ফাসানোর জন্য।
– হুম সেটা ঠিক। ঝুমুরের এটা করা একদম উচিত হয় নি।
,
তখনি ক্যান্টিনে ঝুমুর আর প্রিয়া এসে উপস্থিত হয় আর ওদের দেখে হাসতে হাসতে সামনে এসে দাঁড়ালো।
ঝুমুর শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে বলছে, কি মিস্টার শ্রাবণ আমার মোবাইল ফোনটা চুরি করে তোমার কেমন লাগলো বলতো! যাই হোক আমার ফোনটা পাওয়া গেছে সেই উপলক্ষে আজ আমি তোমাকে আর এই তোমার চেলাদের ট্রিট দিচ্ছি!
,
রাব্বি উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলছে, হেই তুমি কাদের চেলা বলছো! আমরা ওর বন্ধু!
– চুপ! জাস্ট শাট আপ! তুমি আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছো! তুমি জানো আমার বাবা কে? আর আমার ভাইয়দের চেনো! জানলে হয়তো তোমরা এই সাহস করতে না।
,
এবার শ্রাবণ বলা শুরু করলো, কাজটা তাহলে তুমিই করেছো তাই না!
– হ্যাঁ করেছি, যেখানে সবাই আমার রুপে মুগ্ধ হয় আমার সৌন্দর্য নিয়ে প্রশংসা করে আর তুমি কিনা এই ঝুমুরের দিকে তার সৌন্দর্য নিয়ে আঙুল তোলো?
,
রাব্বি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলছে, আসছে আমাদের সুন্দরী! রুপ তো আমাদের শ্রাবণেরও কম নেই, তাই বলে সে তো এত অহংকার করে বলে বেড়ায় না!
শ্রাবন রাব্বিকে থামিয়ে দিয়ে বলছে,আরে তুই চুপ কর! আমায় বলতে দে! টক্কর তো আমার সাথে দিতে চাচ্ছে? তাই আমিই দেখে নিচ্ছি!
ঝুমুর রেগে বললো, জাস্ট শাট আপ! বেশি বাড়াবাড়ি করলে একদম ক্যাম্পাস ছাড়া করবো! তারপর কোথাও আর মুখ দেখানোর জায়গা পাবে না।
,
বলেই ঝুমুর আর প্রিয়া হনহন করে হেটে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে গেল, গাড়িতে বসে ঝুমুর প্রিয়াকে বলছে,কি কেমন দিলাম!
– পুরাই ফাটায়ে দিয়েছিস দোস্ত! এবার থেকে ওরা তোকে ভয় পাবে! হাহাহা
– হুম, বিকালে বাসায় আসবি! আজ শপিং করবো, তোকে নিয়ে মার্কেটে যাবো তারপর কিনাকাটা শেষ করে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে!
– ওই বদমাশ গুলোকে জব্দ করার পর তোকে খুব খুশি দেখাচ্ছে! সব সময় এমনি খুশি থাকবি,
– খুশি হবো না? এরপর আরও জব্দ করবো,লজ্জায় দেখবি আর ক্যাম্পাসেই আসবে না,হাহাহা,
– ঠিক বলেছিস তুই!
,
বিকালে প্রিয়া ঝুমুরের বাসায় আসলো। ঝুমুরের রুমে ঢুকে ঝুমুরকে দেখা মাত্রই অবাক হয়ে গেলো, ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে বড় বড় চোখ করে বলছে, মেরি বান্ধুবী! বেস্টি! মাই সুইট হার্ট তুই শাড়ি পরেছিস! ইস তোকে এই রেট কালারের শাড়িতে যা লাগছে না! উফফ আজ তো পুরো মার্কেটের লোকেরা ছেলে বুড়ো সবাই তোর রুপের আগুনে জ্ঞান হারাবে! মরেই যাবে!
– আজ মনটা খুব ভালো তাই শাড়ি পরলাম!
– খুব মিষ্টি লাগছে তোকে! ওয়েট তোরে একটা কিস দিয়ে নেই,
,
ঝুমুর আর প্রিয়া ফোনে কয়েকটা সেলফি তুলে তারপর গাড়ি নিয়ে মার্কেটের উদ্দেশ্য বের হয়। মার্কেটের ভিতরে ঢুকে শাড়ির দোকান গুলোর ওদিকে গেল,
প্রিয়া হাটতে হাটতে বলছে, তুই শাড়ি নিবি?
-হুম সামনে তো ক্যাম্পাসের ফাংশন আর পিকনিকও আছে!
– আরে হ্যাঁ তাই তো! আমিও তাহলে দেখি!
– হুম আয়! এটাতে দেখি,এখানে ভালো কিছু কালেকশন আছে,
,
ঝুমুর আর প্রিয়া একটা শাড়ির দোকান থেকে কিছু শাড়ি দেখলো, ঝুমুর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে শাড়ির কালেকশন গুলো দেখছে, ওখান থেকে একটু সরে আসতেই মনে হলো গায়ের ওপর কিছু একটা পরলো, ঝুমুর নিজের শরীরে দিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজে পেল না, তখনই প্রিয়া বলে উঠল, কিরে একটা শাড়িও পছন্দ হচ্ছে না তোর! এটা দেখ এটা তোকে খুব মানাবে,
– আচ্ছা দেখছি,আগে কিছু খেয়ে নেই খুব খিদে পেয়েছে,
– ঠিকাছে চল,
,
ঝুমুর আর প্রিয়া শাড়ির দোকান থেকে বের হয়ে আসছিলো, হাটতে হাটতে ঝুমুরের গায়ের শাড়ির আচঁলে টান পরে, মনে হচ্ছে কেউ শাড়ির আচঁলটা ধরে টানছে, ঝুমুর আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। সে তো খোলামেলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আর শাড়ির আচঁল কোনো কিছুর সাথে আটকেও পরে নি তাহলে এভাবে কে টানছে,শাড়ির আচঁলটা ভালো ভাবে খেয়াল করতেই ওখানে নাইলনের দড়ি আটকানো দেখতে পাওয়ার সাথেই এবার অনেক জোরে টান পরলো আর ঝুমুরের গা থেকে শাড়ির আঁচল মাটিতে পরে গেল,দড়িটা খুব স্প্রিডে টানতেই থাকে আর ঝুমুরের গা থেকে শাড়িটা আস্তে আস্তে খুলতে থাকে,
প্রিয়া বিষয়টা খেয়াল করতেই আশেপাশে তাকিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, এসব কি হচ্ছে!
ঝুমুরের গা থেকে পুরো শাড়িটাই খুলে নিয়ে মার্কেটের লোকজনের ভীড়ের মধ্য দড়িটা শাড়ি নিয়ে কোন দিকে চলে গেল তা বোঝা গেল না। ঝুমুর শাড়িহীন হয়ে গায়ে হাত দিয়ে শরীর ঢাকার চেষ্টা করছে, মার্কেটের দোকানদার আর ক্রেতারা সবাই এখন ঝুমুরের দিকে চেয়ে আছে, মুহুর্তেই সেখানে অনেক ভিড় জমে গেল। ঝুমুরের শাড়ি খোলা অবস্থার জন্য মার্কেটের ভিতরের মানুষ চোখ বড় বড় করে সবাই এখানে এসে ভীড় করছে।
এত লোকজনের মাঝে ঝুমুর এভাবে শাড়ি খোলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, প্রিয়া ঝুমুরের হাত টেনে ধরে বলছে তারাতারি চল এখান থেকে!
.
চলবে….