#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_33.
প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে একাধারে। কেন? কী কারণে আলতাফ চৌধুরী ক্ষতি করতে চাইছে ওদের পরিবাবের। কী রহস্য লুকিয়ে আছে তার মধ্যে?
একজন চেয়ার এগিয়ে দিলো আলতাফ চৌধুরীর দিয়ে।চেয়ারটি ওদের সামনে রেখে মুখোমুখি বসলেন। বিদ্রুপাত্মকভাবে হেসে বললেন,
-“তোমাদের মনের ভেতরে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে তাই না?”
রিমি,সিমি,নিধি,ইশা অসহায় চাহনী নিক্ষেপ করে তাকিয়ে রইল তাঁর দিকে। তিনি আবার বললেন,
-“তোমরা জানো আমি কে? হ্যাঁ! এটা জানো যে আমি তোমাদের দাদু! ওরফে আলতাফ চৌধুরী ।”
চুপ করে আছে ওরা।
তিমি আবার বললেম,
-“কিন্তু! আমি তোমাদের দাদু নই! না আমি আলতাফ চৌধুরী। আমি আফজাল চৌধুরী। আলতাফ চৌধুরীর জমজ ভাই। কী? এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।”
বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে ওরা। আফজাল চৌধুরী তার হাতে দু বার তালি দিয়ে বলল,
-“ধ্রুব! নিয়ে আসো আমার ভাইকে।”
কিছুক্ষণ পরেই একজন ছেলে হুইল চেয়ারে করে একজন বৃদ্ধ লোককে নিয়ে আসে। তার চেহারা ঠিক ওদের সামনে থাকা লোকটির মতো। জিনি নিজেকে আফজাল চৌধুরী বলে দাবি করছেন। রিমি রা বিস্ময় কিংকর্তব্যবিমূঢ়। একবার হুইল চেয়ারে বসা লোকটির দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার চেয়ারে বসা লোকটির দিকে তাকাচ্ছে। মাথা হ্যাং হয়ে গেছে ওদের। কে রিয়েল, কে নকল বুঝতে পারছে না ওরা। হুইল চেয়ারে নিয়ে আসা লোকটি অজ্ঞান অবস্থায় ছিল। ধ্রুব তার চেহারায় পানির ছাপটা দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনে। পিট পিট করে চোখ মেলে ঘোলা ঘোলা চোখে সামনে তার প্রিয় নাতবউদের বাঁধা অবস্থায় দেখে চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে। স্পষ্ট স্বরে বলে,
-“নাতবউ! তোমরা এখানে।”
রিমি,সিমি,নিধি,ইশা বুঝতে পারে এটাই ওদের আসল দাদু মানে আলতাফ চৌধুরী । নিধি কান্না মাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-“দাদু তুমি ঠিক আছো?”
আফজাল চৌধুরী ওদের কথার মাঝে বলে,
-“ঠিক তো আছেই! কিন্তু কতক্ষণ থাকবে তা বলা যাচ্ছে না।”
আলতাফ চৌধুরী হুংকার দিয়ে বলে,
-“তুই আমার নাতবউদের কোনো ক্ষতি করবি না। তোর শত্রুতা আমার সাথে। আমকে মেয়ে ফেল তুই।”
আফজাল চৌধুরী মুখে কুৎসিত হাসি ফুটিয়ে বলে,
-“তা বললে কী হয় ভাই? এতদিন এত সব প্লান করে আজ আমি সফল্যতার দিকে এগিয়ে গিয়েছি। আর তুই কিনা আমাকে ক্ষতি করতে নিষেধ করছিস।”
-“আফজাল পরিনাম ভালো হবে না কিন্তু।”
-“এক পা তো কবরে দিয়ে রেখেছিস। তারপরও জেদ কমে না তোর।”
-“ভালো……।” বাকি কথা বলার আগেই আফজাল চৌধুরী বলে,
-“ধ্রুব মুখ বেঁধে ফেল ওর।”
ধ্রুব মুখ বেঁধে ফেলে। এবার আফজাল চৌধুরী রিলেক্সে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
-“তোমাদের কে একটি গল্প শুনাই। মন দিয়ে শুনবে কিন্তু।” আঙুল জাগিয়ে বলে কথাটা।
তারপর বলতে শুরু করে,
-“এক লোকের দুই জমজ ছেলেছিল। এক ভাই ছিল অধিক মেধাবী,পরিশ্রমিক,ভালো দিলের মানুষ । আর আরেকজন ছিল চোর,ছেচড়া,হিংসুটে,অহংকারী। বড় হয়ে ওই ভাইটি পরিশ্রম করে টাকা,পয়সা,নাম-জোস সব কিছুতেই উপরে ছিল।আর ঐ ভাইটি নিচেই পড়েছিল। এ ভাইটি বিয়ে করেছে। তার ছেলেদের নিয়ে খুব ভালোই দিন কাঁটাচ্ছিল। আর কাঁটাবে না,তিনি তো খুব ধনী ছিল। আর সেই ভাই। বিয়ে করেছে ঠিকি ছোট্ট কুঁটিতে থাকত। তার একটি ছেলেও ছিল। দিনে গুন্ডামি,মাস্তানি করে বেড়াতো। ঐ ভাইয়ের সাথে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না তার। তিনি তার এই ভাইকে চোখেই দেখতে পারত না। তার সভাব,চরিত্রের জন্য। তারপর ঐ ভাইটি একদিন তার বড় লোক ভাইয়ের কাছে যায়। টাকার জন্য। আর টাকাটা সেই ভাইয়ের খুব দরকার ছিল। কারণ তার স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। লাস্ট পর্যায় ছিল । ডাক্তার তো বলেই দিয়েছিল তার স্ত্রী আর বাঁচবে না। কিন্তু ঐ ভাইটি সেটা মানতে নারাজ ছিল। তার তখন তিন বছরের একটি বাচ্চা ছিল। তখন সে বুঝতে পারে এত দিন তিনি যা পাপ কাজ করেছে তার ফল আজ তার পরিবারের লোকের উপর লানত হয়ে পড়েছে। সে অনুতপ্ত বোধ করছিল। তাই সে ছোট্ট ছেলের কথা ভেবে তার বড়লোক ভাইয়ের কাছে যায়। কিন্তু তার ভাই তার কথা না শুনেই দারোয়ান দিয়ে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়। এই কী ছিল সেই ভালো মানুষের নমুনা? বড়লোক হয়ে তার আপন ভাইকে তিনি চিনতে পারছে না। রাগে জেদে সে বাসায় চলে আসে। এবং ভাবতে থাকে কী করে তার স্ত্রীকে বাঁচাবে। সে দিন,রাত এক করে দিন মজুরি খেটে টাকা উপার্জন করে। দিন দিন তার স্ত্রী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। একদিন তিনি যখন কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে তখন তার স্ত্রীকে মৃত্যু অবস্থায় দেখতে পায়। আর তার পাশে ছোট্ট বাচ্চাটি কান্না করছিল। তখনকার দৃশ্য তখনা কঠিন আর মর্মান্তিক সেটা শুধু ঐ ব্যক্তিটি বুঝতে পারে। যার জন্য সে ভালো পথে ফিরে এসেছে। ঠিক মতো কাজ করছিল। আর আজ সেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।কিছুক্ষণ বাচ্চাটিকে জড়িতে ধরে কাঁধে। তারপর তার ভাইয়ের কথা মনে পড়ে।”
আফজাল চৌধুরী থেমে যায়। দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে,চেহারায় রাগের আফা ফুটিয়ে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে,
-“এবার আসি আসল পরিচয়। ভালো লোকটি ছিল আলতাফ চৌধুরী । মানে আমার ভাই। আর খারাপ লোকটি ছিল আফজাল চৌধুরী মানে আমি। খুব রাগ হয়েছিল সেদিন নিজের ভাইয়ের উপর। মনে চেয়েছিল ওর পরিবারের লোকদের সবাইকে মেরে ফেলতে। কিন্তু না! আমার মতো অবস্থা ওর করতে চেয়েছিলাম। তাই সেই রাতে আমি ওর বাড়িতে যাই। তখন আলতাফ বাসায় ছিল না।পাইপ বেয়ে বারান্দায় এসে রুমে প্রবেশ করি।তারপর খুব যত্নে নিজের ভাবিকে খুন করে পালিয়ে আসি। আলতাফ বুঝতে পেরেছিল আমিই ওর বউকে খুন করেছি ।তাই আমাকে ধরার আগেই আমি আমার ছেলেকে নিয়ে সিলেট চলে আসি।কিন্তু তখনো আমার বুকের মাঝে প্রতিশোদের আগুন কমেনি। আমি আরো প্রতিশোদ নিতে চেয়েছিলাম আলতাফের পরিবারের উপর । তাই আগে নিজেকে তৈরি করি। খারাপ ধান্ধায় সামিল হই। আস্তে আস্তে অনেক টাকার মালিক হয়ে যাই। তারপর আমার দেখা হয় বিপলপের সাথে। বিজনেস আরো বড় করি খারাপ কাজ করে। তারপর সেদিন যখন আলতাফ চৌধুরীর পরিবারের সবাই পিকনিকে যাওয়ার প্লান করে তখনি আমার লোক দিয়ে গাড়িতে বোম লাগিয়ে দেই । মারা যায় তার ছেলে ও বউরা। আমি সবাইকে মারতে চেয়েছিলাম। সেটা আর হলো না। আলতাফ ও তার নাতীরা বেঁচে যায়। আস্তে আস্তে ওরা বড় হয়। এদিকে আমার ছেলের বউ তার বাচ্চা জম্ম দিতে গিয়ে মারা যায়। তারও ছেলে হয়। তখন আবির ড্রাগস চালান করার জন্য ঢাকা যায়। আর তখন আলতাফের লোকরা আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে। একদিনে ছেলের বউ,আরেক দিকে ছেলেকে হারিয়ে আমি একা হয়ে যায়। তখন ধ্রুব খুব ছোট ছিল। আস্তে আস্তে ধ্রুবকে বড় করতে লাগলাম। তখন চৌধুরী পরিবারের আরেকটি নাম হয় ছিল,থ্রি গ্যাংস্টার। ওদের উপর নজর আমার সব সময় ছিল। সেদিন পার্টিতে আমিই আমার লোজদের পাঠিয়ে আলতাফের উপর আক্রমন করিয়েছি। কিন্তু ভাগ্যক্তমে বেঁচে যায় আলতাফ । তারপর রুদ্র,শুভ্র,অভ্র দের বিয়ে হয়। তখনো আমি কিছু করতে পারিনি । বিপলপ তালুকদার তখব বার বার আমার কাছে আসত। কারণ তার ছেলে,কালো ধান্ধার কারবার রুদ্র রা বন্ধ করে দিয়েছিল।
একদিন সুযোগ বুঝে সেই রেস্টুরেন্ট এ তোমাদের উপর হামলা করি । কিন্তু তখনো তোমরা বেঁচে যাও। শুধু মাত্র ফাহিমেন জন্য। তারপরও ধমে যাইনি আমি। আমার নাতী ধ্রুব রাস্তায় তোমার বোন ফারিনকে দেখেছিল। তখন থেকেই ও’কে ভালোবেসে ফেলে। প্রতিদিন পিছু করে,খোঁজ খবর নেয়। কার মেয়েছিল ফারিন। যখন জানতে পারি ফারিন অভ্রের শালি। নিধির মামাত বোন তখনি প্লান করি আমি । তার আগে আলতাফ চৌধুরীকে ফোন করে সেদিন রাতের বেলায় আমার আস্তানায় একা আসতে বলি। আলতাফ একা আসে রুদ্র,অভ্র,শুভ্র দের বাহিরের যাওয়ার বিষয় কিছু জানায় না। কারণ ওরা ছিল ফাহিমকে নিয়ে ব্যস্ত। আলতাফ চৌধুরী আগে থেকেই ধারনা করতে পেরেছিল এসব কাজ আমার ছিল। তার পরিবারের উপর শুধু বিপলপ নয়,আমিও হামলা করতাম । আমার আস্তানায় আসার পর তাকে আটকে ফেলি,এবং আমি আলতাফ চৌধুরী সেজে তোমাদের বাড়ি যাই। তারপর সব কিছু আমার হাতের মুঠোই করে নেই।বাড়ির আনাচে,কানাচে সবার আড়ালে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দেই। নিখুদ ভাবে আলতাফ চৌধুরী সেজে অভিনয় করতে শুরু করি। আর সেই অভিনয়ের মাধ্যমে কেউ ধরতেও পারেনি আমি কে? তারপর আলি হোসেন ও তার স্ত্রী, মেয়েকে ফোর্স করে তোমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে তোমারদের মারার জন্য। প্রথমে তারা রাজি না হওয়ায় তার ছোট্ট ছেলে ইফাদকে বন্দি করি। তারপরি তারা রাজি হয়ে যায়। করেক বার ধমকিয়ে তোমাদের মারার কথা বলি ওদের ফোন দিয়ে। কিন্তু তারা তোমাদের হাসি-খুশি মাখা পরিবার দেখে তাদের কাজে ব্যর্থ হয়ে যায়।কাজ হচ্ছিল না দেখে পায়েশে বিষ মিশায়। এক সাথে সবাইকে মারার জন্য । কিন্তু সেই পায়েশ টা সার্ভেন্ট রা ফেলে দেয় ধাক্কা খেয়ে। কোনো ভাবেই
যখন তাদের কাজে সফল হচ্ছিল না তখন ইফাদকে মেরে দেই। আলি হোসেনকে এটা জানানোর পর তিনি রাগে,ক্ষোপে সব সত্যি কথা বলে দিতে চেয়েছিল অভ্রকে। এর জন্য তাকেও মেরে ফেলে আমার লোক রা।”
এই কথাটা শুনে নিধি কাঁদতে শুরু করল। ভাবতেই পারছে আজ নিজের জন্য মামা,মামি আর তার ছেলে ইফাদকে হারিয়েছে শুধু মাত্র ওর জন্য।
আফজাল চৌধুরী চেয়ার ছেলে ওঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করে বলে,
-“রুদ্রদের সাথে অফিসে যেতে শুরু করেছিলাম শুধু মাত্র অফিসে বোম লাগানোর জন্য। যাতে এক বারে অফিসে থাকতেই ওরা মারা যায়। কিন্তু তখনো বডিগার্ড দের জন্য বোম লাগাতে পারি নি। তাই গাড়িতে বোম লাগিয়ে দেই। এবারও ওরা বেঁচে যায়। সেদিন ফারিন চলে যাওয়ার সময় মেবি সত্যি কথা বলার জন্য তোমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল। তাই তখনি বিপলপ তালুকদারের লোকরা ও’কে গুলি করে দেয়,আর গাড়িতে বোম লাগিয়ে দেওয়ার ফলে গাড়ি ব্লাস্ট করায়। ফারিনের মা মারা গেলেও ফারিন এখনো আই,সি,ইউ তে পড়ে আছে। অবশ্য তাতে কোনো সমস্যা নেই আমার। কারণ তোমরা তো এখন আমার কব্জায় বন্দি।” কথাটা বলেই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলল।
বিপলপ তালুকদার এতক্ষণ আফজাল চৌধুরীর পাশে বসা ছিল। তিনি উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
-“ওদেরকে মেরে ফেলবো আমি।” বলেই পিস্তল তাক করে ওদের দিকে।
আফজাল চৌধুরী বলেন,
-“কুল,আগে ওদের হাসবেন্ড দের জানাতে হবে,তাদের ওয়াইফ রা এখন আমাদের কব্জায় বন্দি।”
বিপলপ তালুকদার বলার আগেই ইশা রগী কন্ঠে প্রশ্ন করে,
-“সাব্বির কোথায়? আর আমার বাচ্চাকে মারার পিছনে কার হাত ছিল?”
-“এটা আর না বোঝর কী আছে? সেদিন রাতে আমি তোমাকে যেই আপেলটা দিয়েছিলাম সেই আপেলে বিষ ছিল। যার কারণে তোমর উপর প্রভাব না পড়ে আগেই তোমার পেটের বাচ্চার উপর পড়ে। আর তোমার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। সাব্বির রুমে এসে তোমার অবস্থা দেখে নাজেহাল। তখনি আমি ওর মাথার পিছনে লাঠি দিয়ে আঘাত করে অজ্ঞান করি। এবং আমার লোকদের মাধ্যমে বেলকুনি দিয়ে সাব্বিরকে নিচে ফেলে দেই। আমার লোকরা সাব্বিরকে নিয়ে চলে যায়। তোমাদের বাড়ির মধ্যেই যে আমার কিছু গার্ডস আছে। সেটা তোমাদের অজানা ছিল।”
বাচ্চা মারার কথা শুনে ইশা রেগে বাঘিনির রূপ ধারন করে। চিৎকার করে বলে,
-“কেন আমার বাচ্চাকে মেরেছিস? কী দোষ করেছিল আমার বাচ্চাটা।”
-“মারতে তো তোকেও চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই বেঁচে গেলি।”
-“আমি তোকে খুন করে ফেলবো। তোর জন্য আমি আমার বাচ্চাকে হারিয়েছে।”
-“বাঘের গুহায় বন্দি হয়ে বলছে বাঘকেই মারবে। হাউ ফানি।” হেসে বলে ধ্রুব।”
আফজাল চৌধুরী হাস্যকর মুখে বলে,
-“মুখ বেঁধে ফেলো ওদের।”
বিপলপ তালুকদার বলে,
-“ওদেরকে মেরে দিচ্ছেন না কেন?”
-“মারব,আগে ওদের হাসবেন্ডদের এখানে আসতে দেও তারপর।”
-“কিন্তু!”
-“আর কোনো কথা হবে না। ধ্রুব! ”
-“বলো ড্যাড?”
-“ফাহিমকে তুলে নিয়ে আসো।”
-“ওকে দাদু।”
দলবল নিয়ে বেরিয়ে যায় ধ্রুব। রিমি রা অবাক হয় ধ্রুবকে আফজাল চৌধুরীকে ড্যাড,দাদু বলতে দেখে।
আফজাল চৌধুরী ওদের উদ্দেশ্যে বলে,
-“অবাক হওয়ার কিছু নেই। ধ্রুবের মাথায় একটু সমস্যা আছে। যার কারণে কাকে কী বলে ফেলে সেটা ও নিজেও জানে না। ফারিনকে পেয়ে ধ্রুব অনেকটা ঠিক হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু এখন আবার রোগটা বেশি করে দেখা দিচ্ছে।” বিপলপ তালুকদারের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে কথাটা বলে। বিপলপ তালুকদার চোখ সরিয়ে নেয়। কারণ তার জন্যই ফারিনের এই অবস্থা।লোকদের বলে সাব্বিরকে পাশের রুম থেকে নিয়ে এসে এ রুমে এনে ওদের পাশে চেয়ারের সাথে বেঁধে দেয়। সাব্বিরকে দেখে ওরা সবাই একটু হলেও খুশি হয়।
.
.
থ্রি গ্যাংস্টার হাউস…….
এতক্ষণ আফজাল চৌধুরী ও বাকিদের কথা শুনছিল ওরা। রুদ্র ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,
-“সেকেন্ড দাদু তুমি যদি ফুল হও,তাহলে আমি হবো কাঁটা।তোমার সাথে আমাদের শত্রুতা থাকবে এক দঁড়িতে বাঁধা ।”
রুদ্রের ছন্দটি শুনে অভ্র,শুভ্রের ঠোঁটেও হাসি ফুটে। কাল রাতে ঘুমানোর সময় রুদ্র,অভ্র,শুভ্র রা রিমি,সিমি,নিধির গলায় একটি ক্যামেরা ও মাইক লাগান পেনডেন পড়িয়ে দেয়। কারণ ওরা জানত ওদেরকে দূর্বল করার জন্য আগেই ওদের দূর্বল জাগায় আঘাত করতে পারে। ওরা এটাও জানতে পারে কোথায় রেখেছে ওদের। আর ওদের শত্রুকে আগে থেকেই চিনতে পেরেছিল। কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আর সেই সুযোগ টা আজকে এসেছে।
-“চলো ভাই রা আমাদের কুইমদের নিয়ে আসি।” অভ্র হেসে হেসে বলে।
-” কেন নয়!” উত্তর দেয় শুভ্র।
.
ধ্রুব হাসপাতালে এসে কেবিন থেকে ফাহিমকে ধরে নিয়ে যায়। ডাক্তার,নার্স রা ঘাবড়ে গেলে ওরা পিস্তল দেখিয়ে সান্ত করিয়ে রাখে। ফাহিমকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ধ্রুব ফারিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। মায়াবী চাহনীতে ফারিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর আস্তে করে ফারিনের মুখের মাক্স খুলে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। ফিরে আসে ফাহিমকে নিয়ে ওদের আস্তানায়।
রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওর সাথে গার্ডস নিয়ে এসে হাজির হয় ওদের আস্তানায়। আফজাল চৌধুরীর লোকরা এটা দেখে এলার্ট হয়ে যায়। ভেতরে এসে দাঁড়াতেই সবাই ওদের দিকে গান তাক করে ধরে।
দূর থেকে আফজাল চৌধুরী ও তাঁর পাশে বিপলপ তালুকদার হেঁটে আসছিল আর বলছিল,
-“ওয়েল কাম থ্রি গ্যাংস্টার,ওয়েলকাম।”
রুদ্র হেসে বলে,
-“ধন্যবাদ দাদু টু।”
আফজাল চৌধুরী রেগে গিয়ে বলেন,
-“তাহলে তোরা সব জেনে গেছিস? আর খবরদার আমাকে দাদু বলবি না! আমি তোদের দাদু নই।”
-“চাইলেও রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করা যায় না। আপনার শরীরে যেই রক্ত বইছে,সেই রক্ত আমাদের শরীরেও আছে।ভুলে যাচ্ছেন কেন এটা?” অভ্র বলে।
-“তার জন্যই তো রক্তের শত্রুকে শেষ করতে এত সব আয়োজন।” বাঁকা হেসে বলে আফজাল চৌধুরী ।
-“বসে কথা বলি দাদু।”
-“দাদু বলতে নিষেধ করেছি।”
বলেই সমনের দিকে হাঁটা ধরল ওরা। সাব্বিরদের রাখা পাশের রুমে নিয়ে আসে ওদের। এই রুমটা অনেক বড় ছিল। অনেকটা এড়িয়া জুড়ে। সেখানের চেহারে বসেছিল আফজাল চৌধুরী,বিপলপ তালুকদার ও ধ্রুব। রুদ্র, অভ্র, শুভ্র তার পাশের চেয়ারে এসে বসে। প্রথমে শুভ্র আফজাল চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলে,
-“দাদু তুমি যদি আমাদের কেউ না হয়ে থাকো,তাহলে তোমার নামের পিছনে আফজাল চৌধুরী কেন লাগিয়েছো?”
-“সেটা আমার ইচ্ছে!” তীক্ষ্ণস্বরে বলেন আফজাল চৌধুরী ।
-“উঃ! না,তোমার ইচ্ছে হতে পারে না।অন্য কোনো রহস্য আছে মনে হচ্ছে ।” অভ্র এক ভ্রু উঁচু করে বলে।
-“আর কোনো রহস্য নেই।”
-“তবে দাদু! তোমার আইডিয়া টা কিন্তু ভালোই ছিল। কিন্তু তুমি ধরা পড়ে গেছো তোমার ডান হাতের বার্থ মাক্স এর জন্য। আর সেদিন অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও ভুল বসত ভাবে রেকর্ড হয়ে গেছো।” রুদ্র চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে আফজাল চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে।
-“যদি তুমি ফাইলটা চুরি না করতে তাহলে হয়তো তোমার উপর আমাদের কোনো সন্দেহ জাগত না। বাট ইউর মিস্টেক দাদু।” অভ্র আফসোস হয়ে বলে।
আফজাল চৌধুরী রেগে যাচ্ছে ওদের কথা শুনে। বিপলপ তালুকদার ও ধ্রুবরও রাগ লাগছে। ওদের পরিবারের লোকরা তাদের কাছে বন্দি করা,তারপরও ওরা কত স্বাভাবিক আচরন করছে। যেনো মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। ওদের সাথে প্রেমালাপ করতে বসেছে এখানে।
আফজাল চৌধুরী তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে পিস্তল বের করে বলে,
-“তোদের কী ভয় করছে না। বাঘের গুহায় এসেও স্বাভাবিক আচরণ করছিস।”
-“বাঘ? কোথায় বাঘ? আমি তো কত গুলো ভীতু বিড়ালকে দেখতে পাচ্ছি।” শুভ্র বলে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ।
-“কী মডেল পিস্তল বের করেছো? আমাদেরটা দেখো নিউ মডেল।” বলেই ওর প্যান্টের পকেট থেকে পিস্তল বের করে আলতাফ চৌধুরীকে দেখাতে লাগলো।
ধ্রুব পিস্তল বের করা দেখে ওর পিস্তল বের করে রুদ্রের দিকে তাক করে। রুদ্র সু্যোগ বুঝে ধ্রুবের হাতে লাথি মেরে পিস্তল ফেলে দেয়। অভ্র,শুভ্র ওঠে দাঁড়ায়,পিস্তল বের করে আগে তাদের লোকদের উপর গুলি চালায়। সেখানের একটি লোহার কাঠের পিছনে লুকিয়ে রুদ্রদের উপর গুলি ছুঁড়তে লাগলো ওরা তিনজন আর তার লোকরা রুদ্র রাও খাম্বার পিছনে লুকিয়ে গুলি করতে লাগলো । এক প্রকার বিকট শব্দ তৈরি হয়েছে। পাশের রুমে বসে সাব্বির সহ বাকিরা সবাই এই শব্দ শুনতে পেয়েছে। সাব্বির,ফাহিম হাতের বাঁধন খোলার জন্য মোচড়াতে লাগলো। ঠিক তখনি রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বিপলপ তালুকদার । পিস্তলটি প্রথমেই রিমির দিকি তাক করে। রিমি ভয় পেয়ে যায়। সাব্বির,ফাহিম আরো জোরে জোরে মোচড়াতে লাগলো নিজেদের ছাড়ানোর জন্য । সাব্বিরের হাতের বাঁধন এক পর্যায় লুস হয়ে যায়। পায়ের বাঁধন খুলতে নিলেই তখনি গুলির শব্দ আসে। বিপলপ তালুকদার চুপটি করে দাঁড়িয়ে যায়। দুই মিনিট পর সব কিছুই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে এমনটা মনে হচ্ছে ওদের কাছে।বিপলপ তালুকদার আস্তে করে সামনের দিকে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। পিছন থেকে গুলি ছুঁড়ার মানুষটিকে ওরা দেখতে পায়। তাকে দেখে সবার প্রশান্তি মিলে। বলা যায় তাদের চোখে,মুখে খুশির প্রফুল্ল।
কারণ মানুষটি যে আর কেউ নয় ফারিনই ছিল। যার হাতে ছিল পিস্তল,আর চোখে মুখে ছিল স্থিরানুবন্ধতা। বলা যায় প্রতিশোদের আগুন জ্বলছে চেহারা দিয়ে।
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……..