Three Gangsters Love Part-34 and Last part

0
4118

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_34.[ অন্তিম পর্ব ]

এক মাস পর……

আজকে ফারিন আর ফাহিমের বিয়ের উপলক্ষে বড় পার্টির আয়োজন করা হয় চৌধুরী বাড়িতে।কালকে ওদের দু জনার বিয়ে হয়েছে। আর আজ শুধু ওদের দু’জনার জন্য পার্টি তা নয়। বরং রুদ্র,অভ্র,শুভ্র রা ওদের মনের কথা রিমি,সিমি,নিধি দের বলতে পারে তারও আয়োজন সাব্বির, ফাহিম,ইশা,ফারিন করেছে। চৌধুরী পরিবারে এখন খুশির আমেজ ভরপুর বলা যায়। চারদিক আত্নীয়-সজন রা গিজ গিজ করছে। এই পার্টিতে ইশার মা-বাবাও এসেছে। তার তাদের ভুল বুঝতে পেরে মেয়েকে আপন করে নিয়েছে।
আজ খুশির আমেজ চৌধুরী পরিবারে। কিন্তু কয়দিন আগে ছিল শোকের আমেজ।
সেদিন?

ফারিন ওদের হাতের বাঁধন খুলে দেওয়ার সময় বলে ও আগে থেকে সুস্থ ছিল। কিন্তু এতদিন কোমায় থাকার অভিনয় করে,শুধু মাত্র ধ্রুবের হাত থেকে বাঁচার জন্য। এই বিষয় কিছু ডাক্তার ও নার্স ও’কে হেল্প করে। রুদ্রদের গুলি করার এক পর্যায় বিপলপ তালুকদার নিহত হয়। ধ্রুবকে অভ্র গুলি করে মেরে দেয়।এক পর্যায় ওদের সব লোককে মেরে ফেলে। শুধু বেঁচে ছিল আফজাল চৌধুরী। ফারিন তাকে মারতে গেলে ফাহিম ও’কে আটকায়।আলতাফ চৌধুরী আফজাল চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চায়। সেদিন যদি ভাইয়ের কথা শুনত,তাহলে হয়তো তার পরিবার আজ বেঁচে থাকত। ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর আফজাল চৌধুরী ইমোশনাল হয়ে যায়। তিনিও তার ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে বলে একটি কথা আছে না। তেমনি হয়েছে তার সাথে। তার নাতী ধ্রুবকে সে হারিয়েছে। তার কুকর্মের জন্য সবার কাছে মাফ চায়। এবং সে সুযোগ বুঝে শুভ্রের হাত থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে নিজের মুখের ভেতরে গুলি করে দেয়। মারা যায় আফজাল চৌধুরী। আলতাফ চৌধুরী তখন ভাইয়ের মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়ে।যতই হোক জমজ ভাই ছিল তারা। এক সাথে মরতে না পারলেও,এক সাথে তারা এই পৃথিবীতে এসেছিল।

ভাইয়ের মৃত্যুর শোক কাঁটিয়ে ওঠতে তার কিছুদিন সময় লাগে। আর তার সাথে ফারিন,ইশা তার প্রিয়জন হারানোর কষ্টটাও মন থেকে মুছতে সক্ষম হয় এই এক মাসে। কিন্তু চাইলেও যে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা ভুলা যায় না।
.
.
সবার সামনে এক সাথে হাঁটু গেড়ে বসে রিমি, সিমি,নিধি কে প্রপোজ করে ওরা তিন জন। এবার আর সিমি,রিমি,নিধি ওদের দূরে সরিয়ে দেয়নি। তাদের প্রপোজ একসেপ্ট করে নেয়। খুশিতে সবাই জোরে চিৎকার করে ওঠে। তখনি মিউজিকে গান বাজতে শুরু করে। গানের তালে সবাই এক সাথে ডান্স করতে লাগল।

Tera Badan Pura,
Tera Ilaaka,
Maine Na Jahaaka……

Maana Tu Lady Gaga,
Main Daaku Nahi Hoo
Na Daaluga Daaka……

Her Sardi Mein,
Gar Mein,
Baarish Mein,
Tum Meri,Tum Meri Hona….

Shona Meri,Shona,Shona,Ho Ho Ho….

নাচের এক পর্যায় দাদুকেও সাথে নিয়ে নেয়। সবাই এক সাথে কিছুক্ষণ ডান্স করে। তাদের হাসি-খুশি মাখা মুখ খানা তখন ক্যামেরায় বন্দি হয়। যেটা স্মৃতির পাতায় রয়ে যাবে। পার্টি শেষ হয় রাত বারোটার দিকে। সব গেস্টরা চলে গেছে। ঘনিষ্ট কিছু আত্মীয়রা রয়ে গেছে ওদের বাসায়।
.
.
দমকা হাওয়া বারান্দায় অবস্থানরত রুদ্র ও রিমিকে শিহরিত করে তুলছে। রিমির চুলের খোঁপা আলতো করে রুদ্র খুলে দিল । রিমি কিছু বলল না। এতবেশি লজ্জারা ও’কে জেঁকে ধরেছে যে মুখ দিয়ে কোনো শব্দও বের হচ্ছে না। রুদ্রের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও লজ্জাবোধ হচ্ছে । রিমির অস্থিরতা রুদ্র বুঝতে পারে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-“লজ্জা পাচ্ছো কেন রিমি?”

এতক্ষণ সামান্য লজ্জাবোধ হলেও,এখন লজ্জাটা আরো জেঁকে ধরল রুদ্রের এই প্রশ্ন শুনে। রুদ্রের কাছে মজাই লাগছে। পিছন থেকে আরেকটু জোরে জড়িয়ে ধরে রুদ্র। রিমি তখনো কিছু বলে না। রিমির নিরবতার মানে বুঝতে পেরে ঘাড়ের কাছে মুখ নেয় রুদ্র। এদিকে রিমির মুখ দিয়ে কোনো কথাও তো বের হচ্ছে না,তার উপর ঘাড়ের কাছে মুখ আনার কারণে রিমির সুরসুরি লাগছে। যার কারণে নড়াচড়া করার ফলে রুদ্র আরো বেশি করে সুরসুরি দিয়ে লাগলো। রিমি এবার রুদ্রকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ওর কাছ থেকে সরিয়ে দেয়।
রুদ্র ফিক করে হেসে ফেলে। রিমিকে কাছে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আজকে আর দূরে সরে যাচ্ছি না রিমি মনি। নিজের করে নেবই তোমাকে।” কথাটা বলতে দেরি রিমির ঠোঁট জোড়া তার আয়াত্তে করে নিতে দেরি করে না। রিমি চোখ বন্ধ করে পেছন থেকে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে। আজ রিমিও বাঁধা দিবে না। রিমিও রুদ্রকে ভালোবাসে।ভালোবেসে আজ ও’কে আপন করে নিবে।
.
.
আকাশে আজ হাজার তারাদের মাঝে পূর্ন একটি চাঁদ। কাজলের ন্যায় কুচকুচে রাতের অন্ধকারে রূপালি চাঁদের আলোয় দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে শুভ্র ও সিমি। বারান্দার দোলনায় পাশাপাশি গা ঘেঁষে বসে আছে তারা দু’জন। সিমির ইচ্ছে ছিল এমন এক জোৎস্ন্যা ভরা রাতে প্রিয় মানুষটির সাথে দোলনায় বসে আকাশের চাঁদ দেখবে। সেই ইচ্ছেটা শুভ্র পূরন করে। বারান্দায় দোলনার ব্যবস্থা করে। এবং এখন দু’জন এক সাথে বসে আকাশের স্বচ্ছ চাঁদ দেখে উপভোগ করছে।
শুভ্র সিমির আরেকটু কাছে গিয়ে গলা ও পেটের উপর হাত রেখে কানে কানে বলে,
-“কেমন লাগছে সিমি?”

সিমি লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে উত্তর দেয়,
-“ভালো।”

শুভ্র সিমির গালে কিস করে নরম স্বরে বলে,
-“ক্যান আই……..।”

সিমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। শুভ্রের কথার মানে বুঝতে সিমির কষ্ট হয় না। শুভ্র মৃদু মুচকি হাসে। সিমির ঘাড়ে হাত রেখে ওর মুখের সামনে নিয়ে আসে। সিমি চোখ সরিয়ে ন্যায় অন্য দিকে।শুভ্র নেশা জড়িত কন্ঠে বলে,
-“লুক এট মি সিমি….।”

সিমি শুভ্রের চোখের দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে। তারপরও চোড় জোড়া শুভ্রের উপর পড়তেই কাতর মাখা ভালোবাসা জড়ানো দুটি চোখ দেখতে পায়। সেই চোখে ছিল পাহাড় সমান ভালোবাসার প্রকাশ। যেটা চাঁদের স্বচ্ছ আলোয় সিমি ঢের বুঝতে পারছে। সিমি শুভ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না। চোখ জোড়া আলত করে বন্ধ করে নেয়। সিমির চোখ বন্ধ করতে দেখে শুভ্র খুব যত্নে ওর ঠোঁটে কিস করে কোলে ওঠিয়ে নেয়।সিমি চোখ বন্ধ করা অবস্থায় শুভ্রের গলা জড়িয়ে ধরে। শুভ্র সিমিকে রুমে নিয়ে আসে। ভালোবাসার সাগরে হারিয়ে যায় দু’জনে।
.
.
নিধি অনেকক্ষণ ধরে বারান্দায় রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের পূর্ন চাঁদটিকে দেখছে। অভ্র রুমে বসে কী করছে কে জানে। তখন থেকে কী যেনো একটা খুঁজে বেড়াচ্ছে। কী খোঁজ করছে সেটা নিধিকে বলছে না। নিধি বিরক্ত হচ্ছে অভ্রের উপর। কই একটু কাছে এসে জড়িয়ে ধরে প্রেমালাপ করবে।তা নয় তখন থেকে কী যেনো একটা খুঁজেই যাচ্ছে। বিড়বিড় করে বলে,
-“গর্ধব গ্যাংস্টার ।”

তখনি ভেতর থেকে অভ্রের ডাক আসে ।
-“নিধি ভেতরে আসো।”

নিধি বারান্দায় দাঁড়িয়ে উত্তর দিল,
-“কেন?”

-“আসতে বলছি আসো।”

বিধি বিরক্ত নিয়ে ভেতরে আসে। অভ্র বারান্দার দরজা লাগিয়ে দেয়।নিধি বিরক্তস্বরে বলে,
-“গেট লাগালেন কেন?”

অভ্র অন্যমনষ্ক হয়ে বলে,
-“সমস্যা? ”

-“জ্বী,সমস্যা ।”

-“একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।”

-“মানে? ”

-“মানে, এটা কী দেখো?” একটি লাঠি নিধির সামনে ধরে বলে অভ্র।”

নিধি কপাল কুঁচকে জবাব দেয়,
-“লাঠি! এটা দিয়ে কী হবে?”

-“নো,নো।এটা লাঠি না। এটা তোমাদের ঠেঙ্গা। আর এটা দিয়ে আজকে পিটনো হবে।”

-“কাকে?”বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে নিধি।

-“আজকে রোমাঞ্চ করতে ডিস্টার্ব যে করবে, তাকে ।”

-“কী?”

কী বলার সাথে সাথে রুমের লাইট বন্ধ করে দেয় অভ্র। ঘুটঘুটে অন্ধকার ছেঁয়ে যায় চারদিক।নিধি চোখে কিছু দেখতে পারছে না। তখনি লাল,নীল,সবুজ রঙের একটি প্রজাপতির মতো মিনি লাইট জ্বালতে লাগলো। রুমটা বেশি আলোকিত না হলেও,স্বল্প আলোতে চার দিকটা ভালোই দেখা যাচ্ছিল। নিধি তাকিয়ে আছে লাইটের দিকে। তখনি পিছন থেকে অভ্র ও’কে ওর সাথে মিশিয়ে ধরে। নিধি কিছুটা ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নেয়। অভ্র আলত করে নিধির গালে স্লাইড করতে করতে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
-“ভালোবাসতে চাই তোমাকে নিধি। যেমনটা মাহিন,মিহিকে ভালোবেসে ছিল। আরিয়ান,আরিয়াকে ভালোবেসে ছিল। ওমর,কথাকে ভালোবেসে ছিল। তেমন করে তোমাকে ভালোবাসতে চাই। দিবে কী আমাকে সেই পারমিশন? ভালোবাসবে কী আমায়? হবে কী আমার? বল নিধি?”

হার্টবিট কেঁপে ওঠে নিধির অভ্রের কথা শুনে। নিধিও যে এখন অভ্রকে ভালোবাসে। চায় না ওর কাছ থেকে দূরে রাখতে। মুখে না বলে নিধি অভ্রকে জড়িয়ে ধরে। যার কারণে অভ্র খুশি হয়ে যায়। পারমিশন পেয়ে যায় ওর কাছ থেকে। আপন করে নেয় নিধিকে। ভালোবেসে নিজের করে নেয় সিমিকে।
‌.
.
ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে আছে ফারিন। কালকে ওদের বাসর হয়নি। তাই আজকে রুমটা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। ফারিন বিছানার উপর বসে আছে মাথায় ঘোনটা দিয়ে। ফাহিম রুমে প্রবেশ করেছে ঠিকি,কিন্তু ফারিনের কাছে যেতে কেমন যেনো ভয় ভয় করছে।তাই রুমের চার দিক কিছু একটা খোঁজার বাহানায় পায়চারি করছে। সেদিন ফারিনের গুলি করা দৃশ্য ফাহিমের চোখে তখনো ভাসছে। সেটা ভাবতেই ফাহিমের কেমন জানি ভয় ভয় করছে। এটা এই এক মাসে ফারিন বুঝতে পেরেছে যে ফাহিম ও’কে ভয় পায়। এতক্ষণ ধরে বসে থেকেও যখন দেখল ফাহিম ওর কাছে আসছে না তখন ফারিন মাথার ঘোমটা উঠিয়ে আহ্লাদি কন্ঠে বলে,
-“ফাহিম ভাইয়া আপনি কী আমার কাছে আসবেন,নাকি আমি এখান থেকে ওঠে আপনার কাছে আসব।”

ফারিনের এমন আহ্লাদি কন্ঠ শুনে ফাহিম ছোট ঢোক গিলে। ফারিনের এমন আহ্লাদি কন্ঠে কথাটা রাগ,ক্ষোভ জমে আছে সেটা ফাহিম জানে। ফাহিম আমতা আমতা করে বলে,
-“না মানে,মুই এওক্কা(একটি) জীনিস খুঁজতেছিলাম। হেইডা পাইতাছিনা। জীনিস টা খুঁইজ্জা তোমার কাছে আইতাসি।”

ফারিন এবার চিল্লিয়ে বলে,
-“এখন আসবি,এখন! আর নাইলে….! ”

কথাটা বলতে দেরি ফাহিমের ফারিনের কাছে ছুঁটে আসতে দেরি হয় না। এক প্রকার দৌঁড়েই বিছানার উপর ফারিনের মুখমুখি হয়ে বসে। ফারিনের হাসি পায় ফাহিমের এই কাণ্ডে। তারপরও না হেসে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
-“আজকে আমাদের কী?”

ফাহিম একবার ফারিনের দিকে তাকিয়ে,তারপর চোখ সরিয়ে বলে,
-“বাসর রাত।”

-“তো এই রাতে কী করতে হয়?”

-“কেমনে কমু?”

ফারিন কথাটা শুনেই ফাহিমকে বিছানার উপর ফেলে গায়ের উপর চড়ে বসে বলে,
-“বাচ্চা, কিচ্ছু বুঝিস না। ফিটার খাস?”

ফাহিম ফারিনের ব্যবহার,কথায় প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসে। যার মানে ফারিন বুঝতে পেরে আস্তে করে পাশে সরতে নিলেই ফাহিম এবার ফারিনকে বিছানার সাথে চেপে ধরে। ঠোঁটে ডেভিল মার্কা হাসি ফুটিয়ে বলে,
-“ফাহিমকে যতটা বোকা মনে করো। ততটা বোকা ফাহিম না সোনা পাখি।”

ফারিন ঠান্ডা রিয়েকশনে বলে,
-“তো?”

-“তো?” কথাটা বলেই পাশের টেবিল লাইট বন্ধ করে দেয় ফাহিম।
.
.
ইশা একটি টেডিবিয়ার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে থাইগ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আকাশের ঐ কাসার থালার মতো উজ্জল চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাব্বির ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ইশাকে এক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারে। সাব্বিরের মনটাও কিছুটা খারাপ হয়ে যায়।
ইশাকে পেছন থেকে হালকা জড়িয়ে ধরে কিছুটা রোমান্টিক মুডে বলে,
-” আকাশের চাঁদটা বেশ সুন্দর। ঠিক আমার এই চাঁদের মতো।”

ইশার নো রেসপন্স…..।

-“ভালোবাসি ইশা ।”

ইশা এবারও চুপ করে আছে। সাব্বির ইশাকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে ঘুরিয়ে নেয়। থুতনিতে হাত রেখে উপরে উঠিয়ে বলে,
-“তোমাকে এবাবে মুখ ঘোমরা অবস্থায় দেখতে আমার কাছে ভালো লাগে না।প্লিজ, আমার সামনে অন্তত মুখ কালো করে থেকো না।”

-“ভুলতে পারি না সাব্বির ।” নিশ্বাস টেনে বলে ইশা ।

-“চাইলেই ভুলা যায় ইশা! চলো আমরা নতুন করে সব কিছু শুরু করি।”

ইশা সাব্বিরের দিকে তাকায়।সাব্বি স্মিত হেসে বলে,
-“তুমি কি আমার পুর্নিমা রাতের চাঁদ হবে?
আমি তোমার আলোয় স্নিগ্ধ হবো।
তুমি কি আমার ফোনের ওয়ালপেপার হবে?
আমি সারাদিন তোমায়ই দেখবো।
শুধু একবার বলো ভালবাসি।
সারাজীবন আগলে রাখবো।
আই লাভ ইউ ইশা।”

সাব্বিরের কথা গুলো শুনে ইশার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে। সাব্বিরের বুকে মাথা রেখে নরম কন্ঠে বলে,
-“আই লাভ ইউ টু সাব্বির ।”

সাব্বির ইশাকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আলত করে কপালে কিস করে।
.
.
আলতাফ চৌধুরী আগের একটি বড় ফ্রেম বাঁধানো ছবির হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে। ফুল পরিবারের সদস্যর ছবি ছিল ওটা। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে তার। চশমা জোড়া খুলে চোখের পানি রুমাল দিয়ে মুছে ন্যায়। তারপর ফটো ফ্রেমটি সামনে থাকা টেবিলের উপর রেখে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। আস্তে আস্তে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে যায় সে।

পাঁচ বছর পর….

ফাহিম মনের সুখে গান গাইছে আর দুই বালতি কাঁপড় রোদে দঁড়িতে শুকাতে দিচ্ছে। এটা ওর রোজ কার কাজ বললেই চলে। বাচ্চাদের কাঁপড় ও’কে দিয়েই ছাদে নেড়ে দিতে পাঠায় রিমি রা।

-“ঐ নাম কিরে তোর…? কুতকুতি! ঐ নাম কিরে তোর…? আরে কুতকুতি। আজকে প্রেমের কুতকুত খেলবো,দেখবে সবাই চাইয়া….ওরে মা! কোন নবাব জাদার হারামজাদায় রে, পিছন থেকা খোঁচা মারে।” পিছনে হাত রেখে ঢলতে ঢলতে ঘুরে দেখে তিন জন বাচ্চা হাতে কাঠের লম্বা ছুঁড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই তিন জন বাচ্চাকে জুনিয়র গ্যাংস্টার বলা যায়। কারণ,এরা রুদ্র,শুভ্র,অভ্র দের ছেলে। এক বছরে জন্ম নিলেও,এক দু মাসের আগে,পিছে জন্ম হয়েছে ওদের। এটা কোনো ব্যাপার না। তিন জন এখন খেলার সাথী বলা যায়। ওদের নাম রিদ,অভি,তুর্য। রিদ রুদ্রের ছেলে। অভি অভ্রর ছেলে। আর তুর্য শুভ্রের ছেলে।ফাহিম বিরক্তি নিয়ে ওদের কে কিছু বলার আগেই রিদ বলে,
-“আন্দারপ্যান্টা চাচ্চু তোমাকে বড় কাকি মনি ডাকছে নিচে।”

-“এক্ষনি যেতে বলেছে আন্দারপ্যান্টা চাচ্চু ।”অভি বলে।

ফাহিম শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে রাগী কন্ঠে বলে,
-“ঐ তোগোরে না কইছি। আমারে আন্দার…মানে আন্ডারপ্যান্ট চাচ্চু কবি না।”

-“চাচ্চু ভালো লাগে এই নামটা,তাই বলি।” তুর্য বলে।

-“ওরে হারামজাদার পোলা,তোগোরে আজকা ছেইচ্চা রৌদ্দে শুকা দিমু কাঁপড়ের লগে খাড়া।”

এটা শুনে তিন জন দৌঁড়ে নিচে যেতে লাগলো । ফাহিম দৌঁড়ে ওদের ধরতে গেলে ফ্লোরে স্লিপ কেটে ধুপাশ করে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। ওরা তিন জন এটা দেখেও না দাঁড়িয়ে নিচে চলে আসে। ফাহিম বুকে হাত দিয়ে ওঠে বসে রাগে ইচ্ছা মতো গালি দিতে থাকে,
-“কোন বয়রা,কোন আবাইল্লা,কোন আকাইম্মার ঘরে আকাইম্মায় ছাদে পানি ফালাইছে। মনড়া চাইতাছে…….।” বাকি টা বলার আগেই ওর মনে পড়ে একটু আগে ভেজা কাঁপড় নিগড়িয়ে ছিল, পানি ও নিজেই ফেলেছে। তার মানে এতক্ষণ নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছিল।

-“ফাঁডা কপাল আমার।” ওঠে দাঁড়িয়ে নিচে আসে । আজকে আন্ডারপ্যান্ট বলার জন্য আগে বিচার করবে তারপর কাঁপড় শুকাবে। নিচে আসতেই রুদ্র,অভ্র,শুভ্রকে দেখতে পায় হল রুমে। ফাহিম আস্তের উপরে সেখান থেকে কেঁটে পড়তে নিলে রুদ্রের ছেলে রিদ ‌বলে,
-“ড্যাড ঐ দেখো ফাহিম চাচ্চু। তাকে ডেকে বকে দেও।”

রিদের কথা অনুসরন করে ওরা সেদিকে তাকাতেই ফাহিমকে দেখতে পায়। রুদ্র ফাহিমকে ডাক দেয়।
-“ফাহিম এদিকে আয়।”

ফাহিম বিড়বিড় করে বলে,
-“দিছে,হালার পো রা বিচার দিছে ভাইগো কাছে। আজকেও বকা হুনতে হইবো।” বিড়বিড় করতে করতে রুদ্রদের সামনে এসে দাঁড়ায়।

তখন রুদ্র ফাহিমের উদ্দেশ্যে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“তুই নাকি ওদের কে বলেছিস ছেইচ্চা রৌদ্দে শুকা দিবি। কেন? কী করেছে ওরা?”

-“ভাই,ওরা মোরে আন্ডারপ্যান্ট বলে ডাকে। কউতো এই নামটা ধরে কেন ওরা মোরে ডাকে । এই সব ভাবি গো দোষ। হেতিগো জন্য ওরা‌ আমারে এই নামটা ধইরা ডাকে।”

রুদ্র প্রথমে হাসে তারপর রিদের উদ্দেশ্যে বলে,
-“রিদ এটা বলেছো? তোমাকে না নিষেধ করেছি পঁচা কথা বলতে।”

রিদ ঠোঁট উল্টে বলে,
-“আর বলব না ড্যাড ।”

-“অভি,তুর্য তোমরাও এটা বলবে না চাচ্চুকে মনে থাকবে?” অভ্র বলে।

-“জ্বী,মেজো চাচ্চু।” তুর্য বলে।

তখনি ওদের মাঝে নিধি উপস্থিত হয়ে বলে,
-“ঐ আন্ডার……….।”

বাকিটা বলার আগে ফাহিম রাগী দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকায়। নিধি কথা ঘুরিয়ে বলে,
-“না মানে বলছিলাম যে উপরে বাচ্চাদের ছোট্ট আন্ডার….মানে ছোট প্যান্ট গুলো কী শুকিয়েছে।”

অভি ওঠে বলে।
-“ওটা তো আজ সকালে তাব্বির(সাব্বির) চাচ্চুকে পড়তে দেখেছি।”

সাব্বির তখন ওখান দিয়ে যাচ্ছিল। অভির মুখে এই কথাটা শুনে চট করেই দাঁড়িয়ে যায়।ফাহিম একটুর জন্য স্বস্থি পায়। যাক,ওর নাম নেয়নি এখন।

সাব্বির অভিকে বলে,
-“তুমি দেখছো কেমনে সেটা?”

-“সকালে আমি তোমার রুমে গিয়েছিলাম,তখন তুমি ইশা কাকি মনিকে নিয়ে ভালোবাসা করছিলে। তখন তোমার সাথে ওটা দেখেছি ।”

ইশা,ফারিন,রিমি, সিমি তখন কেবল নিচে এসে নামল। অভির মুখে এই কথাটা শুনে ইশা লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। সাব্বির পড়েছে চিপায়।মনে মনে বলছে দূরে গিয়ে কান ধরবে। ভুলেও আর রোমাঞ্চ করার সময় দরজা খোলা রাখবে না। বাড়িতে যে ছোট জল-জ্যন্ত মিনি সিসি ক্যামেরা আছে,সেটা আগে জানত না। রিমি,সিমি, নিধি মিটমিটিয়ে হাসে। ইশা,ফারিন সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠতে নিলে রিমি থামায়। ইশা প্রেগন্যান্ট।পাঁচ মাস চলছে ইশার। ফারিনের ছয় মাসের একটি মেয়ে আছে। নাম রাহা মনি। এই মাত্রই সিঁড়ি বেয়ে নিচে এসেছে। এখন আবার উপরে উঠবে তাই রিমি না করে উপরে ওঠতে ওদের। তখন তাদের মাঝে লাঠি ভর দিয়ে ধীরে পায়ে হেঁটে আলতাফ চৌধুরী হাজির হয়। সোফায় বসে বলে,
-“কী নিয়ে কথা হচ্ছে জুনিয়র গ্যাংস্টার রা?”

ওরা তিন জন তখন এক সাথে বলে ওঠে,
-“ফাহিম চাচ্চুর আন্দারপ্যান্টা আর সাব্বির চাচ্চুর ভালোবাসা নিয়ে কথা হচ্ছে বড় বাবা ।”

ওদের মুখে এক সাথে বলা কথাটা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। হাসি,ফান,খুনশুটিতে ভরপুর ওদের পরিবার। আর এভাবেই চলতে থাকে ওদের জীবন। চলতে থাকে থ্রি গ্যাংস্টার দের ভালোবাসা । যাকে বলে “#Three_Gangsters_Love.”

………সমাপ্ত।**

ধন্যবাদ সবাইকে।গল্পটা কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন কমেন্টে। সবাই ভালো থাকবেন।