অতলস্পর্শ পর্ব-১৬

0
493

#অতলস্পর্শ
#পার্ট_১৬
#জান্নাতুল_বিথী

আমি কুশান ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।যা কিছু হলো সব কিছুই যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।তাকে মনে মনে ইচ্ছে মতো গালি দিতে থাকি।যখন সে নিজে মেয়েদের সাথে ঘষাঘষি করে তখন আর কিছু হয় না।আর আমি সামান্য কারো সাথে কথা বললেই আমার দোষ হয়ে যায়.?আমি আর না পেরে এবার কুশান ভাইয়াকে ধাক্বা দিয়ে সরিয়ে দেই।হঠাৎ এমন আক্রমনের জন্য কুশান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।তাই সে একটু দুরে সরে যায়।ঘটনা বুঝতেই ভাইয়া আমার দিকে রাগী লুকে তাকায়।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলি…

“নিজে যখন মেয়েদের সাথে ঘষাঘষি করেন তখন আমার কেমন লাগে একবার বুঝে দেখুন তাহলে।সব সময় আগে নিজের দিকে তাকাবেন।তারপর অন্য কাউকে শাসন করার চিন্তা মাথায় আনবেন বুঝবেন।”

আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া আমার দিকে প্রথমে রাগী লুকে তাকায়।তারপর শান্ত হয়ে আমার কাছে এসে আমার দু গালে হাত রেখে বলে..

“জিহু টিয়া একটা পাগল মেয়ে।আর ও আমাকে ভালোবাসে।ও চায় আমি সব সময় ওর পাশাপাশি থাকি।আর তাছাড়া ও একটা ডেন্জারাস মেয়ে।এখন আমি যদি ওকে ইগনোর করি তাহলে সব দোষ এসে তোমার ঘাড়ে পড়বে আর ও তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।তুমি কি কখনো দেখছো যে তোমার কুশানকে কোনো মেয়ের সাথে মিশতে।তাহলে এখন এমন করছো কেনো।প্লিজ ভুল বুঝবে না আমাকে।তুমি ছাড়া আমাকে আর কে ভালো বুঝবে বলো।??”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি হতভাগ হয়ে যাই।তার এই সামান্য কথা বলার পেছনে যে এতো বড় একটা কারন থাকবে তা আমার জানা ছিলো না।তারপরও আমি তার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলি..

“তারপরও আপনি তার সাথে বেশি মিশবেন না।সে আমার কোনো ক্ষতি করবে না বা করতে পারবে না।কুশান ভাইয়া কেউই চায় না যে তার ভালোবাসার মানুুষ টা অন্য কোনো মেয়ের সাথে বেশি সময় কাটানো।তার সাথে হেসে হেসে কথা বলা।আ-আমি আর যাই হোক এই মিস্টার বজ্জাটার ভাগ কাউকে দিতে পারবো না।এ কথাটা সব সময় মাথায় রাখবেন।”

আমার শেষের কথাটা শুনে কুশান ভাইয়া ফিক করে হেসে দেয়।তারপর আমাকে দুই হাতে আগলে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে…

“তোমার মিস্টার বজ্জাত সব সময় তোমারই থাকবে।বুঝলে.??”

________________________________

খাটের মাঝখানে বসে বসে আমি চকলেট খাইতেছি আর ফেসবুকিং করতেছি।একটু আগেই কুশান ভাইয়া এসে আমাকে কতো গুলো চকলেট দিয়ে গেলো।চকলেট দেখে তো আমার খুশিতে আত্মহারা।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।তার এই ছোট ছোট কেয়ার গুলো আমার অনেক ভালো লাগে।অদ্ভুত মানুুষ তিনি সত্যিই।এসব ভাবছি আর মুচকি মুচকি হাসতেছি।হঠাৎ কোথা থেকে যেনো একটা পাঁচ বছরের পিচ্চি ছেলে এসে আমার হাত ধরে টান দিয়ে বলে..

“ছোট মা ও ছোট মা এদিকে আসো।তোমাকে সবাই ডাকছে।কত্তো কিউট তুমি। উপপপ আমার তো অনেক পছন্দ হইছে।এবার আসো তো দেখি।”

পিচ্চির কথা শুনে আমার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি আমি।আর তার বলা কথা গুলো আরেকবার মনে মনে পড়ে নিলাম।হঠাৎ এক জায়গায় এসে থেমে যাই।আর ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলি..

“ছোট মা.??ছোট মা মানে কি.??আর এই পিচ্চি তোমার ছোট মা টা আবার কে.??তোমার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি তোমার ছোট মা হতে যাবো কেনো।তুমি ভুল জায়গায় চলে আসছো পিচ্চি।”

আমার কথা শুনে পিচ্চি খিলখিল করে হেসে দেয়।তারপর হাসতে হাসতেই বলে..

“ছোট মা মানে বুঝো না.??হাইরে তুমি তো আমার থেকেও কত্তো বড়।তারপরও বুঝো না.??এক মিনিট বুঝিয়ে দিচ্ছি। তার আগে তুমি চলো আমার সাথে।”

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে শুধু পিচ্চির কথা গুলো শুনতেছি।সে এক প্রকার আমাকে টেনে লিভিং রুমে নিয়ে যায়।সেখানে যেতেই আমি আরো বেশি অবাক হয়ে যাই।কারন সেখানে আরো দুইটা মহিলা আর একজন পুরুষ আর একটা ছেলে বসে আছে।তারা বসে বাবার সাথে কথা বলছে।কারো আসার শব্দ পেয়ে সবাই আমার আর পিচ্চি টার দিকে তাকায়।তাদের দেখে আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।আমাকে দেখতেই বাবা হাসি মুখে বলে…

“আরেহ জিহু মা।এদিকে আয় মা।”

বাবার কথা শুনে আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে যাই।গিয়ে সালাম দেই।একটা মেয়ে আমাকে তার পাশে টেনে বসিয়ে দেয়।আমি বসতেই মধ্য বয়স্ক একটা মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে বলে..

“মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর তুমি মা।ভাইজান(বাবার দিকে তাকিয়ে)আপনার মেয়েকে আমাদের ভীষন পছন্দ হইছে।কি নাম তোমার মা.??”

মধ্য বয়স্ক মহিলাটা খুব সুন্দর পছন্দ হইছে কথাটা বলতেই আমার বুকের ভিতর ধক করে উঠে।সব কিছু না বুঝলেও আমি কিছুটা হলে সন্দেহ করঝি।এটা ভাবতেই আমার প্রচুর রাগ লাগে।তারপরো ভদ্রতার খাতিরে হাসি মুখে আমার নাম বলি।তারপর মহিলাটি হাসি মুখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে..

“আলহামদুল্লিলাহ ভাইজান সত্যিই আপনার মেয়ে আমাদের অনেক পছন্দ হইছে। আমার ছেলের সম্পকে তো আপনাকে বললামই।তারপরও বলছি।এই আমার ছেলে(সামনে বসা ছেলেটাকে ইন্ডিকেট করে)রিমন।একজন সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার।আর বাকী টা ও কেমন তা আপনারা খোজ নিলেই জানতে পারবেন।আর আপনার মেয়েকে আমাদের ভীষন পছন্দ হইছে।তাই আপনার মেয়ে….আই মিন আমি যা বুঝাতে চাইছি তা নিশ্চয় আপনি বুঝতে পেরেছেন।তাই আর বলছি না।”

মহিলাটার কথা শুনে আমি চমকে উঠি।ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখি সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখতে শুনতে ভালোই আছে।তবে আমি কেনো ওকে বিয়ে করবো।আমি তো অন্য একজনকে ভালো বাসি।ওকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কোনো দিনও সম্ভব না।আমি বাবার দিকে তাকাই।এখন বাবা কি বলে তাই দেখার বাকী।আমার খুব খারাপ লাগতেছে।বাবা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে বলে…

“দেখেন আমার মেয়ের বিরুদ্ধে আমি কখনোই যাবো না।আপনারা হঠাৎ এসেছেন এখন আমরা ভেবে দেখবো সবার মতামত নিবো তারপর আপনাদেরকে জানাবো।এখনই আমি কিছু জানাতে পারবো না। সরি।”

#চলবে