অতলস্পর্শ পর্ব-১৫

0
361

অতলস্পর্শ
পার্ট_১৫
জান্নাতুল_বিথী

“জিহু অনেক গরম লাগতেছে একটু ঠান্ডা পানি দিবি.??”

কুশান ভাইয়ার এই কথায় আমি তার দিকে তাকাই।তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে অনেক ক্লান্ত।তবে ক্লান্ত হবেই না বা কেনো।এভাবে বন্ধুদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করলে তো গরম লাগবেই।

আমি তখন কুশান ভাইয়াদের ফ্ল্যাট থেকে চলে আসার পর প্রায় এক ঘন্টা পর কুশান ভাইয়া জিদান ভাইয়া সহ তার প্রায় সব বন্ধুরাই আসে আমাদের ফ্ল্যাটে।আমি তখন সোফায় বসে ছিলাম।হঠাৎ কুশান ভাইয়া আমাকে পানির কথা বলে উঠে।আমি কিন্তু এখনো তার উপর রেগে ছিলাম।কিন্তু তারপরো তাকে দেখে বড্ড মায়া হলো।যতোই হোক আমার ভালোবাসার মানুষ বলে কথা।আমি একবার তার দিকে তাকিয়ে উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে এসে ভাইয়ার সামনে এনে তার দিকে পানির বোতল বাড়িয়ে দেই।কুশান ভাইয়া এক হাত বাড়িয়ে পানির বোতল নেয় আর আরেক হাত দিয়ে এক টান দিয়ে আমাকে তার পাশে বসিয়ে দেয়।আকস্মিক এমন হওয়ায় আমি হকচকিয়ে যাই।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ঘটনা বুঝতেই আমি উঠে যেতে নেই।সবাই সবার কথায় ব্যস্ত থাকায় আমাদের দিকে কারো খেয়াল নেই।আমি উঠে যেতে নিলে ভাইয়া আবার আমাকে জোর করে বসিয়ে দেয়।আমি তার দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই কুশান ভাইয়া তার বাম হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে বসে থাকে।

আকস্মিক আমার কোমড়ে কারো হাত অনুভব করতেই আমি কেপে উঠি।চোখ বড় বড় করে কুশান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে।আমি তার হাত সরিয়ে দিতে গেলেই ভাইয়া আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে…

“বেশি করলে কিন্তু খবর আছে।যেভাবে বসে আছো ঠিক সেভাবেই বসে থাকো।”

“ছাড়ুন আমাকে।আমার কাছে আসছেন কেনো। যান না আপনার ওই মিস ড্রামাকুইন এর কাছে।তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন।আমার কাছে কেনো আসছেন.??”

আমার কথা শুনে কুশান ভািয়া মুচকি হাসে। তারপর আগের ন্যায় বলে..

“আমার বউটা দেখছি অনেক রাগ করছে।তো তার রাগ ভাঙ্গাতে কি করতে হবে আমাকে.??কিস করবো.??”

কুশান ভাইয়ার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাই।তার দিকে তাকাতেই সে আমাকে চোখ মারে।আমি তাড়াতাড়ি তার থেকে চোখ ফিরিয়ে বিরবির করে বলি..

“অসভ্য…”

“কিরে কুশান তুই ওর সাথে এতো চিপকে বসে আছিস কেনো।আর ফিসফিস করে ওর সাথে কি এমন কথা বলিস।আমাদের কেও বল।আমরাও শুনি।”

হঠাৎ কারো এমন কথা শুনে আমরা দুজনেই চমকে উঠি।তাকিয়ে দেখি ওই মেয়েটা যে কুশান ভাইয়াকে তখন জড়িয়ে ধরেছিলো সে কথাটা বলছে।তাকে কথা বলতে দেখেই আমার মাথায় দপ করে আগে জ্বলে উঠে।আমি তার দিকে তাকিয়ে কটমট চোখে বলি..

“আমি আমার কাজিনের সাথে কথা বলবো না তো আপনার সাথে কথা বলবো নাকি.??আর আমরা কিভাবে কথা বলবো তা একান্তই আমাদের ব্যাপার।তাতে বাহিরের মানুুষ নাক গলাতে আসবে কেনো।.??”

আমি এভাবে জবাব দেবো মেয়েটা হয়তো ভাবে নাই।তাই আমার জবাবে সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।কুশান ভাইয়াকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখলাম।হঠাৎ ভাইয়া বলে উঠে…

“কুশান তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।একটু উঠে আয়।”

আমি ওই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ভেংচি দিয়ে উঠে রুমে চলে যাই।কুশান ভাইয়া উঠে জিদানের সাথে চলে যায়।আর অন্য দিকে জিহার এমন কথা শুনে ওই মেয়েটা(টিয়া) রাগে ফুসতে থাকে।কারন জিহার এই কথাটা টিয়া মানতে পারছে না।সে কুশানকে সেই আমেরিকায় থাকতেই ভালোবাসে।অনেকবার তাকে প্রোপোজ করেছিলো কিন্তু বার বার কুশান রিজেক্ট করে দেয়।সে বরাবরি জানিয়ে দিয়েছে সে দেশে অন্য একজনকে ভালোবাসে।কিন্তু তাও সে এই কথাটা মানতে পারছে না।

_________________________________________

প্রায় ঘন্টাখানেক পর আমি রুম থেকে বের হয়ে দেখি কুশান ভাইয়া আর টিয়া নামের মেয়েটা দুজনেই এক সাথে পাশাপাশি বসে হাসাহাসি করছে।আমার যা একটু রাগ কমেছিলো কিন্তু এটা দেখার পর আবার মাথায় রাগ উঠে যায়।তার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে আবার রুমের দিকে হাটা শুরু করলে ভাইয়া বলে..

“জিহা কই যাস।এদিকে আয় বস এখানে বসে গল্প কর।”

জিদান ভাইয়ার কথায় থমকে যাই আমি।না পারছি রুমে যেতে আর না তো পারছি লিভিং রুমে যেতে।কুশান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই সে আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে আসতে বলে।আমি ভেংচি দিয়ে রেগে গিয়ে জিদান ভাইয়ার পাশে বসে পড়ি।তারপর ভাইয়ার সাথে কতক্ষন ধরে গল্প করি। ভাইয়া এক ছেলে বন্ধুর (শান্ত) সাথে বসে কিছুক্ষণ হাসাহাসি করি।এদিকে আমাকে এভাবে এভাবে শান্ত ভািয়ার সাথে গল্প হাসাহাসি করতে দেখে কুশান ভাইয়া যে রাগে কটমক করছে তা আমি খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছি।কিন্তু তারপরো আমি ইচ্ছে করে তার সাথে কথা বলছি।
,

আমি রুমে বসে মোবাইলে গেমস খেলতেছি আর মুচকি মুচকি হাসতেছি।কুশান ভাইয়াকে ভালো ভাবেই যব্ধ করতে পেরেছি।তখন শান্ত ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বরতে হঠাৎ এক সময় কুশান ভাইয়া আমাকে ধমক দিয়ে উঠিয়ে দেয়।আমিও যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলাম।তাই কোনো রকমের বাক্যব্যয় না করে চুপচাপ উঠে এসেছিলামতা ভাবতেই হেসে দেই আমি।তখন তার মুখটা দেখার মতোই ছিলো।এবার বুঝবে ব্যাটা তখন আমার কাছে কেমন লেগেছিলো।হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে আমার ধ্যান ভাঙ্গে।দরকার দিকে তাকিয়ে দেখি কুশান ভাইয়া দুই হাত বুকে গুজে রাগী লুকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখেই আমার ভয় হতে শুরু করে।আমি দাড়িয়ে যাই।ভাইয়া আমার দিকে এক পা দুপা করে এগিয়ে আসতে থাকে।তাকে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখেই আমার ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা।আমার পেছনে যাওয়ার মতোও কোনো জায়গা নেই।আমি এতক্ষন খাটের উপরেই বসে ছিলাম।তাকে দেখে দাড়িয়ে যাই।আমি সরে যেতে নিলে হঠাৎ কুশান ভাইয়া এসে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমাকে একেবারে তার সাথে মিশিয়ে নেয়।আমি চোখ বড়বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।রাগের কারনে ভাইয়া নাকের ঢগা একেবারে লাল হয়ে আছে।তাকে অবশ্যই এই লুকে অনেক কিউট লাগছে।কিন্তু এসব ভাবার সময় এখন আমার সময় নেই।আমি নিজেকে ছাড়াতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ি।হঠাৎ কুশান ভাইয়া আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে..

“ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে অনেক মজা লাগে তাই না।????”

#চলবে