অতিরিক্ত চেয়েছি পূর্ণতায় পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
955

#অতিরিক্ত_চেয়েছি_পূর্ণতায়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#অন্তিম_পর্ব

ইফতিয়াস পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অফিসার নাবিলের সরকারি পি’স্ত’ল ছিনিয়ে নিয়ে রাফিয়ার কপালে ঠেকিয়ে দেয়। অবস্থিত সকলে ঘাবড়ে যায়। হঠাৎ ভয়াবহ পদক্ষেপ নিবে এ আসামী ভাবনায় আসেনি তাদের। রুজহান তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘রাফিয়াকে ছেড়ে দেয় ইফতিয়াস!’

‘হাহ্ কখনো না। ছেড়ে দিলে বুঝি রাফু আমার থাকবে! সে তো তোকে মন থেকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। কেমনে সহ্য করব হে ! আমার বুকে জ্বালাতন হচ্ছে তোর জন্য রাফিয়ার প্রেম দেখে।’

উপস্থিত নাবিল ও রুজহান চমকে গেল। রুজহানের মনপ্রান্তে উল্লাস বয়ে যাচ্ছে। তবে কি তার প্রণয়ের রোপিত বীজের সুপ্ততা সুফল বয়ে এনেছে! কাঙ্ক্ষিত মনের উত্তর জানতে সে প্রশ্নবিদ দৃষ্টিতে রাফিয়ার দিকে তাকায়। রাফিয়া হতভম্ব এক ঝটকায় ইফতির কর্মকান্ডে বিষিয়ে উঠে তার মন। অন্যত্রে ইফতিয়াসের বলা কথায় তার মনে লাজুকতা ছুয়ে দিচ্ছে। তবুও করুণ দৃষ্টিতে এ রুজহানের নেত্রপল্লবের দিকে গভীর চাহনী নিক্ষেপ করে। সেই চাহনীতে ছিল পুনরায় একবুক ভরা প্রণয়ের সংসার গড়ার নিত্য আকাঙ্ক্ষা। রুজহান পাঁচবছর পর তার সুফলতার উপর কুনজর পড়তে দেবে! কখনোই না সে তার প্রাণের রাণীকে নিশ্চয় ছাড়িয়ে নেবে। ইফতিয়াস দুজনের পিরিতপূর্ণ চাহনী সহ্য করতে পারল না। বিধেয় পি’স্ত’লের মাথার তীব্র কড়াঘাত দেয় রাফিয়ার কপালে। ব্যথায় ‘আহ্’ করে উঠে সে। রুজহান গর্জে উঠে তার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। পূর্বের ন্যায় চোয়াল শক্ত করে বলে,

‘এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে ইফতিয়াস। তোর শত্রুটা আমার সঙ্গে রাফিয়াকে আঘাত করছিস কোন সাহসে! তোর হাত যদি না ভেঙ্গে দেয়….।’
নাবিল তৎক্ষণাৎ রুজহানের হাত চেপে ধরে। চোখের ইশারায় শান্ত হওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। রুজহান ভাবল আসলেই কড়া নজরে চেয়ে লাভ নেই! কারণ ইফতিয়াস পাগলের মত ব্যবহার করছে। রাফিয়াকে আঘাত করতেও একসেকেন্ড ভাববে না। চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস নেয়। হাত দেখিয়ে নিজেকে নিঃস্ব বোঝায় সে। ইফতিয়াসকে করুণ আকুতিভরা কণ্ঠে বলে,

‘শোন তোকে ছেড়ে দেব আমরা। তোর ইচ্ছে করে না নিজের বাবা-মার কাছে ফিরে যেতে। ইচ্ছে করে না তারা কোথায় সেই খবর নিতে। জানিস তোর বিরহে তোর মা একলা দিন কাটাচ্ছে। তোর বাবা তোর কারণে জেলবন্দি। কারণ থানার অফিসাররা ভাবছে তোর পলায়নে তোর স্ত্রীর সঙ্গে তাদের মানে তোর বাবা-মার হাত ছিল। সেই দিক থেকে নাহিরউদ্দীন স্যারকে এরেস্ট করে পুরু একমাস জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। তোর কি মনে পড়ে না! তোর বাচ্চার কথা। যে সামিয়ার গর্ভে ছিল। একটু তো রহম কর এই মানুষগুলোর উপর।’

তন্মধ্যে রুজহানের দৃষ্টিকোণ জ্ঞানশূন্য রাফিয়ার উপর পড়ে। যার কপালে কড়াঘাতের ফলে র’ক্তক্ষরণ হচ্ছে। এমনি মেয়েটার শরীর ও মানসিকতায় ক্ষতের উপর ক্ষত পড়ছে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হচ্ছে প্রতিবার। যার ফলে মেয়ের শরীরটাও শুকিয়ে যাচ্ছে। ঢোক গিলে নিজের রাগ সংবরণ করে। তার হাত চুলাকাচ্ছে এই ইফতিয়াস কে মে’রে গুম করে দেওয়ার জন্য। তবে পারছে না তার দূর্বলতা এই ছেলের মাঝে বন্দি বলে। ইফতিয়াস খিলখিলে হেসে রাফিয়াকে ধরে বের হতে লাগে। রুজহান ও নাবিলও ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে যায়। নাবিলের জিপে চাবি লাগানো ছিল। যার উপর তীক্ষ্ণ উল্লাসী চোখ পড়ে তার। রাফিয়াকে কোলে উঠিয়ে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দেয়। সেও তার সিটে এসে বসে জিপ চালু করে। ইফতিয়াসকে জিপ চালু করতে দেখে রুজহান রাগান্বিত চোখে নাবিলের দিকে চাই। বেচারা জিপে চাবি দেখে ভীতি নেত্রপল্লবে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বেকুবমার্কা হাসি দেয়। বিনিময়ে ফোঁস ফোঁস করে রাগান্বিত শ্বাস ফেলে নাবিলের মাথায় চা’প্পড় দেয়। সে বেচারা ‘উহ’ ‘সরি রে বুঝতে পারিনি’। ঠোঁট চেপে রুজহান বলে,

‘ছোট বাচ্চা তো তুই যে বুঝতে পারিস না হা’রাম’জাদা কোনখান!’

নাবিল মুখ ভেটকিয়ে বলে, ‘বাহ্ আক্কেল আমার নেই, না তোর নেই ভালোই দেখছি। বাইক একটা খাম্বার মত দাঁড় করিয়ে রেখেছিস। সেইটা দিয়েও যেতে পারি তো নাকি আমরা!’

নাবিলের কথায় রুজহান পুনরায় ‘ঠাস’ করে দেয় আরেক বা’রি। ফলে সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,

‘ভাই এভাবে আর মা’রিস না। ভবিষ্যতে বাচ্চা পয়দায় কষ্ট হবে।’

শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় রুজহান। সন্দেহের ফলে জিজ্ঞেস করে।

‘কেন তোর কি আহেম আহেমে সমস্যা!’

‘না শা’লা বদমা’ইশ চুপ। আমি কি বলছি তুই কি বুঝলি! ঘাড়ের মধ্যে সমস্যা হবে এতে আমি পাগল টাগল হলে আমার পিয়ারি বউরে মা বানাব কেমনে হে! একটু তো লাগামপূর্ণ কথা ভাববি।’

‘এগুলো ভাবা তোর কাম আমার না। চল না হয় ফেলে চলে যাবো।’

বাইকে উঠে হেলমেট পরে ফেলল তারা। কিন্তু জিপের পিছু নেওয়া তো দূর তাদের সামনে জিপের কোনো চিহ্নটুকু নেই। বরং শাঁ শাঁ বাতাস বইছে খালি। নাবিল ভেবে বলে,

‘জিপ তো এতক্ষণে দূরে চলে গেছে। রাস্তা খুঁজব কেমনে!’

শুনে রুজহানের টনক নড়ে। রাফিয়ার প্যান্টের পকেটে সম্ভবত ফোন চালু আছে। সেই ফোনের ট্রাকিং চেক আউট করলে পাওয়া যাবে রাস্তা। ভেবে যেন উত্তেজিত মনে ফোনের লোকেশন বের করায় ব্যস্ত হয় তারা। নাবিল তার কেবিনে ছুটে গেল। টেবিলের উপর থেকে লোকেশন ট্রেকার নিয়ে ছুটে এলো রুজহানের কাছে। সে লোকেশনে রাফিয়ার ফোনের ট্রাকিং কোড দেয়। লোডিং হওয়ার সাথেই দেখানো হলো লোকেশন! ট্রামসার মোড়ের দিকে রাফিয়াকে নিয়ে গেছে ইফতিয়াস। রুজহান সময় নষ্ট করল না। তখনি বাইক স্টার্ট দেয়। আজ এ ইফতিয়াসের ব্যাপারটা খতম করেই ছাড়বে!

_____

আলোকিত স্থানে ভাঙ্গাচুরা কুঠিরে নিজেকে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখে চমকে গেল রাফিয়া। তার শরীরে কেউ স্পর্শ করেছে ভাবতেই তার গা রাগে থরথরে কেঁপে উঠে। কাঠের দরজার কাছে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলার চেষ্টা করে। তবে খুলল না কারণ বাহির থেকে দরজা লাগানো। পরক্ষণে কুঠিরের জানালা দিয়ে একজন মেয়েকে ইফতিয়াসের সঙ্গে দেখতে পেল। ইফতিয়াসকে দেখে পূর্বের কথা মনে পড়ে রাফিয়ার। সে জানালার কাছে গিয়ে চেঁচিয়ে গা’লা’গা’ল করতে লাগে ইফতিয়াসকে। সে শুনেও না শুনার ভান ধরে মেয়েটার হাতে টাকা ধরিয়ে বলে,

‘শোন এখনি কাজি আসবে। তোর সাইন লাগবে কন্যার পক্ষ থেকে। তুই সাইন দিয়ে সোজা কেটে পড়বি।’

‘জ্বি সাহেব।’

রাফিয়া বুঝল মহিলার মত দেখতে নারীটিই তার পরণে শাড়ি পরিয়েছে। বিয়ের বধূরুপে সাজানোর কারণ বুঝতে বেগ পেতে হলো না তার। ইফতিয়াস ছলনার সহায়তায় তাকে বিয়ে করার চেষ্টা করছে। কাজি আসবে মানে সে বিয়ে করে তার সঙ্গে…..না আর ভাবতে পারছে না রাফিয়া। সে মুখ ঘুরিয়ে তার বিপরীত পাশে আরেকটি জানালা দেখতে পায়। ভাঙ্গা কুঠিরের মেঝেতে বালির উপর বড়-ছোট কংকর পড়ে আছে। ফলে সেও বাঁকা হেসে বড় কংকরটি নিয়ে জোরালো ভাবে জানালার মধ্যে ছুঁড়ে দেয়। জানালাগুলো কাঠের হওয়ায় ‘ঠাস’ করে জানালার এক পাঠ ভেঙ্গে যায়। শব্দ শুনে চমকে যায় ইফতিয়াস। ভয় হলো তার রাফিয়াকে হারানোর। ছুটে যায় ভাঙ্গা কুঠিরের মধ্যে। সেখানে রাফিয়াকে না পেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘তোকে তো আমার হতেই হবে।’

হাত মুঠোবদ্ধ করে দৌড়ে বাহিরে গেল। জানালার বিপরীত দিক থেকে কোন রাস্তায় পৌছাঁয় সেটা ইফতিয়াসের অজানা নয়। অন্যত্রে রাফিয়া প্রাণপণে ছুটছে। বার কয়েক পিছু ঘুরে কাউকে না দেখে সে দাঁড়িয়ে অল্প করে ঝিরিয়ে নেয়। কিন্তু পুনরায় ‘রাফিয়া’ শব্দটি কারো মুখ থেকে শুনতে পেয়ে শিউরে উঠে সে। তৎক্ষণাৎ পিছে ঘুরে দেখে ইফতিয়াস তার থেকে তিনগুণ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। ইফতিয়াস তার হবু বউকে দেখে পাগলের মত হেসে বলে, ‘বউ পালাচ্ছো কেনো! ওখানেই দাঁড়াও আমি আসছি।’
কথার শেষে ইফতিয়াস দৌড় লাগায়। রাফিয়া বিন্দুমাত্র থেমে রইল না। ছুট লাগায় যাতে ইফতিয়াসের হাতে না পড়ে। রাস্তার উপর এসে রাফিয়া ভীতি দৃষ্টি নিয়ে দুপাশের রাস্তা খেয়াল করে। কোনো গাড়ির চলাচল বা মানুষের হাঁটাচলা না দেখে তার কলিজা কাঁপছে। পা চালিয়ে শাড়ির কুচি ধরে হাঁটা ধরে। তন্মধ্যে ইফতিয়াস রাস্তার উপর এসে হাটু ধরে হাঁপাতে লাগে। তার নজর পড়ে রাফিয়ার উপর। মেয়েটা শুধু পালাচ্ছে কেন বুঝতেছে না সে! পালালে কি আর সে ছাড়বে বলে মনে হয় তার। দাঁত চেপে সেও দৌড়াতে লাগে। রাফিয়ার চোখ বেয়ে অজস্র জল গড়াতে লাগে। এই নির্জন পরিবেশে সে একা। তার পিছে শ’য়তানের মত পিছু নিয়েছে ইফতিয়াস। রাফিয়ার লোকেশন বারে বারে পরিবর্তন হওয়ায় দোটানায় পড়ল রুজহান। কারণ লোকেশন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ক্রমান্বয়ে আগাচ্ছে। কোনো এক বিপদ সংকেতের ভয়ে সে বাইকের স্প্রিড বাড়িয়ে দেয়। নাবিল সন্দেহের গলায় বলে,

‘দোস্ত নিশ্চয় ভাবী ছাড়া পেয়েছে বলে দৌড়াচ্ছে।’

শুনে রুজহানের বুক ধড়ফড় করছে। সে প্রায় কাছেই চলে এসেছে রাফিয়ার। নাবিল থুতনী উঠিয়ে দেখতে পেল আগত রাফিয়াকে। রুজহানও বাইক থামিয়ে তৎক্ষণাৎ রাফিয়াকে ধরে ফেলে। একটুর জন্যে মেয়েটা মুখ থুবড়ে বড় পাথরের আঘাতে জর্জরিত হতো। ভেবেই তার বুকে র’ক্তক্ষরণ হলো। ইফতিয়াস তিনজনকে দেখে ‘না’ করে চিৎকার দিল। ফলে সে তার পকেট থেকে পি’স্ত’ল বের করে রাফিয়া বরাবর নিশানা রাখে। রুজহান রাফিয়াকে বুকে আগলে নেয়। তার চোখের তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভস্মীভূত প্রকাশ পাচ্ছে। ইফতিয়াস পি’স্তল চালানোর পূর্বেই কনস্টেবল এসে জাপ্টে ধরে। নাবিল রাফিয়ার লোকেশন অন্য এক ফোর্সকেও পাঠিয়ে ছিল। তারা আসায় ইফতিয়াস দমে গেল।
রাফিয়া তার প্রিয়তমের বুকের হৃদস্পন্দন শুনতে থেকে বিড়বিড়ে বলে,’ভালোবাসি আপনাকে!’ তার কানের উপর সকলের অগোচরে গভীর চুমু দিয়ে রুজহান বলে,
‘ভালোবাসি সেই পাঁচবছরের দেখা সদ্য যুবতী কন্যাকে।’

একবছর পর….

বিয়ের আয়োজন চলছে ব্যারিষ্টারের রঞ্জিত মেনশনে। মেনশনটি কিনেছে রুজহান নিজ দায়িত্বে। এখন তারা আর টিনের বাসায় থাকে না। এখন তাদেরও নিজস্ব মেনশন আছে। যেখানে তারা শায়িত রইবে। রাফিয়াকে বধূর সাজে মুগ্ধ নয়নে দেখছে রুজহান। বরের শেরওয়ানিতে রুজহানকে বেশ চোখ কাড়ার মত সুদর্শন পুরুষ লাগছে। তার নেশাবুদ নেত্রপল্লব দেখে রাফিয়ার লজ্জায় গাল লালবর্ণ ধারণ করার উপক্রম। নাবিল ও তার বউও এসেছে। রাফিয়ার মা ও বোনও বেশ খুশি। ভরা বিয়েতে বর কনেকে চিরঞ্জীবের দোয়া করা হলো। তারা যেনো সুখে সংসার করুক। মায়ের কথা শুনে মুচকি হাসে রাফিয়া। রুজহান গলা ঝেড়ে বলে,

‘সাথে যেনো আপনাদের নাতী-নাতনীর মুখ দেখায় আমিন!’

রাফিয়া মুখ লুকায় তার মায়ের বুকে। মনে মনে ছেলেটাকে ‘বজ্জাত জামাই’ নামে উপাধি দেয়। মিসেস আরজিয়া ও দিবায়েত সাহেব মুচকি হাসছে। মিসেস নিঝুম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘জামাইবাবু ঠিকি বলেছে নাতী বা নাতনী চটজলদি চাই।’

আর রুখে থাকার সাধ্য হলো না রাফিয়ার। সকলের মাঝ থেকে পালানোর চেষ্টা করলে রুজহান এক চটে কোলে উঠিয়ে নেয়। এতে রুজহানের বন্ধুগণ, রাফিয়ার বন্ধুবান্ধব, ইশরাক ও ফারিজা সকলে শিষ বাজিয়ে ঠাট্টা করে উঠে। বধূর নেত্রপল্লবে লাজুকতার ন্যায় রুজহানের চোখের দিকে চেয়ে রইল রাফিয়া। ফারিজা বহু পূর্বে অগোচরে ক্ষমা চেয়ে নেই। রাফিয়াও খোশমনে উল্লাসী হলো সবার মাঝে। দূর থেকে একজোড়া করুণ দৃষ্টিকোণ চেয়ে ছিল। মিসেস রহমানা চেয়েও পারল না তার ভাগ্নির সঙ্গে দেখা করতে। অনুশোচনার আগুনে তিনি দগ্ধ। তাই দূর থেকেই তাদের দোয়া দিল। নাহিরউদ্দীন সাহেব ইন্তেকাল করেছে পাঁচ মাস হলো। ইফতিয়াসের খোঁজ নেই। সে নিঃস্ব কোথাও ভারসাম্যহীন হয়ে ঘুরছে। হয়ত নেই তার অস্তিত্ব এই পৃথিবীর মাঝে। একবছর আগে যখন ইফতিয়াসকে জেলবন্দি করা হয়। সে পুনরায় পালায়। তবে সেখান থেকে বেকায়দায় পালানোর কারণে সে খাদে পড়ে গুরুতর আহত হয়। যার চিকিৎসায় জানা যায় সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে চিরজীবনের জন্য। অন্যদিকে ইশিতার খোঁজ কারো কাছে নেই। মিস্টার সাবেরের কাছে যাওয়ার পর তার জীবনের মোড় কোনদিকে গেল তার খবর কেউ পায়নি। রুজহান অবশ্যই চেষ্টা করে ছিল ইশিতার খবর পাওয়ার। তবে পেল না। জানা গিয়ে ছিল ইশিতা ইফতিয়াসের এরেস্টের দিন এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে ছিল। যার নাম সাবের। সাবেরের খোঁজ নিতে গেলে কেউ খোঁজ জানাতে পারেনি। তারা নাকি নিখোঁজ প্রায়! বিধেয় রুজহানও আর ঘাঁটেনি। যে হারাবার সে হারাবেই! ফিরিয়ে তাকেই আনা যায় যাদের জীবনের মায়া মানব মানবীর রইবে।
রুমের মধ্যে কাঠগোলাপের সাজ দেখে রাফিয়া মুচকি হাসে। রুজহান তার ঠোঁটের উপর নিজের আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে থেকে বলে,

‘জানো আজ আমার পাঁচবছরের স্বপ্নের পূর্ণতা পাবে। তোমার মায়ায় অতিরিক্ত চেয়েছি পূর্ণতায়। সেই পূর্ণতা আজ সুফল হবে। কোনো বাধা থাকবে না আমাদের মাঝে।’

রাফিয়া স্বামীর পরশ প্রণয়বাক্যে তার বুকে মাথা রেখে বলে,

‘আপনিই আমার পূর্ণতা ছিলেন বলে আমি আপনার হলাম।’

বিনিময়ে রুজহান মৃদু হাসে। মনে মনে বলে,’হে তুমি আমারই ছিলে বলে পাঁচবছর আগে এক ছলনার ফলে, হলেও তোমায় ফিরে পাবার লোভ কখনো হারায়নি। আজ ইফতিকে মন ভরে দোয়া দিলাম। যেখানে থাকুক ভালো থাকুক।’

সমাপ্ত…..