অনেক সাধনার পরে পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
340

#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির

[২৭]

ইতিমধ্যে আশেপাশে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি তাদের মাঝে নিবদ্ধ হয়েছে। কৌতুহলবশত তাকিয়ে আছে সকলে। মিতালী নিস্থব্ধ! বাকরুদ্ধ! আকর্স্মিক ঘটনায় একদম হতভম্ব সে। ইতস্তত করে বললো, ‘আব্বু?’

মেয়ের কথার গুরুত্ব দিলেন না জুলফিকার। সুপ্তি বেগমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, ‘দেখুন, ঝগড়া করার ইচ্ছা কোনো কালেই আমার ছিল না। আপনি আমার মেয়েকে খাওয়া দাওয়া নিয়ে কথা শুনাতে পারেন না।’
.

দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো অংকুর ও রাকিব। মূলত মিতালীর বাবাকে নিয়েই কথা বলছিল। লোকটার চেহারা দেখতে অনেক গম্ভীর মনে হয়। কিন্তু বেশ মিশুক। মেয়েদের ব্যাপারে একটু বেশি হুঁশিয়ার।এটা খুব সহজেই ধরে ফেলেছে অংকুর। তবে যাই হোক, সে তো প্রেম করছে না কিংবা প্রেম করার জন্য পিছু ঘুরছে না। সময় করে একদম বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে। তাছাড়া সে দেখতেও খারাপ না, আর ভালো একটা জব করে। নাঃকোচ করার কোনো প্রশ্নই উঠে না। আলতো ভাবে প্রাপ্তির হাসি ফুটলো ঠোঁটে। তখুনি খেয়াল করলো তাদের থেকে একটু দূরে হট্টগোলের আওয়াজ। কিছু মানুষের ভীড় জমেছে। নিজের মায়ের গলাটা কানে স্পষ্ট ভেসে আসলো। চকচকিয়ে একে অপরের দিকে তাকালো অংকুর ও রাকিব। রাকিব হতভম্ব হয়ে বলে উঠলো, ‘ভাই চাচি আবার কার সাথে লাগলো?’

দাঁড়ালো না দুই ভাই। দ্রুত পা চালিয়ে আসলো সুপ্তির কাছে। সুপ্তির অপজিটে জুলফিকার কে রাগি মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রকাণ্ড রকমের বিস্ফোরিত হলো দুই ভাই। তখুনি কানে আসলো সুপ্তির বলা কথাটা –

‘আশ্চর্য! আমি খারাপ কি বললাম? আপনার মেয়ে মোটা। তাই তাকে বলেছি যেন খাওয়া দাওয়া কন্ট্রোল করে। তাহলে দেখতে আরো সুন্দর লাগবে। এতেই আপনি এভাবে ক্ষেপেছেন কেন? মহিলাদের সাথে উঠেপড়ে ঝগড়া লাগতে ইচ্ছে করে?’

সুপ্তির বলা শেষ কথাটায় থমথমে হয়ে এলো জুলফিকারের মুখ। এর আগে কখনো মহিলাদের সাথে এমন আচরন করেন নি তিনি। তবে যাই হোক; মেয়েকে নিয়ে এমন কূটক্তি কখনোই মেনে নিবেন না তিনি। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে বলে উঠলেন, ‘আমার মেয়ে মোটা হোক, কিংবা চিকন সেটা দেখার বিষয় আপনার না। নিজে একজন মহিলা হয়ে অন্য মেয়ের বয়সী একজনকে এভাবে বলতে বিবেকে বাধে নাই?’

স্তম্ভিত হয়ে গেলো অংকুর। তার কান দুটো এখনো ঝাঁ-ঝাঁ করছে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার মা মিতালীকে গায়ের গড়ন নিয়ে কথা শুনিয়েছে? বিস্মিত হলো রাকিব। কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করলো তার। এখানে আসার আগেও চাচিকে ভালো করে বুঝিয়েছে যেন বিয়ে বাড়ি গিয়ে উলটা পালটা কিছু না বলে। কিন্তু কে শুনে কার কথা? সুপ্তি তার মুখ বন্ধ করলো না। তা বলার জন্য আর মেয়ে পেলেন না চাচি? এক্কেরে নিজের হবু পুত্রবধূ-কেই শুনাতে হয়েছে আপনাকে? চোখ ফিরিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো। দেখলো অংকুর বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। যেকোনো মুহূর্তে রেগে যেতে পারে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়াস করলো। সুপ্তির কাছে এসে বাহু ধরে বলল, ‘চাচি? চুপ করেন প্লিজ। এখান থেকে চলেন।’

সুপ্তি ঝামটা মারলো রাকিবের হাত। দ্বিগুণ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘কেন? এই লোক হুদাই উঠেপড়ে লেগেছে আর আমাকে বলছিস চুপ থাকতে?’

এরই মাঝে শেফালী উপস্থিত হয়ে গেছে এখানে। মিতালীর পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে প্রথমে বুঝার চেষ্টা করলো ঠিক কি হয়েছে এখানে। বুঝতে চেয়েছিল কি কারণে বাবা ঝামেলা করলেন। যখনই বুঝতে পারলো বোনের দেহের গড়ন করে কথা বলছে এই মহিলা। তখুনি রাগ তার আকাশ ছুঁই হলো। কিছু বলার জন্য উদগ্রীব হতেই মিতালীর তার হাত ধরে বাধা দিলো। করুণ চোখে তাকিয়ে ইশারায় নিষেধ করলো। প্রতিক্রিয়া দেখালো না শেফালী। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে দেখতে লাগলো সব।

সুপ্তি আবারো বললেন, ‘সত্যি কথা সবারই গায়ে লাগে। মেয়ে আপনার মোটা ঠিকই, অথচ আমরা বললে দোষ? আমি কি খারাপ হলেছি আপনার মেয়েকে? আপনি..’

কথা সম্পূর্ন করতে দেয়নি অংকুর। মিতালীকে নিয়ে এমন কথা একটুও সহ্য হয়নি তার। রাগ হলো মায়ের এমন কথা ও আচরনে। সুপ্তিকে থামাতে রাগি গলায় বলে উঠলো, ‘আম্মু চুপ করো। আর একটাও কথা বলবে না।’

চুপ হলেন সুপ্তি। উত্তেজনায় জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলেন। বিস্ময়াদি হলো মিতালী ও শেফালী। অংকুরের মা? চমক চোখে দু-জন একে অপরের দিকে তাকালো একবার। শেফালী বিরক্ত হলো। জিমিতো মাশাআল্লাহ কিন্তু তার মা এমন অসুস্থ প্রকৃতির কেন? এমন মহিলা হবে বুবুর শাশুড়ি? রাকিবের দিকে তাকালো। চাচি? তারমানে জিমি আর ফকির চাচাতো ভাই?

পরিস্থিতি বেহাল। যা হবার হয়েই গেছে। সমাধানের পালা। অংকুর জুলফিকারের কাছে এসে ক্ষমা চাইলো, ‘আঙ্কেল প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আম্মু এমনিতেই কি থেকে কি বলে নিজেও জানে না। প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না।’

তাকে ক্ষমা চাইতে দেখে সুপ্তি চেঁচিয়ে বললো, ‘তুই ক্ষমা চাচ্ছিস কেন? ওই লোক..’

আবারো ধমকে উঠলো অংকুর, ‘তুমি থামবা প্লিজ? সব জায়গায় প্যাচ না লাগাইলে হয় না তোমার?’

রাকিব সুপ্তির কানে ফিশফিশ করে বললো, ‘চাচি? অংকুরকে রাগাতে না চাইলে এখন চুপ থাকেন। নয়তো কেলেঙ্কারি বাধাই ফেলবে।

চুপ হয়ে গেলো সুপ্তি। চেহারা কালো করে ফেললো। কপাল কুঁচকে মুখ বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পরাজয় মানতে চাইলো না। ছেলে এখানে না আসলে ভদ্রলোক টাকেই স্যরি বলাতো সে। আফটার অল ঝগড়ায় এক্সপার্ট কিনা!

ইতিমধ্যে বিয়ের আসর থেকে ওবাইদুর ও ওবাইদুরের বাবা উপস্থিত হলো সেখানে। তারা দুজন এসে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত। ওবাইদুরের বাবা জুলফিকারকে বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না। হয়তো কথায় কথায় বলে ফেলেছে। খেয়াল করেনি।’

ওবাইদুরও তাই বললো। অংকুর আবারো বললো, ‘আম্মুর এমন কাজে আমি লজ্জিত আঙ্কেল। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। রিয়েলি স্যরি।’

গম্ভীর জুলফিকারের মুখ। অংকুরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছিলো। কিন্তু তোমার মায়ের এমন আচরনে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নই। যে আমার মেয়েকে সম্মান দিতে পারবে না। তার বাড়িতে আমি আমার মেয়ে বিয়ে দিবো না।’

জুলফিকারের কথা শুনে স্বব্ধ হয়ে গেলো অংকুর। প্রকাণ্ড রকমের বিস্মিত হলো সে। বুকটা ধক করে উঠলো তার। মিতালীকে হারানোর ভয়ের ঝুক চেপে বসলো মনে। মিতালী অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো অংকুরের দিকে।

জুলফিকার ওবাইদুরের বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বিয়েটা সম্পন্ন করে যেতে পারছি না তাই ক্ষমা চাচ্ছি। আমি এখন আসি। পরে দেখা হবে।’

তারপর মেয়ে দুজনকে হাতে ইশারায় কাছে ডাকলেন। মিতালী ও শেফালী বাবার দিকে এগিয়ে আসলো। জুলফিকার মিতালীর হাত ধরে সুপ্তি বেগমের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে চলে যেতে লাগলেন। অস্থির কন্ঠে পিছু ডাকলো অংকুর, ‘আঙ্কেল? আঙ্কেল শুনেন আমার কথা? আঙ্কেল? মিলি?’

দাঁড়ালো না জুলফিকার। মেয়ের হাত ধরে সামনে হাঁটতে লাগলেন। শেফালী তার পাশেই হাঁটছে। মিতালী ঘাড় ঘুরিয়ে করুণ চোখে তাকালো অংকুরের দিকে। দেখলো অংকুরের মলিন হয়ে যাওয়া মুখখানি। বুক কেঁপে উঠলো তার। হঠাৎ উলট-পালট হয়ে গেলো সব? ভাবলো না বেশি। চোখ ফিরিয়ে মৌনতার সাথে চলে গেলো।

দাঁত দাঁত ঘর্ষণ করে ‘ড্যাম’ বলে পাশের বড় মাটির টবে লাথি দিলো একটা। টবটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে একদম। ইলাস্টিকের ফুল গুলো চারপাশে ছড়িয়ে পরেছে। বিরক্ত হলো সুপ্তি। তাদের প্রতি ছেলের এমন আহ্লাদী নিতে পারলো না সে। মহা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো, ‘ওই লোকের কাছে মাফ চাওয়ার কি হইছে? আমি কি মিথ্যে বলেছি নাকি? মেয়েটা মোটা তাই তো আমি..’

সম্পূর্ণ কথা বলতে পারেনি সুপ্তি। তার আগেই গর্জে উঠলো। ইষৎ কেঁপে উঠলো সুপ্তি। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো ছেলের দিকে। সাধারনত যাই করুক কিংবা হোক, ছেলের রাগ সম্পর্কে অবগত সে। একবার ঘুমন্ত বাঘ জেগে উঠলে আর রক্ষে নেই। শুকনো ঢুক গিললো। এখানে সে তার নিজের অপরাধ দেখতে পারলো না।

‘চুপ থাকো তুমি। আর একটা কথা বললে ভেঙ্গে ফেলবো সব বলে দিচ্ছি।’

অংকুরের চেহারায় স্পষ্ট রাগের ছাপ। হিংস্র তার কণ্ঠস্থর। সুপ্তি বেগম কাছুমাছু চেহারায় বললেন, ‘তুই রাগ দেখেচ্ছিস কেন? ওই মাইয়া রে যা বলছি ঠিকই বলছি। মোটা মাইয়া..’

রাকিব তড়িঘড়ি করে তার মুখ চেঁপে ধরলো। বললো, ‘চাচিজান,, ওই মেয়েকে নিয়ে কিছু বললে অংকুর ক্ষেপে যাবে। জলন্ত আগুনে ঘি ঢালবেন না। দয়া করে মুখ বন্ধ রাখেন।’

অংকুরের রাগ আরো দ্বিগুণ হলো। মা বলে কিছু বলতেও পারছে না, করতেও পারছে না। এখানে থাকলে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তাই রাগে পাশে মেঝেতে পরে থাকা মাটির টবের বড় টুকরোটায় আরেকটা লাথি দিয়ে নিরবে বেড়িয়ে গেলো এখান থেকে।

হকচকিয়ে গেলো সুপ্তি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সকলের দৃষ্টি তাদের দিকেই। বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, ‘কি? চেয়ে আছেন কেন সবাই? যে যার কাছে যান। ওইবাদুর? তুই দাঁড়াইয়া আছোস কেন? যা যা বিয়ে শুরু কর গিয়ে।’

অসন্তুষ্টির চোখে তাকালো ওবাইদুর। মামিকে নিয়ে সেও বিরক্ত। উফফ! আজ নিজের বউয়ের বেষ্টফ্রেন্ড কে অপমান করে বসলো? মিতালীকে সে নিজেও বোনের মতোই ভাবে। নিজের কাছেও খারাপ লাগলো। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। তাই চুপচাপ সরে এলো এখান থেকে।

রাকিবের হাত সরিয়ে দিলো সুপ্তি। বললো, ‘কি হইছে? ওই মাইয়া আর ওই ব্যাটার লাগি অংকুর এতো রাগ দেখাইলো ক্যান? সত্যি কইরা বল রাকিব।’

রাকিব ভাবলেশহীন ভাবে পাঞ্জাবীর হাতা গুটাতে গুটাতে বললো, ‘চাচিজান! আপনার কপালে শনি আছে। অংকুর কিন্তু সেই ক্ষেপেছে।’

‘আরে ক্ষেপছে কেন? কারণ কি?’

বিরক্তির চোখে তাকালো রাকিব। বললো, ‘মিতালী! মানে যেই মেয়েটাকে আপনি মোটা বলে অপমান করছেন সেই মেয়েটাকে আপনার পুত্রবধূ বানানোর পরিকল্পনা করছে আপনার ছেলে। এবার খুশি? বলি চাচি বলার মতো আর মেয়ে পেলেন না? ঘুরেফিরে ছেলের বউকে কথা শুনাতে হয়েছে? ভালোই। এবার আপনার পাগল ছেলেকে সামলান।’

বলেই রাকিব চলে গেলো স্টেজের দিকে। বিয়ে শুরু হবে আরো কিছুক্ষন পর। সকল প্রস্তুতি নিতে হবে। অংকুর ও রেগে বেড়িয়ে গেছে। আপাতত কাজিনদের মতো বড় ভাই হিসেবে সেই একা আছে। একা হাতে সামলাতে লাগলো সব।

হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সুপ্তি। রাকিবের কথা শুনে মাথায় তার ডাব পরলো। কিভাবে কি হয়ে গেলো? এই মেয়েটাকে অংকুর পছন্দ করে? যদিও মেয়েটা দেখতে খারাপ না। চেহারায় মায়া মায়া একটা ভাব আছে। চোখ দুটো টানা টানা। সাথে মিষ্টি হাসি। তবে একটু মোটা। যাই হোক, ছেলে পছন্দ করে মানে আমারও পছন্দ। কিন্তু কথা হচ্ছে সে যে মেয়েটিকে কথা শুনিয়ে দিয়েছে? এবার কি হবে? মেয়েটির বাবার সাথেও তো কথা কাটাকাটি করেছে। উনি যদি এবার মেয়ে দিতে নাঃকোচ করেন? একটু আগেও বলে গেছে মেয়েকে দিবে না। হায় আল্লাহ! এবার কি করবো? ভাবতে লাগলেন সুপ্তি। অসহায়ত্ব হলেন তিনি। ছেলেটা রেগে বেড়িয়ে গেছে। কি করছে কে জানে।

চলমান..

#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির

২৮ [বোনাস পার্ট]

থমথমে পরিবেশ। নিস্থব্ধতা আঁকড়ে ধরেছে তিনজনকে। পুরোটা রাস্তা কেউ কোনো প্রকার কথা বলেনি। তবে অস্থিরতায় কেটেছে শেফালীর মন। এটা কি হলো? তার জিমিকে বাবার বলা শেষ কথাটা মনে পরছে বারংবার। তাহলে কি বাবা জিমির সাথে বুবুর বিয়ে দিবে না? কিন্তু তারা তো একে অপরকে পছন্দ করে। কি হবে এবার? পুরোটা রাস্তা এইসব ভাবতে ভাবতে কেটেছে তার। মাঝে মাঝে আড় চোখে একবার বাবার গম্ভীর মুখ, আরেকবার বুবুর নিশ্চুপ থাকা দেখেছে। গাড়ি থেকে নেমেও কারোর প্রতিক্রিয়া নেই। চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে দুই তলায় উঠলো তিনজন। সামনে শেফালী। দরজার কাছে এসে কলিংবেল বাজানোর পর সাথে সাথে দরজা খুলে দিলেন আমেনা। তিনজনকে ভিতরে আসতে বলে শরবত আনতে গেলেন। শেফালী নিজের রুমে যাবার সময় পিছন থেকে কর্ণপাত হলো বাবার কথা। দাঁড়িয়ে পরলো তাৎক্ষনাৎ। প্রকাণ্ড রকমের বিস্মিত হলো বাবার এমন কথা শুনে।

মিতালী তার রুমের দিকে যাওয়ার সময় জুলফিকার পিছন থেকে ডেকে বলে উঠলেন, ‘অংকুরের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন জানি না। আমি চাই আজকের পর থেকে যেন তোমাদের মাঝে যোগাযোগ না থাকে। আশা করি তুমি আমার কথার অসম্মান করবে না। মনে রেখো!’

স্বব্ধ হয়ে গেলো মিতালী। জুলফিকারের চলে যাবার দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করে চলছে হৃদপিন্ড। চিনচিন ব্যাথা অনুভব হলো সেখানে। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। আমেনা মাত্রই তিন গ্লাস শরবত নিয়ে এসেছিলো। জুলফিকারের গম্ভীর কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে পরলো। কার সাথে যোগাযোগ না রাখার কথা বলছে বুঝতে পারলো না। মিতালীর লাল হয়ে যাওয়া চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো। শুকনো ঢুক গিলে দ্রুত পায়ে রুমে চলে আসলো। দরজা লাগিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো। চোখের কোণে জমে আসা পানি ডান হাতের উলটো পিঠের মাধ্যমে মুছে নিলো। বুক ফুলিয়ে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। আলমারি থেকে থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।
.

আমেনা হতভম্ব হয়ে শেফালীর কাছে আসলেন। ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন ‘কি হয়েছে?’ শেফালী বিরক্ত হলো। চেহারায় অসন্তষ্টি এনে বললো, ‘আশ্চর্য পাবলিক। কি থেকে কি হয়েছে তাই যোগাযোগ রাখতে নিষেধ দিয়েছে। দোষ তো ওই মহিলার জিমির না। তাহলে জিমির সাথে কথা অফ করতে বলার সায়েন্স টা কি?’

আমেনা বুঝলো না। তবুও যতোটুকু বুঝলো ততোটুকুই তার জন্য যথেষ্ট। আসল ঘটনা জানার জন্য আবারো জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে?’

শেফালী সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো। আশ্চর্য হয়ে গেলো আমেনা। মিতালী কাউকে পছন্দ করে শুনে খুশি লাগলেও এই খুশি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। শেফালীর কাছে অংকুরের যা বর্ণনা শুনলো তাতে মনে হলো অংকুর ছেলে হিসেবে বেশ ভালোই। কিন্তু মিতালীর বাবা যে রেগে গেলেন? এই ঘটনার পর রাজি হবে বলে মনে হয় না। চিন্তিত হলেন আমেনা। নিঃশব্দে ভাবতে লাগলেন।

রাগে গিজগিজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো শেফালী। রাগ লাগছে তার। একবার রাগ হচ্ছে বাবার উপর। আরেকবার রাগ হচ্ছে অংকুরের মায়ের উপর। এইটুকু মাথায় আকাশ সমান চিন্তা ঢুকলো। জিমির সাথে কোনো ভাবেই যোগাযোগ বন্ধ করা যাবে না। বাবাকে মানাতে হবে। যেভাবেই হোক বুবুকে খুশি রাখতেই হবে।
.

দরজা লাগিয়ে রুমের বারান্দায় বসে আছে অংকুর। পরনে তার কালো টি-শার্ট। ঘড়ির কাটার স্থান রাত্রীর প্রায় এগারোটায়। আজকে চাঁদটা গোমট বাধা। ঘন কালো মেঘের আড়ালে ঢেকে আছে। জ্যোৎস্না নেই কোথাও। মুগ্ধতা নেই। বিষন্নতায় ছেঁয়ে আছে মন। ঝিঁ ঝিঁ পোকার কর্কষ ধ্বনি সঙ্গ দিয়েছে একাকীত্বের। তপ্ত শ্বাস ফেললো অংকুর। হাতে তার মোবাইল। স্কিনে ‘তুলতুল’ নামটি ভাসছে। আবারো বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে চাপ দিয়ে ডায়াল করলো। দুইবার রিং হবার পরে প্রথমের মতোই আবারো সেই মেয়েটির মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসলো। ‘আপনি যেই নাম্বারে কল দিয়েছেন তা এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে!’ যা অংকুরের রাগ ও বিষন্ন বাড়াচ্ছে বারংবার। তার কল ধরছে না কেন মিতালী? সন্ধ্যা রাত থেকে এখন অব্ধি বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে। প্রতিবারই কল কেটে দিয়েছে মিতালী। ফেসবুক, হুয়াটস এপের ম্যাসেজও সিন করছে না। রেগে আছে তার উপর? কিন্তু সে তো কিছু করেনি। যা হয়েছে তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছে। তাহলে? এমন উপেক্ষার মানে কি? আবারো কল দিলো মিতালীর নাম্বারে। এবারো কল কেটে দিলো। অবশেষে সিম কার্ডে ম্যাসেজে আকুতি করলো অংকুর।

‘মিলি কলটা ধরো প্লিজ। কথা আছে তোমার সাথে।’

সিন হলো না। ম্যাসেজ দেওয়ার কিছুসময় পর কল দিলো কিন্তু এবার বলছে ‘সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না!’ হতাশ হলো অংকুর। মোবাইলটা বারান্দার মেঝেতে আলতোভাবে ছুঁড়ে মারলো। চুল গুল দুই হাতে খাঁমচে ধরলো। চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। ভালো লাগছে না কিছুই। মিতালী কি ব্যস্ত? যদি ব্যস্ত হয়ে থাকে তাহলে বলতেও পারতো। বারবার কল কেটে দিয়ে শেষবার মোবাইল বন্ধ করতো না। তাহলে মিতালী উপেক্ষা করছে তাকে? রেগে আছে তার উপর? উফফফফ! সব দোষ মায়ের। এতো এতো বুঝানোর পরেও ফালতু কথার ঝুলি শেষ হয়না তার মায়ের। যদি না মিতালীকে মোটা বলে অপমান করতো তাহলে সবই ঠিক থাকতো। প্রচুর রাগ হলো তার। রেলিং’এর উপরে থাকা মাটির টব টা তুলে মেঝেতে ছুঁড়ে মারলো। রাগে শরির কাঁপছে। দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ চালাতে লাগলো।
.

সোফায় বসে হাত কচলাচ্ছে সুপ্তি। চেহারায় তার চিন্তা, অসহায়ত্বের ছাপ। বারবার চোখ ঘুরিয়ে ছেলের রুমের দরজার দিকে তাকাচ্ছে। সেই যে বিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে এখনো অনাহার ছেলেটা। রাতে বাসায় এসেই দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। ডেকেছে বেশ কয়েকবার। দরজা খুলার পরিবর্তে ধমকে উঠেছে সে। দরজা থেকে চোখ ফিরিয়ে রাকিবের দিকে তাকালো। রাকিব তার পাশেই বসে বাদাম চিবুচ্ছে আর টিভিতে খেলা দেখছে। একদম চিল মুডে আছে সে। বিরক্ত হলো সুপ্তি। রাকিবের কাধে থাপ্পড় বসিয়ে বলে উঠলো, ‘বসে আছিস কেন? ভাইয়ের কাছে যেতে পারছিস না? যা গিয়ে রাগ ভাঙ্গা।’

‘হ আমি যাই, আর তোমার ছেলে মাথায় তুলে আছাড় মারুক। পারবো না এতো। তখন এতো কথা বলতে গেলেন কেন? বাসা থেকে বের হবার আগে দুই ঘন্টা সময় নিয়ে বুঝিয়েছি যেন বেশি কথা না বলেন। শুনলেন আমার কথা? এখন আমার কাছে এসেছেন কেন? নিজে গিয়ে ছেলের রাগ ভাঙ্গান। আমাকে বলে লাভ নেই। আমার লাইভ ম্যাচ চলছে। মিস করতে পারবো না।’

মলিন হলো সুপ্তির চেহারা। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিরবে। বিয়ে বাড়ির ঘটনা কেন্দ্র করে দুই ছেলেই তার উপর ক্ষিপ্ত। একজন তো রীতিমতো রেগে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। আরেকজন ত্যাড়া ত্যাড়া ভাবে কথা শুনাচ্ছে। এখন কি করবে সে? উপায় খুঁজে পেলো না।

‘চাচি শুয়ে পরেন গিয়ে। দেড়ি হলে অসুস্থ হয়ে পরবেন। অংকুরের সাথে কথা বলবো আমি। আপনি যান।’

টিভির দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো রাকিব। স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো সুপ্তি। রাকিবের কথায় ভরশা পেলো যেন। সম্মতি দিয়ে রুমে চলে আসলো। সুপ্তি যেতেই বিরিয়ানির প্যাকেট বের করে প্লেটে ঢাললো রাকিব। তারপর অংকুরের রুমের কাছে এসে দরজায় টোকা দিতেই ভিতর থেকে অংকুরের রাগি কন্ঠ ভেসে আসলো,

‘মাইর খাইতে না চাইলে ভাগ এখান থেকে।’

এক হাতে মাথা চুলকালো রাকিব। বললো, ‘ভাই রেগে মেয়েদের মতো রুমবন্ধি থাকলে লাভ টা কার? তোর নাকি আমার? রেগে আছে তোর হবু শ্বশুর। তার রাগ কিভাবে ভাঙ্গাবি তা না ভেবে নিজে রেগে বউ সেজে বসে আছিস। গাধা কোথাকার। দরজা খুল বা/ল।’

দরজার লক খুলার আওয়াজ কানে আসলো রাকিবের। কিন্তু দরজা খুললো না। ঠোঁটে প্রাপ্তির হাসি ফুটলো। দরজা ঠেলে রুমে এসে দেখলো বেচারা অংকুর চেয়ার টেনে স্টাডি টেবিলের কাছে বসে আছে। হতাশ তার চেহারা। রাকিব বিরিয়ানির প্লেট টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললো, ‘মনে হচ্ছে ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা হয়ে আছিস। ভাই উনি তো জাস্ট কথায় কথায় বলছে। সিরিয়াস হয়ে বসে আছিস কেন? তুই উনার সাথে একান্তে কথা বল। বুঝা। তারপর দেখ কি বলে। আগে আগে দেবদাস হওয়ার মানে নাই। নে বিরিয়ানি খেয়ে আমারে উদ্ধার কর।’

অংকুর মন খারাপ করে উদাসীন কন্ঠে বললো, ‘মিতালী কল ধরছে না।’

কপাল কুঁচকালো রাকিব। প্রতিক্রিয়া দেখালো না। গ্লাসে পানি ঢেলে টেবিলে রেখে নিজে পাশে বসলো। বললো, ‘এটাই স্বাভাবিক। চাচি কি থেকে কি বলছে তাতো আর আমরা জানি না। হয়তো মিতালী অপমানবোধ করেছে। আবার আঙ্কেলের সাথে তর্কাতর্কি। এমনও হতে পারে তার বাবার নিষেধ দিয়েছে। তোর থেকে যতোটুকু শুনেছি তাতেই মনে হয় বাবার বাধ্য মেয়ে। ঝামেলা শেষ করতে বারোটা বাজবে।’

কথা বলে অংকুরের দিকে তাকালো রাকিব। দেখলো অংকুরের চেহারা একদম মলিন। উষ্কখুষ্ক চুল গুলো। উদাসীন হয়ে আছে একদম। শান্ত্বনা বানী দিলো,

‘তুই আগে খা। পরে কথা বলবো এই ব্যাপারে। চিন্তা করিস না। আঙ্কেলকে মানিয়ে নিবো আমরা।’

আশ্বাস দিলো রাকিব। কিছুটা শান্ত হলো অংকুর। চুপচাপ হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করলো। ভাইকে স্বাভাবিক ভাবে খেতে দেখে রাকিব স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো কেবল। এবার ভালোই ভালোই ঝামেলা ঠিক হলেই চলবে।’

চলমান..

#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির

[২৯]

সকালটা কেটে গেলো ঘুমিয়ে। দুপুরটা কেটেছে ব্যস্ততায়। দুপুর থেকে বিকেল অব্ধি অতিথি আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে কেটেছে অংকুরের। পুরোটা সময় নিরব থেকে খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ গুলো সম্পন্ন করছে। আলাদা করে সময় হয়ে উঠেনি ‘তুলতুল’ নামের মেয়েটিকে কল দেবার। মনে মনে প্রচুর ইচ্ছে করছিল কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ডায়াল করতে ব্যর্থ। সারারাত অস্থিরতায় কাটিয়েছে এই ভেবে যে বউ ভাতে মিতালী আসবে। যেহেতু মিতালী ওবাইদুর ও মনিরার বেষ্টফ্রেন্ড। সেহেতু সে যে আসবে এটাই স্বাভাবিক। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আশেপাশে চোখ বুলিয়েছে অংকুর। কিন্তু না! সকল আশায় চোখের পলকে নিরাশ হলো। তাকে অবাক করে দিয়ে মিতালী আসলো না। এমনিতেও অফিসিয়ালি কাজের কারণে মিতালীর সাথে সাপ্তায় দুই একবার দেখা হতো। কিন্তু কালকের ঘটনার পর থেকে বুকে ভয় ঝুকে বসেছে। যতোক্ষন না মিতালীকে দেখতে পারছে, তার সাথে কথা বলতে পারছে ততোক্ষণ পর্যন্ত এই অস্থির মন কিছুতেই শান্ত হবে না।
.

বিকেলের দিকে ওবাইদুর ও মনিরার বউ-ভাত শেষ হলো। অতিথি এক এক করে চলে যেতে লাগলো। চলে গেলো নতুন বউ ও জামাই। সারাটা দিন অন্যদের আনন্দ ফূর্তিতে কাটলেও অংকুরের মন কেটেছে বিষন্নতায়। দূর থেকে সম্পূর্ণ ব্যাপার লক্ষ্য করেছে রাকিব। কিন্তু কিছু বলেনি। মাঝে দুই একবার ডেকেছিল খাবার খাওয়ার জন্য। কিন্তু অংকুর খেতে আসেনি। ভাইয়ের জন্য সে নিজেও অনাহার রয়েছে। আপাতত আর সহ্য হচ্ছে না তার। খিদায় পেটে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে। টেবিলে গালে এক হাত রেখে অসহায় চেহারা করে বসে আছে রাকিব। তাকিয়ে আছে সামনে অংকুরের দিকে। বিরক্ত লাগছে তার। অধৈর্য হয়ে বলে বঠলো, ‘ভাই? এইগুলা ডেকুরেশনের লোক করবে। তুই ক্যান হুদাই সময় নষ্ট করতাছোস? তাড়াতাড়ি আয় বা/ল খিদা লাগছে।’

বিরক্ত হলো অংকুর। সেই কখন থেকে রাকিব তার পিছু পরে ঘ্যানঘ্যান করছে। শান্তিতে কাজ করতেও দিচ্ছে না। হাতে থাকা ঝুড়ি থেকে কিছু ইলাস্টিকের ফুল রাকিবের দিকে ছুঁড়ে মেরে বললো, ‘আবাল, বিয়ে করা বউ-ও এভাবে বসে থাকে না যেভাবে তুই বসে আছিস। খিদা লাগলে খা গিয়া। আমি কি তোর গলায় তালা মাইরা রাখছি? নিজের খাওয়া নিজে খা। বিরক্ত করবি না।’

রাকিব গা থেকে ফুল গুলো সরিয়ে বলল, ‘চুপ কর শালা। মহান সাজা লাগবো না আর। দেবদাসের মতো করুণ অবস্থা এখনো হয় নাই তোর।’

পাত্তা দিলো না অংকুর। নিজের মতো করে আবারো কাজে হাত লাগালো। রাকিব অসহায় হয়ে বলে উঠলো, ‘এই অসহায় ভাইটার কথা তো একটু চিন্তা কর! খেতে আয় প্লিজ। তুই জানিস আমি খিদা সহ্য করতে পারিনা।’

বিরক্ত হলো অংকুর। চোখেমুখে অসন্তুষ্টি ফুটিয়ে বললো, ‘এতো খাই খাই করছ কেন? রাক্ষস কোথাকার। দাঁড়া আসতেছি।’

কাজ ফেলে চলে গেলো ওয়াশরুমের দিকে ফ্রেশ হতে। সন্তুষ্ট হলো রাকিব। ঠোঁটে ফুটে এলো তার প্রাপ্তির হাসি। পকেট থেকে মোবাইল বের ফেসবুকে ঢু মারলো একটু। তখুনি সুপ্তি এসে তার পাশের চেয়ারে বসলো। প্রতিক্রিয়া দেখালো না রাকিব। সুপ্তি বেগম বলে উঠলেন, ‘কিরে? দুপুরের খাবার খেয়েছিস তোরা?’

রাকিব মোবাইলে স্ক্রোল করতে করতেই উত্তর দিলো, ‘আমাদের খেয়াল আপনার আছে তাহলে? আমি তো ভেবেছিলাম নতুন কাউকে আবার কি বলতে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছেন।’

থমথমে খেলো সুপ্তি। মুখ কালো করে বললে উঠলেন, ‘হইছে তো বাপ। আর কতো কথা শুনাবি আমায়।’

‘যতো দিন না ঝামেলা শেষ হচ্ছে।’ ভাবলেশহীন ভাবে বলল রাকিব। চুপচাপ হয়ে গেলেন সুপ্তি। মলিন চোখেমুখে ভাবতে লাগলেন। তখুনি সেখানে উপস্থিত হলো অংকুর। দুই প্লেট খাবার নিয়ে। রাকিবের পাশে মাকে বসে থাকতে দেখে গম্ভীর হলো তার মুখ। একটা প্লেট রাকিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে সামনের চেয়ার টেনে খেতে বসলো নিজে। গম্ভীর মুখে চুপচাপ খেতে লাগলো। ঠোঁট চেপে হাসলো রাকিব। নিজেও খাবারে হাত দিলো। অংকুরের সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজলেন সুপ্তি। পাশে থেকে জর্দাপোলাও এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘খাবে? আমি দিয়ে দেই দাঁড়াও।’

অংকুর কপালে সূক্ষ্ম ভাজ ফেলে রাকিবের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ভাই আমার নিজের হাত আছে। কিছু লাগলে নিজে নিতে পারবো। এতো হাইপার হওয়ার কিছু নাই।’

থেমে গেলেন সুপ্তি। মৌনতার সাথে বসে পরলেন রাকিবের পাশেই। নিজের ছেলের রাগ সম্পর্কে ভালোই জানেন তিনি। অংকুরের রাগ দুই প্রকারে ভাগ করা যায়। প্রথম, সে যখন প্রচুর রেগে যায় তখন সামনে যা পাবে তা ভাঙচুর করবে। দ্বিতীয়ত, খুব সূক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে চলবে। আজকের রাগটা দ্বিতীয় কাতারে পরে। সুপ্তি মনে মনে আফসোস করতে লাগলেন। তখন যদি কোনো রকমে জানতে পারতেন মেয়েটিকে অংকুর পছন্দ করে। তাহলে সেখানেই বিয়ে ঠিক করে ফেলতেন। করেছেন তো করেছেনই তার উপর আবার মেয়ের বাবার সাথে তর্কবিতর্ক করেছেন। এবার নিজের উপর রাগলেন। কেন ছেলেরা এতো বারণ করার পরেও চুপ থাকতে পারে না সে? কেন?
.

রাত্রীর মধ্যভাগ! ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অংকুর। পকেটে দুই হাত গুঁজে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো খোলা আকাশের দিকে। আজকের আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে আছে। হয়তো তারই মতো মন খারাপ। ‘বিষন্ন সুন্দর’ আকাশটা। মৃদু বাতাস প্রভাহমান। কিয়ৎক্ষণ পরপর থেমে থেমে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। শীতলতা বিদ্যমান। আজকে মন ভালো নেই। দিনটা ব্যস্ততায় কাটিয়ে রাতে অবসর হয়েছে অংকুর। ফুফুর বাড়ি থাকতে জোড়াজুড়ি করেছিলো সবাই। কিন্তু অংকুরের নিজের রুম ছাড়া অন্য কোথাও ঘুমাতে পারেনা। তাই চলে এসেছে। আসার পর থেকে এখন অদ্ধি হিসেব ছাড়া কল দিয়েছে মিতালীকে। ধরেনি! এইতো একটু আগে। ভাগ্যবশত কল ধরেছিল। হয়তো একটু বেশি বিরক্তিবোধ করেছিলো তাই কল রিসিভ করেই কর্কষ ভাষায় বলে উঠলো, ‘সমস্যা কি? বারবার কল দিচ্ছেন কেন?’

এপাশ থেকে অংকুর স্বাভাবিক ভাবে বললো, ‘কল ধরছো না কেন? জানো কতোটা টেনশনে পরেছিলাম আমি।’

মিতালীর প্রতিত্তুরের জন্য কিছু সময় চুপ ছিল অংকুর। তাকে নিশ্চুপ দেখে অংকুর নিজেই আবারো বললো, ‘মিলি? কালকের দুপুরের ঘটনার জন্য সত্যি আমি অনেক স্যরি। প্লিজ রেগে থেকো না আমার উপর।’

মিতালী বললো, ‘আমি আপনার উপর কিংবা আপনার মায়ের উপর রেগে নেই।’

‘তাহলে? আমার সাথে কথা বলছো না কেন?’

‘এমনি। এখন থেকে আমাদের মাঝে আর যোগাযোগ থাকবে না। দয়া করে কারণ জানতে চাইবেন না। আমি বলতে পারবো না। শুধু এইটুকু অনুরোধ করছি প্লিজ কল দিবেন না।’

‘কিন্তু মিলি আমি কি করেছি? যোগাযোগ কেন.. মিলি? হ্যালো?’

কথা সম্পূর্ণ করার আগেই কল কেটে দিলো মিতালী। অংকুর কান থেকে মোবাইল নামিয়ে আবারো কল দিলো। এবার ব্লক করে দিয়েছে মিতালী। রাগ হলো প্রচুর। দাঁতে দাঁত লেগে আসলো তার। রাগে স্বজোড়ে আছাড় মারলো। ভিভো মোবাইলটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো ছাদে। রাগে শরির মৃদু কাপছে অংকুরের। রাগ সামলাতে পারছে না একদম। চেঁচিয়ে উঠলো সে। এগিয়ে এসে দেয়ালে পর-পর কয়েকটা ঘুষি মারলো। দেয়ালে ঘষা লেগে ডান হাতের উলটো পিঠের চামড়া ছিঁলে গেছে একদম। বিন্দু বিন্দু রক্ত জমে এলো। সেইদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। বাম হাতে উড়ন্ত এলোমেলো চুল গুলো পিছে ঢেলে দিলো। দুই হাত পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বেজে উঠলো একটি প্রিয় গান –

ব্যাবিলনের শূন্যে দান
আর চীনের মহা প্রাচীর
আমি কিছু দেখে আশ্চর্য হই না
নিজেকে দেখে।

আমি স্থির আছি, আমি তোরই আছি
তোকে ভালোবেসে, আগের মতোন।
.

বারান্দার রেলিং’এর উপর দুই হাত রেখে তাতে থুতনি ঠেকিয়ে বসে আছে মিতালী। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হয়তো বৃষ্টি হবে। মনে পরলো আকাশ নিয়ে অংকুরের বলা কথা গুলো। আজকের আকাশ ঘন কালো মেঘে আচ্ছন্ন। তাহলে আকাশের মন ভালো নেই? বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টি নামবে। তার মানে বিষন্ন মন কেঁদে উঠবে? তারই মতো? ভিতরে ভিতরে ঝড়ের ন্যায় তোলপাড় চলছে। অশান্ত তার মন। কিছুক্ষণ আগে অংকুরকে কল দিতে বারণ করে দিয়েছে। অংকুর কি আর কল দিবে না? এখানেই সম্পর্কের সমাপ্তি তাদের? চোখের কোণে নিজের অজান্তেই পানি জমে আসলো। গালে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। পিলে চমকে উঠলো মিতালী। তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে নিলো। কাঁদছে কেন সে? অংকুরের সাথে কথা বলতে না পারার কষ্টে? তবে কি সে অংকুরকে ভালোবাসে? প্রশ্ন নিজের মনকেই করলো মিতালী। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিরবে। উঠে রুমে চলে আসলো। অংকুরকে নিয়ে আর ভাববে না সে। বাবার বারণ অমান্য করার সাধ্য তার নেই।
.

‘তুই সিওর শেফালী এই কলেজে পড়ে?’

‘একশো পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিতে পারি বস।’

চুপ হলো অংকুর। বাইকে হেলান দিয়ে তাকিয়ে রইলো কলেজের গেইটের দিকে। সূর্য ঠিক মাথার উপরে। তার তীব্র তাপে অসহ্য লাগছে। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে কপালে। তারই পাশে দাঁড়িয়ে আছে রাকিব। হাতে তার ঠান্ডা কোকাকোলা! শেফালীর সাথে কথা বলার আইডিয়া তারই। মিতালীর কথা না বলার কারণ কি জানার জন্য মূলত শেফালীর কাছে আসা। সময় হলো! কলেজ থেকে চুপিচুপি পায়ে বেড়িয়ে এলো শেফালী। আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে রাস্তার পাশ ধরে দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো। ভ্রুঁ কুঁচকালো অংকুর। হাত ঘড়িতে সময় দেখে বললো, ‘কলেজ ছুটি হতে আরো অনেক সময় বাকি। শেফালী বাহিরে আসলো কিভাবে?’

দাঁত কেলিয়ে হাসলো রাকিব। কোকাকোলা বোতলের ক্যাপ লাগাতে লাগাতে বললো, ‘ফাঁকিবাজ বলে কথা।’

শেফালী এক প্রকার দৌড়ে রাস্তার এপাশে তাদের দুজনের কাছে আসলো। কিছুটা হাঁপিয়ে উঠেছে সে। ঘেমে আছে প্রায়। তাকে এভাবে হাঁপাতে দেখে রাকিব কোকাকোলার বোতল এগিয়ে দিলো। শেফালী হাতে নিয়ে কোক খেতে নিয়েও আবার থেমে গেলো। চোখ ত্যাঁছড়া করে বললো, ‘মুখ লাগিয়ে খেয়েছেন?’

ভ্যাবাচেকা খেলো রাকিব। ঠোঁট টিপে নিরবে হেসে ফেললো অংকুর। রাকিব ইতস্তত করে উত্তর দিলো, ‘নাহ!’

বিশ্বাস করলো শেফালী। কোক খেয়ে নিজেকে ঠান্ডা করলো। তারপর বোতল রাকিবের হাতে দিয়ে বললো, ‘আমাকে ডেকেছেন কেন?’

অংকুর বললো, ‘তোমার ক্লাস চলছে তাই না? বেড়িয়ে আসলে যে?’

‘আরেহ্ ব্রো। ব্যাপার না। ওটা হায়ার-ম্যাথ ক্লাস ছিলো। এমনিতেও অপশনাল তার উপর আমার ভাল্লাগে না। তাই এই ক্লাস টা ফাঁকি দিলাম।’

‘তারপরেও ক্লাস শেষে আসতে পারতে।’

‘এমন একটু আধটু হয়েই যায়। এবার বলেন কেন ডেকেছেন?’

অংকুর নিশ্চুপ হয়ে গেলো। মলিন চোখে তাকালো শেফালীর দিকে। রাকিব সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে মনে মনে প্রচন্ড রকমের বিরক্ত হলো শেফালী। রাগ হলো বাবার উপর। রাগ হলো বুবুর উপর। কি থেকে কি হল তার জন্য দুইজন কি শুরু করেছে? একজন বারন করেছে তো আরেকজন বাধ্য মেয়ের মতো যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। চেহারায় বিরক্তি ফুটালো না। বরঞ্চ চিন্তারাজ্য আনলো।

অংকুর প্রশ্ন করলো, ‘তোমার বোন কেন যোগাযোগ রাখতে বারণ করেছে? শুধুমাত্র ওই ঘটনার জন্যই? নাকি অন্য কিছু?’

ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ ভাবতে লাগলো। সত্যি টা সে জানে। কিন্তু এতো সহজে বলে দিবে? দুলাভাই বলে কথা। সুযোগের সৎ ব্যবহার করতেই হয়। মনে মনে শয়তানী হাসি দিলো একটা। বললো, ‘কারণ তো আছেই। বিরাট বড় কারণ বটে।’

রাকিব কৌতুহল নিয়ে বললো, ‘সেই কারণটা কি?’

তার এমন আগ্রহ দেখে বিরক্তির চোখে তাকালো শেফালী। এই লোকটাকে দেখলেই রাগে গা পিত্তি জ্বলে যায়। এই অসহ্য লোকটা নাকি জিমির ভাই? সিরিয়াসলি?

অংকুর বললো, ‘বলো কি কারণ?’

শেফালী কপাল চুলকে বললো, ‘সব কিছু তো সহজে বলা যায় না। লেনদেনের একটা ব্যাপারস্যাপার আছে।’

চোখ বড়বড় করে তাকালো রাকিব। অবাক কন্ঠে বলে উঠলো, ‘এই মেয়ে ঘুষ নিবে নাকি তুমি? কিচ্ছু পাবে না তুমি বুঝেছো? যা বলার এভাবেই বলো।

‘আশ্চর্য লোকতো আপনি। গোপন খবর জানতে চাইবেন অথচ কিছু হাত খরচ করবেন না। এতো কিপটামি করলে আমিও মুখ খুলবো না।’

বুকে হাত গুঁজে বললো শেফালী। অংকুর স্মিতি হাসলো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো, ‘কি লাগবে তোমার?’

চকচকিয়ে তাকালো শেফালী। খুশিতে আমোদিত হয়ে বলে উঠলো, ‘বেশি কিছু না। এই মাসের নেটফ্লিক্সের বিলটা পে করে দিলেই চলবে।’

এবার শব্দ করে হেসে উঠলো অংকুর। মুখে হাসি রেখেই বলল, ‘ঠিক আছে। হয়ে যাবে। এবার বলো।’

রাকিব বিরক্ত হয়ে নাক মুখ কুঁচকে বিড়বিড় করে বললো, ‘ঘুষখোর মাইয়া।’

শেফালী এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে আসলো। চেহারায় চিন্তার ছাপ এনে বললো, ‘আব্বু বুবুকে বারণ করেছে যেন আপনার সাথে যোগাযোগ না রাখে। বুবু আব্বুকে অনেক মানে। তাই আব্বু যা বলবে তা চোখ বন্ধ করে পালন করবে নিশ্চিত।’

রাকিব বললো, ‘অংকুর তো মাফ চেয়েছে তোমার আব্বুর কাছে। তার পরেও বারণ করবে কেন?’

‘আব্বু অনেক রাগি মানুষ। ইগো ওয়ালা লোক বলতে পারেন। একবার ইগোতে হার্ট হলে ব্যাস কাম সারছে। তাছাড়া আব্বু বুবুকে নিয়ে অনেক পসিসিভ। বুবুকে কেউ কিছু বলবে প্রচুর রেগে যায় আব্বু। আন্টির বলা কথা গুলো শুনে এমন ব্যবহার নরমাল। তাও ভালো, আমি হলে তো কেলেঙ্কারি বাধিয়ে ফেলতাম।’

শেষের কথাটা আস্তে আস্তে বিড়বিড় করে বললো শেফালী। তবুও শুনতে পেয়েছে অংকুর ও রাকিব দুইজনই। কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখালো না। অংকুর অসহায় ভাবে বললো, ‘কোনো ভাবে কিছু করা যায় না? তোমার আব্বুর রাগ ভাঙ্গানোর উপায় নেই?’

শেফালী তাকালো অংকুরের দিকে। মলিন চোখ দুটো দেখে বড্ড মায়া হলো তার। ঠোঁট উলটালো। বললো, ‘আব্বুর রাগ কিভাবে ভাঙ্গাবেন জানি না। তবে আগে বুবুর সাথে কথা বলতে হবে আপনার। বুবুর সাথে নরমাল হোন তারপর আব্বুর ব্যাপার টা দেখা যাবে।’

অংকুর কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো, ‘তোমার গাধা বোন তো কলই রিসিভ করছে না। কথা বলবো কিভাবে?’

‘আপনার নাম্বার টা আমাকে দেন। বুবুর সাথে যোগাযোগ করানোর দায়িত্ব আমার। কিন্তু তার বদলে ওই একটু..!’ বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসলো। রাকিব ভ্রুঁ কুঁচকে বললো, ‘এই মেয়ে? আমরা কি এখানে টাকা বিলানোর ব্যবসা খুলে বসেছি নাকি? ছোট ছোট হেল্পে কিসের টাকা? ঘুষ চাওয়ার ভালোই টেকনিক জানো দেখছি।’

রেগে গেলো শেফালী। কটমট চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘আপনি নিজে কি হ্যাঁ? নিজেই তো ছয়শো টাকাকে সাড়ে আটশো করে ফেলেছেন। আবার আসছে আমাকে বলতে। দেখুন আপনি নিজেও এই পথেরই লোক। সুতরাং মুখ বন্ধ রাখুন নয়তো জানেন শেফালী বারোটা বাজিয়ে দিবে।’

রাকিব দাঁতে দাঁত পিষে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অংকুর বলে উঠলো, ‘তোরা একে অপর কে আগে থেকেই চিনিস?’

শেফালী বিরক্তি নিয়ে বুকে হাত গুঁজে উত্তর দিলো, ‘হ্যাঁ এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্য। নাহলে এমন ফকিরের সাথে পরিচয় হতো না।’

রাকিব বললো, ‘ওই হ্যালো? কাকে কি বলছো তুমি হ্যাঁ?’

অংকুর দুজনকে থামিয়ে দিলো, ‘পরে ঝগড়া করিস তোরা। আগে আমার সমস্যার সমাধান কর। শেফালী? তোমার যা লাগবে আমাকে বললেই পেয়ে যাবে। কিন্তু প্লিজ ঝামেলা শেষ করতে সাহায্য করো।’

শেফালী ভাব নিয়ে বললো, ‘ঠিক আছে। নেটফ্লিক্সের বিলটা সময় মতো দিয়ে দিয়েন। রাতে কথা হবে। টাটা।’

চলে গেলো শেফালী। সে যেতেই রাকিব বলে উঠলো, ‘এই মাইয়া আস্তো ধানিলঙ্কা। রাজি হলি কেন তুই? এবার দেখিস তোর পকেট, ব্যাংক ব্যালেন্স হাওয়ায় মিলিয়ে ছাড়বে।’

প্রতিত্তুরে হেসে ফেললো অংকুর। অতঃপর বাইকে উঠে বসলো দুজন। অংকুর এবার রাতের অপেক্ষায়। অপেক্ষায় তার ‘তুলতুল’ এর।

চলমান..