অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-০২

0
6033

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে আমি হাতের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ে দিলাম এক চিৎকার। আমার চিৎকার শুনে বাসার সবাই আমার রুমে এসে জড়ো হলো। আমার রুমে মানুষ এখন গিজগিজ করছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা মানুষ তো হবেই। আমি এখন মধ্যমনি। বাসার সবার দৃষ্টি এখন আমার দিকে। আমি ভয়ে ফুপিয়ে কাঁদছি। আমি জানি এই মেহেদী ঐ লোকটায় দিয়েছে। আমাকে কাঁদতে দেখে আপু আর ভাইয়া জড়িয়ে ধরে। আব্বু আর আম্মু আমার পাশে বসে। আব্বু আমাক মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

কী হয়েছে মামুনি?

আমি ভয়ের জন্য কথা বলতে পারছি না। আব্বু পুনরায় বলে,

আমার মামুনিটা কী কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে?

আমি মাথা নেড়ে না বলি।

আম্মু আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

কোনো কিছু দেখে ভয় পেয়েছো?

আমি আমার হাত দুটো সবার সামনে ধরি।

ভাইয়া মজার সুরে বলে, মেহেদির রঙ দেখানোর জন্য সবাইকে এভাবে ডাকলি।

আপু কৌতহলি কন্ঠে বলে,

তুই তো কালকে মেহেদি দিসনি তাহলে তোর হাতে মেহেদি আসলো কী করে?

আমি কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলছি।ভাইয়া আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

কান্না বন্ধ করে বল কী হয়েছে?

ভাইয়া আমার হাতে মেহেদি আসলো কী করে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। গতকাল রাতে যখন ঘুমায় তখনো আমার হাতে মেহেদি ছিল না। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখি আমার হাত ভরা মেহেদি।

আমার কথা শেষ করার আগেই রিয়ান ভাই ঝড়ের বেগে এসে বলে,

তোমরা এর কথা শুনার জন্য এখানে বসে আছো। আর বিয়ে বাড়িতে কত কাজ পড়ে আছে। তোমরা তো জানো রিয়ার ঘুম মরার মতো। রিয়া একবার ঘুমিয়ে গেলে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলোও খোঁজ পাবে না। হয়তো দেখো ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে গিয়ে মেহেদি দিয়ে আসছে এখন মনে পড়ছে না। শুধু শুধু এখানে সময় নষ্ট করার মানে হয় বলে আমার মনে হয় না।

রিয়ান ভাইয়ের কথায় সায় দিয়ে সবাই রুম থেকে চলে যায়। শুধু আপু রয়ে যায়। রিয়ান ভাই আপুর দিকে তাকিয়ে বলে,

তোকে কী দাওয়াত দিয়ে রুম থেকে বের করতে হবে রোজ (আমার বোন যার বিয়ে নিয়ে এতো আয়োজন) । তোর বিয়ে কই তুই সারাদিন পার্লারে পড়ে থাকবি তা না এখানে বসে আছিস। একটু পরে রং খেলা শুরু হবে ঐ বাসাতে থেকে যে সবাই চলে আসবে সেদিকে তোর খেয়াল আছে। যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

আপু সুরসুর করে চলে যায়। কারণ এই সবাই রিয়ান ভাইকে ভয় পায়। উনার রাগ সম্পর্কে সবারই ধারণা আছে তাই ছোটরা কেউ উনার কথা অমান্য করে না।

রিয়ান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,

রিয়া তোর কিন্তু আমাকে ট্রিট দেওয়া উচিত।

আমার কান্না অফ হয়ে গেছে রিয়ান ভাইয়ের কথা শুনে। রিয়ান ভাইয়ের কথা ঠিকও হতে পারে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মেহেদি দেওয়া আমার জন্য কোনো আশ্চর্যজনক বিষয় না। আমি রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কোচকে বলি,

আমি আপনাকে ট্রিট দিতে যাবো কোন দুক্কে?

রিয়ান ভাই আমার বিছানায় টান টান করে শুয়ে বলে,

দুক্কে দিবি কেন সুখে দিবি?

মানে?

কালকে যে তোর বয়ফ্রেন্ড তোর হাতে মেহেদি দিয়েছে এটা যদি সবাই জানতে পারে তাহলে কী হবে তুই ভাবতে পারছিস? আমি কিন্তু সবার কাছ থেকে এই কথাটা লুকিয়ে তোকে বাঁচিয়ে দিলাম। এই উপলক্ষ্যে তো আমাকে ট্রিট দেওয়াই যায় তাই না।

আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই। এক মিনিট এক মিনিট আপনি কী করে জানলেন আমার বয়ফ্রেন্ড আমার হাতে মেহেদি দিয়ে দিয়েছে। তার মানে আপনি জানেন আমার সাথে অদ্ভুত ঘটনাগুলো কে ঘটাচ্ছে?

অদ্ভুত ঘটনা মানে?

কিছু না। আপনি আমার রুম থেকে যান।

এটা কী তোর কাওলা করা রুম? তোর বাপে তোর নামে লিখে দিছে?

আমার নামে লিখে না দিলেও এই রুমে যেহেতু আমি থাকি সুতরাং রুমটা আমারই হবে।

পিচ্চি মেয়ে এতো কথা বলিস কেনো?

আপনি এখান থেকে যান আমি রেডি হবো।

রিয়ান ভাই চলে যায়। আমি বিছানা থেকে নামতে যাব তখনি দেখি বালিশের নিচ থেকে কিছু উঁকি মারছে। আমি বালিশের নিচে হাত দেই। আমার হাতে ওঠে আসে একটা কাগজ। কাগজটা খুলে বুঝতে পারলাম এটা একটা চিরকুট। চিরকুটের লেখাগুলো লাল জেলপেন কলমের। গোটা গোটা অক্ষরে চিরকুটটা লিখা। চিরকুটের মাঝে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো লেখাগুলো ডানদিক থেকে শুরু হয়েছে অনেকটা আরবি হরফের মতো। যে পৃষ্ঠায় লিখা সেই পৃষ্ঠায় লেখাগুলো উল্টো লাগে কিন্তু অপর পৃষ্ঠায় সনন্দ করে বুঝা যায়।

আমার টিয়াপাখি

তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি। নাচের সময় তোমার অসাবধানতার কারণে উড়নাটা সরে যায়। উড়নাটা সরে যাওয়ায় তোমার কোমরটা দৃশ্যমান হয়ে যায়। যেদিক সবাই তাকিয়ে ছিল তাই নিজের রাগটা কনট্রোল করতে পারিনি। তাই তোমাকে আঘাত করে ফেলি। সকালে তোমার হাতের মেহেদি দেওয়া দেখে তুমি ভয়ে চিৎকার করবে জানি। তোমার হাতে মেহেদি দেওয়ার লোভটা সামলাতে না পেরে আমার ভালোবাসার রঙে তোমার হাত রাঙিয়ে দিলাম। সবাই বলে, যার হাতের মেহেদির রং যত গাড় হয় তার বর তাকে তত বেশি ভালোবাসে। তোমার হাতের রঙ গাড় হয়েছে তারমানে আমিও তোমাকে অনেক ভাসোবাসি। আমার ভালোবাসা প্রমানের জন্য এসব তুচ্ছ বিষয় প্রয়োজন হয় না কিন্তু এগুলো জাস্ট আত্মার তৃপ্তি। আমি জানি তুমি আমার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছো। সরি মাই ডিয়ার লাভ আমার কিচ্ছু করার নাই সারাজীবন তোমাকে এই জ্বালা সহ্য করতে হবে।

ইতি
তোমার
সিক্রেট লাভার

আল্লাহ এই আবার কোন বজ্জাত? তুই আমাকে জ্বালাবি তোমাকে সামনে পেলে আমি চিবিয়ে খাবো বজ্জাত হনুমান কোথাকার? পাগল ছাগল কোথাকার?

আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেইন্জ করে নিলাম। একটা হোয়াইট কালার কুর্তি পড়লাম। ব্ল্যাক জিন্স আর গায়ে একটা হোয়াইট উড়না জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য যেখানে রং খেলা হবে সেখানে যাওয়া। রং খেলার জন্য অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন রঙের কাপড় দিয়ে স্পেন্ডেল করা হয়েছে।

রিয়া আপু আমি তোমাকে রং লাগাবো।

(কথাটা বললো মিমি আমার পিছন থেকে। মিমি হচ্ছে আমার একমাত্র খালাতো বোন। বয়স ১০ বছর।)

মিমি একদম আমাকে রঙ লাগাবি না।

এটা বলেই দৌড়ানো শুরু করি। আমার পিছন পিছন মিমিও দৌড়ে আসছে। দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় কারো সাথে ধাক্কা লেগে তাকে নিয়ে রঙের ড্রামে পড়ে যায়।

চলবে…..