অন্তরালের অনুরাগ পর্ব-৬৯+৭০

0
987

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৬৯ ❤

পদ্মলয়া ম্যানশন আজ যেন নতুন বউ বরণের আনন্দ মাখিয়ে নিজেকে সাজিয়েছে। জমকালো লাইট আর বিভিন্ন ফুলের বাহারে অতিপরিচিত বাড়িটি যেন অচেনা অচেনা লাগছে।
নীলা গাড়ি থেকে নেমে একদৃষ্টিতে জমকালো সাজে সজ্জিত এই ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখে যাচ্ছে। চোখে তার সীমাহীন বিষ্ময়। সে চমকিত দৃষ্টিতেই সাদিদের দিকে তাকালো।
আর সাথেসাথেই চোখজোড়া প্রেমময়ী চোখের মিলন হলো। কেননা প্রিয়তম যে মুগ্ধ দৃষ্টিতে এতক্ষণ তার প্রিয়তমাকেই দেখে যাচ্ছিল।

— ‘ এসব কি? ‘
— ‘ আমার প্রিন্সেস আর তার মাকে ওয়েলকাম করার ছোট একটা প্রচেষ্টা। ‘
— ‘ এটা আপনার কাছে ছোট মনে হচ্ছে? ‘

সাদিদ আরেকটু তার দিকে এগিয়ে আসলো। মেয়েকে একহাতে বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে অপর হাতটি দিয়ে নীলাকেও আলতো করে বুকে টেনে আনলো। অতঃপর প্রিয়তমার কপালের একপাশে ছোট্ট করে আদুরে চুমু খেয়ে বলল,

— ‘ কমই। তোমাদের সামনে পুরো পৃথিবী এক করলে ও আমার কাছে কমই মনে হবে। ‘
— ‘ আপনিও না! এতসব কখন করলেন? সবসময় তো আমাদের কাছাকাছিই ছিলেন। ‘
— ‘ নিজে উপস্থিত না থেকে কি কাজ করা যায় না? ভিতরে চলো। তাহলেই দেখতে পাবে কাজের মানুষের অভাব আছে কি-না। ‘

নীলা আর প্রতিউত্তর করলো না। সাদিদের সাথে পা মিলিয়ে ধীরে ধীরে সদরদরজার দিকে এগিয়ে গেল। তাদের আর কষ্ট করে কলিংবেল বাজাতে হয়নি। নীলা-সাদিদের হসপিটাল থেকে বের হবার খবর শুনেই সবকিছু প্রস্তুত ছিলো।
সবার হাতেই বড়সড় ফুলের ঝুড়ি। সাদিদ নীলাসহ মেয়েকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই একযোগে ফুল ছিটানো শুরু করলো। শুধু এটাতেই তারা ক্ষান্ত হলো না। সিলিং থেকে অনবরত লাল গোলাপের পাপড়ি পরতে শুরু করলো।
ছোট্ট মেয়েটা বোধহয় আচমকা এমন তান্ডবে বিচলিত হয়ে পড়ল। তাই সাদিদ মেয়ের মাথায় তোয়ালে দিয়ে তার মুখটা নিজের বুকে লুকিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলে উঠল,

— ‘ আচ্ছা আচ্ছা অনেক হয়েছে। আমার মেয়ে ভয় পাচ্ছে এসবে। এবার থামাও। ‘

কথায় বোধহয় কাজ হলো। আসলে পিচ্চি মানেই সব দোষ মাফ। এমনকি তার জন্য সবকিছুই মাফ।
শায়লা রহমান এগিয়ে এসে নীলাকে কাছে টানলেন। কপালে স্নেহের চুমু খেয়ে বললেন,

— ‘ এই একটা সপ্তাহ বাড়িটাকে বাড়ি মনে হয়নি রে। তোদের ছাড়া একটা মুহূর্ত শান্তি লাগে না। এবার তোরা এসে গিয়েছিস আমার আর কিচ্ছু চাই না। ‘
— ‘ হ্যাঁ খালা মণি, আমি বউকে এতোগুলা মিস করেছি। ‘
— ‘ শাদ আবার? ‘

মায়ের মৃদু ধমকে শাদের মুখখানা কিছুটা চুপসে গেল। বিগত কয়েকদিনে মায়ের থেকে যেই পরিমাণ ধমক খেয়েছে তার জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত বোধহয় এতোটা খায়নি। আর প্রতিবারের ধমকের কারণ কেবলমাত্র একটি ব্যক্তিকে কেন্দ্র করেই। অর্থাৎ শাদের বউ মানে সাদিদের পিচ্চি মেয়েটা।
শাদমান মায়ের কথায় মুখ লটকিয়ে নিলেও বাবুর পিছু ছাড়ল না। সাদিদের আশপাশে ঘুরতে লাগলো।

— ‘ কি হয়েছে বাবা? ‘
— ‘ বউকে একটু দাও। কোলে নেই। ‘

সাদিদ তার কথায় মুখ টিপে হাসলো। শাদের গালটা হালকা করে টেনে দিয়ে বলল,

— ‘ তুমিতো ছোট। নিতে পারবে? ‘
— ‘ হ্যাঁ নিতে পারব। তুমিতো বড় তারপরও বড় খালামণিকে কোলে নাও। তাহলে আমিও ছোট হয়ে ছোট বউকে নিতে পারবো। ‘

সাদিদ বারকয়েক শুকনো কাশলো। আর তানবীরতো পারলে হেসে খুন।

— ‘ বেশি হাসি পাচ্ছে তাই না? শাদ বাবা, তোমার তানবীর চাচ্চুকে কিছু বলবে না? ‘
— ‘ কি বলব? ‘
— ‘ বলব? ‘

সাদিদ তানবীরের দিকে তাকিয়ে ভ্রুজোড়া নাচাতেই তানবীর ভদ্র ছেলের মতো ঠিকঠাক হয়ে বসে গেল। নতুবা এই শাহেদ-নিধি দম্পতির পুত্র নমুনা এখনই ইজ্জতের ফালুদা করে দিবে।
সাদিদ তানবীরের কান্ডে একপলক সেদিকে তাকিয়ে সাবধানে মেয়েকে শাদমানের কোলে দিলো।

— ‘ সাদিদ ছেড়ো না। নতুবা এই ছেলে এখনই ফেলে দিবে। ‘

শাদমান মায়ের দিকে অসন্তুষ্ট দৃষ্টি তাকালো। মা কেন বারবার বউটার সামনে তাকে অপমান করছে এটাই তার বোধগম্য হচ্ছে না!
সাদিদ মৃদু হেসে ছোট্ট মেয়েটাকে শাদের কোলে ধরে রাখলো। কিন্তু পাকনার কি এতে পোষাবে? সে নিচুগলায় সাদিদের উদ্দেশ্য বলল,

— ‘ চাচ্চু বউয়ের সাথে প্রাইভেট কথা আছে তো। তুমি পাশে থাকলে কিভাবে হবে? ‘

সাদিদ বোধহয় এবার একটু জোরেই ধাক্কাটা খেল। জামাইতো তার শুধু ফাস্ট নয় বরং সুপার ফাস্ট। মেয়ের বাবার কাছেই নাকি মেয়ের পিছনে লাইন মারতে হেল্প চায়ছে! এসব কি মানা যায়? তাই সেও একেবারে নিচুস্বরে ফিসফিসিয়ে শাদমানের কানে কানে বলে উঠল,

— ‘ জামাই, এতো মানুষের মধ্যে প্রাইভেট কথাটা কি আর প্রাইভেট থাকবে? কিছুটা পাবলিকের আওতায় চলে আসবে না? ‘
— ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছ। এখন না বউ, আমরা পরে কথা বলবো। এখন বরং তুমি ঘুমাও। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ‘

শাদমান নিজের ছোট্ট হাতগুলো দিয়েই তার থেকেও ছোট পিচ্চির মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। ছোট্ট মেয়েটার চোখে ইতিমধ্যে ঘুম ঘুম ভাব থাকায় অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু তার নাকটা বরাবরের মতোই লালচে দেখা গেল। কারণটা কি? জামাই নামধারী শাদমানের জন্য? না-কি অন্যকিছু সেটাতো ছোট পিচ্চিটাই ভালো জানে।
সাদিদ ঘুমন্ত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। একইসাথে শাদমানের দিকে তাকাতেই তার ঠোঁটের কোণের হাসিটা প্রসারিত হলো।

— ‘ বাবা, বাবুকে এখন নিয়ে যাই? ঘুমিয়ে পরেছে। শুইয়ে দিব। ‘

শাদমান যেন নীলার কথাটাতে ভীষণ মনঃক্ষুণ্ন হলো। নীলা তার দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে বলে উঠল,

— ‘ ঘুম থেকে উঠলে আবারও তোমার কোলে দিব। দেখবো কতক্ষণ রাখতে পারো৷ ‘
— ‘ খালামণি ইউ আর গ্রেট। লাভ ইউ। ‘

শাদমানের কি হাসি। নীলা তার ঘন চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিলো।

— ‘ আমার লক্ষ্মি বাবাটা। ‘

.

দীর্ঘদিন পরে নিজেদের পূর্বেকার রুমটাতে এসে নীলার খুব ভালো লাগছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সে সবগুলো জিনিস ছুঁয়ে দেখছে। যদিও তার এই রুমে খুব বেশি একটা দিন থাকা হয়নি কিন্তু তারপরও এটা মানেই স্পেশাল। সাদিদ তার জীবনের দীর্ঘ সময় এই রুমটাতেই ব্যয় করেছে। তাই এটাতে যেন আলাদা তৃপ্তি। কেবলমাত্র নীলার শরীরের কথা ভেবেই এতদিন তারা নিচের রুমে ছিল। কিন্তু আজকে সরাসরি তারা দুইতলার দক্ষিণ পাশের রুমটাতেই উঠেছে।

— ‘ কি দেখছো এমন করে? ‘

সাদিদ নীলাকে পিছন থেকে আলতো করে পেট জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখলো। মুখটা হালকা ঘষতে ঘষতেই প্রশ্নটা করলো।
নীলা পিছন না ফিরেই স্বামীর উষ্ণ স্পর্শে আবেসে চোখ বন্ধ করলো। নিচুস্বরে বলল,

— ‘ আমাদের রুমটা। ‘
— ‘ এটাতো আগেও দেখেছ। ‘
— ‘ হুম দেখেছি কিন্তু এখন কেমন যেন অন্যরকম অন্যরকম লাগছে। হয়তো বা আর দেখবো বলে আশা করেনি তাই এমনটা লাগছে। ‘
— ‘ নীলাঞ্জনা! ‘
— ‘ আচ্ছা সরি। এতো রেগে যান কেন? ‘
— ‘ রাগ করার মতো কথা বললে রাগ করবো না? ‘

নীলা নিঃশব্দে মুচকি হাসলো। অতঃপর সাদিদের হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে তার বুকে মাথা হেলিয়ে দিলো৷ সাদিদ নিঃশব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লান্ত স্বরে বলল,

— ‘ এটাই তো পারো। রাগের কারণ ঘটিয়ে এসব করে পার পেয়ে যাও। ‘

নীলাও নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ফাঁকি দেওয়ার কোনো চান্সই থাকে না। কেননা এই মানুষটা যে নীলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে পরিচিত। একান্ত পরিচিত কাছের মানুষ।

— ‘ মেয়ের নাম কি ঠিক করলেন? ‘

একান্তে কিন্তু নীরব মুহূর্ত কাটিয়ে নীলার তরফ থেকে এমন একটা কথা শুনে সাদিদ তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।

— ‘ তুমি বলো। ‘
— ‘ আমিতো ভাবিনি। ‘
— ‘ কেন? ‘
— ‘ প্রিন্সেসের বাবা থাকতে এইকাজ আমি করলে প্রিন্সেস রাগ করবে না? ‘

সাদিদ আলতো করে নীলার কানের পিছনে ঠোঁট স্পর্শ করে আদুরেস্বরে বলল,

— ‘ এটা কেমন কথা? তুমি কি আমার প্রিন্সেসকে খারাপ বলে অখ্যায়িত করছ? ‘
— ‘ না সেটা নয়। কিন্তু আদরের দুলালী বললে অবশ্য খারাপ হবে না। ‘

সাদিদ এবার মৃদুস্বরে হাসলো। বাহুবন্ধনী আরেকটু নিবিড় করে বলল,

— ‘ তোমার কি হিংসে হচ্ছে? হলেও কিছু করার নেই। মেয়ে আমার একটাই। তাকে আদর না করলে কাকে করব? ‘

নীলা কনুই দিয়ে আস্তে করে সাদিদের পেটে খোঁচা দিলো। তারপর কন্ঠে বেশ ভাবের সংমিশ্রণ নিয়ে বলে উঠল,

— ‘ হুম আমার তো বয়েই গিয়েছে! আপনি আপনার আদরের দুলালীকেই নিয়ে থাকেন। যখন আমার আব্বা আসবে তখন দেখব কিভাবে আপনারা বাপ-বেটি জ্বলেন। আমাদের মা-ছেলেকে দেখবেন আর লুচির মতো ফুলবেন। ‘

নীলার কথায় কিঞ্চিৎ হাসির রাশ। কিন্তু সাদিদের মুখে হাসি লক্ষ্য করা গেল না। বরং তার মুখে গাম্ভীর্যের ছাপ। সে এবার সম্পূর্ণ প্রসঙ্গটাকে পাল্টে ফেলার জন্য বলল,

— ‘ আচ্ছা সেসব বাদ দাও। এখন বলো দেখি মেয়ের নাম কি ঠিক করলে? ‘
— ‘ বললামই তো। আমি কিছু ঠিক করেনি। ইনফ্যাক্ট চেষ্টাও ছিল না। কেননা আপনি যে আছেন। ‘
— ‘ এটা বললে হয়? আমার যেমন মেয়ে তোমার ও তো মেয়ে। ‘
— ‘ আচ্ছা সমস্যা নেই। মেয়েরটা আপনি রেখে দেন। ছেলের সময় না হয় আমি চিন্তা করে দেখব। ‘

নীলা স্বাভাবিক অর্থে কথাটা বললেও সাদিদের চোখ-মুখ মুহূর্তেই লালচে বর্ণে পরিণত হলো। সে নীলাকে পিছন থেকে ঘুরিয়ে সামনে আনলো। আচমকা সাদিদের এমন রক্তলাল চোখ দেখে নীলা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সাদিদের গালে আলতো করে হাত রেখে চিন্তাপূর্ণ মনোভাবে বলে উঠল,

— ‘ একি! আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? ‘
— ‘ আমরা আর কখনও বেবি নিব না পাখি। ‘

সাদিদের কথাটা নীলার ঠিক হজম হলো না। তাই দ্বিধাবোধ নিয়েই সে পুনরায় প্রশ্ন করলো,

— ‘ মানে? ‘

নীলাকে যতটাই চিন্তিত দেখাচ্ছে সাদিদ ততটাই স্বাভাবিক। তার মধ্যে চিন্তার কোনো ছাপ নেই। নীলার বুঝার সুবিধার্থে সে আবারও স্পষ্টস্বরে বলল,

— ‘ তোমার কোল আলো করে আর কোনো প্রিন্স অথবা প্রিন্সেস আসবে না। আমাদের আর কোনো বাচ্চা হবে না। ‘
— ‘ এসব কি বলছেন আপনি? ‘
— ‘ যা শুনেছ তাই। ‘
— ‘ কিন্তু কেন? ‘

নীলার চোখে-মুখে মারাত্মক চঞ্চলতা। যেন সাদিদের এই কথাটুকু বিন্দুমাত্র বিশ্বাস যোগ্য নয়। সাদিদ কয়েক মুহূর্ত নীরব থেকে নির্নিমেষ নীলার মুখপানে তাকিয়ে রইল। অতঃপর বিছানার মাঝখানে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত রাজকন্যাটার দিকে একপলক তাকিয়ে নীলাকে কাছে টানলো। নরম আদুরে প্রিয়তমার কপালে ভালোবাসাময় আলতো চুমু দিয়ে তাকে নিজের বুকে টেনে আনলো। ছোট্ট মাথাটা বক্ষপিঞ্জরের সাথে চেপে ধরে ভরাট গলায় বলল,

— ‘ আমাদের কাছে একটা ফুটফুটে রাজকন্যা আছে তো৷ আর কিসের দরকার? অনেক কাপল তো একেবারেই নিঃসন্তান থাকে। কিন্তু করুণাময় আমাদের নিঃসন্তান রাখেননি৷ আমাদের ঘর আলো করে প্রিন্সেস এসেছে। তাই আমরা আর বেবি না নিলাম। তাতে কি খুব ক্ষতি? ‘
— ‘ এসব আপনি আমার কথা ভেবে বলছেন। তাই না? ‘

নীলার ঝাপসা চোখজোড়া সাদিদ সযত্নে মুছে দিলো। প্রিয়তমার কানের পিছনে হাত গলিয়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকালো। অতঃপর আদরমাখা নম্র কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ না লক্ষীটি। তোমার জন্য নয় বরং নিজের জন্য বলছি। আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারো। আমি এই অপবাদ সাদরে গ্রহণ করতে রাজি। ‘
— ‘ কিন্তু একবার সমস্যা হলেই যে বার…
— ‘ চুপ। আর কিছু শুনতে চাই না। যা বলেছি তাই। ‘

মৃদু ধমকে নীলা চুপ করে গেল। বিপরীতে আর একটি কথা বললো না।
সাদিদ প্রাণপাখির লটকানো মুখশ্রী দেখে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল। কিন্তু সে নিরুপায়। আরেকটার তাকে ঐ অবস্থায় সাদিদ দেখতে পারবে না। সে আর তার সৃষ্টিকর্তা জানে ঐ প্রহরগুলো সাদিদ কিভাবে পার করেছে। এই নিদারুণ যন্ত্রণা সহ্য করার নয়। তাইতো তার এই কঠিন সিদ্ধান্ত। অবশ্য এই সিদ্ধান্তটা নিতে সাদিদ বুকে পাথর বেঁধেছে। কিন্তু তবুও সে অনড়। যত কষ্টই হোক না কেন সে প্রিয়তমা স্ত্রীকে আর ঐ অবস্থায় দ্বিতীয়বার দেখতে পারবে না। সৃষ্টিকর্তা যে শেষ পর্যন্ত তার কলিজা এবং কলিজার টুকরোটাকে সুস্থভাবে সাদিদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে এটাতেই সে তৃপ্ত। আর কিছুর প্রয়োজন নেই তার।
সাদিদ হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করলো। অতঃপর নীলাকে ছেড়ে দিয়ে হালকা তাড়া দিয়ে বলল,

— ‘ ফ্রেস হবে না? অল্প সময়ের মধ্যেই হুজুরসহ সবাই চলে আসবে। তাড়াতাড়ি করো। ‘
— ‘ হুহ। ‘

ছোট্ট একটা হ্যাঁবোধক শব্দ উচ্চারণ করে নীলা পাশ ফিরে চলে যেতে চাইল। কিন্তু সাদিদ পিছন থেকে নীলার কব্জি টেনে ধরল।

— ‘ মুখটা এমন মলিন করে রাখার মানে কি? ‘
— ‘ কই? ‘
— ‘ আমি কি চোখে কম দেখি? ‘

নীলা আর কথার পিছে কথা বললো না। ধরা পরে গিয়েছে যে। শুধু মাথা নিচু করে বলল,

— ‘ আপনি একজন পারফেক্ট হাসবেন্ড হলেও আমি পারফেক্ট ওয়াইফ নই। এই জীবনে কষ্ট ব্যতিত আর কিছুই আপনাকে দিতে পারলাম না। ‘

সাদিদ একপলক তীব্র অনুতপ্ততায় দগ্ধ নীলার থমথমে মুখশ্রীতে নজর দিলো। নীলার এহেন কথায় তার রাগে মাথা ফেটে যাবার অবস্থা। কিন্তু এই অবস্থায় সে কোনোভাবেই নীলার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। তাই কোমড়ে হাত ধরে মাথা নুইয়ে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস টেনে নিজের মধ্যেকার অগ্নি লাভাটাকে দমন করার চেষ্টা করলো। অতঃপর এক হেঁচকা টানে নীলাকে বুকে এনে ফেলল।
সাত দিন কেটে গেলেও আচমকা এমন টান পরাতে সেলাইয়ে ব্যাথা অনুভব করলো। চোখ-মুখ কুঁচকে সাদিদের দিকে জিজ্ঞাসা সূচক চাহনিতে তাকাতেই সাদিদ অতি দ্রুত প্রিয়তমার অধরযুগল নিজের মধ্যে নিয়ে নিলো। স্থান, সময় ভুলে পরম আবেশে দুইজোড়া ঠোঁটের উষ্ণ ভালোবাসা চলতে লাগলো। একমিনিট, দুইমিনিট অবশেষে ঠিক কতো মিনিট পর সাদিদ তাকে ছাড়লো এটার হিসাব রাখা দায়। কেবল ঘন নিঃশ্বাসের শব্দগুলোই বলে দিতে পারবে এর দীর্ঘ সময় কাল। নীলা এখনও মাথা নুইয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন শ্বাস টেনে সাদিদের দিকে তাকাতেই তার প্রবল নেশালো চোখজোড়ার সম্মুখীন হলো। সাদিদ এগিয়ে আসলো। নীলার মুখটা আঁজলাভরে ধরে নেশালো চোখে কয়েক পলক স্থির তাকিয়ে রইল। অতঃপর আবারও আলতো করে প্রিয়তমার রক্তলাল ঠোঁটজোড়াতে উষ্ণ চুমু খেল। ঠোঁটের কোণে ঠোঁট লাগিয়েই ঘন পুরুষালী স্বরে বলল,

— ‘ তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হই নীলাঞ্জনা। এতো সাহস তুমি কোথায় পাও! আমার প্রাণপাখির গায়ে এতো বড় অপবাদ দেওয়ার আগে একটিবার আমার কথা ভাবলে না? আমি কিন্তু এসব মেনে নিব না। ‘

সাদিদ থামলো। ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই ডানহাতের তর্জনী আঙুলটা নীলার বুক বরাবর রেখে আবারও বলল,

— ‘ এই মেয়েটা আমার জীবনের তপ্ত বিকেলের একমুঠো হিমেল পরশ। বৃষ্টিস্নাত রাতের অতি উষ্ণ আদুরে ভালোবাসার পরশ। আমার কলিজার টুকরোটাকে এই পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখানোর অসামান্য রমণী সে। সে পারফেক্ট নয় তো কে পারফেক্ট? আর তারপরও যদি তার মধ্যে কোনো ডিফেক্ট থাকে দ্যান আই ডোন্ট কেয়ার। সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে আমি তাকে ভালোবাসি। প্রচন্ড বেশি। ‘

নীলা স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ। তার জানার থেকেও বহুদূর এগিয়ে সাদিদ তাকে চায়। যেই চাওয়াতে নীলা ব্যতিত অন্য কারো নামনিশানা নেই।

— ‘ আর কে বলেছে সে কিছু দিতে পারেনি! দার্জিলিং, শ্রীমঙ্গলের আদুরে ভালোবাসার তুলনা কি কোনো কিছুর সাথে হয়? এই একটুকরো ভালোবাসার জন্য যে সারাজীবন পথ চেয়ে বসে থাকলেও বৃথা যাবার নয়। ‘

এতক্ষণ মুগ্ধ হলেও শেষোক্ত সাদিদের ঠাট্টাভরা লাজুকবাণে নীলার গালও লালচে বর্ণে ছেঁয়ে গেল। নীলা তাকে নিজের থেকে সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর অপরদিকে সাদিদ ঠোঁট কামড়ে বাঁকা হাসছে। তাদের সম্পর্কটাই তো টক-ঝাল-মিষ্টিতে পরিপূর্ণ। তাহলে কি শুধু আবেগভরা কথা দিয়েই চলবে?
প্রিয়তমার লজ্জারাঙা মুখটা আরেকটা রাঙিয়ে তুলতে সাদিদ এবার তার কানের কাছে ঠোঁট ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ‘ তাইতো পথ চেয়ে বসে আছি। আবারও সেই উন্মাদনা, সেই অক্লান্ত প্রেমময়ী উষ্ণতায় হারিয়ে যেতে চাই৷ দূর থেকে বহুদূর। ‘

সাদিদ একটু থামলো। প্রিয়তমার নরম কানের লতিটা আলতো করে কামড়ে দিয়ে ঘন স্বরে আবারও বলল,

— ‘ যেখানে কেবল তার এবং আমার বসবাস। এবং অবশ্যই আমাদের তপ্ত ভালোবাসাগুলো। ‘

ইশশ কি ঠোঁটকাটা এই ছেলে! লজ্জায় নীলার দম বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা। সে মাথা না তুলেই সাদিদকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরালো। এবং লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে কোনোমতে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে ছুটলো। কিন্তু যাওয়ার পূর্বে সাদিদের লোমকূপ খাঁড়া করা নির্লজ্জ বাণের থেকে রক্ষা পাওয়া গেল না। কেননা ফাঁকা ঘরের মধ্যে তার পুরুষালী দুষ্টুস্বরটা এখনও ভেসে আসছে,

— ‘ আরে এখনই এতো লজ্জা? আরও তো মাস দুয়েক সময় আছে৷ তখন না হয় লজ্জা পেলে মানাবে। তাই এই টুকটুকে আবিরগুলো তখনকার জন্য রেখে দাও। নতুবা সেই উন্মাদনায় রক্তিম আবিরের তীব্র অভাব অনুভব করবে। ‘

____________

শাদমান মুখটাকে বাংলার পাঁচ করে বসে রয়েছে। আর বারবার আড়চোখে নিজের পাশে ছোট্ট প্রাণটার দিকে তাকাচ্ছে। আর একই সাথে তার মায়ের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।
কেন তার কোনো গোলাপি রঙের কাপড় নেই? তার ছোট্ট বউয়ের সাথে সে মেচিং করতে পারছে না। এই আফসোস সে কোথায় রাখবে?
তানবীর শুরু থেকেই ছোট নবাবের মায়ের সাথে মন কষাকষি দেখেছে৷ তাই তাকে মুখ ফুলিয়ে ছোট্ট মেয়েটার পাশে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে আসলো। শাদমানের শরীর ঘেঁষে বসতেই শাদ তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকালো। এমনিতেই তার মেজাজ বড্ড তিরিক্ষি হয়ে আছে। সে চাচ্ছে না তানবীরের মতো দুষ্টু চাচ্চুটার সাথে কথা বলে মুডের তেরোটা বাজাতে।
কিন্তু তানবীর কি এতো ভালো মানুষ? শাদ পাত্তা না দিলেও সে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পরেছে।

— ‘ কিরে শালার ভাতিজা, মুখখান এমন পেঁচার মতন ক্যান? তোর পেঁচি কি তোকে ছ্যাকা দিছে নাকি? ‘
— ‘ ছিঃ চাচ্চু৷ তোমার ভাষা জঘন্য। ‘
— ‘ হালার পুত তুই আগে আমারে কো ইতা কথা কইবার বেলা তোর উচ্চারণের সমস্যা কই যায়? এমনে তো আমার নামডার চাল-ডাল ছাড়াই খিচুড়ি বানাস। ‘
— ‘ চাচ্চু যাও এখান থেকে। তোমার বিশ্রী কথাবার্তা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না। এমনিতেই আমার মন খারাপ। ‘
— ‘ ক্যান? প্রেমিকার লগে মেচিং-সেচিং করতে পারো না বইল্লা? ‘
— চাচ্চু ডোন্ট কল হার প্রেমিকা। সি ইজ মাই লক্ষ্মি বউ। ‘

তানবীর যেন একটা বিষম খেল। এই ছোট্ট পেকেটের বিশাল বিশাল ধামাকাগুলো তার শরীর আর কুলিয়ে উঠছে না। শাদ রেগে চলে যাওয়া ধরতেই তানবীর তাকে টেনে কাছে আনলো।

— ‘ চাচ্চু ছাড়ো। ‘
— ‘ আরে ছোট্ট শরীরে এতো রাগ কোথায় রাখস! শুন না তোরে একটা বুদ্ধি দিতাম আইছিলাম। ‘
— ‘ লাগবে না। তোমার পঁচা বুদ্ধি তোমার কাছেই রেখে দাও। ‘
— ‘ আরে বেটা শুইন্না তো দেখ। পরে চাচ্চুর গলায় ঝুলে নাচবি। ‘

শাদ বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে তানবীরের দিকে তাকালো। কিন্তু সে নিজের মতো ভাব নিয়ে বলতেই লাগল,

— ‘ পিংক তো মাইয়া গো কালার। তাইতো তোর প্রেমিকা না মানে তোর বউ গোলাপি পরছে। কিন্তু তোর বউতো মাশাল্লাহ শুভ্র পরী। কালার কি কাপড়ের সাথেই মেচিং করা লাগবো? তুই বরং তোর বউয়ের শরীরের সাথে মেচিং করে দলা কিছু পরে নে৷ না-কি তোর বিজনেসম্যান বাপ সাদা ও কিছু কিনে নাই? ‘

শাদ পারে না সত্যিই তানবীরের গলায় ঝুলে পরবে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে সে তানবীরের কথার কোনো প্রতিউত্তর না জানিয়েই রুমের দিকে দৌড় লাগালো। আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না। অতি দ্রুত বউয়ের সাথে মেচিং করে শুভ্র বর্ণের কাপড় গায়ে দেওয়া আবশ্যক।

.

ছোট্ট রাজকন্যাটার নামকরণ এবং আকিকার উপলক্ষে বাড়িতে বেশ কয়েকজন হুজুর এবং মিসকিন খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইসাথে ঢাকার কয়েকটা বড় বড় এতিমখানাতেও খাবারের ব্যবস্থা এবং এতিম বাচ্চাদের যাবতীয় দরকারী জিনিসপত্রের ব্যবস্থা সাদিদ নিজে করেছে। সৃষ্টিকর্তা তার ঘরে যেই আলো পাঠিয়েছেন সে হিসেবে এসব যেন অতি তুচ্ছ। সারাজীবন করে গেলেও এই ঋণ শোধ করার মতো নয়।
অতঃপর তাদের সকলের খাওয়া দাওয়ার পর একান্ত কাছের মানুষগুলোও খাওয়ার পর্ব শেষ করলো। বরাবরের মতনই এইটুকু সময় পিচ্চিকে চব্বিশ ঘণ্টা রক্ষাকারী দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে শাদমান তার পাশে উপস্থিত ছিল। এক মুহূর্ত যেন এই ছোট্ট মেয়েকে ছাড়া তার চলে না। নিধি হাজার বকলেও সেসব তার কানে ডু্কে না।
তার এককথা। তার বউ ছোট। সে দেখে না রাখলে কে দেখবে?
আজকাল না-কি শহরে বখাটে ছেলেপেলে বেড়ে গিয়েছে। সে টিভিতে দেখেছে এসব৷ তাই নজরদারি আরও জোরদার। পিচ্চি বউকে নিয়ে কোনোভাবেই রিক্স নেওয়া যাবে না।
ভাবা যায় এসব? বউ যার এখনও ডাইপার পরে সেই বউকে নিয়ে বখাটেরা কি তার ন্যাপি চেইঞ্জ করবে!
সবাই আবারও একদফা হাসাহাসি করলো। কিন্তু শাদমান ভাবলেশহীন। এসব তার গায়ে মাখালে চলবে না বস। ছোট্ট বউ তার। ভীষণ গুরুদায়িত্ব!

— ‘ সাদি, এবারতো নামকরণটা করা দরকার। সবতো শেষ হলো। ‘
— ‘ হুম বাবা। আমিও সেটাই ভাবছি। ‘
— ‘ তা জিজু কি নাম ঠিক করলেন শুনি? আমারতো আর তর সইছে না। ‘
— ‘ তোর কোনটাতেই ধৈর্য্য আছে? সবকিছুতেই তো অধৈর্য্যের বস্তা। ‘
— ‘ আপনি আবারও শুরু করেছেন? আমি কিন্তু চলে যাব। ‘
— ‘ যাইগ্গা। তোরে কিতা আমি ডরাই…
— ‘ এই চুপ৷ আমার মেয়ের পিছনে লাগলে তোর খবর আছে। ‘
— ‘ মেয়ে পাইয়া ছেলে ভুইল্লা গেলা! তুমিতো ভীষণ আপডেট মার্কা মাদার। ‘

শায়লা রহমান আবারও দুষ্টুটার কান মলা দিলো।

— ‘ পাঁজি ছেলে একটা। এবার বলতো সাদি, কি নাম ঠিক করলি? আমার ছোট্ট দাদুমণিটার জন্য বাবা কি নাম ঠিক করেছে সেটা আমরাও জানতে চাই। ‘

সাদিদ একপলক নীলার দিকে তাকালো। সে মেয়েকে কোলে নিয়ে সাদিদের মুখপানে তাকিয়ে মৃদু হাসছে। সাদিদ মেয়ে আর মেয়ের মায়ের দিকে এগিয়ে গেল।
নীলা সোফায় বসা ছিল। সাদিদ সবার সামনেই হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসলো। অতঃপর মায়ের কোলে থাকা নিজের আদুরে অংশটার কপালে বাবার স্নেহময় দীর্ঘ চুমু পড়ল।

— ‘ নীয়ানা। ‘

নীলা মুচকি হাসলো। প্রশ্নের পূর্বেই প্রিয়তমার ভালো লাগাটা সাদিদ বুঝে নিলো। অতঃপর সাদিদ নিজেও মৃদু হাসলো। মেয়ের ছোট্ট হাতটা নিজের শক্ত পোক্ত মুঠিতে নিয়ে আদুরেস্বরে ডাকলো,

— ‘ প্রিন্সেস? ‘

পাকনা মেয়ে বাবার একডাকেই চোখ বড় বড় করে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ মুখে হাসি নিয়েই বলল,

— ‘ আমার প্রিন্সেসের নাম পছন্দ হয়েছে? ‘

মেয়ের ঠোঁটের কোণে মনভোলানো হাসি। অতি খুশিতে সাদিদের চোখটা নিমিষেই ঝাপসা হয়ে গেল। নীলার কোল থেকে সাবধানে মেয়েকে নিজের বুকে নিয়ে ছোট্ট মুখটাতে অগণিত স্নেহের উষ্ণ পরশ দিলো। মেয়ে নিজেও বাবার মুখটা ছোট্ট হাতে ধরার চেষ্টা করছে।
বাবা-মেয়ের এমন হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবার চোখজোড়াও ম্লান হলো। অতঃপর সম্মানিত হুজুরগণেরা ছোট্ট মেয়েটার জন্য দোয়া করলেন। উপস্থিত সবাইও সেই দোয়ায় মন থেকে সামিল হলো।

— ‘ তাহলে রাজকন্যার পুরো নাম কি হলো? ‘

নীলা শান্তর কথায় সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ একদৃষ্টিতে নীলার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। সাদিদের স্থির দৃষ্টি এটাই বলে দিচ্ছে এবার তোমার পালা। নীলাও পিছু হাঁটল না। বাবার কোলে থাকা রাজকন্যাটাকে মায়ের তরফ থেকে কোমল আদর দিয়ে বলে উঠল,

— ‘ নীয়ানা বিনতে সাদিদ। ‘

#চলবে…

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৭০ ❤

সূর্যোদয় মানেই মানবজীবনকে স্নিগ্ধতায়, পরিপূর্ণতায় ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য প্রকৃতির এক নিয়মবদ্ধ পরিকল্পনা। রোজ একই স্বাদে মানব সভ্যতার মুখের রুচিতে বিতৃষ্ণা নামক অরুচি প্রকাশ পেলেও প্রকৃতির এই ডেইলি রুটিনের নিয়মবদ্ধতায় আমাদের কখনোই হাসফাঁস লাগে না।
সাদিদের জন্য তো আজকের নতুন সকালটা আরও তৃপ্তিময়। আরও প্রশান্তি ছুঁয়ে যাওয়া হিমেল বায়ু। সে একদৃষ্টিতে তার জীবনের সুখের তরীর সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা নিষ্পাপ এই দুটি মানবীর দিকে তাকিয়ে রইল। যার মধ্যে বিদ্যামান নিজের একান্ত ব্যক্তিগত এক রূপসী রমণী এবং তারই রূপের সমন্বয়ে সৃষ্টি এক অনবদ্য নিষ্পাপ প্রাণ। থাই গ্লাসের আলো নিবারক ক্ষমতা ছাপিয়ে সকালের উষ্ণ কিরণ ছোট্ট মুখটায় এসে পরতেই তার কপালে ছোট্ট দুইটা ভাঁজ পরলো। মুখটা অপ্রত্যাশিতভাবে অনেকটাই বিরক্তিমাখা হয়ে উঠল। এ যেন সাদিদেরই প্রতিচ্ছবি। কপালে ভাঁজ, বিরক্তিমাখা চোখ-মুখ! কলিজার টুকরোটা নিজের অজান্তেই সাদিদের ছোট্টবেলাটাকে চোখের সামনে তুলে ধরাতে সে ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলল। মেয়েকে টেনে নিজের কাছে আনতে উদ্ধৃত হতেই অধৈর্য্য মেয়েটা নিজেই মায়ে বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো। মায়ের শরীরের তীব্র ঘ্রাণ আর উষ্ণতায় নিমিষেই যেন ছোট্ট পেটের ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। চোখ বন্ধ রেখেই ছোট্ট মুখটা আস্তে করে মায়ের বুকে ঘষতেই নীলার ঘুম হালকা হয়ে এলো। মেয়েকে আস্তে করে নিজের কাছে আরেকটু টেনে নিয়ে ছোট্ট প্রাণটার পেটের খিদে নিবারণে দায়িত্বশীল মায়ের কর্তব্য পালনে লেগে গেল।
সময় মানুষকে কতটা পরিবর্তন করে দেয়। তাই না? একসময় ঘুমন্ত নীলাকে কোলে নিয়ে সাদিদ পুরো বাড়ি একবার টহল দিয়ে ফেললেও তার খবর থাকতো না। আর সেই নীলাই নাকি এখন মেয়ের আলতো পরশে গাঢ় ঘুম থেকে জেগে যায়! সেটাও রাতে এতবার ঘুম ভাঙার পরও?
মাতৃত্বে মেয়েদের কতোটাই না পরিবর্তন করিয়ে দেয়। বাবার আদরের দুলালী তখন নিজের অংশের কাছে দায়িত্বশীল মা। যেই মা হাজারও কষ্ট বুকে চেপে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চায়। তাতে বাবার আদরের অবুঝ প্রিন্সেস হয়ে থাকার সময় কোথায়?
নীলা ঘুমন্ত চোখেই মেয়ের মাথায় আলতো করে ঠোঁটযুগল ছুঁয়ে দিলো। হঠাৎ সামনে চোখ পরতেই সাদিদকে এমন করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ভরকে গেল। কিন্তু পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে তার উদ্দেশ্য প্রশ্ন করলো,

— ‘ কখন উঠেছেন? ‘

সাদিদ নিঃশব্দে মৃদু হাসলো। অতঃপর বাম হাতের উপর নিজের শরীরের ভর দিয়ে নীলার দিকে এগিয়ে আসলো। মুখটা নামিয়ে আলতো করে প্রিয়তমার কপালের মাঝখানে দীর্ঘ সময় নিয়ে ভালোবাসার একটা দীর্ঘ চুম্বন দিলো। ডানহাতে তুলতুলে গরম গালটাতে হাত বুলিয়ে নম্রস্বরে বলল,

— ‘ যখন আমার রাজ্যের রাণী আর রাজকন্যা নিজেদের আদুরে ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে ব্যস্ত ছিল। ‘

নীলা মাথা নুইয়ে লাজুক হাসলো। অতঃপর সাদিদের চোখের দিকে মোহাচ্ছন্নের মতো তাকিয়ে থেকেই মেয়ের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। সাদিদ তার চোখে চোখ রেখেই কয়েকটা মুহূর্ত নীরবতায় অতিবাহিত করলো। অতঃপর মৃদু হেসে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। দুষ্টুস্বরে নীলার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফের বলল,

— ‘ আদর আদর পায়? ‘

নীলার যে কি হলো, মুহূর্তেই গালগুলো রক্ত জবার ন্যায় টুকটুকে লালচে হলো। আলতো করে ধাক্কা দিয়ে সাদিদকে সরিয়ে নিচুস্বরে বিড়বিড় করলো,

— ‘ অসভ্য একটা। ‘

নীলার মুখে এতোবার এই শব্দটা শুনেছে যে সাদিদের এটা মুখস্ত প্রায়। তাইতো নিঃশব্দের তার ঠোঁট নাড়ানো দেখেই সে বুঝে ফেলল।

— ‘ এতো ভদ্রভাবে থেকেও এমন অপবাদ! ‘
— ‘ আপনি ভদ্র? ‘
— ‘ নতুবা কি? বলো, আমি কি অভদ্রের কাজ করেছি? লাস্ট কবে ইন্টিমেট হয়েছি মনে আছে তোমার? সেই শ্রীমঙ্গলের রাতের পরতো ভালোভাবে কাছেই আসা হলো না। শুধু মাঝেমধ্যে যে কয়েকটা শুকনো চুমু-টুমু। যেগুলো তো আজকালের নিব্বা-নিব্বিরা অহরহ খায়। আর কি করেছি আমি বলো? ‘

নীলার কান দিয়ে যেন গরম ধোয়া বের হচ্ছে। লজ্জায় তার পায়ের পাতা পর্যন্ত কাঁপছে আর সেখানে এই নির্লজ্জ ছেলে বলে কি-না সে কি করেছে? তাকে কেন এই অসভ্যের ট্যাগ দেওয়া হলো?
এটাও কি মানা যায়? অসভ্যের ক্লাসের হ্যাডমাস্টার এসে যদি জিজ্ঞেস করে তাকে কিসের যোগ্যতায় এই উচ্চতর পদবি দেওয়া হলো এটার কি কোনো উত্তর আছে?
নীলাকে এমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাদিদ আবারও বলে উঠল,

— ‘ বলো? কি করেছি আমি? ‘
— ‘ দোহাই লাগি চুপ যান। আপনি ফেরেস্তা, নিষ্পাপ আপনি। হয়েছে? এবার শান্তি? ‘
— ‘ মন থেকে বলছো? ‘
— ‘ আমার একটাই মন। ‘
— ‘ না তারপরও বলা তো যায় না! ‘

নীলা চোখ বাঁকিয়ে তাকাতেই সাদিদ এতক্ষণের হাসি আর ধরে রাখতে পারলো না। শব্দ করেই হেসে ফেলল। যার ধরুন মেয়ে মায়ের বুক থেকে মুখ তুলে শব্দের উৎসের দিকে তাকালো। বাবার মুখটা দেখতেই তার ছোট্ট মুখে মৃদু মিষ্টি হাসির রেখা প্রকাশ পেল।
সাদিদ আদরের টুকরোটার একদম কাছে গেল। মাথা নিচু করে নরম কাপড় দিয়ে এঁটো মুখটা মুছিয়ে দিলো। অতঃপর ছোট্ট কপালটাতে আদুরে চুমু খেল। মেয়েকে বুকের সাথে আগলে নিয়ে নীলার দিকে তাকালো। প্রশান্তির গরম নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

— ‘ পাখি, আমি কিভাবে তোমার এই ঋণ শোধ করবো? ‘
— ‘ ইশ আপনিও না! এসব কেউ বলে? ‘
— ‘ না বলুক। আমি বলবো। হাজার বার একই কথার পূনরাবৃত্তি করবো। তবুও যদি ঋণের ভার একটু হালকা হয়। ‘

নীলা আর প্রতিউত্তর করলো না। কেবল আলতো হাতে সাদিদের কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিলো। দুইজনেই আবারও নিঃশব্দের চোখাচোখির প্রেমে মজলো। মা-বাবা নিজেদের প্রেমে এতোই বিভোর যে পিচ্চি মেয়ে যে জাগ্রত সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। দুইজনের ধ্যান তখন ভাঙলো যখন মেয়ে নিচুগলায় হাঁচি দিলো।
সাদিদ-নীলা দুইজনই মেয়ের মুখের দিকে তাকালো। ছোট্ট হাতগুলো দিয়ে সে তখন নাকের উপর থেকে বাবার উন্মুক্ত বুকের বক্ষরোম সরাতে ব্যস্ত। নীলা তা দেখে ফিক করে হেসে ফেলল। সাদিদ চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সে দ্রুত ঠোঁটের উপর আঙুল চেপে ধরল।
সাদিদ মেয়েকে দুইজনের মাঝখানে আস্তে করে শুইয়ে দিলো।
মেয়ের ছোট্ট শরীরটাকে আলতো করে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

— ‘ আমার আম্মাটা। ‘

অতঃপর বাপ-মেয়ে নিজেদের খুনসুটিতে লেগে গেল। নীলা একদৃষ্টিতে এই মধুময় দৃশ্য দেখলো। তাদের আপাতত কারো দিকে খেয়াল নেই। নীলা যেন নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির ভূমিকা পালন করছে।
কিন্তু তাতে নীলার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই। বরং সে তৃপ্ত। ভীষণ আনন্দিত।

— ‘ ঠক ঠক ঠক। ‘

দরজার মৃদু আওয়াজে সাদিদ-নীলা দুইজনই শব্দের উৎসের দিকে তাকালো। নীলা মাথা উঁচিয়ে দেয়াল ঘড়ি দেখলো। কেবলমাত্র সকাল হয়েছে। এতো সকালে তাদের দরজায় কে?
পারতপক্ষে এই বাড়ির কেউই খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া এতো সকালে কারো দরজায় আসে না। এতদিনে নীলা তাদের এই অভ্যাসটার সাথে ভালোভাবেই পরিচিত। তার উপর আবার ছোট্ট পিচ্চিটা এখন আছে। ডাকার তো আরও চান্স নেই। তাহলে?
কিন্তু সাদিদ এতোসব নিয়ে ভাবলো না। কেবল শব্দের উৎসটার দিকে মনোযোগী হলো। অতঃপর ধীরে ধীরে তার ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হলো। সে মেয়ের গালে আলতো করে আঙুল বুলিয়ে হাসি চেপে বললো,

— ‘ যাও। গিয়ে দরজা খুলো। মেয়ে জামাই এসেছে তো। ‘
— ‘ মানে? ‘
— ‘ আরে শাদ এসেছে। ‘

নীলা চোখ বাঁকিয়ে তার দিকে তাকালো। মেয়ের জন্মের পর থেকেই সাদিদকে এই বিষয় নিয়ে নীরব থাকতে দেখেছে। নীলা বরাবরই এটা নোটিশ করেছে। কিন্তু কেন?
সেই কারণটা আজকেও জানা হলো না। কিন্তু সাদিদকে কোনোরকম আওয়াজ ছাড়াই দরজার পিছনের মানুষকে চিনে ফেলতে দেখে নিজের মধ্যেকার উৎকন্ঠাটা চেপে রাখতে পারলো না। খানিকটা বিষ্ময় নিয়েই বলল,

— ‘ কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝতে পারলেন? ‘

সাদিদ মৃদু হাসলো। অতঃপর রহস্য উদঘাটনে লাগলো,

— ‘ ভালোভাবে খেয়াল করো। শব্দের আঘাতটা দরজার একেবারে নিচের দিকে হচ্ছে। আর এতো নিচে সেই আঘাত করবে যার উচ্চতা কম। আর আমাদের বাড়িতে এমন উচ্চতার কে আছে? ‘

এবার নীলাও হেসে ফেলল।

— ‘ সত্যিই! আপনি পারেনও বটে। ‘

নীলা দরজা খুলতেই ঘুমঘুম চোখে শাদের চাপাস্বরের অভিযোগ,

— ‘ খালামণি এতো লেইট কেন? সেই কখন থেকে ডাকছি। ‘
— ‘ সরি বাবা। ‘

নীলা ডানকানের লতি ধরলো। শাদ আরেকবার হাত দিয়ে চোখ কচলে নীলার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। অর্থাৎ তার মন গলে গিয়েছে বোধহয়। কিন্তু পরমুহূর্তেই আবারও চাপাস্বরে বলে উঠল,

— ‘ বউ উঠেছে? ‘
— ‘ কে বউ? ‘

বলেই নীলার তৎক্ষনাৎ মনে পড়ল। তার পিচ্চি মেয়ে তো ইতিমধ্যেই কারো পাতানো বউ। নীলা মৃদু হাসল।

— ‘ হুম উঠেছে। ‘

শাদমান যেন খুব খুশি হলো। সে নিজেই নীলাকে সাইড কাটিয়ে ফাঁক দিয়ে চলে আসলো। নিজেই দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে গলা নামিয়ে বলল,

— ‘ মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসেছি। প্লিজ বলো না। ‘

নীলা দ্রুত হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ালো। হাসি পেটে চেপে রাখতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে শাদের সামনে হাসলে তার রেগে যাবার মারাত্মক সম্ভাবনা। তাই না হাসাই শ্রেয়। শাদ ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে সামনে এগিয়ে গেল। সাদিদ যে পাশে শুয়ে আছে তার অপরপাশের ফাঁকা জায়গা দিয়ে বিছানায় উঠলো। ছোট্ট মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। এবং কন্ঠে বিষয় মায়া নিয়ে সাদিদের থেকে পারমিশন নিলো,

— ‘ বউকে ধরি? ‘

একটুখানি পিচ্চি ছেলেই যেন ইতিমধ্যে ছোট্ট প্রাণটার উপর সাদিদের আধিপত্য বুঝে গিয়েছে। তাই সাদিদ হালকা হেসে উত্তর দিলো,

— ‘ হুম ধরো। ‘

শাদমান খুব খুশি মনে ছোট্ট নীয়ানার বামহাতটা আলতো করে নিজের মুঠিতে নিলো।

— ‘ একটু জড়িয়ে ধরি? ‘
— ‘ আচ্ছা। ‘

শাদ এবার পূর্বেকার চেয়ে দ্বিগুণ খুশি হলো। ছোট্ট নীয়ানাকে পারে না তার ছোট্ট বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে। অপরদিকে নীয়ানা ইতিমধ্যে লালচে ঠোঁটগুলো ফুলিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখগুলোও হালকা ঝাপসা। মানে যে কোনো মুহূর্তে নোনা জলের আনাগোনার তীব্র সম্ভাবনা।

— ‘ বউকে একটা চুমু খাই? ‘

শাদমান আবারও হাসিমুখে হ্যাঁবোধক উত্তরের অপেক্ষায় সাদিদের মুখপানে তাকিয়ে রয়েছে। আর মেয়েতো এখন যেন কেঁদেই ফেলবে।
সাদিদ পড়েছে মহা বিপদে। না এদিক যাবে না ওদিক?
নীলা পাশে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। সাদিদের চোখ তার উপর পরতেই সে চোখ রাঙানি দিলো। তাকে এমন বিপদের মধ্যে দেখে হাসা হচ্ছে? নীলা কোনোভাবে মুখ চেপে ধরল। এদের কান্ডে কোন দিন না জানি তার পেট ফেটে যায়!

— ‘ বাবা, চুমু না দিলে হয় না? ‘
— ‘ একটু চুমু খেলে কি হবে? ‘
— ‘ মানে ছোট্ট মানুষতো, দাঁত ব্রাশ করেনি। ‘
— ‘ তাহলে দাঁত ব্রাশ করিয়ে দাও। ‘

মানে শাদ তার বউকে চুমু খেয়েই ছাড়বে। সাদিদও নিরুপায়। একদিকে মেয়ে অপরদিকে ভাতিজা। মেয়ের কান্নার আগাম মুহূর্তের মুখের দিকে তাকিয়ে সাদিদ হঠাৎ একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। এতে মেয়ের মনও রক্ষা পাবে আর ভাতিজাও তাকে ভুল বুঝবে না।

— ‘ ছোট্ট মানুষের তো দাঁত থাকে না বাবা। ‘
— ‘ তাহলে তো আরও ভালো। এবার চুমু দিই? ‘
— ‘ তুমি বরং তাকেই জিজ্ঞেস করো যাকে চুমু খেতে চাও। ‘
— ‘ মানে চাচ্চু? ‘
— ‘ প্রিন্সেসকেই জিজ্ঞাসা করো। ‘
— ‘ বউতো কথা বলতে পারে না। ‘
— ‘ সেটাও ঠিক। তাহলে কথা বলা অবধি অপেক্ষা করলে কেমন হয়? ‘
— ‘ সেটাতো অনেক দূর। আমি এতদিন অপেক্ষা করতে পারবো না। এখনই চুমু খাবো। ‘

বলতে দেরি নেই আর তার চুমু খেতে দেরি নেই। সাদিদ নীলা দুইজনই স্তব্ধ। এই পিচ্চিগুলোর ব্রেইন তো দেখা যাচ্ছে সুপারফাস্ট!
শাদের চোখে-মুখে বিজয়ের হাসি। ছোট্ট নীয়ানা ফোলে উঠা ঠোঁট আরও ফুলিয়ে দিলো। পাতলা ঠোঁটগুলো তিরতির করে কাঁপছে।
শাদ এতক্ষণ হাসিমুখে থাকলেও নীয়ানার মুখ এমন অন্ধকার করে রাখতে দেখে তার হাসিমুখটা নিমিষেই চুপসে গেল। এবং ধীরে ধীরে তাতে বিরক্তের স্পষ্ট আভাস ফুটে উঠল। ছোট্ট শাদ এটা বুঝে উঠতে পারে না তার আদরে এই পিচ্চির সমস্যা কোথায়? এমনিতে তো বেশ ভালোই হাসিখুশি থাকে। কেবলমাত্র সে কাছে আসলেই তার যত মারাত্মক মারাত্মক পঁচা সমস্যা দেখা যায়!

— ‘ চাচ্চু তোমার মেয়ে এমন কেন? ‘
— ‘ কেমন বাবা? ‘
— ‘ আমি কাছে আসলে এমন ঠোঁট ফুলিয়ে ফেলে! এসব কিন্তু আমার একেবারে পছন্দ নয়। আমি এসব টলারেট করবো না। খালামণি, মেয়েকে সময় থাকতে বুঝিয়ে দাও। ‘

ছোট্ট মুখটা রাগের তোপে হালকা লালচে হয়ে গিয়েছে। শাদমান রাগ নিয়েই বিছানা থেকে নেমে গেল। ছোট্ট পাগুলো দ্রুত চালিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। অতঃপর রাগ নিয়েই একবার পিছনে ফিরে তাকালো। লালচে মুখে বিড়বিড় করলো,

— ‘ পঁচা বউ একটা। একবার বিয়েটা হোক তারপর এসবের শোধ তুলবো। ‘

বলেই সে হনহনিয়ে রুম থেকে বের হলো। তার কথাটা অবশ্য উপস্থিত কারো কানেই পৌঁছাতে পারলো না। সাদিদ-নীলা কেবল তার গমপথের দিকে তাকিয়ে রইল। তারা হাসবে নাকি অন্যকিছু করবে সেটা বুঝে উঠতে পারলো না।
সাদিদ মুখ ঘুরিয়ে মেয়ের দিকে তাকালো। ছোট্ট মেয়েটা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তখন কেন বাবা থাকতে ঐ বেয়াদবটা তার সাথে অভ্যতামি করলো সে এটাই বুঝে উঠতে পারছে না। সে বাবার সাথে মিষ্টি অভিমান করেছে। যতক্ষণ অভিমানের সমতূল্য প্রাপ্তি ফিরে পাচ্ছে, ততক্ষণ এই অভিমান বহাল থাকবে।
সাদিদ মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল। একটুখানি ছেলেমেয়েগুলোর রাগ-অভিমান সাদিদের ঠিক হজম হচ্ছে না।

— ‘ মেয়ের বাবা, আপনার মেয়েকে কি বুঝাবো? ‘

নীলা সাদিদের উন্মুক্ত কাঁধে হাত রেখে প্রশ্নটা করল। তার মুখে চাপা হাসি। সাদিদ একপলক নীলার দিকে তাকালো। অতঃপর একসময় সেও মাথা চুলকে ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলল।

_______________

সকালের নাস্তায় সবাই একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসেছে। সবাই বলতে সবাই। তাদের মধ্যে পিচ্চি নীয়ানা পর্যন্ত বাদ যায়নি। সাদিদ নীলাকে মেয়েসহ উপরে রুমেই থাকতে বলেছিল। কিন্তু নীলা নিজেই জোর খাটিয়ে নিচে নেমে এলো। রুমে থাকতে আর কতো ভালো লাগে?
বেশি অনিচ্ছা প্রকাশ করাতে সাদিদ আর জোর করেনি। মেয়েকে নিজের কোলে নিয়ে নীলাকে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে নামতে সাহায্য করেছে। এখন সেই পিচ্চি মেয়েটা দাদির কোলে আদর খাচ্ছে। শায়লা রহমান নিজেই নাতনিকে তার কোলে নিয়েছেন। এবং নীলাকে সবার সাথে নাস্তা করতে বলেছেন। নীলা বারণ করতেই তাকে এক ধমক দিয়ে টেবিলে বসিয়েছে।
সবাই নাস্তা করছে আর নিজেদের মধ্যে টুকটাক গল্প করছে। কিন্তু একমাত্র শাদমানই খাবার প্লেটের থেকে সামনে বেশি তাকাচ্ছে। আর বারবারই বিড়বিড় করে কিসব বলে যাচ্ছে। নিধির আচমকা শাদের প্লেটে নজর পরতেই সে বলল,

— ‘ কি হয়েছে বাবা? কিছুই যে খাচ্ছো না? নাস্তা মজা হয়নি? ‘
— ‘ না মা, এমনি। এইতো খাচ্ছি। ‘

নিধি ছেলের ঘন চুলগুলোতে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো। শাদমান ব্রেডে ছোট্ট একটা কামড় দিয়ে আবারও পিচ্চি নীয়ানার দিকে তাকালো। সে অনবরত দাদির কোলে হাত নাড়িয়ে খেলে যাচ্ছে। মুখটাও হাসিখুশি।

— ‘ খুব খুশি না? বেয়াদব মেয়ে একটা। দাদুরা বলে স্বামী সোহাগি হও। এই মেয়েকে বলতে হবে স্বামী বেহাগি হও। বেয়াদব, প্রচন্ড বেয়াদব মেয়ে। ‘
— ‘ কি হলো দাদুভাই? আবারও কি চিন্তা করো? নাস্তা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো। ‘
— ‘ খাচ্ছি তো দাদু মণি। ‘

শাদ আবারও একপলক পিচ্চি নীয়ানার দিকে অগ্নিচক্ষু নিক্ষেপ করে খাবারের প্লেটে হাত দিলো। অপরদিকে পিচ্চি নীয়ানার নিঃশব্দের বাক্যগুলো যদি শাদমানের কান পর্যন্ত যেত তাহলে নিজের নামে এতো উল্টো পাল্টা ভদ্র ভাষায় গালাগাল শুনে মুহূর্তেই হয়তো তেড়েফুঁড়ে আসলো। কিন্তু ভাগ্যিস পিচ্চিদের মন্দ ভাষাগুলোও নিঃশব্দের হয়!

— ‘ মা, ওকে আমার কাছে দিন। আপনি এবার নাস্তাটা করে ফেলুন। ‘

শায়লা রহমান এবার আর দিরুক্তি করলো না। চুপচাপ নীয়ানাকে নীলার কাছে দিয়ে দিলো। সাদিদ উপরে যেতে নিতেই নীলা পিছনে ছুটলো।

— ‘ তুমি কোথায় যাও? ‘
— ‘ উপরে। ‘
— ‘ কোনো দরকার নেই। একটু পরেই আবার টইটই করে নিচে নামবে। তার থেকে বরং নিচেই থাকো। ‘
— ‘ এমন করেন কেন? প্লিজ যাই। ‘

সাদিদ ছোট্ট একটা হতাশাজনক শ্বাস ফেলল। মানুষকে কিভাবে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে হয় সেটা এই মা-মেয়ের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

— ‘ দুষ্টু মেয়ে একটা। ‘

নীলা মাথা নুইয়ে হেসে ফেলল। সাদিদ সাবধানে তাকে নিয়ে উপরে গেল। মেয়েটা তার কোলেই রইল।

— ‘ প্রিন্সেকে ধরো। আমি রেডি হবো। ‘

নীলা মেয়েকে কোলে নিতেই সাদিদ অফিসিয়াল জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে গেল। কিন্তু বেরিয়ে আসতেই সে কিছুটা অবাক হলো। মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে রেখে নীলা তার লেদার ব্যাগ, ওয়ালেট, ঘড়ি সব একে একে বিছানায় সাজিয়ে রেখেছে। পিচ্চি মেয়ে থাকাতে সাদিদ এতটা আশা করেনি। কিন্তু নীলা তার ভাবনার উর্ধ্বে গিয়ে এই ছোট্ট কেয়ারটুকু করাতেই ভীষণ ভালো লাগলো।
আসলে সবসময় বড় বড় জিনিস করে ভালোবাসা প্রকাশ করা লাগে না। ভালোবেসে ছোট্ট একটা কাজ করলেও সেটার মূল্য অনেক।
সাদিদ পুরোপুরি রেডি হয়ে ছোট্ট মেয়েটার দিকে এগিয়ে আসলো। নিচু হয়ে নরম গালগুলোতে স্নেহময় আদর দিলো।

— ‘ বাবাই যাই? ‘

নিমিষেই যেন মেয়ের মুখের মিষ্টি হাসিটা উধাও হয়ে গেল। সাদিদ অসহায় কন্ঠে নীলার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,

— ‘ এমন করলে যাব কিভাবে? ‘
— ‘ ইশ আপনিও না! পিচ্চি মেয়ে আপনার। তার কথায় উঠবেন বসবেন নাকি? ‘
— ‘ এই পাখি! আমার মেয়েকে ইনসাল্ট করছো নাকি? খবরদার তার বাবাই কিন্তু শুনছে। ‘

নীলার চক্ষু প্রায় অক্ষিকোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। সে এতক্ষণ কার হয়ে কথা বলছিল? একেই বোধহয় বলে ” যার জন্য চুরি করলাম সেই বলে চোর। ”
নীলা কিছুটা ক্ষেপা স্বরেই প্রতিউত্তর করলো,

— ‘ আপনাদের বাপ-মেয়ের এসব ফালতু ঝামেলার মধ্যে আমি নেই। খবরদার যদি আমাকেও এসবে টেনেছেন তো। ‘

নীলা হনহনিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মিনিট দুয়েক অযথাই জিনিসপত্র এখান থেকে সেখানে করলো। রাগ নয় বরং বাপ বেটিকে একটা উচিত শিক্ষা না দিলে আর হচ্ছে না। বারবার তারা নিজেদের সাথে মনকষাকষি করবে এবং নীলাকে আনবে সমস্যা সমাধানের জন্য। কিন্তু পরে হয় কি? তাদের মনকষাকষি সব মিটে গিয়ে নীলাকেই ভিলেন বানিয়ে ছেড়ে দেয়। এসব মানা যায়?

— ‘ আম্মা, তোমার রাগীলা আম্মা যে আরও রেগে গিয়েছে! কিভাবে রাগ কমাই? ‘

মেয়ে যেন বাবার প্রিয় শিষ্য। অভিমান ভুলে হালকা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।

— ‘ এই তো লক্ষ্মি আম্মা আমার। কি সুন্দর হেসেছে। আর মন খারাপ করে না। বাবা অফিসে গিয়ে সময় পেলেই কল করবো৷ ঠিক আছে প্রিন্সেস? ‘

এবার মেয়ে আর রেগে থাকলো না। পূর্বেকার মতোই তার ঠোঁটে হাসি লেগে রয়েছে। সাদিদ আবারও মেয়ের কপালে আদর দিয়ে উঠে দাড়ালো। মেয়ে খুশি এবার মেয়ের মাকে খুশি করার সময়।
ভাগ্যিস অফিসটা নিজেদের। নতুবা মা-মেয়ের পিছনে এমন করে পরে থাকার ফলস্বরূপ চাকরিটা অনায়াসেই সাদিদকে গুডবাই বলে দিতো।
সাদিদ আস্তে করে গিয়ে নীলার পিছনে দাড়ালো। নীলা টের পেলেও কোনোরকম পাত্তা দিলো না। সাদিদ কিছু মুহূর্ত নীরব থেকে পিছন থেকে নীলার পেট জড়িয়ে ধরলো।

— ‘ এখানে কি? সরুন বলছি। আপনাদের বাপ-মেয়ের এমন সময়ে-অসময়ের আধিখ্যেতায় আমি নেই। ‘
— ‘ তুমি তো বড্ড হিংসুটে বউ। আমার পিচ্চি মেয়েটাকে পর্যন্ত হিঃসে করা শুরু করে দিয়েছ! ‘

নীলা কটমট চাহনি নিয়ে সাদিদের মুখের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। কিন্তু সাদিদের মুখে দুষ্টু হাসি দেখতেই কনুই দিয়ে তার পেটে খোঁচা দিলো। সাদিদ নিচুস্বরে হেসে ফেলল।

— ‘ ইশশ বউটা দিনদিন মারকুটে হয়ে যাচ্ছে। ‘

নীলা আবারও ছুটার জন্য দাপাদাপি শুরু করতেই সাদিদ আলতো করে তার কানের নিচে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। ব্যস মেয়ে কুপোকাত। সাদিদ দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। পিছন ফিরে বিছানার দিকে তাকাতেই মেয়েকে হাত নাড়িয়ে খেলতে দেখলো। সুযোগ যেহেতু আছে তাই রিক্স একটা নেওয়াই যায়।
সাদিদ নীলার পাশ কাটিয়ে সামনে চলে আসলো। অতঃপর আলতো করে তাকে কোলে তুলে নিলো।

— ‘ আরে কি করেন? ‘

সাদিদ তার কথাকে পাত্তা দিলো না। তাদের রুমটা বেশ বড়। তাই মেয়ের দৃষ্টির বাহিরে নিয়ে নীলাকে কোল থেকে নামালো। কেবিনেটের পাশে নীলাকে ঠেস দিয়ে দাড় করাতেই তার আবারও ছটফট শুরু।

— ‘ আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না। এসবের মানে কি? ‘
— ‘ রাগ কমেছে? ‘
— ‘ রাগ কখন করলাম? ‘
— ‘ তারমানে বলছো রাগ নেই? ‘
— ‘ থাকলেও বা কি? ‘
— ‘ অনেককিছু। ‘
— ‘ শুনি কেমন কিছু? ‘
— ‘ এটাতো শুনানো যায় না। শুধু ফিল করা যায়। ‘
— ‘ মানে? ‘
— ‘ মানে হচ্ছে…

সাদিদ বাক্যটা সমাপ্ত করলো না। ছোট্ট করে নীলার ডান গালে চুমু খেল। অতঃপর অপর গালেও। নীলা ততক্ষণে তার কাজের ধরণে কথার সারমর্ম বুঝে নিয়েছে। তাই নরমস্বরে বলল,

— ‘ মেয়ে আছে। ‘
— ‘ তাইতো এখানে নিয়ে এলাম। এখন বলো না এখানেও মেয়ে দেখতে পাবে। যেটা অসম্ভব। ‘

নীলা লাজুক হাসলো। মেয়ের বাবাটা বড্ড অসভ্য!

— ‘ অফিসের জন্য লেইট হচ্ছে না? ‘
— ‘ হচ্ছে তো। তাই তুমি আর লেইট না করালেই হয়। ‘
— ‘ যান তো। সবসময় দুষ্টুমি। ‘
— ‘ বরকে এমন শুকনো মুখে অফিসে পাঠিয়ে দিবে? এতো নিষ্ঠুর তুমি! ‘

নীলা মেকি রাগ নিয়ে তাকালো। কিন্তু সেটাও ধরে রাখতে পারলো না। ফিক করে হেসে ফেলল। সাদিদ তার গালের পিছনে হাত গলিয়ে ঝুঁকে আসলো। আলতো করে কোমল ঠোঁটে নিজের পুরুষালী ঠোঁট চেপে ধরলো। বারকয়েক ছোট্ট ছোট্ট চুমু খেয়ে ছেড়ে দেবার সময় শব্দ করে একটা আদুরে চুমু খেল। অতঃপর ভেজা ঠোঁটে প্রিয়তমার কপালে আলতো করে ভালোবাসাময় স্পর্শ আঁকলো।
অফিস ব্যাগটা নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে দুষ্টু কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ চাইলে অনুভবের সাথে সাথে শব্দও শোনা যায়। ‘

সে বেড়িয়ে গেল। নীলা সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। অতঃপর সর্বদা তার গমনপথের দিকে তাকিয়ে যেই প্রার্থনাটা করে আজকেও করতে ভুললো না,

— ‘ হে করুণাময়, তাকে দেখো। সব বিপদ-আপদ থেকে তাকে রক্ষা করো। ‘

#চলবে…