#অবেলায়_ভালোবাসি
#মারিয়া_আক্তার
#পর্ব_১০
আহির দু’পা এগোয় তাহা’র দিকে। তাহা নিজের এটিটিউড বঝায় রেখেই দাঁড়িয়ে আছে। তাহা’কে ভ্রুঁ নাচিয়ে প্রশ্ন করে আহির।
“আমি এখানে একটু দরকারে এসেছিলাম। তুমি কেন এসেছিলে?”
“আমিও এখানে দরকারে এসেছি।”
“কি দরকার এখানে তোমার?”
“আশ্চর্যতো! আমি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি আপনার এখানে কি দরকার? তাহলে আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
খানিকটা রাগ দেখিয়েই বলে তাহা। আহির তাহা’র দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে বলে,
“স্যরি।”
অন্যদিকে তাকিয়ে তাহা মুখ টিপে হেসে ফেলে। ছেলেটাকে আচ্ছা জব্দ করা গেছে।
“আমি যাই এখন।”
তাহা চলে যেতে নিলে আহির তাহা’র পথ আটকে দাঁড়ায়। তাহা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় আহিরের দিকে।
“তোমাকে কিছু বলার ছিল তাহানিয়া।”
তাহা মাথা নাড়ায় বলার জন্য। আহির চুপ করে থাকে কিয়ৎক্ষণ।
“তোমাকে সেদিন এতকিছু বললাম তাও তুমি শুনলে না। আবারও চুরি করেছো। কোচিং সেন্টারের পেছনের বাগানের বরই গাছ থেকে তুমি বরই চুরি করেছো। তুমি কি জানো ওই গাছটা কার? ওই বাগানটা মোক্তার কাকার। ওনার গাছের প্রায় অর্ধেক বরই শেষ করে ফেলেছো। কেন করো এসব তুমি? উনি এবার খুব ক্ষেপে আছেন।”
তাহা ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায় আহিরের দিকে।
“আপনাকে কে বললো আমি বরই চুরি করেছি? দেখেছেন কি আপনি?”
“হুম। আমি নিজের চোখে দেখেছি। তুমি গাছে উঠেছো। আর তোমার ব্যাচের স্টুডেন্টরা নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা বরই কুড়িয়েছে।”
“তাহলে আপনিই মোক্তার কাকার কাছে বলে দিয়েছেন?”
“না। আমি কিছু বলি নি। উনি নিজেই তোমাকে সন্দেহ করেছেন। কারণ তুমি ছাড়া এই কাজ আর কেউ করতে পারবে না। আমি আবারও বলছি তাহা। তোমার বরই খাওয়ার ইচ্ছা হলে তুমি বাজার থেকে কিনে খাবে। এমনতো নয় তোমাদের টাকা নেই। অনেক টাকা আছে তোমাদের। তাও চুরি কেন করো তুমি? তোমাকে বুঝতে হবে তাহা, এসবে কিন্তু খুব অপমানিত হন তোমার মা। তোমার এসব কর্মে উনি যে কষ্ট পান সেটা তুমি কেন বুঝো না?”
তাহা নিরব থাকে। সত্যিই ওর জন্য ওর মায়ের অনেক অপমান সহ্য করতে হয়। সবাইতো মাকেই কথা শোনায়। এসব করা সত্যিই তাহা’র ঠিক হচ্ছে না। তাহা মনে মনে অনুশোচিত হলেও তা আহিরের সামনে প্রকাশ করতে নারাজ। না হলে সে আহিরের কাছে হেরে যাবে। যা তাহা চায় না।
“আমি এখন বাড়ি যাবো।”
“তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো তাহানিয়া? এমন করবে নাতো আর? বলো!”
“আপনাকে কেন বলবো?”
“তুমি কিছু বুঝতে চাও না কেন?”
“আমার কিছু বুঝার প্রয়োজন নেই। আপনার কাজে আপনি যান। আমার কাজে আমি গেলাম।”
এবার তাহা সত্যি সত্যি চলে গেল। সাইকেল চালিয়ে সাঁ করে চলে যায়। আহির ওই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে তাহা’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে চলে যায়।
_________
“তোর ভাই আমার প্রতি এত ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে কেন রে? প্রেমে পড়লো নাকি?”
আফিয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় তাহা’র দিকে। মেয়েটা তার সাথে নিজে সেধে সেধে কথা বলেতে এসেছে। আবার কি বললো? তার ভাই মেয়েটার প্রেমে পড়েছে। কি বলছে এসব তাহা? আফিয়ার ভাবনার মধ্যেই তাহা এসে আফিয়ার পাশে ধপ করে বসে পড়ে। আবারো অবাক হয় আফিয়া। যেই মেয়েটা এতদিন আফিয়াকে পাত্তা দিত না। সে নিজে এসে তার পাশে বসেছে।
“কিরে এমন আবুলের মত তাকিয়ে আছিস কেন? কি বলেছি শুনতে পাস নি?”
তাহা সম্ভিত ফিরে পেয়ে বলে,
“কি?”
তাহা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,
“তোর ভাইয়ের মধ্যে ইদানীং কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিস?”
আফিয়া মাথা নাড়ায়।
“হুম। সেগুলো তোর ব্যাপারে। আগেতো ভাইয়া তোকে সহ্যই করতে পারতো না। এখন দেখি তোর সাথে সেধে সেধে কথা বলতে যায়। তোর সম্পর্কে খারাপ কোনো মন্তব্য করে না। এসব কেন হচ্ছেরে?”
“আমিতো সেটাই জিজ্ঞেস করছি। তোর ভাই আবার আমার প্রেমে পড়লো নাতো?”
“হুর! ভাইয়া তোর প্রেমে পড়বে না। ভাইয়া যেমন মেয়ে পছন্দ করে তেমন মেয়ে তুই নোস। এমনিতেই হয়তো বা তোর প্রতি ভাইয়ার দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে।”
তাহা চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎই কি মনে করে আৎকে উঠে বলে,
“এই রেজাল্ট দিবে কাল। কালই কোচিংয়ে আমার শেষদিন। আম্মু আমার খবর করে ছাড়বে।”
“আরে তুই এসব নিয়ে কবে থেকে ভয় পাচ্ছিস? তোকে আজ অব্দি এসব নিয়ে ভয় পেতে দেখলাম না।”
আফিয়ার কথায় তাহা মুখটাকে দুঃখী দুঃখী করে।
“আর বলিস না দুঃখের কথা। আম্মু এবার খুব ক্ষেপেছে। সাথী লালবাতিরও প্রি-টেস্ট হয়েছে না। ও বলছে ওর পরীক্ষা নাকি ভালো হয়েছে। আমি জানি ভালো টালো হয় না সব চাপা। তবুও আম্মু বলেছে যদি ওর চেয়ে আমি কম নাম্বার আমি পাই তাহলে আমাকে নাকি বিয়ে দিয়ে দেবে।”
তাহার কথায় আফিয়া ফিক করে হেসে দেয়।
“তোকে বিয়ে দিয়ে দেবে? এটা কি সম্ভব? তুই যা ডেঞ্জারাস মেয়ে। আর তুই ওই লালবাতিকে নিয়ে টেনশন করছিস? মনে নেই ওর এসএসসি রেজাল্ট কি ছিল? মাইনাস পেয়েছে তাও টেনেটুনে। ওর সাথে তুই নিজের তুলনা করছিস? তোর দুর্বলতা শুধুমাত্র ইংরেজিটা নিয়ে আর ওতো সব বিষয়েই দুর্বল। তুই চিন্তা করিস না। দেখিস রেজাল্ট ভালোই হবে।”
আফিয়ার কথায় তাহা মুখে মুখে কিছু বলে না। মনে মনে খানিকটা আফসোস নিয়ে বলে,
“ভালো আর খারাপ? সব বিষয়ে ৮০+ পেলেও ইংরেজিতে ৩৩ পাবো না। এটা আমি সিউর। আর এক বিষয়ে ফেল করলেতো সব শেষ। কেন যে আমি ইংরেজিতে দুর্বল হলাম?”
“এই তাহা? কি ভাবছিসরে?”
লিসার কথায় তাহা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।
“কিছু না। এই আমি বাড়ি যাচ্ছি। কালকে রেজাল্ট দিলে আমায় ফোন করে জানিয়ে দিস।”
তাহা ব্যাগপত্র নিয়ে বের হতে নেয়। লিসা ওকে মাঝপথে আটকে দিয়ে বলে,
“কেন? তুই কালকে কলেজে যাবি না?”
তাহা বিরসমুখে বলে,
“নারে। নিজের শ্রাদ্ধের খবর নিজে গিয়ে নিয়ে আসবো নাকি? আর শোন, কোচিংয়ে হয়তো আজকেই আমায় শেষ দেখছিস। ভালো থাকিস সবাই। আচ্ছা আমি গেলাম। আমার জরুরি একটা কাজ আছে।”
লিসাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাহা বেরিয়ে যায়।
________
“বাহ! বেশ ভালোতো। নিজে থেকেই শ্বশুরবাড়িতে চলে আসলে?”
“তুই চাস এটা আমার শ্বশুরবাড়ি হোক?”
বেশ ভাব নিয়ে আরহামের উদ্দেশ্যে বলে তাহা।
“কেন চাইবো না? অবশ্যই চাই। এটা আমি সবসময়ই চাই।”
“কিন্তু তোর মত এমন কুলাঙ্গারকে আমার দেবর হিসেবে পছন্দ নয়।”
“দেবর মানে?”
“আমি যতদূর জানতাম, স্বামীর ছোটভাইকে দেবরই বলে।”
থুঁতনিতে হাত রেখে ভাবার অভিনয় করে বলে তাহা। আরহাম এতে বেশ ক্ষেপে যায়।
“বেশি চালাকি করতে যেও না তাহা। ইদানীং তোমাকে আর আহির ভাইকে একসাথে বেশি দেখা যাচ্ছে। তোমাদের মধ্যে যদি কোনো সম্পর্ক থাকে। তাহলে আমি কিন্তু সব ছারখার করে দেবো। আমায় তুমি চেনো না।”
“আহিরের সাথে আমাকে কেমন মানাবেরে?”
মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে ভ্রুঁ নাচিয়ে আরহামকে প্রশ্ন করে তাহা।
“এই তাহা! একদম না। তুমি শুধু আমার। এখানে আহির ভাইকে টেনে আনবে না। ও যদি আমাদের মধ্যে আসে তাহলে ভাইকে শত্রু বানাতে আমার বেশি সময় লাগবে না।”
“কিন্তু আমিতো ভাবছি তোর ভাইকে বিয়ে করবো।”
তাহা কথাটা শেষ করতে না করতেই আরহাম তাহা’কে টান মেরে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে। তাহা’র ডান হাতে চাপ দিয়ে রোষানল চোখে তাকিয়ে বলে,
“সেসব ভুলে যাও তাহা। তুমি শুধু আমার। তাই আমার ভাইকে বিয়ে করার কথা মাথাতেও এনো না।”
তাহা হাতটা মুচড়ে আরহামের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
“আমায় স্পর্শ করার মত ভুল দ্বিতীয়বার করবি না। প্রথমবার বলে ছেড়ে দিলাম।”
আরহাম আবার তাহা’র দিকে এগোতে নিলে তাহা পা দিয়ে লেংচি মেরে আরহামকে নিচে ফেলে দেয়। আর নিজের এটিটিউড বঝায় রেখে বলে,
“তোর জায়গাটা এখানে বুঝলি? এত ভালো একটা ফ্যামিলির ছেলে হয়ে তুই এত বখাটে কি করে হলি তা আমার বুঝে আসে না। এনিওয়ে, তুই বখাটে হোস আর যাই হোস তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। তবে বারবার আমার রাস্তায় এসে আমার পথ আটকাবার চেষ্টা করিস না। আমি দুর্বল নই। তাই আমার ওপর নিজের শক্তি প্রয়োগ করবি ভাবছিস? তাহলে তা ভুলে যা। কারণ এর পরের বার এমন হলে তোকে আমি আস্ত রাখবো না। আর এটা আমি মুখে নয় কাজে করে দেখাবো। নিজের জায়গাটা দেখে নিয়েছিস নিশ্চয়ই? নিজের জায়গার কথা সবসময় মাথায় রাখার চেষ্টা করবি। এতে তোরও মঙ্গল। তোর ফ্যামিলিরও মঙ্গল।”
তাহা একনাগাড়ে কথাগুলো বলে উল্টোদিকে ফিরে হাঁটা দেয়। দু’পা এগিয়ে পা থেমে যায়। দরজার সামনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আহির।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ
#অবেলায়_ভালোবাসি
#মারিয়া_আক্তার
#পর্ব_১১
মধ্যাহ্নকে বিদায় জানিয়ে অপরাহ্ন যখন অভ্যাগম। তখন তাহা কিছু দরকারে এসেছিল পাটওয়ারি বাড়িতে। মূলত আহিরের কাছে এসেছে সে। আহির এ সময় বাড়ি থাকবে কিনা তা নিয়ে অল্পবিস্তর দ্বিধা ছিল তাহা’র মধ্যে। তাও এসেছে। এখন আহিরদের বাড়ির সবাই ঘুমে। দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই ভাতঘুম দিয়েছে। তাহা’কে সদরদরজা খুলে দিয়েছে আফিয়া। আসার আগে একবার কল দিয়েছিল তাহা। এখানে এসে শুনতে পায় আহির বাড়িতেই আছে। নিচতলায় আফিয়ার কাছে বলে আহিরের রুমের দিকে অগ্রসর হয় তাহা। পথিমধ্যেই সাক্ষাৎ ঘটে আরহামের সঙ্গে। আর সেখানে তাহা আরহামকে যা বলেছে এবং আরহাম তাহাকে যা বলছে তা আহির আবার শুনে ফেলেনিতো? এরজন্য তাহা’র মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করছে। তাহা কাউকে পরোয়া করে না এটা ঠিক। তবে এখানকার ব্যাপারটা ভিন্ন। আরহামকে নাস্তানাবুদ করার জন্য তাহা আহিরকে বিয়ে করবে এমনটা বলেছে। এখন আহির এটা শুনে ফেললেতো সমস্যা।
“কি হলো? এমন হাম্বার মত তাকিয়ে আছেন কেন?”
তাহা’র কথা শুনে আহির নিজের মুখের অঙ্গভঙ্গি ঠিক করে ফেলে।
“এই মেয়ে? হাম্বা মানে কি?”
তাহা এবার বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়ায়। চশমাটাকে একহাতে চোখের সাথে একটু ঠেলে দিয়ে আহিরকে অবলোকন করে। তাহা’র দৃষ্টিতে আহির একটু বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
“আপনি যদি ছোট হতেন তাহলে আপনাকে ঢিয়া বলতাম। মানে বাছুর। কিন্তু আপনার মত বুড়ো লোককে বাছুর বলাটা যথাযথ হবে না। ২৭ বছর বয়সী লোক বাছুর হবে না, হাম্বাই হবে। মানে গরু। এবার নিশ্চয়ই ভালো করে বুঝতে পেরেছেন? আচ্ছা একটু ভিতরে যাওয়া যাবে? মানে আপনার রুমে?”
তাহা’র কথায় আহির ভ্যাবলাকান্তের মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। তাহা মিষ্টি করে হেসে রুমে ঢুকে পড়ে। আহিরও আরহামের দিকে একবার তাকিয়ে নিজেও রুমে প্রবেশ করে। আরহাম ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ায়। তাহা আর আহিরের যাওয়ার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে কোনো ছক কষছে সে।
____________
“আমার বাড়িতে হঠাৎ তাহানিয়া ফেরদৌসির আগমনের কারণ কি?”
তাহা আহিরের বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে তাহা’র নিজের বারান্দাটা দেখা যাচ্ছে। তাহা উঁকি দিয়ে একবার রাস্তায় চোখ বুলিয়ে নেয়।
“আপনার কাছে একটা দরকার ছিল।”
কিছুটা থেমে থেমে বলে তাহা। আহির সুক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকায় তাহার পানে। তার কাছে প্রয়োজন, তাও কিনা তাহা’র? ব্যাপারটা অদ্ভুত বটে।
“হুম বলো কি প্রয়োজন?”
তাহা মোবাইলটা বের করে আহিরকে কিছু দেখায়। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে রয় আহির। তাহা’র দেখানো ব্যাপারটা আহিরের ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না।
“এটা কি?”
সাবলিলভাবে প্রশ্ন করে আহির।
“এটা আবিদ হাসানের আইডি। প্রোফাইলতো দেখলেনি। উনি আপনার এফবি ফ্রেন্ড। আবার দেখলাম আপনি কমেন্টও করেছেন তার পোস্টে। কমেন্ট দেখে মনে হলো আপনারা বহু পরিচিত। ওনার ব্যাপারে কিছু জানানো যাবে?”
তাহা’র কথা শুনে আহির ভ্রুঁ কুঁচকায়। আবিদ হাসানকে নিয়ে হঠাৎ তাহা জিজ্ঞেস করছে কেন?
“হ্যাঁ। ওকে আমি চিনি। কিন্তু তুমি কি করে চেনো ওকে?”
“আমি আপনাকে বলবো এ ব্যাপারে। আগে আমায় একটু বলুন তো ওনার ব্যাপারে। ওনার পরিচয়।”
“আবিদ আমার তিন বছরের জুনিয়র। ভার্সিটি থাকাকালীন ওর সাথে পরিচয় হয়। তারপর থেকে আলাপ-শালাপ, ভালো করে পরিচয়। ছেলেটা কিন্তু খুব ভালো। আর আগে বলো, তুমি ওকে দিয়ে কি করবে? তাহলে ওর সম্পর্কে আমি সব বলতে পারি।”
তাহা একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়ে। বলতেই হবে এখন।
“সাথীর বয়ফ্রেন্ড উনি। তাই!”
“সাথী? মানে তোমার বোন?”
তাহা চোখ উল্টিয়ে তাকায় আহিরের দিকে।
“ওই মেয়ে আমার বোন নয় আহির পাটওয়ারি। আমার মায়ের সতীনের আগের পক্ষের মেয়ে। তাই নেক্সট টাইম ওকে আমার বোন বলে ভুল করবেন না।”
“আচ্ছা স্যরি। আমি এমনিই বলে ফেলেছিলাম। তো ওর বয়ফ্রেন্ড আবিদ? এখানে আবিদের সম্পর্কে তুমি জেনে কি করবে?”
“আপনি এসব জেনে কি করবেন? আপনাকে যা বললাম তা করেন না। ওনার সম্পর্কে বলুন না।”
“কেন? আমি করবো কেন? তুমিতো আমায় কিছু বললে না। তাহলে আমি বলব কেন? আমি পারবো না।”
“প্লিজ!”
খুব কিউট করে বলে তাহা। তাহা’কে ফেরানোর সাধ্য নেই আহিরের।
“আচ্ছা বলছি।”
তাহা উৎসুকদৃষ্টিতে তাকায় আহিরের দিকে। আহির একে একে আবিদের সম্পর্কে সব বলে। তাহা মনোযোগ সহকারে সব শুনে।
“আচ্ছা আমি ওনার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই। আপনি একটু ব্যবস্থা করে দিন না।”
আহির কিছুক্ষণ কি যেন ভাবে।
“আচ্ছা ওকে আমি বলবো যে এখানে যাতে আসে। তারপর তোমার কি পরিচয় দেবো? মানে কেন দেখা করতে চাইছো? সেটা আমি ওকে কি বলবো?”
তাহা ফট করে বলে উঠে,
“বলবেন আপনার একবোন ওনার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাইছে। সিম্পল।”
আহির কেন যেন বিস্ফোরিত চোখে তাকায় তাহা’র দিকে।
“আমার কোন জন্মের বোন তুমি? আজেবাজে কথা বলছো কেন?”
তাহা চোখ উল্টিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।
“আচ্ছা বোন বলতে হবে না। আপনি বলবেন ওনার সঙ্গে একজন একটু দেখা করতে চায়। তাই উনি যাতে এখানে আসেন। এটুকু বলতে পারবেন নিশ্চয়ই?”
তাহা’র কথায় আহির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।
“তোরা দু’জনে এখানে কি করছিস?”
অন্যকারো কন্ঠ শুনে আহির আর তাহা রুমের দিকে তাকায়। রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তামিম। তামিমকে দেখে তাহা’র চোখ চকচক করে ওঠে।
“আরে ব্রো! কই ছিলে তুমি এতদিন?”
বেশ উৎফুল্লতার সহিত বলে তাহা। তামিম মৃদু হেসে বলে,
“চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম বোন। একটু দরকার ছিল”
“তোমাকে একটু খুশি খুশি লাগছে ব্রো। কোনো খুশির খবর আছে কি?”
“ঠিক খুশির খবর নয়। তবে দো’আ করো যাতে খবরটা খুশির হয়।”
তাহা ভ্রুঁ উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি খবর?
“আমার চাকরিটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ৯৫%। ভাইভা আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। দো’আ করো বোন।”
তাহা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে বিপরীতে।
“আরে ব্রো! টেনশন করো না। তোমার চাকরি মনে করো হয়েই গেছে। এই তাহানিয়া ফেরদৌসি তোমার জন্য দো’আ করে দিল।”
নিজের স্টাইলে দাঁড়িয়ে বেশ ভাব নিয়ে বলে তাহা। তাহা’র ভাব দেখে আর কথা শুনে তামিমও তাল মিলিয়ে হেসে দেয়। আহির চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে আছে তাহা আর তামিমের দিকে। তাহা আহিরের দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তামিমের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
“ব্রো! ট্রিট দাও। তোমার জবের অগ্রীম ট্রিট।”
তাহা’র কথা শুনে তামিম ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়। তারপর তাহা’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“ওকে।”
তামিম এবার মুখটাকে তাহা’র কানের কাছে নিয়ে গিয়ে বলে,
“তুমি একা একা আহিরের সাথে এখানে মানে আহিরের রুমে কি করছো বোন?”
তাহাও তামিমের অনুরূপ মুখটা তামিমের কানের কাছে নিয়ে গিয়ে বলে,
“প্রেম করছি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে।”
তাহা’র কথা শুনার সঙ্গে সঙ্গে তামিমের কাঁশি উঠে যায়। তাহা তা দেখে মুখ টিপে হাসে। আহির এদের কার্যকলাপ দেখে সচেতনতার সাথে বলে,
“এই তোরা দু’জন কানে কানে কি বলছিস বলতো?”
“আপনার এসব না শুনলেও চলবে। এসব আমাদের ভাই-বোনের ব্যাপার। আচ্ছা একটা কথা বলি?”
আহির মাথা নাড়ায়। তাহা মাথা চুলকে বলে,
“ব্রো আর আপনিতো একব্যাচের স্টুডেন্ট। তাহলে ব্রো চাকরির জন্য দৌঁড়াচ্ছে আর আপনার এতে কোনো হেলদোল নেই কেন? কোচিং সেন্টারে পড়ে আছেন।”
“তোমাকে কে বলেছে হেলদোল নেই? কোচিং সেন্টারে কিছুদিনের জন্য গিয়েছি মাত্র। চাকরির জন্য আমিও ঘুরছি। চাকরি না হলে আমি কি করবো? আর চাকরি না পেলে কোনো বাপ মেয়ে দেবে? বউ পাওয়ার জন্য হলেও চাকরি লাগবে। তাই চাকরি আমার জন্য কতটা জরুরি সেটা তুমি জানোনা।”
তাহা মুখটাকে গোল আলু আকৃতির করে রেখেছে। এ কে? এ আসলে আহির? ছেলেটা নিজের মুখে বিয়ের কথা বলছে। লজ্জা শরম নেই নাকি?
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ