অবেলায় ভালোবাসি পর্ব-০৯

0
399

#অবেলায়_ভালোবাসি
#মারিয়া_আক্তার
#পর্ব_০৯

সূর্য ডুবে যাবে কিয়ৎক্ষণ বাদে। দখিনা বাতাস শরীরে মৃদু দোলা দিয়ে যাচ্ছে। তাহা ছাদের রেলিংয়ের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। পরীক্ষা শেষ হয়েছে কয়েকদিন হয়ে গেছে। রেজাল্ট দেবে আগামী পড়শু। আম্মু বলেছে এবার যদি রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে তাহা’র কপালে দুর্দশা আছে।

“তুমি এসব কি বলছো আদিব? আমি তোমার সাথে এখন ওখানে দেখা করতে পারবো না। তুমিতো জানো আমি চেয়ারম্যানের মেয়ে। তোমার সাথে দেখা করতে গেলে আমাকেতো সবাই-ই চিনে ফেলবে। তখন আবার আমার মুখ ছোট হবে সকলের সামনে। আর কিছুদিন অপেক্ষা করো আমি সত্যিই দেখা করবো তোমার সঙ্গে। তুমিতো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। দেখো একদিন সময় করে আমি দেখা করে নেবো তোমার সঙ্গে। বাবাকেও সব বলে দেবো আমাদের ব্যাপারে। বাবা নিশ্চয়ই আমাদের মেনে নেবেন। একমাত্র মেয়ের আবদার বাবা কখনো ফেলবেন না। সে সময়টার জন্যতো আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে।”

তাহা’র কানে কোথা থেকে যেন কথাটা ভেসে আসল। কন্ঠস্বরটা সাথীর। সাথী কার সাথে দেখা করার কথা বলছে? ওখানে বলতে কোথায় দেখা করার কথা বলছে? আবার একটা নাম বললো, আদিব। কে এই আদিব? আবার সাথী নিজেকে চেয়ারম্যানের মেয়েও বলছে। ওকে সবাই চেনে। দেখে ফেললে ওর বাবার মুখ ছোট হবে এসবের মানে কি? এলাকার সবাই-ই জানে চেয়ারম্যানের একটাই মেয়ে। সেটা তাহা। সাথী চেয়ারম্যানের মেয়ে নয় এটা সকলে জানে। তাহলে সাথীর এসব বলার কারণ কি? আর কথাই বা বলছে কার সাথে? তাহা ছাদের রেলিং থেকে লাফ দিয়ে ছাদে নেমে পড়ে। তাহা ছাদের যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে। সে জায়াগাটার নিচে দো’তলায় সাথীর রুম। সাথী নিশ্চয়ই বারান্দায় বসে কারো সাথে কথা বলছে। তা-ই তাহা শুনতে পেয়েছে। সাথী কার সাথে কথা বলছে ওর প্রেমিকের সঙ্গে নয়তো? কিন্তু এই প্রেমিকটা কে? সাথী তাহা’র ব্যাচেরই স্টুডেন্ট তবে ভিন্ন কলেজ। স্টুডেন্ট হিসেবে সাথী পুরো ডাব্বা। আচ্ছা এটা সাথীর কলেজের কেউ নয়তো? গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো কি? মনে মনে কথাগুলো ভাবে তাহা। সাথী ফোনের ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় বললো সে দেখা করতে পারবে না। কারণ তাকে কেউ দেখলে চিনে ফেলবে। সে চেয়ারম্যানের মেয়ে। এর মানে সাথী ছেলেটার কাছে নিজেকে চেয়ারম্যানের মেয়ে বলে দাবি করছে। কেন যেন তাহা’র মনে হচ্ছে এসবের মধ্যে অনেক বড় ঘাপলা আছে। সাথীকে বিশ্বাস নেই। ওর দ্বারা সবই সম্ভব। তাহা সন্দেহের আভাস পাচ্ছে। যদি এমন কিছু থেকে থাকে তাহলেতো তাহা’কে বিষয়টা ঘেঁটে দেখতে হবে। চেয়ারম্যান সাহেব সবসময় তাহা’কে বলবেন, সাথীর মত হওয়ার জন্য। এখন তাহাও একটু দেখবে সাথী আসলে কেমন? তারপর না হয় ইব্রাহীম খলিলকে জানানো যাবে। না, তাহা’কে কালই সাথীর কলেজে যেতে হবে।

_______

তাহা অনেকক্ষণ যাবৎ সাথীর কলেজের সামনে একটা আমগাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সে জানে না এখানে এসে আদিব নামক ছেলেটাকে পাবে কিনা? কিন্তু সে আশা ছাড়ছে না। তাহা’র কেন যেন মনে হচ্ছে আদিব নামক ছেলেটা এখানকার হবে। তবে তাহা শতভাগ নিশ্চিত নয় এতে। তবুও সন্দেহ দূর করার জন্য আদিব নামক ছেলেটাকে তার প্রয়োজন। আজ সাথী কলেজ আসেনি। তাই সে সুযোগে আজই এসেছে তাহা।

“এই মেয়েটা কেরে?”

পাশ থেকে কেউ বলে উঠে। তাহা পাশে তাকিয়ে দেখে দু’টো ছেলে মাঠের পাশটা দিয়ে যাচ্ছে। আর একজন অন্যজনকে তাহা’কে উদ্দেশ্য করে বলে। তাহা ছট করে ছেলেদু’টোর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আকস্মিক তাহা এভাবে সামনে যাওয়ায় ছেলে দু’টো হকচকিয়ে যায়। তাহা মুচকি হেসে তাকায়। তাহা’র মুচকি হাসি দেখলে সবাই-ই মুগ্ধ হতে বাধ্য। ছেলেদু’টোও ব্যতিক্রম নয়। হা করে তাকিয়ে থাকে তাহা’র দিকে।

“হ্যালো! আমি তাহানিয়া ফেরদৌসি। তোমরা?”

ছেলেদু’টো আমতাআমতা করে নিজেদের নাম বলে।

“আচ্ছা তোমরা সেকেন্ড ইয়ারের সাথীকে চেনো? কমার্সের?”

ছেলেদু’টো একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বলে,

“সাথী? চেয়ারম্যানের মেয়ের কথা বলতেছো?”

তাহা ভ্রুঁ বাঁকিয়ে তাকায়। চেয়ারম্যানের মেয়ে? মেয়েটাকি সবার কাছেই নিজেকে চেয়ারম্যানের মেয়ে বলে পরিচয় দিচ্ছে? বাহ! বেশ ভালোতো।

“হুম। আমি তার কথাই বলছি। তোমরা চেনো ওকে?”

তাহা’র কথার প্রতিউত্তরে একটা ছেলে মাথা নাড়িয়ে বলে,

“হুম। চিনিতো। ও আমাদের ক্লাসমেট। তুমি ওর খোঁজ করছো কেন? আর তুমি কিইবা হও ওর?”

তাহা মেকি হেসে বলে,

“আমি সাথীর আত্মীয়। আসলে আমার একটু দরকার ছিল। আচ্ছা তোমরা আদিবকে চেনো? সাথীর বয়ফ্রেন্ড?”

“ওহ। আদিব ভাই? উনিতো আমাদের এখানকার সাবেক স্টুডেন্ট। তুমি ওনাকে কি করে চেনো?”

“আমি চিনি কিভাবে সেসব না হয় নাই বা বলি। আচ্ছা ওনার সাথে সাথীর যে সম্পর্ক আছে সেটা তোমরা কি করে জানো?”

“আরে এটাতো সবাই জানে। সাথীর সাথে আদিব ভাইয়ার অনেকদিনের সম্পর্ক। আদিব ভাইয়া মাঝেমাঝে এখানে আসেন সাথীর সাথে দেখা করতে।

তাহা মুচকি হাসে বিপরীতে।

“আচ্ছা আদিব ভাইয়ার কোনো ফটো আছে তোমাদের কাছে?”

“কেন?”

একটা ছেলে ভ্রুঁ কুঁচকে প্রশ্ন করে তাহা’কে। তাহা আমতাআমতা করে বলে,

“এমনিই। থাকলে আমাকে একটু দেখাবে?”

ছেলেটা দাঁড়াও বলে মোবাইলটা বের করে তাহা’কে একটা ফটো দেখায়। ছিমছাম গড়নের শ্যাম বর্ণের একটা ছেলে। এটা এফবি আইডি থেকে দেখিয়েছে। তাহা মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভালো করে ফটোটা দেখে আইডির নামটা দেখে নেয়। ‘Md. Adib Hasan’ নামে একটা আইডি। তাহা মেকি হেসে ছেলেগুলোকে বলে,

“আমি আসলে সাথীকে একটু সারপ্রাইজ দেবো ভেবেছিলাম। তাই তোমাদের কাছে সাহায্য চাইলাম। ওর বফকে দেখার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন। ও দেখাচ্ছিলই না। তাই ওর কলেজে আসলাম। এই শোনো তোমরা কিন্তু এসব সাথীকে আগবাড়িয়ে বলতে যেও না। আমিই ওকে এসব বলবো।”

“আরে তুমিতো দেখছি জানোই না সাথীর একট বফ নয়। সাথীর সম্পর্ক কিন্তু আরো অনেকগুলো ছেলের সাথে আছে। তুমি জানো না এসব?”

তাহা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। তাহা’র কপালে তিনটে ভাঁজ পড়ে। অনেকগুলো সম্পর্ক মানে?

“এসব আদিব জানেন না?”

“আরে না। এসব উনি কি করে জানবেন? ওনাকে এসব বললে কি আর সম্পর্ক থাকবে নাকি?”

“তাহলে তোমরা এসব কিভাবে জানো?”

“আরে, বললাম না ও আমাদের ক্লাসমেট? এসব ক্লাসের সবাই-ই জানে। শুধু ওর বফগুলো ছাড়া।”

তাহা কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু ভাবে। তারপর মৃদু হেসে বলে,

“আচ্ছা ছাড়ো সেসব। আমি এখন যাই। আমি সাথীর সাথে এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলবো। আর তোমরা কিন্তু এসব সাথীকে একদম বলবে না। মনে থাকবে?”

ছেলেগুলো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়। তারপর ছেলেগুলোর থেকে বিদায় নিয়ে ঝটপট ওখান থেকে অন্যত্র যায় তাহা। অনেককিছুই জানলো তাহা। সাথী তাহলে প্লে গার্ল। অনেকগুলো ছেলের সাথে ওর সম্পর্ক? এটা কি চেয়ারম্যান ইব্রাহীম খলিল জানেন? কথাটা ভেবে তাহা বিটকেলি হাসি দেয়। তাহা হাসতে হাসতে সামনে এগোয়। সামনে তাকিয়ে তাহা থমকে যায়। কারণ তার সামনে আহির দাঁড়িয়ে। সে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাহা’র দিকে।

“তুমি এখানে কেন?”

তাহা মেকি হাসে আহিরের কথা শুনে। সে এখানে কেন এসেছিল তা কি বলবে এখন আহিরকে?

“আমি, আমি এমনিই এসেছি। আপনি কেন এখানে?”

তাহা প্রথমে আমতাআমতা করে বললেও শেষে ফট করে বলে ফেলে। আহির ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায় তাহা’র দিকে।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ