#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ০৬
#Arshi_Ayat
মোটামুটি আধঘন্টা তিহানের বয়ান চললো।তনয় আর নিশাত চুপচাপ বয়ান হজম করলো।বয়ান দেয়া শেষে তিহান নিজের রুমে চলে গেলো।তিহান যেতেই তনয় বলল”তোর জন্য আমিও ফ্রিতে বকা খেলাম”
“আরে একটু বকা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।আর তোর ভাইতো এমনেই শয়তান এটা তুই জানিস।শুধু শুধুই বকা দেয়।”
“তোর গান শুনেই বকা দিছে।তা নাহলে এমনিতে বকা দেয় না ভাইয়া।”
“তোমার ভাইয়া মনে মনে হয় সাধু পুরুষ।ও হলো হাড়ে হাড়ে বদ।
ওদের কথার মাঝখানেই তিতির খান এসে বলল”দুজনে খেতে আয়।খাওয়া দাওয়া করে এসে আবার পড়িস।”
তিতির খানের কথায় তনয় আর নিশাত খেতে গেলো।তিহানও আসলো।খেতে খেতে তিহান বলল”মা কাল রিয়াদের গায়ে হলুদ।সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে।যেতে হবে।”
“আচ্ছা যাবো।এবার তুইও একটু বিয়ে শাদী করে নে।”
“মা আমি বিয়ের জন্য এখনো প্রস্তুত না।সময় লাগবে আমার।”
এবার মাঝখান দিয়ে নিশাত বলল”খালামনি তোমার ছেলে বিয়ে করতে চাইছে না কেনো জানো?”
নিশাতের কথায় তনয় আর তিহান ভ্রু কুচকে তাকালো।আর তিতির খান বলল”কেনো রে?”
“তিহান ভাইয়া একটা মেয়েকে পছন্দ করে।”
নিশাতের কথা শুনে তিহান কাশি উঠে গেছে।ও তাড়াতাড়ি করে পানি খেয়ে বলল”তোরে কে বলছে।যত্তসব আজাইরা কথা।”
“কি রে তিহান কে ওই মেয়ে?” তিতির খান তিহানকে জিগ্যেস করলেন।
“মা তুমিও ওর কথা বিশ্বাস করলে?ও মিথ্যে বলছে।আমার কারো সাথেই রিলেশন নাই।”
খাওয়া শেষ হতেই তিহান নিজের ঘরে চলে গেলো।আর নিশাত তিতির খানের ঘরে গিয়ে তার পাশে বসে বলল”খালামনি তোমাকে একটা বুদ্ধি দেই।”
“কি বুদ্ধি?”
“তিহান ভাইয়াকে বিয়ে করানোর।”
“আচ্ছা বল।”
“কালতো গায়ে হলুদে অনেক মেয়েই আসবে সেখান থেকে কাউকে পছন্দ হয় কি না দেখো।”
“হুম কথাটা তুই মন্দ বলিস নি।” তিতির খান খানিকটা ভেবে উত্তর দিলো।
তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে আসতেই দেখলো নিত্য কল দিয়েছে।নিশাত ফোন রিসিভ করতেই নিত্য কান্না করতে করতে বলল”দোস্ত ব্রেকাপ হইছে।”
“তো এই জন্য কান্না করা লাগবে নাকি?শোন তোর জন্য একটা গান ডেডিকেটেড করি।”
“তুই মজা নিস না নিশু।”
“আরে আমি মজা কই নিতাছি।আমি তোরে গান শুনাই দাড়া।”
এই বলে নিশাত তার স্পেশাল গান শুরু করলো
“ইস মে তেরা ঘাটা,
সামনে আসলে দিমু ঝাটা পেটা।
জাদা পেয়ার হো জাতা,
তো পিটকে শাদী কার লেতা।”🐸
নিশাতের গান শুনে নিত্য হাসতে হাসতে বসে পড়লো।অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল” বইন তোর গান গুলি শুনলে হাসতে হাসতে আমি শেষ।বাহ!তোকে অস্কার দেওয়া উচিত।”
নিশাতও হেসে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না।কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করতেই ঘুমে তলিয়ে গেলো।
★
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই তিতির খান বলল”যা তো তিহানকে একটু ডেকে দে।এখনো বোধহয় ঘুমাচ্ছে।”
“আচ্ছা যাচ্ছি কিন্তু তনয় কই?”
“তনয় বাইরে গেছে।একটু পরই আসবে।তুই আর তিহান আয় নাস্তা করে নে।”
“আচ্ছা আসছি।”
বলেই নিশাত তিহানের রুমে গিয়ে দেখলো ও এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে।নিজে কোথায়?পা কোথায়,মাথা কোথায় খেয়াল নেই।নিশাত এসে ওকে ডাকতে যাবে হঠাৎ খেয়াক করলো।একটা ছবিকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে হাত দিয়ে।কার ছবি এটা?নিশাত ছবিটা দেখতে পাচ্ছে না।আস্তে করে ছবিটাতে হাত দিতেই তিহান জেগে গেলো।তারপর ছবিটাকে আড়াল করে বলল”ওহ!তুই!মা ডেকেছে?”তিহান অপ্রস্তুত গলায় বলল।
“হুম খালামনি ডেকেছে।নাস্তা খেতে।”
“আচ্ছা তুই যা।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
“আচ্ছা কিন্তু তোমার হাতে ওই ছবিটা কার?”
“কারো না।তুই এখন যা।” তিহান বিরক্তি নিয়ে বলল।
“না যাবো না।তুমি দেখাও ছবিটা কার।” নিশাত জোরাজোরি শুরু করলো।
“নিশাত!!!!” তিহান প্রচন্ড জোরে ধমক দিলো।তিহানের ধমকে নিশাত কেঁপে উঠলো।তারপর মন খারাপ করে চলে গেলো।তিহান তড়িঘড়ি করে ছবিটা লুকিয়ে ফেললো।তিহানের ধমকের আওয়াজ শুনে তিতির খান ওর রুমের যেতেই দেখলো নিশাত মন খারাপ করে বেরিয়ে আসছে।নিশাতকে এভাবে আসতে দেখে তিতির খান বিচলিত হয়ে বললেন”কি রে কি হয়েছে?”
তিতির খানকে বুঝতে না দিয়ে বলল”আরে খালামনি আমি একটু দুষ্টুমি করেছিলাম তাই তিহান ভাইয়া বকা দিয়েছে।”
“ও,,এইজন্য এতো জোরে বকবে!দাড়া নিচে আসুক ওর শায়েস্তা করছি।”
নিশাত আর তিতির খান নিচে গিয়ে নাস্তার টেবিলে বসলো।একটু পর তিহান আসতেই তিতির খান বলল”একটু দুষ্টামি করেছে বলে এতো জোরে বকা দিলি কেনো তুই?”
তিতির খানের কথা শুনে তিহান নিশাতের দিকে চাইলো।নিশাত ওর দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে চেয়ে রইলো।তিহান বুঝতে পারলো যে কষ্ট পেয়েছে।তাই খুব আদুরে ভঙ্গিতে বলল”সরি নিশু।আর হবে না।”
নিশাত হাসলো।নিশাত এমনই রাগ করে থাকতেই পারে না।ওরা তিনজন নাস্তা করে উঠতেই তনয় চলে আসলো।তিহান নাস্তা করে বেরিয়ে গেলো আর তিতির খান কিচেনে গেলো।তনয় বাসায় এসে মন খারাপ করে সোফায় বসে রইলো।নিশাত বিষয়টা খেয়াল করে ওর পাশে গিয়ে বসে বলল”কি রে তনয়।কি হইছে তোর?এমন মন খারাপ করে বসে আছিস কেনো?”
“কিছু না এমনিতেই।”
“তুই আমাকে বলতে চাইছিস না তাই তো?”
“আরে এমন না।আমার ক্রাশের বিয়ে ঠিক হইছে এইজন্য মন খারাপ।”
তনয়ের কথা শুনে নিশাত হাসতে হাসতে বলল”তাহলে একটা মদের বোতল নিয়ে তোর ক্রাশের বাড়ির সামনে বসে
“ক্রাশ যখন জামাই লইয়া,আমার চোখের সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাইট্টা যায়,ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়।এই গানটা গাইবি।”
নিশাতের মজা নেওয়া দেখে তনয় ওর দিকে রেগে তাকালো।নিশাত নিজের আঙ্গুল দিয়ে ঠোটে ঠেকিয়ে চুপ হয়ে গেলো।তারপর দুইমিনিট পর আবার বলল”আচ্ছা বাদ দে।একটা ক্রাশ যাবে তো আরেকটা ক্রাশ আসবে।”
তখন এক্স ক্রাশকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলবি
“চলে গেছো তাতে কি,
নতুন একটা পেয়েছি,
তোমার থেকে আরো সুন্দরী।🤣”
তনয় এবার আর কিচ্ছু না বলে উঠে চলে গেলো।ও জানে নিশাত কিছুতেই মজা নেওয়া বন্ধ করবে না।তাই অগত্যা নিজেই উঠে গেলো।
আর নিশাত দাত কেলিয়ে হাসতে লাগলো।নিশাতের এই গুণটা খুব ভালো সে একটা বিষয়ের প্রচুর মজা নিতে পারে।তনয়ের এই বিষয়টা নিয়ে ও আবার মজা করবে।
চলবে..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।♥️)