#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ০৯
#Arshi_Ayat
বাসায় পৌঁছে যে যার মতো ঘুমাতে গেলো।নিশাতও এসে ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়লো।নিশাত শোয়ার সাথে সাথেই ওর ফোনে কল এলো।ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ওর মা বলল”কি রে নিশু কেমন আছিস মা?”
“এইতো আম্মু ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো?”
“আমরা ভালো আছি।তুই কি করছিস?”
“কিছু না ঘুমাবো এখন।”
“ও আমরাও।শোন একটা কথা বলতে ফোন দিয়েছি তোকে।”
“কি কথা?”
“একটা ছেলে এসেছে প্রস্তাব নিয়ে।ভালো ঘরের ছেলে।তোকে দেখতে চাইছে।তুই কি বলিস?”
নিশাত কিছু একটা ভেবে বলল”না মা আপাতত বাদ দাও এসব।আমি আসি তারপর দেখা যাবে।”
“আচ্ছা ঠিকাছে।আমি ওদের না করে দিচ্ছি।”
“আচ্ছা মা রাখছি।”
নিশাত ফোনটা রেখে শুশে চোখ বন্ধ করে রইলো।ঘুম আসছে না দেখে নিজের ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করতে লাগলো।নিশাত যখন ছোট ছিলো তখন অনেক ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মেয়ে ছিলো।কথা বলতো না কারো সাথে মিশতো না।নিজের মতো খেলতো।কেউ ওর সাথে কথা বলতে আসলে কান্না করতো।আজকের নিশাত আর ছোটবেলার নিশাতের মধ্যে অনেক ফারাক।ছোটবেলার নিশাত ছিলো খুবই শান্ত একটা মেয়ে কিন্তু এখন অনেক চঞ্চল একটা মেয়ে।সবই হয়েছে তিহানের জন্য।ছোটবেলা থেকেই নিশাতের সঙ্গ দিতো।প্রথম প্রথম নিশাত কথা বলতো না পরে তিহানের অনেক চেষ্টার ফলে একটু একটু কথা বলতো ওর সাথে।এরপর আস্তে আস্তে ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়।এবং একটা সময় তিহানকে ছাড়া ওর চলতোই না।নিজের ছোটবেলার স্মৃতি মনে করে ননিশাত নিজেই হেসে দিলো।তারপর হুট করেই মেহেরের বলা কথাটা মনে পড়ে গেলো।মেহের বলেছিলো””তিহান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।””
কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব?তিহান ভাইয়াতো তার বন্ধুর জন্য আমাকে এতো কেয়ার করছে।নাহ!এটা মেহেরের বোঝার ভুল।মেহেরতো আর এটা জানে না।তাই নিশাত মেহেরের কথাটা উড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
★
রিয়াদের বিয়ে বলে তিহানসহ সবাই ওকে নিয়ে মজা করছে।মজা করার একপর্যায়ে অয়ন বলল”আচ্ছা তিহান ধরে নে নিশাতের বিয়ে প্রান্তের সাথে হলো।তারপর ও যদি তোর নিশাতকে কষ্ট দেয়!তখন কি করবি?”
অয়নের কথা শুনে উপস্থিত সবাই তিহানের দিকে চাইলো।তিহানের হাসি উড়ে মুহুর্তেই চেহারায় রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো।ও চিবিয়ে চিবিয়ে বলল”ওকে কেটে কুচিকুচি করে ফেলবো।আজ পর্যন্ত আমি নিজেও ওকে কষ্ট দেওয়ার সাহস করি নি।আর ও নিশাতকে কষ্ট দিবে?এটা ওর জন্য দুঃসাহস।”
সবাই আরো একবার প্রমাণ পেলো তিহানের ভালোবাসার।এবার শাহেদ বলল”কিন্তু ওর যদি প্রান্তের সাথে বিয়ে হয় তাহলে তো তুই কিছুই করতে পারবি না।তোর তো অধিকারই থাকবে না ওদের বিষয়ে কথা বলার।প্রান্ত ওকে যা ইচ্ছা করুক কারণ তখন তো ও নিশাতের স্বামী।”
“প্রান্তর চেয়ে আমার অধিকার বেশি কারণ আমি যখন থেকে ভালোবাসার মানে বুঝেছি তখন থেকে ওকে ভালোবাসেছি।”
“তাহলে তোর ভালোবাসা অন্যকারো হাতে দিবি কেনো?”নয়নের প্রশ্ন
তিহান এতক্ষণে বুঝতে পারলো তার বন্ধুরা মিলে তার পেট থেকে কথা বের করার জন্য তাকে পেচিয়ে ধরেছে।তাই সে কঠিন কন্ঠে বলল”বলতে পারবো না।”
“তোকে বলতে হবে তিহান।আজকে যদি তুই না বলিস তবে আমরা ভাববো তুই কখনো আমাদের বন্ধুই ভাবিস নি।”রিদয় দৃঢ়কন্ঠে বলল।
“এমন না।প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর।যদি আমি বলতে পারতাম তাহলে বলেই দিতাম।”
“আমরা কিচ্ছু শুনতে চাই না।আমরা শুধু সত্যি জানতে চাই।” রিয়াদ বলল।
“আর যদি সত্যিটা না বলিস তবে আর কখনো আমাদের দেখা পাবি না।মনে রাখিস।”অয়ন কঠিন হয়ে বলল।
“এভাবে ব্ল্যাকমেইল করিস না প্লিজ।তোরা এমন করলে আমি কার কাছে যাবো?”
“ব্ল্যাকমেইল না অনুরোধ।” শাহেদ বলল।
“ঠিকাছে বলবো তবে ওয়াদা কর তোরা ছাড়া আর কেউ যাতে না জানে।আর নিশাতের কানেও যাতে না পৌঁছায়।”
সবাই ওয়াদা করলো।তিহান বুক ভরে দম নিয়ে শুরু করলো”আসাদ সাহেব নিশাতের আসল বাবা না।তবে ওনার ব্যবহার দেখলে তোরা কেউ বিশ্বাস করবি না যে উনি নিশাতের আসল বাবা না।নিশাত এটা জানে না।কারণ ওর জন্মের ছয়মাস পরেই নিশাতের বাবা মারা যায়।তখন খালামনিকে জোর করে নানুরা মিলে আসাদ সাহেবের কাছে বিয়ে দেয়।সে নিশাতকে মেনে নেয়।তখনো জানতাম না এতো সহজে মেনে নেওয়ার কারণ।কিন্তু পরে জানতে পারি এর পিছনে কারণ হলো নিশাতের বাবার সব সম্পত্তি নিশাতের নামে ৩০%আর ওর স্বামীর নামে ৭০% লিখা।তাই আসাদ সাহেব চাইছে।এই অডেল সম্পত্তির মালিক হতে।এইজন্য তিনি নিশাতকে গুটি হিসেবে ব্যাবহার করতে চাইছেন।ওনার আগে একবার বিয়ে হয়েছে তবে এটা এখনো খালামনি জানে না।ইনফেক্ট এই ফ্যামিলির কেউ জানে না।ওই ঘরে একটা ছেলে আছে ওর।আসাদ চায় ওর ছেলের সাথে নিশাতের বিয়ে দিতে।তাহলে পুরো সমপ্তি ওদের হয়ে যাবে।নিশাতের বিয়েগুলো আমি ভাঙার আগেই আসাদ ভেঙে দিতো।আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি পরে বুঝতে পেরেছি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে।লাস্ট যে ছেলেটা ওকে দেখতে এসেছিলো সেটা আমার বন্ধু ছিলো।আর দেখতে আসাটা আমাদের ফাঁদ ছিলো।তারপরই পুরো ঘটনাটা ক্লিয়ার হয়।ওর মাধ্যমেই খোঁজ খবর নিয়ে আমি সব জানতে পারি।আসাদকে আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হতো।”
এইপর্যন্ত বলে তিহান থামলো।তিহান থামতেই রিয়াদ উত্তেজনা নিয়ে বলল”তুই ওকে বিয়ে করে নিলেই তো হয়।”
“হবে না।আসাদ সেম ভাবে আমাকেও সরাবে।”
“তাহলে কি করবি?কারণ আসাদ তো প্রান্তকেও মানা করে দিবে।”নয়নের প্রশ্ন।
“না ও প্রান্তকে মানা করতে পারবে না।”
সবাই উত্তেজনা নিয়ে জিগ্যেস করলো “কেনো?”
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।গঠনমূলক কমেন্ট প্রত্যাশা করছি।)