আবদ্ধ আমি পর্ব-১৬

0
667

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#১৬তম_পর্ব

অনেক হুমকি-ধুমকির পর আমি রাজি হই আহান ভাইয়ের সাথে তাদের বাসা যেতে।আহান ভাই তার মস্ত হাতে লটকানো ঘড়িটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আমার উদ্দেশ্যে বলেন,
–“আমি সময় সম্পর্কে ভিষণ সচেতন।অনলি ১০ মিনিট।১০মিনিট মানে ১০ মিনিট।এর মধ্যে রেডি হতে না পারলে যেভাবে আছিস সেভাবেই নিয়ে যাব।লেট স্টার্ট”

কথাগুলো বলে আমার রুম ত্যাগ করেন আহান ভাই।তিনি বের হতেই আমি দরজা দিয়ে রেডি হতে শুরু করি।বারবার মোবাইলে টাইম দেখতে থাকি।তারাতারি রেডি হওয়ার চেষ্টা করলেও কেন জানি রেডি হতে পারি।আমার রেডি হতে কাটায় কাটায় ৯মিনিট ৩১সেকেন্ড চলে যায়।আমি তারাহুরো করে ব্যাগটা নিয়ে দরজা খোলার সাথে সাথে কেউ আমার মুখের মধ্যে একটা বাড়ি দেয়।

আমি অবাক হয়ে তাকাই সামনে থাকা সেই ব্যাক্তিটার দিকে যে আমাকে বিনা দোষে মারল।সামনে তাকিয়ে দেখি আহান ভাই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি তার দিকে তাকিয়ে কোনো কথা বলি না।তিনি আমাকে আসতে বলেন তার পিছনে পিছনে।

মানুষের পিছু নেয়ার অভ্যাস আমার মানে এই‌ উষার নেই।তাই আমি তার কথা না শুনে তার সামনে সামনে চলতে শুরু করি।বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উঠে পড়ি গাড়িতে।আহান ভাই গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে শুরু করেন।

আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি।ভুলক্রমেও আহান ভাইকে বললাম না যে,নিধির মোবাইলটা আমি চুরি করিয়েছি পটল ভাইকে দিয়ে।জানলে আবার মোটিভেশনাল কথা শুরু করবেন।

আমার চুপ থাকা দেখে আহান ভাই টের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“শোন,কি বলেছি মনে আছে তো?এই কয়েকদিন আমার থেকে একদমই আলাদা হবি না,বুঝলি?”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না আহান ভাই,ভালোবাসেন বিশেষ একজন কে।যে কিনা আবার সাধারণ কোনো মানুষ নয়।তাহলে আমার জন্য এত দরদ দেখাচ্ছেন কেন?”

আমার কথা শুনে আহান ভাই গাড়ি ব্রেক করে।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“দরদ দেখাচ্ছি কেন জানিস না?আরে বর্তমান তো তুই আমার ওয়াইফ।এখন যদি অন্য কারো সাথে তোর বিয়ে হয়ে যায় তাহলে আমার পাবলিসিটিটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে একবার ভাব।বর্তমান পাবলিটিসিটি রয়েছে এভারেষ্টের চুড়োয় আর তোর কারনে নেমে আসবে তাজিংডং এরও নিচে।তফাৎটা বোঝার চেষ্টা কর উষু?”

আমি অবাক হয়ে আহান ভাইয়ের দিকে তাকাই।তিনি আমার তাকানোতে কর্ণপাত না করে গাড়ি চালানো শুরু করেন পুনরায়।আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আহান ভাই,আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিনা সেটা বলে দেন?যদি ভালোবাসেন তাও বলেন,না বাসলে তাও বলেন।আপনি হয়তো জানেন ভালোবাসা ছাড়া সংসার অসম্ভব।আমাকে বলেন তারাতারি?”

আহান ভাই আমার দিকে না তাকিয়ে আনমনে বলে,
–“অনেক বড় সার্প্রাইজ তোর জন্য ওয়েট করছে উষু।”
আমি তার কথা শুনতে কিংবা বুঝতে পারি না।তাই জিজ্ঞেস করি,
–“কি বিরবির করতেছেন বলেন?”

আহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে একটা ধমক দিয়ে বলেন,
–“তুই বেশি কথা বলোস।একটা থাপ্পড় দিব।চুপ থাক”
তার ধমক আমাকে পুরোপুরি দমিয়ে দেয়।আমি চুপ‌ করে বসে থাকি নিজের সিটে।আহান ভাই আমার দিকে না তাকিয়ে বলতে থাকেন,
–“এই কয়েকদিন তুই আমার সাথে থাকবি অলটাইম।ওয়াসরুমে গেলে সুতো বেধে দিব।আমি বাহিরে থাকবো তুই ভেতরে আর আমি ভেতরে থাকলে তুই বাহিরে।বুঝলি ব্যাপারটা?”

আমি অবাক হয়ে আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে নিরবে মাথা নাড়ি।বুঝতে পারি এই কয়েকটা দিন আমার জীবনে নেমে আসবে জাহান্নামের আজাব।

একপর্যায়ে আমরা পৌঁছে যাই নির্দিষ্ট গন্তব্যে।আহান ভাই গাড়ি পার্কিং করে আমার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামেন।তারপর আমার হাত ধরা অবস্থায় ভিতরে প্রবেশ করেন।

ভিতরে প্রবেশ করে আমি মামা-মামীকে দেখতে পাই।হঠাৎ এভাবে বাসা চলে যাওয়ায় তাদের কিছু অদ্ভুত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় আমাকে।তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আহান ভাই আর আমি নিজের রুমে প্রবেশ করি।

রুমে প্রবেশ করে দেখি হায় আল্লাহ এটা রুম নাকি চিড়িয়াখানা।একদিকের মেঝেতে বালিশ এক দিকে কাথা পড়ে আছে।আমি মাথা ঘুড়িয়ে আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হই।তিনি একটা সুতো বাধছেন আমার আর তার হাতে।

বাধা শেষ করে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“আগামী ৬দিন এই সুতো এরকম থাকবে,বুঝলি?”
আমি তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াই।আহান ভাই এগিয়ে যান বিছানার দিকে।তিনি এগিয়ে যেতেই সুতোয় টান পড়ে।ফলস্বরুপ আমাকেও তার পিছন পিছন এগোতে হয়।

কিছুক্ষন আগে যে মেয়েটা কারো পিছু নিতো না এখন সেই মেয়েটাই পিছু নিচ্ছে একটা ছেলের।ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও সত্ত্যি।এর নামই হয়তো কপাল।

আহান ভাই ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।আমি তার পাশে বসে পড়ি।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“উষু,তুই কখনো ভেবেছিলে আমাদের দুজনের বিয়ে হবে?”
আমি তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াই।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলতে শুরু করেন,
–“নিয়তি বড়ই কঠিন।কখন কি হয়ে যাবে বলা যায় না?কিছুদিন আগে ভালোবাসতাম বিশেষ একজ‌ন মানুষের ভিতরে থাকা একটা বস্তুকে।এখন দেখি যেই মানুষটাকেও ভালোবেসে ফেলেছি।তার চাল-চলন,কথা বলার অদ্ভুত ভংগি,মাথা নাড়ানো,রাগ হলে মুখ ফুলিয়ে থাকা,অভিমান হলে কান্না করা,আর ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে কথা বলা আমাকে পাগল করে ফেলেছে।তাকে ছাড়া একমিনিটও থাকতে ইচ্ছে করে না।”

আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলি,
–“তার নামটা কি বলা যাবে?আমি তার হাতে তোমাকে তুলে দিয়ে চলে যেতাম।”
লক্ষ করি আমি কথা বলতে পারছি‌ না।চোখের কোণে পানি জমাট বেঁধেছে।আহান ভাই আমার দিক থেকে ‌মুখ ঘুড়িয়ে নিয়ে বলেন,
–“সময় হোক,সব বলবো।”

আমি তার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলি,
–“হুম,সময় হোক সব জানতে পারবো।এখন সময় হয়েছে খাওয়ার।প্রচুর ক্ষুধা লাগছে,কিছু না খাওয়াই নিয়ে আসছেন আমাকে।”
আহান ভাই চিল্লিয়ে ইশানকে ডাকে।মুহুর্তের মধ্যে রুমে উপস্থিত হয় ইশান।আহান ভাই তাকে আমার জন্য খাবার আনতে বলেন।

ইশান এমন ভাবে আমার দিকে তাকায় যেন এই মুহর্তে আমাকে রোষ্ট বানিয়ে খেয়ে নেবে।আমি তার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেই।কলেজে পড়তে এই ছেলেটা আমাকে দিয়ে সব কাজ কড়িয়ে নিত।কোনোদিন নিজে কোনো খাবার আনতো না।সব আমাকে আনা লাগতো।ঝালমুড়ি থেকে ফুসকা সবকিছু।

আজকে যেই ছেলেটা আমার জন্য খাবার আনছে দেখে বেশ অবাকই হই।ইশান রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বের হয়।আমি চুপ করে বসে থাকি আহান ভাইয়ের বিছানায়।আমার আর আহান ভাই দুজনের মুখেই কোনো কথা নেই।

——————
আহান ভাইয়ের নানা অত্যাচার সহ্য করতে হয় এই ৫দিনে।শেষের দিনে ঘটে নতুন এক কাহিনী,যা আমার জীবন বদলে দিতে পারে কয়েক মিনিটে…

চলবে..ইনশাআল্লাহ