আমায় একটু ভালবেসো পর্ব-১০

0
326

#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(১০)

,চিঠিতে শুধু একটি লাইন লেখা, কেমন আছেন প্রেয়সী?
অর্ণা চিঠি টা উল্টেপাল্টে দেখলো। কিন্তু আর কিছুই লেখা নেই সেখানে। অর্ণা চিন্তায় পড়ে গেল। কে লিখেছে এই চিঠি?সে তো এখানের কাউকেই চিনে না! অর্ণা চিঠি বাক্সটা হাতে নিল। তার সামনে একটা চিরকুট আটকানো। তাতে লেখা, এটা আপনাকে দিলাম। আজ থেকে আমি যত চিঠি পাঠাবো। তা এর মধ্যে রেখে দিবেন। বিয়ের পর আপনি আমাকে চিঠি গুলো পড়ে শুনাবেন।
অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেল অর্ণা। কে এমন করছে তা ধারণা করতে পারছে না। কেউ কি তার সাথে মজা করছে?কিছুই মাথায় আসছে না।
দুশ্চিন্তায় সেরাতে ভালো ঘুম হলো না অর্ণা। একটা খা রা প স্বপ্ন দেখে খুব ভোরবেলা ঘুম ভে ঙে যায় তার। অর্ণা ওঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে যায়।
ঘড়িতে এখন সাড়ে ছয়টা বাজে।মারিয়া বেগম নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে গেছে। বাড়িতে এখন শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। অর্ণা বাড়ির বাইরে এলো। কিছুদূর হাঁটতেই দেখতে পেল, একটা ছোট্ট ঝর্ণা। অর্ণা বেশ খুশি হলো। সে দৌড়ে গিয়ে নেমে পড়লো ঝর্ণার মাঝে। এখানে কোনো মানুষজন নেই। অর্ণা নিজের ইচ্ছে মতো ঝর্ণার পানিতে ভিজতে লাগলো।
,আপা,,,
আকস্মিক কারো ডাকে ঘাবড়ে গেল অর্ণা। পেছন ফিরে দেখলো। একটা পাঁচ-ছয় বছর বয়সী একটা মেয়ে, হাতে কিছু ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
,ফুল নিবেন আপা?একদম তাজা ফুল। এখন বাগান থেক্কা তুইল্লা আনছি।
অর্ণা মেয়েটার কাছে এলো। গাল টিপে দিয়ে বলল,
,তুমি তো আমাকে ভ য় পাইয়ে দিয়েছো। আমি তো ভেবেছিলাম কে, না কে। যাইহোক তুমি এখানে কি করছো?
,ফুল বেচতে আইছি আপা।
,কিন্তু এখানে তো কোনো মানুষজন নেই। তুমি কার কাছে বেচতে এসেছো ফুল?
,কে ন আপনি আছেন না। আমি তো প্রতিদিন এহানে আইসা ফুল বেচি।
, হুম আছি। তবে আমি তো আজ প্রথম এলাম। আর জায়গাটা দেখে মনে হয়। এখানে তেমন একটা মানুষজন আসে না। তুমি যদি প্রতিদিন এখানে আসো। তবে ফুল কিনে কে?
মেয়ে টা এবার হকচকিয়ে গেল। কোনো মতো অর্ণার হাতে ফুলগুলো গুঁজে দিয়ে। সে দৌড়ে পালালো।
অর্ণা অবাক হলো। পেছন থেকে মেয়েটা বহু ডাক,ডাকলো।তবে তার লাগাল আর পেল না। অর্ণা হতাশ হলো। মেয়েটার এমন আচরণ দেখে। হাতে থাকা ফুলগুলোর দিকে তাকাতেই। একটা জিনিস নজরে এলো। ফুলগুলোর ভিতরে একটা কাগজ। অর্ণা সেটা হাতে তুলে নিয়ে ভাঁজ খুলল,
, জীবন্ত ফুলকে কিছু কৃত্রিম ফুল উপহার দিলাম। আপনি কি জানেন? আপনি নিজেই একটা ফুল।

চিরকুট টা পড়া মাত্রই অর্ণা এদিক সেদিক তাকালো। নাহ্ কেউ নেই এখানে। তবে কে করছে এসব। অর্ণা কপালে সূক্ষ ভাঁজ পড়লো।

বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে নিল অর্ণা। একবার ভাবলো, মারিয়া বেগম কে সব জানাবে।কিন্তু পরক্ষণেই নিজের মত বদলালো।কি দরকার ছোট একটা বিষয় নিয়ে অন্যকে টেনশন দেয়ার।

আজ রোদের তেজ অনেক বেশি।গায়ের চামড়া যেন পু ড়ে যাবে। অর্ণা দ্রুত পা চালিয়ে ক্যাম্পাসের একটা গাছের নিচে গিয়ে বসলো।ক্লাস শুরু হতো অনেক দেরি। আপাতত এখানেই বসে থাকা যায়।
গাছের বেদির মধ্যে ব্যাগটা রেখে। খাতায় কিছু একটা লিখছে অর্ণা। এমন সময় তার পাশে এসে দুটো ছেলে ও মেয়ে বসলো। অর্ণা একবার তাকিয়ে দেখলো। তারপর আবার নিজের কাজে মনোযোগী হয়ে পড়লো।
,এক্সকিউজ’মি”
অর্ণা তাকালো। মেয়ে টা আবার ও বলে উঠলো,
,তুমি কি এই কলেজে নতুন?
,জ্বি!
,কোন ক্লাস?
,অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
,ওহ্ তাহলে তো আমরা ক্লাসমেট।
,আপনি ও!
,হ্যা। তাহলে তো আমরা ফ্রেন্ড হতেই পারি।ফ্রেন্ড,,,,
মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিল। অর্ণা কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেল।মেয়েটা ভালো নাকি মন্দ তা তো জানি না।
,কি হলো?কি নিয়ে চিন্তা করছো?
, নাহ্ তেমন কিছু নয়।
,কি নাম তোমার?
,আমার নাম অর্ণা।আর তোমার?
,আমার নাম জুথি।
,তোমরা কি এখানকার স্থানীয়?
,হ্যা।আার তুমি?
,আমি ফুপির বাসায় থাকি। নিজের বাড়ি ঢাকায়।
,ওমা! মানুষ তো এখান থেকে ঢাকায় পড়াশোনা করতে যায়। আর তুমি এখানে এসেছো?
,আমার ঐ ইট পাথরের শহর ভালো লাগে না। তাই এখানে আসা।
,হুম বুঝলাম। আচ্ছা এখন ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই,অ হচ্ছে নাঈম।আমার ফ্রেন্ড। আমাদের ক্লাসেরই।
ছেলেটা হাত বাড়িয়ে দিল অর্ণা দিকে
,হাই!
তবে অর্ণা হাত মেলালো না । জুথির দিকে তাকিয়ে বলল,
,কিছু মনে করো না জুথি।আমার ছেলে ফ্রেন্ড একদম পছন্দ নয়।
,আরে তুমি যেমন ভাবছো,নাঈম তেমন ছেলে নয়। ও খুব ভালো ছেলে। আর নয়তো আমি কি ওর সাথে মিশতাৃ।আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি ওর সাথে কথা বলো না।
জুথির কথার মাঝখানে ঘন্টা বেজে উঠলো।
তারা তিনজনই ক্লাসে চলে গেল।

জুথি মেয়েটাকে অনেক পছন্দ হয়েছে অর্ণা। ভারী মিশুক। আর অনেক ভালো। প্রথমে যা ভেবছিল তার ভিন্ন হয়েছে।
কলেজ ছুটির পর জুথিরা রেস্টুরেন্টে যাবে খাবার খেতে। অর্ণাকে ও ইনভাইট করেছে। তবে সে যাবে না।
,চলো না অর্ণা। অনেক মজা হবে । আমরা তিনজন একসাথে আড্ডা দিবো। একটু রাত করে বাড়ি ফিরবো।তোমাকে পাহাড়ি অঞ্চলের সন্ধ্যা দেখাবো।চল না।
অর্ণা জুথির বলা কথা গুলো কল্পনা করলো। ইশ্ কি সুন্দর সেই দৃশ্য। কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে মন খা রা প করে ফেলল,
,না গো!আজ যাওয়া হবে না। আমাকে তারাতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।। আর নয়তো ফুপি টেনশন করবে।তোমরা এক কাজ করো,কালকে যাও! তাহলে আমি কাল কলেজে আসার সময় ফুপিকে বলে আসবো।যে আমার ফিরতে দেরি হবে।
অর্ণা কথা শুনে, তাদের মুখ কালো হয়ে যায়। দুজনেই চোখাচোখি চেয়ে কিছু একটা বুঝালো। তারপর জুথি অভিমানী সুরে বলল,
,কিন্তু যদি তোমার ফুপি রাজি না হয়?
,আরে হবে,হবে।আমার ফুপি অনেক ভালো। তুমি চিন্তা করো না। কাল আমরা ঘুরতে যাব!
এই বলে সেখান থেকে চলে এলো অর্ণা।

বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে মারিয়া বেগমের কাছে গেল অর্ণা। সেখানে কিছুক্ষণ বসে কথা বলল।
হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।অর্ণা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই। দেখলো সেখানে কেউ নেই। অর্ণা অবাক হলো। মানুষ নেই তবে মেঝেতে একটা কাগজ পড়ে আছে । অর্ণা সেটা তুলে হাতে নিল।বেশ বড়,বড় করেই লেখা,
,জুথি আর নাঈমের সাথে মিশবেন না প্রেয়সী।ওরা দু ষ্টুলোক। আমি চাই না আপনার কোনো ক্ষ তি হোক!

চলবে,,,,।