#আমার_একটাই_যে_তুই
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
২৪
শন শন বাতাসে চারিদিকে বয়ে চলেছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট ঘর বাড়ি। যেন কোনো চিত্রশিল্প নিপুণভাবে একে রেখেছে। চারিদিকের মনোরম পরিবেশে মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠছে। এই রিসোর্টের নামটি যেন সুক্ষভাবে মিলে যাচ্ছে। কুহু রিসোর্টের নামটি আবার উচ্চারণ করল “শান্তিবাড়ি”।
কটেজের রুমটিও যেন প্রকৃতির সাথে মিলে গেছে। কাঠের রুমটিতে বারান্দার বদলে সচ্ছল কাঁচের দেয়াল আর খোলা জানালা।প্রকৃতির কাছাকাছি শহুরে জঞ্জাল থেকে দূরে সম্পূর্ণ গ্রাম্য পরিবেশ। কটেজের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে চা বাগানের চোখ ধাধানো সৌন্দর্য। কুহু ঠোঁট দুটি নাড়িয়েই অস্পষ্ট ভাবে বলল,,
—-” অপুর্ব! ”
—-” তাই!”
পিছন থেকে কামড় জড়িয়ে কুহুর ঘাড়ে নাক ডুবালো ইউসুফ। কুহু থরথর করে কেঁপে উঠলো। আবেশে চোখ বুঝে নিলো কুহু। ইউসুফের দিকে ফিরে গলা জড়িয়ে ধরলো। এক হাতে ইউসুফের নাক টেনে দিয়ে বলল,,
—-” এত সুন্দর একটা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ নেতা সাহেব! ”
ইউসুফ হতাশ গলায় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,,
—-” শুধুই ধন্যবাদের যোগ্য আমি?”
কুহু হাসলো। আরেকটু কাছে গিয়ে ঘেঁষে দাঁড়ালো। ফিসফিস করে বলল,,
—-” আর কি চাই!”
ইউসুফের ঠোঁটের কোনের হাসি বহাল রইলো। কুহুকে তার দু হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,,
—-” আমার বাবুইপাখিকে!”
কুহু লজ্জা লাল রঙ্গা হয়ে গেলো। ইউসুফ টুপ করে কুহুর গালে চুমু খেয়ে ফেললো। কুহুর এবার লজ্জায় মনে যেতে মন চাইছে। ইউসুফ কুহুর দিক এক অদ্ভুত মহনীয় দৃষ্টিতে কুহুর শরীর ঝিম ঝিম করতে লাগলো। কুহু ইউসুফের দৃষ্টি এড়াতে মুখ লুকালো ইউসুফের বুকে। ঠিক সেই মুহূর্তেই ঝড় তুলে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বাহিরের মতো কুহুর বুকের ভিতরেও যেন ঝড় উঠেছে। ইউসুফ জনিত রোগে আক্রান্ত হতে চাইছে। হারিয়ে যেতে চাইছে এ বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটায়।
—————
সকালের মিষ্টি মিষ্টি রোদ সাদা চাদরের আবরণে লেপ্টে থাকা মানব-মানবীর উপর পড়চ্ছে। কুহু পিটপিট করে যখন চোখ মেললেই থমকে গেলো। কিহুর দিক সেই মাদক চাহনি নিক্ষেপ করে হেসে যাচ্ছে। কুহুর তাৎক্ষণিক মনে পড়ে গেলো কাল রাতের কাটানো সেই বিশেষ মুহূর্তটি৷ কুহু লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললো। বলল,,
—-” আপনার নজর মারাত্মক খারাপ নেতা সাহেব?”
ইউসুফ ভ্রু কুটি কুচকে দাম্ভিক মুখখানায় গম্ভীরতা ফুটিয়ে তুলতে চাইলো। বলল,,
—-” বউয়ের কাছে বড় চরিত্রহীন ও হতে পারে।”
কুহু অবাক হয়ে। হা করে তাকালো। কিছু বলবে তার আগেই কুহুর কানের কাছে মুখ গুঁজে বলল,,
—-“যেদিন থেকে তোর প্রেমে পড়েছি আমার নজর খারাপ হয়ে গেছে। চরিত্রহীন হয়ে গেছি। তোর অগোচরে তোর ঠোঁটে কত যে নিজের ঠোঁটের ভাজে নিয়েছি!”
কুহু আকাশ থেকে পড়লো যেন। তড়িঘড়ি করে উঠতেই নিজের দিক তাকালো।তড়িৎ গতিতে আবার ঢুকে গেলো সাদা চাদরের ভিতরে। ইউসুফ তখন হু হা করে হরসে উঠলো। কুহু মুখখানি এতটুকু করে। কাঁদো কাঁদো করে বলল,,
—-” আপনি বহুত খারাপ নেতা সাহেব। বহুত খারাপ! ”
ইউসুফ হাসতেই থাকলো। হাসতে হাসতেই বলল,,
—-” খারাপ হই আর ভালো। আমি ছাড়া তোর গতি নেই বাবুইবউ। এ আমিটাকেই আকড়ে ধরে বাঁচতে হবে তোর।”
কুহু ইউসুফের কথা হাসলো। ইউসুফের বুকে বাচ্চাদের মতো মাথা রেখে ফিসফিস করে বলল,,
—-” এ আপনি টাকেই আমি ভালবাসি!”
——————
বিকেলের দিক ইউসুফ কুহু ঘুরতে বের হয়েছে। দুজনে আজ ম্যাচিং ড্রেস পড়েছে। ইউসুফ কালো পাঞ্জাবি আর কুহু কালো শাড়ি। কালো পাঞ্জাবিতে ইউসুফের সুন্দর গায়ের রঙ যেন আরো ফুটে উঠেছে। কুহু মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে এ মানুষটির দিক। কত চাওয়া-পাওয়া চিলো এ মানুষটির কাছে আজ থেকে যেন সব পরিপূর্ণ লাগচ্ছে। কুহু ইউসুফ হাতের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিলো। ইউসুফ-ও আকড়ে ধরলো। যে এই রূপসী তন্বী এখনই হারিয়ে যাবে।
ইউসুফরা চলে এলো নুরজাহান টি গার্ডেন। আর তখনি আবার শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি থেকে বাঁচার আশ্রয় নেয় একটি মাচার নিচে। সবুজ, সবুজ পরিবেশে তখন আলাদাই যেন এক অপরূপ ঢল। কুহু দু হাত দিয়ে গায়ে মেখে নিচ্ছে সে ঢলের ছিটেফোঁটা। আর ইউসুফ তার বিলাই চোখে মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার বাবুইপাখিটিকে। বৃষ্টি কমতেই দুজনে হাতে হাত ধরে ঘুরতে লাগলো চারপাশটা।
সেদিন রাতেই ইউসুফ কুহু বাসায় ফিে আসে তারা। কিন্তু বাসায় যে তাদের জন্য এত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো জানা ছিলো না তাদের!
চলবে,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।