#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(০৬)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
ভয়ে চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল তাকিয়া’র,উহুম উমুমম কিছু শব্দ করতে লাগলো।
-“হুস,একদম কথা বলবে না! আমার চেয়ে বেশি সম্মানহানি তোমারই হবে। সবাই বলবে বাড়ির বউ এতো রাতে কি করছে তার দেবরের ঘরে?
আনাস কথা গুলো বলে হাত সরিয়ে নিল,তাকিয়া’র মুখ থেকে।
-“আপনি!
আমাকে এইভাবে ঘরে আনার মানে কি? আমাকে যেতে দিন?
-“বললাম তো চেঁচিয়ে কথা বলো না, সম্মান’হানী তোমারই হবে মাহুপি!
_মাহুপি!কে মাহুপি?
_আমার মাহুপি তুমি।
_ছি: নিজের ভাবীকে এমন কতা কইতে,মুখে বাজছে না আপনার?
-“চুপপপপ…
খুব জোরে চেঁচিয়ে বলল আনাস।
-“আমি তোমাকে ভালোবাসি! আমি মানি না এই মিথ্যে বিয়ে।ভাই আমাকে ঠকিয়েছে। ঠকিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে!
-“কিসব বলেছেন আপনি?
-“হ্যা আমি ঠিক বলছি। আমি তোমাকে ভাইয়ের আগে ভালোবেসেছি!তাই তুমি শুধু আমার।আর কারো নয়।
-“চুপ করেন আপনি, একজন বিবাহিত মেয়ে’কে আপনি এসব বলতে পারেন না।
তাকিয়া রেগে মেগে শেষের কথাটা বললো, বলতে বলতে খাটের উপর নজর পড়ল। খাটের মধ্যে অনেক ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাকিয়া খাটের দিকে এগিয়ে গেল, গিয়ে দেখে তারোই ছবি! সেই ২০২০ সালের শিক্ষা সফরের সময়কার। তারপর চারেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো,সেইম ইসরাকের ঘরের মতো!
বেডের ডান পাশে ছোট রাউন্ড শেলফ।বাম পাশে কনসোল টেবিল।যার উপর খুব সুন্দর টব।টবের রয়েছে কদম ফুল। মেহগনি উডেন স্লাইডিং ডোর আলমারি, ফোল্ডিং হ্যাঙ্গার, শু র্যাক।রুম ভর্তি আসবাবপত্রে।চারদিকে জর্জেট ডাবল পার্ট পর্দা। তবে পর্দার রঙ খয়েরী।ঘর দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুই ভাইয়েতে কতোটা মিল।
পিছন থেকে আনাস বলতে লাগলো…
____
“অতিত”
আমি, সোহেল ভাই, টুম্পা ভাবী, মুনতাসির ভাই,আরিসা এবং আনিসা গাজীপুর মেঘবাড়ি রিসোর্টে বেড়াতে যাই সেদিন আরিসা আর আনিসার জন্মদিন ছিল সেই উপলক্ষ্যে ই মূলত যাওয়া।তো ঘুড়াঘুড়ির এক পর্যায়ে তোমাকে দেখলাম সুইমিং পুলের পানি নিয়ে ছুড়াছুড়ি করছো।তোমার ঐ মুহুর্তটা ক্যামেরা বন্দি করে নিলাম। তারপর আবার হরিণের মূর্তির শিং ধরে টানছো! বিষয়টা তে খুব মজা লাগছিল এটাও ক্যামেরা বন্দি করতে ভুলিনি। তারপর তুমি যখন চেয়ার খেলায় পার্টিসিপেট করে হেরে গিয়ে মন খারাপ করে দূরে গিয়ে বসে রইলে তখন আমার খারাপ লাগছিল কিন্তু তোমার ফেইস’টা দেখার মতো ছিল কিন্তু তাও ক্যামেরা বন্দি করেছি।দেখ এখানে তোমার সব গুলো ছবি আছে। সেদিন থেকে তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসি।
আমি আর মুনতাসির ভাই পিঠাপিঠি মানে আমি চার মাসের ছোট মুনতাসির ভাইয়ের থেকে। দু’জন দু’জনকে ভাই বলে ডাকি এবং একই ক্লাসে পড়াশোনা করেছি। উভয়েই উভয়ের কাছে নিজেদের মধ্যকার কথোপকথন শেয়ার করি।তো বাসায় আসার পর ভাই বললো,
-“তোকে একটা খবর শোনাবো।
আমিও বললাম,
-“তোকেও একটা খবর শোনাবো আগে তোরটা বল?
-“একটা সবুজ পরীকে ভালোবেসে নিয়েছি! সমস্যা হচ্ছে পরীটাকে এখন চাইলেও বিয়ে করতে পারবো না।আরো তিন বছর পর অফিস থেকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হবে।
-“আহারে।
আচ্ছা এবার আমার টা শোন? আমিও একটা মেয়ে কে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি।
-“কখন!কাকে?
-“এই দেখ এই মেয়েটা!
তোমার ছবি ভাইকে দেখানোর পর, ভাইয়ের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়।তাই জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে?ভাই তার ফোনে তোমার ছবি বের করে বলল,
-“আমিও ওকে ভালবাসি!
ভাইয়ের স্থানে, সেদিন অন্য কেউ থাকলে আমাদের মধ্যে ঠিক মা’রামা’রি ভাঙচুর লেগে যেত! কিন্তু ভাই ভাই বলে হয়নি। দু’জনেই বেশ কিছুক্ষণ থম মেরে বসে ছিলাম। তারপর থম ভেঙ্গে ভাই বললো,
-“একটা সলিউশন আছে!
-“কি?
-“আমরা দু’জনেই মেয়েটার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো! মেয়েটার গার্জেন যাকে পছন্দ করবে সেই পাবে।
ভাইয়ের এহেন প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। তবে সেটা তোমার এইস.এস.সি পরীক্ষার পর।
ভাই আর্মি অফিসার আর আমি একজন সফল ব্যবসায়ী।তাই কেউ ই কারো থেকে কম নয়। কিন্তু দু’জনেরই দুশ্চিন্তা কাকে জানি পছন্দ করে তোমার পরিবার? তারপর করোনার জন্য তোমার এইস.এস.সি পরীক্ষা হলো না, অটো পাশ দিয়ে দিল। কিন্তু করোনা মহামারী তে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া ঠিক হবে না বলে, তখন আর দিলাম না।করোনা পরিস্থিতি যখন সিথিল হয় তখন প্রস্তাব পাঠালাম দু’জনেই।আর হ্যা তোমার বাসার ঠিকানা তোমার কলেজ থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাব পাঠানোর পর আমি ভাই দু’জনেই খুব দুশ্চিন্তায় খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম,ফলাফলের জন্য। দু’জনেই নফল নামাজ আদায় করে দো’আ করলাম আল্লাহ তা’আলার কাছে। কিন্তু আমাদের দুজনের আশায় মাটি দিয়ে তোমার মা নাকজ করে দিয়েছেন। দুজনের একজনকেও পছন্দ হয়নি উনার। আশ্চর্য বিষয় এর দুদিনের মধ্যেই উনি তোমার বিয়ে ঠিক করে নিয়েছেন!
আমি তোমাকে অনেক কল+মেসেজ দিতাম কিন্তু কোনটারই তুমি রিপ্লাই দিতে না। ভাইয়ের একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ড সুমাইয়া!ওর থেকে তোমার সবরকম ইনফরমেশন নিতে পারতো। কিন্তু আমি পারতাম না।
তোমার মায়ের পোষা গু’ন্ডা গুলোর জন্য! অনেক বার চেষ্টা করেও তোমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি।
শেষ মেষ ভাই তোমার ফ্রেন্ডের সাহায্য নিয়ে তোমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করে নিল।এর পর থেকে আমি হয়ে উঠলাম ব্যাপারি বাড়ির বখাটে ছেলে! বাড়িতে বিচার আসা শুরু হলো আমি নেশা করি।ভদ্র ছেলে থেকে আমার উপাধি হলো “নে’শাতুর”। আম্মা ছাড়া সবাই আমাকে হীন চোখে দেখতে শুরু করলো।ভাই আর আমি সকলের চোখের মণি ছিলাম সেখান থেকে আমার পদ ত্যাগ হলো।কার জন্য হয়েছে এমনটা জানো?
______
“বর্তমান”
মাহিয়ারা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আনাস এর দিকে। তখন আনাস বললো,
-“শুধু তোমারই জন্য! হাঁ হাঁ শুধুমাত্র তোমার জন্য মাহুপি। আমাকে আবার আগের মত করে দিতে পারো তুমি!হয়ে যাও না আমার! হবে কি?
-“আপনি পাগল হয়ে গেছেন! আমারে যাইতে দিন?
তাকিয়া ছোটে চলে যেতে নিলে,আনাস হাত চেপে ধরে তাকিয়া’র! ধরে বললো,
-“আমি চাইলে তোমার বর’কে চাকরিচ্যুত করতে পারি!তুমি জানো?
চমকে তাকায় তাকিয়া!আর বলে,
-“কি বলছেন এসব? উনি আপনার ভাই।
পাশে থাকা চেয়ারে সজরে লা’থি মেরে দেয় আনাস। রাগে মাথার রগ গুলো ধবধব করছে!রাগ নিয়েই বললো,
-“ভাই বলেই এতো দিন সহ্য করে চলেছি আমি।আর কতো?ও তো আমার কথা ভাবলো না।ও তো পারতো তোমাকে আমায় দিয়ে দিতে!পারতো না দিতে? কেন দিল না?বল কেন দিল না?ভাই বলেই ওর চাকরি এখনও টিকে আছে। আমার জাগায় অন্য কেউ হলে কবেই ও চাকরিচ্যুত হতো।
-“আপনি কেমনে উনাকে চাকরিচ্যুত করতে পারেন?
-“আর্মিদের চাকরির ছয় বছর পর বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানে ভাই ছয় বছর না হতেই তোমাকে বিয়ে করে নিয়েছে। তাহলে ভাব এই খবর ওর অফিসে পৌঁছে দিলে কি হবে!
-“এমনটা আপনি করতে পারেন না।
-“কেন কেন?পারি না কেন?
তাকিয়া বুঝলো আনাসের সাথে কথা বলাই বেকার।ও এখন নিজের মধ্যে নেই,তাই কোন ভাবে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে,সামনে আঙ্গুল বাড়িয়ে আনাস কে বললো ঐটা কি?
আনাস তাকাতেই, হাত কিছুটা আলগা হয়েছে।এই সুযোগে তাকিয়া ভৌ দৌড় দিয়ে,এক ছুটে নিজের ঘরে এসে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিল।
আনাস ব্যাপার টা বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে খাটের উপর শুয়ে পড়ল। তারপর আবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
-“তুমি কেন আমার থেকেই দূরে সরে যাও মাহুপি? আমি কি ভাইয়ের থেকে কোন অংশে কম?ভাইয়ের থেকে তো আমি বেশি সুন্দর! আমার গায়ের রঙ তো ভাইয়ের থেকে বেশি ফর্সা।ভাই তো শ্যাম বর্ণের। ফিরে এসো মাহুপি ফিরে এসো…..
আর কিছু বলতে বলতে ঘুমে তলিয়ে গেল আনাস। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বুঝে, অন্যদের কাছে ব্যাপার টা হাস্যকর মনে হলেও, ভুক্তভোগীরাই জানে একেকটা মুহূর্ত কতটা যন্ত্রনার হয়।প্রহরের প্রহর যায়, কিন্তু ভালোবাসার ভুক্তভোগীদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। তাদের প্রতিটি মুহূর্ত হয় কাঁটার মতো!যন্ত্রনাধায়ক।
_______
নিজের ঘর থেকে বের হতে ভয় করছে তাকিয়া’র।আনাসের সামনে যদি আবার পরতে হয়? আবার যদি রাতের মতো করে? ব্যাপার টা খুবই জঘন্য হবে।ইসরাক যে কবে এসে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবে আল্লাহ তা’আলা জানেন। এদিকে বাড়ির বউ এতো বেলা অবধি ঘরে বসে থাকলে মন্দ কথা বলবে লোকে।তাই তাকিয়া আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। দ্রুত পায়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। টুম্পা রুটি বেলছে, সুখী থালা বাসন পরিষ্কার করছে। সাহারা আলু ভাজি করছে।লাবিবা সবজি কাটাকাটি করছে। নিলুফা মটর ছাড়াচ্ছে খোসা থেকে।
তাকিয়া নিলুফার কাছে গিয়ে বসে বললো, -“আম্মা দাও আমি করি?
লাবিবা টিপ্পনি কেটে বললেন,
-“মহারানীর এতোক্ষণে আওনের সময় হইলো?
আর বাকি সবার মাঝে নিরবতা। তখন দুলাল এসে বলল,মেইজ্জা (মেজ)ছাচা মাছ পাডাইছে (পাঠাইছে)।
লাবিবা এগিয়ে এসে বললেন,
-“কি মাছ?
-“গুড়া(ছোট)মাছ ছাচি।
লাবিবা ব্যাগ থেকে মাছ গুলো একটা পাত্রে ঢেলে রাখলো। এখানে অনেক রকমের ছোট মাছ আছে। আঞ্চলিক ভাষায় এগুলো কে,পুঁটি, টেংরা, খলিশা,মেনি,চান্দা, চিংড়ি মাছ বলে।যাকে বলে এক কথায় “পাঁচ মিশালি”।
এর মাঝে এবি এসে বললো,
-“বড় আম্মা তুমি নাকি মেজ ভাইয়ের কল রিসিভ করতাছো না? এই নাও ভাইয়া লাইনে আছে কতা কইবো তোমার লগে।
সাহারা বললেন,
-“বলে দে আমি রান্তাছি(রান্না করি)।
তাকিয়া ইসরাক এর কথা শুনে চকিতে তাকায়। সাহারা কথা বলবে না বলে, বুঝলো তার জন্যই রাগ করে সাহারা ইসরাকের সাথে কথা বলছে না।তাকিয়া’র ইচ্ছে করছে ফোন টা ছিনিয়ে নিয়ে ইসরাকের সাথে কথা বলতে!…..
#চলবে…ইনশা আল্লাহ।