আমার প্রিয়দর্শিনী তুমি পর্ব-০৭

0
297

#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(০৭)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

এমন বেমানান ইচ্ছে কে মাটিচাপা দিয়ে, ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিটির কথা আগ্রহভরে শুনতে লাগলো তাকিয়া।
ইসরাক এবি কে বলে, ভিডিও কল দিয়েছে। ভিডিও কলে ইসরাক কে দেখে এবি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইসরাক এবি কে ইশারায় চুপ করিয়ে দিল।
ইসরাক খুব ভালো করে জানে সাহারা কিছুতেই তার সাথে কথা বলবে না,যতক্ষন না ইসরাক রাগ ভাঙাতে সক্ষম হয়।
যাই হোক,
ইসরাক তার হেড়ে গলায় গাইতে শুরু করে, যদিও হেড়ে গলা বললে ভুল হবে। মোটামোটি ভালোই গায় ইসরাক।

“আঁধার রাতের চাঁদ যে তুমি,
তুমি ভোরের আলো।
তোমায় যখন দেখি আমার মন হয়ে যায় ভালো।
অগো মা..অগো মা..অগো মা..অগো মা.. তোমার মতো এতো আদর কেউতো করে না, সবার থেকে প্রিয় তুমি তুমি আমার মা।
চলে যদি যাও কখনো রেখে যেও না।
মন বলে মা তুমি ছাড়া আমি বাঁচবো না।
আগো মা..অগো মা..অগো মা..অগো মা।

যাদু মাখা মুখটি তোমার দেখলে ভরে মন,
আদর করে ডাকো যখন অরে খোখা শোন।
বলো যদি ছাড়বো সবি তোমায় ছাড়বো না,
আর কারো কোলেতে মাগো এ প্রান জোড়ায় না।অগো মা..অগো মা..অগো মা..অগো মা..

সাহারা ছেলের গজল শুনে এতক্ষণ মুচকি মুচকি হাসছিলেন, যেইনা ইশরাক গজল গাওয়া অফ করে দিলো সাহারা ফোনের দিকে নজর দিলেন। ইসরাক কে দেখে সাহারা আতকে উঠলো এবি’র থেকে ফোনটা দ্রুত কেড়ে নিয়ে, কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন বাবাই কি অইছে (হয়েছে)তোর? মাথা ব্যান্ডেজ ক‌ইরা রাখছোস ক্যারে।
সাহারা ছেলের ক্ষত সহ্য করতে পারলেন না সাথে সাথে কেঁদে কেটে একাকার। এদিকে তাকিয়া সহ বাকি সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইল কি হয়েছে জানার জন্য।
সাহারা কেঁদেই চলেছে। ছেলের এরকম অবস্থা কোন মা’ই বা সহ্য করতে পারে?

ইসরাক বলে চলেছে আম্মা আমার তেমন কিছু হয়নি আমি এখন ঠিক আছি।তুমি প্লিজ এভাবে কেঁদোনা।তুমি কাঁদলে আমার একদম সহ্য হয় না প্লিজ আম্মা। সামান্য একটু চোট লেগেছে এই যা ইনশা আল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।

সাহারা হাউমাউ করতে করতেই বললেন,
-” তুই তাড়াতাড়ি বাইত আয় তোর ওই চাকরি লাগবো না যেদিকে তুই বারবার এমনে ব্যথা পাস!

সাহারার কথা শোনে এতক্ষণে বাকি সবাই বুঝতে পারলো কি হয়েছে আসলে।ইসরাকের আহত হওয়ার কথা শুনে তাকিয়া চোখের কোনে পানি জমে গেল আর চুপ করে বসে থাকতে পারল না দৌড়ে গেল সাহারার কাছে! সাহারার হাত থেকে ফোন নিয়ে ইসরাকের পানে তাকিয়ে রইল! ইশরাক তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে দেখে অবাক হ‌ওয়ার সাথে খুব খুশি হলো মনে মনে। তবে বুঝতে পারলো তাকিয়া তার জন্য কাঁদছে,এটাও কি সম্ভব? সে তো তাই দেখছে। তাকিয়া তার জন্য কাঁদছে।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক” একদিকে যেমন আনন্দ হচ্ছে অন্যদিকে একপ্রকার চাপা কষ্ট হচ্ছে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে সান্ত্বনা বাণী শোনাতে পারছেনা তার আম্মা আছে বলে। আম্মা হয়তো আবার রেগে যেতে পারে।এই সান্তনা বাণী’টা না হয় তোলা রইলো।অন্য কোন দিনের জন্য।

তাকিয়া শুধু তাকিয়েই আছে কিছু বলতে পারছেনা,কারণ তাকিয়া যখন কান্না করে তখন গলা ধরে আসে তাই সে সময় কথা বলতে পারে না।বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সাহারার হাতে ফোনটা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায় রান্নাঘর থেকে।
ইসরাক খুব ভালো করেই জানে তাকিয়া কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু বলতে পারছিল না। তাকিয়া যে কান্নার সময় কথা বলতে পারেনা, ইসরাক সেটা জানে তাই কষ্টটা আরও একটু বেড়ে গেল।এখন যদি ইসরাক সামনে থাকত তাহলে দিক পাস না ভেবেই তাকিয়া ইসরাক কে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিত এটাও একটা অভ্যাস তাকিয়া’র। এই যে এখন দৌড়ে গেল ঠিক নিজের ঘরে গিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে কাঁদবে তাকিয়া।

মানে দাঁড়ায়, কিছু-না-কিছু কে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে হবে।সে মানুষ হোক বা বস্তু হোক।কি অদ্ভুত তাই না? এই অদ্ভুত মেয়েটিই তাকিয়া।

এতক্ষণে লাবিবা, নিলুফা, টুম্পাসহ ফোন হাতে নিয়ে ইসরাক কে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলো,
-“কিভাবে এরকম হয়েছে?
ইসরাকের উওর এই ছোট খাট চোট আমাদের জন্য কিছুই না।
সাহারা এবার কঠিন গলায় বললেন,
-“আমি এতো কিছু বুঝিনা তুই বাইত (বাড়িতে) আইয়া ফরবি এমন চাকরি আমার লাগবো না।

-“দেশকে রক্ষা করার শপথ নিয়েছি”এতো সহজেই কি হার মেনে নিব আম্মা?
-“আমি এতকিছু জানিনা তুই বাইত আইবি ব্যাস।
-“আচ্ছা ঠিক আছে আম্মা।আমি আসবো কিছুদিন পরেই ছুটি পাব তখন আসবো।

সাহারা খুব ভালো করেই জানে ছেলের সাথে কথা বলে কখনোই পেরে উঠবেন না,তাই এবির হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে গটগট পায়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

_________

তাকিয়া কাঁদতে কাঁদতে কোলবালিশ জড়িয়েই ঘুমিয়ে গেল। সে যখন কান্না করে তখন কেউ জোর করে খাইয়ে না দিলে কখনোই খায়না। ইসরাক এ ব্যাপারে অবগত আছে,তাই আনিসা আর আরিসা’কে তাকিয়া’কে খাওয়ানোর দায়িত্ব দিল। আরিসা আর আনিসাকে এর বিনিময়ে চকলেট বক্স দিবে বলে কথা দিয়েছে ইসরাক।

দুজন খাবার প্লেট হাতে নিয়ে হাজির তাকিয়া’র ঘরে। তাকিয়া খাবেনা বলে বসে রইল।আরিসা মুখ ফসকে বলে বসে, ভাবীমণি তুমি না খেলে তো আমাদের চকলেট বক্স পাওয়া হ‌ইবো না! প্লিজ খাইয়া নাও?

তাকিয়া সন্দেহের চোখে তাকায়।আরিসা কথা ঘুরিয়ে বলে,ভাবীমণি তুমি যদি খাইয়া নাও তাইলে তোমারে আমগো (আমাদের) গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখামু।

আনিসা ফোন উঁচু করে ধরে কি জানি করছে! তবে তাকিয়া’র মুখোমুখি ই বসে আছে দু’জনেই।আরিসা গ্রামে ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বললে, আনিসা ও বলল, হাঁ হাঁ ভাবীমণি‌ প্লিজ খাইয়া নাও বিকালে আমরা ঘুরতে বের হমু কেমন?
-“আনিসা ফোনের জন্য তো তোমাকে দেখতেই পাচ্ছি না?কি করছো তুমি?

তাকিয়া’র কথায় গাবরে গিয়ে আনিসা তারাতাড়ি ভিডিও কল কেটে দিয়ে বললো -“কোথায়?ও ওই একটু ফেসবুক স্ক্রল করছিলাম আর কি।
সত্যি টা এই,ইসরাক এতক্ষণ ধরে তাকিয়া’কে ভিডিও কলে দেখতেছিল।

আরিসা আবার তারা দিয়ে বললো,
-“তাড়াতাড়ি খাও না ভাবীমণি?
তাকিয়া আর নিষেধ করলো না খাওয়া শুরু করলো, আর আরিসা খাইয়ে দিতে লাগলো।

আনিসা ফোন রেখে বললো,
-“ভাবীমণি তুমি তো তারপর আর বললে না তোমার আর ভাইয়ার লাভ স্টরি?
-“বিয়ের রাত থেকেই আমগো ঝগড়া শুরু হয়!একদম মা’রামা’রি পর্যায়ের।তাই লাভ স্টরি বললে ব্যাপার টা হাস্যকর হবে বুঝছো?

আনিসা আর আরিসা একসাথে বলে উঠল মা’রামা’রি!ওয়াও তাইলে তো খুব ইন্টারেস্টিং হবে। তাড়াতাড়ি বলা শুরু ক‌ইরা দাও,,,
_____

আচ্ছা তাইলে শুন..
“অতিত”
তাকিয়া বলছে না কেন তার আম্মুর পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করলো না।এদিকে ইসরাক ও বলছে না কেন সে এই বিয়ে করলো?
তাকিয়া রেগে চৌচির।

তার উপর ইসরাক ভাব দেখিয়ে ল্যাপটবে গান ছেড়ে দিয়ে,তিন সিটের সোফায় আয়েশ করে শুয়ে গান শুনতে থাকে।

তাকিয়া’র শরীর রাগে রিরি করছে একেই তো বলছে না কেন সে বিয়েটা করেছে তার উপর তাকিয়া’র অপছন্দের গান ছেড়ে রাখছে ইসরাক। তাকিয়া কিছুক্ষণ কানে হাত রেখে বসে থাকে।তার পর আর সহ্য করতে না পেরে উঠে এসে ইসরাক কে গান বন্ধ করতে বলে।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক” কিন্তু ইসরাক না শুনার ভান ধরে থাকে যেন কেউ কিছুই বলছে না।
তাকিয়া ধৈর্য হারা হয়ে ইসরাকের থেকে ল্যাপটব নিয়ে ছুরে ফেলে ফ্লুরে!
সাথে সাথে ল্যাবটব বেচারা দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়।ইসরাক নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ল্যাবটবের পানে।

ইসরাক সুমাইয়ার থেকে শুনেছে তাকিয়া গান শুনে না।সে জন্যই তাকিয়া কে রাগানোর জন্য গান চালিয়েছিল।কিন্তু তাকিয়া এতোটা রেগে যাবে ধারণা ছিল না।

তাকিয়া ফোন নিয়ে খাটের উপর গিয়ে বসে,যেন সে কিছুই করেনি।ইসরাক ও ছাড়ার পাত্র নয়।সোফার ছোট একটা বালিশ নিয়ে তাকিয়া’র ফোন বরাবর ডিল মেরে দেয়।ব্যাস তাকিয়া’র হাত থেকে ফোনটা খাট ঘরিয়ে ফ্লুরে পরে যায়।

ঝগড়া করতে এর থেকে বড় ইস্যুর প্রয়োজন পরে? পরে না। লেগে গেল দুজনের মধ্যে মা’রামা’রি ঝগড়া।একে অপরের চুল ধরে টানাটানি পর্যন্ত লেগে যায়। ফলে ঝগড়ার ফলস্বরূপ তাকিয়া’র চুল ইশরাকের হাতে!মানে কয়েকটা চুল ছিঁড়ে যায় আরকি।ইসরাক চুল গুলো নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।

তাকিয়া কিছুই বুঝতে পারলো না, হঠাৎ এভাবে চলে গেল কেন ইসরাক!….

#চলবে….ইনশা আল্লাহ।