আমি সেই চারুলতা পর্ব-৩৫+৩৬

0
321

#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ৩৫
_______________________

জমিদার বাড়িতে আজ উৎসবমুখর পরিবেশ। বাড়ির বড় ছেলে এতদিন পর বিয়ে করবে রাজি হয়েছে। জমিদার গিন্নির খুশির অন্ত নেই। প্রতিদিন নামাজ পড়ে তিনি শুধু তার ছেলেটার সুমতি চাইতেন। এতদিনে স্বপ্ন তার পূরণ হয়েছে। আজ কনেপক্ষ আসবে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে। জমিদার গিন্নি শিহাবের জন্য মেয়ে দেখেছেন অনেক যাচাই-বাছাই করে। মেয়েটার নাম সুহাসিনী। নামের মতোই মেয়েটা হাসিখুশি এবং সৌন্দর্যে অতুলনীয়। জমিদার গিন্নি সর্বপ্রথম সুহাসিনীর খবর পায় মিলির কাছে। মিলি আর সুহাসিনী একসাথেই পড়ে। মিলির সাথে নাকি চারুলতার দেখা হয়েছিলো মাস দুয়েক আগে। সেদিন থেকেই মিলি একপ্রকার পণ করে নিয়েছে এইবার সে ভাইয়ের বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। চারুলতার জীবন যখন শিহাবের জন্য থামেনি তখন শিহাবের জীবনও ওর জন্য থামবেনা। সেদিন থেকেই মিলি একপ্রকার যুদ্ধ করেই শিহাবকে বিয়েতে রাজি করিয়েছে। বিয়ের পাত্রীর সন্ধানও মিলিই দিয়েছে তাকে। ছোটবেলা থেকেই শিহাবের বিরাট ভক্ত মিলি। ভাই বলতে অজ্ঞান, সেই ভাইয়ের জন্য এইটুকু করা মিলির জন্য কিছুই নয়। মিলিও হয়তো এতকিছু করতে পারতোনা যদি না শিহাব মিলিকে নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসতো।
মেয়ের বাড়ি থেকে লোকজন এসে গেছে। জমিদার গিন্নির জোরাজুরিতে সুহাসিনীকেও নিয়ে আসা হয়েছে। সুযোগ বুঝে জমিদার গিন্নিও সুহাসিনীকে সর্বদা শিহাবের সাথে রাখতে চাইছেন। মেয়েটার চেহারায় অসম্ভব মায়া। এবার সে মায়া শিহাবকে কাবু করতে পারলেই হবে। শিহাব কি পারবে নিজের মায়াবতীকে ভুলে অন্য কারোর মায়ায় জড়াতে?
জমিদার বাড়ির পেছনের দীঘিটার পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলো শিহাব। প্রায় ৪০০ বছর আগে দীঘিটা খনন করা হয়েছিলো। এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরাই করেছিলো। এটিকে এখন অনেক সুন্দর করে তোলা হয়েছে। আগে এইটাকে খুব সাধারণ দীঘি মনে হলেও এখন গাছপালা লাগানো হয়েছে৷ বসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। দীঘির অন্যপাশেই রয়েছে ফসলি জমির মাঠ। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিবেশ অনেকটাই মনোমুগ্ধকর হয়ে গেছে। শিহাবও জায়গাটা খেয়াল করেছে মাত্র কয়েকবছর আগে। এরপর থেকেই গ্রামে এটি শিহাবের প্রিয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময় শিহাবের পাশে এসে দাঁড়ালো সুহাসিনী।
– এখানে একা একা কি করছেন?
– আমি তো একাই। একা মানুষদের সবসময় একাই থাকতে হয়।
– মানে?
– না কিছুনা। তুমি এখানে? কিছু মনে করো না তুমি সম্মোধন করছি। তুমি আমার অনেকই ছোট। প্রায় দশ বছর।
– না সমস্যা নেই। আমি এখানে আপনাকে সঙ্গ দিতে এলাম।
– তুমি এসেছো নাকি মা পাঠিয়ে?
– দুটোই। আপনার মা পাঠিয়েছেন এবং আমি এসেছি।
– সামনেই তো ফাইনাল। পড়াশোনা কেমন চলছে?
– কি জানি? কোথায় যে চলে গেছে তাকে আর খুজেই পাচ্ছিনা। তাই ভাবলাম বিয়ে করে নেই, যদি শশুড় বাড়িতে তাকে খুজে পাওয়া যায়।
শিহাব মুচকি হাসলো। শিহাবের গাম্ভীর্য দেখে তাকে হাসানোর কত প্রচেষ্টা এই মেয়ের।
– তুমি খুবই ভালো সুহাসিনী। এক দেখায় পছন্দ হওয়ার মতো মেয়ে। তোমার এমন কাউকে বিয়ে করা উচিত ছিলো যে কেবল তোমাকেই ভালোবাসবে।
– মানে?
– তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। বুঝে নাও।
– আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন শিহাব?
শিহাব উত্তর দেয়না। শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে দীঘির পানে। সারাজীবনের ব্যাপার বিয়ে। মেয়েটার সাথে সব খোলাসা করে নেওয়া প্রয়োজন। স্বামীর ভালোবাসা নিয়ে প্রতিটি মেয়ের মনেই স্বপ্ন থাকে। সুহাসিনীরও নিশ্চয়ই আছে৷ কিন্তু শিহাব যে তাকে কখনোই ভালোবাসতে পারবেনা। হৃদয়ের সে জায়গাটা অনেক আগেই শিহাব অন্যকারোর নামে করে দিয়েছে। তার জায়গা থেকে তাকে চুল পরিমাণ সরিয়ে অন্যকাউকে স্থান দিতে সে নারাজ। বিয়ের আগেই মেয়েটার এইসব জানা প্রয়োজন। এতে মেয়েটার স্বপ্নও ভাঙবেনা আর শিহাবেরও জোর করে ভালোবাসার দায়বদ্ধতা থাকবেনা।
– কি হলো শিহাব বলুন।
– আমি এই কয়েকদিনে তোমাকে যতটা চিনেছি তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি। বলার আগেই অনেক কিছু বুঝে যাও তুমি। আমি একটা মেয়েকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসতাম সুহাসিনী। বাসতাম বললে ভুল হবে এখনো বাসি। কিন্তু নিয়তির লিলাখেলা কি জানো? যেই মেয়েটাকে আমি ভালোবাসতাম আমার ছোট ভাই তাকে ভালোবাসে অনেক আগে থেকেই। আমার স্বর্ণলতায় অন্যকেউ বিভোর আর সেই ব্যক্তিটি আমার নিজেরই ছোট ভাই। এইটা জানার পর আর এগোনোর সাহস পাই নি। গুটিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে কিন্তু তাকে মন থেকে মুছতে পারলাম না। স্বর্ণলতা এত গভীরভাবে আমার হৃদয়ে দাগ কাটলো যে সে দাগ নির্মূল করার উপায় আমার জানা নেই। বিশ্বাস করো, জানা থাকলেও আমি করতাম না। অবশ্য মিথ্যা বলবো না তোমাকে আমি। আমি স্বর্ণলতাকে এরজন্য ছাড়িনি যে শাওন তাকে ভালোবাসে বরং আমি তাকে এর জন্য ছেড়েছিলাম কারণ সে শাওনকে ভালোবাসতো। তার হৃদয়ে আমার প্রতি কোনো টান নেই, ভালোবাসা তো দুরের কথা কিন্তু তবুও আমি তাকে ভুলতে পারিনা। আমার মনে কেবল তারই বিচরণ, কেবল তারই রাজত্ব। ভালোবেসে আজ সর্বহারা আমি, তবুও তাকে ভালোবেসে যাই। কোনো কারণ ছাড়াই ভালোবেসে যাই। তার জায়গাটা আমি কাউকে দিতে পারবোনা সুহাসিনী। তোমাকেও না। তোমার কাছে সময় আছে। চাইলেই তুমি বিয়েটা ভেঙে দিয়ে সুন্দর করে জীবনটা সাজিয়ে নিতে পারো।
সুহাসিনীর চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। শিহাবের কাছে তাকে এমন কিছু শুনতে হবে তা বোধহয় সে কল্পনাও করেনি।
– আপনাকে আমি প্রথম কবে দেখি জানেন? কেবলমাত্র দশম শ্রেণির ছাত্রী আমি তখন। বখাটেরা মিলিকে বিরক্ত করে বলে সবার সামনেই তাদের সাথে ঝামেলা হয় আপনার। তিনজনকে একাই মারলেন আপনি। আমার কিশোরী মনে সেদিন থেকেই আপনার জন্য অনবদ্য এক ভালোলাগার সৃষ্টি হয়েছিলো। সেই ভালোলাগাটা ভালোবাসায় পরিনত হতে সময় লাগেনি বেশি। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের মেয়েদের নাকি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। মিলির মাও চাইছিলেন মিলির বিয়ে দিয়ে দিতে কিন্তু তাতে বাধা দিয়েছিলেন আপনি। এইটা মিলির কাছে শোনা আমার। ওর যেনো কোনো বিপদ না হয় তাই প্রতিদিন আপনি ওকে স্কুলে দিয়ে আসতেন এবং তাকে নিয়েও আসতেন। প্রতিদিন লুকিয়ে দেখতাম আপনাকে। মজার বিষয় কি জানেন? আমি তখন মনে করতাম মিলি আপনার আপন ছোট বোন। যেদিন জানলাম মিলি আপনার কাজিন সেদিন আপনার প্রতি আমার মুগ্ধতা আরো বেড়ে যায় কারণ যে নিজের কাজিনের জন্যই এতটা করতে পারে সে নিজের স্ত্রীর জন্য ঠিক কি কি করতে পারে।
– মিলিকে আমি কখনো কাজিন হিসেবে দেখিনি। ও আমার ছোটবোন।
– জানি। কাজিন ভাবলে এতটা করতেন না। মিলিও আপনাকে যেভাবে ভাইয়া ডাকতো সেখানে বোঝার উপায় ছিলোনা আপনি তার নিজের ভাই না। আমার ভেতরে বেড়ে ওঠা সুপ্ত অনুভূতিটা আমার কাছেই ছিলো। কাউকে জানাইনি কখনো। আপনার সর্বস্ব যেমন স্বর্ণলতা দখল করেছে আমার সর্বস্বও তেমনি আপনি দখল করে নিয়েছেন। আপনার মনে আছে কি না আমি জানিনা, আপনি একদিন আমার কাছে একটা হেল্প চেয়েছিলেন। তৃষ্ণার্থ ছিলেন তাই আমার কাছে পানি চান। খুবই ছোট ঘটনা কিন্তু সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি। আমার সকল পাগলামি কেবল আপনারই জন্য। সবাই তো পাওয়ার জন্য ভালোবাসেনা। আমিও ভেবেছিলাম আপনাকে পাবোনা কিন্তু আমার ধারণা মিথ্যা প্রমান করে দিয়ে মিলি আমাকে প্রস্তাব করে আপনাকে বিয়ে করতে। আমি কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ ছিলাম। মনে হচ্ছিলো স্বপ্ন দেখছি। ভয়ংকর সুখের স্বপ্ন! স্বর্ণলতার প্রতি আপনার ভালোবাসা একতরফা ছিলো আর আপনার প্রতি আমার ভালোবাসাটাও। আপনি যেমন আমাকে ঠকাতে চান না তাই জানিয়ে দিলেন সব কথা তেমনি আমিও যদি অন্য কাউকে বিয়ে করি তবে তাকে ঠকানো হবে। তাকে জায়গা দিতে পারবোনা নিজের মনে। এরচেয়ে ভালো আপনাকেই নাহয় বিয়ে করি। অন্যকাউকে ঠকানোর চেয়ে ভালো নিজে নাহয় একটু ঠকে যাই। আপনার কাছে আমি আপনার স্বর্ণলতার জায়গাটা চাইনা শিহাব কিন্তু তার পাশাপাশি ছোট একটুখানি জায়গা কি আমার জন্য বরাদ্দ হতে পারে না?
শিহাব জানে তার অস্তিত্ব মানেই স্বর্ণলতা। বিন্দুমাত্র জায়গা খালি নেই যেখানে স্বর্ণলতা বিচরণ করেনি কিন্তু সেটা এই মেয়েটাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। “আমি যাকে ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসেনা” এই অনুভূতিটা বড্ড পোড়ায়। তারচেয়ে বেশি পোড়ায়, “আমি যাকে ভালোবাসি সে অন্য কাউকে ভালোবাসে” এই অনুভূতিটা।

নদীর পাড়ে অবস্থিত ছোট্ট একটি বসতবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে শিহাব। বাড়িটি দেখলেই বোঝা যায় এখানে অনেকদিন যাবত কারোর আনাগোনা নেই। এই বাড়িটি স্বর্ণলতার। শিহাব শুনেছে এখন নাকি আর কেউই এখানে থাকেনা আর ওদের কোনো আত্মীয়স্বজন ও নেই যারা বাড়িটি দখল করবে৷ ফলাফলস্বরূপ বাড়িটি খালিই পড়ে আছে। দরজায় তালা দেওয়া নেই। গ্রামে বেশিরভাগ বাড়িতেই তালা দেওয়া হয়না। সবাই আপনজন, কে চুরি করবে? শিহাব বিনা বাধায় ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে ধুলা জমেছে, চারিদিকে মাকড়সার জাল। সেগুলোকে উপেক্ষা করে শিহাব ভেতরে এলো। কোনো কারণ নেই, এমনিই একবার দেখতে এলো তার স্বর্ণলতার পরিত্যক্ত বাসাটি। সবকিছু নিজের জায়গাতেই আছে৷ কোনোকিছুরই কোনো নড়চড় হয়নি। শিহাব চারুর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। চারুর অনেক কিছুই এখানে ছড়ানো ছিটানো। আপন খেয়ালে শিহাব আলনাটার দিকে এগলো, অনেকগুলো জামাকাপড়ের মাঝে একটি পোশাক বিশেষভাবে শিহাবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সাদা রঙের মাঝে সবুজ ছাপার একটি সালোয়ার কামিজ। এই পোশাকেই শিহাব প্রথমবার তার স্বর্ণলতার সাক্ষাৎ পায়। শীতকালের সেই দুপুরবেলা আজও অমলিন শিহাবের স্মৃতির পাতায়! অদ্ভুত! এতদিন পরেও সালোয়ার কামিজটা এখানে আছে? অবশ্য এরপর চারুলতা এটাকে পড়ার বিশেষ সময় পায়নি। কিছুদিন পরেই বিয়ে হয়ে যায় তার সাথেই রেখে যায় এসব কিছু। শিহাব চারুলতার সেই ওড়নাটি নিজের কাছে রেখে দিলো। স্মৃতি হিসেবে এরচেয়ে ভালো আর কি হয়?
নাজিমুদ্দিনের ঘরে টেবিলের উপর শিহাব একটি ডায়েরি দেখতে পায়। শিহাব সেটায় বিশেষ দৃষ্টি দিলোনা। কারোর ব্যক্তিগত জিনিস এভাবে দেখা উচিত না কিন্তু টেবিল ক্রস করার সময়ই ধাক্কা লেগে ডায়রিটা পড়ে গেলো আর সেখান থেকে বেড়িয়ে এলো একটি ছবি। ছবিটি নাজিমুদ্দিনের আর তার পাশেই বসে আছে শিহাবের অতি পরিচিত দুজনেই পুরুষ। ছবিটি দেখে শিহাবের ভ্রু কুচকে এলো। দুজনের জামাকাপড়ই কিছুটা অন্যরকম। কই তাদের তো কখনো এমন পোশাক পড়তে দেখেনি শিহাব। কৌতুহল বশত ডায়রিটা খুললো। প্রতিদিনের দিনলিপি লেখা নেই এতে। এতে একসাথে রয়েছে একটি জীবনকাহিনী যা অসমাপ্ত। সম্ভবত, লেখার সময় নাজিমুদ্দিন কোথাও বের হন আর তিনি কখনো বাসাতে ফিরে আসেননি তাই ডায়রিটা এখনো এখানেই রয়েছে। শিহাব প্রথম থেকেই পড়া শুরু করলো। সেখানে তার আর রাধা দেবী সারদা সম্পর্কে বিস্তারিত ঘটনা লেখা আছে। শিহাবের কাহিনিটা ভালোই লাগলো তবে লুকিয়ে লুকিয়ে তার স্নান করা দেখার ব্যাপারটা বেশ জঘন্য মনে হলো তবে কে জানতো এটা কেবল জঘন্যতার শুরু? এরপর ধীরে ধীরে শিহাব সকল কিছু জানতে পারলো। মেয়েদের নিয়ে করা ব্যাবসা সম্পর্কেও খুটিনাটি বিষয় জানলো আর জানলো নিজের মেয়েকে নিয়ে করা নাজিমুদ্দিন ওরফে বিশ্বজিতের ভয়ংকর ষড়যন্ত্র কথা। সেখানে উল্লেখিত বস নামক ব্যক্তিটির কথা কিন্তু ডায়েরিটি অসম্পূর্ণ! অসম্পূর্ণ হলেও এখানে যে ভয়ংকর এক ষড়যন্ত্র আছে তা ধারণা করতে পারছে শিহাব। আর সবচেয়ে রহস্যময়ী হলো সেই ছবিটা৷ এরা দুজন এখানে এই ছবিতে কেনো? তবে কি বসের সাথে এদের কোনো সম্পর্ক আছে? এরাই ক্ষতি করতে চায় শিহাবের স্বর্ণলতার? এ কি করে সম্ভব? শিহাব খুব ভালোবাসে তাদের। তারা কিভাবে এমন কিছু করতে পারে? যদি নাজিমুদ্দিনের লেখা এই ডায়রিটা সত্য হয় আর এই ছবিটি সত্যিই বসের সাথে কানেক্টেড হয় তাহলে চারুলতার ভীষণ বিপদ। এই বিপদ থেকে বাঁচাতে হবে তাকে। একজন বাবা কিভাবে এমন জঘন্য চিন্তাভাবনা করতে পারে? তাছাড়া সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সে এইসব লিখে নিজের বিরুদ্ধে এতবড় প্রমাণই বা কেনো রেখেছে আর এই ছবিটাই বা কেনো রেখেছে? তবে কি এই ডায়েরি আর ছবির মাধ্যমে সে কাউকে কোনো ম্যাসেজ দিতে চাইছিলো? কিন্ত কাকে? আর এভাবে কেনো? নাহ! অনেক প্রশ্ন সামনে এসে যাচ্ছে, স্বর্ণলতার জীবন ঝুঁকিতে আছে। তাকে বাঁচতে হবে। সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে। আর এই গ্রামে থেকে এইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবেনা। খুব দ্রুত শহরে যেতে হবে। এইসব প্রশ্নের উত্তর কেবল এ দুজনই দিতে পারতো আর এখন কেবল একজনই দিতে পারবে।

★★★

জমিদার বাড়ির বাগানে বসে আছে মিলি। আজ নিজের প্রিয় বান্ধবীর সাথে ভাইয়ের বিয়ের ডেট ফাইনাল হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু একঘন্টা যাবত খোজাখুজি করেও শিহাবকে কোথাও পাওয়া গেলোনা। শেষ পর্যন্ত জমিদার গিন্নি মিথ্যা ফোনের বাহানায় জানালেন শিহাব গুরুত্বপূর্ণ কাজে শহরে গেছে। দ্রুতই ফিরে আসবে। বিয়ের তারিখ যেনো ঠিক করে নেওয়া হয়। সুহাসিনীর বাড়ির সকলে কথাটা মেনে নিলেও মিলির মনে সন্দেহ থেকে যায়। শিহাবকে আজ অবধি বুঝে উঠতে পারলোনা সে। মিলির ভাবনার ঘোর কাটে ফোনের আওয়াজে। স্কিনে জ্বলজ্বল করছে “অভি” নামটি। মিলি প্রচন্ড অভিমানে কলটা কেটে দিয়ে ফোন সুইচ অফ করে দিলো। অভি নামক এই ছেলেটাকে সে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে কিন্তু অভি! নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই ব্যস্ত সে। সে প্রেম করতে পারবে অথচ বিয়ে করতে পারবেনা। ওইদিকে মিলির মা তাকে বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এইকথা অভিকে জানাতেই সে বললো, “আমি জব খুজছি। বেকার ছেলের কাছে তো আর তোমার মা তোমাকে বিয়ে দেবেনা।” অভির কথা মাথায় আসতেই রাগ সপ্ত আসমানে উঠলো মিলির। আজ যদি সে এই ছেলেটাকে ভালো না বাসতো তাহলে নিঃসন্দেহে মায়ের পছন্দ করা ছেলেটিকেই বিয়ে করে নিতো।

মিলিকে প্রথমবার কল দেওয়ার পর সে ফোনটা কেটে দিলো এবং দ্বিতীয়বার ফোন দেওয়ার পর ফোনটাই বন্ধ পেলো অভি। মেয়েটার অভিমান আজকাল খুব বেড়েছে। তাকে কি না বিয়ে করতে হবে। যেখানে হাজার হাজার সুন্দরী মেয়ে অভির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে সেখানে অভি কি না বিয়ে করবে মিলিকে। তবে মেয়েটা বেশ কাজের। জমিদার বাড়ির সকল খবরাখবর মিলির কাছে খুব সহজেই পাওয়া যায়। ওই বাড়ি সম্পর্কে কৌতুহলের অন্ত নেই অভির। কিছু একটা আছে সেখানে যা সবাই লুকাতে চাইছে।
অভি ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ দিলো। খুব বড় একটা ডিল করতে হবে এইবার। একেবারে ৩০০ মেয়ে দিতে হবে। মেয়েরা প্রায় প্রস্তুত। শুধু আর পাঁচটা মেয়ে প্রয়োজন। না পাঁচজন নয় চারজন কারণ একজন হবে চারুলতা। আর অন্যান্য মেয়েদের তুলনায় চারুলতাকে আলাদা করে পাঠানোর চিন্তাভাবনা অভির। ওই মেয়ের জন্য অনেক টাকা পাওয়া যাবে।
একটা পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে অভি ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলো। ক্লান্ত হয়ে গেছে সে এইসব করতে করতে। ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে কি? অভি মুচকি হাসলো, সে চাইলেও আর এইসব ছাড়তে পারবেনা। আর তাছাড়া এটা তার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইবার মেয়েগুলো পাচার করা হয়ে গেলে একটা লম্বা ভ্যাকেশনে যাবে বলে ঠিক করলো সে। কাজ করতে করতে ক্লান্ত সে। এমন সময়েই ঘরে প্রবেশ করলো স্মৃতি।
– কি করছো অভি?
– টাকার কথা ফাইনাল করলাম। বেশ বড় ডিল বুঝলে! তুমি এখানে?
– চলে এলাম তোমার সাথে সময় কাটাতে। এখন বলো তোমার প্ল্যান কি?
– কিসের প্ল্যান?
– আরে কিসের প্ল্যান মানে? চারুলতার কি করবে?
– তাকে আমার উপর ছেড়ে দাও। ও আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো নয় যাকে এখানে এনে বন্দি করে রাখবো। একেবারে লাষ্ট মোমেন্টে ওকে তুলে এনে প্লেনে উঠিয়ে দেবো। এখানে এনে আটকালে ও নিজে তো কোনো না কোনোভাবে মুক্ত হবেই, মেয়েগুলোকেও মুক্ত করে দেবে। এমন সাংঘাতিক মেয়েকে নিয়ে আমি ঝুঁকি নেবো না। আমি ভেবেছিলাম গ্রামের মেয়ে, একটুতেই কেদেকেটে অস্থির হয়ে যাবে কিন্তু এই মেয়ের মনোবল দেখে আমি হতবাক! এইটুকু মেয়ে এত মনের জোর কোথায় পেলো কে জানে? তুমি ভাবতে পারো ও আমাকে আঘাত করে পালায়? কত সাহস ওর!
– তুমিও বা কেনো ঘরবাড়ি ছেড়ে ওকে ঝোপে নিয়ে গিয়েছিলে?
– রাস্তায় ছিলাম তখন। পাশে সুন্দরী মেয়ে। গায়ের কাপড় এলোমেলো। কন্ট্রোল করতে পারিনি।
– তাই বলে ঝোপে?
– আর কোনো কমফোর্টেবল স্পেস সেখানে ছিলোনা। আমি শুনেছিলাম মেয়েটা তেজি কিন্তু এতটা হবে জানতাম না। রাস্তার মাঝে হুট করে গায়েব। পরে জানতে পারি সে নিজের ভাইকেও খুজে পেয়ে গেছে। আর হামিদও কেমন হারা*মি। ভেবেছিলাম সুবহানের ছেলে। দেখতেও ভালো। একটু টাকাপয়সা আর নারীর লোভ দেখিয়ে হাত করে নেবো আর ওকে হাত করতে পারলে চারুলতাও এমনিতেই আমাদের হাতে চলে আসবে কিন্তু শা*লা হারা*মি আমার প্ল্যানে জল ঢেলে দিয়ে মায়ের ম*রার পর সম্পূর্ণ রূপই পরিবর্তন করে ফেললো। আগে যেখানে চারুলতার সাথে ওর বিন্দুমাত্র মতে মিলতো না সেখানে ওই শা*লা হারা*মি কিভাবে ৩৬০° পল্টি খেয়ে বোনের দলে চলে গেলো। একবার ভাবো কতটা বদলালে সুবহান পর্যন্ত নিজের ছেলেকে ভয় পেয়ে টাকা কিংবা নারীর অফার করতে পারেনা। বেশি ভালোমানুষি দেখাতে এসে আমার প্ল্যানটাতেই জল ঢাললো। ওকে দলে আনতে পারলে দলেদলে মেয়েদের আটকানো যেতো। ছেলে দেখতে সুবহানের মতো আর তার ব্যাবহার মায়ের মতো। ব্যাবহারটা বাপের হলেই তো সব পরিকল্পনা অনুযায়ী হতো। হারা*মি শুধু চারুলতাকে নিয়েই গেলো না বরং একের পর এক খু*ন করতে সাহায্যও করলো। আর মেয়েটারও বা কত সাহস এইভাবে কেউ কাউকে খু*ন করে? আমার চেয়েও ভয়ংকর এরা।
স্মৃতি ভ্রুকুটি করে তাকালো অভির দিকে,
– তুমি ওদের দুর্নাম করছো নাকি প্রসংসা?
– তুমি যেটা মনে করো তবে এরা দুজনেই বেশ কাজের। দলে আসলে বেশ লাভ হতো আমাদের।
– এরা আমাদের বিশ্বস্ত লোকেদের খু*ন করলো আর তুমি ওদের দলে টানতে চাইছো?
– ওরা কেউই বিশ্বস্ত ছিলোনা। চোখকান খোলা রাখলেই বুঝতে। এদের মরায় কিছুই যায় আসেনা।
– সুবহান? (স্মৃতি)
– একটু তো সম্মান দাও তাকে।
– ওই হারা*মিকে আবার কিসের সম্মান?
এই অভি!
স্মৃতি গলা জড়িয়ে ধরলো অভির। অভির ভাবান্তর হলো না।
– বলো।
– বিয়ে করবে আমাকে?
– তুমিও?
– আমিও কি?
– বিয়ের কথা বলছো?
– কেনো আরো কেউ বলেছে নাকি?
– অভাব নেই।
– তাদের কথা বাদ দাও। তুমি আমাকে দেখো। বলো বিয়ে করবে কি না?
– না।
– মধু খাওয়া তো শেষ, এখন কেনো বিয়ে করবে?
– জানোই তো। শুধু শুধু নিজের সময়টা নষ্ট করো কেনো?
– বাই এনি চান্স তুমি কি বিয়ের জন্য ভার্জিন মেয়ে খুজছো?
– আরে ধুর, ডেরায় নতুন আসা অধিকাংশ মেয়েই ভার্জিন। এসব ভার্জিন মেয়ে হাতের ময়লা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
– তাহলে কাকে বিয়ে করবে? যার কাছে মধু পেয়েছো তাকেও করবেনা যার কাছে পাওনি তাকেও করবেনা তাহলে করবে কাকে? অবশ্য মধু না পাওয়া মেয়েগুলো অধিকাংশই খ্যাত টাইপের হয়। যেমন চারুলতা! এরজন্যই তো তাকে বিয়ে করলেনা।
– চারুলতাকে বিয়ে করিনি শিহাবের জন্য। বুঝে ফেলতো সব। তাছাড়া তার চোখের সামনে চারুলতাকে গায়েবও করা যেতো না। মেয়ে বেশ সুন্দরী ছিলো।
– সুন্দরী হয়ে কি লাভ? বিয়ে হয়েই বা কি লাভ? সে পারমানেন্ট তো আর হতো না। সেই ভিনদেশে দামি হোটেলের বিছানায় শোভা পেতো।
– আমার জীবনে পারমানেন্ট কেউ আসুক আমি চাইনা।এখনই বেশ ভালো আছি। কিসের অভাব? না টাকা পয়সার আর না নারীর। এভ্রিথিং পার্ফেক্ট!
– আমাকে বিয়ে করতেই পারো।
– না স্মৃতি।
– তোমার উপর আমার ভীষণ রাগ হয় মাঝেমধ্যে। যাকগে বাদ দাও। এইবার বলো চারুলতাকে ঠিক কবে আনবে?
– আমাদের ফ্লাইট রাত নয়টায়। সব ঠিকঠাক করাই আছে। কেউ সন্দেহ করবেনা। মেয়েগুলোকে হিপনোটাইজ করে পাঠাবো লিগ্যাল ভাবে।
– মানে? তুমি পাগল হয়েছো?
– না। সব খরচ তাদের। তারা এভাবে নিতে চায়।
– কি পাগলের সাথে ডিল করো অভি?
– আমাদের টাকা দিয়ে কাজ। তারা যদি এতগুলো মেয়ের পাসপোর্ট, ভিসা তৈরি করে লিগ্যালি নিতে চায় আমার অসুবিধা কোথায়? তবে সম্পূর্ণ লিগ্যাল হবেনা ব্যাপারটা।
– আর চারুলতা?
– তাকে রাত আটটার মাঝে কিডন্যাপ করবো।
– মেয়ের মানষিক শক্তি প্রবল। হিপনোটাইজ করলে খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয়না। ইঞ্জেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে দিলে কেমন হয়?
– চিন্তা করোনা, ইঞ্জেকশন লাগবেনা। আমাকে দেখে এমনিতেই ও অজ্ঞান হয়ে যাবে।
দুজনেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। স্মৃতি কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললো,
– তোমার এই ভোলা ভালা ফেইস দেখলে কে বলবে তুমি এসবের সাথে জড়িত থাকতে পারো?
– কেউ তো আমার ফেইস দেখবেই না। সুন্দরী চারুলতাও দেখেনি।
– ওর নামের পাশে বারবার সুন্দরী ট্যাগ যোগ করার কি অর্থ? তুমি প্রুভ করতে চাইছো সে আমার চেয়েও বেশি সুন্দর?
– নিঃসন্দেহে চারুলতা বেশি সুন্দর তবে তারসাথে ইন্টিমেট হয়েছি আমি। শুধু শারীরিক প্রশান্তিই পাওয়া যায়। তোমার কাছে কিন্তু আমি শুধু শারীরিক প্রশান্তিই নয় মানষিক প্রশান্তিও পাই। তুমি প্লিজ ওকে হিংসে করোনা। ও তোমার যোগ্য না স্মৃতি। ও তো তোমারই বোন বলো।
– বোন মাই ফুট। ওই শা*লা হা*রামি, কু*ত্তার বাচ্চা সুবহানরে আমি নিজের বাপ মানিই না তাহলে ওর মেয়ে আমার বোন কিভাবে হয়?
– তুমি মানো আর মা মানো সুবহান তোমার বাবা আর চারুলতা তোমার বোন।
– অভি দেখো, মন মেজাজ ভালো আছে আমার। একদম খারাপ করবেনা।
– আচ্ছা ঠিক আছে। চলো একটু আদর করে দেই।
– শুধু আদরই করবে, বিয়েটা করবেনা।
– না। ইন্টিমেট হতে বিয়ের প্রয়োজন হয়না। তুমি কাছে এসো তো।

★★★

নাজিমুদ্দিনকে খু*ন করার পর প্রায় ছয়মাস কেটে গেছে। এখনো অবধি কোনো সুরহা হয়নি। চারুর সন্দেহ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে সাজিদের প্রতি। আজ বাসায় শুধু চারু হামিদ আর সাজিদই আছে। পুতুল স্কুলে আছে আর নাজমা বেগম বেড়াতে গেছেন বোনের বাড়িতে। হামিদের চিন্তার অন্ত নেই এখন। চারুকে সে সাজিদের সাথে একা ছাড়তে বেশ ভয় পাচ্ছে। চারুর ওবাড়ি থেকে চলে আসার পর প্রায়ই ফোন করে খোজখবর রাখছে। সাজিদকে এখন সেও বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করেনা। সন্দেহ করার কোনো কারণ ও পায়নি কিন্তু চারু সাজিদকে বিশ্বাস না করায় ও-ও করতে পারছেনা। সবসময় চারুর আশেপাশেই থাকছে। কিছুক্ষণ যাবত এই ব্যাপারটা সাজিদও খেয়াল করেছে তবে হামিদের এমন করার কারণ তার বোধগম্য হলোনা।
{গল্পের লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া}
চারু মেনে নিয়েছে সাজিদকে। এর অবশ্য একজন কারণ ছিলো। চারুর মনে এক মুহুর্তের জন্য সন্দেহ ডানা বাধে যে সাজিদই বস হতে পারে। বস নামক সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিটি জোর করেই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলো চারুর সাথে। সাজিদের কাছাকাছি গিয়ে সে বুঝতে চাইছিলো সাজিদই সে কি না। চারু বুঝতেও পেরেছে লোকটা সাজিদ ছিলোনা। তবে সাজিদের আচরণ সত্যিই মুগ্ধ করেছিলো চারুকে। যতদিন না সে তার কাছে গিয়েছিলো ততদিনে একবারের জন্য সাজিয়ে নিজের অধিকার ফলাতে আসেনি। সারাজীবন সকলের অবহেলা পেয়ে আসা চারু প্রথমবারের মতো এতটা গুরুত্ব পায় সাজিদের কাছে। এই ব্যাপারটাতে চারুও সাজিদকে নিজের অনিচ্ছায় অনেকটায় জায়গা দিতে বাধ্য হয় নিজের মনে। অবশ্য এইটা সাজিদের নিজস্ব অর্জন। চারু দিতে চায়নি কিন্তু সাজিদ আদায় করে নিয়েছে। ভালোবাসাহীন চারু প্রথমবারের মতো এতটা ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারে। এর আগে তার কাছে ভালোবাসা বলতে ছিলো শাওন। শাওন শুধু নিজের মতামত অন্যের উপর চাপাতেই পারতো আর শিহাব ভালোবাসলেও কখনো শাওনের মতো অধিকার ফলায়নি৷ সে চারুকে বুঝেছে কিন্তু চারুকে তা বুঝতে দেয়নি। শিহাবের ভালোবাসার ধরনে আজও সে অনন্য। কিন্তু চারু তো চেয়েছিলো একটু কেয়ার। একটু বুঝতে পারা মানুষ। চারুর সেই মানুষটা হয়েছিলো সাজিদ। অবশ্য চারু এখনও প্রস্তুত সাজিদ সম্পর্কে সব মেনে নিতে। এমন প্রস্তুতি সে আগেই নিয়ে রেখেছে নিজ মনে। দুপুরে তিনজনেই খেতে বসেছে। নানান পদ আইটেমের মাঝে একটা ছিলো কলিজা ভুনা। কলিজা ভুনাটা দেখেই সাজিদের মনে আবারও প্রশ্ন জাগলো,
– নাজিমুদ্দিনের কলিজাটা কি করেছিলেন বেলিফুল?
– বলবো না।
– প্লিজ, অন্তত এখন তো বলুন। আর কত অপেক্ষা করাবেন?
– হামিদ খেয়ে ফেলেছে।
কথাটা শুনেই হামিদ লাফিয়ে টেবিল থেকে উঠে গেলো।
– কি কইতাছস এইগুলা? মাথা খারাপ নাকি?
– ঠিকই বলছি।
– দেখ চারু, মিথ্যা বলবিনা। আমি মোটেও কারোর কলিজা খাই নাই।
– আমি কখন বললাম তুমি খেয়েছো? আমি কখনো তোমাকে হামিদ ডেকেছি?
হামিদ ভ্রুকুটি করে তাকালো চারুর দিকে।
– সত্যি কইরা বল তো কলিজাটা কি করছস? খাইয়া ফেলস নাই তো আবার? তুই কিন্তু আমারে কথা দিছিলি।
– আমি খাইনি। হামিদ খেয়েছে।
– আরে বইন কোন হামিদ। ঘরে তো আমি আর তুই ছাড়া আর কেউ ছিলো না।
– তোমাদের একটা গল্প শোনাই?
– আমরা কি বাচ্চা যে গল্প শুনমু?
– শোনো না।
– আপনি বলুন বেলিফুল। আমি শুনছি।
– আমি যখন কলেজে যেতাম তখন প্রতিদিন অনেক গুলো প্রানী দেখতাম। তাদের মাঝে ছিলো একটা রুগ্ন কুকুর। কত অসহায় সে! তার জন্য আমার খুব মায়া লাগতো। তার ছোট একটা বাচ্চা ছিলো। বাচ্চাটাকেও সে অনেক ভালোবাসতো। মায়ের ভালোবাসা সর্বদাই অতুলনীয়। হোক সে মানুষ অথবা পশু।
– এইটা? এইটা ছিলো তোর গল্প? এই গল্প দিয়া কি প্রমাণিত হয়?
– একদিন সেই কুকুরটা মারা যায়। তার বাচ্চাটা অসহায় অবস্থায় ওভারব্রিজে বসে থাকতো। না খাওয়ার কিছু ছিলো আর না থাকার জায়গা। সাদা ধবধবে কুকুরছানা কিন্তু ময়লা হয়ে গেছে। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো, আর ও একা একা ভিজছিলো সেই ওভারব্রিজে। আমার খুব মায়া লাগে তাকে আমি বাসায় আনি। তারপর পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন করে নিজের কাছেই রেখে দেই। ও সবসময়ই আমার সাথে সাথে থাকতো। নিজ ভাষায় আমার সাথে কথা বলতো। আমিও বলার চেষ্টা করতাম। একপর্যায়ে ও আমার বন্ধু হয়ে যায়।
– এই কাহিনি আমি জানি। সারেন্ডার করনের আগে তুই ওই কুত্তাটারে আমার কাছে রাইখা গেছিলি। এহন এইগুলা বলতাছস ক্যান?
– আমাকে শেষ করতে দাও।
– আচ্ছা কর।
– একটু বড় হওয়ার পর ও আমার সাথে রাস্তায় বের হতো। আমাকে কেউ কিছু বললে তার উপর ঝাপিয়ে পড়তো। একদম বড় ভাইয়ের মতো রক্ষা করতো আমাকে। তাই আমি ওর নাম দেই হামিদ। আর হামিদই খেয়ে নিয়েছে কলিজাটা।
হামিদ স্তব্ধ হয়ে গেলো আর সাজিদ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। তাহলে হামিদের কলিজা খাওয়ার এই রহস্য? নিজের মাথায় নিজেরই দুটো মারতে ইচ্ছা করছে আর এই হামিদের কলিজা খাওয়ার বিষয়টা ভাবতে ভাবতে কতরাত ঘুমায়নি সে। হামিদ কি না শেষ পর্যন্ত চারুর পোষা কুকুরটির নাম।
হামিদ এখনো ভাবছে তার আসলে কি করা উচিত। কি বলা উচিত। ভাগ্যিস ও সেদিন কুকুরের নাম জানতে চায়নি। ওর আর কুকুরের নাম এক জানলে সেদিন নিশ্চিত হার্টফেল করে মারা যেতো। এমন সময়ই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। এসময় কে? চারু হাত ধুয়েই দরজাটা খুলে দিলো। দরজার অপরপাশে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখে একমুহূর্তের জন্য থমকালো চারু। হিমেল এসেছে।
– হ্যালো চারুলতা। অনেকদিন পর দেখা হলো তোমার সাথে। কেমন আছো?
হিমেলের কথা শুনে এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো চারু। তারমানে হিমেল আগেই জানতো চারু এখানে আছে। সাজিদ তাকে মিথ্যা বলেছিলো। তবে কি ওর সন্দেহই সত্য?

– চুপ করে থাকবেন না সাজিদ। উত্তর দিন।
– হ্যাঁ বেলিফুল। হিমেল সবই জানতো।
– কেনো করলেন এতবড় ছলনা?
– ছলনা করিনি বেলিফুল। যা করেছি, যতটুকু করেছি আপনার জন্যই করেছি। আমি জানি আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন না কিন্তু একটু ভরসা রাখুন৷ আমার দ্বারা এমন কিছু হবেনা যাতে আপনার ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। বিশ্বাস করতে হবেনা, ভরসা করুন।
– বিশ্বাস আর ভরসা কি আলাদা জিনিস সাজিদ?
– একটু পার্থক্য আছে।
– কি?
– পরে বলি?
চারু প্রতিউত্তর না করেই সেখান থেকে চলে এলো। নীচে হামিদ আর হিমেল আছে। সাজিদও সেদিকেই গেলো। হামিদ এখনো চেনেনা হিমেলকে৷ কে জানে তার সম্পর্কে জানলে হামিদের কি প্রতিক্রিয়া হবে। তবে কি এইসব কিছুর সাথে হিমেলও জড়িত? হঠাৎই স্টোর রুমে কিছু আওয়াজ পাওয়া গেলো। চারু বিরক্ত হলো। বেড়ালটা আবার এসেছে আর এইবার সে স্টোর রুমে হানা দিয়েছে। থাকুক ওখানেই আটকে কিন্তু পরক্ষণেই আবার মায়া লাগলো তার জন্য। সেখানে ঢোকা গেলেও বের হতে পারবেনা বেড়ালটা। চারু দরজা খুলে স্টোর রুমে এলো। এঘরে আগে কখনো আসেনি সে। সব অব্যবহৃত জিনিসপত্রে ঠাসা। চারু জানালাটা খুলে দিয়ে হাতে কিছু একটা তুলে নিয়ে বেড়ালটাকে তাড়া করতেই বেড়ালটা দৌড়ে পালালো। হাতে ছিলো একটা লাঠির মতো বস্তু। চারু সেটাকে ছুড়ে ফেললো। কোথায় পড়বে কিছু যায় আসেনা। এমনিতেও এখানে কেউ আসেনা। সেটা গিয়ে আলমারিতে লাগলো আর সেখান থেকে একটা ছবি বেড়িয়ে এলো। ছবিটি হাতে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো চারু।
নাজমা বেগমের পড়নে একটি লাল শাড়ি। মাথা ভর্তি সিঁদুর। তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে নাজিমুদ্দিন আর অন্যপাশে আরেক লোক। চারুর অবাক হওয়া শেষ হয়না। একটা কোনায় দেখা যায় হিমেল আর দুটো সাজিদকে। কোনোরকম এডিট না এইটা। দুজনের কাপড় ভিন্ন। একজনের হাতে বই আরেকজনের হাতে জুসের গ্লাস। তিনজনেই হেসে কথা বলছে। এই অবধি দেখে হয়তো চারু সবটাই মেনে নিতে পারতো কিন্তু একটু দুরেই এককোনে দেখা যাচ্ছে হামিদকে।
হামিদকে দেখেই চারুর দুনিয়া ঘুরতে লাগলো। হামিদ? ওর ভাই, যাকে ও অন্ধের মতো বিশ্বাস করে! তারমানে হামিদ আগে থেকেই সব জানতো? চারুর যেনো চিন্তাশক্তি লোপ পেলো। মনে মনে একটা কথাই বাজছে
“এত বড় ধোকা?” হামিদ কিভাবে করতে পারলো এমনটা?

বিঃদ্রঃ বড় পর্বে রিচ কম হয়। প্লিজ রেসপন্স।
_______________________

To Be Continued…
®শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া

#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ৩৬
_______________________

কারোর পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। নীচ থেকে কেউ একজন উপর আছে। সম্ভবত সাজিদ! চারু বিন্দুমাত্র নড়লো না। এখন আর লুকোচুরির কিছু নেই। যা হওয়ার সরাসরি হবে। চারু কেমন অপ্রকৃতস্থের মতো তাকিয়ে আছে ছবিটির দিকে। ছবিতে থাকা ছেলেটি হামিদ তা এখনো বিশ্বাস হতে চায়না চারুর। মনে হচ্ছে এখনই কিছু হবে আর তার ঘুম ভেঙে যাবে। তারপর দেখা যাবে, সে স্বপ্ন দেখেছে। হামিদ জড়িত নয় এসবের সাথে। এইটা কেবলই এক দুঃস্বপ্ন। দুনিয়ায় সবাইকে সে খারাপ হিসেবে মানতে পারবে কিন্তু হামিদ! সবসময় যাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে এসেছে সে কিভাবে? হামিদ কিভাবে পারলো চারুর বুকের ভিতরটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে? চারুর শরীরে যে একটা আঘাত সহ্য করতে পারেনা সে কিভাবে মনে এতটা আঘাত করতে পারে? চিন্তাশক্তি এমন লোপ কেনো পাচ্ছে চারুর? এমন সময়েই দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো সাজিদ। চারুর হাতে থাকা ছবিটা দেখে এক মুহুর্তের জন্য চমকে উঠলো সে।
– এত বড় ছলনা কিভাবে করলেন সাজিদ?
চারুর শান্তকণ্ঠে এমন কথায় দিশেহারা হয়ে গেলো সাজিদ।
– না বেলিফুল, আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছুনা।
চারু কিছু না বলে স্টোর রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের ঘরের দিকে গেলো। সাজিদও চারুর পিছুপিছু ছুটলো।
– বেলিফুল, আমার কথাটা শুনুন বেলিফুল।
সাজিদের কথার প্রতিউত্তর করলোনা চারুলতা। গোপনে বিছানার নীচে লুকিয়ে রাখা ছু*ড়িটা বের করলো সে।
– আপনাদের আজ আমি খুন করবো সাজিদ। বিশ্বাসঘাতকদের জায়গা আমার জীবনে নেই।
– বেলিফুল আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। আমার কথাটা আগে শুনুন।
– কি মনে হয় আপনার? আপনি আমাকে যাচ্ছেতাই বুঝিয়ে দেবেন আর আমি তা মেনে নেবো?
– আপনি আগে শুনন।
চারু হঠাৎই খুব আক্রমনাত্মক হয়ে উঠলো। হামিদের ছলনা মেনে নিতে না পেরে কাছে থাকা সাজিদের উপরই সে আক্রমণ করে বসে। সাজিদের হাতের কিয়দংশ কে*টে র*ক্তক্ষরণ শুরু হয়,
– কেনো এমনটা করলেন সাজিদ? আমার মনে একটু হলেও জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন আপনি তবে কেনো মূহুর্তে সব তছনছ হয়ে গেলো?
– বেলিফুল আপনি,,,
চারু এইবার চিৎকার করা শুরু করলো। ঘরের মাঝে সাজিয়ে রাখা ফুলের টবগুলো ছুড়ে মারলো সাজিদের দিকে। প্রচন্ডরকমের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় তার সাজিদের সাথে। সাজিদ শুধু নিজেকে বাচ্চাছিলো কিন্তু চারুকে আ*ঘাত করছিলোনা ফলে একটা পর্যায়ে গিয়ে চারু সাজিদকে কাবু করে ফেললো। সাজিদকে ছু*ড়ির আঘাত করতেই যাবে এমন সময়েই কেউ জাপটে ধরলো চারুকে। সাজিদের কাছ থেকে সরাতে চাইছে। চারুর মাঝে কোনো হিতাহিত জ্ঞান নেই। সে চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর। একজন পারছেনা বলে আরো একজন এসে চারুকে শান্ত করার চেষ্টা করে থাকে। দুজন মিলে আটকে নেয় চারুকে। চারু একবার পেছনে ফিরে তাকায়। প্রথমে যে তাকে ধরেছলো সেটা হামিদ এবং পরবর্তীতে হিমেল এসে সাহায্য করেছে তাকে।
– চারু কি করতাছস তুই? সাজিদরে খু*ন করতে চাইতাছস ক্যান?
হামিদের কথায় একমুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো চারু। কলিজাটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার।
– তুমি কিভাবে পারলে এমনটা করতে?
চারুর কথায় থমকে গেলো হামিদ। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট! তবে কি চারু সব জানতে পেরে গেলো?
– অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছিলাম তোমাকে আমি। এই প্রতিদান দিকে আমার বিশ্বাসের?
– চারু আমি,, আমার কথাটা শোন। আমি,,,
চারু সুযোগ দেয়না। হঠাৎই এলোমেলো আ*ঘাত করা শুরু করে হামিদকে। হাত দিয়ে করা আঘাত হামিদের শরীরে না লাগলেও কলিজা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে তার। চারুর এ অবস্থা সে কিছুতেই মানতে পারছেনা। যার জন্য এতকিছু হলো, তারই এই অবস্থা কিভাবে মানবে হামিদ? সাজিদ আর হিমেল চারুকে আটকানোর চেষ্টা করলে ঘরে থাকা বড় ফুলদানিটা দিয়ে হিমেলের মাথায় সর্বশক্তি দিয়ে আঘা*ত করলো চারু। হিমেল অচেতন হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো। চারুর পাগলামি থামলো না। সে সাজিদকেও ফুলদানি দ্বারা আঘা*ত করলো কিন্তু সেটা খুব বেশি জোরে লাগলো না। তারপরও সাজিদ মেঝেতে পড়ে গেলো। এইবার চারুর সকল আক্রশ গিয়ে পড়লো হামিদের উপর। চারু এখন আহত বাঘিনীর ন্যায় খেপেছে। তাকে শান্ত করার সাধ্য কার? একজন মানুষ যখন জীবনের সবটা হারিয়ে ফেলে তখন আর তার বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়না আর যখন একটা মানুষের মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি আপন মনে হয়, মৃত্যুকে সে স্বীকার করে নিতে পারে ওমনি সে ভয় পেতে ভুলে যায়। হয়ে যায় ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতম। এতক্ষণ ধস্তাধস্তির ফলে ছুড়িটা নীচে পড়ে গিয়েছিলো৷ নীচে থাকা ছু*ড়িটা নিয়ে আক্রমনাত্মকভাবে চারু ছুটে যায় হামিদের দিকে। হামিদ একপ্রকার ভড়কে যায়৷ ফলাফলস্বরূপ, চারুর এক ধাক্কায় নীচে পড়ে যায় সে। চারু পাগলের মতো সেটাকে হামিদের বুকের বা পাশে চালাতে গেলে হামিদ নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও হামিদ কোথায় কোনো আঘা*তের স্পর্শ পেলো না। হামিদ ধীরে ধীরে নিজের চোখ খুলতেই দেখা গেলো অশ্রুজলে টইটম্বুর চারুর আঁখিদ্বয়। হাত থেকে পড়ে গেলো ছু*ড়িটা।
– আমি পারলাম না। তোমাকে আঘা*ত করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি আমাকে ভালো নাই বাসতে পারো আমার ভালোবাসাটা তো মিথ্যা ছিলোনা। কেনো করলে এমনটা আমার সাথে? আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম? ধরনীতে আমার বিশ্বাসযোগ্য মানুষ তো কেবল তুমিই ছিলে। তবে কেনো এক মুহুর্তে সব শেষ হয়ে গেলো? কেনো খেললে আমার বিশ্বাস নেই? শরীর হ*ত্যার চেয়ে আত্মা হ*ত্যা যে অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক! তবে তুমি আমার আত্মাকে কেনো খুন করলে? কেনো খু*ন করলে আমার আত্মাকে? উত্তর দাও।
চারু হামিদকে জড়িয়ে ধরেই হাউমাউ করে কাদতে শুরু করলো। হামিদও স্তব্ধ। আসলেই কি সে হ*ত্যাকারী? নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকেই সে হ*ত্যা করেছে?
– আমি কেনো তোমাকে খু*ন করতে পারলাম না? আমি যেনো তোমাকে না খু*ন করি তাই এভাবে আমার বিশ্বাস অর্জন করেছিলে তুমি, তাই না? তুমি যদি ভেবে থাকো তুমি এভাবে বেঁচে যাবে তাহলে আমাকে বলতে হয় তোমার পরিকল্পনা শতভাগ সফল হয়েছে ভাইয়া। আজ আমি হেরে গেলাম। বাস্তবতার কাছে হেরে গেলো আমার আবেগ। আমি এতদিন ভাবতাম দুনিয়ায় একজন মানুষ অন্তত আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে কিন্তু আমার জীবনে ভালোবাসা নেই। সবটাই মিথ্যা। চারুলতার অস্তিত্বটাই মিথ্যা। ব্যাস আমি হার মেনে নিলাম। আমি সত্যিই ভীষণ ক্লান্ত! তোমার চারুলতা আজ হেরে গেলো ভাইয়া। কি চাও তুমি? বলে দাও, তুমি যা চাইবে তাই হবে। আমাকে মে*রে ফেলতে চাও? মেরে ফেলো। বিশ্বাস করো একবারও বাধা দেবোনা আমি। এমনকি চাইলে সেই বসের কাছে দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারও করতে পারো। আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। তোমার চারুলতা আজ জীবন্ত ম*রে গেলো ভাইয়া। আর তাকে নিজের হাতে খু*ন করলে তুমি। তবুও আফসোস নেই, মৃ*ত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাকে ভালোবেসে যাবো আমি কারণ আমার যে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। তোমাকেই নিজের আপনজন ভেবে নাহয় মৃ*ত্যুবরণ করলাম। তুমিই দুনিয়ার একমাত্র মানুষ যে আমার সাথে অন্যায় করেও বিন্দুমাত্র শা*স্তি পায়নি এর কারণ আবেগ। এই আবেগ দুনিয়া ভুলিয়ে দিতে সক্ষম। আমার আবেগই আমাকে শেষ করে দিলো। আমাকে জীবন্ত খু*ন করলো। তোমার কাছে আমার কিছু চাওয়ার নেই শুধু প্রশ্ন কেনো করলে এমনটা আমার সাথে?
– চারু আমি,,,
– থাক বলোনা। আমি সহ্য করতে পারবোনা। তুমি বরং এক কাজ করো, যেভাবে আমার আত্মাকে খু*ন করেছো সেভাবে আমাকেও মে*রে ফেলো। আমি এইবার একটু শান্তি চাই৷ আর যদি মারতে না-ই পারো, বসের সাথে মিলে আমাকে বিক্রি করার ইচ্ছেই থাকে তবে আমাকে সব ভুলিয়ে দাও। আমি এই বিষাক্ত স্মৃতি নিয়ে আর থাকতে পারছিনা। একেকটা মুহূর্ত যেনো আমাকে একেবার নতুন করে মেরে ফেলছে।
চারুর প্রতিটি বাক্য হামিদের বুকে ধারালো ছু*ড়ির ন্যায় বিধছে। সেখানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চোখে অশ্রুজলেরা হানা দিচ্ছে। হামিদ আজ সব বলে দিতে চাইছে চারুকে। চারুর এমন কষ্ট সে সহ্য করতে পারবেনা আর এখানে চারুর কষ্টের কারণ স্বয়ং সে! কিন্তু চারুকে সত্য জানানোর সাহস তার নেই। কিভাবে সে মেনে নেবে এইসব? হামিদ কিছু বলার আগেই পেছন থেকে সাজিদ, চারুর ঘাড়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে ফেললো।
– এইডা কি করলেন আপনে? কি করলেন আমার চারুর সাথে।
– শান্ত হও হামিদ, কিচ্ছু করিনি। অজ্ঞান করে দিয়েছি। জ্ঞান থাকলে কি থেকে কি করবে বলা যায়না। চিন্তা করো না কিচ্ছু হবেনা ওর।
– আপনেরে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করিনা।
– হঠাৎ কি এমন হলো যে তুমি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারছোনা।
– কারণ চারু আপনেরে বিশ্বাস করেনা। আর চারু যহন আপনেরে বিশ্বাস করেনা তারমানে আমিও করতেছিনা। চারু যহন আপনেরে সন্দেহ করছে তারমানে নির্ঘাৎ ঘাপলা আছে আপনের মাঝে।
– হামিদ ও কিছু জানেনা তাই সন্দেহ করছে। তুমি তো সবটা জানো।
– আপনে যে আমারে সত্যি বলেন তার কি গ্যারান্টি? ওরে নিয়া আমি একফোঁটা ঝুকিও নিতে চাই না।
– ঠিক আছে। আগে ওকে খাটের উপরে তুলে দেই। বাকিটা পরে দেখা যাবে। মেঝেতে ফেলে রাখা উচিত হবেনা।
– আপনের কিছু করতে হইবো না। আমার বোনরে আমিই দেখতে পারমু। আপনে ওই মরাটারে বাঁচান। ফুলদানির আঘা*তেই সে কাহিল। এমন বলদ পুলিশে ঢুকলো ক্যামনে কে জানে!
– একটা কথা বলি?
– কি?
– জ্ঞান ফিরলে আবার কোনো পাগলামি করবে। হাত-পা বেধে ফেলি চারুর?
– খবরদার না। ও যাই করুক হাত-পা কিচ্ছু বাধা হইবো না।
– ভাই-বোন দুটোই পাগল।
সাজিদের বিরবির করে কথাটা হামিদ শুনলেও কিছু বললোনা। এখন চারুর সুস্থতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
– ওর জ্ঞান কহন ফিরবো?
– বেশিক্ষণ সময় লাগবেনা।

সাজিদ ভেবেছিলো চারুর জ্ঞান ফেরার পরে সে আবার পাগলামি শুরু করবে কিন্তু এমন কিছুই হলোনা। চারু শান্তভাবেই উঠে বসলো। মনে হয় যেনো সদ্য ঘুম ভেঙে উঠে বসা এক তরুনী। হামিদ এবং সাজিদ খাটে বসে ছিলো এবং হিমেল সোফায়। চারুকে উঠতে দেখে প্রথমে সে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও পরক্ষণে হামিদের পাশে এসে দাঁড়ায়,
– কেমন আছো চারুলতা?
– আপনাদের দুজনকে খু*ন করতে পারলে ভালো লাগতো।
হিমেল ভেবেছিলো চারু উত্তর দেবেনা কিন্তু চারুর এহেন উত্তরে ভড়কে গেলো সে। দুজন বলতে কে? সে আর সাজিদ? এটাই হবে হয়তো। চারু যে হামিদকে কিছুই করতে পারবেনা সেটা কিছুক্ষণ আগেই সাজিদের কাছে জেনেছে সে।
– আপনি আমাদের ভুল বুঝছেন। অন্তত এক্সপ্লেইন করার সুযোগটা দিতে পারতেন।
– দিতে চাইছিনা।
– চারু তুই কথাটা শোন আমাদের৷ আমরা,,,
– যদি আমার হাতে থাকতো তো আমার আত্মাকে খু*ন করার অপরাধে আমি তোমাকে ভয়ংকরতম শা*স্তি দিতাম৷ কিন্তু আফসোস, সেটা কখনো সম্ভব নয়। বিশ্বাস নামের অনুভূতিটাও আজ থেকে চিরতরে উঠে গেলো ভিতর থেকে, শুধুমাত্র তোমার জন্য৷
– তুই আমারে বিশ্বাস কর বা না কর সত্য এইটাই যে আমি যা করছি তোর জন্য করছি৷ তোর জীবনডা স্বাভাবিক করতে করছি৷
– এভাবে?
চারুর কণ্ঠে এমন কিছু একটা ছিলো যেটা সরাসরি হামিদের বুকে গিয়ে লাগলো।
– চারু আমি চাই নাই তুই বসটারে খুজতে যাস। তুই তারে খুজিস না।
– কেনো খুজবো না?
– তুই একটা স্বাভাবিক জীবন মাইনা নে। শুধু শুধু আর কারোর পেছনে লাগার প্রয়োজন নেই। তারা যহন আমাদের আর বিরক্ত করতাছেনা তহন ব্যাপারটা এইখানেই শেষ করা উচিত।
– তুমি বিশ্বাস করো আমি এইটা মেনে নেবো?
– তুই মানবিনা বইলাই আমি এতদিন তোরে কিছু বলি নাই।
– নাজমা বেগম আসলে কে?
– তুই-ই বল।
– সারদা দেবী? আর সাজিদ আর তার মতো দেখতে আরেকজন তার সন্তান?
– কিসব পাগলের প্রলাপ বলছেন আপনি? আপনি আমার স্ত্রী বেলিফুল। আমি যদি সারদা দেবীর ছেলে হই তাহলে আমাদের সম্পর্ক কি দাঁড়ায়? পাগল হয়েছেন আপনি?
– তাহলে তিনি প্রতিমা দেবী যিনি সারদা দেবীর সাথে পালিয়ে এসেছিলেন?
– হ্যাঁ৷
– ছবিতে দাঁড়িয়ে থাকা নাজিমুদ্দিন আর তার অপরপাশে আরেকজন লোক ছিলো। সে কে?
– প্রতিমা আন্টির হাসবেন্ড ছিলেন।
– আন্টি?
– হ্যাঁ। প্রতিমা আন্টি আমার মা নন। আমার মায়ের মতো।
– নাজমা বেগম বলতে কেউ নেই?
– আছে। আমার মায়ের নাম নাজমা বেগম। আমি প্রতিমা আন্টিকেই আমার মায়ের নামটা দিয়েছি।
– ছবিতে থাকা দুটো সাজিদ?
– আমার একটা জমজ ভাই ছিলো।
– ছিলো?
– হুম। কয়েকবছর আগে রোড এক্সিডেন্টে তার মৃ*ত্যু হয়।
– তারমানে আমার ভাইয়ের সাথে আপনাদের পরিচয় অনেক বছরের?
– প্রায় আট বছর।
– হিমেল কে?
– আমি জানি আপনি বুদ্ধিমান। হিমেল কে সেটা নাহয় আপনিই বলুন।
– নাজিমুদ্দিন ওরফে বিশ্বজিতের সন্তান ছয়জন। তন্মোধ্যে দুজন মেয়ে। চার ছেলের মাঝে দুজন ভিনদেশে আছে৷ আরেক ছেলে হামিদ এবং আমার অনুমান ভুল না হলে হিমেলই তার ষষ্ঠতম সন্তান।
– ঠিক ধরেছেন।
– নিজের বাবার খু*নীকে কেনো সাহায্য করলেন হিমেল?
– তাকে আমি নিজেও খু*ন করতে চেয়েছিলাম। সাহসের অভাবে পারিনি। আমি তোমার মতো এত সাহসী না চারুলতা।
– তাও তো আমার জীবনটা এভাবে এলোমেলো করে দিলেন।
– আমি ইচ্ছে করে করিনি। ব্যাস তোমার ভালোর জন্য করেছি।
– আমার ভালো আপনি কেনো চাইবেন হিমেল? যেখানে আপনি নিজের জন্মদাতাকে ঘৃণা করেন সেখানে তার কন্যা হিসেবে আমার জন্য আপনার চোখে কিসের মায়া?
– র*ক্ত তো একই।
– ঠিকই বলেছেন। বেইমানির র*ক্ত, স্বার্থপরতার র*ক্ত, নিকৃষ্টতর মানুষটির র*ক্ত। নাজিমুদ্দিন ওরফে বিশ্বজিত আপনার বাবা ছিলো। তাকে ছাড়িয়ে সত বোনের প্রতি কিসের মায়া?
– হয়তো তুমি আমার অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করেছো তাই মায়া লাগছে তোমার প্রতি।
– এটাকেই বলা হয় স্বার্থপরতা। অবশ্য আমি নিজেও কম স্বার্থপর নই। নিজ স্বার্থের জন্য সব করতে পারি আমি শুধু পারলাম নিজের পেছনে ছু*ড়ি গাথা সেই বিশ্বাসঘাতককে খু*ন করতে। নাজিমুদ্দিনের মতো এতটা স্বার্থপর হতে পারলাম না। নাজমা বেগম মানে প্রতিমা দেবীর কোনো বোন নেই। সে কোথায় গেছে সাজিদ?
– তীর্থে গেছে। আপনাকে সেটা বলা যেতো না তাই বলা হয়েছে বোনের বাড়িতে গিয়েছে।
– আপনারা তিনজন আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে মাসুম চেহারার বিশ্বাসঘাতক।
– আমরা বিশ্বাসঘাতক নই বেলিফুল। আপনি শুধু একবার সবটা শুনুন।
– কার কথা শুনতে বলছেন? একজন অস্তিত্বহীন ব্যক্তির? আপনি তো সাজিদ নন। সাজিদের জমজ ভাই। আমি কার কথা শুনবো?
চারুর কথায় সকলে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। সাজিদ অবাক বিষ্ময়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আপনি কিভাবে জানলেন?
– এতটাও বোকা আমি নই। সন্দেহ আগেই ছিলো আপনার উপর। কি বলেছিলেন আমাকে, আমি আপনার জীবনের প্রথম নারী অথচ আপনার একটা মেয়ে আছে। আমি কথাটা ঘোরানোর জন্য ঘাবড়ে গিয়ে বলে দিলেন “তাড়াহুড়ো করে এইটা বলে দিয়েছেন।” আপনি যদি ঘাবড়ে না যেতেন তাহলে বোধহয় সন্দেহ করতাম না।
– আমি তো আগেই কইছিলাম আপনেরে বিশ্বাস করা যায়না। এত বড় ধোকাটা ক্যামনে দিলেন? কে আপনে? সত্যি কইরা বলেন।
– আমি সিফাত।
গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া।
– সাজিদ কেনো সাজলেন?
– প্রথম থেকে একটু ধৈর্য্য নিয়ে সবটা শুনুন দয়া করে। আমার পরিবার বলতে শুধু ছিলো, আমার মা বাবা আর আমরা দুই জমজ ভাই। সাজিদ আর সিফাত। আমরা মুসলিম হলেও আমাদের বাড়িটা ছিলো হিন্দু পাড়ার কাছাকাছি তাই তাদের সাথে আমাদের এক সখ্যতা হড়ে ওঠে। সেখানেই আমাদের প্রথম পরিচয় হয় প্রতিমা আন্টির সাথে। উনি ছিলেন খুবই সহজসরল। সারাক্ষণ পূজা পার্বনে ব্যস্ত থাকতেন। আন্টির ছোট একটা ছেলেও ছিলো। আন্টির সাথে আমাদের পরিবারের মিলবন্ধন হলো খুবই দ্রুত। আমার বাবার শখ ছিলো বিদেশি স্টাইলে বাড়ি বানাবে। আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন এমন বাড়ি সচারাচর দেখা যায়না। উন্নত বিশ্ব্বের অধিকাংশ জায়গায় বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠে ফলে অনেকে জায়গা নিয়ে বাড়ি তোলা সম্ভব। আমার বাবাও তাই করলেন। পঁচিশ বছর যাবত একটু একটু করে টাকা জমাতে লাগলেন আর শেষে প্যানশনের বাকি টাকাটা দিয়ে নিজের পছন্দের বাড়িটা তুললেন তবে বাড়িটা পছন্দের হলেও সেই বাড়িতে থাকার স্বপ্ন আমার বাবার পূর্ণ হলোনা৷ আমি আর সাজিদ সামার ভ্যাকেশনে হাওয়াই গিয়েছিলাম তখন। বাবা-মা, প্রতিমা আন্টি, তার স্বামী এবং ছোট ছেলেটা সকলে মিলে সপিং করতে যাচ্ছিলো। কিন্তু যাওয়ার পথেই গাড়ি খুব জোরে একটা ধাক্কা খায় ট্রাকের সাথে। মুহূর্তের মাঝে আমার বাবা, প্রতিমা আন্টির ছেলে আর তার স্বামী স্পট ডেড। মা আর প্রতিমা আন্টি বেঁচে থাকলেও তাদের অবস্থা ছিলো করুন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। খবর পেয়ে আমি আর সাজিদ ছুটে এলাম। ডাক্তাররা প্রতিমা আন্টিকে বাঁচাতে পারলেও মা-কে বাঁচতে পারলেন না। মুহূর্তের মাঝে বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেলাম আমরা দুই ভাই আর প্রতিমা আন্টি নিজের স্বামী আর একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেলেন। সেই দুর্ঘটনা আমাদের জীবনটাকেই বদলে দিলো। মুহুর্তের মাঝে সব তছনছ হয়ে গেলো। প্রতিমা আন্টি আমাকে আর সাজিদকে আকড়ে ধরলেন বাঁচার জন্য আর আমরা আন্টিকে। আমাদের জন্য আন্টি মায়ের চেয়ে কিছু কম ছিলেন না।
– এসবে আমি কিভাবে জড়ালাম?
– আমি আগেই বলেছিলাম আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো তাই মাঝেমধ্যে নাজিমুদ্দিন ওরফে বিশ্বজিত যখন প্রতিমা আন্টিকে দেখতে আসতেন তখন তার সাথেও আমাদের পরিচয় হয়। কথায় কথায় জানতে পারি তারও দুজন ছেলে। প্রতিমা আন্টি অনেকদিন নিজের দিদিকে দেখেনি বিধায় খুব জোর করতে লাগলেন দুই ছেলে আর তার দিদিকে নিয়ে আসতে। এইটা সেই এক্সিডেন্টের আগের ঘটনা। নাজিমুদ্দিন উপায়ন্তর না দেখে বলেন সারদা দেবী কাজে আটকে গেছেন আর ছেলে হিসেবে নিয়ে আসেন হামিদ এবং হিমেলকে। আপনার হাতে যে ছবিটি সেটা সেদিনেরই।
– তারমানে তুমি আগে থেকেই হিমেলকে চিনতে? সবটা জেনেও তুমি লুকিয়েছিলে ভাইয়া?
– কি বলতাম আমি? আমি যদি মা-কে বলতাম তার স্বামীর আরেকটা বউ আছে আবার সেখানে আরেক ছেলেও আছে তাইলে মা কি ওইডা মানতে পারতো? (হামিদ)
– বেইমান কোথাকার! (চারু)
– সেদিন হামিদ ভুল করে চারুর একটা কথা টেনে ফেলে। নাজিমুদ্দিন নিজেকে ঢাকতে বলে তার একটা মেয়েও আছে। হামিদের মতই দেখতে। আর আপনার জীবনের মোর সেদিনই ঘুরেছিলো চারুলতা। জানতে চান কি হয়েছিলো?

বিঃদ্রঃ অনেক চেষ্টা করেও আজ সম্পূর্ণ রহস্যের সমাধান হলোনা। কাল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ভালো রেসপন্স আসলে পরবর্তী অংশ আগামী কালই আসবে।
_______________________

To Be Continued…
®শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া