#আহনাফ_চৌধুরী
#পর্ব_১৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
অর্ষার শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে। গতকাল রাত থেকেই শরীর হালকা গরম ছিল। বৃষ্টিতে বারান্দায় অনেকক্ষণ ভিজেছিল বলে হালকা হালকা জ্বর অনুভব করলেও খুব একটা আমলে নেয়নি অর্ষা। ভাবতেও পারেনি সেই হালকা জ্বর এমন কঠিন জ্বরে রূপান্তরিত হবে। প্রতিদিন সে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে। তবে আজ জ্বরের প্রকোপে উঠতে পারেনি। আহনাফও ডেকে ঘুম নষ্ট করেনি। সকালে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেছে।
সকালের সময় গড়িয়ে যখন দশটা পার হয়ে গেছে তখন সাজেদা বেগম কৌতুহলবশতই অর্ষাকে ডাকতে আসেন। এত বেলা অবধি এখনো এই বাড়িতে মেয়েটা ঘুমায়নি। তিনি রুমে এসে দেখেন অর্ষা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে এবং ঘুমের ঘোরেই কিছু বলছে। তিনি কাছে গিয়ে ডাকলেন,
“অর্ষা?”
অর্ষার জবাবের পূর্বেই শরীরে হাত রেখে আঁতকে উঠলেন তিনি। কপালে, গলায় হাত রেখে যারপরনাই অবাক হলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে স্বরে ডেকে বললেন,
“অর্ষা! এত জ্বর কেন শরীরে?”
ফোলা ফোলা চোখে মৃদু তাকাল অর্ষা। কাঁপান্বিত স্বরে বলল,
“আমার ভালো লাগছে না, মা।”
“এত জ্বর আমাকে বলোনি কেন? আহনাফও তো কিছু বলল না।”
“উনি জানত না। জ্বর বেড়েছে এখন।”
সাজেদা বেগম আর কথা না বাড়িয়ে নিজেদের পারিবারিক ডাক্তারকে ফোন করে বাড়িতে নিয়ে এলেন। ডাক্তার এসে অর্ষাকে দেখে মেডিসিন দিয়ে গেছে। ওষুধ খাওয়ানোর পূর্বে সাজেদা বেগম রুচিযুক্ত কিছু খাবার ঝটপট বানিয়ে নিয়ে এলেন। এতে খুব একটা কাজ হয়নি। দুই লোকমা খাবার মুখে তুলেই ওয়াশরুমে ছুটে গেল অর্ষা। গড়গড় করে ব’মি করতে লাগল। শরীর দুর্বল হয়ে গেছে প্রচন্ড। সাজেদা বেগম অস্থির হয়ে পড়েছেন। ব’মি শেষ হলে অর্ষাকে ফ্রেশ করে রুমে এনে মেডিসিন খাইয়ে দিলেন নিজেই। এরপর শুইয়ে দিয়ে রুমের আলো নিভিয়ে দিলেন। আলোতে মাথা ব্যথা বাড়ে। যতক্ষণ না অর্ষা ঘুমাল ততক্ষণ তিনি অর্ষার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। আহনাফকে ফোন করে অবশ্য কিছু জানাননি। এতে করে আবার আহনাফ সারাদিন দুশ্চিন্তা করবে। তিনি তো মা। তাকে সবার কথাই ভাবতে হয়। আহনাফ অফিস থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত সারাটিক্ষণ সাজেদা বেগমই অর্ষার পাশে ছিলেন। সময়মতো খাবার, ওষুধ সব খাইয়ে দিয়েছেন। জলপট্টি দিয়ে দিয়েছেন। বিকেলের দিকে তিনি নিজেও অর্ষার সাথে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
আহনাফের ছুটি হয়েছে পাঁচটায়। বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা ছয়টা পার হয়েছে। প্রতিদিন এই সময়ে কলিংবেল বাজালে অর্ষা নয়তো সাজেদা বেগম দরজা খুলে দেন। আজ দরজা খুলেছেন আতিক চৌধুরী। বাবাকে দেখে একটু অবাকই হলো সে। তবে মুখে কিছু বলল না। ভেতরে ঢুকে দরজা লক করতে করতে জিজ্ঞেস করল,
“মা কোথায় আব্বু?”
“তোর রুমেই আছে।” বললেন আতিক চৌধুরী।
বউ-শাশুড়ি হয়তো গল্প করছে ভেবে আহনাফ আর কিছু জিজ্ঞেস করল না। চাপিয়ে রাখা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখল পুরো রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন। লাইট জ্বালিয়ে দেখল অর্ষা সাজেদা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে জড়োসড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে। সাজেদা বেগমও এক হাতে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছেন। কেন জানিনা দৃশ্যটা দেখেই আহনাফের ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মন ও শরীর দুটোই শীতল হয়ে গেছে। আনমনেই মুচকি হাসল সে। অফিসের ব্যাগ টেবিলের ওপর রেখে কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ঘুম ভাঙাল না কারোর। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে সে নিজে ফ্রেশ হয়ে নিল। বিভিন্ন শব্দ পেয়ে সাজেদা বেগমের ঘুম ভেঙে গেছে। আহনাফ তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল মুছছিল। মাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে মৃদু হাসল সে।
সাজেদা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
“কখন এসেছিস?”
“একটু আগেই। তুমি উঠলে কেন?”
“এসে ডাকিসনি কেন?”
“বউ-শাশুড়ির এত শান্তির ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করছিল না তাই।”
“মজা নিস না। মেয়েটা কত অসুস্থ জানিস?”
আহনাফ বিস্মিত হয়ে বলল,
“অসুস্থ মানে? কী হয়েছে?”
“সকালে এসে দেখি জ্বরে শরীর পু’ড়ে যাচ্ছে। তুই একটু খেয়াল রাখবি না?”
“কী বলো! রাতে তো এমন কিছু দেখিনি। ডাক্তার ডেকেছিলে? আমায় ফোন করোনি কেন?”
“তুই চিন্তা করবি তাই। ডাক্তার এসে ওষুধ দিয়ে গেছে। কিন্তু কোনো খাবারই খেতে পারছে না। একই তো জ্বরের মুখ। তার ওপর আবার যা খাচ্ছে ব’মি করে দিচ্ছে।”
“এখন জ্বর কেমন?”
“কমেছে কিছুটা। তুই তো নাস্তা করিসনি এখনো? আমি নাস্তা দিচ্ছি। তুই অর্ষাকে ডেকে তোল।”
সাজেদা বেগম চলে যাওয়ার পর আহনাফ গিয়ে পাশে বসল। মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো করে ডাকল,
“অর্ষা? এই অর্ষা?”
অর্ষা ঘুমের ঘোরে তাকাল। আহনাফ গালে স্লাইড করে বলল,
“খুব বেশি খারাপ লাগছে?”
অর্ষা মাথা ঝাঁকাল। আহনাফ অর্ষার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“আমায় বলোনি কেন বলো তো?”
“আমি বুঝিনি এমন হবে।”
আহনাফ অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“তুমি তো কিছুই বোঝো না। বাচ্চা! বাচ্চা বউ।”
অর্ষা কিছু বলতে পারল না। ব’মি ব’মি লাগছিল বলে উঠে বসতে চাচ্ছিল। আহনাফ ওর কাঁধে হাত রেখে উঠতে সাহায্য করছিল। কিন্তু ততক্ষণে অর্ষা আহনাফের গায়েই গড়গড় করে ব’মি করে দিয়েছে।
চলবে…