আহনাফ চৌধুরী পর্ব-২১ এবং শেষ পর্ব

0
476

#আহনাফ_চৌধুরী
#পর্ব_২১ (অন্তিম পর্ব)
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
এক পশলা বৃষ্টির ন্যায় হঠাৎ করেই আহনাফ অর্ষার জীবনে এলো। প্রকৃতির মতো সতেজ করে তুলল অর্ষাকেও। সাদাকালো জীবনে নিয়ে এলো রঙের বাহার। প্রথমে ভালো রাখার চেষ্টা করা, এরপর সেই চেষ্টা ভালোবাসায় রূপান্তর। আহনাফ নিজেও কি ভেবেছিল যে দ্বিতীয়বার সে কোনো নারীকে এতটা ভালোবেসে ফেলতে পারবে? আসলে জগতের সমস্ত কিছু সর্বদা আমাদের ভাবনা অনুযায়ী হয় না। মাঝে মাঝে আমাদের ভাবনার চেয়েও অনেক ভালো কিছু হয়। সেই ভালো কিছুর মধ্যে একটা হলো অর্ষার জীবনে আহনাফের আগমন। প্রণয় ছাড়াই এক প্রকার ঘোরের মাঝে বিয়ে। সময়ের বিবর্তনে মনের ক্লেশ দূর করে আহনাফকে ভালোবেসে ফেলা এতটাও সহজ ছিল না অর্ষার জন্য। কিন্তু এ কথাও সত্য আহনাফের তীব্র ভালোবাসা উপেক্ষা করার মতো শক্তি অর্ষার কখনোই হতো না। মানুষ মাত্রই ভালোবাসার কাঙাল…বিশেষ করে নারী জাতি। তারা একটু ভালোবাসা পেলেই মোমের মতো গলে পড়ে। নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেয় তার প্রিয় মানুষটাকে। তাহলে অর্ষাই বা কী করে পারবে আহনাফের এত ভালোবাসা উপেক্ষা করতে? পারেনি সেও। আর পারেনি বলেই সময় গড়িয়ে আজ ওদের বিয়ের বয়স প্রায় এক বছর। প্রায় বললাম কারণ এখনো পুরোপুরি এক বছর হতে দুদিন বাকি।

বিবাহবার্ষিকী নিয়ে দুজনেরই অনেক জল্পনাকল্পনা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অর্ষার ভীষণ জ্বর। ভালো ডাক্তার দেখিয়ে, ওষুধ খাইয়ে জ্বর কমলেও একেবারে সারছে না। আহনাফের মাথা থেকেও তাই বিবাহবার্ষিকীর আয়োজনের কথা বেরিয়ে গেছে। এখন সে শুধু অর্ষাকে নিয়ে ব্যস্ত। সবসময় যতটা পারে চেষ্টা করে অফিস থেকে দ্রুত বাড়িতে ফেরার। বাড়ি ফিরেও সে অর্ষার সেবায় মগ্ন থাকে। নিজের মা তো আছেই, আহনাফ অর্ষার মাকেও এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে। যাতে করে অর্ষার যত্নের কোনো ত্রুটি না হয়। নিজের মায়ের ওপর তার ভরসা আছে, তবুও সে চায় দুজনই তার অবর্তমানে অর্ষার কাছে থাকুক।

আহনাফের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে অর্ষা। রাত বাড়ার সাথে সাথে জ্বরও বাড়ে। মাথার ভেতর, শরীরের ভেতর অস্বস্তি হয় তবুও যখন সে আহনাফের বুকে থাকে তখন অদ্ভুত একটা প্রশান্তি কাজ করে তার মনের মাঝে। সে আহনাফের গালে তার উষ্ণ হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,

“তুমি আমায় এত ভালোবাসো কেন?”

বিয়ের প্রায় ছ’মাস পর থেকেই অর্ষা আহনাফকে তুমি করে বলা শুরু করেছে। অবশ্য এই আবদারটা আহনাফেরই ছিল। প্রথম প্রথম অর্ষা তুমি বলতে রাজি না হলেও পরে আহনাফকে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে রাজি হয়েছিল। সেখান থেকেই তুমি সম্বোধন।

আহনাফ অর্ষার হাতটা ধরে চুমু খেয়ে বলল,

“তুমি মেয়েটাই তো ভালোবাসার মতো।”

“আচ্ছা কে বেশি ভালোবাসে? আমি না তুমি?”

“অবশ্যই আমি।”

“তাই?”

“হ্যাঁ, কারণ প্রথম ভালোবাসি আমিই বলেছিলাম। প্রথমে তো আমিই ভালোবেসেছি।”

“আমার মনে হয়, আমি তোমাকে বেশি ভালোবাসি।”

“এ কথা আমি মানব না। ভালো আমিই তোমাকে বেশি বাসি।”

অর্ষা মৃদু হাসল। বলল,

“আচ্ছা আমি যদি এখন ম’রে যাই?”

আহনাফ ধমক দিয়ে উঠল। বলল,

“এসব কী ধরণের কথাবার্তা?”

“রাগ করছ কেন?”

“তাহলে কী করব? মা’ই’র খেতে ইচ্ছে করছে?”

“না, জানতে ইচ্ছে করছে। আমি ম’রে গেলে তুমি কী করবে?”

অর্ষাকে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে আহনাফ বলল,

“এসব কথা বলো না জান। তোমার আগে যেন আমার ম’র’ণ হয়। দোহাই লাগে, আর কখনো এসব কথা বলো না। আমার কষ্ট হয়। সহ্য করতে পারব না।”

আহনাফকে শান্ত করতে অর্ষা বলল,

“আরেহ, আমি তো মজা করেছি। এত তাড়াতাড়ি ম’র’ব নাকি হু? এখনো কত জ্বালানো বাকি আছে তোমাকে।”

“যত খুশি জ্বালাও। তবুও কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ!”

“যাব না।”

“কথা দাও, যা-ই হয়ে যাক কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না?”

“কখনো না।”

“প্রমিস করো।”

“প্রমিস।”
.
.
আমেনা বেগম মেয়ের জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে এলেন। অর্ষা তখন সবে গোসল করে বেরিয়েছে। তাকে দেখতে এখন বেশ সতেজ লাগছে। যদিও চোখ-মুখ বেশ শুকনো!

“কোথাও যাবি?” জানতে চাইলেন আমেনা বেগম।

অর্ষা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলল,

“হ্যাঁ, শপে যাব।”

“এই অবস্থায়? কোনো কিছু লাগলে আমাকে বল।”

“অনেক কিছু লাগবে মা। তুমি আনতে পারবে না।”

“এত বছর তোদের সবকিছু আমিই কিনে দিলাম। আর এখন কিনা এসে শুনতে হচ্ছে আমি পারব না?”

অর্ষা হেসে ফেলল। বলল,

“আজকে কি জানো মা?”

“কী?”

“আজ আহনাফ আর আমার বিবাহবার্ষিকী। তাই ওকে সারপ্রাইজ দেবো ভেবেছি। এজন্য কিছু কেনাকাটা করা লাগবে।”

“সে তো খুব ভালো কথা। কিন্তু এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তুই একা যাবি?”

“কিছু হবে না।”

“তোকে আমি একা ছাড়তে পারব না। পরে আহনাফের কথা শুনতে হবে। চল আমিও যাব।”

অর্ষা একা বাইরে যাবে শুনে সাজেদা বেগমও কড়াভাবে ‘না’ করে দিয়েছেন। অগত্যা মাকে সাথে নিয়েই যেতে হলো অর্ষাকে। ওরা কাছাকাছি একটা সুপারশপে গেল। প্রয়োজনীয় যা যা লাগবে ঘুরে ঘুরে নিয়ে নিচ্ছিল দুজন। অর্ষা অন্য সাইডে চলে যায়।

আমেনা বেগমও দরকারি জিনিসগুলো নিয়ে নিচ্ছিলেন। তার পাশে একজন এসে দাঁড়াল খেয়াল করলেন তিনি। অনিচ্ছাকৃত তাকিয়ে যেমন চমকালেন আবার একটু অবাকও হলেন।

“কেমন আছেন আন্টি?”

রিহানের প্রশ্নের উত্তর তৎক্ষণাৎ দিতে পারলেন না আমেনা বেগম। চুপ করে রইলেন অনেকক্ষণ। নিজেকে ধাতস্থ করে বললেন,

“তুমি এতদিন পর?”

“আপনাকে দেখেই এলাম।”

“আমাকে দেখে?”

“হ্যাঁ। আমরা কি কোথাও বসে একটু কথা বলতে পারি?”

সেই মুহূর্তে অর্ষা চলে আসে। ব্যস্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“মা, সব নিয়ে…”

সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই রিহানকে দেখে সে চুপ হয়ে যায়। একই সাথে রাগ, ঘৃণা এসে জমা হয়। কতটা বাজেভাবে তাকে ঠকানো হয়েছে ভাবতেই শরীর গুলিয়ে ওঠে। কিছু কড়া কথা শোনাতে গেলে আমেনা বেগম বাঁধা দিয়ে বললেন,

“চুপ!”

অর্ষা চুপ হলো। কেনাকাটা বাকি রেখে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গেল তিনজন। অর্ষা কোনো কথা বলছে না। আমেনা বেগম বললেন,

“কী কথা বলতে চাও বলো?”

রিহান মাথা নত করে বলল,

“কিছু বলার মতো মুখ আমার নেই আন্টি। কোন মুখে ক্ষমা চাইব তাও জানিনা।”

“ক্ষমা কীসের জন্য?”

“ঠকানোর জন্য। অর্ষাকে ঠকিয়ে যেই ভুল, অন্যায় আমি করেছি সেটা তখন না বুঝতে পারলেও এখন বুঝতে পারছি।”

আমেনা বেগম, অর্ষা কেউই কোনো কথা বলছে না। কিছুক্ষণ মৌন থেকে রিহান নিজেই বলল,

“কাউকে ঠকালে ঠকতে হয়, কাউকে কাঁদালে কাঁদতে হয়, কষ্ট দিলে বিনিময়ে কষ্ট পেতে এটা এখন বিশ্বাস করি আমি। স্বীকার করতে লজ্জা নেই যে, প্রকৃতি ছাড় দেয় না। আজ আমার নাম, যশ-খ্যাতি সব আছে। নেই শুধু মানসিক শান্তি, নেই কোনো ভালোবাসা। আমার স্ত্রীর সাথে আমার সম্পর্ক ভালো না। সে আমাকে নয় আমার যশ-খ্যাতি, টাকাকে ভালোবাসে। সেও উচ্চবিত্ত। আমাকে ছাড়তে দুবারও ভাবে না। জানিনা এই সম্পর্ক ঠিক কতদিন আর টিকবে। কিন্তু প্রতিটা মুহূর্তে এখন আমি অর্ষার অনুপস্থিতি মিস করি। ওর পাগলামি, ভালোবাসা সবকিছু আমাকে তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছে এখন। আগে ওর এসব পাগলামি, কেয়ার, ভালোবাসায় বিরক্ত হতাম, তিক্ত লাগত আর এখন! এখন আমি এগুলোই মিস করি। কী কপাল আমার দেখুন? নিজের ভুল যখন বুঝতে পারলাম তখন এতটাই দেরি হয়ে গেছে যে ওকে ফিরে পাওয়াটা তো দূরে থাক, নিজের ভুলটাও স্বীকার করার কোনো উপায় ছিল না। আজ আপনি সাথে ছিলেন বলেই হয়তো ওর সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি।”

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল রিহান। তাকে ভীষণ বিষন্ন দেখাচ্ছিল। সে অর্ষার দিকে তাকাল। চোখ কেমন যেন ছলছল করছিল। অর্ষাকে দেখাচ্ছিল নিষ্প্রাণ। রিহান বলল,

“আমি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই অর্ষা। জানি, এখন আর কিছুই করার নেই আমাদের। হয়তো কথাগুলো তোমাকে না বললেও পারতাম। কিন্তু অনুশোচনা ও অনুতাপে আমি প্রতিনিয়িত দ’গ্ধ হচ্ছিলাম। জানি, ভবিষ্যতেও হবো। তবুও ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইনি। তোমার কাছে হাতজোর করে ক্ষমা চাইছি আমি অর্ষা, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ!”

অর্ষা তাচ্ছিল্য করে হাসল। শ্লেষাত্মক কণ্ঠে বলল,

“ক্ষমা? তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে? তোমাকে যদি ক্ষমা করি তাহলে নিজের প্রতি খুব অন্যায় করা হয়ে যাবে আমার। আর নিজের প্রতি এই অন্যায়টা আমি করতে পারব না। তবে এটা শুনে ভালো লাগছে যে, দেরিতে হলেও তোমার ভেতর মনুষ্যত্ব ফিরে এসেছে। আর যাই করো, জীবনে কখনো কারো অনুভূতি, ভালোবাসা নিয়ে খেলো না। মানুষের মন ভেঙো না।”

এরপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“চলো মা।”

রিহানের এমন অবস্থা দেখে খারাপ লাগছিল আমেনা বেগমের। কিন্তু অতীতে তার মেয়েটাও তো কম কষ্ট পায়নি। বরং ওর চেয়ে বেশিই পেয়েছে। এসব মনে পড়তেই তার মনটা তেতো হয়ে উঠল। সে নিজেও উঠে দাঁড়াল। চলে যাওয়ার পূর্বে অর্ষা শুধু বলল,

“আর হ্যাঁ, তোমাকে ক্ষমা করতে না পারার জন্য পারলে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। ভালো থাকো।”

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আমেনা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“অতীতের সকল তিক্ততা তোর জীবন থেকে দূর হয়ে যাক। স্বামী, সংসার নিয়ে সুখী হ দোয়া করি।”

প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসল অর্ষা। মানসপটে ভেসে উঠল আহনাফের হাসিমাখা মুখটি।
__________

আহনাফ অফিস থেকে আসার পূর্বেই পুরো রুমটা অর্ষা নিজের হাতে একা একা সাজিয়েছে। আমেনা বেগম কিংবা সাজেদা বেগম সাহায্য করতে চাইলেও অর্ষা রাজি হয়নি। রুম, বারান্দা সব সাজানো হলে বাহির থেকে রুম লক করে সে গেস্ট রুমে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। আহনাফের আসার সময় হতেই সে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে রইল।

আহনাফ এসে যখন রুমে যাবে তখন সাজেদা বেগম বললেন,

“রুমে যাস না।”

আহনাফের ভ্রু কুঁচকে গেল। জানতে চাইল,

“কেন?”

“রুমে ছারপোকার ওষুধ দিয়েছি।”

“ছারপোকা? আমার রুমে তো ছারপোকাই নেই!”

“কে বলেছে নেই? ঘুমাস তো কুম্ভকর্ণের মতো। বুঝবি কী করে?”

“আচ্ছা ঠিক আছে। অর্ষা কোথায়?”

“গেস্ট রুমে।”

আহনাফ গেস্ট রুমে গিয়ে দেখল অর্ষা কাৎ হয়ে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ। কী নিষ্পাপ লাগছে দেখতে! এক জনম সে এই মুখের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিতে পারবে। সে শব্দহীন পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসল। অর্ষার গালে হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেতেই চোখ মেলে তাকাল অর্ষা। এক টুকরো হাসি উপহার দিয়ে বলল,

“তুমি এসেছ!”

মুচকি হাসল আহনাফ। বলল,

“কেন? আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে?”

“হ্যাঁ।”

“তাই নাকি? কেন শুনি?”

“মিস করছিলাম তোমাকে।”

“কতটা?”

“অনেক অনেকটা।”

“ভালোবাসো?”

“ভীষণ। শোনো না?”

“বলো।”

“একটু বুকে নাও।”

আহনাফ দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“আসো।”

অর্ষা বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি হয়ে আহনাফের বুকে পড়ে রইল। আহনাফ ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে ডাকল,

“অর্ষা?”

“হু?”

“শরীর কেমন এখন?”

“আগের চেয়ে ভালো।”

“মেডিসিন ঠিকমতো খাচ্ছ?”

“হ্যাঁ।”

“তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও প্লিজ! তোমাকে এভাবে দেখতে ভালো লাগে না।”

“কীভাবে দেখতে ভালো লাগে?”

“প্রাণোচ্ছল।”

অর্ষা মুখে কিছু বলল না। আহনাফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। রাতে অর্ষাকে আগে খাইয়ে দিয়ে আহনাফ খেতে গেল। এই সুযোগে অর্ষা লুকিয়ে রাখা শাড়িটি চটজলদি পরে হালকা প্রসাধনী মুখে দিয়ে রেডি হয়ে নিল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাবা-মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ঘুমাতে আসে আহনাফ। দরজা খুলতেই দরজার পেছন থেকে ‘ভাউউউ’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে অর্ষা। হঠাৎ করে এমন করায় ভয় পেয়ে যায় আহনাফ। নিজেকে ধাতস্থ করে পরক্ষণেই অর্ষার হাসি দেখে হেসে ফেলে। সাজসজ্জা দেখে বলে,

“হায় আল্লাহ্! এ আমি কী দেখছি?”

অর্ষা ভ্রু কুঁচকে বলে,

“কী?”

“পরী!”

“কী?”

“মাই কুইন।”

“মাথা গেছে?”

“সে তো কবেই গেছে। সুন্দর লাগছে তোমাকে।”

“সুন্দর মানুষকে তো সুন্দর লাগবেই।”

আহনাফ হেসে ফেলল। অর্ষা বলল,

“ভুলে গেছ আজকের দিনটার কথা?”

“আজ কি কোনো বিশেষ দিন?”

মনটা খারাপ হয়ে গেল অর্ষার। তবে আহনাফকে সেটা বুঝতে না দিয়ে বলল,

“আসো আমার সাথে।”

এরপর নিজেদের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। আলো জ্বালিয়ে বলল,

“হ্যাপি অ্যানিভার্সারি মাই বিলাভড্ হাজবেন্ড।”

আহনাফ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে রুমের সাজসজ্জা দেখে। এত সুন্দর ডেকোরেশন! সে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। অর্ষা আহনাফকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“সবকিছু একা হাতে করেছি তোমার জন্য। কারো হেল্প নিইনি। পচা হলেও হাসিমুখে থাকবে।”

“আমার বউ তার হাত দিয়ে যা ছোঁবে তা-ই তো সুন্দর হয়ে যাবে। এই যেমন, আমার জীবনে এসে আমার জীবনটাকে রঙিন ও সুন্দর করে দিয়েছ।”

অর্ষা আহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি শুধু আমাকে এভাবেই ভালোবেসো?”

আহনাফ অর্ষার দুগালে হাত রেখে বলল,

“উঁহুঁ! এরচেয়েও আরো বেশি ভালোবাসব।”

এরপর সে পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে অর্ষার অনামিকা আঙুলে পরিয়ে দিতে দিতে বলল,

“আজকের দিনটা আমি কীভাবে ভুলব বলো তো? এই দিনে আমার কুইন আমার বউ হয়ে আমার জীবনে এসেছে। প্রজাপতির মতো রঙিন করেছে আমার জীবনকে। পূর্ণতা দিয়েছে। আমি ভুলে যাব এই দিনটা?”

অর্ষার চোখে পানি চলে এলো। সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আহনাফকে। আহনাফ ওর কানে ফিসফিস করে বলল,

“জীবনে পূর্ণতা দিয়েছ। কিন্তু পরিপূর্ণতা দাওনি।”

অর্ষা বুঝতে না পেরে বলল,

“মানে?”

“মানে একটা জুনিয়র আহনাফ চৌধুরীর অভাবে জীবনটা এখনো পরিপূর্ণতা পেল না।”

অর্ষা লজ্জা পেয়ে আহনাফের বাহুতে দুমদাম কয়েকটা কি’ল বসিয়ে বলল,

“তুমি খুব খারাপ, অ’স’ভ্য।”

“অ’স’ভ্য তো তোমার প্রেমেই পড়েছি। কেউ যদি এই আহনাফ চৌধুরীকে কখনো অ’স’ভ্য, দিওয়ানা বলতে পারে তাহলে সেটা তোমার জন্যই বলতে পারবে। আহনাফ চৌধুরী শুধুমাত্র তার অর্ষার জন্য অ’স’ভ্য।”

অর্ষা কিছু বলল না। আহনাফ বলল,

“জুনিয়র আহনাফ চৌধুরীকে না হয় না দাও, আপাতত আজ একটু ভালোবাসা তো দাও!”

“সবকিছু এত মুখে বিবৃতি দিতে হবে কেন? কিচ্ছু আটকায় না!”

“ওহ আচ্ছা, তুমি চাচ্ছ সরাসরি আদরে চলে যাই? ওকে।”

বলে আহনাফ লাইট নিভিয়ে অর্ষাকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিল। চুমুতে চুমুতে উন্মাদ করে তুলল অর্ষাকে। উন্মত্ত সময়ে ঘোরলাগা কণ্ঠে অর্ষা বলল,

“কখনো ছেড়ে যেও না? শুধু আমার হয়েই থেকো?”

আহনাফ অর্ষার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলল,

“কখনো না। যতদিন এই দেহে প্রাণ আছে ততদিন আহনাফ চৌধুরী কেবলমাত্র তোমার।”

(সমাপ্ত)