ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
6668

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩০

-“তাথই!

হঠাৎ পিছন থেকে এমন ডাকে থেমে যায় তোড়া। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে তার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর তোড়া ও নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। না এই নামের কেউ নেই যে ছিল তার মৃত্যু হয়ে গেছে। সে আর বেঁচে নেই এখন সে তোড়া। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে তাকালে রেয়ান্স চোখের ইশারায় বোঝায় সব ঠিক আছে। তারা এগিয়ে গেলেও ওই ডাক তার পিছু ছাড়ছে না পিছন থেকে এখনও আওয়াজ ভেসে আসছে। তোড়া আর রেয়ান্স না থেমে সামনের দিকে অগ্রসর হয়।

হটাৎ পিছন থেকে কাঁধে হ্যাচকা টান পড়তেই তোড়া থেমে যায়। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে দেখে নেয় দুজন ইশারায় কথা বলে নেয়। তোড়া রেয়ান্স পিছন ঘুরতে দেখতে পায় তার মা আর দাদু তার সামনে। তোড়া কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলেও সেই এক্সপ্রেশন মুখে আনতে দেয় না। তোড়া তার দাদু কে দেখে ভিতরে ভিতরে ইমোশনাল হয়ে পড়ে তার দাদু হুইলচেয়ারে বসে আছে এটা দেখে যেনো তোড়ার ভিতরে থেকে কান্না ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে কিন্তু না তোড়া নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে অবাক চোখে তাকায় তাদের দিকে যেনো এই প্রথম তাদের দেখছে সে যেনো তাদের চেনে না আগে কখনো দেখেনি। রেয়ান্স তোড়ার হাত শক্ত করে ধরে নেয়। রেয়ান্স এর মুখে মাস্ক লাগানো তাই তাকে চেনা যাচ্ছে না।

তোড়ার মা তোড়া কে দেখেই অবাক হয়ে চোখে পানি নিয়ে তোড়ার মুখের দিকে চেয়ে আছে। তিনি এর আগেও এই মেয়েকে দেখেছে টিভিতে আর আজ সামনে থেকে দেখছে তার মন কিছুতেই মানতে চাইনি যে এটা তার মেয়ে নয় অন্য কেউ। আর আজ তো সামনে থেকে দেখছে তার মনে হচ্ছে তার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে তারই মেয়ে হ্যাঁ তার নিজের মেয়ে।

তোড়ার দাদু হুইলচেয়ার টেনে কিছুটা এগিয়ে এসে তোড়ার হাত ধরে। এই স্পর্শে তোড়া যেনো কিছুটা কেঁপে ওঠে কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না। হ্যাঁ তার দাদু ছিল তার একমাত্র ভালোবাসার সঙ্গী যে ছোটো থেকে তাকে আগলে রেখেছিলো ওই বাড়িতে এই মানুষটাই তাকে দেখে রাখত সব সময়ে। তোড়ার নিচের দিকে তাকাতেই দেখে তার দাদু চোখে পানি নিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো তাকে বোঝার চেষ্টা করছে। তোড়া নিশ্চিত তার দাদু তাকে চিনে ফেলেছে। তার দাদু তার হাতে দু হাত দিয়ে বুলিয়ে যাচ্ছে। তোড়া যত সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে এদিকে রেয়ান্স ও অবাক চোখে সব কিছু দেখে যাচ্ছে।

তোড়া রেয়ান্স এসেছিল হসপিটালে রেয়ান্স এর হাতের ট্রিটমেন্ট করাতে। রেয়ান্স হাতের অবস্থা দেখে তোড়া ভয় পেয়ে গেছিলো। যার জন্য রেয়ান্স এর কোনো কথা শুনেই তোড়া রেয়ান্স কে এখানে টেনে এনেছে। আর রেয়ান্স ও তোড়ার ওপরে কোনো কথা না বলতে পেরে বাধ্য ছেলের মত চলে এসেছে। তারা ডক্টর দেখিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তখন পিছন থেকে ডাকে।

-“তাথই! তোড়ার মা ডেকে ওঠে।

তোড়া এতক্ষণ তার দাদুর দিকে তাকিয়ে ছিল। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে তার মায়ের দিকে তাকায়। তোড়ার মা এগিয়ে এসে তার গালে হাত রাখতে গেলে তোড়া পিছনের দিকে সরে যায়। আর এতেই তোড়ার মা অবাক হয়ে দেখতে থাকে।

-” কে তাথই? আর আপনি বা কে? তোড়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” তাথই । আমি তোর মা । আবেগ ঘন হয়ে বলে ওঠে।

-“সরি? আমি কোনো তাথই নই আমি তোড়া। তোড়া দেওয়ান । আর আপনি কেনো আমার মা হতে যাবেন? আপনি হয়তো কারোর সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলেছেন। তোড়া স্বাভাবিক ভাবেই বলে ওঠে।

-“না হতে পারেনা আমি তোকে ঠিক চিনেছি। তোর মা তোকে চিনতে ভুল করতেই পারে না। তোড়ার মা কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।

-” এক্সকিউজমি! আপনি কে হ্যাঁ? আমি তো আপনাকে চিনি না আর কি তখন থেকে মা মা করে যাচ্ছেন। আমি তো বললাম আমি আপনাকে চিনি না। তোড়া কিছুটা রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।

-” তাথই! তোড়ার মা অবাক হয়ে বলে ওঠেন।

তোড়ার চোখে পানি নিয়ে অবাক হয়ে দেখছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে কে। না তার মুখ আগের মত লাগছে না তার মুখ পাল্টে গেছে। কিন্তু তার গলার আওয়াজ সেই একই আছে কিন্তু তার মধ্যে কিছুটা বদল এসেছে। তার মেয়ে কখনোই তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলেনি আর এখন তোড়ার এই রুক্ষ ভাবে কথা বলাতে তার মা কিছুটা অবাকই হয়েছে।

-“তাথই! হুম…. তোড়ার কিছুটা মনে করার ভঙ্গিতে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ তাথই এই নাম এর সাথে জড়িয়ে এখন কিছু একটা নিউজ চলছে না। হ্যাঁ এই যে মেয়ে টা মারা গেছে বিল্ডিং থেকে। এর পিছনে ও নাকি কোনো রহস্য আছে।সেই মেয়েটার কথা বলছে না? শেষের কথা টা তোড়া রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।

রেয়ান্স কোনো কথা না বলেই মাথা নাড়ে। তোড়ার মা অবাক হয়ে তার দিকে দেখছে আর তার কথা শুনছে। তোড়ার দাদু এখনও তার হাত ধরে আছে। তোড়া তার দাদুর থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয় নি। তিনি বসে বসে এক দৃষ্টিতে তোড়ার মুখের দিকে দেখছে। আর মিট মিট করে হাসছে তোড়ার কথা শুনে। তিনি এতক্ষণে বুঝতে পেরে গেছে এটাই তার তাথই। যখন তোড়ার তার দিকে তাকিয়ে ছিল তখনই তিনি বুঝতে পারে।

-“আমি শুনেছিলাম নাকি আপনাদের ফ্যামিলি গত কিছু প্রবলেম আছে হ্যাঁ সেইরকম তো খবরে দেখছিলাম তাহলে? আর আপনি বা কেনো সেই মেয়ের সাথে আমাকে কেনো মেলাচ্ছেন? সেটাই তো আমি বুঝতে পারছি না। তোড়া রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।

-” দেখুন আমার এত কথা বলার সময় নেই। আর আমি তোড়া কোনো তাথই নই। আপনাদের মেয়ে মারা গেছে সেটা যতো তাড়াতাড়ি মানতে পারবেন ততই আপনাদের জন্য ভালো অন্য কাউকে আর নিজের ভেবে আর ভুল করবেন না তাহলে। তোড়া কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলে ওঠে।

তোড়া তার দাদুর দিকে একবার গভীর দৃষ্টি দিয়ে আসতে আসতে হাত ছাড়িয়ে নেয়। একবার তাকিয়ে নিয়ে তার মায়ের দিকে আর না তাকিয়ে রেয়ান্স এর হাত ধরে বেরিয়ে আসে।

তোড়ার মা তোড়া কে যেতে দেখে কাঁদতে কাঁদতে ওখানেই বসে পড়ে। তিনি যেনো তোড়া কে দেখার পর আর মানতে পারছেন না যে এটা তার মেয়ে নয় অন্য কেউ তার মেয়ে মারা গেছে। এটা ভেবেই কান্নায় ভেঙে পড়ে।

-“যেমন কর্ম তেমনই ফল। যখন কাছে ছিল তখন দেখেও দেখনি এর এখন তাকে কাছে টানতে যাচ্ছ এটা তো হওয়ার কথা।

-” দাঁত থাকতে যারা দাঁতের মর্যাদা দিতে জানে না তাদের সাথে এটাই হয়। তোড়ার দাদু নিজের মনে বলে উঠে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

————-

তোড়া গাড়িতে বসেই কান্নায় ভেঙে এতক্ষণ নিজেকে সামলে রাখলেও এখন আর নিজেকে আটকাতে পারে না। রেয়ান্স কোনো কথা না বলে তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। তোড়া তার দাদুর সাথে কথা বলতে পারিনি তার দাদুর চোখের দিকে তাকিয়ে সেখানেই কান্না করে দিতো সে কিন্তু নিজকে সেখানে অনেক কষ্টে আটকে রেখে ছিল নাহলে যে তার এত দিনের পরিশ্রম সব বেকার চলে যেতো যদি তার পরিচয় সামনে আসতো। আর তার মা যেখানে সে ছোটো থেকে কখনো কোনো কিছুর জন্য চোখ তুলে কথা বলেনি সেখানে সে আজ রুক্ষ ভাবে কথা বলেছে। যতোই সে পাল্টে যাক যতো সে কঠিন হয়ে যাক এক সময়ে সে তাদের ভালোবেসে ছিল। তারা তাকে ভালো না বসলে ও সে তো তাদের কে ভালোবেসে ছিল সেটা সে কি করে ভুলে যাবে।

এখন তাকে মেয়ে বলে জাহির করছে যখন সে তাদের থেকে দূরে অনেক দূরে সরে গেছে। যখন কাছে ছিল তখন তো কেউ তার খোঁজ নিতো না তাহলে এখন কেনো? এগুলো ভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়ছে তোড়া।

-“তোড়া মাই ওয়াইফি শান্ত হয়ে যাও। রেয়ান্স হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে।

-” কেনো রেয়ান্স কেনো? ওরা এখন কেনো আমার প্রতি এত ভালোবাসা দেখাচ্ছে কেনো আমাকে মেয়ে বলে জাহির করছে কেনো? তোড়া কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।

-“আমি যখন ছিলাম ওই বাড়িতে তখন কেনো আমাকে একটুও ভালোবাসে নি। আমি যখন তাদের একটু ভালবাসা পাওয়ার জন্য তৃষ্ণার্থ থাকতাম তখন তো কেউ আমাকে দেখত না তাহলে আজ কেনো?

-” তখন আমি কিছু না করলেও আমাকে শুনতে হতো সব কিছু থেকে আমি বঞ্চিত থাকতাম তাহলে আজ কেনো মেয়ের জন্য কাঁদছে।

তোড়া কিছুক্ষণ কাঁদতে কাঁদতে চুপ করে গিয়ে নিজের চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে যায়। আসতে আসতে চোখ মুখ কঠিন থেকে কঠিন হয়ে যায়।

-” আমি আমার জীবনে হওয়া প্রত্যেক টা জিনিসের হিসাব নেবো সুদে আসলে। কাউকে ছাড়বো না কাউকে নয়।

-” আমার সাথে ওদের কোনো সম্পর্ক নেই ওরা যখন আমাকে ছোটো থেকে দেখেনি তখন এখনও ওদের আমার কথা ভাবতে হবে না। আর না আমি ভাববো ।সবাই কে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। পেতেই হবে। তোড়া কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

-” আমি তোমার সাথে আছি তোমার যা মন চায় তুমি করো বাকি টা আমি দেখে নেবো। রেয়ান্স বলে ওঠে।

রেয়ান্স কোনো কথা না বলে তোড়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে তোড়ার মাথায় একটা গভীর ভালোবাসার পরশ দিয়ে দেয়।

————–

-” দাদু আমাকে ডেকে ছিলে? তামিম তার দাদুর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে।

তোড়ার দাদু বাড়িতে এসেই তামিম কে দেখা করতে বলে নিজের ঘরে যেতে বলে। তোড়ার দাদু একবার তামিম কে দেখে নিয়ে ইশারা করে বারান্দায় যেতে বলে। তামিম কিছু বুঝতে না পারলেও কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই চুপ চাপ যেতে থাকে জানে নিশ্চয়ই কোনো কথা আছে।

-“কি হয়েছে দাদু? তামিম ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

তোড়ার দাদু কোনো কথা না বলে তামিম এর হাতে নিজের ফোন ধরিয়ে দেয়। তামিম একবার তার দাদুর দিকে তাকিয়ে ফোনের দিকে তাকাতে তার ভ্রু কুঁচকে যায়।

-” দাদু এটাতো ওই মেয়েটা মানে ওই নিউ কমার টপ মডেল। কি যেনো নাম হ্যাঁ তোড়া দেওয়ান। তামিম বলে ওঠে।

-” কারোর সাথে কি মিল পাচ্ছো না?তোড়ার দাদু বলে ওঠে।

তামিম তার দাদুর কথায় অবাক হয়ে ভালো করে দেখতেই তার চোখ ও স্থির হয়ে যায় আনমনেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসে

-“দি….. ।

তার দাদু কোনো কথা না বলে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। তামিম তার দাদুর দিকে একবার তাকায় তো ফোনের দিকে একবার তাকায়। সে পুরো অবাক হয়ে গেছে।

-” দাদু এটা তো দি আমার দি। তামিম উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে।

-“হুসসসস। আস্তে কথা বলো। তার দাদু বলে ওঠে।

-” দাদু তার মানে দি বেঁচে আছে। আমার দি বেঁচে আছে। তামিম বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ তাই তোমার দিদি বেঁচে আছে। তার দাদু মুচকি হেসে বলে ওঠে।

ফোনের ছবিতে দুটো ছবি কোলাজ করা আছে একটাতে তোড়ার ছবির ওপরে পুরোনো তাথই ছবির মুখের থাকা কপালে কালো দাগ গালে নিচের কাটা দাগ টা ড্রয়িং করা আছে আরেকটা তে তোড়ার ভালো ছবি দেয়া আছে আর এটাতে স্পষ্ট ভাবে তোড়া আর তাথই এর মুখ বোঝা যাচ্ছে যে এরা দুজনই একই মেয়ে।

তোড়ার দাদু একে একে হসপিটালে হওয়া সমস্ত কিছু বলতে থাকে তামিম কে। তামিম উত্তেজিত হয়ে সবটা শুনতে থাকে।

-“আমিও চাই আমার দি তার প্রতি হওয়া সমস্ত অপমানের বদলা নিক। তামিম বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ ঠিক তাই সবাই কে তার উপযুক্ত শাস্তি দিতে থাকুক।

-“দাদু দি এর সাথে দেখা করব। কত দিন হলো দি কে দেখিনি। দাদু দি এর কোনো খোঁজ জানো কোথায় থাকে? তামিম বলে ওঠে।

-” রেয়ান্স রাওয়াত । লর্ড রেজেন্সি ।

-” হোয়াট? এটা কি করে হতে পারে ওয়ার্ল্ড টপ ওয়ান বিজনেসম্যান? তামিম অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আমার চোখ কখনও ভুল হতে পারে না যতো মুখ ঢেকে রাখুন না কেনো আমি তাকে ঠিক চিনতে পেরেছি হসপিটালে তোমার দি এর সাথে রেয়ান্সই ছিল। তোড়ার দাদু মুচকি হেসে বলে ওঠে।

-“বাহ তাহলে তো দেখছি খেলা এবার বেশ জমে যাবে। তামিম হেসে বলে ওঠে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩১

রেয়ান্স চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। চোখ মুখ তার অসম্ভব লাল হয়ে আছে মাথার রগ গুলো ফুলে আছে। টেবিলে হাত মুষ্ঠি বধ্য অবস্থায় রেখে তার সামনে রাখা ল্যাপটপ স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে আছে। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শাহীন। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। জানে তার বস এখন ভীষণ খেপে আছে। কিছু বললেই ব্ল্যাস্ট হবে। শাহীন মাঝে মাঝে ভেবে পায় না যে বস মেয়েদের থেকে দূরে থাকতো আর এখন সেই বস কিনা তোড়া ম্যাডাম এর জন্য বলতে গেলে পাগল প্রায়।

ল্যাপটপ স্ক্রিনে এখন সেই দিনের পার্টির ভিডিও ক্লিপ চলছে যেদিন তোড়ার অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে ছিল। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তানিয়া আর অভির কারসাজি। তানিয়া অভির ইশারায় ড্রিংকে কিছু একটা মিশিয়ে দিচ্ছে আর এদিকে অভি তোড়া কে কাছে টেনে তানিয়া কে আড়াল করছে যাতে তোড়ার নজর ওদিকে না যায়। তোড়ার কোমরে অভির হাত দেখতেই যেনো সারা শরীর জ্বলে ওঠে রেয়ান্স এর। দাঁত মুখ খিঁচে পুরোটা দেখতে থাকে রেয়ান্স।

তানিয়া এসে গ্লাস তোড়ার হাতে ধরিয়ে দেয় সাথে নিজেরা ও নেয় যাতে তোড়ার সন্দেহ না হয়। তোড়া গ্লাস মুখে দিতে ওদের দুজনের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কিছুক্ষণ পরেই তোড়া টলতে থাকে। অভি আগেই জানতো তাই সে তোড়া কে নিজের বাহু ডোরে জড়িয়ে নিয়ে পার্টি থেকে সবার আড়ালে বেরিয়ে যায়। ওদের পিছু পিছু তানিয়া ও বেরিয়ে যায়। ক্লিপ এখানেই শেষ।

রেয়ান্স তার সোর্স লাগিয়ে সেই দিন রাতের ভিডিও ক্লিপ আর বাকি ডিটেইলস বের করেছে। সেই দিন রাতে তোড়ার বিল্ডিং থেকে পড়ে যাওয়ার পর অভি ও তানিয়া মিলে সব জায়গা থেকে প্রমাণ লোপাট করার জন্য ফুটেজ ডিলিট করিয়ে দেয়। কিন্তু তারা জানত না তাদের ওপরে ও কেউ আছে যে চাইলেই হাজার স্তূপ এর নিচে জমে থাকা তার কাজের জিনিস বের করে আনতে পারে।

-“বাকি প্রুফ গুলো? রেয়ান্স দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-” স্যার সব কিছুই রেডি আছে। শাহীন আসতে আসতে বলে ওঠে ।

-“ওকে এই ভিডিও ক্লিপ টা কে দুটো পার্টে ভাগ করে রিলিজ করো। রেয়ান্স বলে ওঠে।

শাহীন কোনো কথা না বলে রেয়ান্স এর কথার তালে তাল মিলিয়ে দেয়।

-” একটা ভিডিও ওদের ড্রিংক মিশিয়ে খাওয়ানো আর সেকেন্ড টা তোড়া কে ধরে বাইরে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-” ওকে স্যার।

-” কাজটা যেনো আজকের মধ্যে হয়ে যায়।

-” স্যার ম্যাডাম এর অ্যাসিস্ট্যান্ট রাই একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছে। শাহীন তার ফোন রেয়ান্স এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।

রেয়ান্স তোড়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কথা শুনে চুপচাপ দেখতে থাকে ভিডিও টা। এটা সেই ভিডিও যেদিন অভির সাথে তোড়ার রেস্টুরেন্ট এর ভিডিও পাবলিক হয়েছিলো। যেখানে তাথই এর মৃত্যু রহস্য উঠে এসেছিল। আর তারপরেই তানিয়া অভির অফিসে এসে অভি কে চড় মারে। যেখানে তানিয়া চিন্তিত হয়ে অভি কে ব্লেম করছে। এই ভিডিও টাই তারা দুজনেই তাদের দোষ স্বীকার করছে তার সাথে তানিয়া ভুল করে তার মুখ ফসকে তোড়ার মৃত্যুর কথা বলে ফেলে। যদি এখানে সে নিজের ভীতির কথা বলেছে কিন্তু রেয়ান্স এর বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে তোড়ার মৃত্যু নিয়ে ভয় পাচ্ছে তানিয়া।

হ্যাঁ সেদিন সেই রুমের বাইরে থেকে যে ভিডিও করছিলো সে আর কেউ না ওটা রাই ছিল. রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে সে ভিতরে সব কথোপকথন রেকর্ড করে নিয়েছিলো একটা সে তোড়া কে পাঠিয়ে ছিল আর একটা সে কয়েক ঘণ্টা আগে শাহীন কে পাঠিয়েছে। রাই এর মনে হয়েছে এই ব্যাপার টা যদি রেয়ান্স জানে তাহলে সব দিক দিয়ে সুবিধা হবে তাই সে শাহীন কে পাঠিয়ে দেয় কারণ সে জানে শাহীন কে পাঠানো মানেই রেয়ান্স এর কাছে পৌঁছে যাবে।

রেয়ান্স এই ভিডিও টা দেখতেই তার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে।

-“কাজের আছে। রেয়ান্স বিড়বিড় করে বলে ওঠে।

-” আচ্ছা শোনো প্রত্যেক টা ভিডিও একদিন পর পর রিলিজ করো। আর হ্যাঁ দেখো যেনো কেউ এই নিউজ টা কে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা না করে তাহলে তাকেই সরিয়ে দেবে। বলেই রেয়ান্স বেরিয়ে যায়।

এদিকে শাহীন চুপচাপ রেয়ান্স যাওয়া দেখছে। সে জানে তাকে এখন এই কাজ গুলো করতে হবে না হলে তার বস তাকে ছেড়ে কথা বলবে না। এমনিতেই তোড়ার কোনো কাজ হলে সব ফেলে সেটা আগে করে যতো কাজ থাকুক না কেনো।

————–

এদিকে তানিয়া কিছুটা শান্ত হয়ে আছে। অভি কে জেলে পাঠিয়ে দিয়ে। তোড়ার বাবা অভির বিরুদ্ধে কেস করেছিলো আর তার সাথে সেই ছবি ও ভিডিও ক্লিপ পেয়ে ছিল যার জেরে অভি কে অ্যারেস্ট করা হয়েছে যেহেতু এটা স্টেট মিনিষ্টার এহসান মানান এর মেয়ের কেস তাই ওপর থেকে আসছে তার পুরো ঝড় ঝাপ্টা অভির উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে তো কিছুই জানে না তাথই এর মৃত্যুর ব্যাপারে তাহলে সে কি করে বলবে কিছু এই মৃত্যু টা তো তার কাছেও একটা রহস্য। তানিয়া অভির সাথে দেখা করতে যায়নি একবার ও সে তো মনের সুখে আছে কারন তার ওপর থেকে যে বিপদ সরে গেছে তাই সে আবার তার কাম ব্যাক নিয়ে মেতে আছে। সে এইচ এফ কোম্পানির সি.ই.ও সুনীল চৌধুরী এর সাথে নিজেকে সেট করার চিন্তা করছে যেহেতু অভি এখন জেলে তাই ওকে নিয়ে পড়ে থাকলে তো তার চলবে না তাই নতুন মুরগী শিকার এর জন্য তৈরী করছে নিজেকে।

এখন তানিয়ার ব্যবহার কিছুটা পাল্টে গেছে বাড়ির সবাই এর সাথে ভালো করে কথা বলছে স্পেশালি তোড়ার মায়ের সাথে। যেহেতু তার ড্যাড এখন তাথই এর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই আবারো তার গেম প্ল্যান করে তার পরিবারকে নিজের দিকে টানার জন্য। যাতে তার ড্যাড তাথই এর মৃত্যুর খোঁজ বন্ধ করে তাকে সাপোর্ট করে যাতে সে আবারও ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরতে পারে। তোড়ার দাদু আর ভাই এখন তাকে দেখেও না দেখার ভান করে তার কথায় কথা মেলায় দেখানোর জন্য।

————

রেয়ান্স বাড়ি ঢুকতে দেখে তোড়া সোফায় বসে ম্যাগাজিন দেখছে। তোড়া কে দেখেই তার এতক্ষণ এর ভিতরে জ্বলতে থাকা রাগ টা আসতে আসতে নিভে যেতে থাকে। তোড়ার মুখ দেখেই তোর মধ্যে প্রশান্তিতে ভরে যায়। আসতে আসতে এগিয়ে এসে কোট খুলে সোফায় রেখে তোড়ার পাশে গিয়ে বসে পড়ে। তোড়া পড়ায় মগ্ন ছিল তাই বুঝতে পারিনি কিন্তু যখন তার পাশে কেউ বসার অনুভূতি পায় তখনই চোখ তুলে তাকায়।

রেয়ান্স কে দেখতেই তোড়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে. সে হাতের থাকা ম্যাগাজিন টা সামনের টেবিলের ওপর রেখে দেয়। রেয়ান্স কোনো কথা না বলেই সোজা তোড়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তোড়া একটু অবাক হলেও আবার নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। তোড়া রেয়ান্স
এর মাথায় হাত রাখতে রেয়ান্স তোড়ার পেটে নিজের মুখ গুঁজে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তোড়ার কোমর। তোড়া রেয়ান্স এর এমন করতে হালকা কেঁপে ওঠে। রেয়ান্স এর মাথায় থাকা হাত টা শক্ত করে মুঠো করে নেয়। রেয়ান্স কিছুক্ষণ তোড়ার পেটে মুখ ঘোষে শান্ত হয়ে থাকে এতক্ষন তোড়া নিজের দম আটকে রেখেছিলো। সে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে রেয়ান্স এর চুল আলতো করে ধরে মুঠো ছেড়ে। আসতে আসতে তার হাত রেয়ান্স এর মাথায় বুলিয়ে দিতে থাকে।

-“কি হয়েছে? মন খারাপ? তোড়া মৃদু ভাবে বলে ওঠে।

রেয়ান্স তোড়ার কথা শুনে মুচকি হাসে সে জানে এখন করে তোড়া তার ভিতরে চলতে থাকা সমস্ত রকমের অনুভূতি গুলো বুঝতে পারে ধরতে পারে। রেয়ান্স তোড়ার পেটে একটা গভীর চুমু খায়। এতে তোড়া আরো দ্বিগুণ ভাবে কেঁপে ওঠে।

রেয়ান্স তোড়ার পেটের থেকে মাথা সরিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে তোড়ার দিকে মুখ তুলে তাকায়। এক হাত দিয়ে তোড়ার গালে স্পর্শ করে। তোড়া রেয়ান্স এর এমন করাতে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো। গালে রেয়ান্স এর হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকায় দেখে রেয়ান্স তার দিকে তাকিয়ে আছে মুখে আছে একটা হাসি তবে এই হাসিটা তার সব সময়ে এর মুচকি হাসি বাঁকা হাসির থেকেও আলাদা। কিছু কি হয়েছে ভাবতে থাকে তোড়া। তোড়ার তাকানো দেখে রেয়ান্স মলিন হেসে গালে হাত স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে।

-“তুমি অনেক কষ্টে ছিলে তাই না।

-” মানে?

রেয়ান্স এর কথা শুনে তোড়া অবাক হয়ে যায় কি বলতে চাইছে সে তার কথার মানে কি তোড়া ভাবতে থাকে।

-“কিছু না। রেয়ান্স তোড়ার ঠোঁটে স্লাইড করে বলে ওঠে।

রেয়ান্স কিছু কথা বলতে গিয়ে ও চেপে যায় সেতো জানে তোড়ার আগের জীবনের কষ্ট। সে তো জনে ছোটো থেকেই তোড়া কিসের মধ্যে থেকে বড় হয়েছে। আর তার সাথে কি কি হয়েছে, সে কিছুটা শুনেছে তার পিপিন এর থেকে আর বিয়ের পরই রেয়ান্স তোড়ার ব্যাপারে সমস্ত ইনফরমেশন বের করে নেয়। তাই আর এখন এই সব কোনো কথা বলে তোড়ার মন খারাপ করে দিতে চাইলো না তোড়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকে কেমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

-“আমি আর তোমাকে কষ্ট পেতে দেবো না তোড়া। খুব তাড়াতাড়ি তোমার সমস্ত অপরাধীদের শাস্তি হতে চলেছে। রেয়ান্স নিজের মনে বলে ওঠে।

রেয়ান্স তোড়ার আর কোনো কথার উত্তর না দিয়ে তোড়ার ঘাড়ে হাত রেখে তোড়ার মাথা টা নিচের দিকে নামিয়ে আনে। তার এখন তোড়ার মাঝে ডুব দিতে হবে নাহলে তার ভিতরে জ্বলতে থাকা আগুন কিছুতেই শান্ত হবে না। তার অশান্ত মন কিছুতেই শান্ত হবে না। তোড়ার মাথা নিচু করে তার মুখের কাছে এনে তোড়ার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। তোড়া বুঝতে পারে রেয়ান্স এর কিছু একটা হয়েছে কিছু তো চলছেই তার মাথায়। যা বড় কোনো কিছু হতে চলেছে। হয়তো এটাই ভালোবাসার জোর ক্ষমতা। একে অপরের মন বুঝতে পারার। তাই তোড়া নিজের মধ্যে থেকেই রেয়ান্স কে শান্ত হতে সাহায্য করে চুপচাপ হয়ে সে রেয়ান্স এর ছোটো ছোটো উষ্ণ আদর উপভোগ করতে থাকে। সে রেয়ান্স এর স্পর্শে সাড়া না দিতে রেয়ান্স তার ঠোঁটে ছোট ছোট আদুরে কামড় দিতে থাকে শেষে কোনো উপায় না পেয়ে তোড়া ও ডুবে যায় রেয়ান্স এর আদরের মাঝে।

দুজন একে অপরের মাঝে ডুবে থাকে এই সময়ে ল্যান্ড লাইন এর ফোন বেজে ওঠে। কিন্তু সেদিকে কোনো হুস নেই তারা তো এখন নিজেদের মাঝে ডুবে আছে। ফোন কেটে গিয়ে আবারো বেজে উঠতে তোড়া রেয়ান্স কে ঠেলে সরিয়ে দিতে লাগে। রেয়ান্স তোড়ার এমন করাতে বিরক্ত হয়ে ঠোঁটে একটা কামড় দিয়ে সরে যায়। দুজন হাফাতে থাকে কিছুক্ষন পর বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়েই তোড়ার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে রেগে হাত বাড়িয়ে ফোন কানে তুলে নেয়। কিন্তু সে তোড়ার কোলে থেকে ওঠে না এখনও সে একহাত দিয়ে তোড়ার কোমর জড়িয়ে রেখেছে।ফোন কানে দিয়ে রেগে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই ওপারের কথা শুনে চুপ হয়ে যায়।

-“ঠিক আছে ভিতরে পাঠিয়ে দাও। রেয়ান্স শান্ত ভাবে বলে ওঠে।

রেয়ান্স এর বাংলোর চারিদিকে গার্ড বসানো আছে আর এখানকার সিকিউরিটি সিস্টেম খুবই কড়া তাই কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না ভিতরে থেকে অর্ডার আসছে। তাই সিকিউরিটি ফোন করেছিলো কেউ এসেছে তাদের সাথে দেখা করতে তাই ভিতরে পাঠাবে কিনা জিজ্ঞেস করতে। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ।

রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে কোনো কথা না বলে কোলের থেকে উঠে বসে। তোড়া কে সামনে এনে তার ড্রেস ও চুল ঠিক করে দিতে থাকে একটু আগে তার জন্য সব উলোট পালট হয়ে আছে। হটাৎ রেয়ান্স এর এমন করাতে তোড়া অবাক হয়ে রেয়ান্স কে দেখতে থাকে। কে আসছে তাদের বাড়িতে যে রেয়ান্স এত গম্ভীর হয়ে গেলো? যদিও রেয়ান্স বরাবরই সবার সাথে এমন ঠান্ডা ব্যবহার করে শুধু তার সাথে তার সামনে আসল রূপে আসে। তোড়া মনে মনে ভাবতে থাকে। এরই মাঝে কলিং বেল বাজতে ঘোর কেটে যায়। রেয়ান্স তোড়া কে ঠিক ঠাক করিয়ে দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে ওঠে।

-“যাও গিয়ে দরজা টা খোলো।

তোড়া রেয়ান্স এর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না। রেয়ান্স এর ব্যবহার আজকে তার কেমন অদ্ভূত লাগছে হচ্ছে টা কি ভাবতে ভাবতে দরজা খুলতে যায় উঠে। এদিকে রেয়ান্স তোড়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে থাকে। তোড়া বিরক্ত মুখ নিয়ে দরজা খুলতে তার চোখ স্থির হয়ে যায়। তার সারা শরীর যেনো অবশ হয়ে আসছে। তার চোখের পানি গুলো ও যেনো আজ তার সাথে বেইমানি করে বাইরে চলে আসতে চাইছে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩২

তোড়ার স্থির হয়ে এখনও ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে থেকে অবিরাম পানি গড়িয়ে পড়ছে। সে তার অনুভূতি গুলো কে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সে কোনো কথা বলতে পারছে না শুধু অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। সামনে তার ভাই তামিম আর তার দাদু দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দুজন এর ও চোখে পানি আর তামিম তো কেঁদে দেবে এমন অবস্থা। তোড়ার দাদু অস্পষ্ট ভাবে ডেকে ওঠে।

-“তাথই ।

এই ডাক টাই যথেষ্ট ছিল তোড়ার জন্য সে এতক্ষণ স্থির হয়ে থাকলেও এখন নিজকে আটকে রাখতে পারেনি। সে তার দাদুর আদর মাখা আওয়াজ শুনেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার দাদু কে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে। সে এখন তোড়া হলেও যতো তার পার্সোনালিটি চেঞ্জ করে নিক সে তো মেয়েটা একই শুধু তার ভিতরে অভ্যাস পরিবর্তন এই যা। আর এই দাদুর কাছে সে কিছুতেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারবে না। তোড়া ও তার দাদু দুজন দুজন কে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে থাকে।

-“দাদু । ফুফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ডেকে ওঠে তোড়া।

-” মারে কেমন আছিস তুই? জানিস তোর এই বুড়ো দাদু টা তোর জন্য কত কষ্টের মধ্যে ছিল। আমি কখনোই বিশ্বাস করিনি যে আমার তাথই দিদি ভাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তোড়ার দাদু কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।

-“দাদু আমি তোমাকে খুব মিস করেছিলাম। আমিও ভাবিনি আমি আবারও তোমাদের দেখা পাবো। তোড়া তার দাদু কে জড়িয়ে রেখেই বলে ওঠে।

-” হুম আমি তো তোকে টিভি তে দেখেই চিনে ফেলেছিলাম। কিন্তু ওদের বারবার না করাতে আর কিছু বলিনি কিন্তু আমার মন জানতো যে তুই ওটা।আর কালকে হসপিটালে দেখে তো আমি একদম সিউর ছিলাম যে তুই আমার তাথই রানী। তোড়ার দাদু তোড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে।

-” দিভাই !

তোড়া তার দাদু কে ছেড়ে পিছন ফিরতে দেখে তামিম দাঁড়িয়ে আছে আর তার শরীর হালকা হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে ফুফিয়ে ওঠার জন্য। তোড়া ঘুরে দাঁড়াতে তামিম এসে তোড়া কে জাপটে ধরে বাচ্চাদের মত ফুফিয়ে কাঁদতে থাকে। তোড়া জানে তার এই ভাই টা সবার সামনে নিজেকে স্ট্রং দেখালে ও বরাবরের মতো তার কাছে ছিল একদম বাচ্চা ওই বাড়িতে এই দুজন মানুষের জন্য প্রাণ নিয়ে পড়ে ছিল। তোড়ার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার মুখে আছে একটা মিষ্টি হাসির রেখা। সে আলতো হাতে তামিম এর মাথা বুলিয়ে দিচ্ছে। তোড়ার হঠাৎ করে চোখ যায় বাড়ির ভিতরের দিকে দেখে রেয়ান্স তার দিকে তাকিয়ে আছে তার মুখে রয়েছে প্রশান্তির ছোঁয়া। বুকে হাত গুটিয়ে রেখে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কে দেখছে। এটা দেখতেই তোড়ার খুশি যেনো আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়। সে এমন একটা মানুষ কে জীবন সঙ্গী হিসাবে পেয়েছে যে তার মুখের হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য সব কিছু করতে যে তাকে পাগলের মত ভালোবাসে। তোড়া এবার বুঝতে পারে যে রেয়ান্স তখন কেনো তাকে দরজা খুলতে পাঠিয়ে ছিলো। এটা ভাবতেই তার মুখে হাসিটা আরো চওড়া হয়ে যায়।

-“তামিম । আলতো করে ডেকে ওঠে তোড়া।

-” দিভাই তুই ঠিক আছিস তো? জানিস আমি না খুব কষ্ট পেয়ে ছিলাম আমি যখন শুনেছিলাম তুই আর নেই। জানিস তানিয়া দি বাড়িতে নিজের হুকুম করত মা কে কত অপমান করত আর তোর নামে অনেক কথা বলতো। কিন্তু আমি একটা কথাও বিশ্বাস করিনি আমি তো জানতাম আমার দিভাই আমাদের ছেড়ে যেতেই পারে না। বলেই কেঁদে ওঠে তামিম।

তোড়া কোনো কথা না বলে চুপ করে তামিম এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। তার চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পড়ছে।

-“জানিস দিভাই কাল যখন দাদু জানালো তোর কথা আমি না কি খুশি হয়েছি তোকে কি বলব তাইতো দাদু কে নিয়ে চলে এলাম। তামিম তোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” এই যে আর কতক্ষণ ওদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে শুনি? রেয়ান্স এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে তোড়া কে।

রেয়ান্স এর কথা শুনে তিন জনেই তাকায়। তোড়ার রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে হাসি দেয় সে আজ খুব খুশি। কিন্তু এদিকে তামিম আর তার দাদু অবাক হয়ে রেয়ান্স কে দেখছে। তার পরে একে অপরের মুখ দেখে আবারো ও রেয়ান্স এর দিকে দেখছে ।তার মানে তাদের সন্দেহ ঠিক ছিল ওটা তাহলে রেয়ান্স ছিল তার দাদু ভুল বলিনি। তামিম ভাবতে থাকে।

-“আপনারা ভিতরে আসুন। রেয়ান্স তামিম আর তার দাদুর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ হ্যাঁ দাদু ভিতরে চলো। ভাই চল। তোড়া বলে ওঠে।

তারপরে সবাই একসাথে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। তোড়ার দাদুর আর তামিম এর এখনও আশ্চর্য ভাব কাটেনি তারা এখনও আগের মতই এক্সপ্রেশন দিয়ে আছে।

-” তোড়া তুমি বসো আমি আসছি। বলে রেয়ান্স উঠে কিচেনে চলে যায়।

এদিকে তোড়ার দাদু আর তামিম রেয়ান্স এর চলে যাওয়া দেখছে তারা বুঝতে পারছে না। তোড়ার সাথে তার কি সম্পর্ক। তোড়ার তার ভাই আর দাদুর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে নিয়েছে সে জানে তাদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জেগে আছে।

-“দিভাই মিস্টার রেয়ান্স এখানে আই মিন কি করে? তামিম অবাক হওয়ার গুলিয়ে বলে ফেলে।

-“আমার হাজব্যান্ড। তোড়া হালকা হেসে বলে ওঠে।

-“হোয়াট? তোড়ার দাদু ও তামিম প্রায় একসাথে চিৎকার করে বলে ওঠে

-” এটা কি করে হতে পারে দিভাই উনি তো কোনো মেয়ে কে নিজের কাছে ঘেষতে দিত না আর সেই কী না তোর হাজব্যান্ড? তামিম আশ্চর্য হয়ে বলে ওঠে।

-” হুম ।আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় একমাস হতে চললো। তোড়া হালকা হেসে বলে ওঠে।

আর এদিকে তোড়ার দাদু আর তামিম তোড়ার কথা শুনে হা হয়ে আছে বুঝতে পারছে না কি রিয়্যাকশান দেবে তারা।

-” দিভাই কি ভাবে কি? আমাকে একটু সব টা ক্লিয়ার করে বল আমি আর নিতে পারছি না। তামিম বলে ওঠে।

তোড়া তামিম এর কথায় হেসে মাথায় হাত চুল গুলো ঘেঁটে দেয় সাথে সাথে তামিম তার মুখ বাকিয়ে নেয়। তোড়া তার সাথে এরকম আগেও করত তামিম ও এই একই রিয়্যাকশান দিতো।

-” দাদু তোমার আমার মম এর কথা মনে আছে? তোড়া তার দাদুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” তোর সেই মম যে তোকে নিজের মেয়ে বানিয়ে ছিল। হ্যাঁ মনে আছে তো। কেনো কি হয়েছে? তোড়ার দাদু বলে ওঠেন।

-“ওই দিন মম আমাকে বাঁচিয়ে ছিলেন। তোড়া বলে ওঠে।

-” মানে কি বলতে চাইছিস? তোড়ার দাদু বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আমি ঠিক বলছি। আমি আজ তোমাদের সামনে আছি তো শুধু মাত্র আমার মম এর জন্য। বলেই তোড়া একে একে সেইদিন রাতের ঘটনা তাদের বলতে থাকে। তানিয়া অভির কারসাজি। তানিয়ার তাকে ধাক্কা দিয়ে বিল্ডিং থেকে ফেলে দেওয়া আর তারপরে তার জ্ঞান ফেরা থেকে হসপিটাল এর ঘটনা তার সার্জারি করানো মুম্বাই ফিরে আসা মডেলিং ইন্ডাস্ট্রিতে জয়েন করা। রেয়ান্স এর সাথে দেখা। তার সাথে বিয়ে আর তারপরে থেকে অভি তানিয়ার সব কথা বলে ওঠে তোড়া।

কথা গুলো বলার সময়ে প্রথম দিকে তোড়ার চোখে থেকে পানি পড়লেও তার পরেই তার মুখ কঠিন হয়ে যায়। আর যখন সে রেয়ান্স এর কথা বলছিল তখন তার মুখে ছিল এক চিলতে হাসি। তোড়ার দাদু আর তামিম সব কিছু শোনার সাথে সাথেই তোড়ার মুখের এক্সপ্রেশন লক্ষ করছিলো।তোড়ার মুখে রেয়ান্স এর কথা শুনে তারা অবাক এই ছেলে তোড়ার প্রতি এত টা কেয়ারিং হতে পারে তারা না শুনলে হয়তো বিশ্বাস করত না। আর এটা বিশ্বাস করার মতো ও কোনও কথা নয় কারণ রেয়ান্স নিজেই।

-“তারমানে এই সব কিছুর পিছনে এই তানিয়া দি আছে। আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি যে নিজের বোন এর সাথে এমনটা করতে পারে বলে। তামিম রাগে চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” ছিঃ ছিঃ মেয়েটা এমন করতে পারলো আর আমাদের সাথে কত ভালো না অভিনয় টা না করলো। আর ওই বেটা হারামজাদা অভি টা এমন বেরোবে আমি ভাবতেও পারিনি। তোড়ার দাদু বলে ওঠে।

-” এই তানিয়া দি কে তো আমি ছাড়বো না। সাথে ড্যাড আর মা কে ও না। তাদের ও দেখিয়ে দেবো তাদের আদরের গুনোধর মেয়ের কাজ। তামিম চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” না একদম না। তোড়া কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

ওরা আর কিছু বলবে কি তার মধ্যে রেয়ান্স তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। রেয়ান্স এতক্ষণ ওদের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল তার কানে সব কথায় এসেছে। সে তাদের একসাথে কিছুটা স্পেস দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু তোড়ার কথা গুলো শোনার পর তার মনে হচ্ছে তার বুকের মধ্যে কেউ হাজার ছুরি গেঁথে দিচ্ছে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। অভি তানিয়া যে তার ওয়াইফি কে বিক্রি করে দিয়েছিলো এটা শুনেই তার মাথায় বাজ পড়ে। সে শুনেছিলো তানিয়ার আর অভির রিলেশন আর তানিয়ার তোড়া কে বিল্ডিং থেকে ফেলে দেওয়া কিন্তু তার মাঝে যে এত কিছু ছিল সে জানতো না। আর এটা ভেবে তার মাথা আরো গরম হয়ে যাচ্ছে সে নিজেই ভেবে পাচ্ছে না সে কেনো এই বিষয় টা নিয়ে আগে খোঁজ করেনি কেনো সে এই ব্যাপারটা মিস করে গেছে। এটা ভাবতেই তার যেনো রক্ত চড়ে উঠছে মাথায়। তোড়ার কথা শেষ হতে রেয়ান্স নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে তাদের দিকে আসতে থাকে। তোড়ার দাদু আর তামিম সামনে তাকিয়ে দেখে রেয়ান্স খাবারের ট্রলি নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আর এটা দেখতেই তাদের মুখ হা হয়ে যায়। তারা একটু আগেই তোড়ার কাছে থেকে রেয়ান্স এর কথা শুনেছে আর এখন নিজে চোখে দেখছে।

রেয়ান্স কোনো কথা না বলে তোড়ার পাশে বসেই হালকা হেসে তাদের দিকে কফির কাপ এগিয়ে দেয় সাথে স্নাকস। তামিম আর তোড়ার দাদু নিজেদের কে স্বাভাবিক করে রেয়ান্স এর হাতের থেকে নিয়ে নেয়।

-“রেয়ান্স বেটা তোমাকে কি বলব আমি বুঝতে পারছি না। আমার এই বাচ্চা টা কে যে তুমি সামলে রেখেছো এতেই আমি খুশি। এত দিন পর ওকে দেখেই আমার শান্তি লাগছে। তোড়ার দাদু ধরা গলায় বলে ওঠে।

-” একি বলছেন দাদু। আপনি নিশ্চই এতক্ষণে জেনে গেছেন যে আমরা ম্যারেড এখন আমরা হাজব্যান্ড ওয়াইফ তো এটা তো আমার দায়িত্ব। আমার কর্তব্য ওকে ঠিক রাখা। রেয়ান্স হাসি মুখে বলে ওঠেন।

-” আর আপনার যখন ইচ্ছা হবে তখনই চলে আসবেন এখানে। পিপিন দাদু ও এখন এখানে নেই তাই আপনারা এলে তোড়ার ও ভালো লাগবে। আর তাছাড়া আমিও একটু নিশ্চিত থাকতে পারি। রেয়ান্স বলে ওঠে।

রেয়ান্স এর কথা শুনে তোড়ার দাদু মুগ্ধ হয়ে যায়। আর তোড়া অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে। সে জানে তার জন্য রেয়ান্স এত কথা বলছে তার দাদুর সাথে। সাধারণত রেয়ান্স এত কথা বলে না কারোর সাথে। আর তাছাড়া ও রেয়ান্স এর চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারে যে রেয়ান্স তাদের সব কথা শুনে ফেলেছে।

-“কি তামিম শুধু কান্না করলে হবে। নিজের ক্যারিয়ার এর দিকেও তো ফোকাস করতে হবে। রেয়ান্স তামিম কে বলে ওঠে।

রেয়ান্স এর কথায় তোড়া তার ভাই এর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। যে এখন আপাততঃ তার দিদির কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে আছে।

-” ও এমনই সবার সামনে গম্ভীর আর স্ট্রং থাকে কিন্তু এই দি এর কাছে আসলেই সে বাচ্চা হয়ে যায়। তোড়ার দাদু বলে ওঠে।

-” ক্যারিয়ারে ফোকাস করো। এখন তো দি কে পেয়ে গেছো এখন নিজের দিকেও মন দাও কেমন। আর তাছাড়া যখন মন চাইবে চলে আসবে দাদু কে নিয়ে। রেয়ান্স বলে ওঠে।

সবাই একসাথে হইহই করে সময় কাটায়। আজ যেনো তারা সব কিছু ভুলে গেছে। আজ তোড়া ও তার দাদু আর ভাই কে পেয়ে তার সমস্ত কষ্ট এক নিমেষে ভুলে গেছে। আর রেয়ান্স তোড়ার এই হাসি মাখা মুখ টা অপলক ভাবে দেখে যাচ্ছে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । রি-চেক করা হয়নি টাইপিং মিসটেক থাকলে বুঝে নেবেন ।