ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
6580

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৩

তামিম আর তোড়ার দাদু বাড়ি ফিরতে তানিয়ার মুখোমুখি হয়। তানিয়া কে তাদের সামনে দেখতেই তাদের ভিতরে যেনো রাগে আগুন জ্বলে ওঠে। তানিয়া যে তোড়া কে মারার চেষ্টা করেছিলো এটা জানার পর থেকে তার জন্য শুধু ঘৃণা ছাড়া আর কিছু বেঁচে নেই। তামিম এর চোখ মুখ পাল্টে কঠিন হয়ে গেছে। তার দাদু তামিম এর অবস্থা বুঝতে পেরেই পিছন থেকে তামিম এর হাত ধরে নেই। তাদের এখন কোনো হঠকারিতায় কাজ করলে চলবে না সাবধানে পা ফেলতে হবে তাই তামিম দাদুর ইশারা পেয়ে নিজেকে শান্ত করতে থাকে।

তানিয়া অবাক হয়ে তার সামনে দাঁড়ানো তার ভাই আর দাদু কে দেখতে থাকে তামিম এর মুখে রাগ আর স্বাভাবিক এর মিক্সড এক্সপ্রেশন দেখে সে অবাক হয়ে গেছিলো।

-“কোথায় গেছিলে তোমরা দাদু। তানিয়া হেসে জিজ্ঞেস করে।

-” কেনো তোমাকে বলতে হবে না কি তানিয়া দি.. । তামিম বলে ওঠে।

-“তামিম কি হয়েছে তোর তুই আমার সাথে এই ভাবে কথা বলিস কেনো এখন করে। তানিয়া ভালো সাজার নাটক করে বলে ওঠে।

-” সেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো কেনো আমি এমন করি। তোমার জন্য আমাদের সম্মান আজ মাটিতে মিশে গেছে এর পরেও তুমি কি করে ভাবো যে তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করবো। তামিম কিছুটা রুক্ষ ভাবে তানিয়ার আগের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল এর কথা টেনে বলে ওঠে।

-” তামিম তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারিস না। তানিয়া খানিকটা চিৎকার করে বলে।

-” কেনো পারি না হ্যাঁ কেনো? শুধু মাত্র তোমার জন্য বাইরে বেরোতে পারিনা আমরা লজ্জায়। তোমার জন্য ড্যাড অফিসে ও অপমান বোধ করে সবার কাছে, আবার তুমি উঁচু গলায় কথা বলো। তোমার তো লজ্জা হওয়া উচিত। তোমার ঘরে মুখ লুকিয়ে বসে থাকার কথা তা না করে তুমি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছো। তামিম তানিয়ার থেকে ও আরও চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“যেমন তুমি আর তেমনই ওই অভি। ছিঃ আমার ভাবতে ও ঘৃণা করে এক সময়ে আমি তাকে ভাই বলতাম বিশ্বাস করতাম কিন্তু কি হলো তোমরা তোমাদের আসল রং দেখিয়ে দিলে। দিভাই মারা যেতে না যেতেই তোমার সাথে জুড়ে গেলো আমার দিভাই শোক ভুলানোর জন্য এটা সত্যি কি তাই বড্ড হাস্যকর লাগে না। আর তুমিও তাই অভির সাথে রিলেশনে চলে গেলে। তো ভালো কথা একসাথে থাকতে পারতে তাই না। কিন্তু তোমরা তো বিড়াল এর মত একটা ছেড়ে আরেকটা গন্ধ নাও নিজেদের ফায়দার জন্য একটা খাওয়া হয়ে গেলো তো আবার অন্য জায়গা মুখ দেয়া ছিঃ আমার ভাবতে ও এখন ঘৃণা করে যে তুমি আমার দি হও। আর একদিকে তো ক্লিয়ার হয়ে গেলো যে আমার দিভাই এর মৃত্যুর পিছনে ওই অভির হাত আছে এটা কোনো সুইসাইড নয় মার্ডার কেস। বলতো যায়না দেখা গেলো এর মধ্যে তুমি ও সামিল আছো। আছো বলছি না হতেও তো পারে। বলেই তামিম ভিতরে চলে যায়।

আর এদিকে তানিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার কোনো কথা বলার মুখ নেই সে প্রথম দিকে তামিম এর কথা শুনে রেগে গেলেও শেষের বলা কথা গুলো শুনে যেনো তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। হটাৎ করে তামিম তাথই মৃত্যুর ঘটনা কেনো টানলো এটা ভেবেই ঘাবড়ে গেছে তামিম কিছু কি জেনে গেলো নিজের মনে ভাবতে থাকে তানিয়া। সে জিজ্ঞেস করতে এসেছিল তারা কোথায় গেছে কিন্তু সেটা যে উল্টে ওর ওপর ভারী পরে যাবে তানিয়া সেটা ভাবতেই পারিনি।

তোড়ার দাদু ওখানেই দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছিলেন। তিনি ইচ্ছা করেই তামিম কে থামায়নি। সে সাবধানে পা ফেলতে বলেছিলো তামিম কে আর তামিম উল্টে তানিয়ার কিছু দিন আগেকার ব্ল্যান্ডার টেনে তুলে কথা বললো শেষে তাকে চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়ে গেলো। তানিয়ার মুখের অবস্থা দেখে তিনি মনে মনে হাসেন। তার মনের ভিতরে যে টুকু ভালোবাসা বেঁচে ছিল তানিয়ার জন্য আজ সেটাও ঘৃণাতে পরিনত হয়ে গেছে। তিনি এক পলক ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ভিতরে দিকে চলে যায়। সামনে এগোতে দেখতে তার ছেলে এবং তার বৌমা দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের দেখতেই যেনো তার মনটা বিষিয়ে গেলো। ওদের দিকে ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। এখন এদের সামনে থাকলে নিজেকে আটকাতে পারবেন না এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তার ভরসা আছে তোড়া রেয়ান্স এর ওপর ।আর তাছাড়া তার নাতনী কে তিনি পেয়ে গেছেন তাই তার কোনো আর চিন্তা নেই যা হবে ভালোর জন্য হবে।

তোড়ার বাবা এখনও তার বাবার চলে যাওয়া দেখছে। হটাৎ করে তাদের দিকে ওই ভাবে তাকাতে দেখে তারা অবাক হয়ে গেছে। আর এতক্ষণ তারা তামিম আর তানিয়ার লড়াই ও দেখছেন। তামিম বলা প্রতি টা কথা তাদের মাথার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তানিয়া সে তো মনে মনে ভয় পাচ্ছে যে তামিম যেনো গেলো কিনা।

-“আমি চাই তুমি আতঙ্কে থাকো। এই ভয় তোমায় কুরে কুরে খেয়ে নিক যে আমি সব টা জেনে গেছি। আমি ও তোমার মুখে এই ভয় টাই দেখতে চেয়েছিলাম। এখন তুমি সারারাত ভাবতে থাকো যে কি হতে চলছে। আর সকালে উঠে নিউজ পেয়ে যাবে যে কি হয়ে গেছে। বলে বাঁকা হাসে তামিম।

সে এতক্ষণ উপর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তানিয়ার ভাব গতি লক্ষ করছিলো।

————–

তোড়া রেয়ান্স কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সে আজ খুব খুশি। এতদিন পর সে আবার তার দাদু আর ভাই কে দেখতে পেয়েছে তাদের কে নিজের কাছে পেয়েছে। সে ওই রাতের পর থেকে ভাবতেই পারিনি যে আবারো তাদের কে ফিরে পাবে। ওদের সাথে তার দেখা হয়ে যাবে এত তাড়াতাড়ি। তাই সে আজ তার দাদু আর ভাই কে পেয়ে আবারো সেই আগের তাথই হয়ে গেছিল যে দিনের বেশির ভাগ সময়ে তার দাদু আর ভাই এর সাথে কাটিয়ে দিত হাসি মজার মধ্যে দিয়ে।

তোড়ার দাদু আর ভাই যাওয়ার পর থেকেই সে রেয়ান্স কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে নিজের সাথে। আর রেয়ান্স ও তোড়ার নিজের সাথে রেখে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আজ রেয়ান্স খুশি তোড়ার খুশিতে এতদিন পর সে প্রাণ খুলে হেসেছে। তার মধ্যে ও যে একটা বাচ্চা ভাব লুকিয়ে আছে সেটা টের পেয়েছে রেয়ান্স। রেয়ান্স তোড়া কে তার সাথে ওই ভাবে জড়িয়ে রেখেই কোলে নিয়ে ওপরে চলে এসেছিলো ট্যারেসে। তোড়ার আরো ভালো অনুভব করানোর জন্য।

চারিদিকে অন্ধকার ও মৃদু হওয়াতে পরিবেশ আর শান্ত আর বেশি মায়াবী লাগছে। নিচে গার্ডেন এর আলো আলোকিত হয়ে আছে। তার হালকা মৃদু আলোর ছটা ভেসে বেড়াচ্ছে। দূরের বিল্ডিং থেকে আলো ভেসে আসছে। হওয়ায় তোড়ার চুল গুলো উড়ে এসে রেয়ান্স মুখ ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্ত টা যেনো রেয়ান্স কাছে অন্য একটা মায়ার সৃষ্টি করেছে সে যেনো আসতে আসতে ডুবে যাচ্ছে এই মায়াজালের ভিতরে। তোড়া সেখান থেকে একটা কথাও বলেনি শুধু রেয়ান্স কে জড়িয়ে ধরে আছে। নিজেকে সে রেয়ান্স মাঝে ডুবিয়ে রেখেছে। আজ যেনো তার নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে সে তার জীবনে সব কিছুই পেয়ে গেছে এতদিন যা কিছু তার ছিল না আজ সব কিছুই তার কাছেই আছে। তার মম লেখা দুই দাদু ভাই রেয়ান্স সব কিছুই তার কাছে আছে। রেয়ান্স তোড়ার চুলে নিজের মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। তোড়া রেয়ান্স বুকের মাঝে থেকে মুখ তুলে রেয়ান্স মুখের দিকে তাকায়। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখ পানিতে চিক চিক করছে ঠোঁট গুলো তিরতির করে কাঁপছে। সে কিছু বলতে চায় রেয়ান্স বুঝতে পারে। রেয়ান্স দু হাত দিয়ে তোড়ার মুখ তুলে ধরে তোড়ার কপালে একটা গভীর চুমু খেয়ে অপেক্ষা করতে থাকে তোড়ার কথা শোনার জন্য। কেনো যেনো আজ তার বুকের মধ্যে ধুকধুক টা হাজার গুন বেড়ে গেছে। তোড়ার রেয়ান্স এর চোখের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে।

-“রে… রেয়ান্স আই লাভ ইউ। ভালোবাসি তোমায় ।

রেয়ান্স এর যেনো দুনিয়া থমকে গেছে তোড়ার কথায় তার চোখের পলক স্থির হয়ে গেছে। তোড়ার মুখের থেকে এই কথা শোনার জন্য সে এতদিন অধীর আগ্রহে ছিল। আর আজ এই কাঙ্খিত কথাটা শুনেই তার মধ্যে হালচাল শুরু হয়ে গেছে তার শরীরে মধ্যে দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। তার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেছে। তার মধ্যে যে কেমন অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে সে বুঝতেই পারছে না। খুশিতে তার মুখের হাসিটা আরো বেশি করে ফুটে ওঠে তোড়ার গালে থাকা হাত গুলো মৃদু ভাবে কাঁপতে থাকে। রেয়ান্স তোড়ার মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

-“আমি জানি না রেয়ান্স আমি কখন কি ভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার প্রত্যেকটা কথা প্রত্যেকটা কাজ আমার মনের মধ্যে ঘর করে যেতো। তুমি কাছে আসলেই আমার মধ্যে অজানা অনুভূতির সৃষ্টি হতো। আমি জানতাম না এই অনুভূতির নাম কি তবে এখন জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমাকে ভালোবেসে নিজের করে নেবে রেয়ান্স । আমি সম্পূর্ণ তোমার হতে চাই। তোড়া বলে ওঠে।

রেয়ান্স কোনো কথা না বলেই তোড়া কে তার বুকের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে নেয়। তার আজ সব থেকে খুশির দিন। তার তোড়া তাকে ভালোবাসে হ্যাঁ সে তাকে ভালোবাসে। সে সফল হয়েছে তোড়ার মনে তার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করাতে পেরেছে সে। তোড়া ও কোন কথা না বলে রেয়ান্স কে জড়িয়ে থাকে।

তারা এভাবে কতক্ষণ ছিল জানে না হঠাৎ গায়ে পানির ফোটা পড়তে তাদের ঘোর কেটে যায়। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ওয়েদের চেঞ্জ হচ্ছে তাই হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টির দেখা মেলে এখন। আর ওদের এই মুহূর্তে সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তোড়া তার দু হাত ছাড়িয়ে রেয়ান্স বুকের সাথে মিশে থেকেই মুখ ওপরে তুলে বৃষ্টি অনুভব করতে থাকে। আর রেয়ান্স তোড়ার কোমরে হাত রেখেই তার দিকে নেশায় বুঁদ হয়ে দেখতে থাকে। সে যেনো আজ তোড়ার নেশায় ডুবে যাচ্ছে। তোড়ার যেনো আজকে তাকে ভীষণ ভাবে আকর্ষণ করছে।

অপলক ভাবে রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে আছে ।তার এক হাত কোমর থেকে মুখের ওপরে চলে আসে। মুখের ওপরে পড়ে থাকা চুল কানের পিছনে দিয়ে দেয়। আঙুল দিয়ে আসতে আসতে বৃষ্টির পানির সাথে তোড়ার মুখ স্লাইড করতে থাকে। তোড়া এতক্ষণ বৃষ্টি উপভোগ করলেও রেয়ান্স এর হাতের স্পর্শ পেয়ে সে চোখ খুলে তাকায় দেখে রেয়ান্স তার দিকে নেশাগ্রস্ত এর মত তাকিয়ে আছে তার দু চোখে আছে তাকে কাছে পাওয়ার নেশা। এটা দেখেই তোড়া কেঁপে ওঠে। তার মধ্যে এক অদ্ভূত অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

রেয়ান্স তোড়ার মাথা তুলে আসতে আসতে তোড়ার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। বৃষ্টির পানির সাথে মিশে থাকা তোড়ার ঠোঁট তার কাছে কোনো মিষ্টির থেকেও বেশি কিছু মনে হচ্ছে সে যেনো তোড়ার এই রসালো মিষ্টান্ন ঠোঁটের নেশায় হারিয়ে যাচ্ছে। তোড়া রেয়ান্স এর মাথায় আকড়ে ধরে। সে ও আজ সমান তালে রেয়ান্স এর সাথে মেতে ওঠে। তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হতে এই বৃষ্টি যেনো আনন্দে মেতে উঠে তাদের ওপর আছড়ে পড়ছে।

রেয়ান্স তোড়ার ঠোঁট ছেড়ে গলায় কামড় বসিয়ে দেয়। এতে তোড়ার মুখ থেকে মৃদু চিৎকার বেরিয়ে আসে। রেয়ান্স পিঠ খামছে ধরে তোড়া তার দু হাত দিয়ে। রেয়ান্স কামড় এর জায়গায় ছোটো ছোটো চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকে তোড়ার ব্যথা সে এই চুমু দিয়ে নিবারণ করে। তোড়া তার ব্যথা ভুলে গিয়ে রেয়ান্স এর এমন আদুরে চুমু তে কেঁপে কেঁপে ওঠে। রেয়ান্স তোড়ার গলায় মুখ রেখেই আসতে আসতে লিক করতে থাকে তো কখনো কামড় দিয়ে ছোটো ছোটো চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকে। আর তোড়া রেয়ান্স এর এই আদরে পাগল হতে থাকে রেয়ান্স এর বুকের মধ্যে থেকে কাঁপতে শুরু করে।

রেয়ান্স তার মুখ তুলে তোড়ার এমন কাঁপা কাপি দেখে আলতো করে তোড়ার ঠোঁটে চুমু দিয়েই তোড়া কে কোলে তুলে নেয়। আসতে আসতে তোড়া কে নিয়েই তাদের রুমে চলে আসে। রুমে এসেই তোড়া কে আলতো করে বেডে বসিয়ে দেয়। তোড়া রেয়ান্স এর গলা জড়িয়ে ধরে রেখে তার দিকে ঘোর হয়ে তাকিয়ে আছে। রেয়ান্স তোড়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখে। তার চোখে আজ তাকে কাছে পাওয়ার আকুতি। রেয়ান্স কে সে আজ তার কাছে আসার সম্মতি দিচ্ছে তার চোখের ইশারায়। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে আবারো তোড়ার ঠোঁটে ডুবে যায়। সে এমনিতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়েছিলো আর তারপরেই আবার তোড়ার চোখে কাছে আসার আহবান তোর সব নিয়ন্ত্রণ ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তোড়ার ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। নিজের শার্ট খুলে ফেলে সে তোড়ার মাঝে ডুবে যায় তোড়ার গায়ের থেকে তার ড্রেস আলাদা করে বুকে মুখ গুঁজে দেয়। আস্তে আস্তে ডুবে যায় তোড়ার মধ্যে। ভরিয়ে দিতে থাকে তার আদরের স্পর্শ রঙিয়ে দিতে থাকে তোড়া কে তার ভালোবাসার রং দিয়ে। ডুবে যায় একে অপরের ভালোবাসার সাগরে। পরিপূর্ণ হয় আজ তারা একে অপরের ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে। এই রাত তাদের কাছে আসার রাত তাদের ভালোবাসার রাত। মুড়িয়ে নেয় রেয়ান্স তোড়া কে তার ভালোবাসার চাদরে ।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৪

সকালের মৃদু আলোয় ঘুম ভেঙ্গে যায় তোড়ার। নিজের ওপর ভারী কিছু অনুভব করে। সে কারোর বাহু ডোরে আটকে আছে তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। উষ্ণ নিঃশ্বাস তার বুকের ওপরে আছড়ে পড়ছে। তোড়া পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় । চারিদিকে আলো আধারি হয়ে আছে। রুমের পর্দা গুলো সব টানা আছে আর তার ফাঁক দিয়ে বাইরের আলো উঁকি দিচ্ছে। তোড়া নিজের দিকে তাকাতে দেখে রেয়ান্স তার বুকের ওপরে ঘুমিয়ে আছে তাকে জড়িয়ে রেখেই। তোড়া এক দৃষ্টিতে দেখছে রেয়ান্স এর দিকে । ঘুমের মধ্যে ও তাকে খুব সুন্দর লাগে। তোড়া আসতে আসতে তার হাত এগিয়ে এনে রেয়ান্স এর মাথার সিল্কি চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। রেয়ান্স তোড়ার হাতের ছোঁয়া পেয়ে তোড়া কে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে মুখ ঘষতে থাকে। রেয়ান্স এর এমন কাজে তোড়ার শিরডাড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। সে একদম ফ্রিজ হয়ে গেছে। রেয়ান্স এর মাথায় থাকা হাত আরো জোরে চেপে বসে। রেয়ান্স নড়ে ওঠে তার মাথায় চাপ পড়াতে। সাথে সাথে তোড়া চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।

রেয়ান্স আসতে আসতে চোখ খুলে তাকাতে তার চোখের সামনে স্পষ্ট হয় তোড়ার মুখ। রেয়ান্স তোড়ার মুখের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে তোড়া জেগে আছে তার চোখ খিঁচে রাখা দেখে রেয়ান্স মুখে দুষ্টুমির হাসি ফোটে। রেয়ান্স তার হাত তোড়ার কোমরে রেখেই স্লাইড করতে থাকে আর তোর সাথে সে আবার ও তার থুতনি দিয়ে বুকে ঘষতে থাকে। রেয়ান্স এর ট্রিম দাঁড়ির ঘযা লাগতে তোড়া কেঁপে কেঁপে ওঠে। তার দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। সে আর চোখ বন্ধ রাখতে পারে না চোখ খুলে তাকাতেই দেখে রেয়ান্স তার দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। এতেও তোড়ার রেয়ান্স প্রতি ডুবে যাচ্ছে আরে বাবা একটা ছেলে এত সুন্দর কি ভাবে হয় হ্যাঁ তোড়া ভাবতে থাকে। তোড়ার তার দিকে তাকিয়ে থাকার ফায়দা নিয়ে রেয়ান্স তোড়ার ঠোঁটে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নেয়। এতে তোড়া চোখ বড় বড় করে রেয়ান্স এর দিকে দেখতে থাকে। রেয়ান্স তোড়ার নাকে আলতো করে কামড় দিয়ে বলে ওঠে।

-“গুড মর্নিং মিসেস রেয়ান্স।

তোড়া কিছু না বলে এখনও চুপ হয়ে আছে। রেয়ান্স কাজ গুলো তাকে এখনও ঘোরের মধ্যে রেখে দিয়েছে।

-“গ গ.. গুড মর্নিং। কিছুক্ষণ পর তোড়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে।

-“উফফ! রেয়ান্স আওয়াজ করে ওঠে।

-” কি হয়েছে? তোড়ার হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

-” তোমার আওয়াজ আমাকে আরো একবার মেরে ফেললো। এই ভয়েস তার জালে আমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিচ্ছে মনে হচ্ছে এখুনি খেয়ে ফেলি। রেয়ান্স তোড়ার মুখে স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে।

-” ইশশশশশ অসভ্য। আমাকে ছাড়ো। তোড়া বলে ওঠে।

-“হায়ে আরো কত ভাবে আমাকে মারবে হুম। রেয়ান্স ভ্রু নাচিয়ে বলে ওঠে।

তোড়া কোনো কথা না বলে চোখ নামিয়ে নেয় সে রেয়ান্স এর দিকে তাকাতে পারে না। রেয়ান্স গলায় বুকে তার খামচির দাগ স্পষ্ট হয়ে আছে রেয়ান্স একটু উঁচু হতে সেগুলো তোড়া দেখতে পায় সাথে সাথে কালকের রাতের কথা মনে পড়ে আর তাই এখন লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিয়েছে। রেয়ান্স তোড়ার মুখ দেখেই বুঝতে পারে সে লজ্জা পাচ্ছে তাই আর কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়িয়ে তোড়া কে তুলে নেয়।

-“আরে কি করছো? কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? তোড়া জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” আমাদের কে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিতে আজকের একটা ভালো শো আছে আর এটা তোমার বেস্ট শো বলতে পারো ওয়াইফি। তাই এখন কোনো কথা না বলে চলো। রেয়ান্স তোড়া কে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

আর এদিকে তোড়া রেয়ান্স এর গুলো বুঝতে পারে না তবে এটা বুঝতে পারে বড় কিছু হতে চলেছে আজকে।

————-

তানিয়া ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে হ্যাচকা টান অনুভব করে। চোখ খুলে তাকাতে না তাকাতে তার গালে একটা জোরদার থাপ্পড় পড়ে যায়। থাপ্পড় খেয়ে ধাতস্ত হতে না হতে আবারও পর পর গালে আরো তিনটে থাপ্পড় পড়ে যায়। সাথে সাথে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে তানিয়া। গাল ফেটে রক্ত পড়ছে। তানিয়া মেঝে থেকে মাথা উঠিয়ে তাকাতে দেখে সামনে তার ড্যাড দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে রক্ত চোখ নিয়ে। চোখে মুখে ফুটে আছে রাগ হিংস্রতা। এহসান মানান তানিয়ার রুমে এসেই তাকে শোয়া তুলে মারতে থাকে।

তানিয়া অবাক হয়ে তার ড্যাড কে দেখছে। এই পর্যন্ত তার ড্যাড তার গায়ে হাত তোলা তো দূর উঁচু গলায় কিছু বলেননি আর আজ তাকে পর পর চারটে থাপ্পড় মেরে দিলো। তানিয়ার এই সব ভাবনার মাঝেই এহসান মানান তানিয়া কে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিয়ে আবারও দু গালে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

-“ড্যাড তুমি আমাকে মারলে? তানিয়া অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ মারলাম। তোর মত মেয়ে কে বাঁচিয়ে রাখাই উচিত নয়। এহসান মানান চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“আমি কি করেছি যার জন্য আমাকে মারলে? তানিয়া তার ড্যাড এর কথা শুনে কিছুটা রেগে গিয়ে বলে ওঠে।

এই কথা টা বলতে না বলতেই আবারো তার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তানিয়ার চুলের মুঠো ধরে চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” কি করেছিস তুই জানিস না? আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছিস। তোকে কিছু না বলে আদর দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছি আর তাই এখন তার ফল ভোগ করছি। বলেই তানিয়া কে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয়।

-” দেখ তুই কি করেছিস। তোকে আমার মেয়ে ভাবতে ও এখন ঘৃণা হচ্ছে। ছোটো থেকেই তোকে বেশি ভালোবেসে এসেছি যা চেয়েছিস দিয়েছি আর তুই তার এই পরিণাম দিলি। বলেই এহসান মানান তানিয়ার মুখের ওপর তার ফোন ছুড়ে মারেন।

তানিয়ার তার পাশে থেকে ফোন কুড়িয়ে চোখের সামনে ধরতে তার কলিজা শুকিয়ে যায় চোখ গুলো বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। ঢোক গিলে একবার ফোনের দিকে তো একবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার ড্যাড দিকে তাকায় যে এই মুহূর্তে তার দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে। তানিয়ার চোখ মুখ পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে । ঘেমে যাচ্ছে অনবরত। আর কাঁপা কাঁপা হাতে ধরে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৫

তানিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে আছে। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে কিছু ছবি আর তার সাথে ভিডিও। যেখানে বড় বড় করে হেডলাইন লেখা আছে তার সাথে আর্টিকেল।

“” মিস তানিয়া মানান ও অভির স্ক্যান্ডেল : তাথই মানান এর সাথে সম্পর্ক থাকা কালিন সময়ে অভি তানিয়ার গোপন সম্পর্ক “”

“”তানিয়া ও অভির ষড়যন্ত্র তাথই এর বিরুদ্ধে :তাথই কে এক রাতের বিছানা সঙ্গী হওয়ার জন্য পঞ্চাশ কোটি টাকার ডিল।

“” তাথই রহস্য : তাথই কে কার সঙ্গে রাত কাটানোর জন্য তানিয়া অভি পঞ্চাশ কোটি টাকা পেলো? উঠেছে এসেছে মিস্টার গুপ্তার নাম তাহলে কি তিনি ও এর সাথে কোনো ভাবে জড়িত?

ফোনের স্ক্রিনে উঠে আছে এমন এমন হেডলাইন।
আর তার সাথে দেয়া অভি তানিয়ার কিছু ঘনিষ্ট মুহূর্তের ভিডিও যা তাথই থাকা কালিন। ছবিতে ডেট ও দেয়া আছে। তার পরে আছে একটা ভিডিও রেকর্ডিং মুখ বোঝা যাচ্ছে তার সাথে কথা গুলো ও স্পষ্ট হয়ে আছে। রুমের মধ্যে অন্ধকার থাকলে ও নাইট ভিষন ক্যামেরার জন্য মৃদু আলোতে ও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ওদের সেই রাতের ওই রুমের মধ্যে হওয়া সমস্ত কথোপকথন ও অভি ও তানিয়ার অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ও দেখা যাচ্ছে ফুটেজে। তার সাথেই বড় বড় আর্টিকেল লেখা বেরিয়েছে।

“” ষড়যন্ত্রের শিকার তাথই। নিজের বোন এর বিরুদ্ধে তানিয়ার ষড়যন্ত্র ও বোনের ফিঁয়ন্সে সাথে নিজের গোপন সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এর সাথে কি কোনো যোগ সূত্র আছে মিস তাথই এর মৃত্যুর। এই ফুটেজ এর টাইম আর তাথই এর মৃত্যুর টাইম এর মধ্যে গ্যাপ মাত্র দশ মিনিটের তাহলে এই সময়ে এর মধ্যে এমন কিছু হয়েছে যার জন্য তাথই এর মৃত্যু ঘটেছে। “”

তানিয়া ফোনের স্ক্রিনে চলতে থাকা নিউজ দেখেই পাথর হয়ে গেছে। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে পুরো। ভীতু চোখে সামনে দাঁড়ানো তার ড্যাড এর দিকে তাকাতেই তার কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। তার ড্যাড তার দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে হাতে রয়েছে বেল্ট। তিনি তানিয়ার সাথে সাথে খবর দেখেই নিজের রাগ আর কোনো মতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি কোমর থেকে বেল্ট খুলে ফেলেছে। তানিয়া তাকাতে না তাকাতে তানিয়ার ওপর বেল্ট এর বর্ষণ চলতে থাকে। পুরো রুমের মধ্যে তানিয়ার চিৎকার ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। দরজার বাইরে দাঁড়ানো তোড়ার মায়ের যেনো আজ পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। তানিয়ার কান্না যন্ত্রণা চিৎকার শুনেই তার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে তার এতদিন এর বুকের ভার টা যেনো কমতে শুরু করেছে।

মানান ম্যানসনের বাইরে মিডিয়া পাবলিক এর ভিড় জমে আছে।। তানিয়ার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার জন্য। এদিকে তামিম ও তার দাদু বাড়ির পুরো পরিস্থিতি দেখে যাচ্ছে চুপ করে তারা জানে এই পুরো ঘটনার পিছনে কে আছে। তারা ও আজ মনে মনে খুশি হয়ে আছে। আজ তানিয়ার পুরো ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে গেছে যেটুকু ছিটে ফোটা বেঁচে ছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে।

আবারো এই নিউজ রিলিজ হওয়ার পর তাথই এর মৃত্যু রহস্যের আরো একটা ক্লু পাওয়া গেছে আরো একটা যোগ সূত্র। তাই পুলিশ আরও নতুন উদ্দমে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। পুলিশ স্টেশনে অভি কে আবারো জিজ্ঞেসাবাদ করা হচ্ছে সাথে আছে পুলিশের থার্ড ডিগ্রি অভির মুখ না খোলার জন্য।

তানিয়া আর অভির অবস্থা এখন চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে ।বাড়িতে তানিয়ার হাফ বয়েল চলছে তো এদিকে পুলিশ স্টেশনে অভির এতদিন থেকে পুরো ফুল বয়েল হয়ে গেছে। অভির এখন দেখার হাল নেই পুরো শরীরে দাগ বসে গেছে সাথে মুখে নতুন নতুন আলুর সৃষ্টি হয়েছে।

————-

টিভির সামনে বসে আছে রেয়ান্স তোড়া। তাদের দৃষ্টি টিভির দিকে এতক্ষণে হওয়া সমস্ত নিউজ দেখছিল তারা। তোড়া দেখছিল টিভিতে চলা নিউজ আর রেয়ান্স দেখছিল তোড়ার মুখের জ্বলে ওঠা রাগ এর ভাবটা। উমম তার বউ টা কে সব এক্সপ্রেশনে একদম মারাত্মক লাগে। নিউজ দেখার পর তোড়া রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় তার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। রেয়ান্স এই ঘোর লাগা দৃষ্টি দেখতেই তোড়ার রাগ আসতে আসতে ঠান্ডা হতে শুরু করে।

-“এই সব কিছুর পিছনে তুমি আছো তাই না। তোড়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” তোমার কি মনে হয়। রেয়ান্স তোড়ার কোমরে টেনে নিজের কোলে তুলে নিয়ে বলে ওঠে।

-“আমি জানি এটা তুমি করেছো। তোড়া কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

-“এতে তুমি কি রাগ করেছো যে তোমার কাজের মধ্যে আমি চলে এসেছি বলে। এটুকু তো আমার অধিকার আছে তাইনা তাই ভেবেই আমি করেছি। ইনফ্যাক্ট তোমার কি করে মনে হয় ওরা তোমার ক্ষতি করার পর ও আমি ওদের এমনি এমনি ছেড়ে দেবো আমি কোনো পদক্ষেপ নেবো না। রেয়ান্স বলে ওঠে।

তোড়া কোনো কথা না বলে রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে থাকে। রেয়ান্স তোড়ার তাকানো দেখে কিছুটা নিভে যায়।

-“আমার কি তোমার হাজবেন্ট হিসাবে এত টুকু ও অধিকার নেই? রেয়ান্স মন মরা হয়ে বলে ওঠে।

তোড়া রেয়ান্স এর কোনো কথার উত্তর না দিয়ে সামনের টেবিল থেকে নিজের ফোন তুলে নেয়। এদিকে রেয়ান্স শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে তোড়ার দিকে তার সত্যি খুব খারাপ লাগছে মন মরা হয়ে গেছে তোড়ার জন্য সে কি এত টুকু করতে পারে না তার তো অধিকার আছে এটা করার এগুলো ভেবে যাচ্ছে তোড়া নিজের ফোন টা নিয়ে রেয়ান্স সামনে ধরে। রেয়ান্স এতক্ষণ নিজের ভাবনার মধ্যে ডুবে থাকলে তোড়ার ফোন ধরতে চমকে তাকায়।

-“কি? রেয়ান্স প্রশ্ন করে।

তোড়া কোনো কথা না বলে ইশারায় ফোন টা দেখতে বলে। রেয়ান্স ফোন হাতে নিতেই তার চোখ জ্বলে ওঠে। ভিডিও। হ্যাঁ একটা ভিডিও ক্লিপ এটা সেই ভিডিও যেটাতে তানিয়ার আর তাথই এর বিল্ডিং থেকে পড়ে যাওয়ার সিন রেকর্ড আছে। এই ভিডিও টা দেখতে রেয়ান্স শক্ত করে তোড়া কে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। তানিয়ার তোড়া কে টেনে নিয়ে যাওয়া আর সাথে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলার সিন টা দেখতেই রেয়ান্স এর বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে মনে হচ্ছে যেনো কেউ তার হৃদপিন্ড টা টেনে ছিড়ে বের করে আনছে। মাথার রগ ফুটে উঠেছে। তোড়া রেয়ান্স এর অবস্থা বুঝতে পেরে আরো শক্ত করে রেয়ান্স কে জড়িয়ে ধরে থাকে।

-“আমার উপরে তোমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। তাই তুমি যায় কোরো না কেনো আমি রাগ করবো না। তোড়া রেয়ান্স এর বুকে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে ওঠে।

রেয়ান্স এখনও নিজের রাগ টা কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সে যতক্ষণ না এই রাগ টা কে বের করবে সে শান্ত হবে না। তোড়ার বিল্ডিং থেকে পড়ে যাওয়ার কথা শুনলে ও সে এই প্রথম ভিডিও টা দেখলো সে এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। তার মাথায় শুধু এখন এটা চলছে পড়ে যাওয়ার পর তোড়ার কি অবস্থা হয়েছিলো তার কতটা যন্ত্রণা হয়েছে। যদি তোড়ার ওই দিন কিছু হয়ে যেতো তাহলে তার কি হতো ওই অ্যাক্সিডেন্টে যদি তোড়া আর না ফিরত। না না সে আর ভাবতে পারছে না, সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় রেয়ান্স। তোড়া রেয়ান্স কে এমন ছটফট করতে দেখে নিজের কাছে অপরাধ বোধ হতে থাকে সে কেনো এই ভিডিও টা দেখাতে গেলো এটা দেখেই না রেয়ান্স এর যন্ত্রণা বেড়ে গেছে অস্থির হয়ে গেছে সে এটা নয় দেখালেই পারতো। ভেবেই সে রেয়ান্স কে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। রেয়ান্স এর মন ডাইভার্ট করতে সে রেয়ান্স এর মুখ নিচু করে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। রেয়ান্স তার ঠোঁটে তোড়ার ঠোঁটের অস্তিত্ব অনুভব করলে ও সাড়া দিতে পারে না। তার মাইন্ডে এখনও তোড়ার বিল্ডিং থেকে পড়ে যাওয়ার সিন টা ভেসে উঠছে। তোড়া রেয়ান্স এর কোনো রকম রেসপন্স না পেয়ে ঠোঁটে কামড় বসাতে থাকে সেই সাথে হাত দিয়ে খামচি দিতে থাকে অনবরত ।

রেয়ান্স এতক্ষণ ঘোরে থাকলে ও আকস্মিক কামড় আর খামচিতে ঘোর কেটে যায়। আসতে আসতে তার ফিল হতে থাকে তোড়ার ঠোঁটের স্পর্শ। তোড়ার এতক্ষণ এর কামড় এর কারণ বুঝতে পেরে সেও সাড়া দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর দুজন একে অপরের ঠোঁট ছেড়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে থাকে। তোড়া রেয়ান্স এর বুকে মুখ গুঁজে দেয়। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে কোনো কিছু না বলে নিজের ফোন তুলে নেয়। আবারও তার চোখের মুখের ভাব ভঙ্গি পাল্টে যেতে থাকে।

-“শাহীন তোমাকে একটা ভিডিও ক্লিপ সেন্ড করছি এটা যেনো আধা ঘন্টা সময়ে এর মধ্যে টেলিকাস্ট হয়ে যায় আর তার সাথে বাকি এভিডেন্স গুলো ও রিলিজ করে দেবে। মনে রেখো আধা ঘন্টা মানেই আধা ঘন্টা এর থেকেও যেনো এক সেকেন্ড দেরি না হয়। রেয়ান্স তীক্ষ্ণ মেজাজে বলে ওঠে।

-” ইয়েস স্যার। বলেই শাহীন ফোন কেটে দেয়।

তোড়া রেয়ান্স এর বুকের থেকে মুখ তুলে সব কথা শুনছিলো সাথে রেয়ান্স এর মুখের দিকে ও গভীর ভাবে দেখছিল। রেয়ান্স ফোন রেখে দেখে তোড়া তার দিকে তাকিয়ে আছে। রেয়ান্স তোড়া কে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে তার পর তীক্ষ্ণ আওয়াজে বলে ওঠে।

-“ওরা ভুল করেছে ভীষণ ভুল করেছে কার জিনিসে হাত দিয়েছে সেটা ওরা নিজেরাই জানে না এর শাস্তি পেতে হবে ওদের । আর এই শাস্তি যে ঠিক কতটা কঠিন আর বেদনাদায়ক হতে চলেছে সেটা ওরা কল্পনা ও করতে পারবে না। ওদের বেঁচে থেকে ও মরে যাওয়ার মত হাল হবে। কাউকে ছাড়বো না আমি কাউকে না। রেয়ান্স কখনো তার টার্গেট মিস করে না। আর রেয়ান্স এর দেয়া শাস্তি মানেই মৃত্যুর সমান।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন ।