#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-৯
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
রুপন্তী নিজেকে ফ্লোরে আবিষ্কার করল। পিঠের দিকটা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে।চোখ মুখ কুঁচকে শুয়ে থাকা অবস্থায়ই মুখের সামনে কেও ফোন ধরলো।দামি ফোনটার ঝকঝকে স্ক্রিনে একটা ছবি দেখা যাচ্ছে। ছবিটা মূলত একটা সেলফি যেটা সায়ন তুলেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে রূপন্তী সায়নের বুকে একদম চিপকে শুয়ে আছে।
অপরদিকে সায়ন এবার নিজেকে দেওয়া কথা রাখলো।চোখ খুলে রূপন্তীকে বুকের মধ্যে আবিষ্কার করতেই আগে একটা ছবি তুলেছে। এটা প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।এরপর রূপন্তীকে সুন্দর ভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
রূপন্তী ছবিটা দেখে একটু হকচকালো।নিজের দোষ কিভাবে ঢাকবে বুঝতে পারলো না।তাই কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,
– একটু নাহয় বুকে মুখ গুজেছিলাম।তাতে কি তোর বউ মরে যাবে?
সায়ন এবার নেমে দাঁড়ালো। বুকে হাত গুজে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
– লিসেন,এতদিন বিদেশে থাকা স্বত্তেও আমি ভার্জিন। কারন আমি আমার ভার্জিনিটি শুধুমাত্র আমার প্রকৃত ভালোবাসার মানুষটার মাঝে খোয়াবো। অন্য কেও আমাকে তার আগে ছুঁতে পারবে না।সেখান তুই আমার বুকে এক ভাগ নিয়ে গেছিস।
– মানি কী?
– মানে হলো আজ আমার ঘুম ভেঙেছে বুকে খামচি খেয়ে। চোখ খুলে দেখলাম তুই তোর জন্তুর মতো নখ নিয়ে আমার বুক খামছে ধরে রেখেছিস। টিশার্টের উপর দিয়েও আমার বুকে দাগ বসে গেছে।পরে আমার বউ দেখলে বলবে আমি আরো কার কার সাথে জানি শুয়ে এসেছি।
– ছি!কথার কি ছিরি!
তারপর আবার কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,
– তাই বলে এভাবে পাষাণের মতো আমাকে ছুড়ে মারবি?অনেক ব্যাথা পেয়েছি।
সায়ন বিরক্ত হয়ে বলল,
– ন্যাকামি করবি না একদম।তোকে সেটাতে মানায় না।অন্যান্য মেয়েদেরকে তাও কিউট লাগে। আর তুই মাঝে বালিশ দেস নি কেন?নাকি তুই আগে থেকেই জানতি বালিশ থাকলেও তুই কন্ট্রোল করতে পারবি না।
– চুপ থাক অসভ্য।
সায়ন হেলেদুলে বিছানায় গিয়ে শুলো আবার।মাঝে একটা বালিশ রাখলো। তারপর চোখ বন্ধ করে রূপন্তীর উদ্দ্যেশ্যে বলল,
– বেশি ব্যাথা হোক কিংবা কম ব্যাথা, উঠে এসে শুতে পারলে শো। নাহয় ফ্লোরেই ঘুমা।গুড নাইট!
রূপন্তী এই প্রথমবার সায়নের আচরণে রাগের বদলে কষ্ট পেলো।মানুষ এতটা নির্দয় কেমন করে হয়!এই যে বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পর রূপন্তীর মন অজান্তে হলেও এই সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিলো।চেয়েছিলো সায়নকে মেনে নিতে।তার জীবনে ভালোবাসার বড্ড অভাব। সায়নের পরিবারকে তার খুব ভালো লেগেছে। সেখানে সায়নকে মেনে নেওয়া তার জন্য খুব বেশি কঠিন হতো না।কিন্তু একটা সম্পর্ক আগাতে হলে দুইপক্ষকেই সমানতালে চেষ্টা করতে হয়।এই যে ছেলেটা ভার্জিনিটি,বউ নিয়ে এত কিছু বলে গেলো,তার মাথায় একবারও আসে নি যে ফ্লোরে পড়ে থাকা মেয়েটা তার বউ?!না আসেনি।এজন্যই এমন ব্যবহার করতে পেরেছে।
রূপন্তী খুব কষ্টে বিছানায় উঠে বসলো।আসলেই ঘাড়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছে। পাশে ড্রয়ার হাতিয়ে পেইন কিলার বের করে খেয়ে নিলো।তারপর চুপচাপ শুয়ে পরলো।মাঝে অনেক দূরত্ব।
রূপন্তী হুট করে খেয়াল করলো তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।সে নিজের জীবন নিয়ে হাপিয়ে উঠেছে।আর কত!
সেই পানিভর্তি চোখ ই সে বন্ধ করলো।তার মন তাকে বার বার জানিয়ে দিচ্ছে,
“YOU GUYS ARE NOT MADE FOR EACH OTHER! ”
.
পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে সায়ন রূপন্তীকে পাশে পেলো না।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আটটা বাজে।তাকে নয়টার সময় যেতে হবে। উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো।রূপন্তী ডাইনিং টেবিলে বসে কছু একটা লিখছে। সে ইতিমধ্যে রেডিও হয়ে গেছে। সায়ন আস্তেধীরে চেয়ার টেনে বসলো।একটা গ্লাস নিয়ে পানি ঢাললো।রূপন্তী তার দিকে তাকালোও না।তার পানি খাওয়ার মাঝেই উঠে কিচেনে চলে গেলো।এবং পাঁচ মিনিটের মাঝে এসে সায়নের সামনে একটা প্লেট রাখলো।প্লেটে তিনটা টোস্টেড ব্রেড আর ডিম পোচ। রূপন্তীর নিজের কাজ করতে করতে এই প্রথম একটা কথা বলল।একটা কেবিনেট ইশারা করে বলল,
– ওইখানে নিউটেলা আর জেলী রাখা আছে। যেটা ইচ্ছা নিতে পারো।
সায়ন সবেমাত্র পাউরুটিতে একটা কামড় দিয়েছে। সেটা মুখে নিয়ে বিষম খেলো।এই মেয়ে তাকে ‘তুমি’বলে কেন?কণ্ঠও অনেক গম্ভীর। সায়নের দিকে চোখ তুলে একবারও তাকায়নি।
সায়নের এমনেও রাতে কাহিনীর জন্য অল্প হলেও খারাপ লাগছিলো।সে আসলেই একটু বেশি বেশি করে ফেলেছে। আচ্ছা রূপন্তী রাগ করেছে?!
সে খাওয়া শেষ করার মাঝেই রূপন্তী এপ্রন গায়ে ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হলো।সায়নের সামনে একটা চাবি রেখে পানির বোতলে পানি ভরতে লাগলো।এত তাড়াতাড়ি রূপন্তীকে বের হতে দেখে সায়ন অবাক হলো।মাত্র সাড়ে আটটা বাজে।আর এই মেয়ে রোগী দেখা শুরু করে দশটা থেকে।হসপিটালও কাছে। এত তাড়াতাড়ি গিয়ে এই মেয়ে করবে কি?
কৌতুহল না চাপাতে পেরে সে প্রশ্ন করলো,
-এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছিস যে?তুই তো দশটা থেকে রোগী দেখিস।
রূপন্তী প্রথমে কিছু বলল না।খানিকবাদে গম্ভীর গলায় বলল,
– কিছু কাজ আছে। এজন্য আগে বের হচ্ছি।
– ও।
রূপন্তী সায়নের সামনে রাখা চাবিটা ইঙ্গিত করে বলল,
– দরজা ভালোমতো বন্ধ করে বের হইয়েন।
– আচ্ছা।
রূপন্তী চলে গেলো।সায়ন পানি খেতে গিয়ে কিছু একটা মনে পড়তেই বিষম খেলো।এই মেয়ের সকাল সকাল মাথা খারাপ হয়ে গেছে? একবার তুমি,আরেকবার আপনি,মানে কি!
তাহলে কি মেয়েটা সত্যিই ওর সাথে রাগ করেছে?
দোনা মোনা করতে করতে সে রেডি হলো।বের হয়ে দরজায় তালা মারার সময় ঠিক করলো রূপন্তীকে এসে একটা সরি বলে দেবে।
.
সায়নের হসপিটালটা পছন্দ হলো।কথা বার্তা শেষে ওর কেবিন দেখিয়ে দেওয়া হলো।আজকে রোগী নাই। থাকবে কেমনে সে তো নতুন!সারাদিন ফ্লোরের বাকি ডাক্তাররা এসে পরিচিত।এরমাঝে রীতিমতো এক মহিলা ডাক্তারের প্রেমে পড়ে গেলো। এত সুন্দর!সে প্রথম দেখায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলো।মহিলার নাম রিত্তিকা।খুবই সুন্দর করে কথা বলে।
কিন্তু রিত্তিকা ম্যারিড।তিন বছরের ফুটফুটে একটা ছেলে আছে।
সায়ন তখন নিজেই নিজেকে শাষালো।এক মুহুর্তের জন্য নিজের ব্যাক্তিত্বের কথা ভুলে গিয়েছিলো সে।আর যাই হোক ওয়ার্ক প্লেসে নিজেকে নিয়ে কোনো স্ক্যান্ডেল তৈরী করতে চায় না।
দুপুরের পর কিছু রোগী এলো।সায়নও শেষমেশ ব্যাস্ত হলো।
রাতে ফিরলো সাড়ে আটটার দিকে। রূপন্তী তখনো আসেনি।
সায়ন প্রথমেই রূপন্তীর বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে রইলো।তারপর হুট করে মনে পরলো তার আজ বিছানা কেনার কথা। এখন তো আর সময়ও নেই। নিজের মাথা চাপড়াতে ইচ্ছে করছে।আজও রূপন্তীর সাথে ঘুমাতে হবে?!
আর বসলো না।উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।গোসল করে বের হয়ে দেখলো মেঝেতে একটা নতুন ম্যাট্রেস, দুটো বালিশ আর একটা কম্ফোর্টার রাখ।বিছানায় রূপন্তীর ব্যাগ। তারমানে তারই কাজ এসব। সায়নের খারাপ লাগাটা আরো বেড়ে গেলো।রুম থেকে বের হয়ে দেখলো রূপন্তী কিচেনে।এগিয়ে কিছু বলবে তার আগেই রূপন্তী প্লেটে খাবার বেড়ে আনলো।সাথে বলল,
– আমি কালকে বাজার করবো।আজ বাহিরে থেকে খাবার নিয়ে এসেছি।তুই খাওয়া শুরু কর।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
সায়ন টেবিলে বসলো। রূপন্তী আসলে একসাথে খাবে তাই অপেক্ষা করার জন্য ফোন স্ক্রল করতে লাগলো।পনেরো মিনিটের মাঝে রূপন্তী চলে এলো।সায়নের মুখোমুখি চেয়ারটা টেনে বসলো।সায়ন আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই তার ফোনে একটা কল আসলো।ফোনটা ধরতে ওপাশ থেকে একটা গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠ শুনতে পাওয়া গেলো,
– সায়ন চৌধুরী বলছেন?
– জ্বী!
– আমি গুলশান থানার ওসি বলছি।
সায়ন ভ্রু কুঁচকালো। অতঃপর উত্তর দিলো,
– জ্বী বলুন!
– আপনার নামে নারী নির্যাতনের উপর একটা কেস আছে। আপনার বউ আজ সকালে করে গিয়েছে। তবে বলেছে আপনাকে যাতে আগামীকাল এরেস্ট করা হয়।আপনি চাইলে কোনো লয়ার এপয়েন্ট করতে পারেন।
সায়ন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।মাথা উঁচু করে তাকাতেই চক্ষুগোচর হলো সম্মুখে বসে থাকা নারীর ঠোঁটের বাঁকা হাসি।অতঃপর চোখে চোখ পড়তেই রূপন্তী ডান চোখ টিপ মারলো।
#চলবে।
#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-১০
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
চারিপাশ কেমন নিস্তব্ধ ঠেকলো।সায়ন কান থেকে ফোন নামিয়ে ফেলেছে। এখনো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রূপন্তীর। সে যেনো এখনো ঘোরে আছে। তাকে এখন জেলের ঘানি টানতে হবে?সবচেয়ে বড় কথা এটা কাল সকালের মাঝে তারিফ চৌধুরীর কানে চলে যাবে। সে কি উত্তর দিবে বাবাকে?!এটা বলবে যে তারই বউ তার বুকে মুখ গুজে ঘুমানোতে সে ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছে? এটা বললে তো তার বাবা নিজেই ওর নামে কেস করে দিবে। নাহ!নিজের ইজ্জত বাঁচাতে হলেও এই কেসের ব্যাপারটা খালাস করতে হবে।
রূপন্তী মিটিমিটি হাসছে আর খাচ্ছে। ওর শয়তানি হাসি দেখে সায়নের মন চাইলো ধরে একটা আছাড় মারতে।কিন্তু এটা করা মানে ডিরেক্ট ফাঁসিতে ঝুলে যাওয়া।
অতঃপর গলা ঝেড়ে ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
– প্রতিশোধ নিলি?
রূপন্তী হালকা হেসে উত্তর দিলো,
– তোর তাই মনে হলো?
– অন্য কিছু মনে হওয়ার তো কথা নয়।
– নাহ, ঠিকই ধরেছিস।
সায়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।রূপন্তীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেখে নিজেকে আর দমাতে পারলো না।ঠাস করে হাতের কাছে থাকা গ্লাস টা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।দাঁড়িয়ে ক্রোধান্বিত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো,
– তুই আমার উপর অন্যভাবেও প্রতিশোধ নিতে পারতি।দেশে এসে সবেমাত্র চাকরি শুরু করলাম।এর উপর আব্বু এমপি,এই ব্যাপার একবার জানাজানি হলে আমার জীবনে,আমার ক্যারিয়ারে কতটা ইফেক্ট পড়বে তুই বুঝিস?
রূপন্তী নির্বাক কণ্ঠে উত্তর দিলো,
– যা করবি তার ফল পাবি।
সায়ন এবার দ্বিগুণ রেগে বলল,
– শাট দ্যা ফা* আপ।যেখান তোকে বউ ই মানি না সেখান বউয়ের উপর নির্যাতনের কোনো প্রশ্নই আসে না।আমি কালকেই ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করবো।ফালতু কোথাকার!
কথা শেষ করে সে রূপন্তীর রুমে ঢুকলো।ম্যাট্রেস আর বাকি জিনিস নিয়ে আরেক রুমে নিয়ে রাখলো। নিজের ওয়ালেট থেকে হাজারের চারটা নোট এনে রূপন্তীর সামনে রাখলো।তারপর রুমে গিয়ে দরজাটা ধাম করে লাগিয়ে দিলো। রূপন্তী তখন ফোনে গেমস খেলছিলো।গেমস খেলা বাহানা মাত্র, আসলে তো চোখের পানি লুকানোর ছল সেটা। কোনো একটা কারনে সায়নের “তোকে বউ মানি না ” এবং ‘ডিভোর্স’ কথাটা তার বুকে এসে লাগলো।তার নামের শেষে তাহলে ডিভোর্সি তকমাটা লেগে যাবে। এ দেশের সমাজের চোখে তো এটা বিরাট অপরাধ। তার উপর সে এতিম।সবাই নিশ্চিত বলবে যে বাবা-মা’র শিক্ষা না পাওয়ার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সে জন্যই স্বামী ছেড়ে দিয়েছে। অথচ কেও জানতে আসবে না সমস্যাটা কোথায় ছিলো।
সে মনে হয় না আর দেশে থাকতে পারবে ডিভোর্সের পর।কারণ সে ঠিক পরিবেশটাই আর পাবে না।
ফোনটা রেখে থম মেরে বসে রইলো কিছুক্ষন। এরপর টাকাটা হাতে নিয়ে অগ্রসর হলো সায়নের রুমে। দরজা খুলে দেখলো সায়ন মেঝেতে বসে কপালে হাত ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
সে গিয়ে সামনে দাঁড়ালো তার।আশেপাশে তাকাতেই সায়নের ওয়ালেট নজরে আসলো।সায়ন ততক্ষনে চোখ খুলে তাকিয়েছে। রূপন্তী ওয়ালেটটা ওর সামনে রেখে চোখে চোখ রেখে গম্ভীর গলায় বলল,
– এসব আজাইরা দেমাগ আমাকে দেখাতে আসবি না।আমার রাগ সম্পর্কে ঠিকঠাক ধারণা কারো নেই।পরিস্থিত বুঝে নিজের দেমাগ দেখাবি। আমি গতকাল কষ্ট পেয়েছি বলেই এই কাজ করেছি।তুই আমাকে সকালে উঠে একটা সরিও বলিস নাই।যা করেছিস তার ফল পেয়েছিস।এখন তুই ফকিরের ছেলে নাকি এমপির ছেলে সেটা আমার ভাবার বিষয় না।
কথাগুলো বলে একদন্ডও আর দাঁড়ালো না।দরজা টেনে চলে গেলো।সায়নও সেদিকে পাত্তা দিলো না।তার মাথায় ঘুরছে এই ভেজাল থেকে কীভাবে বের হবে। কোনো লয়ার কেও সে চিনে না।বাড়িতে তো কোনোভাবে জানানো যাবে না।
এরমাঝেই ফোনে তারিফ সাহেবের কল এলো।সায়নের রীতিমতো হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা। কোনোমতে ফোনটা ধরে সালাম দিলো।তারিফ ওদের দুজনের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে রেখে দিলেন।সাথে জানালেন আগামীকাল তিনি এবং জয়া আসবেন, দুইদিন থেকে যাবেন।সায়ন সম্মতি জানিয়ে ফোন রাখলো।
বাবা তাহলে এখনো কিছু জানে না।কিন্তু কালকে তারা আসলে তো তাকে বাসায় পাবে না।থানায় পাবে।
মাথা নষ্ট হয়ে গেলো বেচারার।মাথাটা ফাটায় ফেলতে পারলে ভালো হতো।
.
পরেরদিন সায়নের ঘুম ভাঙলো ফোনের আওয়াজে। কল আসছে।প্রথমটা ধরতে পারলো না।দ্বিতীয়বারের মতো বাজতেই ফোনের স্ক্রিনে তাকালো।একটা নাম্বার। ভালো করে তাকাতেই মস্তিষ্ক জানান দিলো এটা গত রাতে কল দেওয়া ওসির নাম্বার।লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে।নিশ্চয়ই তাকে নিতে আসবে এখন।রিসিভ করে কানে ধরলো। সালাম দিতেই ওপাশ থেকে কেও বলে উঠলো,
– ছি ছি ছি!তুই আমার কণ্ঠ এখন চিনোস না সায়ন!
সায়ন বেকুব বনে গেলো।রাতের সেই ভারি কণ্ঠ, তবে আগের মতো গম্ভীর নয়।
– ওসি স্যার বলছেন?
– আর রাখ তোর বা** ওসি। আমি ফাহাদ।
সায়নের সামনে এবার সব পানির মতো সোজা হয়ে গেলো।রূপন্তী যে এত কঠিন মেয়েও না সেটাও তার আগে বোঝা উচিৎ ছিলো।এজন্যই কালকে দেমাগ দেখানো নিয়ে লেকচার দিয়ে গেলো। অবশ্য সে আসলেই কালকে বেশি করে ফেলেছে।কিন্তু তার মাথা ঠিক ছিলো না।এবার রাগ গিয়ে পড়লো ফাহাদের উপর।চিবাতে চিবাতে বলল,
– শালা হা*রা*ম*জা*দা,এই কুত্তার মতো কাহিনী কেন করলি?
ফাহাদ যেন গালি শুনে খুশিতে শেষ৷হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছে। কোনো মতে হাসি থামিয়ে উত্তর দিলো,
– আরাদ্ধার কাছ থেকে তোদের দুর্দশার কথা শুনলাম।ও যখন বলল তোর রূপন্তীর সাথে বিয়ে হয়েছে, আমি কিছুক্ষন হা হয়ে ছিলাম।মানে তুই আর রূপন্তী!হাউ?পরে গতকাল রূপন্তীর সাথে কথা হইলো।ও ই নক করলো। দেখা করে পরে তোর জন্য এই প্ল্যান করলাম।আমাকে রাতে আবার জানালো তোর রিয়েশনের কথা। এখন আমাকে বলেছে তোকে জানাতে যে তোদের সামনে আর যত মারামারি কাটাকাটি হবে,সব ঠোঁটের মাধ্যমে হবে, কোনো হাত পা থাকবে না তার মাঝে।
সায়ন আঁতকে উঠে বলল,
– মানে কি?এখন ওই অসভ্য মেয়ের সাথে ঝগড়া লাগলে চুমু খেতে খেতে ঝগড়া করতে হবে?
অপরপাশে ফাহাদ খ্যাক করে উঠলো,
– ওরে লুইচ্চার লুইচ্চা। চুমু খেতে বলেনি।সামনেবঝগড়াঝাটি, মারামারি যা করবি সব কথার মাধ্যমে বলবি,এটা করতে বলেছে।
– ওহ।
– শোন, আমরা সবাই হয়তবা সামনের সপ্তাহ একদিন আসবো আড্ডা দিতে।
– আচ্ছা।
– ঠিকাছে। রাখ তাহলে।
সায়নও বিদায় নিয়ে ফোন রেখে দিলো।উঠে আগে রুম থেকে বের হয়ে রূপন্তীর খোঁজ করলো।পেলো না।সাড়ে নয়টা বাজে। রূপন্তী তার মানে চলে গেছে। তাকে এখন নাকেমুখে রেডি হতে হবে।
পনেরো মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয় বের হলো সে।টেবিল থেকে পানি নিতেই চোখ পড়লো একটা কাগজে।সেখানে টানা টানা অক্ষরে লেখা,
“নাস্তা রান্নাঘরে ওভেনের ভেতর।”
রান্নাঘরে গিয়ে ওভেন খুলে দেখলো এক প্লেট খিচুড়ি।এখনো গরম। সে ঝটপট সেটা হাতে নিয়ে খেয়ে ফেললো।এবং ওভেনের উপর রাখা আরেকটা কাগজের দিকে নজর গেলো,
“ভালো হয়ে যা সায়ন, ভালো হতে টাকা লাগে না।”
সায়ন নিজেও জানে না কেনো, কিন্তু তার মুখে নিজের অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো।
.
পেশেন্ট দেখার মাঝে সায়নের কল পেয়ে রূপন্তী অবাক হলো।এই ছেলের কাছে তার নাম্বার আছে? আর কল ই বা কেনো দিচ্ছে। কিন্তু রোগী থাকায় ধরতে পারলো না।রোগী বের হওয়ার সে কল ব্যাক করলো।সায়ন ধরেই চেচিয়ে বলল,
– ব্রো, আব্বু আম্মু বাসার সামনে।আমি তো রুমে পাতা ম্যাট্রেস গুছিয়েও আসি নি।
#চলবে।