কে!! পর্ব-০৮

0
1997

#কে!!
#৮ম_পর্ব

এক মনোযোগে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকতে কিছু একটা চোখে পড়লো নীতির। অনেক খেয়াল করে দেখলে যা নজরে পড়লো তা হলো একটি ছোট কালো বক্সের মতো কিছু একটা ফুলদানিগুলোর মাঝে রয়েছে। সন্দেহ হতেই তাড়াতাড়ি বক্সটির কাছে যায় নীতি। ফুলদানিগুলো সরাতেই যা চোখে পড়লো তা হলো, সেটা একটা ক্যামেরা। অনেকটা ছোট, খেয়াল না করলে কেউ বুঝতেই পারবে না। নীতির সারা শরীর যেনো ঠান্ডা হতে লাগলো, কপালে ঘাম জমতে লাগলো। তার রুমে ক্যামেরা রাখলোটা কে। যদি একটি ক্যামেরা থাকে তবে কি আরো ক্যামেরা আছে। তবে কি কেউ তার প্রতিটা মূহুর্ত ফলো করছে? কেউ লি তাকে প্রতিটা মূহুর্তে দেখছে। ব্যাপারটা ভাবতেই মাথাটা একমূহুর্তের জন্য ঝিম ধরে গেলো। মাথা যেনো কাজ করতে চাইছে না। হাতটা কাঁপছে নীতির। এই ব্যপারটা কাউকে বলাটা খুব দরকার। কিন্তু কাকে বলবে! বাবা-মা তাদের সময় কোথায়? নির্ভীক? তার ও যে খুব সময় আছে সেটাও না৷ তাহলে? স্নিগ্ধ? মনটা নিমিষেই শান্ত হয়ে গেলো নীতির। সে কালকেই স্নিগ্ধ এর সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। কিন্তু তার আগে পুরো ঘরটা খুজা দরকার। আর কোথায় কোথায় ক্যামেরা লুকিয়ে আছে। অনেক খোজাখুজির মোট ৭টা ক্যামেরা বের করলো নীতি। তার রুমে কেউ এতোগুলো ক্যামেরা ফিট করবে অথচ ঘরের কেউ জানবে ও না!! তার বাবা মা কেউ ই বাসায় থাকেন না। যদি কেউ থাকে সে হলো শালুক। শালুক কি তবে অপরিচিত কাউকে বাসায় ঢুকতে দিয়েছিলো!! উফফফ, গা টা ছমছম করছে। কেউ তাকে প্রতিটা মূহুর্ত দেখছে ব্যাপারটা ভাবতেই ভয়গুলো যেনো গলার কাছে এসে পড়ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, মাথাটা হিম ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আর বুকের স্পন্দন যেনো কমে যাচ্ছে। এতোটা ভয় আগে কখনোই নীতি পায় নি। ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না নীতি। প্রতিটা ক্যামেরা বেশ ভালো করে সংরক্ষণ করলো সে। কাল সকালে বাসার সবাইকে জানাবে সে। এটা লুকানো মানে আরো বড় বিপদকে আহবান দেয়া, সে আর কোনো বিপদের মাঝে পড়তে চায় না____

সকাল ৮টা,
ডাইনিং টেবিলে আদনান সাহেব এবং ফারহানা বেগমের সাথে বসে রয়েছে নীতি। পিনপতন নীরবতা বিরাজমান। তাদের সামনে ক্যামেরা গুলো রাখা। নিজের মেয়ের রুমে এতোগুলো ক্যামেরা দেখে খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েন তারা। ফারহানা বেগম তো বেশ ভীত গলায় জিজ্ঞেস করেন,
– তুমি কাল রাতেই কেনো এই কথাটা বললে না? এটা তো সাংঘাতিক ব্যাপার। না জানি লোকটার উদ্দেশ্য কি?
– তোমরা ব্যাস্ত থাকো সারাদিন। তাই তোমাদের রাতে ডিস্টার্ব করি নি।

মলিন কন্ঠেই কথাগুলো বললো নীতি। আদনান সাহেবের বুঝতে বাকি রইলো না যে নীতি তাদের কেনো জানায় নি। মেয়েটার উপর দিয়ে এই একটা সপ্তাহ কম ঝামেলাতো যায় নি। দু দু বার খুনের জন্য জেলে ইন্টারোগেশনের জন্য যেতে হয়েছে। এখন আবার কেউ তাকে ক্যামেরার ঘটনা। না জানি মেয়েটার মনের অবস্থাটা কেমন থাকবে। শালুক বেশ ভয়ে শিটিয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বলেছে, ডিশের লোক এসেছিলো লাইন ঠিক করতে সে তাকেই ঢুকতে দিয়েছে। যেহেতু খুব পুরোনো লোক এ বাড়ির তাই কেউ তাকে সন্দেহ ই করে নি। আদনান সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
– নীতি, আমরা একটু ভ্যাকেশনে যাই। একটু রিল্যাক্স ও হয়ে যাবে তোমার। এসব নিয়ে বেশি চিন্তা করো না। দরকার হলে আমরা বাসা চেঞ্জ করে ফেলবো। নো টেনশন

বাবার কথায় নীতির টেনশন একটু হলেও কমে। আসলেই একটা ব্রেকের খুব বেশি প্রয়োজন। এখন ব্রেকটা না পেলে হয়তো মাথাটা সত্যি নষ্ট হয়ে যাবে। আর টেনশন নেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই তার। এই প্রথম তার বাবা-মা উভয়ই নিজেদের বাদ দিয়ে তার ব্যাপারে চিন্তা করছে। ভালো লাগছে ব্যাপারটা। মুখে প্রশান্তির হাসি একে নীতি বলে,
– ওকে তবে সেন্ট মার্টিন যাবো। আমার এখন সাগরের কাছে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
– যেটা তুমি ঠিক করবে তাই হবে।

আদনান সাহেব বেশ আনন্দিত স্বরে বললেন। মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসেন তিনি। কিন্তু টাকা কামাবার নেশায় পরিবারের থেকে বেশ আলাদা হয়ে গেছেন তিনি। ফারহানা বেগম ও সম্মতি জানালেন। কেননা এই ঝামেলা থেকে একটা ব্রেক নিলে মন্দ নয়। মেয়েটা ও একটু ভুলে থাকতে পারবে এই ঝামেলাগুলো। তারা কাল ই রওনা দিবে। অবশেষে অনেকদিন পর হলেও পরিবারের মতো ঘুরা হবে তাদের। নীতির বেশ আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে ঝামেলা জন্য হলেও অবশেষে তার পরিবার তার সাথে আছে। আর কি চাই!!

সকাল ১১টা,
ক্যান্টিনে বন্ধুদের সাথে বসে আছে নির্ভীক। চোখ শুধু নীতিকে খুজছে। আফরা ক্যান্টিনে আসতেই তাকে জিজ্ঞেস করে উঠে,
– ওই নীতিকে দেখছিস?
– তুই তোর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে যাস নি?

আফরার খোচা খাওয়া কথায় বেশ চটে যায় নির্ভীক। বেশ খাকাড়ি গলায় বলে,
– কি শুরু করেছিস তোরা? আমি কি শুধু গার্লফ্রেন্ডের লগেই থাকি? আমার খেয়ে কি কাজের অভাব নাকি?
– নাহ এবারের টার সাথে বেশ ঢলাঢলি কি না তোর!
– আমার ব্রেকাপ হয়ে গেছে। এবার বলবি নীতি কোথায়?
– কেনো হুট করে ব্রেকাপ?
– আমার ইচ্ছে, ঝগড়া হয়েছে তাই আমিও ব্রেকাপ করে ফেলেছি। এতো সময় আমার নেই যে সারাদিন তাকে দিবো। তুই কি আদৌ নীতির খবর জানিস?
– ও আসে নি। সামনে এক সপ্তাহ ওকে খুজে পাবি না। ও যাচ্ছে সেন্ট মার্টিন।
– কেনো? হুট করে এই ডিসিশন?
– কেনো আবার? ওর ইচ্ছে। ওর খুব স্ট্রেসের মাঝে আছে। তাই স্ট্রেস রিলিজ করতে যাচ্ছে।
– আমাকে তো একবার বললো ও না
– বলে কি হবে? তুই কি ওকে সময় দিবি?
– কেনো দিবো না অবশ্যই দিবো। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

নির্ভীকের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফরা। শান্ত গলায় বলে,
– ও তোর শুধু ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে চায় না, তুই যদি একটু বুঝতি। যাক গে। ব্যাপার না। থাক তুই আমি বাড়ি যাবো। আজ তো ক্লাস নেই। টাটা

আফরার কথাটা যেন কানে বাজছে নির্ভীকের। তবে কি আসলেই নীতি তাকে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু ভাবে। কিন্তু সে তো স্নিগ্ধএর সাথে টাইম স্পেন্ড করে। নির্ভীককে যেনো ভুলেই গেছে সে। উফফ অনুভূতির এই জাল যেনো আরো বেশি গাঢ় হচ্ছে। ধুর!! ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে পড়লো নির্ভীক। এখন উদ্দেশ্য একটাই সেন্ট মার্টিন। নীতিকে সামনাসামনি জিজ্ঞেস করতে হবে।

দু দিন পর,
সাগরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীতি। নীতির মনটা আজ অনেকটাই ফুরফুরে। নীতি যখন সাগরের উত্তাল দেখতে ব্যাস্ত তখন…….

চলবে