#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩১
________________
হা হয়ে তাকিয়ে আছে অভ্র আদ্রিজার মুখের দিকে। লাল টুকটুকে শাড়ি, বাহারি লাল রঙা হাতে চুড়ি, মুখে হাল্কা মেকাপ, চোখে কাজল, ভেজালো চুলে অপূর্ব সুন্দর লাগছে যেন আদ্রিজাকে এছাড়াও কেমন যেন বউ বউ লাগছে আদ্রিজাকে। পুরো হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্র আদ্রিজার দিকে এই প্রথম লাল টুকটুকে শাড়িতে দেখছে আদ্রিজা। অভ্র মাঝে মাঝে বুঝে না এইরকম সুন্দর চাকচিক্য কালারের ড্রেস রেখে আদ্রিজা বার বার ব্ল্যাকই কেন পড়ে?’ সত্যি অদ্ভুত মেয়ে একটা।’
অন্যদিকে,
অভ্রকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাল্কা ঘাবড়ানো ফেস নিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে বলে উঠল আদ্রিজা,
‘ আপনায় বিরক্ত করেছিলাম বুঝি আসলে শাড়িটা পড়ে নিচে যেতে চেয়েছিলাম আর কি।’
উওরে খানিকটা ধ্যান হওয়া কন্ঠে বললো অভ্র,
‘ তোমায় খুব সুন্দর লাগছে ব্ল্যাকবেরি।’
অভ্রের অস্পষ্টনীয় কিছু কথা শুনে আদ্রিজা বিস্মিত হয়ে বললো,
‘ কি?’
সঙ্গে সঙ্গে হুস আসলো অভ্রের এই মাত্র কি বললো সেটা ভেবেই আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা গলায় বললো সে,
‘ হুম হ্যাঁ কি, কি কি করছো তুমি দেখছো না আমি ঘুমাচ্ছি তাহলে এত শব্দ করছো কেন?’
বিস্মিত হলো আদ্রিজা অভ্রের কথা শুনে। খানিকটা অপরাধী গলায় বললো সে,
‘ না মানে,
‘ একদম না মানে মানে করবে না আমি রুমে থাকলে কোনো শব্দ করবে না ঠিক আছে।’
উওরে আদ্রিজাও মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘ ঠিক আছে।’
‘ হুম তা এত সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো?’
‘ নিচে,
‘ কি সামান্য নিচে যাওয়ার জন্য এত সাজা লাগে। বেশি সাজার দরকার নেই মাথায় কাপড় দিয়ে চুপচাপ চলে যাও,
অভ্রের কথায় আদ্রিজা যেন আরো বিস্মিত হলো। সে নাকি সেজেছে? কই সাজলো সামান্য শাড়ি আর মুখে একটু ফেসপাউডার দিলেই সাজা হয়ে যায় নাকি। সেজেছিল তো কাল আজ সাজলো কোথায়?’আদ্রিজার ভাবনার মাঝেই আবারো বলে অভ্র,
‘ এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও নিচে যাও আর শোনো আমার জন্য বেশি লিকার দিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে এসো। আচমকা ঘুমটা ভাঙায় মাথাটা ধরেছে আবার।’
অভ্রের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো আদ্রিজা,
‘ আমি চা বানিয়ে আনবো?’
উওরে চোখ গরম করে তাকালো অভ্র আদ্রিজার দিকে সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিজা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
‘ হুম না মানে আমি তো চা বানিয়ে আনবো, আনছি আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।
বলেই নিচ থেকে চিরুনিটা কোনেমতে উঠিয়ে শাড়ির কুঁচিটা ধরে দৌড়ে বের হলো আদ্রিজা। সকাল সকাল অভ্রের এমন রূপ দেখে পুরোই শকট সে।’
এদিকে অভ্র মাত্র কি করলো সেটা ভেবে সে নিজেও অবাক আদ্রিজাকে চা বানাতে বললো লাইক সিরিয়াসলি। সকাল সকাল মাথাটা বোধহয় পুরোই গেছে। ভেবেই মাথাটা একবার ঝাকিয়ে বিছানা ছেড়ে নামলো অভ্র, ফ্রেশ হতে হবে তাঁকে সাথে লম্বা একটা সাওয়ারও নিতে হবে। বিয়ে করে মাথাটা যেন পুরোই শেষ তাঁর।’
___
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ছিল অভ্রের মা। সবার জন্য ব্রেকফাস্ট প্লাস অভ্রের জন্য ব্ল্যাক কফি বানাতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো আদ্রিজা। মাথায় ঘোমটা দিয়ে পুরো বউ বউ ভাব নিয়ে বললো সে,
‘ আমি কি আসবো আন্টি?’
মাত্রই চুলায় গরম পানি চাপিয়ে ছিলেন অভ্রের মা রুটি বানানোর জন্য। এরই মাঝে আদ্রিজার ভয়েসটা কানে আসতেই পিছন ঘুরে তাকালেন তিনি। সকাল সকাল আদ্রিজাকে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে বউরূপে দেখে মিষ্টি হাসলেন তিনি। বললেন,
‘ হুম আয় এইভাবে পারমিশন নেওয়ার কি আছে?’
উওরে আদ্রিজা কি বলবে বুঝতে পারছে না। কেমন যেন লাগছে তাঁর এতদিন এই আরুর মাকে অন্যভাবে দেখে এসেছে সে আর আজ সেই মানুষটিকে শাশুড়ী রূপে দেখে কেমন একটু লাগছে আদ্রিজার। আদ্রিজা স্বপ্নেও ওনাকে শাশুড়ী রূপে পাবে এটা ভাবে নি। আদ্রিজার ভাবনার মাঝেই আবারো বলে উঠল অভ্রের মা,
‘ তা এত সকালেই উঠে পড়লি যে, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আছে বুঝি।’
উওরে আদ্রিজা খানিকটা হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললো,
‘ হুম। আমি র্সকালে তাড়াতাড়িই উঠি। মাও উঠতো কি না তারপর হাতে হাতে ব্রেকফাস্ট তৈরি করে সেটা খেয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে আসতাম আর কি।’
‘ ওহ,
‘ হুম। আমি কি কোনো কাজে হেল্প করবো আন্টি?’
‘ হেল্প তো চাইলে করতে পারিস কিন্তু তাঁর আগে এই আন্টি বলা বাদ দে আজ থেকে তুইও আমায় আরুর আর অভ্রের মতো মা বলে ডাকবি বুঝেছিস।’
উওরে আদ্রিজাও মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘ ঠিক আছে মা।’
আদ্রিজার কথা শুনে খুশি হলো অভ্রের মা। বললো,
‘ এই তো আমার মিষ্টি মেয়ে।’
মুচকি হাসলো আদ্রিজা। তারপর বললো,
‘ এখন বলুন মা আমি কি করবো?’
‘ আমি আটা মাখছি তুই না হয় বেলে দিস।’
‘ ঠিক আছে।’
হঠাৎই আদ্রিজা বলে উঠল,
‘ আমি কি চা বানাবো মা আসলে আপনার ছেলে লিকার দিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে যেতে বলেছিল।’
আদ্রিজা কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো অভ্রের মা,
‘ অভ্র চা খাবে বলেছে?’
‘ হুম।’
এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো আরু। বললো,
‘ কিন্তু ভাবি অভ্র ভাই তো চা খায় না।’
আরুর মুখে ‘ভাবি’ ডাকটা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় আদ্রিজার। সাথে আরুর কথা শুনে বললো সে,
‘ কিন্তু উনি যে আমায় চা বানিয়ে নিয়ে যেতে বললো তাও বেশি লিকার দিয়ে।’
আদ্রিজার কথা শুনে বেশ অবাক আরু আর আরুর মা। কারন অভ্র ব্ল্যাক কফি ছাড়া অন্য কিছু তেমন একটা পছন্দ করে না তাহলে হুট করে চা খেতে চাইলো কেন। আদ্রিজা আরুর আর শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তাহলে কি আমি চা বানাবো না?’
উওরে আরুর আদ্রিজার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ কেন বানাবে না ভাবি যতই হোক তোমার উনি চা বানাতে বলেছে চা তো বানাতে হবেই অবশ্যই বানাবে।’
আরুর কথায় আরু চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো আরুর দিকে। বললো,
‘ তোর ঠাট্টা বাদ দিবি।’
‘ যাহ বাবা ঠাট্টা করলাম কোথায়? যাহ সত্যি তাই তো বললাম।’
আরুর আর আদ্রিজার কান্ড দেখে মুচকি হেঁসে রান্নাঘর থেকে বের হলো আরুর মা। মা বের হতেই আরু পুনরায় বলে উঠল,
‘ তবে যাই বল তোকে কিন্তু এই লাল টুকটুকে শাড়িতে একদম বউ বউ লাগছে রে ভাবি।’
আরুর কথায় হাল্কা লজ্জা পায় আদ্রিজা তবে কিছু বলে না। আদ্রিজাকে লজ্জা পেতে দেখে আবারও বলে উঠল আরু,
‘ আমার মনে হয় ভাইয়া তোর এই বউ বউ লুকিং দেখে পাগল হয়ে কফির বদলে চা খাওয়ার কথা বলছে।’
সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিজার মুখটা কালো হয়ে গেল। শুঁকনো হেঁসে বললো সে,
‘ তোর মনে হয় না এই জিনিসটা বেশি হয়ে গেল আর কেউ জানুক বা না জানুক তুই তো জানিস অভ্র লাবন্য আপুকে কতটা ভালোবাসে।’
আদ্রিজার কথায় হাসি মাখা মুখটা নিমিষেই গায়েব হয়ে গেল আরুর। হয়তো সত্যি একটু বেশি বেশি ভেবে ফেলেছে সে। আরুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে জিনিসটা দেখে বললো আদ্রিজা,
‘ তবে যাই বলিস আজ কিন্তু সত্যি আমায় বউ বউ লাগছে।’
আদ্রিজার কথা শুনে হেঁসে দিল আরু। বললো,
‘ সত্যি তাই।’
অতঃপর দুই বান্ধবী মিলে এটা ওটা নিয়ে গল্প করতে শুরু করে দিল। আদ্রিজাও অভ্রের জন্য চা বানাতে বানাতে মগ্ন হলো আরুর সাথে কথোপকথনে।’
___
সাদা টাওয়াল পড়ে ভেজালো চুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভ্র। এখন বেশ ফ্রেশ লাগছে নিজেকে। এমন সময় রুমের দরজা খুলে চা সমেত কাঁপ হাতে ভিতরে ঢুকলো আদ্রিজা। সাথে সাথে অভ্রের অবস্থা দেখে বিষম খেল সে। উল্টোদিক ঘুরে আমতা আমতা করে বললো সে,
‘ আ…পনার চা?’
উওরে অভ্র তেমন কোনো রিয়েকশন না দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই বিছানার পাশে থাকা টেবিলটা দেখিয়ে বললো,
‘ রাখো ওখানে।’
আদ্রিজা শুনলো অভ্রের কথা কোনোমতে কাঁপটা টেবিলের ওপর রেখে চলে যেতে নিলো সে। এরই মাঝে আবারও বলে উঠল অভ্র,
‘ বিছানার উপর আমার টিশার্টটা দেও তো ব্ল্যাকবেরি।’
আদ্রিজা দাঁড়িয়ে পড়লো। এখন টিশার্টও দিতে হবে তাঁকে। আদ্রিজার ভাবনার মাঝে আবারও বলে উঠল অভ্র,
‘ কি হলো টিশার্টটা নিয়ে আসো তাড়াতাড়ি।’
অভ্রের কথায় হাল্কা কেঁপে উঠলো আদ্রিজা। বললো,
‘ হুম যাই।’
বলেই বিছানার উপর থেকে টিশার্টটা নিয়ে উল্টোদিক ঘুরেই এগিয়ে যেতে লাগলো সে অভ্রের দিকে। আচমকাই উল্টোদিক ঘুরে হাঁটতে গিয়ে শাড়ি পেঁচিয়ে পড়ে যেতে নিলো আদ্রিজা। সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিজাকে গিয়ে ধরলো অভ্র। আদ্রিজা তো ভয়ে ওখানেই চোখ বন্ধ করে নিলো। এরই মাঝে অভ্র আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ তুমি কি একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারো না ব্ল্যাকবেরি।’
সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে তাকালো আদ্রিজা। কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। তারপর গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে অন্যদিক ঘুরে বললো,
‘ আমার কি দোষ? আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলেই না আ,, আমি উল্টোদিক ঘুরে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলাম। এই ধরুন আপনার টিশার্ট আমি গেলাম।’
বলেই অভ্রের টিশার্টটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আদ্রিজা। আর অভ্র আদ্রিজার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো,
‘ আশ্চর্য! কিভাবে দাঁড়িয়ে আছি আমি যে উল্টোদিক ঘুরে আসতে গিয়ে পড়ে গেল ও। অদ্ভুত মেয়ে তো একটা।’
____
আজ অভ্র আর আদ্রিজার বৌভাতের অনুষ্ঠান। বৌভাত উপলক্ষে পুরো বাড়িটাকে সাজানো হয়েছে ঝাঁক ঝমক আর পরিপাটিভাবে। অভ্রের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন সবাই এসেছে এই বৌভাতে। শুধু লাবণ্য আসে নি কারন লাবণ্য এখনো আমেরিকায়। চারপাশে মানুষের হুল্লোড়ের পঞ্চমুখ সব। আর এই হুল্লোড়ের মাঝেই গায়ে ব্ল্যাক লেহেঙ্গা জড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল আরু। হাতে ছিল তাঁর মিষ্টির প্যাকেট। এমন সময় সদর দরজা দিয়ে ফুল হাতে ভিতরে ঢুকলো রিয়ান। আরু রিয়ানকে দেখেই বিষম খেল। সাথে ভয়ার্ত গলায় বললো,
‘ হায় রে!’ এ এখানে কি করছে? এখন যদি এ এখানে আশিককে দেখে নেয় তাহলে কি হবে?’
#চলবে….
#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩২
________________
ভয়ে কাচুমাচু হয়ে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আরু। কি করবে না করবে এটাই যেন বুঝচ্ছে না সে। আরু বুঝচ্ছে না অভ্র ভাইয়ার এই বউভাতের অনুষ্ঠানে রিয়ানকে কেন ডাকলো তাঁর বাবা। এখন যদি রিয়ান আশিকের বিষয়ে সব বলে দেয় তাহলে কি হবে আর আশিককে যদি রিয়ান দেখে ফেলে তখন? ওহ নো।’
ভেবেই রুম থেকে বের হতে নিলো আরু। এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো রিয়ান। আরুকে দেখেই বললো সে,
‘ হেই আরু কেমন আছো তুমি?’
দাঁড়িয়ে পড়লো আরু। খানিকটা উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আরে আপনি। জ্বী ভালো আপনি কেমন আছেন?’
‘ তুমিই আমায় দেখেই তখন সিঁড়ি ওপর দিয়ে দৌড়ে আসলে তাই না।’
‘ এমা না না তা হবে কেন আমি তো আমার ফোনটা নিতে এসেছিলাম, আপনায় তো মাত্রই দেখলাম।’
‘ সত্যি বলছো?’
‘ হুম মিথ্যে বলবো কেন। তা আপনি একাই এসেছেন নাকি আঙ্কেল আন্টিও এসেছে।’
‘ না আমি একাই এসেছি।’
‘ ওহ,
এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো আরুর বন্ধুমহলের সবাই। আরুর তো তাদের দেখেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আশিক ছিল সবার পিছনে, আশিক জোরে চেঁচিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে তাঁর কবিতা বলতে যাবে এরই মাঝে আরু দৌড়ে গিয়ে মুখ চেপে ধরে নিয়ে গেল অন্যরুমে। আরুর আকস্মিক এমন কান্ডে আরুর বন্ধুমহলের সবার চোখ চড়ুই গাছ। রিয়ান পিছন ফিরে থাকায় জিনিসটা ঠিক খেয়াল করি নি। তুলি তো চোখ বড় বড় করে বলে উঠল,
‘ কি হলো ব্যাপারটা আরু ওকে এইভাবে নিয়ে গেল কেন?’
উওরে শরীফ বললো,
‘ কি জানি।’
এরই মাঝে সবার চোখ গেল রিয়ানের দিকে। রিয়ানও ততক্ষণে পিছন ফিরে আরুর বন্ধুদের দেখে হাল্কা হেঁসে বললো,
‘ তোমরাও চলে এসেছো?’
উওরে বুশরা বললো,
‘ জ্বী ভাইয়া তা আপনিও, কেমন আছেন ভাইয়া?’
‘ জ্বী ভালো তোমরা?’
‘ হুম আমরাও ভালো।’
‘ গুড তোমরা থাকো আমি একটু আসছি,
এই বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিয়ান। আর বাকি সবাই তাকিয়ে রইলো রিয়ানের যাওয়ার পানে।’
”
ফাঁকা একটা রুমে আশিকের মুখ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরু। আর আরুর এমন কান্ডে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আশিক আরুর মুখের দিকে। সে বুঝলো না হুট করে আরু তাঁর মুখ চেপে ধরে এখানে নিয়ে আসলো কেন? আরু এদিক সেদিক তাকিয়ে হঠাৎই সামনে রিয়ানকে আসতে সঙ্গে সঙ্গে আশিকের সাথে আর একটু কাছাকাছি হয়ে আড়ালে দাঁড়ালো দুজন। আর আশিক প্রায় স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো আরুর দিকে। এই প্রথম সে আর আরু এতটা কাছাকাছি চলে এসেছে। কেমন যেন অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে আশিকের। এদিকে, আরু রিয়ান চলে গেছে বিষয়টা বুঝতে পেরেই আশিকের থেকে সরে আসলো। তারপর বললো,
‘ আজ তুই এই রুম থেকে একদমই বের হবি না আশিক। বের হলেই কেস খাবো।’
আরুর কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো আশিক,
‘ কেস খাবো মানে কি করেছি আমি? আর তুই হুট করে এইভাবে আমায় এই রুমে নিয়ে আসলি কেন?’
‘ এনেছি কি সাধে! জানিস রুমের ভিতর কে ছিল?’
‘ কে ছিল?’
‘ রিয়ান।’
সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় করে বললো আশিক,
‘ কি?’
‘ তাহলে বলছি কি।’
‘ কিন্তু রিয়ান এখানে কি করছে?’
‘ সেটা তো আমিও জানি না। তুই প্লিজ শোন রিয়ান যতক্ষণে না যাচ্ছে ততক্ষণে তুই রুম থেকে বের হবি না।’
‘ ক্যা আমি কেন বের হমু না?’
‘ আরে গাধা রিয়ান যদি তোকে এখানে দেখে ফেলে তাহলে তো বুঝে যাবে আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড না শুধুই বন্ধু।’
‘ তো বুঝলে বুঝবে,
‘ বুঝলে বুঝবে মানে,
‘ মানে এটাই ও যদি বুঝে যায় তাহলে তোর ভেঙে যাওয়া বিয়ে আবার জোড়া লেগে যাবে আর আমি তো এটাই চাই।’
‘ কি?’
হাসলো আশিক। তারপর আরুর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আজকে তো তোকে পুরোই কালো পরীর মতো লাগছে আরু ছুনা।’
বলেই আশেপাশে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আশিক। আর আরুর জাস্ট হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো আশিকের যাওয়ার পানে যেন আশিক কি বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল।’
____
পার্লারের দু’জন মেয়ের সামনে বসে আছে আদ্রিজা। পাক্কা দু’ঘন্টা বসে তাঁকে সাজাচ্ছে পার্লারের মেয়েরা কি যে এত সাজাচ্ছে এটাই যেন বুঝচ্ছে না আদ্রিজা। বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সে। বিয়ের দিনও মনে হয় এত সাজে নি সে যতটা না আজ তাঁকে সাজাচ্ছে। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো আদ্রিজার মা মাত্রই এসেছেন তাঁরা। দরজার সামনে দাঁড়িয়েই বলে উঠল আদ্রিজা মা,
‘ আদ্রিজা,
সঙ্গে সঙ্গে পিছন ঘুরে তাকালো আদ্রিজা। সামনে তাঁর মাকে দেখে এগিয়ে যেতে নিয়েও থেমে গেল সে। আদ্রিজার কাজে খানিকটা কষ্ট পেল আদ্রিজার মা এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘ আমার উপর এখনো রাগ করে আছিস আদ্রিজা?’
উওরে আদ্রিজা কিছু বলে না।’
”
সিঁড়ির পাশে নিজের বন্ধুদের সাথে গোল্ডেন কালার সেরোয়ানি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। বেশ খানিকটা বিরক্তিতা ফিল হচ্ছে তাঁর মাঝে। তুষারও দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে। অভ্রের অবস্থাটা খানিকটা ফিল করতে পারছে সে। অভ্রের বন্ধু মহলে তুষার ব্যতীত আর কেউই লাবণ্যের ব্যাপরে কিছু জানে না। তাই তো তাঁরা বেশ ফুঁড়তিতেই আছে বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষে। তবে তারা ভাবে নি এইভাবে হুট করেই বিয়েটা হয়ে যাবে অভ্রের তাও আবার আরুর বেস্টফ্রেন্ড আদ্রিজার সাথে। অভ্র চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় তাঁর এক বন্ধ বলে উঠল,
‘ ওই তো আদ্রিজা ভাবি চলে এসেছে।’
সঙ্গে সঙ্গে অভ্রসহ তাকালো সবাই। সাদা রঙের ভাড়ি লেহেঙ্গা শাড়ি পড়েছে আদ্রিজা। চুলগুলো খোলা, হাতে আর গলায় সাদা রঙের ভাড়ি চুড়ি ভাড়ি জুয়েলারি পড়ানো হয়েছে তাঁকে। মুখে ভাড়ি মেকাপে পুরোই গর্জিয়াস আর অন্যরকম লাগছে আদ্রিজাকে। আজও চোখে চশমা পড়ে নি আদ্রিজা লেন্স লাগিয়েছে। যার কারনে আরো বেশি মায়াবিনী লাগছে আদ্রিজার চোখ দুটোকে। অভ্র চোখ সরিয়ে নিলো চটজলদি। ইদানীং তাঁর যেন কি হয়েছে আদ্রিজাকে দেখলেই চোখ আঁটকে যায় তাঁর। জিনিসটা বিরক্তকর না হলেও খানিকটা অসস্তিকর লাগে অভ্রের কাছে।’
অতঃপর জমজমাট পরিবেশ সাথে ভরপুর খাওয়া দাওয়া নিয়ে কাটলো আদ্রিজা অভ্রের বউভাতের অনুষ্ঠান। এই পুরোটা সময়ে এই ভাড়ি সাজ,ভাড়ি লেহেঙ্গা, হাই হিল বহুত বিপাকে ফেলেছে আদ্রিজাকে। যদিও কাউকে বুঝতে দেয় নি সেটা।’
”
বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রিয়ানকে বিদায় জানাচ্ছে আরুর বাবা। রিয়ানের বাবা মাকেও আসতে বলেছিল আরুর বাবা কিন্তু খানিকটা অসুবিধার কারনে আসতে পারে নি তাঁরা তবে রিয়ান এসেছে এতে আরুর বাবা ভীষণ খুশি হয়েছে। হঠাৎই রিয়ান বলে উঠল,
‘ আজ তবে আসি আঙ্কেল ভালো থাকবেন?’
‘ ঠিক আছে বাবা আর হ্যাঁ তোমার বাবা মাকে নিয়ে সময় পেলে এসো একদিন।’
‘ ঠিক আছে আঙ্কেল।’
বলেই বিদায় জানিয়ে চলে গেল রিয়ান।’
অন্যদিকে,,
আরুদের বাড়ির সামনে ফুল বাগানের মাঝে পাশাপাশি লুকিয়ে ছিল আরু আর আশিক। আজ এরা বউভাত খেল নাকি লুকোচুরি খেল্লো এটাই যেন বুঝলো না তাঁরা। শুধু মাত্র এই ধরা খাওয়ার ভয়ে অনুষ্ঠানের পুরোটা সময়ই এখানে সেখানে লুকিয়ে ছিল আরু আর আশিক। হঠাৎই আশিক বলে উঠল,
‘ শালার গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডের নাটকের গুষ্টি কিলাই, মুরগীর রানডাও ঠিক মতো খাইতে পারলাম না। যা আর জীবনে কোনোদিন ভালোবাসার মিথ্যা নাটক করমু না। মানুষ খালি খালি কয় ভালোবাসা বড্ড কষ্ট দেয় আজ বুঝলাম ভালোবাসা ঠিক মতো মুরগীর রানডাও খাইতে দেয় না।’
আশিকের কথা শুনে আরু বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ তোর তো খালি খাই খাই। তবে ভাবিস না রিয়ান গেলেই তুই আমি একসাথে মুরগীর রান চিবামু নে যা।’
আরুর কথা শুনে আশিক চেঁচিয়ে বললো,
‘ সত্যি,,
এমন সময় সেখানে এগিয়ে আসলো রিয়ান। আরু আর আশিককে একসাথে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,
‘ তোমরা দুজন এখানে?’
সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো আরু রিয়ানের দিকে। যেটার ভয় পেয়েছিল তাঁরা অবশেষে তাই হলো। রিয়ান তাদের দেখেই ফেললো।’
____
রাত_৮ঃ০০টার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। আয়নার সামনে ভাড়ি লেহেঙ্গার সাজে বসে আছে আদ্রিজা। মাথার কিলিপ খুলতে খুলতেই তাঁর প্রাণ যায় যায় অবস্থা খোলা চুলেও যে এত এত কিলিপ মেরেছে পার্লারের আপুরা এটা বুঝতেই পারে নি আদ্রিজা। হাতের চুড়িগুলো খুলে ফেলেছে আদ্রিজা এখন শুধু গলার আর মাথার কিলিপগুলো খোলা বাকি। তাহলেই যেন শান্তি তাঁর।
এমন সময় দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো অভ্র। আচমকা এমনটা হওয়াতে খানিকটা ঘাবড়ে যায় আদ্রিজা। আদ্রিজাকে ঘাবড়ে যেতে দেখে বলে উঠল অভ্র,
‘ কুল ডাউন ব্ল্যাকবেরি এটা আমি?’
আদ্রিজা ধমকালেও সামলে নিলো নিজেকে। আর অভ্র টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
‘ তোমার যে এই হুটহাট ঘাবড়ানো ভাব কিসের আমি যেন সেটাই বুঝি না।’
উওরে আদ্রিজা কিছু বলার আগেই চলে যায় অভ্র। এতে খানিকটা হতাশও হয় আদ্রিজা কারন সে নিজেও জানে না অভ্র অলওয়েজ তাঁর ভয় পাওয়ার সময়ই কেন আসে সামনে?’
#চলবে….