#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_১৪
#রেজওয়ানা_রমা
– কোথায় যাবো? কি হয়েছে? ( একটু ভয় পেয়ে)
-ভাইয়া রিফা কে একটা ছেলে তুলে নিয়ে গেছে। আমি ছেলে টা কে ফলো করছি আপনি তারাতারি চলে আসেন। ( হাপাতে হাপাতে )
-কিহ!!! আচ্ছা আমি আসছি। আমাকে লোকেশন টা সেন্ট করো।
-আচ্ছা ভাইয়া।
ওদিকে গাড়ি এসে থামে একটা পুরাতন বাড়ির সামনে। জায়গাটা বড়ই নিরিবিলি। মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে।
গাড়ি থেকে রিফা কে বের করে টানতে টানতে বাড়ির ভিতর নিয়ে যাচ্ছে ঈশান। ঝুমু লুকিয়ে দেখছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিয়ান চলে আসে। ঝুমু রিয়ান কে দেখে দৌড়ে কাছে গিয়ে বলে কান্না করতে করতে বলে,
– ভাইয়া রিফা কে ভিতরে নিয়ে গিয়েছে। আমি কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।তাই আপনাকে আসতে বলেছি
-কিচ্ছু হবে না বোন। চলো ভিতরে গিয়ে দেখি।
দুইজনই ভিতরে যায়। গিয়ে দেখে রিফার সাথে অসভ্যতামী করার চেষ্টা করছে ঈশান। রিয়ান ঈশানের শার্টের কলার ধরে মুখে ঘুসি মারতে থাকে। ঈশানের নাক দিয়ে মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।
ওদিকে ঝুমু তারাতাই রিফার কাছে চলে যায়। রিফা ঝুমু কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
ঈশান কিছু বলতে চাইছে কিন্তু সে সুযোগ টাই রিয়ান তাকে দিচ্ছে না। একটা সময় রিয়ান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রিয়ান মাটি থেকে টেনে তুলে আবারও মারতে থাকে। ঈশান জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রিয়ান এবার ঈশান কে ছেড়ে বোনের কাছে ছুটে যায়। রিফা ভাই কে সামনে পেয়ে ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করে।
– আমি চলে এসেছি। আর কিচ্ছু হবে না তোর বোন। আমি থাকতে তোর কিচ্ছু হতে দেবো না। প্লিজ কান্না থামা বোন আমার
রিফা কান্না করেই যাচ্ছে। রিফা কে নিয়ে ঝুমু আর রিয়ান চলে আসে। আর ঈশান জ্ঞান হারিয়ে ওখানেই পড়ে থাকে।
বতর্মান
রিফা কান্না করে দেয় সেদিনের কথা মনে পড়া তে। রিফার কথা শুনর মেহুলের পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। মাথা টা ঘুরছে। মেহুল আবারও বিশ্বাস করে ধোকা খায়।
-আর কিছু জানতে চাও ( রিয়ান রেগে কথা টা বলে)
রিয়ানের কথায় ধ্যান ভাঙে মেহুলের। মেহুল কোনো কথাই বলছে না। মেহুল যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। রিফা মেহুলের কাছে গিয়ে মেহুলের কাধা হাত রেখে বলে,
– সেদিন ঝুমু না থাকলে হয়তো আজকে আমার সর্বনাশ হয়ে যেত ভাবী। আর ভাইয়া যদি সঠিক সময়ে না পৌঁছাতো কি যে হতো আমার ( কান্না করতে করতে )
মেহুল এবার মাটিতে বসে হাউমাউ করে কেদে দেয়। জোরে জোরে কাদতে থাকে। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে খুব। বার বার একজনকে বিশ্বাস করে ঠকেছে। ঈশান এত খারাপ ছেলে। আর সেটা এত বছরেও বুঝতে পারে নি।
রিফা রিয়ানের ইশারায় জায়গা ত্যাগ করে। রিফা চলে যাওয়ার পরে রিয়ান মেহুলের কাছে গিয়ে হাটু ফোল্ড করে বসে মেহুলের হাত দুটো ধরতেই মেহুল রিয়ান কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,
– আমি বার বার একি ভুল করেছি। আমি আবারও ঠকে গিয়েছি। আমি ব্যর্থ। আমি ভালোবাসে ঠকে গেলাম। পারলাম না নিজের ভালোবাসা কে আপন করতে। পারলাম না আমি পারলাম না
– নিজেকে সামলাতে হবে। এভাবে ভেঙে পড়লে হবে না নীড়। নিজেকে শক্ত কর। তুমি বিশ্বাস করে ঠকে গিয়েছো। ও তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। মানুষ টা সঠিক ছিল না নীড়।
মেহুল কোনো কথা বলছে না। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেই যাচ্ছে। রিয়ান মেহুল কে তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে পানি এগিয়ে দেয়। মেহুল পানি টা খেয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। রিয়ান মেহুলের পাশে বসে মেহুলের হাতের ওপর হাত রেখে কিছু বলতে যাবে তখনই মেহুল বলে,
– আচ্ছা সেদিন তো আপনি রিফা আর ঝুমু আর কেউ ছিল না তাহলে ভিডিও টা কে করেছিল?
– মিরা (মাথা নিচু করে)
-মিরা?
– হুম আমরা চলে আসার পর মিরাই ঈশান কে হসপিটালে নিয়ে যায়। আমরা চলে আসার পর,
সেদিন,
এতক্ষণ যা যা হয়েছে সব ভিডিও করে নেয় মিরা। আর রিয়ান রিফা আর ঝুমু চলে যাওয়ার সাথে সাথে ঈশানের কাছে এসে মিরা বলে,
-ঈশান উঠো। প্লিজ ঈশান উঠো। প্লিজ
ঈশানের কোনো জ্ঞান নেই।মিরা ঈশানকে নিয়ে হসপিটালে যায়। ঈশান সুস্থ হওয়ার পর তারা প্লান করে মেহুল আর রিয়ানের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট করার।
বতর্মান,
-আপনি এত কিছু কিভাবে জানলেন? (মেহুল)
-তুমিও জানতে চাও?
– হুম
-ওয়েট।
রিয়ান কাউক কে মেসেজ দেয়। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিডিও কল আসে। রিয়ান রিসিভ করে মেহুলের সামনে ধরে।
মেহুল দেখে ঈশান কে একটা অন্ধকার ঘরে চেয়ারের সাথে বাধা। পাশের চেয়ারে মিরা। পাশে দুই জন লোক দাড়িয়ে আছে কালো পোশাকে মুখে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। রিয়ান বলে,
– ওদের কে আবারও স্বীকার করতে বলো। না হলে আগের মত হবে সেটাও জানিয়ে দাও।
– জ্বী স্যার।
ওপাশে ঈশানের পেটে ঘুসি মেরে বলে যা যা করেছিস সব টা স্বীকার কর। নয়তো,
– না না সব টা বলছি ( ঈশান)
– বল কি কি করেছিলি তোরা? তোদের প্লান কি ছিলো?
– আমি সুস্থ হওয়ার পর মিরা আর আমি ভেবেছিলাম রিয়ান আর মেহুলের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে দেবো। মেহুল কে আমি বিয়ের ফাদে ফাসিয়ে ওকে বিক্রি করে দেবো আর রিয়ান যখন মেহুলের শোকে কষ্টে থাকবে তখন মিরা রিয়ানের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করবে। মিরা রিয়ান কে ভালোবাসে কিন্তু রিয়ান কখনও মিরার ভালোবাসা বোঝার চেষ্টা করে নি। সব সময় মেহুল মেহুল করে গিয়েছে। মিরা কে সব সময় ইগনোর করেছে। মিরা কলেজ লাইফ থেকে রিয়ান কে ভালোবাসে। রিয়ান কলেজ শেষ করে আর্মি তে জয়েন করে। ট্রেনিং এ চলে যায়। তখন মিরা অনেক কষ্ট পায়। মীরা রিয়ানের জন্য অনেক ছেলে কে ইগনোর করেছে। ট্রেনিং এর মাঝে যখন রিয়ান ছুটি তে আসে তখন মীরা মিট করতে চাইত। রিয়ান কখনও মিট করতো না। এর পর ইউনিটে চলে আসে। চাকরির বেশ কয়েক বছর পার হয়ে যায়। রিয়ানের বিয়ের অনুমতি ও পেয়ে যায়। মিরার ফ্যামিলি রিয়ানের বাসায় প্রোপজাল দিলে রিয়ান রিজেক্ট করে। আর বলে সে মেহুল কে ভালোবাসে। মেহুল ব্যতিত অন্য কেউ কে বিয়ে করতে পারবে না। মিরা আমার সাথে শেয়ার করত সব। এর পর আমরা….
– থাক আর কিছু বলতে হবে না ( ফোনে অপাশ থেকে রিয়ান )
রিয়ান ফোন কেটে দিয়ে মেহুলের দিকে ভ্রু কুচকিয়ে ইশারা করে। যার অর্থ কি আর কিছু বলবে?
মেহুল আর কিচ্ছু বলে না। রিয়ানের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রাখে। দুইজনের কেউ কোনো কথা বলছে না। মেহুল কিছু ভাবছে। হঠাৎই বলে,
– আচ্ছা রিফা কে কবে নিয়ে গিয়েছিল?
– যে দিন তোমাদের বাড়ি তে ছিলাম। মনে আছে সেদিন যে সকালে বেরিয়েছিলাম….
-হুম। আছে। ওই দিন?
-হুম। আমি রুম থেকে বের হয়ে আসতেই ঝুমুর কল আসে। তখনই আমি বের হয়ে যাই। কাউ কে কিছু বলার সময় পাই নি। আর ফিরেও বলি নি তোমারা চিন্তা করবে তাই।
মেহুল এবার আরো শক্ত করে রিয়ানের হাত জড়িয়ে নিয়ে বলে,
– আমাকে সেদিনই সব বললেই পারতেন।তাহলে আজ এত দূরত্ব হতো না আমাদের মধ্যে।
– তুমি তখন এমনি তেই এসব বুঝার অবস্থাতে ছিলে না। তখন তুমি ভেঙে পড়েছিলে ভীষন। কিভাবে আমি এগুলা বলতাম।
মেহুল এবার মাথা তুলে রিয়ানের দিকে তাকায়। রিয়ানও মেহুলের দিকে তাকায় আর মেহুল কে এক হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে অন্য হাত দিয়ে মেহুলের হাত ধরে বলে,
-আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। আমি থাকতে তোমাকে কেউ আর আঘাত করতে পারবে না।
-(নিশ্চুপ)
-সারাজীবন আগলে রাখবো।
এই মূহুর্তে মেহুলের নিজেকে সব চেয়ে ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে। রিয়ানের সাথে এই ভাবে রিয়ানে বুকে নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে। যেন যুগ যুগ কাটিয়ে দেওয়া যাবে। মৃদু বাতাস মাথার ওপর খোলা আকাশ। চারিদিকে পাখির কলকলানি আওয়াজ। সাথে প্রিয়জন। মেহুল যেন নিজের জীবন কে এক মূহুর্তে নতুন করে ফিরে পেয়েছে। মেহুল আর আঘাত সইতে পারবে না। মেহুলের এবার বেচে থাকার একমাত্র কারন রিয়ানের এই ভালোবাসা।
এর মধ্যে রিয়া এন্ট্রি নেয়। এসে দেখে ভাইয়া ভাবী কে এভাবে জড়িয়ে গল্প করছে। তখন রিফা কোমরে হাত দিয়ে রেগে বলে,
-তোমরা এখানে প্রেম করছো? আর এদিকে আমার পেটে ছুঁচো দৌড়াদৌড়ি করছে
রিফার এমন বক্তব্যে দুইজনই হেসে দেয়।তারাতারি মেহুল রিয়ানের বুক থেকে উঠে স্বাভাবিক হয়ে বসে।
-আসো না রিফা বসো।
-আরে রাখো তো। তুমি না হয় ভাইয়ার আদর খেয়ে পেট মন দুটিই ভরিয়েছো। কিন্তু আমার তো আর জামাই নেই যে আদর খেয়ে পেট ভরাবো।
মেহুল রিফার কথা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। আর রিয়ান উঠে রিফার কান টেনে বলে,
-খুব পাজি হয়েছিস তাই না? চুপচাপ গিয়ে বস আমি খাবার অর্ডার করে আসছি।
-উফফফ ভাইয়া ছাড়োওওওও ব্যাথা পাচ্ছি তো।
রিয়ান রিফার কান ছেড়ে দেয়। রিফা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। রিয়ান খাবার অর্ডার করে আসে।
দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্য। কাল শনিবার তাই রিয়ানের কালও ছুটি আছে। তাই বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
.
.
.
.
.
#চলবে